29-08-2023, 10:20 PM
|| রক্তের স্বাদ ||
লেখা এবং প্রচ্ছদঃ- বুম্বা
সন্ধ্যে নামলে এখনো হ্যালাপুকুরের পেছনের পরিত্যক্ত গ্লাস ফ্যাক্টরির পাশের রাস্তাটা ব্যবহার করতে ভয় পায় রুপাইনগরের মেয়েরা। একটু ঘুরপথ হলেও বাজারের মধ্যে দিয়েই আসা-যাওয়া করে তারা। তাতে সময় হয়তো একটু বেশি যায় ঠিকই, কিন্তু নিরাপদে যাতায়াতটা তো করা যায়!
বছর দুই আগের কথা। আশ্বিন মাসের সন্ধ্যে, দক্ষিণদিক থেকে একটা মৃদুমন্দ শীতল বাতাস বইছিলো। ক'দিন পরেই শারদোৎসব, পুজোর আগে হরেন মাস্টারের সেদিন শেষ পড়ানো। নতুনপাড়ার বাসিন্দা সাদেক মিঞার মেয়ে নাদিয়া দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তো। এমনিতে মাস্টারমশাই বিকেল পাঁচটা থেকেই পড়ান। সেদিন একটা বিশেষ কাজে সদরে গিয়েছিলেন, তাই সন্ধে ছ'টা থেকে পড়ানোর সময় দিয়েছিলেন তিনি।
নাদিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরির পাশের রাস্তাটা দিয়ে পড়তে গিয়েছিলো, অন্যদিনের মতোই। আটটার মধ্যেই বাড়িতে চলে আসার কথা। সাড়ে আটটা বাজলো, তারপর নটা, তারপর সাড়ে নটা .. ঘড়ির কাঁটা যত এগোচ্ছিল দুশ্চিন্তা ততই গ্রাস করছিল সাদেক মিঞা আর তার বউ সালমাকে। হরেন মাস্টারের বাড়িতে ফোন করা হলো। তিনি জানালেন, পৌনে আটটার সময় তিনি ছেড়ে দিয়েছেন সবাইকে। নাদিয়াও পড়তে এসেছিলো, সেও বাকি বান্ধবীদের সঙ্গেই চলে গিয়েছে।
এই কথা শুনে উদ্ভ্রান্তের মতো সাদেক মিঞা আর তার স্ত্রী বেরোলো বাড়ি থেকে, তাদের মেয়েকে খুঁজতে। পাড়ার লোকজন জুটিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরিতে আগাছায়া ভরা গুড'স শেডের নিচে কাদামাখা অবস্থায় তাদের মেয়ের নিথর দেহ খুঁজে পেয়েছিলো তারা। সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় থাকা দেহটির ডানদিকের স্তনবৃন্তটা কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে নেওয়া হয়েছিলো, তলপেটের নিচের অংশে কোনো তীক্ষ্ণ শলাকা দিয়ে ফুঁটো করে দেওয়া হয়েছিলো পৈশাচিক উল্লাসে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর জানা গেলো, অষ্টাদশী নাদিয়াকে প্রথমে গণ;., করা হয় এবং তার সঙ্গে চালানো হয় বীভৎস শারীরিক অত্যাচার। যার চিহ্ন নাদিয়ার শরীরের প্রত্যেকটি জায়গায় পাওয়া গেছিলো। এরপর তাকে গলা টিপে হত্যা করে শেডের নিচে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। নিজের মেয়েকে ওই অবস্থায় দেখার পর শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলো সালমা। তারপর থেকে তাকে আর কেউ কথা বলতে শোনেনি।
এলাকায় কয়েকদিন ধরেই কিছু অপরিচিত ব্যক্তির আনাগোনা বেড়েছিলো। তাদের আড্ডার ঠেক হয়েছিলো ওই পরিতক্ত গ্লাস ফ্যাক্টরিটা। সেখানে মদের সঙ্গে, জুয়া খেলা এবং অন্যান্য কুকর্মও চলতো। সাদেক মিঞা অভিযোগ করেছিলো, তাদের এলাকারই এক বাসিন্দা সনাতন বারুই নামের এক বছর পঁচিশের যুবক তার মেয়েকে ক'দিন ধরেই ভীষণ উত্ত্যক্ত করছিলো।
নাদিয়ার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সাদেক মিঞার বলা কথাগুলো সত্যি এবং ওই পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরিতেও আনাগোনা ছিলো সনাতনের। ঘটনার পরেরদিন রাতেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে সনাতনকে। তার বিরুদ্ধে নাদিয়াকে ;., এবং খুনের মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপে ছাড়া পেয়ে যায় সনাতন। তারপর থেকেই পরিত্যক্ত গ্লাস ফ্যাক্টরি এবং তার আশেপাশের এলাকায় দুষ্কৃতিদের দৌরাত্ম অতিমাত্রায় বেড়ে যায়।
★★★★
নতুনপাড়ায় নতুন এসেছে শ্যামল বাবুরা। জ্যোৎস্না দেবী এবং শ্যামল বাবুর বেশি বয়সের সন্তান মিষ্টু। হ্যাঁ, এটাই তার ডাকনাম আবার এটাই তার ভালোনাম। যেমন গুণে লক্ষ্মী তেমন রূপে সরস্বতী। না না উল্টো বলে ফেললাম, তাই না? আসলে মেয়েটা মারা যাওয়ার পর থেকেই কিরকম যেন হয়ে গেছে সাদেক মিঞা। কাজে মন বসে না, এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায় উদ্ভ্রান্তের মতো। তবে একজনকে দেখলে তার মনে শান্তি নেমে আসে। শ্যামল বাবুর মেয়েটার মধ্যে যেন নিজের মেয়েকে খুঁজে পায় সে। তাইতো ওকে দেখলেই বলে ফেলে "গুনে লক্ষী আর রুপে সরস্বতী হলো আমার এই মা" ওই সাদেকের কথা শুনেই আমার মুখ দিয়ে উল্টোটা বেরিয়ে গেছে। আসলে রূপে লক্ষী আর গুণে সরস্বতী হলো নতুনপাড়ার মিষ্টু।
শহরের কোনো একটা গার্লস কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে মিষ্টু। শুক্রবার কলেজ করে একটা প্রাইভেট টিউশনি পড়ে বাড়িতে ফিরতে ফিরতে প্রায় ন'টা বেজে যায় তার। বাড়ি থেকে বলাই আছে, যতই সময় লাগুক না কেনো, সে যেনো বাজারের মধ্যে দিয়েই ফেরে, প্রয়োজনে যেন রিকশা করে নেয়!
মিষ্টুর একটা বড় দোষ হলো বাবা-মায়ের হাজার বলা সত্ত্বেও সে কখনো অতিরিক্ত টাকা নিয়ে কলেজে যায় না। যেতে আসতে যেটুকু খরচ লাগে আর টিফিন খরচা .. এর বাইরে একটা বেশি টাকাও সঙ্গে নেয় না সে। তার মা জ্যোৎস্না দেবী তো সেদিন বলেই দিলেন, "তোর এই বোকামির জন্য একদিন বিশাল বড় বিপদে পড়বি তুই .."
কিন্তু কে শোনে কার কথা! মিষ্টু তার মায়ের কথা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বার করে দিয়ে কলেজে বেরিয়ে গেলো। ওইদিন শুক্রবার ছিলো। কলেজ থেকে কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পর শুনলো স্যার তখনও আসেননি। অপেক্ষা করতে লাগলো মিষ্টু। তার বাকি বন্ধুরা শহরেরই বিভিন্ন জায়গায় থাকে। কিন্তু তাকে তো ট্রেনে করে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আসতে হয় তার গন্তব্যে! 'অপেক্ষা করবে, না চলে আসবে..' এইসব ভাবতে ভাবতে যখন সে চলে আসার মনস্থির করলো তখন দেখলো স্যার ঢুকছেন।
নির্দিষ্ট সময় থেকে ততক্ষণে এক ঘন্টা দেরি হয়ে গিয়েছে। স্যারের সামনে তো উঠে চলে আসা যায় না! তাই বাধ্য হয়ে সেদিনকার ক্লাসটা করতে হলো মিষ্টুকে। ক্লাস চলাকালীন একটুও মন বসাতে পারছিলো না সে। বারবার মনে হচ্ছিলো, কখন বাড়ি যাবে!
রুপাইনগর স্টেশনে যখন মিষ্টু নামলো তখন রাত সাড়ে নটা। তবে মিষ্টু ট্রেন থেকে একা নামলো না, সঙ্গে করে নিয়ে এলো মুষলধারে বৃষ্টি। অসময়ের বৃষ্টি, সঙ্গে ছাতা নেই। প্ল্যাটফর্মে ভাঙা শেডের তলায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে আরো পনেরো মিনিট কেটে গেলো। 'বাজারের রাস্তা দিয়ে এখন যদি সে রিকশা করে যায়, তাহলে সোয়া দশটার মধ্যে বাড়ি ঢুকে যেতে পারবে।' এই ভেবে ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে দেখলো মাত্র পাঁচ টাকা পড়ে রয়েছে। এই টাকায় তো রিক্সাওয়ালা দুবারও প্যাডেল মারবে না। সকালে বলা মায়ের কথাটা মনে পড়লো তার। এবার থেকে সে যেখানেই যাক, বেশি করে টাকা নিয়ে বেরোবে .. আজকের ভুল সে আর করবে না।
'ভাগ্যিস তার গন্তব্য বাড়ি! তাই বাড়িতে পৌঁছে রিকশাওয়ালাকে টাকা দিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু এখনো যদি সে স্টেশন থেকে নিচে না নামে, তাহলে আর রিকশাও পাবে বলে মনে হয় না।' এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দ্রুত পায়ে ওভারব্রিজের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে মিষ্টু দেখলো .. স্টেশন চত্বরে একটাও রিকশা নেই। ততক্ষণে বৃষ্টি কমে গেলেও, ছাতা না থাকার দরুন সে কাকভেজা ভিজে গিয়েছে। উনিশ বছর বয়সের ভরা যুবতী স্তনবতী এবং গুরু নিতম্বিনী মিষ্টু ছোটবেলা থেকেই ভলাপচুয়াস ফিগারের অধিকারিণী। তাই বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ফলে তার পরনের সালোয়ার কামিজ দেহের সঙ্গে সেঁটে গিয়ে সেই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর উত্তেজক লাগছিলো তাকে।
মিষ্টুর মনে হলো এত রাতে বাজারের রাস্তা এবং হ্যালাপুকুরের পেছনের রাস্তা .. এই দুটোই তার কাছে সমানভাবে আনসেফ। বরং বাজারের মধ্যে দিয়ে গেলে বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে তার আরও আধঘন্টা লেগে যাবে। তার থেকে ওই রাস্তাটা দিয়ে গেলে পনেরো মিনিটের মধ্যে পৌঁছাতে পারবে। অনেক ভেবেচিন্তে অবশেষে শর্টকাটটাই ধরলো মিষ্টু।
সন্ধ্যেবেলা থেকেই এই এলাকাটা কার্যত শুনশান হয়ে যায়। এখন ঘড়ির কাঁটা রাত দশটা অতিক্রম করে গিয়েছে। ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও কারা যেন খুলে নিয়ে যায় আলোগুলো। জনমানবশূন্য রাস্তায় দুর্ভেদ্য অন্ধকারের বুকে আলোর উৎস বলতে শুধু মধ্য গগনের এক ফালি চাঁদ আর অগণিত নক্ষত্ররাজি। মাঝে মাঝে জমাট বাঁধা অন্ধকারের মতো বড় বড় গাছের সারির অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে। চার পাশে শুধু অনন্ত অন্ধকার আর মৃত্যুপুরীর নিস্তব্ধতা। কখনো কখনো রাত্রির নিস্তব্ধতা ভেদ করে ঝিঁঝিঁপোকার শব্দ আর প্যাঁচার ডাক ভেসে আসছে। এরকম এক ভয়াবহ পরিস্থিতির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মিষ্টু নিজের সমস্ত জীবনী শক্তিকে একত্রিত দ্রুতপায় হেঁটে চলেছে। তার এখন একটাই লক্ষ্য .. এখান থেকে কোনোমতে বেরিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তাটায় গিয়ে উঠবে।
এই গভীর অন্ধকারেও ডানপাশে পরিত্যক্ত গ্লাস ফ্যাক্টরির শেডের উপরের অংশটা চোখে পড়লো মিষ্টুর। ওটার পিছনেই তো আন্টি সোশ্যালদের আড্ডা .. কথাটা ভেবেই বুকটা কেঁপে করে উঠলো তার।
"গুরু, মালটাকে দেখেছো? শালা কি ফিগার মাইরি! মাগীর দুধ আর পোঁদটা দ্যাখো, যেন সব মাংস ওখানেই লেগেছে। অনেকদিনের উপোসী ছিলাম। আজ রাতটা জমে যাবে .." ফ্যাক্টরির বাউন্ডারি ভাঙা ফটকটার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কথাগুলো এলো তার কানে।
এরপর আরও কিছু অশ্লীল কথা ভেসে আসতে থাকলো তার কানে। সেই কথাগুলোর গুরুত্ব না দিয়ে দ্রুত পা চালাতে থাকলো মিষ্টু। হঠাৎ ওর সামনে পথ আগলে দাঁড়ালো তিনটে ছায়ামূর্তি। ওরা ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো মিষ্টুর দিকে। তীব্র আর্তনাদে প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠলো পরিতক্ত গ্লাস ফ্যাক্টরির ক্যাম্পাসটা।
★★★★
পরেরদিন সকাল থেকেই খবরটা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে সর্বত্র। গ্লাস ফ্যাক্টরির শেডের পিছন দিকটায় লোহার ভাঙা জলশূন্য ট্যাঙ্কের ভিতর পাওয়া গেছে তিনজন যুবকের ছিন্নভিন্ন লাশ। রক্তে মাখামাখি হয়ে রয়েছে অত বড় ট্যাঙ্কটা। তিনটি লাশের মধ্যে একটা সনাতন বারুইয়ের, বাকি দুটোকে চিহ্নিত করা যায়নি। প্রত্যেকটি মৃতদেহের গলার নলি কাটা। পুলিশের অনুমান, কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেওয়া হয়েছে জায়গাটা। কিন্তু সেই ধারালো অস্ত্রটি আদতে কি, সেই সম্বন্ধে কোনো ধারণা করতে পারেনি পুলিশ।
এলাকাবাসী, মিডিয়া আর পুলিশে ছয়লাপ হয়ে রয়েছে জায়গাটা। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ কেউ বুঝে উঠতে পারছে না, এরকম ভয়ঙ্কর সমাজবিরোধীদের এইরকম নৃশংসভাবে কে হত্যা করলো?
"ওঠ রে মা .. আর কত ঘুমাবি? ন'টা বেজে গেছে, সে খেয়াল আছে? কাল রাতে ফিরে তো কিছুই খেলি না। কতবার ডাকলাম, ঘরের দরজাও খুললি না। বললি শরীর ভালো লাগছে না। এখন উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে কিছু মুখে দে। কলেজে যাবি না আজকে?" বাবার ডাকে ঘুম ভাঙলো মিষ্টুর।
"উফ্, এখন জ্বালিও না তো, যাও এখান থেকে। আরেকটু ঘুমোতে দাও প্লিজ। শরীরটা এখনো ম্যাজম্যাজ করছে। আজ কলেজে সেরকম ইম্পরট্যান্ট কোনো ক্লাস নেই, তাই যাবো না।" কথাগুলো বলে বন্ধ দরজার বাইরে থেকে তার বাবাকে বিদায় করে খাটের উপর উঠে বসলো মিষ্টু।
গতকাল রাতের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো মিষ্টুর। কাল রাতে যখন সে ফিরলো, ভাগ্যিস মা রান্নাঘরে ছিলো আর বাবা তাকে খুঁজতেই বাজারের দিকে গিয়েছিলো! তা না হলে বাড়িতে ঢোকার সময় ওইরকম রক্তমাখা পোশাকে তাকে বাড়ির লোক দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যেতো।
সদর দরজা খোলাই ছিলো আর জ্যোৎস্না দেবী রান্নাঘর থেকে বেরোনোর আগেই এক দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলো মিষ্টু। হাজার ডাকাডাকিতেও ঘর থেকে আর বের হয়নি সে। তারপর বাথরুমে ঢুকে রক্তমাখা সালোয়ার কামিজ আর অন্তর্বাসগুলো সাবান জলে ভিজিয়ে দিয়েছিলো সে। মিষ্টু জানে রক্তের দাগ এত তাড়াতাড়ি যাবে না। কারণ পূর্বেও তো তার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে! তাই আজ বিকেলে বাবা-মা মাসির বাড়িতে গেলে, সে একটা বাহানা করে বাড়িতে থেকে যাবে। ওরা চলে যাওয়ার পর আগেরদিন রাতের জামাকাপড় গুলো পুড়িয়ে কালো প্যাকেটে ভরে বড় রাস্তার মোড়ের ডাস্টবিনটায় ফেলে আসবে।
ওটা যদি কেউ পরে খুঁজেও পায়, তবুও পোড়া জামাকাপড় দেখে সন্দেহটা তার প্রতি যাবে না, এই ব্যাপারে নিশ্চিত মিষ্টু। কাল রাতের পর থেকে আরও একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে সে। গঙ্গাপুরের ওই ঘটনাটা হওয়ার পর থেকে অনেকদিন ধরে নিজের রক্তপিপাসু সত্ত্বাকে অন্তরালে রেখেও শেষ রক্ষা হলো না গতকাল রাতে। রুপাইনগরে আসার পর মানুষের রক্তের স্বাদ সে পেয়ে গেলো। তবু তাকে চেষ্টা করে যেতে হবে নিজের এই সত্ত্বাকে লুকিয়ে রাখার। তা না হলে যে মনুষ্যজাতির সমূহ বিপদ!
শুধুমাত্র মিষ্টুর রক্তপিপাসু সত্ত্বার বিষয়টি (শেষ প্যারাগ্রাফ) একটি জনপ্রিয় বিদেশি গল্পের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা। যদিও এখানে স্থান, কাল, পাত্র এবং লেখনী, এমনকি ঘটনাবলী সম্পূর্ণ ভিন্ন। গল্পটি পড়ে জানাবেন আপনাদের কেমন লাগলো।