19-08-2023, 09:34 AM
|| ককটেল ||
লেখা :- নির্মাল্য দেবনাথ
-“একে এক করে দুই পেগ হয়ে গেলো। এবারে অন্য কিছু”। কোণের টেবিলটাতে বসা কাস্টমারটা বলে উঠলো।
- “মানে”? অর্ডার কাগজে টুকতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো নীরজ।
- “যখনই নেশা করতে বসি এক এক করে দুই পেগ ভদকা দিয়ে শুরু করি। তার পরেই অন্যকিছু”। বললো টেবিলটাতে এসে বসা আগন্তুক।
- “এবারে কি দেবো স্যার তাহলে? হুইস্কি ?" বললো নীরজ।
- “দিতে পারো। স্কচ হুইস্কি। স্মোকি ফিলিংসটা যেন থাকে”। লোকটা বললো।
- “সঙ্গে কি দেবো স্যার? সোডাই দেবো তো”? নীরজ প্রশ্ন করলো।
- “না:। সোডা দিয়ে কেউ স্কচ খায়? নিট দেবে আইস কিউব দিয়ে”। মৃদু ধমক দিয়ে বললো লোকটা।
- “ফুড আর কি কিছু দেবো স্যার? লোকটার ধমককে উপেক্ষা করে হাসি মুখে বললো নীরজ।
- “ফিশ ফ্রাইটা আরেকখানা দাও, অরিজিনাল ভেটকিই মনে হলো খেয়ে”। লোকটা বললো উত্তরে।
-“ওকে স্যার”। বলে হুকুম তালিম করতে চললো নীরজ।
লোকটা বেশ অদ্ভুত। এরকম পাল্টে পাল্টে মদ খেতে কাওকে খুব একটা দেখা যায় না বারে। তবে মনে হচ্ছে বেশ রইস, আজ মনে হয় ভালোই টিপস্ লেখা আছে কপালে।
এসিটা বাড়িয়ে দিলো নীরজ। সুন্দর একটা ইংরেজি গান বাজছে মৃদু শব্দে। লাল নীল সবুজ আলো ঘুরে ঘুরে ছটা ছড়িয়ে দিচ্ছে চৌকোনো টেবিলগুলোতে।
পেগটা শেষ হওয়া মাত্র আবার একটা পেগ অর্ডার করলো লোকটা। এই পেগটাও শেষ হবার আগেই পাশে এসে দাড়ালো নীরজ, বললো, “স্যার এবারে তাহলে হোয়াইট রাম ঢালি? বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তোড়ে, বেরোতেই পারবেন না এখন”।
- “বেশ, তবে দাও। তবে বৃষ্টি বন্ধ হলে বোলো কিন্তু”।
- “নিশ্চয়ই স্যার”। বলে এবারে গ্লাসে সাদা পানীয় ঢেলে দিলো নীরজ।
কিন্তু বাইরে আজ অবিশ্রান্ত ধারাপাত চলেছে শ্রাবণের। তা থামার কোন লক্ষণ দেখা গেলো না। ফলে আরো এক পেগ রাম গ্লাসটাতে ঢালতে হলো নীরজকে।
রামের পরে ওয়াইন অর্ডার করলো লোকটা। ওয়াইন খেতে খেতে নীরজকে টেবিলে ডাকলো সে। নীরজকে একান্তে বললো, “ভাই রাস্তায় নিয়ে গিয়ে ট্যাক্সি ধরিয়ে দিতে পারবে ?”
কথাটা শুনে মুচকি হেসে বললো নীরজ, “চড়ে গেছে নাকি স্যার? চড়ারই তো কথা। আট পেগ এত অল্প সময়ে খেয়েছেন স্যার আপনি। তবে আপনার কিন্তু এলেম আছে। কথায় কোন জড়তা নেই। হাত কাঁপা পা টলা এসব কিছুই দেখছি না আপনার মধ্যে”।
“আট পেগ খেয়ে কিভাবে নর্মাল আছি ভাবছো? আসলে আমাদের চুক্তিটাই এরকম। আমি মদ খাব আর সে বমি করবে। আমি নেশা করবো আর তার পা টলবে”। ঈষৎ রহস্য করে বললো লোকটা।
“কার সাথে চুক্তি! কোন চুক্তি?”
এবারে অবাক হয়ে কথাটা বললো নীরজ।
লোকটা এবারে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে এলো। তারপর বললো, “আমি যেমন এই টেবিল দখল করে নেশা করছি তেমনি আমার শরীর দখল করে আরেকজন নেশা করে। আমি এক আর সে এক। একে একে মিলে দুই হয়ে যাই আমরা। বিল কিন্তু আমিই পে করি। শর্ত শুধু একটাই, আমি নেশা করবো আর সে অসুস্থ হবে”।
“এইসব কি বলছেন স্যার? আপনার মনে হচ্ছে সত্যিই খুব বেশি চড়ে গেছে”। মহা আশ্চর্য হয়ে বলে উঠলো নীরজ।
কিন্তু ওর কথা শেষ হবার আগেই বাথরুম থেকে ভেসে এলো বিশ্রী গাগুলোনো একটা শব্দ। শব্দটা শুনে অস্বস্তিতে আর ভয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো নীরজের। কারণ বাথরুমটা তালা দিয়ে বন্ধ। আর আজ আবহাওয়া খুব খারাপ বলে সেরকম ভীড়ও হয়নি বারে। কাজেই বাথরুমটা খোলাই হয়নি আজ। অথচ ওটার ভেতর থেকেই ভেসে এলো বেসিন খুলে হড় হড় করে বমি করার শব্দ।
ও কিছু বলার আগেই টেবিলে বসা রহস্যময় লোকটা এবারে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লো। বললো, “আমি বিল মিটিয়ে বেরোচ্ছি তুমি ট্যাক্সি অবধি পৌছে দাও ওকে”।
নীরজের শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিলো। এসি চলছে তা সত্বেও। উজ্জ্বল ঝাড়বাতির আলো সত্ত্বেও চোখের সামনে অন্ধকার দেখতে লাগলো নীরজ। কারণ ও স্পষ্ট অনুভব করলো
ওর হাতটাকে সজোড়ে চেপে ধরেছে অন্য একটা হাত।
নেশাগ্রস্তের মতোই টলমল করছে সেই হাত। কিন্তু জীবন্ত মানুষের মতো তা উষ্ণ নয়, বরফের চেয়েও অনেক বেশি শীতল সেই হাতের স্পর্শ।
হাতটার স্পর্শ সহ্য করে দরজা অবধি পৌছতে পারলো না নীরজ, তার আগেই নিজেই নেশাগ্রস্তের মতো টলতে টলতে বসে পড়লো মাটিতে।
|| সমাপ্ত ||