Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
#62
[Image: Polish-20230822-084056628.jpg]

|| ফ্রিজ খুলবেন না ||

লেখা :- পার্থ মুখার্জী

আপনাকে যখন জানোয়ারটা পিছনের দিক থেকে আঘাত করলো তখন কিছু বুঝতে পারেন নি ?
পাশের গোল টিপ পরা ফর্সা মহিলা উত্তর দিলো...না দিদি, কিছু বুঝে ওটার আগেই এতো জোড়ে মাথায় আঘাত লাগলো যে আর জ্ঞান ছিলো না। যখন জ্ঞান হোলো তখন দেখছি শীত শীত করছে আর এখানে রয়েছি। আর আপনি এখানে কি ভাবে ?
ট্যাক্সিতে উঠেছিলাম বাড়ি ফিরবো বলে। কিছু পরেই হঠাৎ একটা স্প্রে করে অজ্ঞান করে দিলো। কিছু পর যন্ত্রনায় ছটফট করলাম আর তার পরেই চোখ খুলে দেখলাম আপনার পাশেই রয়েছি এই ঠান্ডায়। আমার মেয়েটা বোধহয় এখনো অপেক্ষা করছে।
বনি অনেকক্ষণ থেকেই ফিস ফিস করে আওয়াজ পাচ্ছিলো। এখন ও নিশ্চিত এটা কোথা থেকে আসছে। পা টিপে টিপে ও এসে দাড়িয়েছে কিছু দিন আগেই কেনা নতুন বড়ো ফ্রিজটার সামনে। আস্তে আস্তে খুললো ওটা। ভিতরের ঠান্ডা হাওয়া যেন শিকারির মতো ঝাঁপিয়ে পরলো তার ওপর, গা সির সির করে উঠলো তার। ফ্রিজের ভিতরের ধোঁয়া মাখা মিষ্টি আলোতে সে দেখলো পাশাপাশি রাখা দুটো কাটা মুন্ডু নিজেদের মধ্যে কথা বলেচলেছে। কপালে ঘাম দিয়েছে বনির। টিপ পরা মুন্ডুটা কট কট করে তাকিয়ে আছে তার দিকেই।মুন্ডু গুলো থেকে রক্ত পরতে শুরু করেছে। সেই রক্তে ভরে যাচ্ছে মেঝে।  বনির গোটা গা যেন রক্তে মাখা মাখি হচ্ছে । চিৎকার করে ওঠে সে।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় বনির। ঘামে চান করেগেছে । স্বপ্ন দেখছিলো সে।দুঃস্বপ্ন তার জীবনেরই অঙ্গ।মাথার পাশে রাখা জল ঢক ঢক করে গলায় ঢালে বনি ওরফে বাণীব্রত। রাজাপুরের এই গলির শেষপ্রান্তে তার দু কামরার ঘর। একা থাকে। বাবা গত হয়েছেন। মা নিরুদ্দেশ। ট্যাক্সি চালায়। পাড়ার সবাই ওকে ভালো ছেলে বলেই জানে। পড়াশোনাও করেছে কিছুটা। মার্জিত ব্যবহার আর মুখে সর্বদা স্মিত হাসি বনিকে সবার কাছেই অল্পসময়ে জনপ্রিয় করে তোলে। তবে ও কিছুটা গুটিয়ে রাখে নিজেকে। মিশতে পারে না তেমন।চোখ দেখলেই বোঝা যায় ওর ভিতরে কতো না বলা কথা আর অজানা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে।খাট থেকে নেমে ফ্রিজ খোলে সে। না সব ঠিক আছে। ফ্রিজের ভিতরে হাত গলিয়ে টিপ পরা ফর্সা মুন্ডুটা বার করে সে। পাশের টেবিলে রাখে। ড্রয়ার থেকে ছুঁচ সুতো বার করে নিপুন হাতে কাটা মুন্ডুটার চোখ দুটো আর ঠোঁটটা সেলাই করে সে।মেয়েদের বেশি কথা বলা সে পছন্দ করে না সে স্বপ্নেই হোক বা বাস্তবে।
বাবা রোজ রাতে নেশা করে এসে ওকে আর ওর মাকে বেদম মারধোর করতো। ছোটো বনিকে বাঁচাতে সে সব অত্যাচার তার মা ই সহ্য করতো বেশি। ভালো করে খেতে পরতে না দিক অত্যাচারে কোনো কার্পণ্য করতো না ওর বাবা। মা ছিলো একমাত্র আশ্রয়।দিনের পর দিন মায়ের ওপর অত্যাচার দেখতে দেখতে ভিতরটা তার পাথর হয়ে গেছে। কিন্তু সেই মা কি করলো তার সাথে ? মাত্র পনেরো বছর বয়সেই তাকে ছেড়ে পালিয়ে গেলো সংসার থেকে। তাকে এই নরকের আগুনে ঝলসাতে দিয়ে নিজে স্বর্গ সুখ পেতে চলে গেল অন্য কোথাও।বাবার মুখেই শুনেছিলো তার মা নাকি পালিয়েছে  পাড়ার এক কাকুর সাথে। তার পর থেকেই নরক কি জিনিস তা নিজের ঘরেই টের পেতে শুরু করে বনি। সামান্য সামান্য ভুল ত্রুটি তে যে মার সে খেত তা পুলিশের থার্ড ডিগ্ৰী কেও লজ্জা দেবে।একদিন সহ্যর সব সীমা অতিক্রম করলো বনির। তাকে মারধোর করে রাতে মদ খেতে বসেছিল বাবা ছাদের ওপর। চুপি চুপি গিয়ে ঠেলে নিচে ফেলেদিয়েছিল সে। পরেই মৃত্যু হয়েছিল।তার প্রথম খুনে হাতে খড়ি এটাতেই।মাতাল বলে পুলিশও তেমন গুরুত্ব দেয় নি। তার পর থেকেই একা জীবনযুদ্ধ চালিয়ে গেছে সে। দিন গুনেছে মা এর ফিরে আসার কিন্তু কেউ আসে নি। আস্তে আস্তে মনের অন্ধকার কোনে মায়ের প্রতি তীব্র ঘৃণা বাঁসা বেঁধেছে তার।

বাবার ওপর যা যা রাগ জমেছিলো তার মনে তা সবই গিয়ে পরলো মায়ের ওপর।কোনো মহিলা দেখলেই তার মধ্যে নিজের মা কে দেখতে পায় সে। নিজেকে সামলাতে পারে না। খুন করে তাকে।নির্জন জায়গাতে নিয়ে গিয়ে মুন্ডুটা কেটে বাড়ি আনে। নতুন বড়ো ফ্রিজটায় একটা তাক সে বরাদ্দ করেছে এই মুন্ডু গুলোর জন্যেই।মাঝে মাঝেই একটা করে বার করে চোখ মুখ সেলাই করে সে,যেমন এই মুন্ডুটার করে চলেছে। তার পর সেটার সাথে সারারাত গল্প করে। সারা দিনের কিংবা সারা জীবনের না বলা কথা গুলো, দুঃখ গুলো, অভিমানগুলো এক মনে বলে চলে সে কোনো উত্তরের আশা না করেই। এভাবে কিছু দিন চলতে চলতে যখন একঘেয়ে হয়ে যায় তখন বাড়ির পিছনের নির্জন ছোটো বাগানে এক কোনের গর্তে সেগুলোকে পুঁতে দিয়ে নতুন শিকারের সন্ধানে বেরোয় সে।তবে ইদানীং নতুন একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাতের দিকে একটা কালো ছায়া ঘুরে বেড়াতে দেখেছে সে। তার উপস্থিতি নানা ভাবে টের পায় বনি। একটু যেন গা টা ছমছম করে ওঠে। খুন করার সময় কিন্তু বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না সে। এখনো পর্যন্ত চারটে খুন করেছে বনি । সবগুলোই শহরের আসে পাশে।পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে। খুবই সাবধানে কাজ সারে সে। কোনো প্রমান রাখে না। সিসিটিভি এড়িয়ে চলে। ফোন তেমন ব্যবহার করে না।কাল সকালেই বেরোবে সে। সারাদিন ঘুরবে। রাতে শিকার করবে। পাকা শিকারির মতো সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় থাকে সে। বেশি ঝুঁকি নেয় না। বৃষ্টি বাদলার আবহওয়া তার সবচেয়ে প্রিয়। নিম্নচাপ হয়েছে কদিন হোলো। আদর্শ সময়।

সেলাই শেষ। এক নিঃশ্বাসে মনের কথা বলে চলে বনি। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে তার। জানেন মা কে খুব ভালো বাসতাম। এই যে চোখ থেকে জল পরছে, মা থাকলে আঁচলে মুছতাম। কলেজে ভর্তি হয়েও শেষ করতে পারি নি। মা থাকলে ঠিক শেষ করতাম। ক্লাসে একটা মেয়ে কে বেশ ভালো লেগেছিলো, কিন্তু আমার চুপচাপ স্বভাব তার ভালো লাগে নি। মুখের ওপর না বলেদিলো। কোনো মেয়েই আমায় পছন্দ করে না। অবশ্য আমিও ঘেন্না করি আপনাদের। এই চোখ দিয়েই তো বশ করেন সব ! আর এখন ? কথা গুলো বলেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে বনি। নিমেষে দুঃখ ভাবটা উধাও হয়ে যায়। হঠাৎ ঘাড়ের কাছে ঠান্ডা কিছু একটার স্পর্শ অনুভব করে কেঁপে ওঠে সে। চমকে পিছনে ফিরে তাকায়। একটা লম্বা কালো ছায়া দরজার কোনে ঢুকে যায়। হাতে একটা কাঁচি কে ছুরির মতো ধরে এগিয়ে যায় বনি। কিন্তু কোথায় কি ? চোখের ভুল ভেবে ফিরে আসে সে। ভোর হয়ে আসছে। মুন্ডুটা কে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখে সে। ফ্রিজ বন্ধ করতে করতে বলে..
কাল তোমাদের বন্ধু আসবে।

ই এম আই তে মাস তিনেক হোলো ফ্রিজ টা কিনেছে সে। বেশ বড়ো। ওটার ডেলিভাড়ির সময় পাশের বাড়ির কাকিমা টেরা চোখে তাকিয়ে বলেছিলো
একার সংসারে আবার এতো বড়ো ফ্রিজের কি দরকার ? বনি ভাবে, ওই কাকিমার মুন্ডুটা কে এটার ভিতর রাখলে বুঝতে পারতো কি দরকারে বনি ওটা কিনেছে। মনে মনে হাসি পায় ওর।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমে চোখ ঢুলে আসে ওর। হঠাৎ পায়ের কাছে কিছু একটার স্পর্শ পায় সে। চোখটা ভালো করে কচলে দেখার চেষ্টা করে। জিরো ল্যাম্প এর আলোয় একটা আবছায়া নারী মূর্তি দেখতে পায় সে। যেন সাদা কুয়াশায় ঘেরা। হাত দুটো সে বারাচ্ছে বনির দিকে। প্রথম এতো টা ভয় পেলো সে। চোখটা বন্ধ করে নিলো বনি । গায়ের কাছে যেন কেউ নিঃশ্বাস নিচ্ছে, সেই হাওয়া এসে পরছে বনির গায়ে।খুলতে পারছে না সে চোখ গুলো। মনে মনে ভাবছে ওর চোখ গুলোও কি কেউ বাইরে থেকে সেলাই করতে চলেছে। কিছু পরে ভয়ে আতঙ্কে চোখ দুটো কিছুটা খুললো সে। কোথাও কেউ নেই। সকাল হচ্ছে।

রাতের সব ঘটনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ট্যাক্সি নিয়ে বেরোলো সে। সারা দিন ঘুরে হোটেলে দুমুঠো ভাত খেয়ে ট্যাক্সিতেই একটু জিরিয়ে নিলো বনি। ডিক্কি খুলে একবার অস্ত্র গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিলো। কাটার জন্য করাত, ছোড়া, মাথায় মারার জন্য রড, অজ্ঞান করার স্প্রে, হাতের গ্লাভস, পলিথিন প্যাকেট সবই মজুত রয়েছে। বিকাল থেকে বৃষ্টির পরিমান বারতে শুরু করলো।রঘুপুরের নির্জন রাস্তায় কয়েকবার চক্কর লাগালো সে। পাশেই কলেজ রয়েছে। বৃষ্টিতে তার ট্যাক্সি চড়ার একটা বড়োলোক স্টুডেন্ট নিশ্চই পাবে সে। টোটোর যা উৎপাত। সামনের সিসিটিভি লাগানো ল্যাম্পপোস্টটা এড়িয়ে একটু দূরে দাড়ালো সে। ছেলে মেয়ে গুলো জটলা করে বড়োরাস্তায় উঠছে। একটি মেয়ে এই ট্যাক্সি ট্যাক্সি বলতে বলতে কাছে এলো। কাঁচ নামিয়ে ভালো করে দেখে নিলো বনি। ঠিক যেমন ভাবে ঝোপের আড়াল থেকে চিতা হরিণ সাবককে দেখে।

কোথায় যাবেন দিদি ?

চন্দনপুরের মোড় মাথায় যাবে ?

হ্যা যাবো, উঠে পরুন।

আগুনের দিকে পতঙ্গ যেমন এগিয়ে আসে তেমন ভাবেই মেয়েটি উঠেপড়লো ট্যাক্সি তে। গুনগুনিয়ে গান করতে করতে ট্যাক্সি ছেড়ে দিলো বনি।এ রাস্তা তার হাতের তালুর মতো চেনা। বৃষ্টি ঝরে চলেছে অবিরত। মেয়েটা উঠে থেকেই ফোনে বোকে চলেছে। বোধহয় বয়ফ্রেন্ড আছে। থাকবে নাই বা কেন, সবার কপাল কি বনির মতো !রাগে সারা গা টা রি রি করে ওঠে ওর। বৃষ্টির তোড়ে চারদিকটা ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে আছে।গাড়ি টা স্লো হয়ে নির্জন মাঠের ধারে দাড়ায়। মেয়েটির কোনো হুঁশ নেই। ফোন ঘেটেই চলেছে।

দিদি গাড়ি টা প্রবলেম করছে, একটু বসুন দেখছি।
নিচে নেমে আসে বনি। চারদিকটা দেখে নেয়। লোকজন নেই বললেই চলে। শুধু কয়েকটা গাড়ি জল ছিটিয়ে চলে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই। ডিক্কিটা খুলে কটা জিনিস হাতে নেয় সে। তার পর পিছনের দরজা খুলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোহার রডের বাড়ি পর পর মাথায় পরে মেয়েটার।লুটিয়ে পরে সিটেই। রক্ত ধুয়ে যেতে থাকে বৃষ্টির জলেই। তার পর বডিটা টেনে সে মাঠের বেনা ঝোপের ভিতরে নিয়ে যায়। করাত চলতে থাকে গলা বরাবর। অল্প সময়েই শরীর থেকে মাথা টা আলাদা হয়ে যায়। মাথাটা কাটার সময় বোধহয় মেয়েটা বেঁচেই ছিলো। গলা থেকে অদ্ভুত চি চি আওয়াজ বেরোচ্ছিলো শুধু। বনির বেশ হাসি পাচ্ছিলো। এসব কাজে সে নিজেকে বেশ দক্ষ শিল্পী ভাবে। বডিটা আরেকটু টেনে ভিতরে ফেললো সে। যত দেরী তে ওটা পাওয়া যাবে ততই সুবিধা ওর। টিভি তে নিজের কীর্তির বাহবা নিতে সে অতটা পছন্দ করে না। মুন্ডুটা একটা থলেতে ভরে সিটের নিচে রাখলো সে। রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।

সারা দিনের ক্লান্তিতে শরীর টা অবসন্ন হয়ে আছে রনির। থলে টা খুলে মুন্ডুটা টেবিলে রাখলো সে। মেয়েটা দেখতে ভালো।বয়স বেশি নয়। এককালে তার নিজের কলেজ প্রেমের কথা মনে পরে যায় বনির। লজ্জা পায় মনে মনে। ফ্রিজটা খুলে মুন্ডুটা রাখে। তবে পাশের বেশি বয়সের মহিলার মুন্ডু গুলো যেন এটার পাশে বেশি বেমানান লাগছে বনির। সে ঠিক করে আজ রাতেই আগের দুটো বাগানে পুঁতে ফেলবে। ভালো করে চান করে রান্না বসায় সে। বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে একটু জিরিয়ে নেয়। হঠাৎ যেন তার পাশে একটা কালো ছায়া এসে দাড়িয়েছে মনে হয় ওর। একটু শীত শীত ও লাগছে। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এলো নাকি ? ভাবতে ভাবতেই চোখ খুলে চমকে ওঠে সে। মুখের সামনে কালো কুয়াশা ঘেরা আর একটা আবছা মুখ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। তার কি কোনো মানসিক রোগ দেখা দিলো ? না কি যেগুলোকে মেরেছে তাদের কারোর আত্মাই ওর ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইছে। ভেবে পায় না সে কিছুই। কুকারের সিটি তে হুঁশ ফেরে ওর। চোখ খুলে কিছুই পায় না বনি। খেয়ে দেয়ে আবার ফ্রিজ খোলে সে। চুলের মুঠি ধরে দুটো মুন্ডু বার করে। অন্য হাতে একটা কোদাল নিয়ে বাগানে যায় সে। অন্ধকার রাতে তার এই অপরাধের সাক্ষী শুধু ভেজা মাটি আর গাছ পালা গুলো। চারিদিকে একটা নিশুতি ভাব বিরাজ করছে। নতুন একটা গর্ত খোলার কথা ভাবে সে। মাটিও বেশ নরম। বাবা একটা কলকে ফুলের গাছ বসিয়েছিল। গতমাসে ওটা মরে গেছে। গাছ টা আগেই উবড়ে ফেলেছিলো সে। খুব ফুল দিতো গাছটা বেঁচে থাকতে যেমন ওর মা ওর কাছে থাকতে ওকে ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলতো ঠিক তেমন ই।এখনো ওর মনে আছে ওই গাছ বসাতে বসাতেই ওর বাবা প্রথম ওর মায়ের পালিয়ে যাবার খবর দিয়েছিলো। চোখের জল গড়িয়ে পরে রনির। রাগে জোরে জোরে কোপ বসাতে থাকে মাটিতে। কিন্তু কিছু পরেই কোদালের ঘায়ে অন্য একটা আওয়াজ আসতে থাকে। কিছু কি আছে ? আর একটু খুঁড়েই কিছু একটা দেখতে পায় সে। এমার্জেন্সি আলোটা এনে জ্বালে। কঙ্কাল রয়েছে একটা। এটাতো তার পোতা নয়। কঙ্কালের আঙ্গুলটায় একটা আংটি দেখে স্থির হয়ে যায় বনি।
মা !!

তাহলে বাবা মা কে খুনকরে এখানেই পুঁতে দিয়েছিলো ?এতো বছর মায়ের ওপর মিথ্যে দোষারোপের বোঝা সে চাপিয়ে এসেছিলো। হাউ হাউ করে বাচ্ছা শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করে বনি। যে মা এর ওপর রাগ তাকে এই জানোয়ারে পরিণত করেছে সে কি না তার এতো কাছেই শুয়ে ছিলো ! হঠাৎ তার পিছনে সেই ছায়ার উপিস্থিতি টের পায় বনি।
মা এসেছো ?

বুঝতে পারে বনি। মা নিতে এসেছে তাকে। ভয় দেখিয়ে সে বনি কে জানোয়ার হতে আটকাতে পারে নি। মা হবার আগে সে নিজে মেয়েও। কি করে সে সহ্য করে মেয়েদের প্রতি তার সন্তানের এইরূপ প্রতিহিংসা।একটা মিষ্টি গন্ধ পায় বনি। মায়েদের গায়ে একটা গন্ধ থাকে যা শুধু সন্তানেরাই পায়। বনিও চিনতে পেরেছে। মা এর কবরে আস্তে আস্তে শুয়ে পরে সে বাধ্য ছেলের মতো। যেমনটা সে ছোটবেলায় করতো। জড়িয়ে ধরে তার মা কে। ওপর থেকে মাটি পরতে শুরু করে একটু একটু করে।

কিছু দিন পর পচা গন্ধের অভিযোগে যখন পুলিশ বাড়িতে ঢোকে তখন ফ্রিজ খুলেই সেটা বন্ধ করে ফেলেন থানার বড়োবাবু।বমি করতে করতে বাগানে চলে আসেন তিনি । এখানের মুন্ডু দুটো তার দিকেই চেয়ে আছে। আর বাগানের এক কোনে আলগা মাটির ওপর নতুন আর একটা কলকে চারা গজিয়ে উঠেছে।বড়ো বাবু তখন চেঁচিয়ে বাকিদের বলেচলেছেন  "ফ্রিজ খুলবেন না"।

|| সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 7 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক গল্প সংকলন (চলছে) - by Sanjay Sen - 22-08-2023, 08:45 AM



Users browsing this thread: