Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
#81
রাত যখন ভোরের পাখির ডাক শোনার জন্য অপেক্ষার এক একটা প্রহর গুনছে সেই সময় সমস্ত নিস্তব্ধতাকে হাঁটিয়ে দূরে রেখে ভেসে এলো প্যাঁচার কর্কশে কণ্ঠ যা নিমেষেই কাঁপিয়ে গেলো সমস্ত রাজবাড়ী চত্বর। নিজের দেহের সমস্ত অঙ্গ এঁকে এঁকে গুঁড়িয়ে দিয়েও আজও কোনোরকমে দাঁড়িয়ে আছে দুবলহাটির এই রাজবাড়ীটি। প্যাঁচার ডাক সাথে পিছনকার জঙ্গলের এক দল শিয়ালের অট্টহাসি কেমন জেনো আসুরিক পরিবেশ গঠন করেছে। আজ জেনো এক যুদ্ধ হতে চলেছে। যুদ্ধ হতে চলেছে ভূতে মানুষে। আকাশের পশ্চিমদিকের মেঘগুলো আবার জমা হচ্ছে পাঁচিল হবার জন্য। এটা সেই পাঁচিল যেখানে প্রবেশ তো করা যায় কিন্তু বেরিয়ে যাওয়া অসম্ভব। রাজবাড়ীর দোতলার একটা প্রায় ঠিকঠাক ঘরে আজকের রাতটা কাটাবে বলে ঠিক করেছে মোহন ও রক্তিম। ব্যাগে করে একটা টর্চ এনেছিল অবশ্য, কিন্তু তার ব্যাটারি যাতে না ফুরিয়ে যায় তার জন্য তা বন্ধ করে রাখা। জ্বালানো রয়েছে দুটো মোমবাতি। একটা ঘরের দরজার কাছে, আর একটা তাদের কাছে। আগুণের হলদে মায়াবী আলোয়ে সমস্ত ঘরটি বড়ই মায়াবী হয়ে উঠেছে। আজ কি কিছু হতে চলেছে? কে জানে!
‘আমার না বন্ধু কিছু কথা মনে পড়ছে।’
হাই তুলতে তুলতে রক্তিম মোহনের কথার জবাব দিলো- ‘বলে ফেলো।’
‘তখন বলছিলাম না? এই রাজবাড়ী আমার বড়ই চেনা নারীর সম্পর্ক লাগছিলো?’
‘রাত তো অনেকই হল, আবার মাথা বিগড়ে গেলো বুঝি?’
‘আমি পাগল নই বন্ধু।’
‘সেতো আমিও নই তাই তোমার কথায় আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হচ্ছে না।’
‘আমার কথায় বিশ্বাস না করলে কার কথায় করবে আর?’
‘উফ! তুমি বলো তো মোহন। ব্যাপার কি?’
‘ব্যাপার আর কিছুই নয়। আমি সেকালের রাজার চোখে এই রাজবাড়ীটিকে দেখতে পাচ্ছি। সুন্দর অপূর্ব!’
‘কি যাতা বকছ বলোতো?...’
‘বন্ধু তোমায় আমি বলেছিলাম না এই রাজবাড়ীতে কত মেয়ের নির্যাতন হয়েছে তার হিসেব নেই? কত মেয়ে এখানে ;.,ে মৃত্যুবরণ করেছে তার হিসেব তুমি জানো না!’
‘কিন্তু হঠাৎ এই প্রসঙ্গ?’
‘তোমার জানতে ইচ্ছা করছে না সেই সময়ের প্রজা নির্যাতনের কথা?’
‘বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার বুঝলে?’
‘তবে অজানা কারণ রেখেই শোনো! শোনো ওই আওয়াজ!!’
মোহনের গলার স্বর প্রতি কথায় তীব্র তীক্ষ্ণ ধীর অতচ নিচু শান্ত লাগছে। তার এই শেষ কথায় ছিল অদম্য আতঙ্ক! কিসের? তার কথার স্বর এই খালি ঘরটির প্রতিটি দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রতিধ্বনি হতে হতে যেই মিলিয়ে গেলো সেই মুহূর্তেই শোনা গেলো, রাজবাড়ীর কোনো এক স্থান থেকে ভেসে আসছে ছানছান-ছান! নূপুরের নৃত্য ধ্বনি! মুহূর্তেই বুকের রক্ত হিম করে চমকে মোহনের দিকে তাকাল রক্তিম। মোহনের মুখে অজানা এক হাঁসি। সেই হাঁসির আড়ালে লুকিয়ে আছে অসংখ্য কথা। জেনো মনে হচ্ছে এই নূপুরের শব্দ তারই তৈরি। 
‘ওটা কিসের শব্দ মোহন?’
‘শব্দটা বুঝতে পারছ না মূর্খ! ওই শব্দ নূপুরের!’
‘কিন্তু কে নূপুর পরে এই রাজবাড়ীতে?’
‘তার উত্তর জানতে হলে আমার কাহিনী শুনতে হবে বন্ধু!’
‘তোমার কাহিনীর সাথে এই শব্দের কি সম্পর্ক?!’
‘অনেক সম্পর্ক রক্তিম, অনেক সম্পর্ক!’
‘বেশ বলো...’
‘দু-শতক পূর্বের রাজবাড়ীতে কত নারী যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার সংখ্যা আমি তোমায় বলতে পারবো না। ওই সংখ্যা বিরাট! আমি রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী যে আজ পুনর্জন্ম পেয়ে আবার নিজের পাপের আস্তানায় উপস্থিত।  আমি হরনাথ রূপে এই যুগে এই সময়ে মোহন সরকার! আমরা প্রতিটা ব্যক্তি নিজের আগের জন্মের কিছু না কিছু মনে রাখি, যেটা আমরা হয়তো খুঁজে পাই না নতুবা খুঁজেও বুঝেও বুঝতে চাই না। আমি এই রাজবাড়ীতে এসেই বুঝেছি এই রাজবাড়ী আমার চেনা, খুবই চেনা!! রাজার শাসন থাকতে কম মেয়েকে তুষে খেয়েছি? কম মেয়ের সর্বনাশ করেছি!? তারা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে ভেবেছ? প্রতি রাতের খাদ্য যে মেয়ে সে যদি আমার নির্যাতনে মারা যেতো, তবে তার সাথে কি করা হতো তা কি তুমি জানো বন্ধু!? ঐযে কুয়োটি, অতে ওদের সকলকে ফেলে দিয়েছিলাম কোন জন্মে তার কি হিসেব আছে? অতো গভীর কুয়ো গোটা বাংলাদেশে তুমি খুঁজে পাবে না। আজ সেই কুয়োতে মাটি চাপা পরে মুছে গেছে সব অপকর্ম কিন্তু তারা যে ভোলেনি আমায়! আমি আজও তাদের কাছে এক তাজা শিকার যাকে তারা খুঁজছে! যাকে তারা মেরে বুক চিঁরে রক্ত পান করতে চায়!’
হঠাৎ মেঘের গর্জন! গর্জনে, নূপুরের আওয়াজে, প্যাঁচার ডাকে, শিয়ালের চিৎকারে বড়ই ভয়ঙ্কর আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছে চারিদিকে। অসম্ভব ভয়ঙ্কর এই পরিবেশে মোহনের গলার স্বর আরো বুকের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। কি যাতা বকে চলেছে সে? তার কি মাথা গেছে?
‘মোহন? তুমি কি তোমার মধ্যে আছো আদেও?’
‘একেবারেই নয় বন্ধু! দেহের লোভ আমায় গিলে খেয়েছে! শুনতে পাচ্ছ না? শুনতে পাচ্ছ না আমার কর্মফলের আওয়াজ!’
‘কে সে?’
‘আমার হাতেই নির্যাতন হওয়া এক নারী!’
‘তুমি একবার শান্ত হয়ে যাও মোহন। তোমার কোথাও হয়তো ভুল হচ্ছে।’
‘ভুল আমি বলিনি বন্ধু!’
বলতে বলতে মোমবাতিটা নিজের হাতে তুলে নিলো মোহন। উঠে গিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রক্তিম নিজের হাত ঘড়িতে দেখল রাত এখন দেড়টা। বাইরে নূপুরের শব্দ হয়েই চলেছে। দরজার সামনে এগিয়ে গিয়ে তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো সে। আর ঠিক সেই সময় মেঘরাজ গর্জে উঠলেন। আকাশের বুক চিঁরে দেখা গেলো বৈদ্যুতিক শরনিক্ষেপ। সেই আলোয়ে রক্তিম দেখল মোহনের মুখে হাঁসি। সেই হাত উঠিয়ে চিৎকার করে বলল-
‘বিদায় বন্ধু! ভালো থেকো!!’
সাথে সাথে ছুটে ঘরের বাইরে বের হয়ে গেলো মোহন। রক্তিমের ঘোর তখনও কাটেনি। সে বিস্মিত সে অবাক, সে জানে না কি হল। হঠাৎ কি কারণে মোহনের এইরূপ পতিক্রিয়া? আবার বাজ পড়লো কান ফাটিয়ে। আচমকা বাজ পড়ায় কেঁপে উঠলো রক্তিম। তার শিরদাঁড়া বেয়ে অজান্তেই বয়ে গেলো অজানা উত্তেজনার স্রোত। কই? শব্দ যে আসছে না আর! নূপুরের শব্দ গেলো কোথায়!? উঠে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে। মোহন কোথায়? ছুটে সে পালাল কোথায়? দরজার কাছে থাকা মোমবাতিটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সে। পকেটে টর্চ আছে, তবেও এই মোমবাতি দিয়ে যতদূর যাওয়া যায়। চারিদিক অন্ধকারে ঘিরে গেছে। হাওয়া বইছে ক্রমাগত। সেই হাওয়া থেকে মোমবাতিটাকে বাঁচিয়ে রেখে অনেক কষ্টে এগিয়ে গেলো সে। হাত দিয়ে ঢেকেও শেষ রক্ষে হল না। মোমবাতির শিখা দুলতে দুলতে আচমকা উবে গেলো। পকেট থেকে টর্চ লাইট বের করে চারিদিকে ফেললো সে। কোথায় কি? কিছুই নেই এদিক ওদিক। তবে? 
‘মোহন!! মোহন!!!! তুমি কোথায়!?’
কোনো উত্তর নেই। চারিদিক নিস্তব্ধ। বুকের ভিতরটা ভয়ে চুপসে গেলো। মোহনের কিছু হয়নি তো? আবার চিৎকার করে ডাক দিলো-
‘মোহন!! মোহন!!!! তুমি কোথায়!?’
এবারও কোনো সাড়া নেই। উপরদিকে ভালো করে খুঁজেও আলো কি মোহন কাউকেই খুঁজে পেলো না। আবার সেই ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো রক্তিম। আর ঠিক তখনই আবার সেই শব্দ। 
‘ছানছান-ছান নূপুর বাজে, প্রেত নাচে ঘাড়ের উপর; রক্ত আছে, বিনাশ আছে, প্রেত নাচে মৃত্যু নাচন।’
‘আরে এতো মোহনের গলা!’
পা ফেলে এগিয়েই যাচ্ছিলো ঠিক সেই সময় খিলখিলে হাঁসির শব্দে থমকে সেখানেই দাঁড়িয়ে গেলো সে। গায়ের পিছনের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেছে এক হিমের স্রোত যা কোটি কোটি বছরেও একবারও অনুভব করেনি রক্তিম! গায়ের সমস্ত লোম খাঁড়া হয়ে বোঝাল আজ তার ভয় পাবার সময় এসেছে! শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় হঠাৎ সচল হয়ে উঠেছে। এ কার হাঁসির শব্দ? স্বাভাবিক মানুষের হাঁসির শব্দ এ নয়। এই মহিলার উপর জেনো ভর করেছে কোনো এক বিদেহী আত্মা কিংবা এই নারী নিজেই এক প্রেতকুলের বাসিন্দা। এগিয়ে যাবে কি যাবে না বুঝে পাচ্ছে না যখন ঠিক সেই সময় এক আর্তনাদের শব্দে মাথার শিরা নড়ে উঠলো। 
‘আঃ!!!!!!!’
মোহনের চিৎকার!! তার কিছু একটা হয়েছে তার মানে। না না! তাকে এখনই যেতে হবে তাকে বাঁচাতে! এখনই যেতে হবে! তার প্রাণের বন্ধু কোনো ভয়ঙ্কর বিপদে পরেছে হয়তো! হ্যাঁ হ্যাঁ! নিশ্চয়ই পরেছে নাহলে এইরকম চিৎকার করবেই বা কেন!? দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে এলো রক্তিম। তার হাতের টর্চে সে দেখে নিচ্ছে সামনের দিক প্রতি মুহূর্তে প্রতি পদক্ষেপে। ওইদিকে এখনো হয়ে চলেছে সেই বিদেহীর অট্টহাসি। সেই হাঁসির জায়গাই হয়তো কোনো বিপদ হয়েছে মোহনের সেই ভেবে সেদিকে ছুটে যেতে থাকলো রক্তিম। এদিকে হাঁসির শব্দ অনুসরণ করতে করতে সে এসে পৌঁছল রাজবাড়ীর পিছন দিকে। এদিকটা সেই কুয়ো না? ওয়েট ওয়েট! মোহন তখন কি বলছিল না? রাজা হরনাথ রায় চৌধুরী নির্যাতনে মারা যাওয়া মেয়েদের এই কুয়োয় ফেলে দিয়েছিলো। আচ্ছা! তার মানে সে যা ভাবছে তাই কি? কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? আরে সেসব জিনিস তো সবই কল্পনাপ্রসূত মাত্র। দৌড়ে কুয়োর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো রক্তিম। চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকারের চাদরে ঘেরা আর তারই মধ্যে বয়ে চলেছে শীতল বাতাস। হঠাৎ করেই এই অঞ্চলে নেমে এসেছে কুয়াশার মেলা। চারিদিকে আস্তে আস্তে ভরে যাচ্ছে সাদা কুয়াশায়। জেনো মনে হচ্ছে এটা অন্য জগত, অন্য রাজ্য... আবার বৈদ্যুতিক বিস্ফোরণ! সেই আলোয়ে রক্তিম দেখল তার সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা ছায়ামূর্তি। আচমকা এইরকম একজনকে দেখে বুকের ভিতরটা ধড়াস করে উঠলো। সাথে সাথে হাতের টর্চের আলো সেদিকে ছুঁড়ে মারল। মোহন! তার চোখে আতঙ্ক কিন্তু মুখে হাঁসি। এক অজানা কারণে তার মুখের দুই ঠোঁট বেড়ে গেছে। খিলখিলে হাঁসিটা কি তার ছিল? অসম্ভব! মেয়ের কণ্ঠে মোহন কীভাবে হাসবে?? 
‘বন্ধু তুমি এখানে কেন আসলে?? ফিরে যাও!!’
‘তুমি এখানে কি করছ মোহন? ফিরে চলো!’
‘আমি যে ফিরে যেতেই এসেছি!’
‘মোহন তোমার মাথা গেছে। এদিক থেকে চলো জায়গাটা ভালো লাগছে না আমার।’
‘কি আসে যায় জায়গায়! জায়গাটা যে আগে থেকেই ভূতুড়ে!’
‘মোহন, হাঁসিটা কি তোমারই??’
‘নাতো বন্ধু! হাঁসিটা যে তার!!’
‘কার?’
‘কেন? আমার কর্মফলের!’
‘কি যাতা বকছ বলোতো! ফিরে চলো...’
‘তুমি ফিরে যাও বন্ধু! আমার সময় ফুরিয়ে গেছে।’
‘কিসের সময়? কি ভুলভাল বলছ??’
‘ভুলভাল আমি বলছি না বন্ধু। ওইদিকে চেয়ে দ্যাখো! আমার কর্মফল দাঁড়িয়ে!’
চমকে পাশের দিকে তাকাল রক্তিম। যা দৃশ্য দেখল তাতে সাথে সাথে শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে গেলো। বুকের ধুকপুকানি বেড়েছে নয়তো থেমে গেছে মুহূর্তের জন্য! চোখ বড় হয়ে গেছে রক্তিমের। সামনে ওটা কি! সাদা শাড়ি পরনে, পায়ে নূপুর, তার মাথার চুল উড়ছে! আর তার দাঁত? সেখান থেকে বেয়ে পড়ছে রক্তের ধারা! 
‘এ কে মোহন? এ কে?!!’
রক্তিমের আতঙ্কিত গলার স্বর।
‘দেখতে পারছ না মূর্খ! এটাই আমার কর্মফল! তুমি পালাও এদিক থেকে! পালাও!!!’
‘আমি তোমায় একা রেখে পালাবো না মোহন! দৌড়াও আমার সাথে!’
‘মূর্খের মতন কথা বলো না! আমার সময় শেষ তুমি পালাও বন্ধু!!’
‘কিন্তু মোহন...’
কথা শেষ হতে না হতেই কাণ্ডটা ঘটে গেলো। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছায়ামূর্তি এক খিলখিলে হাঁসির শব্দের সাথে ছুটে এলো মোহনের দিকে। মোহন কোনো প্রতিক্রিয়া না করেই চেয়ে থাকলো তার দিকে। সত্যিই হয়তো আজ মোহনের সময় ফুরিয়ে এসেছে, তার আজই শেষ দিন। মোহনকে ঠেলে ফেলে দিলো সেই কুয়োতে। কুয়োর অতল গভীরে পরবার সময় শেষবারের মতন ভেসে এলো মোহনের চিৎকার-
‘পালাও বন্ধু! বিদায়য়য় বন্ধু......’
সেই শব্দ চারিদিকে প্রতিধ্বনি হয়ে মিলিয়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যে। রক্তিমের পা তখন ভয়ে কাঁপছে। ধীর পায়ে কোনোক্রমে সেই কুয়োর দিকে এগিয়ে গেলো সে। আলো ফেললো নীচের দিকে। যা দৃশ্য দেখল তা হয়তো জন্মজন্মাতরের ভুলবে না সে নিজে। নীচে জল তাতে ভাসছে অনেকগুলো হাত। সেগুলো খুবলে মাংস তুলে দিচ্ছে মোহনের। রক্তে মিশে জল গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করেছে ইতিমধ্যে। ছ্যাঁত করে উঠলো বুকের ভিতর। বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করেছে। ঝিরঝিরে থেকে সেটা আস্তে আস্তে তুমুল ভাবে পড়তে আরম্ভ করলো। একবার ঢোঁক গিলল রক্তিম। বিস্মিত ভীত ভাবে পিছন ফিরে চলে যাচ্ছিলো। ঠিক সেই সময় আবার নূপুরের শব্দ। চমকে পিছন ঘুরে দাঁড়ালো, তাকাল সামনে। একটা ছায়ামূর্তি আবার! সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে রক্তিমের দিকে। আবার মেঘরাজের গর্জন। মেঘের চোখ রাঙালির আলোয়ে মেয়েটিকে একঝলক দেখল সে। দেখা মাত্রই শরীর জেনো অবশ হয়ে আসতে চাইলো। মেয়ের মুখ ক্ষতবিক্ষত। রক্ত বেয়ে পড়ছে শরীরের মধ্যে। তার হাতদুটো অস্বাভাবিক রকমের বড় ও সরু। পায়ে নূপুর আর পরনে সেই সাদা শাড়ি। আর সেখানে দাঁড়াতে চাইলো না রক্তিম। আর্তনাদ করে টর্চ হাতে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে থাকলো। দৌড়ে দৌড়ে যখন সে রাজবাড়ীর বাইরে বেরিয়ে রাস্তায় এসে পড়লো তখনও সে শুনতে পারছে সেই নূপুরের ছানছান শব্দ। ভীত রক্তিম আর পারলো না এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকতে। যা হবে দেখা যাবে। রাস্তা ধরে আলো ফেলে এক দৌড় দিলো ঝড় জলের রাতে। রাজবাড়ীর ভিতর থেকে তখনও ভেসে আসছে সেই নূপুরের শব্দ। আর একটা শব্দ যোগ দিলো তার মধ্যে। মোহনের শেষ কথা- ‘বিদায় বন্ধু!!’

             ঘটনার ঠিক পরের দিন সকালে। একটা দোকানের মধ্যেকার বেঞ্চে একটা লোককে অজ্ঞান হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা গেলো। সে আর কেউ নয়, রক্তিম। লোকে তার মুখে জল দিয়ে অনেক কষ্টে জ্ঞান ফিরাল। চোখ খুলতেই রক্তিম প্রথমে কিছু মনে করতে পারলো না। তারপর যখন মনে পড়লো আগের দিন রাতের দৃশ্য তখন সে কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞাসা করলো- ‘আমি কোথায়?’
‘বাবু আপনে এখন আমার চায়ের দোকানে।’
‘রাজবাড়ীটি কোথায়?’
‘দুবলহাটির রাজবাড়ীর কথা বলছেন বাবু?’
‘হ্যাঁ। তার থেকে আমি কতদূর?’
‘প্রায় এক মাইল বাবু। ক্যান বলবেন?’
‘আমার বন্ধু সেখানে, কুয়োতে পরে গেছে!’
‘কীভাবে বাবু? আপনেরা ওখানে কি করিতেছিলেন?’
সব ঘটনা খুলে বলল রক্তিম। সব শুনে চায়ের দোকানদার বলল- ‘চলুন তো দেখি।’
তখনই সেই রাজবাড়ীতে যাওয়া হল। অনেক ভয় বুকে করে রাজবাড়ীর পিছনের কুয়োর সামনে এসে দাঁড়ালো সে। কুয়োর নীচের দিকে তাকাল। কোথায় জল? কোথায় তার বন্ধু? মোহনের দেহ কোথায়? রাজবাড়ীর উপরের ঘরে তাদের দুজনের ব্যাগ পাওয়া গেলো। অবাক করে দুটো মোমবাতিও পাওয়া গেলো। কিন্তু পাওয়া গেলো না শুধুমাত্র মোহন কে। ইন্ডিয়ার মোহন সরকারকে। তাকে হয়তো নিয়ে গেছে আগের দিন রাতে দেখা সেই অশরীরী আত্মা। খুবলে খেয়েছে তার মাংস। ফেরার পথে একবার সেই মিষ্টির দোকানে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখে তালা দেওয়া। সেখানেই একটা লোককে জিজ্ঞাসা করে এখানের দাদুটি কোথায়? তাকে অবাক করে দিয়ে লোকটি যা বলল তাতে পিলে চমকে উঠলো রক্তিম। সেই দাদু নাকি আজ থেকে এক বছর আগেই গত হয়েছেন। মরে যাওয়ার কারণ ক্যান্সার। তবে? কিছুদিন আগেই যার কাছে তারা কচুরি খেলো সে কে ছিল? সেও কি তবে সেই অশরীরীদের মধ্যে কেউ একজন? দিনে দুপুরে আশেপাশে তাকিয়েছিল রক্তিম। ভয়ে ভয়ে রয়েছিল সেদিন। আর বেশিদিন অপেক্ষা করেনি। দুদিন পরেই ট্রেনে করে বাড়ি ফিরে এসেছিলো। শুধুমাত্র একা... প্রশ্ন একটাই তখন তার মনে। মোহনের বাবামাকে কি বলে শান্ত করবে সে? এইরকম অতিপ্রাকৃতিক কথা কেই বা বিশ্বাস করবে? হয়তো বিশ্বাস করবে না তাদের পরিবারের কেউই। সন্দেহ করবে তাকেই। জানে না কি হবে। শুধু জানে, মোহন আর নেই...

|| সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 5 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক গল্প সংকলন (চলছে) - by Sanjay Sen - 30-08-2023, 10:19 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)