27-08-2023, 08:44 PM
দ্বিতীয় খণ্ড
৩৪তম পর্ব
মৌমিতা আর দাঁড়ালো না দুজনের দিকে আরও একবার হিংস্র দৃষ্টি দিয়ে বেরিয়ে গেল।
মৌমিতা চলে যাওয়ার পর পিয়ালী গম্ভীর মুখে আদিত্যকে জিজ্ঞেস করে,
"কি ব্যাপার বলোতো এনার আবার কি হলো?"
"জানিনা, তবে আমি একে আমাদের ধারেকাছেও চাই না"
"একটা কথা বলোতো"
"কি?"
"তোমার মধ্যে কি এমন ছিল যেটার জন্য মেয়েরা তোমার পিছনে ঘোরে"
"আমি তো আমার বউকেও আমার পিছনে ঘুরতে দেখি না"
"ইয়ার্কি না, নর্থবেঙ্গলে থাকতেও শুনেছি ওখানকার মেয়েরাও তোমার পিছনে ঘুরতো"
"আমি কিভাবে জানবো ওরা কেন ঘুরতো?"
"ওই যে বললো তোমার পিছনে অনেক মেয়ে ঘুরতো তাদের মধ্যে কজনের সঙ্গে তুমি.."
আদিত্য গম্ভীর হয়ে পিয়ালীর দিকে তাকালো বললো "তুমি আমাকে অবিশ্বাস করছো?"
আদিত্যর মুখের ভাব দেখে পিয়ালী আর গম্ভীর হয়ে থাকতে পারলো না হেসে ফেললো তারপর আদিত্যর দুটো গাল ধরে একটু কাছে টেনে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো, কিছুক্ষণ পরে আদিত্য বললো, "নর্থবেঙ্গল বলতে মনে পরলো তোমার জন্য একটা গিফট আছে"
"আমার জন্য, কি গিফট?"
"চলো ভিতরে চলো, এই বাদশা ভিতরে চল"
আদিত্য পিয়ালীকে ধরে ধরে আস্তে আস্তে ভিতরে ড্রয়িংরুমে এনে বসালো তারপর রুমে গিয়ে একটা প্যাকেট এনে ওর হাতে দিল।
"এটা কি?" পিয়ালী জিজ্ঞেস করলো,
"খুলেই দেখো"
প্যাকেটের ভিতরের র্যাপারে মোড়া জিনিসটা খুলতেই পিয়ালী বাকরুদ্ধ হয়ে গেল, জিনিসটা একটা বাঁধানো ছবি আর ছবিতে পিয়ালীর হারিয়ে যাওয়া পুরো পরিবার আছে অর্থাৎ পিয়ালী ওর বাবা, মা এবং দাদা সবাই একসাথে।
"এটা কোথায় পেলে?" অশ্রুসিক্ত চোখে প্রশ্ন করে পিয়ালী,
"নর্থবেঙ্গল থেকে আনিয়েছি" পিয়ালীর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে জবাব দেয় আদিত্য।
"নর্থবেঙ্গল থেকে?"
"ওখানে এখনও আমার কিছু যোগাযোগ আছে, এখনো এমন কয়েকজন আছে যারা আমার বিশ্বস্ত আমার কথা শোনে, তবে এটার জন্য অনেক খোঁজ করতে হয়েছে এটা মানছি। তোমার পছন্দ হয়েছে?"
"থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ"।
কিছুদিন নিরুপদ্রবেই কেটে গেল আদিত্য এবং পিয়ালীর, মাঝখানে একবার অভিরূপবাবুরা এসেছিলেন কথা বলতে কিন্তু আদিত্য স্পষ্ট জানিয়ে দেয় ওই বিষয়ে আর কথা বলতে সে ইচ্ছুক নয় তবে ভবিষ্যতে যদি আবার এরকম কাজ করেন অরুণাভ তবে কি হবে বলা মুশকিল তার পক্ষে। এরপর অবশ্য অভিরূপবাবু বা স্বর্ণেন্দু বাবু কারোরই কিছু বলার ছিল না তবে আদিত্যর তরফ থেকে আগের মতোই স্বাভাবিক ব্যাবহার দেখে তারা কিছুটা যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন একথা হলফ করেই বলা যায়।
আসল বোমাটা ফাটালেন সুপ্রতিমবাবু, একদিন সকাল সকাল ফোন করলেন তিনি আদিত্য তখনও ঘুমের ঘোরে কিন্তু যা খবর দিলেন সুপ্রতিমবাবু তাতে ঘুম নষ্ট হতে সময় লাগলো না,
"অনি, প্ল্যান সাকসেসফুল একটা রাঘব বোয়াল জালে ধরা পড়েছে"।
নিজের বাড়িতে নিজস্ব রুমে বসে ব্যাবসার হিসাব মেলাচ্ছিলেন মনোজিত বাবু, অনেক বলেও ছেলেকে ব্যাবসার কাজে লাগাতে পারেননি তিনি তাই এখনো তাকেই সব দেখতে হয়, তার ছেলে শুধু ফূর্তি করতেই ব্যাস্ত ব্যাবসায় তার মন নেই, একটা হিসাব কিছুতেই মিলছিল না তাই বারবার চেক করছিলেন এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠলো কিছুটা বিরক্তি নিয়েই ফোনটা হাতে নেন, নাম্বারটি অচেনা দেখে বিরক্তিটা কয়েকগুণ বেড়ে যায় তার তবুও না কেটে কানে দেন,
"হ্যালো"
গলা শুনে চমকে ওঠেন মনোজিত বাবু যে দুজনকে পাঠিয়েছিলেন আদিত্যকে মারার জন্য সেই দুজনের একজন। এদের কথা তার মন থেকে একপ্রকার বেরিয়েই গিয়েছিল, হঠাৎ এতদিন পরে এরা কেন ফোন করলো সেটা তিনি বুঝতে পারলেন না তাই সরাসরি সেই প্রশ্নই করলেন,
"এতদিন পরে হটাৎ ফোন করলে কেন?"
"দরকার আছে তাই ফোন করেছি"
"কি দরকার তাড়াতাড়ি বলে ফেলো, আমার অনেক কাজ"
"টাকা লাগবে আমাদের"
"টাকা? কিসের টাকা?"
"আপনার কাজটা করতে গিয়ে জখম হয়েছি তার ট্রিটমেন্টের টাকা"
"শূয়োরের বাচ্চা, কাজটা তো করতে পারিস নি আবার টাকা কিসের?"
"মুখ সামলে কথা বলুন, আপনি যাকে মারতে পাঠিয়েছিলেন সে নিজেও এক্সপার্ট ফাইটার এটা আপনি বলেছিলেন? সে আমাদের দুজনকেই মেরে হাল খারাপ করে দিয়েছে"
"তার জন্য আমি কি করতে পারি?"
"আপনাকে টাকা দিতে হবে"
"আর যদি না দিই?"
"তাহলে পুলিশের কাছে গিয়ে যা বলার তা বলবো বাকিটা পুলিশ আর আপনি বুঝবেন?"
"ব্ল্যাকমেইল করছিস?"
"ধরে নিন তাই"
"তুই যে পুলিশের হাতে ধরা পরে যাসনি তার প্রমাণ কি?"
"প্রমাণ আপনি এখনো জেলে না, বা পুলিশের তাড়া খেয়ে ঘুরছেন না"
"কত টাকা লাগবে?"
"আপাতত দুজনের জন্য পাঁচ লাখ দিন"
"পাঁচ লাখ তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে"
"আমার মাথা একদম ঠিক আছে তবে টাকা না দিলে খারাপ হতে পারে তখন আবার."
"ঠিক আছে আমার একটু সময় চাই"
"আবার সময় কিসের? এইটুকু টাকা আপনার কাছে হাতের ময়লা সেটা আমি জানি, আজ রাতেই চাই"
"তুই.."
"সময় আর লোকেশন এসএমএস করে দিচ্ছি"
"আমি তোদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিচ্ছি"
"ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পুলিশ ব্লক করে দিয়েছে তাই ক্যাশ দরকার"
"অত টাকা ক্যাশ এত তাড়াতাড়ি কোথায় পাবো?"
"আপনার বাড়িতে এর থেকে বেশী ক্যাশ থাকে"
"বেশ, তুই টাইম আর লোকেশন পাঠিয়ে দে"
"দিচ্ছি, আর একটা কথা নিজে আসবেন এবং একা আসবেন যদি সঙ্গে কেউ থাকে তাহলে টাকা হয়তো আপনার বেঁচে যাবে কিন্তু আপনি পুলিশের থেকে বাঁচতে পারবেন না"।
ফোনটা কাটার পরেও কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলেন মনোজিত বাবু এটা তার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত, কেউ তাকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা চাইছে এটা তিনি ভাবতেই পারেন না তাও এতদিনের বিশ্বস্ত লোক, তবে মনোজিত বাবু নিজেও তো সোজা লোক নন তিনি নিজে নিজেই বলতে থাকেন, "আমার থেকে টাকা নিবি এত শখ? টাকা তো দেবোই না উপরন্তু তোদের দুটোকেই যমের দুয়ারে পাঠানোর ব্যাবস্থা করছি"।
একটু পরেই টুং করে একটা আওয়াজের সঙ্গে মনোজিত বাবু আবার মোবাইল খুলে সময় আর লোকেশন দেখে নিলেন তারপর একটা ফোন করে দরকারি কথা বলে নিলেন।
রাত প্রায় দুটোর সময় ধাপার একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হলেন মনোজিত বাবু, এই জায়গা এবং এই সময়টাই ঠিক হয়েছিল। একাই এসেছেন গাড়ি চালিয়ে গাড়িটা একটা জায়গায় থামিয়ে নামলেন গাড়ি থেকে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার ফোন এলো, ফোনটা ধরে কানে দিলেন তিনি,
"টাকা এনেছেন?"
প্রশ্নের উত্তরে গাড়ি থেকে একটা ব্যাগ বের করে সেটা থেকে কয়েকটা বাণ্ডিল বের করে অদৃশ্য কারো উদ্দেশ্য দেখান তিনি। একটু পরে অন্ধকার থেকে দুটো মূর্তি খোঁড়াতে খোঁড়াতে তার কাছে এল, মনোজিত বাবুও চুপচাপ টাকার ব্যাগটা ওদের হাতে দিলেন, টাকাটা নিয়ে ওরা ফিরে যাবে এমন সময় মনোজিত বাবু বললেন "তোরা আমার বিশ্বস্ত ছিলি, তোদের থেকে এরকম ব্যবহার আশা করিনি"
"কি করবো বলুন, বাধ্য হয়ে করেছি। আশা করছি আপাতত এতেই চলে যাবে"
"তার প্রয়োজন হবে না"
"তার মানে?"
মনোজিত বাবু উত্তর দিলেন না চকিতে চারটে বাইক এসে মনোজিত বাবু সহ তিনজনকে ঘিরে ধরলো, বাইক থেকে চারজন আরোহী নেমে পিস্তল নিয়ে দুজনের দিকে তাক করে দাঁড়ালো, মনোজিত বাবু বললেন "আমি দ্বিতীয় সুযোগ কাউকে দিইনা তোদের দেবো ভাবলি কিকরে? আমাকে তোরা বাধ্য না করলেই পারতি আমি তোদের একজনকে মারতে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তোরা সেটা না করে উল্টে আমার কাছে টাকা চাইছিস এবার টাকা তো পাবিই না বরং এখানেই তোদের মেরে ফেলে রেখে যাবো"
মনোজিত বাবু ভেবেছিলেন লোকদুটো তার কথা শুনে ভয় পাবে বা অন্তত তার হাতে পায়ে ধরবে কিন্তু উল্টে তাদের মুখে হাসি দেখে তিনি নিজেই অবাক হয়ে গেলেন হটাৎ রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে পরপর কয়েকটা পিস্তলের আওয়াজ হলো এবং মনোজিত বাবুর সঙ্গে আসা চারজন পিস্তলধারীর হাত থেকে পিস্তল ছিটকে মাটিতে পরলো এবং সেটা তারা কুড়িয়ে আনার আগেই চোখের নিমেষে অসংখ্য পুলিশ তাদের সবাইকে ঘিরে ফেললো, মনোজিত বাবু একবার পিছন ফিরে পালাতে চাইলেন কিন্তু পারলেন না এক বজ্রকঠিন কন্ঠস্বর শুনে থেমে যেতে বাধ্য হলেন, "পালানোর চেষ্টা করে লাভ নেই মনোজিত বাবু পালাতে পারবেন না আপনাকে পুরো ঘিরে ফেলা হয়েছে এখান থেকে পালাতে চেষ্টা করলেই আপনাকে গুলি করা হবে"
মনোজিত বাবু আর পালানোর চেষ্টাও করলেন না একজন পুলিশ এসে তাকে হাতকড়া পড়াতে এলে তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন "আমার অপরাধ কি?"
"থানায় চলুন সব বলবো, সেখানে লম্বা লিস্ট তৈরী আছে"
কণ্ঠস্বর যেদিক থেকে আসছে সেদিকে তাকিয়েই মনোজিত বাবু ভয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান, কারণ তিনি দেখেন এই কণ্ঠস্বর স্বয়ং সুপ্রতিম দাশগুপ্তর।
থানায় নিয়ে এসে জরুরি কয়েকটা কাজ সারতে সারতেই প্রায় সকাল হয়ে গেল, কাজ সেরেই প্রিয় ছাত্র এবং এই প্ল্যানের মাস্টারমাইণ্ড অনিকেত ওরফে আদিত্যকে খবরটা জানানোর জন্য ফোন করেন সুপ্রতিমবাবু। সুপ্রতিমবাবু যে মনোজিত বাবুর পিছনে আছেন এটা আদিত্য ভালো করেই জানতো এবং এটাও জানতো কোনো প্রমাণ ছাড়া তাকে ধরা যাবে না বা ধরলেও বেরিয়ে যাওয়ার চান্স আছে ,তাই যখন সে শুনলো যে দুজন তাকে মারতে এসেছিল তারা গ্ৰামবাসীদের ধোলাই থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে তখনই সে এই প্ল্যানটা বলে খুবই সাধারণ প্ল্যান আদিত্য ভালো করেই জানতো মনোজিত বাবুর মতো লোক ব্ল্যাকমেইলিং এ দমে যাবে না বরং যে ব্ল্যাকমেইল করছে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টাই করবে, তাই সে ওই দুজনকে দিয়ে ফোন করিয়ে টাকা চাওয়ায় এবং শেষে ক্যামেরা এবং অডিও রেকর্ডার লাগিয়ে মনোজিত বাবুর সামনে পাঠায় বাকিটা পুলিশ করেছে।
"অনি, প্ল্যান সাকসেসফুল একটা রাঘব বোয়াল জালে ধরা পড়েছে"।
"কনগ্ৰাচুলেশনস্ স্যার, আপনার ইচ্ছা তাহলে পূরণ হলো"
"পুরোটা নয় অর্ধেক যেদিন আরেক বোয়ালকে তুলতে পারবো সেদিন বলতে পারবো যে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে"
"এনাকে নিয়ে এখন কি করবেন ঠিক করেছেন?"
"তোর মাথায় কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে?"
"এর পুলিশ কাস্টডি পাবেন কোর্ট থেকে?"
"ঠিক মতো কেসটা সাজালে পেতে অসুবিধা হবার কথা নয়"
"তবে তাই করুন, আর তারপর এর পেট থেকে কথা বের করার চেষ্টা করুন। দুজনে ক্রাইম পার্টনার তাই এর কাছ থেকে অনেক খবর পাবেন যেগুলো আরেকটাকে ধরতে কাজে লাগবে"
"ভেরী গুড আইডিয়া আমিও এরকমই ভাবছিলাম"
"তাহলে আর কি লেগে পড়ুন"
"ওদিকে সব ভালো?"
"হ্যাঁ, যে কোনোদিন পিয়ালীকে নিয়ে ছুটতে হবে"
"এবার যদি খবর দিতে ভুল হয়েছে তাহলে দেখ কি করি"
"হবে না স্যার, এবার ভুল হবে না"
"ঠিক আছে চল এখন রাখছি"
"ওকে স্যার"।
এরপর সুপ্রতিম বাবু যে যে কাজগুলো করলেন আর যে ভাবে এবং যে গতিতে করলেন সেটা একাধারে যেমন অভাবনীয় তেমনি চমকপ্রদ। সুপ্রতিম বাবু ঠিকই অনুমান করেছিলেন, কোর্ট থেকে মনোজিত বাবুর পুলিশ কাস্টডি পেতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি অবশ্য ওনার আরও একটা সুবিধা হয়েছিল এই যে মনোজিত বাবু স্বর্ণেন্দু বাবুকে ওনার কেসটা নিতে বলা সত্বেও উনি নেননি এবার সেটা বন্ধুর সঙ্গে দূরত্ব না বাড়াতে চাওয়ার কারণেই হোক বা অন্য যে কারনেই হোক কিন্তু তিনি বিরুদ্ধে না থাকায় পুলিশের কাজটা যে সহজ হয়েছিল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
পুলিশ কাস্টডিতে পুলিশের জেরার সামনে প্রথম প্রথম শক্ত থাকার চেষ্টা করলেও বেশীক্ষণ থাকতে পারলেন না মনোজিত বাবু একটা সময় পরে হড়হড় করে ভিতরের কথা বলতে শুরু করেন তিনি, এর ফলে যেটা হয় সেটা হলো পুলিশের জালে একের পর এক মাথা ধরা পরতে থাকে।
এদিকে মনোজিত বাবু ধরা পরার পরেই প্রমাণ গুণলেন প্রীতমবাবু এবং অচিরেই তিনি বুঝতে পারলেন পুলিশের হাত তার গলা পর্যন্ত প্রায় পৌঁছে গেছে এবার তার যেটা সমস্যা হলো তিনি অভিরূপবাবুকে কিছু বলতেও পারছেন না কারণ বললেই অভিরূপবাবু নিজে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেবেন বাধ্য হয়েই একটা সময় তিনি অরুণাভর কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলেন কিন্তু অরুণাভ সরাসরি সাহায্য করতে অস্বীকার করলো এবং মুখের উপরে সেকথা জানিয়ে দিল এমনকি প্রীতমবাবু যখন তার কাছে থাকা অনিকেতকে খাদে ফেলে দেওয়ার ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিল তখনও অরুণাভ রাজী হলো না, থানা থেকে যেভাবে তার মা তাকে ছাড়িয়ে এনেছে তার পর তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেছে যে যাই হয়ে যাক সে তার মাকে বুঝিয়ে ঠিক বেঁচে যাবে অতএব সে সরাসরি প্রীতমবাবুকে জানিয়ে দিল নিজের রাস্তা নিজে দেখে নিতে।
এরপর অবশ্য প্রীতমবাবুর কাছে আর কোনো রাস্তা খোলা থাকে না গা ঢাকা দেওয়া ছাড়া কারণ তিনি ভালো করেই বুঝতে পারছিলেন যেকোনো সময় পুলিশ তার সামনে এসে দাঁড়াবে অতএব 'যঃ পলায়তি সঃ জীবতি' প্রীতমবাবু গা ঢাকা দিলেন।
মনোজিত বাবুর বয়ান এবং তার বয়ানের উপরে ভিত্তি করে ধৃতদের বয়ানের সাহায্যে প্রীতমবাবু পর্যন্ত পৌঁছাতে পুলিশের বেশী সময় লাগলো না তার নামে ওয়ারেন্টও বের করতে অসুবিধা হলো না কিন্তু অসুবিধা হলো তাকে ধরার আগেই তিনি চম্পট দিয়েছেন এদিকে তার স্ত্রী অর্থাৎ মণিমালা দেবী এবং তার ছেলে সুশান্ত মুখ খুলতে নারাজ, ফলে মনোজিত বাবুকে পুলিশ ধরতে ব্যার্থ হলো, তার সম্ভাব্য গা ঢাকা দেওয়ার সব জায়গায় তল্লাশি আরেও প্রীতমবাবুকে ধরা গেল না বদলে বাধ্য হয়েই পুরো শহরে তার নামে হুলিয়া জারি করে দিল পুলিশ।
গ্ৰামে থেকেও সব খবরই পাচ্ছিল আদিত্য সুপ্রতিম বাবুই দিচ্ছিলেন তাকে আসলে তিনি ভালো করেই জানেন তার এই ছাত্রটির মাথায় মাঝে মাঝে এমন সব উদ্ভট আইডিয়া এসে উপস্থিত হয় যেটা আর কেউ সহজে ভাবতেও পারবে না ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাকে আদিত্যর সাহায্য নিতে হচ্ছিল, প্রীতমবাবুকে ধরতে ব্যার্থ হয়েও তিনি তাই আদিত্যকেই ফোন করলেন,
"পাখি পালিয়েছে রে, ধরতে পারলাম না"
"এত হতাশ হচ্ছেন কেন স্যার, ওনার পাসপোর্ট টাসপোর্ট সব ব্লক করেছেন তো?ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সীল করেছেন?"
"সেগুলো করেছি তবে, ওনার ছেলে আর স্ত্রী মানে তোর পিসি মনে হচ্ছে জানে ও কোথায় আছে"
"এতে আর আশ্চর্য কি? মণি পিসি বরাবরই ওনার হাজবেন্ডের পক্ষে থাকেন আর সুশান্তও বাপের মতোই, হ্যাঁ হয়তো এখনো ক্রাইমে অতটা হাত পাকেনি তবে একই গোত্রের দুজন"
"তাহলে?"
"আপনার মুখে এরকম হতাশার সুর মানায় না স্যার, মাথা খাটান"
"তুই আছিস কি করতে? মাথা খাটানো তোর কাজ"
"কলকাতায় জালি পাসপোর্ট যেখানে যেখানে তৈরী হয় সেখানে সেখানে নজরদারি বসান, আর আমার প্রিয় পিসি আর তার ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলোর ডিটেইলস জোগাড় করুন"
"প্রথমটা হয়ে যাবে কিন্তু দ্বিতীয়টা কেন? ওগুলো সীল করাতে বলছিস? ব্যাপারটা ইল্লিগ্যাল আর তাছাড়া ওদের বিরুদ্ধে কোনো কেস নেই কি কারণে করবো?"
"ধুর, সীল করতে কখন বললাম ওগুলো চব্বিশ ঘন্টা ট্র্যাক করুন এর সাথে দুজনের উপরেও দৃষ্টি রাখুন"
"এই জন্যই তোকে এতদিন মিস করছিলাম, তুই যেটা করতে চাইছিস সেটা আমার মাথায় সত্যিই আসেনি"
"কি করতে বললাম বলুন তো?"
"ওদের দুজনের উপরে নজর রাখলে যদি ওদের কেউ প্রীতমের সাথে দেখা করতে যায় তো তখন ধরা যাবে"
"হুমম আর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট?"
"প্রীতমের টাকার দরকার হবে যদি ছেলে বা ওয়াইফের অ্যাকাউন্ট থেকে তুলতে চেষ্টা করে তো লোকেশন ট্র্যাক করা যাবে"
"এই তো আমার স্যারের মতো কথা, আমি কোথায় ভাবলাম এইসব আপনার মাথায় আসবে তা না"
"বয়স হচ্ছে তো, কি আর করবো বল?"
"সেটাই, বুড়ো হয়ে গেছেন আপনি, যাইহোক কাজে লেগে পড়ুন আর ধৈর্য্য ধরুন একটা না একটা ভুল তো করবেই"
"অনি একটা কথা বলার ছিল"
"আবার? বলুন বলুন শুনি"
"জেরায় মনোজিত বাবু একটা কথা বলেছে"
"কি কথা?"
"অনি.. তোকে মারার কাজটা অরুণাভ আর মৌমিতা করলেও মেইন প্ল্যানটা প্রীতমের ছিল"
"তাই নাকি? হটাৎ আমার পিছনে পরেছিল কেন সেটা বলেনি?"
"তুই নাকি ওদের সম্বন্ধে কিসব জেনে গিয়েছিলি তাই?"
"আচ্ছা বুঝলাম"
"কি জেনে গিয়েছিলি তুই?"
অফিসের টাকার গরমিল করেছিল আরেকজনের সঙ্গে মিলে ওদের কনভার্সেসন শুনে নিয়েছিলাম, এছাড়া আরো টুকটাক কিছু জেনে গিয়েছিলাম"
"তোর বাবাকে বলিসনি?"
"বলার সুযোগ হয়নি, বাবার কাছে আমার কথা শোনার মতো সময় প্রায় ছিল না যেটুকু থাকতো সেটাও অরুণাভর জন্য বলা হতো না"
"তাই তোকে সরানোর প্ল্যান করেছিল কিন্তু কাজটা করিয়েছে অরুণাভ আর মোমিতাকে দিয়ে"
"বরং উল্টো ওদের মোটিভটাকে নিজের স্বার্থে ব্যাবহার করেছিলেন এতে ওনার নিজের হাত পরিষ্কার থাকলো অথচ কাজটাও হয়ে গেল, বাদ দিন ওসব কথা আর ভালো লাগে না"।
"ঠিক আছে আমি কিছু আপডেট পেলে জানাবো"
"ওকে স্যার"।
অভিরূপবাবু এখন শহরে কম আর গ্ৰামে বেশী থাকেন আগে গ্ৰামে হয়তো মাসের মধ্যে ছয়-সাত দিন থাকতেন আর বাকিটা শহরে কিন্তু এখন উল্টো শহরে থাকেন ছয় কি সাত দিন আর বাকিটা গ্ৰামে। আদিত্যর সাথে প্রায়ই দেখা হয় কথা হয় ওনারা আসেন পিয়ালীকে দেখতে, আদিত্য এবং পিয়ালী কারো তরফ থেকেই সেদিনের ঘটনা নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি তারা স্বাভাবিক ব্যাবহারই করছে তাই অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবীও আবার সহজ ভাবে মিশতে শুরু করেছেন।
একদিন সন্ধ্যার একটু পরে আদিত্য আর পিয়ালী ঘরেই আছে আর আছে একটা বাচ্চা ছেলে গ্ৰামেরই বয়স দশ কি এগারো এরকম বেশ কয়েকটা ছেলে মেয়ে আছে যারা সময় হলেই চলে আসে আদিত্য দাদা আর পিয়ালী দিদির সাথে গল্প করতে বা কাউকে ওদের মা পাঠিয়ে দেয় কিছু খাবার দিয়ে যেতে। এরকমই একটা বাচ্চা ছিল সে এসেছিল আদিত্যর থেকে আঁকা শিখতে, পিয়ালী কাছেই বসে মোবাইলে প্রেগন্যান্সি এবং তার পরবর্তী লাইফ সম্পর্কে কিছু পড়ছিল, হঠাৎ আদিত্যর ফোন বেজে উঠলো গ্ৰামেরই একটা ছেলের ফোন,
"হ্যালো দাদা"
"বল"
"তোমরা ঠিক আছো দাদা?"
"কেন বলতো, হটাৎ?"
"আসলে কয়েকজন খোঁজ করছিল?"
"আমার?"
"না বললো, ব্যানার্জীদের, যারা স্বামী স্ত্রী থাকে"
"লোকগুলো দেখতে কেমন রে?"
"ঠিক ভালো লাগলো না, গ্ৰামে দেখিনি আগে আর রিসর্টে এলে তোমার বাড়ির খোঁজ করবে কেন?"
আদিত্য কিছু একটা চিন্তা করলো হটাৎ বিদ্যুৎ ঝলকের মতো ভাবনাটা ওর মাথায় এলো আর সঙ্গে সঙ্গে ওর পুরো শরীরে ভয়ের শিহরণ খেলে গেল যদিও তা ক্ষণিকের, পর মুহুর্তেই নিজেকে শক্ত করে কর্মপন্থা ঠিক করে নিল, ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো, "তুই এখন কোথায় রে? থানার কাছে?"
"হ্যাঁ, একদম কাছে না হলেও বেশি দূরে নয় বড়োবাবুকে নিয়ে আসবো?"
"আয় সাথে আরো কিছু কনস্টেবলকে নিয়ে আয় তবে আমার বাড়িতে না, আরেক ব্যানার্জী বাবু আছেন না যাকে তোরা শহরে বাবু বলিস?"
"তাই তো দাদা ওনার নামও তো ব্যানার্জী"
"তাড়াতাড়ি ওনার বাড়িতে আয়, আমি যাচ্ছি ওখানে"
"ঠিক আছে দাদা"
ফোন রেখে আদিত্য বাচ্চাটাকে পিয়ালীর সাথে থাকতে বলে বেরোনোর উদ্যোগ করলো, গেট থেকে বেরোনোর আগে পিয়ালী বললো "বাদশা তুই সঙ্গে যা"
"দরকার নেই বাদশা তোমার সঙ্গে থাকুক"
"না, আমার মনটা বড্ড কু ডাকছে, বাদশা তোমার সঙ্গে যাক"
"পিয়ালী ও তোমার সঙ্গে থাকুক তোমার সেফটির জন্য"
"এখন আমার আবার কি হবে, তুমি বাদশাকে নিয়ে যাও আর তাড়াতাড়ি ফিরে এসো, প্লিজ আমার কেমন লাগছে তাই বলছি"
"ঠিক আছে তবে সাবধানে থাকো আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসছি" বলে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল।
অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী ঘরেই ছিলেন শ্রীতমাদেবী টিভি দেখছিলেন এবং অভিরূপবাবু মোবাইলে কিছু কাজ করছিলেন, বাইরে আকাশে বেশ মেঘ জমে আছে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে বিকেলের দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছিল।
এইসময় বাইরে বেশ একটা আওয়াজ দুজনেরই কানে গেল যেন কারো পায়ের আওয়াজ যেন কেউ পা টিপে টিপে হাঁটতে গিয়ে অসাবধানে আওয়াজ করে ফেলেছে,আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের ভিতরে টোবো চেঁচানো শুরু করে দিল সে এতক্ষণ চেন দিয়ে বাঁধা ছিল কারণ নাহলেই সে ছুটে বাইরে বেরিয়ে যেত বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বৃষ্টিতে ভিজতে সে খুব পছন্দ করে তাই বৃষ্টির সময় তাকে বেঁধে রাখতে হয়।
বাইরে আওয়াজ শুনে এবং টোবোর চেঁচামেচিতে অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী দুজনেই একটু অবাক হলেন এইসময় বৃষ্টির মধ্যে কারো আসার কথা নয়, অভিরূপবাবু শ্রীতমাদেবীকে ভিতরে থাকতে বলে বাইরে উঠোনের লাইট জ্বালিয়ে নিজে গেট খুলে বাইরে এলেন দেখতে আর গেট খোলা মাত্র একটা শক্ত হাত টেনে তাকে বাইরে এনে মাটিতে ফেললো, পরে যাওয়ায় পায়ে একটু আঘাত লাগায় অভিরূপবাবুর মুখ থেকে একটু আর্তনাদ হয়েছিল আর সেটা শুনেই শ্রীতমাদেবীও বাইরে বেরিয়ে এলেন, এসে দেখলেন চার-পাঁচ জন লোক কালো পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে।
"আপনারা কারা? কি চাই?" স্বামীকে মাটিতে পরে থাকতে দেখে দ্রুত তার কাছে এসে ভয়ার্ত স্বরে প্রশ্ন করলেন কিন্তু উত্তরে একজন শ্রীতমাদেবীকে হাত ধরে টেনে তুলে একদিকে ঠেলে ফেলে দিল, শ্রীতমাদেবীও চোট পেয়ে আর্তনাদ করে উঠলেন, অভিরূপবাবু কোনোমতে "শ্রী" বলে উঠে স্ত্রীর কাছে যাচ্ছিলেন কিন্তু একজন তার পাঞ্জাবীর কলার টেনে ধরলো, অভিরূপবাবু সভয়ে দেখলেন লোকটার ডান হাতে কিছু একটা চকচক করে উঠলো, অভিরূপবাবুর অবস্থা এমনই যে তিনি চেঁচিয়ে যে সাহায্য চাইবেন সেই অবস্থাও নেই লোকটার ডান হাতটা একটু পিছনে গিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসতে লাগলো, অভিরূপবাবু চোখ বুজলেন কিন্তু হটাৎ একটা কুকুরের গর্জন সাথে একটা মানুষের আর্তনাদ কানে এলো আর একটা ছোট্ট ধাক্কার মতো খেয়ে কিছু একটার উপর পরলেন, না পরলেন না একজোড়া হাত তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
অভিরূপবাবু চোখ খুললেন এবং যাকে সামনে দেখলেন তাকে দেখে তার মনের মধ্যে একইসঙ্গে আনন্দ এবং অবাকভাব দুটোই হলো কারণ একটু আগের প্রায় জীবনের অন্তিম মুহূর্তে তার অবচেতন মন একেই মনে করছিল, চোট লেগে ক্ষণিকের জন্য শ্রীতমাদেবী বোধহয় সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলেন এখন বৃষ্টির জলের ফোঁটা চোখেমুখে পড়তেই আবার সেন্স ফিরে এলো, ধড়মড়িয়ে তিনি ওঠার চেষ্টা করলেন স্বামীকে খোঁজার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলেন তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে আছে আদিত্য না আদিত্য না তাদের ছেলে অনিকেত।
আদিত্য ওরফে অনিকেত বাবাকে ছেড়ে দাঁড় করালো তারপর "মাকে নিয়ে ভিতরে যাও আর সুপ্রতিম স্যারকে কল করে ডাকো" বলে লোকগুলোর দিকে এগিয়ে গেল, অভিরূপবাবু যন্ত্রচালিতের মতো নিজের স্ত্রীর কাছে গিয়ে তাঁকে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন, যেতে যেতে দুজনেই একটা হুঙ্কার শুনতে পেলেন "আমার বাবা মায়ের গায়ে হাত দিয়েছিস তোরা"
আদিত্য হুঙ্কার দিয়েই সামনের একজনকে সজোরে লাথি মারলো সে ছিটকে কিছুটা দূরে পরলো, আর যে একটু আগে অভিরূপবাবুকে মারতে গিয়েছিল তার একটা হাত বাদশা কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে সে সেই হাত ধরেই মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে যন্ত্রনায়, বাদশা তাকে ছেড়ে আরেকজনের উপরে হামলা করেছে আর বাকীদের পেরে ফেলতে আদিত্যর বেশী সময় লাগলো না অবশ্য ইতিমধ্যে লোকাল থানার বড়োবাবু কয়েকজন কনস্টেবল এবংকয়েকজন গ্ৰামবাসী এসে গিয়েছিল তাই যারা অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবীকে মারতে এসেছিল তাদের পালানোর আর সুযোগ হলো না।
গ্ৰামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন ডাক্তার গ্ৰামে না হলেও কাছেই থাকেন আদিত্য ফোন করে তাকে অবিলম্বে আসতে বললো, কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনিও এসে গেলেন এবং অভিরূপবাবু ও শ্রীতমাদেবী ছাড়াও বাদশার কামড়ে জখম হওয়া দুজনের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে দিলেন।
ইতিমধ্যে অভিরূপবাবু টোবোকে ছেড়ে দিলে সেও এসে লোকগুলোর উদ্দেশ্যে কয়েকবার হাঁক ছেড়ে আদিত্যর পায়ে পায়ে ঘুরছে, আদিত্যর একদিকে টোবো আর অপরদিকে বাদশা ঘুরছে।
একটু পরেই সুপ্রতিমবাবুও চলে এলেন আদিত্য তাকে মোটামুটি সবটা বললো, বলাইবাহুল্য সুপ্রতিমবাবু লোকগুলোকে জিজ্ঞেস করলেন কে তাদের এইকাজ করতে পাঠিয়েছে এবং যথারীতি লোকগুলো প্রথমে চুপ থাকলো তারপর আবার কয়েক ঘা দিতেই মুখ খুললো কিন্তু কে তাদের পাঠিয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরে তারা যে নামটা বললো সেটা শুনে গ্ৰামবাসীদের হয়তো তেমন প্রতিক্রিয়া হলো না কিন্তু সুপ্রতিম বাবু, আদিত্য এবং সর্বোপরি অভিরূপবাবু ও শ্রীতমাদেবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো, কারণ তারা নামটা নিয়েছিল "অরুণাভ ব্যানার্জী"র।
লোকগুলোকে আপাতত লোকাল থানায় নিয়ে যাওয়া হলো আর অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবীকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো, গ্ৰামের একজন মেয়ে মাঝে মাঝে এসে শ্রীতমাদেবীর হাতে হাতে কাজ করে দিত আদিত্য তাকে ডেকে দুজনের সঙ্গে থাকতে বললো।
গ্ৰামবাসীরা চলে গেলে আদিত্য আর সুপ্রতিমবাবুও থানায় গেল যেতে যেতে দুজনের মধ্যে কথা হলো,
"শেষপর্যন্ত অরুণাভ এই কাজ করলো?"
"আমিও আপনার মতো অবাক হয়েছি স্যার, বাবা মায়ের মনের অবস্থা যে কি? প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন তাঁরা"
"কিন্তু হঠাৎ অরুণাভ এই কাজটা করলো কেন বলতো?"
"অরুণাভর নামটা শুনে আমি অবাক হয়েছি এটা ঠিক তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা অরুণাভর কাজ নয় ইচ্ছা করে ওর নামটা ব্যবহার করা হচ্ছে"
"তোর হটাৎ এরকম মনে হচ্ছে কেন?"
"অরুণাভ এতদিন যা করেছে তার থেকে অভিরূপ ব্যানার্জী এই নামটার প্রভাব ওকে বাঁচিয়েছে, যে ওকে বাঁচায় ও তাঁকেই কেন মারতে চাইবে?"
"মানুষের মনে যখন শয়তান জেগে ওঠে তখন সে সবকিছু করতে পারে আর ওর মধ্যে শয়তান জাগানোর লোক তো ওর সঙ্গেই থাকে একজন না দুজন"
"মৌমিতা আর মনোজের কথা বলছেন? কিন্তু স্যার অরুণাভ বোকা নয় ও যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে ও ভালো করেই জানে বাবা এবং মায়ের কিছু হয়ে গেলে মামাও ওর হেল্প করবে না অন্যদের কথা তো ছেড়েই দিলাম, না স্যার এটা অরুণাভর কাজ নয়"
"তবে কার কাজ? প্রীতমের?"
"হতে পারে এক কাজ করি চলুন ওই লোকটাকেই আবার জিজ্ঞেস করি তবে এবার সামনে বাদশা থাকবে"।
আদিত্যর অনুমান যে নির্ভুল তা থানায় গিয়ে লোকটাকে আবার জেরা করতেই প্রমাণিত হলো, লোকটা একেই বাদশার কামড় খেয়ে ভয়ে ভয়ে ছিল আবার বাদশা সামনে আসতেই ভয়ে সত্যি কথা বলতে শুরু করলো সে জানালো প্রীতমবাবুই ওদের পাঠিয়েছিল আর বলে দিয়েছিল যদি ধরা পরে তাহলে যেন অরুণাভর নামটা নেয়,
মোটিভ অবশ্য অভিরূপবাবুকে ফোন করেই জানা গেল অভিরূপবাবু জানালেন কিছুদিন আগে প্রীতমবাবু তাকে ফোন করে সাহায্য চায় কিন্তু অভিরূপবাবু তা করতে অস্বীকার করায় সে ফোনেই রীতিমতো হুমকি দেয় যে সে দেখে নেবে সবাইকে শেষ করে দেবে।
এরপর অভিরূপবাবু আরও একটা বিষয় জানান সেটা হলো শুধু প্রীতমবাবু নয় এখানে আসার আগে ছেলে অরুণাভর সঙ্গেও তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল কারনটাও যথেষ্ট গুরুতর, তার বাবাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করায় এবং ক্রিমিনাল বলায় সুশান্ত রেগে যায় এবং মামার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যায় তখনই কথায় কথায় সে বলে, "মামা ক্রিমিনাল শুধু আমার বাবা নয় তোমার ছেলেও, সেই তোমার আরেক ছেলেকে পাহাড় থেকে ঠেলে ফেলে মেরেছে আর ওটা অ্যাক্সিডেন্টের নাম দিয়েছে"
কথাটা শুনে অভিরূপবাবু স্তম্ভিত হয়ে গেলেও শ্রীতমাদেবী বিশ্বাস করতে চাননি তখন সুশান্ত মোবাইলে তোলা ভিডিওটি তাদের দেখিয়ে দেয় এরপর অবশ্য অবিশ্বাস করার আর প্রশ্ন থাকে না, অভিরূপবাবু এই ঘটনায় যে প্রচণ্ড আঘাত পান সেটা আর না বললেও চলে আরও বেশি আঘাত পান যখন অরুণাভ স্বীকার করে যে সে ছোটো থেকেই অনিকেতকে ঘৃণা করতো তাই সুযোগ পেয়েই তাকে সরিয়ে দিয়েছে, অভিরূপবাবু এতটাই ভেঙে পড়েন যে সেখানে আর একদণ্ড থাকেননি সোজা গ্ৰামে চলে এসেছেন, গ্রামে এসে অবশ্য কাউকেই কিছু বলেননি, এতকিছু শুনে আদিত্য নিজেই বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় এটা ভেবে যে এইকদিন সে তার বাবা মাকে দেখে কিছুই বুঝতে পারেনি যে তাদের ভিতরে এইরকম ঝড় চলছে।
পুরো ঘটনা জানতে পেরে সুপ্রতিমবাবু ও আদিত্য দুজনেই হতবাক হয়ে যান তবে অভিরূপবাবু যে ছেলে তাকে মারতে লোক পাঠিয়েছে এটা জেনে ভেঙে পরেছেন সেটা বুঝতে পেরেই সুপ্রতিমবাবু তাকে সত্যিটা জানান যে অরুণাভ না তাকে মারতে লোক পাঠিয়েছিল তার বোনের হাজবেন্ড প্রীতমবাবু, এটা শুনে যদি তার মনের কষ্ট কিছুটা কমে যে অন্তত তার ছেলে এইকাজ করেনি।
বিপদ যখন আসে তখন একসাথে দল বেঁধে আসে বাবা মাকে বাঁচিয়ে আদিত্য একটু রিল্যাক্স হয়েছিল কিন্তু সে ভাবতেও পারেনি বিপদের পরবর্তী ধাক্কাটা তার জীবনে আসবে। থানায় সে আর সুপ্রতিমবাবু বসে একটু চা খেতে খেতে কথা বলছিল পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করছিল এমন সময় বৃষ্টিতে ভিজে জলকাদায় মাখামাখি হয়ে একটা বাচ্চা থানায় ঢোকে সাথে একজন লোক, আদিত্য দুজনকে দেখে অবাক হয় কারণ বাচ্চাটিকে সে পিয়ালীর কাছে রেখে এসেছিল আর লোকটি বাচ্চাটির বাবা, সে বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করে,
"কি রে তুই এখানে? তোকে বললাম যে আমি যতক্ষণ না ফিরি দিদির কাছে থাকতে"
"সব্বোনাশ হয়ে গেছে আদিত্য" জবাবটা দিল বাচ্চাটির বাবা, আদিত্যর বুকটা ধড়াশ করে উঠলো, "কি হয়েছে? পিয়ালী ঠিক আছে?"
"পিয়ালী দিদিকে কয়েকজন লোক ধরে নিয়ে গেছে?" বাচ্চাটি কোনোমতে কথা শেষ করলো।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils