21-08-2023, 03:15 PM
(This post was last modified: 22-08-2023, 03:13 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
অষ্টনবতি অধ্যায়
একতলা হলেও বাড়ী দেখে পিয়ালী মিত্রের খুব পছন্দ হয়েছে।ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকেন বেশ প্রশস্ত ঘরগুলো সামনে গ্রিল ঘেরা বারান্দা পিছনে এক চিলতে বাগান।বাড়ীওলা বিদেশে থাকে পুরো বাড়ীটাই তাদের।পারুল রান্না ঘরে গোছ গাছ করছে।পান্নাবাবু বাজার থেকে আসলেই রান্না শুরু করে দেবে।পলির কাছে দীপার খবর শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।পিয়ালী মিত্র জিজ্ঞেস করলেন,তোকে কে বলল?
রান্নার মহিলা ফোন করেছিল।
কি করে এ্যাক্সিডেণ্ট হল?
অত জানিনা ওকে ফোন করেছিল।
একা একা তুই যাবি এতটা জার্নি করে এলি--সঙ্গে পানুবাবুকেও নিয়ে যা।
তোমার বাচ্চু সোনাও যাবে।
তাহলে ত ভালই হল এখন ওরই তো দায়িত্ব তোর দেখাশোনা করার।
এই ননদের সঙ্গে বেশী ঘনিষ্ঠতা ছিলনা।বিয়ের কিছুকাল পরে শ্বশুরমাশায়ের অবাধ্য হয়ে বাড়ী ছেড়ে কলকাতায় চাকরি করতে বাড়ী ছেড়েছিল।তাহলেও তার যাওয়া উচিত।পিয়ালী বললেন,আমার শরীরটা ভাল নেই নাহলে--।
এতলোক যাবার দরকার কি?আমরা তো যাচ্ছি।
ঠিক আছে গিয়েই খবর দিবি কেমন আছে দীপা?মনুর কলেজ নেই?
ও কলেজে যাবেনা।
বারান্দায় বসে আছে সুখ।কি হচ্ছে কলকাতায় মোমোর দেখাশুনা কেইবা করছে।এইজন্য কলকাতা ছেড়ে তার আসার ইচ্ছে ছিল না।মোমোর ইচ্ছেতেই সে আজ এতদূরে কলেজের চাকরি নিয়ে এসেছে।
পিয়ালী মিত্র রান্না ঘরে গিয়ে খোজ নিলেন,রান্না কতদূর কি হল।পারুল বলল,এইমাত্র তো বাজার নিয়ে এল।
তাড়াতাড়ি কর দিদি আবার বের হবে।
পাঞ্চালী বারান্দায় এসে সুখকে দেখে অবাক হয়।আমার পিসি আমার চেয়ে ওর চিন্তা বেশী।এখানে আসার পর ভালো করে তার সঙ্গে কথা বলেনি।একজন অনাত্মীয়া মহিলার সঙ্গে এমন কি সম্পর্ক হতে পারে যে তার এ্যাক্সিডেণ্টের খবর পেয়ে এমন ভেঙ্গে পড়তে হবে।গোপাল্পুরে মোমোকে দেখেও নি।কিছু একটা রহস্য আছে।পাঞ্চালী কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,মোমোর কথা ভাবছো?
ভালই হয়েছে তুমি যাচ্ছো।তুমিও একজন ডাক্তার।
তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে মোমো কোথায় আছে মানে হাসপাতালে না বাড়ীতে?
এ্যাক্সিডেণ্ট শুনে এমন সব গুলিয়ে গেল কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।
আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব কিছু মনে কোরোনা।
সুখ ঘাড় ঘুরিয়ে পাঞ্চালীর দিকে তাকালো।
মোমো আমার পিসি তোমার তো কেউ নয় মানে আমি বলছিলাম কি--।
সুখ হেসে বলল,বুঝেছি তুমি কি বলতে চাইছো।আমি আগেও ভাবিনি জন্ম দিয়েই কেবল সম্পর্ক হয়না।আমার নিজের মামাকেও দেখেছি--।
পিয়ালী মিত্রের গলা পাওয়া গেল,তোরা স্নান করে নে।রান্না হয়ে গেছে।আবার তো বেরোতে হবে।
পান্না বাবু ছুতোর মিস্ত্রীকে দিয়ে গ্যারাজ ঘরটা কাঠের পার্টিশন দিয়ে চেম্বারের উপযোগী করছেন।রোগী পরীক্ষার জন্য একটা কুঠরী মত করা হয়েছে। পথচারী দু-একজন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করছে এখানে কি হবে?পান্নাবাবু তাদের বুঝিয়ে বলছেন,এতে কিছুটা প্রচার হয়ে যাচ্ছে।লোকজন সন্তোষ প্রকাশ করছে কাছাকাছি কোনো ডাক্তার নেই।এটা ডাক্তারখানা হলে ভালই হবে।
ওরা খেতে বসেছে।একটা চেয়ারে বসে পিয়ালী মিত্র তদারক করছেন।দীপার কথা ভেবে মনটা খারাপ।বিয়ে-থা করলে আজ দেখাশুনার লোকের অভাব হতো না।
পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছো?তুমিও তো বসে যেতে পারতে।
তোরা কবে ফিরবি?
দাঁড়াও এখনো গেলাম না।ওখানে গিয়ে দেখি কি অবস্থা।
যদি রাজি হয় এখানে নিয়ে আসিস।কাছেই দার্জিলিং কদিন ঘুরে গেলে ভালো লাগবে।
কলেজ কামাই করে আসবে কিনা জানি না। রাজি হলে তো নিয়ে আসবো।
পাঞ্চালী লক্ষ্য করে ও মুখ গোমড়া করে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।মোমোর জন্য ওর অভিভুত হওয়া খুব দৃষ্টিকটু লাগে।সুখ এমনি সহজ সরল ওর মধ্যে কপটতা নেই পাঞ্চালী জানে কিন্তু এইভাব তার ভালো লাগে না।
পাঞ্চালী স্থির করে শাড়ী পরবে না শালোয়ার কামিজ পরবে।তৈরী হতে থাকে।কলেজে পড়ার সময় তাকে কেউ কিছু বললে তেড়ে মারতে আসতো।লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতো।বাড়ীর নীচে ঘোরাঘুরি করতো।পাঞ্চালী কিছুটা কনফিউজড তাহলে কি ভুল বুঝেছে?ইচ্ছের বিরুদ্ধে মোমোর চাপে পড়ে বিয়ে করেছে?
পান্নাবাবু এসে দাড়াতে পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,কাকু কিছু বলবেন?
এক মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে এসে কান্না কাটি করছে।তুমি কি একবার দেখবে?
আসতে না আসতেই খবর হয়ে গেছে?কি হয়েছে কি?
বাচ্চাটার কানে যন্ত্রণা হচ্ছে কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না।
আচ্ছা ঠিক আছে যান আমি আসছি।
পাঞ্চালীর খারাপ লাগে না বেরোবার আগে একটা ভালো কাজ করে বেরোবে।মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে জানলা দিয়ে উকি মারতে দেখল,এক মহিলা বাচ্চা কোলে দাড়িয়ে,বাচ্চাটি কেদে চলেছে।মহিলা তাকে থামাতে চেষ্টা করছে।ওদের ঘিরে ছোটোখাটো একটা ভীড় জমে গেছে।পাঞ্চালী মুখ বাড়িয়ে বলল,কাকু ওকে ভিতরে নিয়ে আসুন।আর ঐ রিক্সাওলাকে দাড়াতে বলুন আমরা বের হবো।
বাচ্চাটা কোলে নিয়ে মহিলা ভিতরে এলে পাঞ্চালী দেখল,কানে জব জব করছে সর্ষের তেল। বলল,এত তেল দিয়েছেন কেন,মুছে ফেলুন।
মহিলা আঙ্গুলে আচল পেচিয়ে কানের তেল মুছে ফেলল।পাঞ্চালী ভালো করে পরীক্ষা করে বুঝলো কানে কিছুই হয়নি।পেটের গোলমালের জন্য হয়তো কানে যন্ত্রণা হচ্ছে।সুখ তৈরি হয়ে দরজার কাছে এসে দাড়িয়েছে পাঞ্চালীর নজরে পড়ে।ব্যাগ খুলে একটা হজমের ট্যাবলেট বাচ্চাটাকে খাইয়ে দিল।কিছুক্ষন পর বাচ্চাটির কান্না থেমে গেল।
বাচ্চার কানে কিছু হয়নি।পেটের গোলমালের জন্য কানে যন্ত্রণা হচ্ছিল।
বাচ্চাটীর মা আশ্বস্থ হয়ে হেসে বলল,ম্যাম আপনা ফিজ?
ফিজ দিতে হবে না।আমি এখনো ডাক্তারী শুরু করিনি।
সুখর ভালো লাগে। ড মিত্রও বহু রোগীর কাছে ফিজ নিতেন না।পাঞ্চালীও ওর বাবার মতো হয়েছে। পাঞ্চালি বাইরে বেরিয়ে দেখল ভীড় ফাকা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে।পান্নাবাবুকে বলল,কাকু আমরা আসছি।মামণি রইল দেখবেন।
তুমি কোনো চিন্তা কোরণা কাজ মিটিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।পান্নাবাবু বললেন।
পাঞ্চালী রিক্সায় উঠে বসল।সুখ এসে দাঁড়িয়ে থাকে।
কি হোল ওঠো,ট্রেন কি তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে?
কোথায় বসব?
পাঞ্চালী দেখল দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে সে বসেছে।লজ্জা পেয়ে বলল,কি করব আমাকে কি রোগা হতে হবে।
সুখ রিক্সায় উঠতে উঠতে বলল,তুমি এমন কিছু মোটা নও বরং স্লিম বলা যেতে পারে।তোমার--।
তার ভারী পাছার ইঙ্গিত করছে বুঝে পাঞ্চালী বলল,থাক হয়েছে।মেয়েদের হিপ একটু ভারী হয়।উঠে চেপে বোসো।
সুখ ফাকের মধ্যে বসে পড়তে জায়গা হয়ে গেল।মোমোর পাছাও এমনি ভারী ছিল।পাঞ্চালীর গায়ে মিশে আছে।
পিয়ালী মিত্র জানলায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে থাকেন।পৌছে ফোন করবি।
রিক্সা চলতে শুরু করে।পাঞ্চালী আড়চোখে সুখকে দেখে।কেমন আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে।এই কি ওর স্বামী।পাঞ্চালী থাকতে না পেরে বলল,তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
খুব জরুরী কথা?
সত্যি করে বলতো--
দেখো মিথ্যে বলতে আমার লজ্জা হয়।
তুমি কি আমায় ভালোবাসো না?ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করে পাঞ্চালী।
I love you বললে ভালোবাসা হবে।
এতদিন পরে দেখা হোল ভেবেছিলাম তুমি আমাকে একবার অন্তত জড়িয়ে ধরবে--।
তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো সমস্যা।
মানে?
পাঞ্চালী তোমার পাশে যে লোকটা বসে আছে তাকে তুমি কতটুকু চেনো?
কতটুকু আবার কি।লোকটা গোয়ার গোবিন্দ গুণ্ডা আমার ইহকাল আমার পরকাল-- খুব ভাল করেই চিনি।
লোকটার আসল পরিচয় জানলে তূমি পাশে বসতে দিতে না --
আমি বিশ্বাস করিনা।
ঠীক আছে রিক্সায় বসে এসব ভালো লাগছেনা।
পাঞ্চালীর মনে হল মূল সমস্যার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।চাপাচাপি করার দরকার নেই সময় হলে ঐ আপনা হতে সব বলবে। মোমোর সঙ্গে actually relation টা কি তারও মনে কৌতূহল কম নেই।
একতলা হলেও বাড়ী দেখে পিয়ালী মিত্রের খুব পছন্দ হয়েছে।ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকেন বেশ প্রশস্ত ঘরগুলো সামনে গ্রিল ঘেরা বারান্দা পিছনে এক চিলতে বাগান।বাড়ীওলা বিদেশে থাকে পুরো বাড়ীটাই তাদের।পারুল রান্না ঘরে গোছ গাছ করছে।পান্নাবাবু বাজার থেকে আসলেই রান্না শুরু করে দেবে।পলির কাছে দীপার খবর শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।পিয়ালী মিত্র জিজ্ঞেস করলেন,তোকে কে বলল?
রান্নার মহিলা ফোন করেছিল।
কি করে এ্যাক্সিডেণ্ট হল?
অত জানিনা ওকে ফোন করেছিল।
একা একা তুই যাবি এতটা জার্নি করে এলি--সঙ্গে পানুবাবুকেও নিয়ে যা।
তোমার বাচ্চু সোনাও যাবে।
তাহলে ত ভালই হল এখন ওরই তো দায়িত্ব তোর দেখাশোনা করার।
এই ননদের সঙ্গে বেশী ঘনিষ্ঠতা ছিলনা।বিয়ের কিছুকাল পরে শ্বশুরমাশায়ের অবাধ্য হয়ে বাড়ী ছেড়ে কলকাতায় চাকরি করতে বাড়ী ছেড়েছিল।তাহলেও তার যাওয়া উচিত।পিয়ালী বললেন,আমার শরীরটা ভাল নেই নাহলে--।
এতলোক যাবার দরকার কি?আমরা তো যাচ্ছি।
ঠিক আছে গিয়েই খবর দিবি কেমন আছে দীপা?মনুর কলেজ নেই?
ও কলেজে যাবেনা।
বারান্দায় বসে আছে সুখ।কি হচ্ছে কলকাতায় মোমোর দেখাশুনা কেইবা করছে।এইজন্য কলকাতা ছেড়ে তার আসার ইচ্ছে ছিল না।মোমোর ইচ্ছেতেই সে আজ এতদূরে কলেজের চাকরি নিয়ে এসেছে।
পিয়ালী মিত্র রান্না ঘরে গিয়ে খোজ নিলেন,রান্না কতদূর কি হল।পারুল বলল,এইমাত্র তো বাজার নিয়ে এল।
তাড়াতাড়ি কর দিদি আবার বের হবে।
পাঞ্চালী বারান্দায় এসে সুখকে দেখে অবাক হয়।আমার পিসি আমার চেয়ে ওর চিন্তা বেশী।এখানে আসার পর ভালো করে তার সঙ্গে কথা বলেনি।একজন অনাত্মীয়া মহিলার সঙ্গে এমন কি সম্পর্ক হতে পারে যে তার এ্যাক্সিডেণ্টের খবর পেয়ে এমন ভেঙ্গে পড়তে হবে।গোপাল্পুরে মোমোকে দেখেও নি।কিছু একটা রহস্য আছে।পাঞ্চালী কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,মোমোর কথা ভাবছো?
ভালই হয়েছে তুমি যাচ্ছো।তুমিও একজন ডাক্তার।
তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে মোমো কোথায় আছে মানে হাসপাতালে না বাড়ীতে?
এ্যাক্সিডেণ্ট শুনে এমন সব গুলিয়ে গেল কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।
আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব কিছু মনে কোরোনা।
সুখ ঘাড় ঘুরিয়ে পাঞ্চালীর দিকে তাকালো।
মোমো আমার পিসি তোমার তো কেউ নয় মানে আমি বলছিলাম কি--।
সুখ হেসে বলল,বুঝেছি তুমি কি বলতে চাইছো।আমি আগেও ভাবিনি জন্ম দিয়েই কেবল সম্পর্ক হয়না।আমার নিজের মামাকেও দেখেছি--।
পিয়ালী মিত্রের গলা পাওয়া গেল,তোরা স্নান করে নে।রান্না হয়ে গেছে।আবার তো বেরোতে হবে।
পান্না বাবু ছুতোর মিস্ত্রীকে দিয়ে গ্যারাজ ঘরটা কাঠের পার্টিশন দিয়ে চেম্বারের উপযোগী করছেন।রোগী পরীক্ষার জন্য একটা কুঠরী মত করা হয়েছে। পথচারী দু-একজন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করছে এখানে কি হবে?পান্নাবাবু তাদের বুঝিয়ে বলছেন,এতে কিছুটা প্রচার হয়ে যাচ্ছে।লোকজন সন্তোষ প্রকাশ করছে কাছাকাছি কোনো ডাক্তার নেই।এটা ডাক্তারখানা হলে ভালই হবে।
ওরা খেতে বসেছে।একটা চেয়ারে বসে পিয়ালী মিত্র তদারক করছেন।দীপার কথা ভেবে মনটা খারাপ।বিয়ে-থা করলে আজ দেখাশুনার লোকের অভাব হতো না।
পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছো?তুমিও তো বসে যেতে পারতে।
তোরা কবে ফিরবি?
দাঁড়াও এখনো গেলাম না।ওখানে গিয়ে দেখি কি অবস্থা।
যদি রাজি হয় এখানে নিয়ে আসিস।কাছেই দার্জিলিং কদিন ঘুরে গেলে ভালো লাগবে।
কলেজ কামাই করে আসবে কিনা জানি না। রাজি হলে তো নিয়ে আসবো।
পাঞ্চালী লক্ষ্য করে ও মুখ গোমড়া করে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।মোমোর জন্য ওর অভিভুত হওয়া খুব দৃষ্টিকটু লাগে।সুখ এমনি সহজ সরল ওর মধ্যে কপটতা নেই পাঞ্চালী জানে কিন্তু এইভাব তার ভালো লাগে না।
পাঞ্চালী স্থির করে শাড়ী পরবে না শালোয়ার কামিজ পরবে।তৈরী হতে থাকে।কলেজে পড়ার সময় তাকে কেউ কিছু বললে তেড়ে মারতে আসতো।লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতো।বাড়ীর নীচে ঘোরাঘুরি করতো।পাঞ্চালী কিছুটা কনফিউজড তাহলে কি ভুল বুঝেছে?ইচ্ছের বিরুদ্ধে মোমোর চাপে পড়ে বিয়ে করেছে?
পান্নাবাবু এসে দাড়াতে পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,কাকু কিছু বলবেন?
এক মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে এসে কান্না কাটি করছে।তুমি কি একবার দেখবে?
আসতে না আসতেই খবর হয়ে গেছে?কি হয়েছে কি?
বাচ্চাটার কানে যন্ত্রণা হচ্ছে কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না।
আচ্ছা ঠিক আছে যান আমি আসছি।
পাঞ্চালীর খারাপ লাগে না বেরোবার আগে একটা ভালো কাজ করে বেরোবে।মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে জানলা দিয়ে উকি মারতে দেখল,এক মহিলা বাচ্চা কোলে দাড়িয়ে,বাচ্চাটি কেদে চলেছে।মহিলা তাকে থামাতে চেষ্টা করছে।ওদের ঘিরে ছোটোখাটো একটা ভীড় জমে গেছে।পাঞ্চালী মুখ বাড়িয়ে বলল,কাকু ওকে ভিতরে নিয়ে আসুন।আর ঐ রিক্সাওলাকে দাড়াতে বলুন আমরা বের হবো।
বাচ্চাটা কোলে নিয়ে মহিলা ভিতরে এলে পাঞ্চালী দেখল,কানে জব জব করছে সর্ষের তেল। বলল,এত তেল দিয়েছেন কেন,মুছে ফেলুন।
মহিলা আঙ্গুলে আচল পেচিয়ে কানের তেল মুছে ফেলল।পাঞ্চালী ভালো করে পরীক্ষা করে বুঝলো কানে কিছুই হয়নি।পেটের গোলমালের জন্য হয়তো কানে যন্ত্রণা হচ্ছে।সুখ তৈরি হয়ে দরজার কাছে এসে দাড়িয়েছে পাঞ্চালীর নজরে পড়ে।ব্যাগ খুলে একটা হজমের ট্যাবলেট বাচ্চাটাকে খাইয়ে দিল।কিছুক্ষন পর বাচ্চাটির কান্না থেমে গেল।
বাচ্চার কানে কিছু হয়নি।পেটের গোলমালের জন্য কানে যন্ত্রণা হচ্ছিল।
বাচ্চাটীর মা আশ্বস্থ হয়ে হেসে বলল,ম্যাম আপনা ফিজ?
ফিজ দিতে হবে না।আমি এখনো ডাক্তারী শুরু করিনি।
সুখর ভালো লাগে। ড মিত্রও বহু রোগীর কাছে ফিজ নিতেন না।পাঞ্চালীও ওর বাবার মতো হয়েছে। পাঞ্চালি বাইরে বেরিয়ে দেখল ভীড় ফাকা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে।পান্নাবাবুকে বলল,কাকু আমরা আসছি।মামণি রইল দেখবেন।
তুমি কোনো চিন্তা কোরণা কাজ মিটিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।পান্নাবাবু বললেন।
পাঞ্চালী রিক্সায় উঠে বসল।সুখ এসে দাঁড়িয়ে থাকে।
কি হোল ওঠো,ট্রেন কি তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে?
কোথায় বসব?
পাঞ্চালী দেখল দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে সে বসেছে।লজ্জা পেয়ে বলল,কি করব আমাকে কি রোগা হতে হবে।
সুখ রিক্সায় উঠতে উঠতে বলল,তুমি এমন কিছু মোটা নও বরং স্লিম বলা যেতে পারে।তোমার--।
তার ভারী পাছার ইঙ্গিত করছে বুঝে পাঞ্চালী বলল,থাক হয়েছে।মেয়েদের হিপ একটু ভারী হয়।উঠে চেপে বোসো।
সুখ ফাকের মধ্যে বসে পড়তে জায়গা হয়ে গেল।মোমোর পাছাও এমনি ভারী ছিল।পাঞ্চালীর গায়ে মিশে আছে।
পিয়ালী মিত্র জানলায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে থাকেন।পৌছে ফোন করবি।
রিক্সা চলতে শুরু করে।পাঞ্চালী আড়চোখে সুখকে দেখে।কেমন আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে।এই কি ওর স্বামী।পাঞ্চালী থাকতে না পেরে বলল,তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
খুব জরুরী কথা?
সত্যি করে বলতো--
দেখো মিথ্যে বলতে আমার লজ্জা হয়।
তুমি কি আমায় ভালোবাসো না?ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করে পাঞ্চালী।
I love you বললে ভালোবাসা হবে।
এতদিন পরে দেখা হোল ভেবেছিলাম তুমি আমাকে একবার অন্তত জড়িয়ে ধরবে--।
তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো সমস্যা।
মানে?
পাঞ্চালী তোমার পাশে যে লোকটা বসে আছে তাকে তুমি কতটুকু চেনো?
কতটুকু আবার কি।লোকটা গোয়ার গোবিন্দ গুণ্ডা আমার ইহকাল আমার পরকাল-- খুব ভাল করেই চিনি।
লোকটার আসল পরিচয় জানলে তূমি পাশে বসতে দিতে না --
আমি বিশ্বাস করিনা।
ঠীক আছে রিক্সায় বসে এসব ভালো লাগছেনা।
পাঞ্চালীর মনে হল মূল সমস্যার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।চাপাচাপি করার দরকার নেই সময় হলে ঐ আপনা হতে সব বলবে। মোমোর সঙ্গে actually relation টা কি তারও মনে কৌতূহল কম নেই।