Thread Rating:
  • 167 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
নবনবতি অধ্যায়




সহৃদয় পাঠক একটি দুঃসংবাদ দিতে হচ্ছে।অধ্যাপিকা দীপশিখা মিত্র সহকর্মী এবং ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে গভীর রাতে সহকর্মীদের চোখের জলে ভাসিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। শ্রীমতী মিত্রের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেও অবশেষে সহকর্মীরা বিশেষ করে অধ্যাপিকা শুক্লা বসু চৌধুরী উদ্যোগী হয়ে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করলেন।
ঈশানী প্রথমদিন গেছিল পাশেই হাসপাতাল।ম্যাডাম তখন বেহুশ।মুখটা ছ্যাতরায়ে গেছে।মৃত্যুর খবর পেয়ে দিশাহারা বোধ করে।সে এখন কোথায় যাবে কে তাকে মাইনে দেবে ভেবে কূলকিনারা পায়না।সাহেবরে কয়েকবার ফোন করে নাগাল পায়নি।কাল সকালে অবশ্য পেয়েছিল।সাহেব হয়তো আসতে পারে সেই আশায় বসে আছে।দাহ করে এসে একজন ম্যাডাম এসেছিলেন।আশপাশের কয়েকজন খোজ নিতে এসেছিল।এক ফ্লাটের একজন কাজের কথাও বললে ঈশানী কিছু বলেনি।কাজ তো কোথাও না কোথাও করতে হবে। 
বাস চলাচল শুরু হয়েছে।ঈশানি বিছানা ছেড়ে উঠে বসল।কলিং বেল বাজতে বিরক্ত হয়।সব দুঃখ প্রকাশ করতে আসছে।আমি কাজের লোক ম্যাডামের কেঊ হইনা আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে কি হবে।যে যাবার সেতো চলে গেছে।ঈশানী উঠে দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলে চমকে ওঠে সামনে দাঁড়িয়ে থম্থমে মুখ সাহেব।
আপনি তো আমাকে বলেননি?
মারা গেলেন দুপুরে,কলেজের লোকজন--আমার কি তখন মাথার ঠিক আছে।
ভিতরে চলো।পাঞ্চালী বলল।
হ্যা আপনেরা বসেন আমি চা করতিছি।ঈশানী রান্না ঘরে চলে গেল।
সুখ ঘরে ঢুকে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল।পাঞ্চালী বুঝতে পারে কাদছে।কৌতূহল বাড়ে কি এমন সম্পর্ক ছিল মোমো তো ওর কেউ নয়।মোবাইলে বাটন টিপতে ওপাশ হতে শোনা গেল,হ্যা বল--।
মামণি মোমো আর নেই।
কিছুক্ষন স্তব্ধ তারপর শোনা গেল,কি হয়েছিল?
বাস থেকে নামতে গিয়ে ট্রামের মুখে পড়ে তারপর ঘেষটাতে ঘেষ্টাতে অনেকটা নিয়ে গেছিল।রাস্তার লোকজন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়,খবর পেয়ে কলেজের লোকজন আসে--।
পাপের ফল--।
কি বলছো এসব?
তুই জানিস না তোকে বলিনি। তোর দাদুর সঙ্গে যা ব্যবহার করেছে--।
আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি।পাঞ্চালী ফোন কেটে দিল। 
ঈশানী একটা ট্রেতে দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকতে পাঞ্চালি ট্রেটা নিয়ে সুখকে ডাকে,এই ওঠো।চা নিয়ে এসেছে।
সুখ পাশ ফিরে চোখ মেলে তাকাতে পাঞ্চালি বলল,দেখো জন্ম মৃত্যুতে আমাদের হাত নেই।ওঠো চা খেয়ে স্নান করে নেও শরীর ঝরঝরে লাগবে।
সুখ উঠে বসে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিল।
আমার পিসি আমার কি খারাপ লাগছে না?
চায়ে চুমুক দিয়ে সুখ বলল,খারাপ লাগছে শেষ দেখাটা হল না।
সেতো লাগবেই।
কলেজে জয়েন করাটাই ভুল হয়েছে।আমি থাকলে এদিন দেখতে হতো না।
তুমি থাকলে কি হতো?রাস্তায় এক্সিডেণ্ট হয়েছে তুমি কি করবে?
সে তুমি বুঝবে না।
মৃত্যুর খবরটা ঈশানী জানায়নি।অবশ্য জানালেই বা কি হতো।অতদূর থেকে আসা কি করে সম্ভব।মহিলা কেমন ঘুর ঘুর করছে সুখ  বিরক্ত হয়।সুখ জিজ্ঞেস করল,আপনি কিছু বলবেন?
পাঞ্চালীর দিকে এক নজর দেখে ঈশানী বলল,না কি আর বলব? 
এর হাতে বাড়ি রেখে যাওয়া ঠীক হবে না।সুখ মনে মনে স্থির করে সে আর ফিরবে না।সব ঘটনা জানার পর পাঞ্চালীও তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে বলে মনে হয়না।কলকাতায় থেকে আবার পরীক্ষা দেবে।মোমোর সঙ্গে তার জয়েণ্ট এ্যাকাউণ্ট কটা দিন চালিয়ে নেওয়া যাবে।তার আগে ঈশানীকে বিদায় দেওয়া দরকার।চা শেষ করে একটা সিগারেট ধরালো  সুখ।পাঞ্চালী আড়চোখে দেখে অন্যদিকে মুখ ফেরালো।
আমি স্নানটা সেরে নিই।পাঞ্চালী বাথরুমে ঢুকে গেল। 
নিজেকে অনাবৃত করে কমোডে বসে নিজের শরীরের প্রতি চোখ বোলাতে থাকে।কোমরের নীচে নজর পড়তে রিক্সায় বসার কথা মনে পড়তে ঠোটে হাসি ফোটে।রিক্সায় দুজনে খুব চাপাচাপি করে বসেছিল।তার নিতম্ব একটু ভারী পাঞ্চালী বুঝতে পারে।ওর পেনিসটাও বেশ বড় মনে হয়।কোনো কৃত্রিম উপায়ে করেনি তো?আমাকে তুমি কতটুকু চেনো বলার পর থেকে এইসব আবোল তাবোল চিন্তা মাথায় আসছে। তলপেটের নীচে হাত দিয়ে বোঝে সেভ করা দরকার কাটার মত বিধছে।পিসির মৃত্যু তাকে আহত করেছে কিন্তু সুখর এতখানি ভেঙ্গে পড়া বিসদৃশ লাগে।মোমোর সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ হল। এমনিতে সুখ লাজুক প্রকৃতির মেয়েদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেনা।মোমোর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ছিল নাতো! কথাটা মনে হতেই চমকে ওঠে।নিজেকে শাসন করে ছিঃ এসব কি ভাবছে?  
সাহেব একা ছিল ভেবেছিল কাজটা সেরে ফেলবে ভদ্রলোক আসায় ঈশানী বিরক্ত হয়।বৈঠকখানা ঘরে বসে সুখ কথা বলে।
আমি প্রদোষ লাহিড়ী ডি ব্লকে থাকি আপনারা এসেছেন শুনে দেখা করতে এলাম।ভদ্রলোক কাসতে থাকেন।
আমি সুখ রঞ্জন--।
আপনাকে চিনি।এখন তো আপনিও কলেজে অধ্যাপনা করেন।  
আমরা আজ সকালে এসেছি।
একদিন আগে এলে দেখা হতো ভেরি স্যাড।অতবড় ডাক্তারের বোন প্রফেসর মিত্র অথচ শেষ সময়ে পাশে কেউ নেই--।আবার কাসি।
ওর ভাইঝি এসেছেন।আপনাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে।
হ্যা কদিন ধরে একটু জ্বর জ্বর।
ডাক্তার দেখান নি?
দেখিয়েছি ওষূধ খাচ্ছি।কোনো পরিবর্তন নেই আজকাল ডাক্তাররা যা হয়েছে।একটু কেসে বললেন,ওর সহকর্মীরা ছিলেন সারাক্ষন কলেজে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।কি জানেন মৌলালীর মোড়ে টার্নিং পয়েণ্টটা বিপদজনক।প্রফেসর মিত্র বাস নামতেই ট্রামের মুখে পড়লেন।বয়স হয়েছে--।
পাঞ্চালী স্নান সেরে প্রবেশ করতে কথা থেমে যায়।
সুখ বলল,উনি প্রদোষবাবু পাশে থাকেন।তোমার পিসির মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে এসেছেন।আর ইনি ড.মিত্র।
দুজনে প্রতি নমস্কার করল।সুখ বলল,দেখোতো ওর কি হয়েছে, উনি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন।
একেবারে ছেলে মানুষ উনি কিছু বলে নি ওর গরজ বেশী।পাঞ্চালী বলল,ঠিক আছে দেখছি তুমি স্নানে যাও।
সুখ চলে গেল পাঞ্চালী ঘরে গিয়ে এ্যাটাচি নিয়ে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করল,সমস্যা কি আপনার?
কাসি হচ্ছে বুকে ভীষণ ব্যথা--।
পাঞ্চালী স্টেথো দিয়ে বুকে পিঠে লাগিয়ে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করে,ডাক্তার দেখান নি?
দেখিয়েছি ম্যাম তিনদিন হয়ে গেল সেই আগের মতই আছে।আপনার বাবা কত বড় ডাক্তার ছিলেন--।
কথা নাবলে বড় বড় করে শ্বাস নিন।পাঞ্চালীর মনে হোল বুকে কফ জমেছে।প্যাড বের করে ওষূধ লিখতে লিখতে বলল,ওই ওষূধ বন্ধ করে এগুলো নিয়ম করে খাবেন।
ওহ খুব উপকার হল।কাসিটা কিছুতেই যাচ্ছে না--
উপকার কোথায় হল ওষূধগুলো খান দেখুন কি হয়।
এখুনি কিনে খাচ্ছি ।আসি ম্যাম।প্রদোষবাবু চলে গেলেন।
পাঞ্চালী মনে মনে ভাবে ভালো হাজব্যাণ্ড হয়েছে তার।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by kumdev - 28-08-2023, 02:38 PM



Users browsing this thread: 16 Guest(s)