11-09-2023, 12:02 PM
(11-09-2023, 09:03 AM)Sanjay Sen Wrote:
|| প্যারত ||
লেখা:- সুচিস্মিতা ধর
"চৌপর দিন হাঁদানে মাদানে বিশ্ববখাটে অকালকুষ্মান্ড গুলো কে পিছনে বেঁধে ঘোরা বন্ধ কর, চাকরীর পরীক্ষাগুলোর পড়ায় মন দে.. আর কতো দিন ক্যামেরা ঘাড়ে নিয়ে ঘরের খেয়ে বোনের মোষ তাড়িয়ে বেড়াবি? একদিন এমন বিপদে পড়বি না...তখন কিচ্ছু করার থাকবে না....দেখে নিস্ ।”
বাবার ‘মধুময় বাণী’ শুনতে শুনতে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল পরমার্থ, বা পরম রায়।
ফোটোগ্রাফি তার শখ বললে ভুল হবে, নেশা বলা যেতে পারে। সেই কবে 3 Idiots দেখে Wildlife Photography শব্দ টি শুনেছিল, নিছকই ক্লাস ইলেভেন এর স্বপ্নময় সদ্য ডানা গজানো কিশোর তখন সে। তবে বাস্তবটাও জানা ছিল ভালোই।
Cinema-র Farhaan এর পিতার মতো যে তার বাপ তাকে ক্যামেরা হাতে দিয়ে নিজের স্বপ্নের পশ্চাদ্ধাবন করতে বলবেন না, এ বিষয়ে সে যথেষ্ট নিশ্চিত ছিল। বাবার সাথে বনতও না তার বিশেষ। উনি Practical, কাজপাগল আর সে হল Romantic,কল্পনাপ্রবণ।
ডিগ্রী কোর্স চলাকালীন নানা পালা পার্বণে পাওয়া আশীর্ব্বাদী আর টিউশনির মাইনে জমিয়ে সে তাই Nikon এর একটা বেশ ভালো ক্যামেরা কিনেছে।
সেই ক্যামেরা আর চার-পাঁচটি তারই মতোন শিক্ষিত বেকার বন্ধু (তাঁর বাবার ভাষায় অকালকুষ্মান্ড) দের নিয়ে তার দুনিয়া। প্রায়ই weekend হলে এই টীম নিয়েই নানা প্রাকৃতিক প্রাচুর্য পূর্ণ ‘হাঁদানে মাদানে’ ঘোরে সে। মন দিয়ে ছবি তোলে। নিজের তোলা ছবি দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায় মাঝে মাঝে। প্রেমে পড়ে যায় ছবিগুলোর।
ভালোবাসতে জানে পরম। ছবি আর ক্যামেরা ছাড়াও তার উদ্দাম প্রেমের আরেকটি ভাগীদার আছে।
হৃদিমা।
জীবনের থেকে পরমের পরম পাওয়া।
কলেজে ব্যাচমেট ছিল দুজনে। বন্ধুত্ব, মেলামেশা, তারপর প্রেম। হৃদিমা সেন বিরাট বড়ো বাড়ির মেয়ে। তার বাবা দার্জিলিং এর দুই তিনটি চা বাগানের মালিক, এছাড়া তাদের কলকাতার একটি বিখ্যাত ফুড চেন এর মালিকানা ও আছে। তবে এদিকে তাকায়নি পরম। সে জানে হৃদিমার বাবা কোনোদিনও এক বিপত্নীক, অবসরপ্রাপ্ত সামান্য কেরানীর ছেলে কে জামাই হিসেবে মেনে নেবেন না। এক কাপড়ে হৃদিমা কে নিয়ে বেরিয়ে আসতে চায় সে। সত্যি বলতে এই হৃদিমা কে হারিয়ে ফেলার ভয়েই হাজার অনিচ্ছাসত্ত্বেও UPSC আর IBPS এর প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। যদি লেগে যায়।
আজ শনিবার, পরম বেরিয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনার ইছামতি নদীর ধারে স্থিত বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য র পথে।
কলকাতার থেকে 100 কিমি দুরে স্থিত এই জঙ্গল টির নাম আগে ছিল পারমাদন অরণ্য।
জঙ্গল বলতে বাঘ – টাগ নেই কিন্তু, থাকার মধ্যে শ দুয়েক হরিণ আর ‘লাঙ্গুর’ নামধারী একপ্রকার লম্বা লেজবিশিষ্ট বানর।
সে সব ভাবছে না পরম, তার হৃদয়ে অন্য রোমাঞ্চ। এই যাত্রায় অকালকুষ্মান্ড রা আসেনি। তারা জানেই না।
এই যাত্রায় তার সঙ্গী আসন্ন পূর্ণিমার চন্দ্রালোক, ইছামতির অনন্যসাধারণ সৌন্দর্য্য, আর.....
হৃদিমা।
এই প্রথম হৃদিমার সাথে রাতে বাইরে থাকার পরিকল্পনা। এর আগে বন্ধুদের আনুকুল্যে তাদের ফাঁকা বাড়িতে দুপুরের ঘনিষ্টতায় বা সিনেমা হলের আলো আঁধারিতে কাছে আসার সুযোগ যে হয়নি তা না, তবে রাত্রিযাপনের অভিনব অভিজ্ঞতার আস্বাদ তারা এই প্রথম পেতে চলেছে।
হৃদিমা বা হৃদি-র (পরম ঐ নামে ডাকে) বাড়ির সংরক্ষণশীলতার আঁটুনি আরো সাংঘাতিক। বাইরে দুমদাম করে রাত কাটানোর অনুমতি নেই তার।
তবে এবার একটা master plan করেছে হৃদি। তার কলেজের bosom friend সায়নীর বনগাঁয় একটা বাগানবাড়ি আছে। সেই বাড়িতে চলে এসেছে হৃদি গতকাল, মানে শুক্রবার, সায়নীর জন্মদিনের নাম করে। সায়নীর জন্মদিন সত্যিই ছিল শুক্রবার, তবে হৃদিমা ছাড়া আর কাউকে ডাকেনি সে, উদ্দেশ্য, বন্ধু কে প্রেম করতে সাহায্য করা।
সায়নী শনিবার হৃদিকে অভিসারে যেতে সাহায্য করবে। সায়নির বাবা -মা দুজনেই কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরু থাকেন, পুজোর সময় ছাড়া বাড়ি আসার scope নেই, তাই তাঁরা ফোনেই wish করেন মেয়েকে। বনগাঁর বাড়িতে শুধু সায়নীর বৃদ্ধ দাদু-দিদা আছেন, তাঁরা অতশত বুঝবেন না।
শুক্রবার সায়নীর বাড়িতে কাটিয়ে সেখান থেকে হৃদিমা শনিবার পারমাদন ক্যাম্পে যাবে। হৃদিমা-পরম শনিবার রাত পারমাদন ফরেস্ট ক্যাম্পেই কাটাবে। পরম রবিবার সকালে ফের হৃদিকে ড্রপ করবে সায়নীর বাড়িতেই। হৃদিমার বাবা ড্রাইভ করে মেয়েকে পৌঁছে দিয়ে গেছেন, উনিই নিয়ে যাবেন রবিবার বিকেলে। এই ফাঁকে টুক করে কপোত-কপোতির অভিসার হয়ে যাবে প্রকৃতির কোলে। টানটান plan !
অতঃপর পরম শনিবার বেলাবেলি রওনা দিয়েছে। বনগাঁ থেকে পারমাদন মাত্র পঁচিশ কিলোমিটার। রাস্তা মোটেই কঠিন নয় আর সায়নী তো তাদের হেল্প করার জন্য আছেই।
বনগাঁ লোকালের ভীড়ে পিষ্ট হয়ে মরতে মরতে যখন পৌঁছল পরম, তখন বেলা প্রায় আড়াইটা। স্টেশনে নেমে এক বোতল জল কিনে খেয়ে আর চোখেমুখে দিয়ে কোনোক্রমে মোতিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে আসলো সে। বাস টা সবে ছাড়ছিলো। তড়িঘড়ি সেটাতে সে উঠে বসল।
প্রথমে কথা হয়েছিল নলডুংরি থেকে সে আর হৃদি একসাথে বাসে করে পৌঁছবে, কিন্তু বাস যাত্রায় অনভ্যস্ত হৃদিমা ই সায়নীর গাড়ি Avail করার কথা তুলেছে। তাই পরম আগে গিয়ে Camp এর কটেজে উঠবে। সে ফোন করলেই হৃদিকে পৌঁছে দিয়ে যাবে সায়নীর গাড়ি।
কলকাতা থেকে ক্যাম্প বুকিং করেই এসেছে পরম। হৃদি কে কোনো অসুবিধায় ফেলতে চায় না সে। রাজকন্যার মর্যাদা সে বরাবর ই দিয়ে এসেছে।
একবার বন্ধুদের মাঝে হৃদির জন্মদিনে , “ম্যায় কোই অ্যায়সা গীত গাউঁ ...” perform করেছিল সে। হৃদির গালটা লাল হয়ে গেছিল লজ্জায়। দুনিয়ার সবথেকে সুন্দরী মেয়ে মনে হচ্ছিল তাকে সে সন্ধ্যায়।
এসব স্মৃতিচারণ আর আসন্ন সময়ের রোমাঞ্চের ভাবনায় ভাসতে ভাসতে পৌঁছে গেল সে। চারটে দশে।
জঙ্গলের কোলে ছায়ায় ঘেরা ক্যাম্প। প্রকৃতি যেন নিশ্চুপ হয়ে প্রহর গুনে চলেছে কোনো কিছুর অপেক্ষায়। ঝিঁঝিঁ পোকার নিরবচ্ছিন্ন ঝিঁঝিঁ এই দিনের বেলাতেও একটা গা ছমছমে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
পরম ব্যাগ টা নামিয়ে নামধাম লিখে নিজের ফটো আই ডি submit করলো। চাবি পেয়ে কটেজে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে আগে হৃদি কে ফোন করলো সে।
“The number you are calling is either switched off or not reachable at the moment....যে নম্বরে আপনি.....”
কি হলো কেসটা? অবশ্য হৃদির ফোনে চার্জ থাকেই না বলতে গেলে। সারাদিন গান শুনলে আর ভিডিও দেখলে কি-ই বা আশা করা যায়? সায়নী কে কল করবে কি একটা? নাহ্ থাক.... আরেকটু পরে। চারপাশ টা একটু ঘুরে আসা যাক। তার প্রথম প্রেম, ক্যামেরা টা কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সে।
ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে ডান দিকে ইছামতির পাড় বরাবর কিছুদূর গেলে বনানী আরও ঘন হয়ে এসেছে। বনের একদম কিনারে ঘুপচি মতো একটা চা দোকান। ছবির মতো লাগছে দৃশ্য টা।
ক্যামেরা বের করে খচাখচ ফটো তুলতে লাগল সে।
আধবুড়ো দোকানদারটি জরিপ করছে তাকে। পরম এক ভাঁড় চা নিল। চায়ের দোকানের পেছনে ঘন সবুজ অরণ্য। নিঝুম, গভীর, রহস্যময়। যেন নিদারুণ গুঢ় কিছু বুকের মধ্যে লুকিয়ে বসে আছে সে।
ফটোজেনিক, ভেরি মাচ্ সো ! পরম উঠল।
চায়ের দোকান টাকে বাঁ হাতে রেখে শেষ বিকেলের কালো, ঘন, নিশ্ছিদ্র জঙ্গল টার দিকে ক্যামেরা হাতে আরেকটু এগিয়ে যেতে গেল পরম।
বন টা যেন মায়ার টানে টানছে তাকে। মনে হচ্ছে যেন খুব কাছের কেউ একটা আছে ওখানে।
"আরে... আরে ওওও ফটোবাবুউউউ.... শুনছেন? ও ও বাবু, আরে ওদিকে যেয়েন না...ওখানে প্যারত থাকে বাবু"
থমকে উঠে ঘাড় ঘোরালো পরম।
"কে থাকে?"
"প্যারত, আপনের গন্ধ পেয়ে গেলি পেছু পেছু চইলে যাবে আপনের বাড়িতে। চোখ দিয়ে শরীলে ঢোকে বাবু ...সেই শরীল ছেইরে ঝায় নে, আরেকটি খোঁজে বাবু...আপনের ছায়া পৈড়বে যেখেনে, সেইখেন থেকে আরেকটা বেইরোবে।"
“প্যারত? মানে কি প্রেত বলছেন? ভূত?”
“আজ্ঞা, যেনারা অপঘাতে মইরেছে, খিদা নিয়ে মইরেছে... শান্তি পায়নে, তেনারা প্যারত হইয়ে ওইখেনে ঘোরে। দিনে শরীল ধইরে রাখতে পারেনে, রেতে আসে...আপনেরে দেখতি পেলি বা গন্ধ পেলি আপনেরে ধাওয়া দেবে। আপনেরে ছুঁতি পারলি আপনের চোখ দে ঢুকে আপনের আত্মা খেইয়ে নেয় বাবু। আপনের আত্মা খাওয়া হয়ে গেলি পর আপনের প্রিয়জনের আত্মা খাতি যাবে। আর প্যারতে ঝেতি আপনেরে ধরে তয় আপনেও প্যারত হইয়ে যাবেন... প্যারত বড়ো ভয়ানক জিনিস...”
পরম প্রথমে লোকটাকে পাগল ভাবল। তারপর দোনোমোনো করে জঙ্গলের দিকে ফোকাস করে zoom করে দুই একটা ফটো তুলল। তারপর ক্যাম্পের দিকে হাঁটা দিল। মাঝে একবার পিছন ফিরে দেখেছিল সে। চা – দোকানি সেই ফ্যালফেলে দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে। পাগলই হবে। ধুত্তোর !
ক্যাম্পে পৌঁছে একেবারে আত্মহারা হয়ে গেল সে। Reception এর কাউচের উপর গা এলিয়ে বসে আছে হৃদিমা।
“ফোন টা কি কমোডে ফেলে flush করে দিয়েছিস রে? সোয়া ছটা বাজে... বাপ রে বাপ... সাড়ে পাঁচটায় এসেছি, তারপর থেকে ফোন করেই চলেছি ...” বলে ওঠে হৃদি।
“এঃ হে রে... ফোন টা মনে হয় রুমেই ফেলে এসেছি তবে ভুল করে, একটু ওদিকে গেছিলাম ফটো তুলতে। তা তোকেও তো ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না...সমানে switched off বলছে...”
“তাই নাকি? কই রে , এই তো আমার ফোন... Forget it.. its a lovely place yaa.... চল sign কোথায় করতে হবে?”
রিসেপশন খালি।
“ও দাদাআআআ... ও ম্যানেজার দাদা.... আরে শুনছেন?....” ঝাড়া পাঁচ-সাত মিনিট ডাকাডাকি করে কারো দেখা না পেয়ে শেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে পরম বলল,
“ছাড়, বাদ দে তো... রাতের খাবারের order নিতে তো আসবে, তখন formalities সেরে নেব। সায়নী আসলো না?“
“নো কাবাব মে হাড্ডি জানু, driver নামিয়ে দিয়েই চলে গেছে...now let’s move... আআও হুজুর তুমকো...সিতারোঁ মেঁ লে চলুঁ...” হৃদি চিরকালই এরমই appealing।
ঘরে ঢুকে খাটের উপর ফোন টা আবিষ্কার করল পরম। বাস্তবিক ই স্ক্রীনে হৃদিমার 15 missed calls দেখাচ্ছে...Battery 11%...No network।
Service provider এর উদ্দেশ্যে একটা কাঁচা খিস্তি মেরে ফোন টা চার্জে দিল সে।
সাতটা, মানে এই এলাকার নিশুতি রাতই বলা চলে। বিশ্ব চরাচর স্তব্ধ, অনতিদূর সুগভীর বনানী থেকে ভেসে আসা ঝিল্লিঝংকার এক অপার্থিব পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। হৃদি ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকেছিল। পরম আজ বিকালে ক্যামেরায় তোলা ছবি গুলি দেখছিল। সহসা থমকায় সে।
জঙ্গলের দিকে জুম করে তোলা প্রত্যেকটা ছবিতে একটা ছায়া এসেছে। সাদাটে, অস্প্ষ্ট ছায়া। খু-উ-ব মন দিয়ে ঠাহর করলে বোঝা যাচ্ছে। একটা বড়ো শিরীষ গাছের আড়াল থেকে উঁকি মারছে ছায়াটি। তৎক্ষণাৎ চা-ওলার কথাগুলো মনে পড়ে গিয়ে হালকা শিরশিরিয়ে ওঠে গা টা তার।
“আপনেরে দেখতি পেলি বা গন্ধ পেলি পেছু পেছু চইলে আসবে......”
টিং-টং..
হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠায় আঁতকে উঠল পরম। কে রে ভাই, এই সময়? গন্ধ শুঁকে চলে এলো নাকি?
টিংটং... টিংটং...
কাঁপা হাতে দরজা খুলল পরম...
“স্যার ডিনারের অর্ডার টা দেবেন?...”
“ওওফ্, এই সময় হলো? রিসেপশনে লোক নেই, অর্ডার নেওয়ার লোক নেই...বলিহারী service দাদা...এখন আসুন, ম্যাডাম স্নানে ঢুকেছেন , বেরোক, আপনাকে ঠিক ডেকে নেব।“ হতভম্ব রুমবয় টির মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল পরম। ভয়টা রাগে পরিণত হয়ে বেরিয়ে এসেছে হুড়মুড় করে।
বাথরুমের দরজায় ‘খু-উ-ট’ করে একটা আওয়াজ শুনে সেদিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল পরম। সাদা তোয়ালে তে জড়ানো হৃদির চাবুক শরীর টার থেকে টপ টপ করে জল ঝরে পড়ছে।
পরম আর থাকতে পারল না। পাঁজাকোলা করে হৃদিকে কে তুলে বিছানায় ফেলল। শুরু হয়ে গেল আদিম খেলা।
একটা সময়, দুজনেই যখন পরিতৃপ্ত, আশ্লেষের স্বেদ যখন দুজনের গায়েই চিকচিক করছে, তখন উঠে বাথরুমে গেল হৃদিমা। পরম চিৎ হয়ে একটা সিগারেট ধরালো। Cigarette after sex...এর মাহাত্ম্য অনস্বীকার্য।
চোখ লেগে আসছিল, হৃদি বেশ অনেকক্ষণ ঢুকেছে বাথরুমে।
পরমের ফোন টা বেজে উঠল হঠাৎ ই। বিছানার পাশেই সাইড টেবল, সেখানেই চার্জে দেওয়া ফোন টা। যাক...network এলো তাহলে।
ফোনটা হাতে তুলে স্ক্রীনের দিকে চোখ পড়া মাত্র তার মেরুদন্ড বেয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল।
“হ্যালো, হ্যালো...বাবু তুই কোথায় রে? কখন থেকে কল করছি তুই ফোন উঠাচ্ছিলিই না, তারপর তোর ফোন out of coverage area, আমার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে রে, সায়নী দের সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পা মুচকে গেছে, অসহ্য যন্ত্রণা...”
“ক-কোথায় তুই? তুই তো...”
“কি আমি তো? আমি সায়নীদের বাড়িতে.. তুই কোথায়? একবার আসতে পারবি?...”
ফোনটা পরমের হাত থেকে পড়ে যাওয়া মাত্র হুট করে লোডশেডিং হয়ে গেল।
বাথরুমে এখনো জলের আওয়াজ হয়েই চলেছে। যে ভেতরে আছে , সে কি টের পেয়েছে যে পরম বুঝতে পেরেছে?
কোনোমতে চাদর টা গায়ে জড়িয়ে উঠল পরম।
“কোথায় যাচ্ছিস আমায় ফেলে?” পিছনে একটা খ্যাশখ্যাশে কন্ঠস্বর বলে উঠল।
জানালা দিয়ে আসা চাঁদের অপার্থিব আলোয় পরম আতঙ্কে হিম হয়ে দেখল তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে একটা নগ্ন, এলোকেশী, কাগজের মতো সাদা নারীমূর্তি। তার গা থেকে সাদাটে, কোঁচকানো চামড়া-মাংস সব খুলে খুলে পড়ছে, চোখ নেই। সে দুটির জায়গায় অতল গহ্বর।
হাঁ করল নারীমূর্তিটা।
*****************
রাত সাড়ে তিনটের সময় হৃদিমার ফোন টা বেজে উঠল। পাশে সায়নী অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
“হ্যালো...”
“দরজা খোল... ”
“তুই? তুই এসেছিস? ...এখন?”
“হ্যাঁ, বেরো... চল ফিরে যাই।”
“কলকাতায়? এতো রাতে? কিন্তু...কাল যে বাবা....”
“আআহ্ তর্ক করিস না হৃদি.......কাকু তোকে নিতে রওনা হওয়ার আগেই আমরা পৌঁছে যাব......সময় কম, তাড়াতাড়ি বেরো, কাউকে কিচ্ছু বলতে হবে না...।”
কি যেন সম্মোহনী শক্তি ছিল পরমের কথা গুলোর মধ্যে, হৃদি বিছানা থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নামল...তারপর ব্যথা চেপে কোনোক্রমে সিঁড়ি ভেঙে এগিয়ে গেল সদর দরজার দিকে।
সায়নীদের দরজার বাইরে পরম বা তারই মতো দেখতে যে দাঁড়িয়ে ছিল, সে অস্থির হয়ে উঠছিল ক্রমশ। আর সময় নেই, এখুনি হৃদিকে পেতে হবে। ভোরের আলো ফুটলে হয়তো ক্যাম্পের বাথরুমে যে ছিল সে আর শরীর ধরে রাখতে পারবে না। তার আগে হৃদি কে নিয়ে তার পালানো চাই।
|| সমাপ্ত ||
ভালো লাগলো 
