03-09-2023, 08:26 PM
- "আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাই। আসলে এই সমাজ ব্যবস্থাটাই আমাদের মানসিকতাটা এরকম বানিয়ে ফেলেছে। মহিলাদের অন্তর্বাস নিয়ে মহিলারাই স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারেনা, সহজ হতে পারে না পরস্পরের কাছে। আমার স্বামীর জাঙিয়া সবার সামনে মেলা থাকতে পারে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমার ব্রা প্যান্টি যদি দড়িতে মেলতে যেতাম তাহলে শাশুড়ি বলতেন, 'ভেতরে মেলো, ঘরের ভেতরে মেলো। না হলে ওইগুলোর উপর নিজের কোনো কাপড় চাপা দিয়ে দাও'। কথাগুলো এমন ভাবে বলতেন যেন ওগুলো আমার ব্রা প্যান্টি নয়, সোনার অলঙ্কার। তাই এবার থেকে আর লজ্জা নয়, স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে হবে এগুলোকে নিয়ে।"
- "খুব ভালো, আপনি যে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন, তাতেই আমি খুশি। আচ্ছা আপনি তো নরম্যাল ব্রা দেখতে চাইলেন! ঠিক আছে নরম্যালই দেখাচ্ছি। আপনি এক পা পিছিয়ে গিয়ে একটু দাঁড়াবেন ম্যাডাম? তাহলে আমি নিজের আইডিয়া থেকে আপনার সাইজটা ডিটেক্ট করে নেবো।"
"কেন আপনার চোখে এক্সরে মেশিন বসানো রয়েছে নাকি? হিহিহি .." হাসতে হাসতে কথাগুলো বলে এক পা পিছিয়ে দাঁড়ালো পম্পা।
- "না ম্যাডাম, আমার চোখে কোনো মেশিন বসানো নেই। আসলে ছোটবেলা থেকে দোকানে বাবার সঙ্গে বসছি তো, তাই একটা আইডিয়া হয়ে গেছে। তবে আমার বাবার অ্যকিউরেসির কাছে আমারটা কিছুই নয়। আমার বাবা তো বাইরে থেকে দেখে আন্টিদের বা বৌদিদের ব্রায়ের কাপ সাইজ পর্যন্ত বলে দিতো। আপনি শুনলে অবাক হবেন ম্যাডাম, কোনো পরিচিত ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীর জন্য ব্রা কিনতে আসতো আমাদের এই দোকানে, তখন বাবার কাছ থেকে তার স্ত্রীর সাইজ জিজ্ঞেস করে, ব্রা আর প্যান্টি কিনে নিয়ে যেত এখান থেকে।"
- "হিহিহি .. আচ্ছা তাই? তা আপনার বাবা এখন কোথায়? ওনাকে দোকানে দেখছি না তো! বাই দ্য ওয়ে, তখন থেকে আমাকে 'ম্যাডাম' 'ম্যাডাম' করছেন কেনো? আমি আপনাকে 'ভাই' করে বলছি আর আপনি আমাকে ম্যাডাম বলে যাচ্ছেন! আমি এ বছর ছাব্বিশে পড়লাম, আপনাকে দেখে মনে হয় আমার থেকে ছোটোই হবেন .."
- "আমার চব্বিশ, ঠিক আছে তাহলে আপনাকে দিদিভাই বলবো। আপত্তি নেই তো? হি ইজ নো মোর, মানে আমার বাবা আর বেঁচে নেই। বছরখানেক হলো গত হয়েছেন। তাই এখন আমি একাই বসি দোকানে।"
- "না আপত্তি নেই। তবে তোমার বাবার ব্যাপারটা শুনে খারাপ লাগলো, এই বয়সেই পিতৃহারা হতে হয়েছে তোমাকে।! যাই হোক, তাড়াতাড়ি দেখে বলো আমার ব্রায়ের সাইজটা, আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। এই দ্যাখো 'তুমি' বলে ফেললাম .."
"না না ঠিক আছে, তুমি করেই তো বলবে! আমি তো ছোট তোমার থেকে বয়সে দিদিভাই। দাঁড়াও, ভালো করে দেখতে দাও, দেখে বলছি। দেখে তো মনে হচ্ছে ৩৬, কিন্তু কাপ সাইজটা সম্ভবত ৯৭ সেন্টিমিটার হবে। ওই ধরো সব মিলিয়ে ৩৬ সি সাইজের ব্রা লাগবে তোমার।" কথাগুলো বলে পেছনে রাখা সুসজ্জিত শোকেসের মধ্যে থেকে অন্তর্বাসের প্যাকেট বের করতে লাগলো যুবকটি।
- "আরে দাঁড়াও দাঁড়াও, এত তাড়াহুড়ো কোরো না। তুমি আমাকে প্যাডেড ব্রা দেখাও তো!"
- "বলছিলাম দিদিভাই, প্যাডেড ব্রা তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিনেজারেরা পড়ে, অথবা যাদের কাপ সাইজ ৩৪ এর নিচে, তারা ব্যবহার করে। তোমার ঈশ্বরপ্রদত্ত যা আছে, সে ক্ষেত্রে প্যাডেড ব্রা ব্যবহার করতে হবে বলে মনে হয় না।"
- "কি ব্যবহার করতে হবে আর হবেনা সেটা আমি বুঝবো। তোমাকে যেটা বলছি, সেটাই করো।"
- "ঠিক আছে, তোমার যা ইচ্ছে! কালার ডিমান্ড কিছু আছে?"
- "হ্যাঁ আছে .. একটা ব্ল্যাক দাও, একটা পিঙ্ক দাও। আর একটা, আর একটা, আর একটা, দাড়াও বলছি .. ঠিক আছে একটা রেড কালারের দিয়ে দাও। তবে সাইজ যদি ছোট বড় হয়, তাহলে কিন্তু ফেরত নিতে হবে! তখন 'আপনি পড়ে ফেলেছেন' এসব বললে চলবে না।
- "একদম দিদিভাই, অবশ্যই ফেরত নেবো। তবে ছোট বড় একটাও হবে না। সব কটা পারফেক্ট হবে। আমার চোখের জরিপটা যে কত ভালো, সেটা তখন তুমি নিজেই বুঝতে পারবে। ঠিক আছে, এই নাও তোমার পছন্দের তিনটি কালারের ব্রা দিয়ে দিলাম। তাহলে প্যাক করে দিচ্ছি?"
- "হ্যাঁ করতেই তো বললাম। কত দেবো?"
- "ওই তো আড়াইশো টাকা করে, তিনটে সাড়ে সাতশো টাকা হয়। তুমি সাতশো পঁচিশ দাও।"
- "ইয়ার্কি মারার জায়গা পাওনি! এগুলোর আড়াইশো টাকা করে দাম? আরে এর থেকে তো বাঁকুড়াতে অনেক সস্তা গো! আমি আমার শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে গিয়ে যেগুলো কিনতাম, সেগুলো তো ৮৫ টাকা, কোনোটা ৯৫ টাকা, কোনোটা খুব বেশি হলে ১১০ টাকা দাম নিতো। মানছি ওগুলো নরম্যাল ব্রা, কিন্তু তাই বলে এত দাম তোমাদের এখানে? তিনটে মিলিয়ে ৬০০ টাকার এক পয়সা বেশি দেবো না।"
- "মরে যাবো দিদিভাই, মরে যাবো। আমাদের কেনা দামটাও উঠবে না এতে। আরে তুমি যেগুলো কিনতে, সেগুলো আন্টি টাইপ ব্রা। ওগুলো তো আমাদের এখানে আরও কমে পাওয়া যায়। ওসব পড়ার বয়স হয়েছে নাকি তোমার? তোমার জন্য এগুলোই পারফেক্ট। ঠিক আছে, না তোমার না আমার, সাতশো টাকা দাও।"
- "একদমই না, গ্রাম থেকে এসেছি বলে তুমি কি আমাকে বোকা ভেবেছো? এত কম লাভ রেখে তোমরা বিক্রি করো না এইসব জিনিস, সেটা আমি জানি। ঠিক আছে তোমাকে 'ভাই' বলে ডেকেছি, তাই যা বলেছিলাম তার থেকে পঞ্চাশ টাকা আরো বেশি দিচ্ছি। তাহলে টোটাল ৬৫০, ওকে? আরে বাবা, আজতো শুধু ব্রা কিনলাম। এরপরে একদিন এসে প্যান্টি কিনে নিয়ে যাবো তোমার দোকান থেকে, চিন্তা নেই। মান্ধাতার আমলের স্টাইলের নয়, মডার্ন স্টাইলের কিছু দেখিও। তাছাড়া আমি যে ক্যাম্পাসে থাকি, সেখানে আমার বয়সী বা আমার থেকে বড় আরও অনেক লেডিস থাকে। তাদেরকে বলবো তোমার দোকানের কথা, তারাও আসবে তোমার দোকানে। ওদের থেকে যত পারো লাভ করে নিও।"
- "পড়েছি যবনের হাতে .. থাক, বাকিটা আর বললাম না। তাহলে বলো তোমার ওখানকার মহিলাদের আমার দোকানের কথা, আর তুমিও এসো আবার। এই নাও, তিনটে প্যাক করে দিলাম, ৬৫০ টাকাই দাও।"
ব্রায়ের প্যাকেটটা নিয়ে, হাসিমুখে বিক্রেতা যুবকটিকে বিদায় জানিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো পম্পা।
"মহারানীর এতক্ষণে ফেরার সময় হলো?" বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই অমিতের এইরূপ টিপ্পনীতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে, তারপর সোজা নিজের বেডরুমে ঢুকে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো পম্পা।
অমিত ভেবেছিলো তার কথায় হয়তো চমকে যাবে তার স্ত্রী, হয়তো থতমতো খেয়ে গিয়ে কৈফিয়ৎ দেওয়ার চেষ্টা করবে তার স্বামীর কাছে। কিন্তু এগুলোর কোনটাই না করে, কোনো রিয়্যাকশন না দিয়ে তার স্ত্রীর ভেতরে ঢুকে যাওয়ায়, যারপরনাই রেগে গেলো অমিত।
ওইরকম মারকাটারি, উত্তেজক ফিগারে নিচে শুধু প্যান্টি পড়ে ঊর্ধাঙ্গের অন্তর্বাস ছাড়াই উপরে একটা হাতকাটা সুতির পাতলা ফিনফিনে নাইটি চাপিয়ে পম্পা ঘর থেকে বেরোনোর পর, তার বউয়ের দিকে তাকিয়ে ফেটে পড়লো অমিত, "আজকাল তোমার বাড়ির বাইরে বেরোবার পোশাক দেখলে লজ্জায় মাথা কাটা যায় আমার। আর বাড়ির ভেতরে তো কথাই নেই, ঠিক যেন মনে হয় কোনো প্রস্টিটিউটদের এলাকায় এসেছি আমি! ঠিক যেমন এখন পড়ে রয়েছো। পাঁচজনে পাঁচ কথা বলে বেড়াচ্ছে চারিদিকে, সে খবর রাখো?"
"খেতে দেবো তো? তাহলে গিয়ে বসে পড়ো ডাইনিং টেবিলে। আমি সার্ভ করে দিচ্ছি।" এতক্ষণ ধরে তার স্বামীর বলা সবকটা কথা ইগনোর করে এইরূপ উক্তি করলো পম্পা।
এতে যেন মেজাজের পারদ আরও চড়লো অমিতের। চিৎকার করে বলে উঠলো, "কি হলো, কথা ঘোরাচ্ছো যে? আমার কথাগুলো কানে যায় নি তোমার? পাঁচজনে পাঁচ কথা বলে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। আমার তো একটা মান সম্মান বলে ব্যাপার আছে, নাকি? আর এমন ভাবে বলছো যেন আমার জন্য কোর্মা, কালিয়া, পোলাও এসব রান্না করে রেখেছো!"
"কোর্মা, কালিয়া, পোলাও এই প্রিপারেশন গুলোর ইনগ্ৰেডিয়েন্টস দোকান থেকে কিনে এনে দিলেই বানিয়ে দিতাম। তোমার ফ্যাক্টরির লোকজন যা বাজার দোকান করে দেয়, সেই হিসেবেই রান্না হয়। সেটা তুমি নিজে ভালো করেই জানো। আর আমি কোনো কথা ঘোরাইনি, তোমার বলা সবকটা কথাই শুনেছি আমি। তুমি যে কথাগুলো নিজের ফ্রাস্টেশন থেকে বলছো, সেটাও বুঝতে পেরেছি। তাই তোমার মনোকষ্ট যাতে আর না বাড়ে, সেজন্য চুপ করে রয়েছি। তুমি যখন বারবার খোঁচাচ্ছ, তাহলে বলছি শোনো .. পাঁচজনে তো অনেক কথাই বলে। সেগুলোও তো আমার কানে আসে। পাঁচজনে তো এটাও বলে যে, তুমি হলে ধ্বজভঙ্গ! আমি অবশ্য জনে জনে কথাটা বলতে যাইনি, আমি শুধু আমাদের কাজের মাসি গীতা দি'কে কথাটা বলেছিলাম। তাও বলতাম না, একদিন দুপুরে তুমি আমাকে স্যাটিসফাই না করেই বেরিয়ে গেলে, মনে আছে? আমি বসে বসে কাঁদছিলাম। তখন গীতা দি কাজ করতে এসেছিলো। ও আমার চোখ-মুখের অবস্থা দেখে বারবার প্রশ্ন করতে থাকায়, ওকে বলেছিলাম। ও সেটা বাইরে গিয়ে রটিয়ে দিলে আমি আর কি করতে পারি? এখন তো বাইরের সবাই, এমনকি তোমার সহকর্মীরাও এটা নিয়ে হাসাহাসি করে।" খুব স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বললো পম্পা।
"ঘর জ্বালানি পর ভোলানি মেয়েমানুষ কোথাকার। আমার লাইফটাকেই নরক বানিয়ে দিলে তুমি! ভেবেছিলাম বাড়িতে এসে খেয়েদেয়ে একটু বিশ্রাম করে, তারপর সেকেন্ড হাফে অফিসে যাবো। কিন্তু এখানে তোমার সাথে আর এক মুহূর্ত থাকতে আমার ঘেন্না করছে।" এই বলে হনহন নিজের ঘরে ঢুকে দড়াম করে দরজা আটকে দিলো অমিত।
এর কিছুক্ষণ পর ফরমাল ড্রেস পড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এসে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো সে। অমিত চলে যাওয়ার পর ছলছলে দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে থেকে ধরা গলায় পম্পা বললো, "কে কার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছে, এটা একমাত্র ঈশ্বর জানেন।"
পরের দিন সকালে একটু দেরিতে ঘুম ভাঙলো পম্পার। আগেরদিন তার স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়াতে মেজাজটা খিঁচড়ে ছিলো তার। কোনো কালেই বেশিক্ষণ রাগ পুষে রাখতে পারে না সে। তারপর এক বাড়িতে দু'জন মানুষ থাকবে, সর্বোপরি তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী হয়েও পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবে না! এটা ভাবতেই মন কেমন করে উঠলো পম্পার। সবকিছু ভুলে অমিতের কাছে গিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আধো আধো ভঙ্গিতে বললো, "এই শুনছো, আজ ছুটি নাও না! কাল ফেরার সময় দেখলাম গঞ্জ বাজারের সিনেমা হলটাতে সালমানের একটা দারুন সিনেমা এসেছে। চলো না, দেখে আসি দু'জনে! এখান থেকে সাড়ে এগারোটা বারোটার মধ্যে বেরিয়ে যাব তারপরে বাইরে কোথাও লাঞ্চ করে ম্যাটিনি শোয়ে দেখবো সিনেমাটা!"
"ছাড়ো .. তোমার সঙ্গে সিনেমায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার, একসঙ্গে এক বাড়িতে থাকতেও আমার ঘেন্না হয়। নেহাত আমার বাবা-মা আমাকেই দোষ দেবে, তাই বাধ্য হয়ে তোমার সঙ্গে থাকতে হচ্ছে। দেখলে না, কাল রাতে আমি আলাদা গিয়ে শুলাম পাশের ঘরে। এবার থেকে আলাদাই ঘুমাবো। তাছাড়া ওইসব সিনেমা দেখে বাজে সময় নষ্ট করার মতো সময় আমার হাতে নেই। তিন মাস হয়ে গেলো, এখনো অর্ধেক কাজ হলো না। ছ'মাসের মধ্যে প্রজেক্টটা শেষ করতে না পারলে সান্যাল প্রমোশনটা নিয়ে নেবে। তোমাকে এসব বলে অবশ্য কোনো লাভ নেই, তোমার মোটা মাথায় কথাগুলো ঢুকবে না। যাইহোক, আমি বেরোলাম। একজন আসবে, ওর হাতে আমার লাঞ্চটা পাঠিয়ে দিও ফ্যাক্টরিতে।" কথাগুলো বলে এক ঝটকায় পম্পার বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে বেরিয়ে গেলো অমিত।
"ও কি বলে গেলো, শুনলে গীতা দি? আমার সঙ্গে এক বাড়িতে থাকতে ওর নাকি ঘেন্না হয়! কেন বলো তো? কি করেছি আমি? আমি কি রাতের পর রাত বাইরে কাটিয়েছি? নাকি মদের ফোয়ারা উড়িয়ে বাড়িতে অন্য পুরুষের সাথে বেলেল্লাপনা করেছি? আমি তো এখানে আসতেই চাইনি। আমি তো শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে চেয়েছিলাম, ওই তো আমাকে জোর করে নিয়ে এলো এখানে। তাহলে কেনো সবসময় এই কথা বলবে যে, ও আমাকে ঘেন্না করে? কেনো, কেনো?" পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাজের মাসি গীতাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে কথাগুলো বললো পম্পা।
"তার কারণ তুমি এগুলোর কিছুই করোনি। এগুলোর একটাও যদি তুমি করতে, তাহলে তোমার স্বামী ইঁদুরের মতো ল্যাজ গুটিয়ে গর্তে ঢুকে যেতো। কাল রাতে তোমার বর আলাদা কেন শুয়েছিল জানো? তোমার উপর রাগ করে নয়। নিজের অকর্মণ্যতা ঢাকার জন্য। রাতে তোমার যদি হঠাৎ প্রেম জেগে ওঠে? যদি তোমার বরের সঙ্গে সোহাগ করতে চাও? তখন তো তোমার বরের মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে। কারণ ওর তো লিঙ্গই দাঁড়ায় না। সেই জন্যেই একটা অজুহাত খাড়া করে আগেভাগেই আলাদা ঘরে শুতে চলে গেলো এবং আজকে ঘোষণা করে দিলো চিরকাল এইভাবে ও আলাদাই শোবে। ওই ধ্বজভঙ্গ লোকটাকে বিয়ে করে তোমার কপাল পুড়েছে গো বৌদিমণি, তোমার কপাল পুড়েছে। সে তুমি যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করো না কেনো! একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে এই ভাবেই চিরকাল স্বামীর গঞ্জনা সহ্য করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে, নাকি নতুন ভাবে বাঁচার চেষ্টা করবে .. সেটা তোমাকে ঠিক করতে হবে। আমি চললাম গো, আমার এখনো দুই বাড়ি কাজ পড়ে রয়েছে।" পম্পার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে বেশ কিছুক্ষণ সান্তনা দিয়ে কথাগুলো বলে গীতাও বেরিয়ে গেলো।
স্নান করতে যাওয়ার আগে ছোট কাঠের আলমারিটা খুলে জামাকাপড় বের করতে গিয়ে পম্পা দেখলো, গত সপ্তাহ থেকে অপরিষ্কার জামাকাপড় গুলো দলা পাকানো অবস্থায় আলমারির মধ্যেই ঢোকানো রয়েছে। দৃশ্যটা দেখেই ভীষণ রাগ হলো পম্পার। তাদের ক্যাম্পাসের পার্মানেন্ট ধোপা মুনিলাল মারা যাওয়ার পর থেকে, ওর যে ছেলেটা এখানে এসেছে, সেটা একদম কামচোর। 'কি যেন নাম ওর, সেটাই তো জিজ্ঞাসা করা হয়নি! মুনিলালের ছেলে যখন, চুনিলাল ছাড়া আর কিই বা নাম হবে! ধোপার কাজ করে, অথচ স্টাইল দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। ফর্সা, লম্বা-চওড়া চেহারা, একমুখ দাড়ি, ব্যাকব্রাশ করা চুল .. দেখলে মনে হয় যেন সিনেমার হিরো। সেদিনকে বাইকে করে যাচ্ছিল, আমি একজন অফিসারের বউ হয়ে ওকে ডাকলাম! আমার দিকে একবার তাকিয়ে বাইকটা নিয়ে হুশ করে বেরিয়ে চলে গেলো? এত বড় সাহস! একদিন পাই চোখের সামনে ওকে দেখতে, তারপর বোঝাবো আমি কি জিনিস!' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ড্রয়িংরুমের জানলাটার কাছে এসে দাঁড়ালো পম্পা। ঠিক সেই মুহূর্তে দেখলো ওই লম্বা-চওড়া, ফর্সা, দাড়িওয়ালা ছেলেটা তারই কোয়ার্টারের সামনে দিয়ে যাচ্ছে। তবে বাইকে করে নয়, পায়ে হেঁটে।
"এই চুনিলাল, ইধার তাকাও। আরে ইধার ইধার, জানালার দিকে তাকাও। তোমাকে সেদিনকে যখন আমি ডাকলাম, তখন আমাকে দেখেও কিঁউ চলা গিয়া হুশ করকে বাইক চালাকে? তুমি জানতা হ্যায়, হাম কৌন হ্যায়? তুমহারা সাহস বড্ড বাড় গিয়া, তাই না? রিপোর্ট কর দেগা তুমহারা নামে। তখন সামঝেগা কত ধানে কত চাল হোতা হ্যায়! ইধার আও, আউর এসে কাপড় নিয়ে যাও।" পম্পার মুখে এই জ্ঞানপিঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত হিন্দি শুনে থমকে দাঁড়ালো যুবকটি। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে 'আমাকে কিছু বলছেন?' এরকম একটা ইশারা করে সদর দরজার পাশে লাগানো কলিংবেলটা টিপলো।
"হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ, তোমাকেই তো বলছি। তুমি ছাড়া কি এখানে চুনিলাল নামের আর কেউ আছে? এখানে দাড়াও, আমি কাপড় জামাগুলো নিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, দু'দিনের মধ্যে একদম কেচে আয়রন করে দিয়ে যাবে কিন্তু। তোমার বাবা তো প্রতিটা জামাকাপড় পিছু ৩ টাকা করে নিতো। তুমি কি রেট বাড়িয়েছো, না একই রেখেছো?" কথাগুলো বলে জামাকাপড় নিতে ভেতরে যেতে উদ্যত হলে পম্পাকে থামালো যুবকটি।
"দেখুন ম্যাডাম আমার মনে হয় আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আপনি আর কিছু বলার আগে, দয়া করে যদি এক মিনিট মন দিয়ে আমার কথাগুলো শোনেন, তাহলে মনে হয় আপনার ভুল ধারণাটা কেটে যাবে।" যুবকটির এই কথায় পম্পা বলে উঠলো, "বুঝেছি বুঝেছি, তোমার নাম চুনিলাল নয়, তাইতো? আমি ভেবেছিলাম, মুনিলালের ছেলে চুনিলাল হবে। তাহলে কি তোমার নাম মিছরিলাল?"
"আজ্ঞে না ম্যাডাম, প্রথমতঃ আমার নাম চুনিলাল বা মিছরিলাল কোনোটাই নয়। দ্বিতীয়তঃ আমার বাবার নাম মুনিলাল নয়। তৃতীয়তঃ আমার বাবা এখনো বেঁচে আছেন এবং চতুর্থতঃ আমার বাবা ধোপার কাজ করেন না। উনি এই ফ্যাক্টরির একজন সাপ্লায়ার। এবার বলুন, আর কিছু বলার আছে আপনার?" খুব স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বললো যুবকটি।
"কিন্তু আমি যে তোমাকে সরি আপনাকে সেদিন, মানে মুনিলাল মারা যাওয়ার আগে ওর সাথে দেখেছিলাম ওর বাড়ি থেকে বেরোতে? তার আগে তো কোনোদিন আপনাকে এই ক্যাম্পাসে দেখিনি! তাই ভেবেছিলাম আপনি ওর ছেলে, দেশ থেকে এখানে এসেছেন বোধহয় বাবার কাজে সাহায্য করতে।" আমতা আমতা করে বললো পম্পা।
"আচ্ছা, কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কাউকে দেখলে আপনি তাকে তার ছেলে ভেবে নেন বা আত্মীয় ভেবে নেন? আমি জানিনা আপনি আমাকে কোন দিন দেখেছিলেন! হতে পারে সেদিন হয়তো আমি নিজে হাতে করে আমার জামাকাপড় দিতে এসেছিলাম চাচাকে। উনার শরীরটাতো বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ যাচ্ছিল, তাই হয়তো যেতে পারেনি আমাদের বাড়িতে। তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আমি ধোপা নই। আমি একজন আই স্পেশালিস্ট। আমার বাবা-মা এখানে থাকলেও, আমি কলকাতাতেই থাকি। ওখানে আমার একটা চশমার দোকান আছে এবং ওই দোকানে আমি বসি, মানে চক্ষু পরীক্ষা করি। এখানে আসি মাঝে মধ্যে। আপনারা মনে হয় খুব বেশিদিন হলো এখানে আসেন নি। তাই হয়তো দেখেননি আমাকে।" মুচকি হেসে শান্তভাবে কথাগুলো বললো যুবকটি।
"আই স্পেশালিস্ট, মানে ডাক্তার? আর আপনার বাবা এই ফ্যাক্টরির সাপ্লায়ার? আরিব্বাস, তার মানে তো বিশাল ব্যাপার আপনাদের! সরি সরি আই এম এক্সট্রিমলি সরি। না বুঝে অনেক কটু কথা বলে ফেলেছি আপনাকে। আমাকে ক্ষমা করে দিন, আর এই কথাগুলো বাইরে কাউকে বলার দরকার নেই। আপনি আসুন না, ভেতরে আসুন।" কথাগুলো বলে দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে যুবকটিকে ভেতরে আসতে ইঙ্গিত করলো পম্পা।
এদিক ওদিক তাকিয়ে ভিতরে ঢুকে ড্রয়িংরুমে রাখা সোফার উপর বসে যুবকটি পম্পার দিকে তাকিয়ে বললো, "আমাকে চা বা জল অফার করার আগে একটা কথা বোধহয় আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন। আমি বাঙালি, কিন্তু * নয়। আমরা ., আমাদের আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদে। আমার নাম হুমায়ূন কবির।"
"তো? তার জন্য আমি কি করবো? নাচবো?" অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো পম্পা।
"না, তাই বলছিলাম আর কি। পরে জানতে পারলে আমার এঁটো করা গ্লাসটা বা চায়ের কাপটাই হয়তো ফেলে দিতেন। তাই ওগুলো যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্যই ইনফরমেশনটা দিয়ে রাখলাম আপনাকে।" হাসতে হাসতে উত্তর দিলো হুমায়ুন।
"আমার কি মনে হচ্ছে বলুন তো এখন? আপনার চায়ে বিষ মিশিয়ে দিয়ে আপনাকে সেটা খাওয়াই।" কপট রাগ দেখিয়ে বললো পম্পা।
- "বাড়িতে বিষ আছে নাকি?"
- "অবশ্যই আছে, ইঁদুর মারার বিষ। ভাবছি ওটাই চায়ের মধ্যে গুলিয়ে খাইয়ে দেবো আপনাকে।"
- "হাহাহা .. কোনো লাভ হবে না ম্যাডাম। ইঁদুরের বিষে মানুষ মরে না। কয়েকবার বমি করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আর তাতেও যদি না হয়, হসপিটালে গিয়ে একবার ওয়াশ করে নিলেই হয়ে যাবে, জোকস এপার্ট। তবে হ্যাঁ, এত বেলায় আমি কিন্তু সত্যি সত্যি কিছু খাবো না। আজকে ছুটির দিন, তাই রিল্যাক্স করার জন্য একটু বেরোচ্ছিলাম। তার মাঝে তো আপনি আমাকে ডেকে নিয়ে এসে ধোপা বানিয়ে দিলেন।"
- "আমি তো আগেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি সেই ব্যাপারে। ওই কথা বলে আমাকে আর লজ্জা দেবেন না। কিচ্ছু খাবেন না?"
- "অন্যদিন হলে অবশ্যই খেতাম, কিন্তু আজ নয়। আজ বাইরে লাঞ্চ করার প্ল্যান আছে আমার। গঞ্জের মোড়ে যে বিরিয়ানির নতুন দোকানটা হয়েছে, সেখানে মটন বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ দিয়ে লাঞ্চ সেরে সিনেমা দেখতে যাবো। রেস্টুরেন্টটার পাশেই তো সিনেমা হল! সালমান খানের নতুন একটা সিনেমা এসেছে, ওটা দেখবো।"
- "খুব ভালো, আপনি যে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন, তাতেই আমি খুশি। আচ্ছা আপনি তো নরম্যাল ব্রা দেখতে চাইলেন! ঠিক আছে নরম্যালই দেখাচ্ছি। আপনি এক পা পিছিয়ে গিয়ে একটু দাঁড়াবেন ম্যাডাম? তাহলে আমি নিজের আইডিয়া থেকে আপনার সাইজটা ডিটেক্ট করে নেবো।"
"কেন আপনার চোখে এক্সরে মেশিন বসানো রয়েছে নাকি? হিহিহি .." হাসতে হাসতে কথাগুলো বলে এক পা পিছিয়ে দাঁড়ালো পম্পা।
- "না ম্যাডাম, আমার চোখে কোনো মেশিন বসানো নেই। আসলে ছোটবেলা থেকে দোকানে বাবার সঙ্গে বসছি তো, তাই একটা আইডিয়া হয়ে গেছে। তবে আমার বাবার অ্যকিউরেসির কাছে আমারটা কিছুই নয়। আমার বাবা তো বাইরে থেকে দেখে আন্টিদের বা বৌদিদের ব্রায়ের কাপ সাইজ পর্যন্ত বলে দিতো। আপনি শুনলে অবাক হবেন ম্যাডাম, কোনো পরিচিত ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীর জন্য ব্রা কিনতে আসতো আমাদের এই দোকানে, তখন বাবার কাছ থেকে তার স্ত্রীর সাইজ জিজ্ঞেস করে, ব্রা আর প্যান্টি কিনে নিয়ে যেত এখান থেকে।"
- "হিহিহি .. আচ্ছা তাই? তা আপনার বাবা এখন কোথায়? ওনাকে দোকানে দেখছি না তো! বাই দ্য ওয়ে, তখন থেকে আমাকে 'ম্যাডাম' 'ম্যাডাম' করছেন কেনো? আমি আপনাকে 'ভাই' করে বলছি আর আপনি আমাকে ম্যাডাম বলে যাচ্ছেন! আমি এ বছর ছাব্বিশে পড়লাম, আপনাকে দেখে মনে হয় আমার থেকে ছোটোই হবেন .."
- "আমার চব্বিশ, ঠিক আছে তাহলে আপনাকে দিদিভাই বলবো। আপত্তি নেই তো? হি ইজ নো মোর, মানে আমার বাবা আর বেঁচে নেই। বছরখানেক হলো গত হয়েছেন। তাই এখন আমি একাই বসি দোকানে।"
- "না আপত্তি নেই। তবে তোমার বাবার ব্যাপারটা শুনে খারাপ লাগলো, এই বয়সেই পিতৃহারা হতে হয়েছে তোমাকে।! যাই হোক, তাড়াতাড়ি দেখে বলো আমার ব্রায়ের সাইজটা, আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। এই দ্যাখো 'তুমি' বলে ফেললাম .."
"না না ঠিক আছে, তুমি করেই তো বলবে! আমি তো ছোট তোমার থেকে বয়সে দিদিভাই। দাঁড়াও, ভালো করে দেখতে দাও, দেখে বলছি। দেখে তো মনে হচ্ছে ৩৬, কিন্তু কাপ সাইজটা সম্ভবত ৯৭ সেন্টিমিটার হবে। ওই ধরো সব মিলিয়ে ৩৬ সি সাইজের ব্রা লাগবে তোমার।" কথাগুলো বলে পেছনে রাখা সুসজ্জিত শোকেসের মধ্যে থেকে অন্তর্বাসের প্যাকেট বের করতে লাগলো যুবকটি।
- "আরে দাঁড়াও দাঁড়াও, এত তাড়াহুড়ো কোরো না। তুমি আমাকে প্যাডেড ব্রা দেখাও তো!"
- "বলছিলাম দিদিভাই, প্যাডেড ব্রা তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিনেজারেরা পড়ে, অথবা যাদের কাপ সাইজ ৩৪ এর নিচে, তারা ব্যবহার করে। তোমার ঈশ্বরপ্রদত্ত যা আছে, সে ক্ষেত্রে প্যাডেড ব্রা ব্যবহার করতে হবে বলে মনে হয় না।"
- "কি ব্যবহার করতে হবে আর হবেনা সেটা আমি বুঝবো। তোমাকে যেটা বলছি, সেটাই করো।"
- "ঠিক আছে, তোমার যা ইচ্ছে! কালার ডিমান্ড কিছু আছে?"
- "হ্যাঁ আছে .. একটা ব্ল্যাক দাও, একটা পিঙ্ক দাও। আর একটা, আর একটা, আর একটা, দাড়াও বলছি .. ঠিক আছে একটা রেড কালারের দিয়ে দাও। তবে সাইজ যদি ছোট বড় হয়, তাহলে কিন্তু ফেরত নিতে হবে! তখন 'আপনি পড়ে ফেলেছেন' এসব বললে চলবে না।
- "একদম দিদিভাই, অবশ্যই ফেরত নেবো। তবে ছোট বড় একটাও হবে না। সব কটা পারফেক্ট হবে। আমার চোখের জরিপটা যে কত ভালো, সেটা তখন তুমি নিজেই বুঝতে পারবে। ঠিক আছে, এই নাও তোমার পছন্দের তিনটি কালারের ব্রা দিয়ে দিলাম। তাহলে প্যাক করে দিচ্ছি?"
- "হ্যাঁ করতেই তো বললাম। কত দেবো?"
- "ওই তো আড়াইশো টাকা করে, তিনটে সাড়ে সাতশো টাকা হয়। তুমি সাতশো পঁচিশ দাও।"
- "ইয়ার্কি মারার জায়গা পাওনি! এগুলোর আড়াইশো টাকা করে দাম? আরে এর থেকে তো বাঁকুড়াতে অনেক সস্তা গো! আমি আমার শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে গিয়ে যেগুলো কিনতাম, সেগুলো তো ৮৫ টাকা, কোনোটা ৯৫ টাকা, কোনোটা খুব বেশি হলে ১১০ টাকা দাম নিতো। মানছি ওগুলো নরম্যাল ব্রা, কিন্তু তাই বলে এত দাম তোমাদের এখানে? তিনটে মিলিয়ে ৬০০ টাকার এক পয়সা বেশি দেবো না।"
- "মরে যাবো দিদিভাই, মরে যাবো। আমাদের কেনা দামটাও উঠবে না এতে। আরে তুমি যেগুলো কিনতে, সেগুলো আন্টি টাইপ ব্রা। ওগুলো তো আমাদের এখানে আরও কমে পাওয়া যায়। ওসব পড়ার বয়স হয়েছে নাকি তোমার? তোমার জন্য এগুলোই পারফেক্ট। ঠিক আছে, না তোমার না আমার, সাতশো টাকা দাও।"
- "একদমই না, গ্রাম থেকে এসেছি বলে তুমি কি আমাকে বোকা ভেবেছো? এত কম লাভ রেখে তোমরা বিক্রি করো না এইসব জিনিস, সেটা আমি জানি। ঠিক আছে তোমাকে 'ভাই' বলে ডেকেছি, তাই যা বলেছিলাম তার থেকে পঞ্চাশ টাকা আরো বেশি দিচ্ছি। তাহলে টোটাল ৬৫০, ওকে? আরে বাবা, আজতো শুধু ব্রা কিনলাম। এরপরে একদিন এসে প্যান্টি কিনে নিয়ে যাবো তোমার দোকান থেকে, চিন্তা নেই। মান্ধাতার আমলের স্টাইলের নয়, মডার্ন স্টাইলের কিছু দেখিও। তাছাড়া আমি যে ক্যাম্পাসে থাকি, সেখানে আমার বয়সী বা আমার থেকে বড় আরও অনেক লেডিস থাকে। তাদেরকে বলবো তোমার দোকানের কথা, তারাও আসবে তোমার দোকানে। ওদের থেকে যত পারো লাভ করে নিও।"
- "পড়েছি যবনের হাতে .. থাক, বাকিটা আর বললাম না। তাহলে বলো তোমার ওখানকার মহিলাদের আমার দোকানের কথা, আর তুমিও এসো আবার। এই নাও, তিনটে প্যাক করে দিলাম, ৬৫০ টাকাই দাও।"
ব্রায়ের প্যাকেটটা নিয়ে, হাসিমুখে বিক্রেতা যুবকটিকে বিদায় জানিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো পম্পা।
★★★★
"মহারানীর এতক্ষণে ফেরার সময় হলো?" বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই অমিতের এইরূপ টিপ্পনীতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে, তারপর সোজা নিজের বেডরুমে ঢুকে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো পম্পা।
অমিত ভেবেছিলো তার কথায় হয়তো চমকে যাবে তার স্ত্রী, হয়তো থতমতো খেয়ে গিয়ে কৈফিয়ৎ দেওয়ার চেষ্টা করবে তার স্বামীর কাছে। কিন্তু এগুলোর কোনটাই না করে, কোনো রিয়্যাকশন না দিয়ে তার স্ত্রীর ভেতরে ঢুকে যাওয়ায়, যারপরনাই রেগে গেলো অমিত।
ওইরকম মারকাটারি, উত্তেজক ফিগারে নিচে শুধু প্যান্টি পড়ে ঊর্ধাঙ্গের অন্তর্বাস ছাড়াই উপরে একটা হাতকাটা সুতির পাতলা ফিনফিনে নাইটি চাপিয়ে পম্পা ঘর থেকে বেরোনোর পর, তার বউয়ের দিকে তাকিয়ে ফেটে পড়লো অমিত, "আজকাল তোমার বাড়ির বাইরে বেরোবার পোশাক দেখলে লজ্জায় মাথা কাটা যায় আমার। আর বাড়ির ভেতরে তো কথাই নেই, ঠিক যেন মনে হয় কোনো প্রস্টিটিউটদের এলাকায় এসেছি আমি! ঠিক যেমন এখন পড়ে রয়েছো। পাঁচজনে পাঁচ কথা বলে বেড়াচ্ছে চারিদিকে, সে খবর রাখো?"
"খেতে দেবো তো? তাহলে গিয়ে বসে পড়ো ডাইনিং টেবিলে। আমি সার্ভ করে দিচ্ছি।" এতক্ষণ ধরে তার স্বামীর বলা সবকটা কথা ইগনোর করে এইরূপ উক্তি করলো পম্পা।
এতে যেন মেজাজের পারদ আরও চড়লো অমিতের। চিৎকার করে বলে উঠলো, "কি হলো, কথা ঘোরাচ্ছো যে? আমার কথাগুলো কানে যায় নি তোমার? পাঁচজনে পাঁচ কথা বলে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। আমার তো একটা মান সম্মান বলে ব্যাপার আছে, নাকি? আর এমন ভাবে বলছো যেন আমার জন্য কোর্মা, কালিয়া, পোলাও এসব রান্না করে রেখেছো!"
"কোর্মা, কালিয়া, পোলাও এই প্রিপারেশন গুলোর ইনগ্ৰেডিয়েন্টস দোকান থেকে কিনে এনে দিলেই বানিয়ে দিতাম। তোমার ফ্যাক্টরির লোকজন যা বাজার দোকান করে দেয়, সেই হিসেবেই রান্না হয়। সেটা তুমি নিজে ভালো করেই জানো। আর আমি কোনো কথা ঘোরাইনি, তোমার বলা সবকটা কথাই শুনেছি আমি। তুমি যে কথাগুলো নিজের ফ্রাস্টেশন থেকে বলছো, সেটাও বুঝতে পেরেছি। তাই তোমার মনোকষ্ট যাতে আর না বাড়ে, সেজন্য চুপ করে রয়েছি। তুমি যখন বারবার খোঁচাচ্ছ, তাহলে বলছি শোনো .. পাঁচজনে তো অনেক কথাই বলে। সেগুলোও তো আমার কানে আসে। পাঁচজনে তো এটাও বলে যে, তুমি হলে ধ্বজভঙ্গ! আমি অবশ্য জনে জনে কথাটা বলতে যাইনি, আমি শুধু আমাদের কাজের মাসি গীতা দি'কে কথাটা বলেছিলাম। তাও বলতাম না, একদিন দুপুরে তুমি আমাকে স্যাটিসফাই না করেই বেরিয়ে গেলে, মনে আছে? আমি বসে বসে কাঁদছিলাম। তখন গীতা দি কাজ করতে এসেছিলো। ও আমার চোখ-মুখের অবস্থা দেখে বারবার প্রশ্ন করতে থাকায়, ওকে বলেছিলাম। ও সেটা বাইরে গিয়ে রটিয়ে দিলে আমি আর কি করতে পারি? এখন তো বাইরের সবাই, এমনকি তোমার সহকর্মীরাও এটা নিয়ে হাসাহাসি করে।" খুব স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বললো পম্পা।
"ঘর জ্বালানি পর ভোলানি মেয়েমানুষ কোথাকার। আমার লাইফটাকেই নরক বানিয়ে দিলে তুমি! ভেবেছিলাম বাড়িতে এসে খেয়েদেয়ে একটু বিশ্রাম করে, তারপর সেকেন্ড হাফে অফিসে যাবো। কিন্তু এখানে তোমার সাথে আর এক মুহূর্ত থাকতে আমার ঘেন্না করছে।" এই বলে হনহন নিজের ঘরে ঢুকে দড়াম করে দরজা আটকে দিলো অমিত।
এর কিছুক্ষণ পর ফরমাল ড্রেস পড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এসে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো সে। অমিত চলে যাওয়ার পর ছলছলে দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে থেকে ধরা গলায় পম্পা বললো, "কে কার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছে, এটা একমাত্র ঈশ্বর জানেন।"
★★★★
পরের দিন সকালে একটু দেরিতে ঘুম ভাঙলো পম্পার। আগেরদিন তার স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়াতে মেজাজটা খিঁচড়ে ছিলো তার। কোনো কালেই বেশিক্ষণ রাগ পুষে রাখতে পারে না সে। তারপর এক বাড়িতে দু'জন মানুষ থাকবে, সর্বোপরি তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী হয়েও পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবে না! এটা ভাবতেই মন কেমন করে উঠলো পম্পার। সবকিছু ভুলে অমিতের কাছে গিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আধো আধো ভঙ্গিতে বললো, "এই শুনছো, আজ ছুটি নাও না! কাল ফেরার সময় দেখলাম গঞ্জ বাজারের সিনেমা হলটাতে সালমানের একটা দারুন সিনেমা এসেছে। চলো না, দেখে আসি দু'জনে! এখান থেকে সাড়ে এগারোটা বারোটার মধ্যে বেরিয়ে যাব তারপরে বাইরে কোথাও লাঞ্চ করে ম্যাটিনি শোয়ে দেখবো সিনেমাটা!"
"ছাড়ো .. তোমার সঙ্গে সিনেমায় যাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার, একসঙ্গে এক বাড়িতে থাকতেও আমার ঘেন্না হয়। নেহাত আমার বাবা-মা আমাকেই দোষ দেবে, তাই বাধ্য হয়ে তোমার সঙ্গে থাকতে হচ্ছে। দেখলে না, কাল রাতে আমি আলাদা গিয়ে শুলাম পাশের ঘরে। এবার থেকে আলাদাই ঘুমাবো। তাছাড়া ওইসব সিনেমা দেখে বাজে সময় নষ্ট করার মতো সময় আমার হাতে নেই। তিন মাস হয়ে গেলো, এখনো অর্ধেক কাজ হলো না। ছ'মাসের মধ্যে প্রজেক্টটা শেষ করতে না পারলে সান্যাল প্রমোশনটা নিয়ে নেবে। তোমাকে এসব বলে অবশ্য কোনো লাভ নেই, তোমার মোটা মাথায় কথাগুলো ঢুকবে না। যাইহোক, আমি বেরোলাম। একজন আসবে, ওর হাতে আমার লাঞ্চটা পাঠিয়ে দিও ফ্যাক্টরিতে।" কথাগুলো বলে এক ঝটকায় পম্পার বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে বেরিয়ে গেলো অমিত।
"ও কি বলে গেলো, শুনলে গীতা দি? আমার সঙ্গে এক বাড়িতে থাকতে ওর নাকি ঘেন্না হয়! কেন বলো তো? কি করেছি আমি? আমি কি রাতের পর রাত বাইরে কাটিয়েছি? নাকি মদের ফোয়ারা উড়িয়ে বাড়িতে অন্য পুরুষের সাথে বেলেল্লাপনা করেছি? আমি তো এখানে আসতেই চাইনি। আমি তো শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে চেয়েছিলাম, ওই তো আমাকে জোর করে নিয়ে এলো এখানে। তাহলে কেনো সবসময় এই কথা বলবে যে, ও আমাকে ঘেন্না করে? কেনো, কেনো?" পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাজের মাসি গীতাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে কথাগুলো বললো পম্পা।
"তার কারণ তুমি এগুলোর কিছুই করোনি। এগুলোর একটাও যদি তুমি করতে, তাহলে তোমার স্বামী ইঁদুরের মতো ল্যাজ গুটিয়ে গর্তে ঢুকে যেতো। কাল রাতে তোমার বর আলাদা কেন শুয়েছিল জানো? তোমার উপর রাগ করে নয়। নিজের অকর্মণ্যতা ঢাকার জন্য। রাতে তোমার যদি হঠাৎ প্রেম জেগে ওঠে? যদি তোমার বরের সঙ্গে সোহাগ করতে চাও? তখন তো তোমার বরের মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে। কারণ ওর তো লিঙ্গই দাঁড়ায় না। সেই জন্যেই একটা অজুহাত খাড়া করে আগেভাগেই আলাদা ঘরে শুতে চলে গেলো এবং আজকে ঘোষণা করে দিলো চিরকাল এইভাবে ও আলাদাই শোবে। ওই ধ্বজভঙ্গ লোকটাকে বিয়ে করে তোমার কপাল পুড়েছে গো বৌদিমণি, তোমার কপাল পুড়েছে। সে তুমি যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করো না কেনো! একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে এই ভাবেই চিরকাল স্বামীর গঞ্জনা সহ্য করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে, নাকি নতুন ভাবে বাঁচার চেষ্টা করবে .. সেটা তোমাকে ঠিক করতে হবে। আমি চললাম গো, আমার এখনো দুই বাড়ি কাজ পড়ে রয়েছে।" পম্পার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে বেশ কিছুক্ষণ সান্তনা দিয়ে কথাগুলো বলে গীতাও বেরিয়ে গেলো।
স্নান করতে যাওয়ার আগে ছোট কাঠের আলমারিটা খুলে জামাকাপড় বের করতে গিয়ে পম্পা দেখলো, গত সপ্তাহ থেকে অপরিষ্কার জামাকাপড় গুলো দলা পাকানো অবস্থায় আলমারির মধ্যেই ঢোকানো রয়েছে। দৃশ্যটা দেখেই ভীষণ রাগ হলো পম্পার। তাদের ক্যাম্পাসের পার্মানেন্ট ধোপা মুনিলাল মারা যাওয়ার পর থেকে, ওর যে ছেলেটা এখানে এসেছে, সেটা একদম কামচোর। 'কি যেন নাম ওর, সেটাই তো জিজ্ঞাসা করা হয়নি! মুনিলালের ছেলে যখন, চুনিলাল ছাড়া আর কিই বা নাম হবে! ধোপার কাজ করে, অথচ স্টাইল দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। ফর্সা, লম্বা-চওড়া চেহারা, একমুখ দাড়ি, ব্যাকব্রাশ করা চুল .. দেখলে মনে হয় যেন সিনেমার হিরো। সেদিনকে বাইকে করে যাচ্ছিল, আমি একজন অফিসারের বউ হয়ে ওকে ডাকলাম! আমার দিকে একবার তাকিয়ে বাইকটা নিয়ে হুশ করে বেরিয়ে চলে গেলো? এত বড় সাহস! একদিন পাই চোখের সামনে ওকে দেখতে, তারপর বোঝাবো আমি কি জিনিস!' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ড্রয়িংরুমের জানলাটার কাছে এসে দাঁড়ালো পম্পা। ঠিক সেই মুহূর্তে দেখলো ওই লম্বা-চওড়া, ফর্সা, দাড়িওয়ালা ছেলেটা তারই কোয়ার্টারের সামনে দিয়ে যাচ্ছে। তবে বাইকে করে নয়, পায়ে হেঁটে।
"এই চুনিলাল, ইধার তাকাও। আরে ইধার ইধার, জানালার দিকে তাকাও। তোমাকে সেদিনকে যখন আমি ডাকলাম, তখন আমাকে দেখেও কিঁউ চলা গিয়া হুশ করকে বাইক চালাকে? তুমি জানতা হ্যায়, হাম কৌন হ্যায়? তুমহারা সাহস বড্ড বাড় গিয়া, তাই না? রিপোর্ট কর দেগা তুমহারা নামে। তখন সামঝেগা কত ধানে কত চাল হোতা হ্যায়! ইধার আও, আউর এসে কাপড় নিয়ে যাও।" পম্পার মুখে এই জ্ঞানপিঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত হিন্দি শুনে থমকে দাঁড়ালো যুবকটি। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে 'আমাকে কিছু বলছেন?' এরকম একটা ইশারা করে সদর দরজার পাশে লাগানো কলিংবেলটা টিপলো।
"হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ, তোমাকেই তো বলছি। তুমি ছাড়া কি এখানে চুনিলাল নামের আর কেউ আছে? এখানে দাড়াও, আমি কাপড় জামাগুলো নিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, দু'দিনের মধ্যে একদম কেচে আয়রন করে দিয়ে যাবে কিন্তু। তোমার বাবা তো প্রতিটা জামাকাপড় পিছু ৩ টাকা করে নিতো। তুমি কি রেট বাড়িয়েছো, না একই রেখেছো?" কথাগুলো বলে জামাকাপড় নিতে ভেতরে যেতে উদ্যত হলে পম্পাকে থামালো যুবকটি।
"দেখুন ম্যাডাম আমার মনে হয় আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আপনি আর কিছু বলার আগে, দয়া করে যদি এক মিনিট মন দিয়ে আমার কথাগুলো শোনেন, তাহলে মনে হয় আপনার ভুল ধারণাটা কেটে যাবে।" যুবকটির এই কথায় পম্পা বলে উঠলো, "বুঝেছি বুঝেছি, তোমার নাম চুনিলাল নয়, তাইতো? আমি ভেবেছিলাম, মুনিলালের ছেলে চুনিলাল হবে। তাহলে কি তোমার নাম মিছরিলাল?"
"আজ্ঞে না ম্যাডাম, প্রথমতঃ আমার নাম চুনিলাল বা মিছরিলাল কোনোটাই নয়। দ্বিতীয়তঃ আমার বাবার নাম মুনিলাল নয়। তৃতীয়তঃ আমার বাবা এখনো বেঁচে আছেন এবং চতুর্থতঃ আমার বাবা ধোপার কাজ করেন না। উনি এই ফ্যাক্টরির একজন সাপ্লায়ার। এবার বলুন, আর কিছু বলার আছে আপনার?" খুব স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বললো যুবকটি।
"কিন্তু আমি যে তোমাকে সরি আপনাকে সেদিন, মানে মুনিলাল মারা যাওয়ার আগে ওর সাথে দেখেছিলাম ওর বাড়ি থেকে বেরোতে? তার আগে তো কোনোদিন আপনাকে এই ক্যাম্পাসে দেখিনি! তাই ভেবেছিলাম আপনি ওর ছেলে, দেশ থেকে এখানে এসেছেন বোধহয় বাবার কাজে সাহায্য করতে।" আমতা আমতা করে বললো পম্পা।
"আচ্ছা, কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কাউকে দেখলে আপনি তাকে তার ছেলে ভেবে নেন বা আত্মীয় ভেবে নেন? আমি জানিনা আপনি আমাকে কোন দিন দেখেছিলেন! হতে পারে সেদিন হয়তো আমি নিজে হাতে করে আমার জামাকাপড় দিতে এসেছিলাম চাচাকে। উনার শরীরটাতো বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ যাচ্ছিল, তাই হয়তো যেতে পারেনি আমাদের বাড়িতে। তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আমি ধোপা নই। আমি একজন আই স্পেশালিস্ট। আমার বাবা-মা এখানে থাকলেও, আমি কলকাতাতেই থাকি। ওখানে আমার একটা চশমার দোকান আছে এবং ওই দোকানে আমি বসি, মানে চক্ষু পরীক্ষা করি। এখানে আসি মাঝে মধ্যে। আপনারা মনে হয় খুব বেশিদিন হলো এখানে আসেন নি। তাই হয়তো দেখেননি আমাকে।" মুচকি হেসে শান্তভাবে কথাগুলো বললো যুবকটি।
"আই স্পেশালিস্ট, মানে ডাক্তার? আর আপনার বাবা এই ফ্যাক্টরির সাপ্লায়ার? আরিব্বাস, তার মানে তো বিশাল ব্যাপার আপনাদের! সরি সরি আই এম এক্সট্রিমলি সরি। না বুঝে অনেক কটু কথা বলে ফেলেছি আপনাকে। আমাকে ক্ষমা করে দিন, আর এই কথাগুলো বাইরে কাউকে বলার দরকার নেই। আপনি আসুন না, ভেতরে আসুন।" কথাগুলো বলে দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে যুবকটিকে ভেতরে আসতে ইঙ্গিত করলো পম্পা।
এদিক ওদিক তাকিয়ে ভিতরে ঢুকে ড্রয়িংরুমে রাখা সোফার উপর বসে যুবকটি পম্পার দিকে তাকিয়ে বললো, "আমাকে চা বা জল অফার করার আগে একটা কথা বোধহয় আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন। আমি বাঙালি, কিন্তু * নয়। আমরা ., আমাদের আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদে। আমার নাম হুমায়ূন কবির।"
"তো? তার জন্য আমি কি করবো? নাচবো?" অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো পম্পা।
"না, তাই বলছিলাম আর কি। পরে জানতে পারলে আমার এঁটো করা গ্লাসটা বা চায়ের কাপটাই হয়তো ফেলে দিতেন। তাই ওগুলো যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্যই ইনফরমেশনটা দিয়ে রাখলাম আপনাকে।" হাসতে হাসতে উত্তর দিলো হুমায়ুন।
"আমার কি মনে হচ্ছে বলুন তো এখন? আপনার চায়ে বিষ মিশিয়ে দিয়ে আপনাকে সেটা খাওয়াই।" কপট রাগ দেখিয়ে বললো পম্পা।
- "বাড়িতে বিষ আছে নাকি?"
- "অবশ্যই আছে, ইঁদুর মারার বিষ। ভাবছি ওটাই চায়ের মধ্যে গুলিয়ে খাইয়ে দেবো আপনাকে।"
- "হাহাহা .. কোনো লাভ হবে না ম্যাডাম। ইঁদুরের বিষে মানুষ মরে না। কয়েকবার বমি করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আর তাতেও যদি না হয়, হসপিটালে গিয়ে একবার ওয়াশ করে নিলেই হয়ে যাবে, জোকস এপার্ট। তবে হ্যাঁ, এত বেলায় আমি কিন্তু সত্যি সত্যি কিছু খাবো না। আজকে ছুটির দিন, তাই রিল্যাক্স করার জন্য একটু বেরোচ্ছিলাম। তার মাঝে তো আপনি আমাকে ডেকে নিয়ে এসে ধোপা বানিয়ে দিলেন।"
- "আমি তো আগেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি সেই ব্যাপারে। ওই কথা বলে আমাকে আর লজ্জা দেবেন না। কিচ্ছু খাবেন না?"
- "অন্যদিন হলে অবশ্যই খেতাম, কিন্তু আজ নয়। আজ বাইরে লাঞ্চ করার প্ল্যান আছে আমার। গঞ্জের মোড়ে যে বিরিয়ানির নতুন দোকানটা হয়েছে, সেখানে মটন বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ দিয়ে লাঞ্চ সেরে সিনেমা দেখতে যাবো। রেস্টুরেন্টটার পাশেই তো সিনেমা হল! সালমান খানের নতুন একটা সিনেমা এসেছে, ওটা দেখবো।"
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~