16-08-2023, 08:00 PM
১৭০১ নম্বর সুইটটি যেমন বিশালাকার, তেমনই জমকালো। একটা বিরাট লিভিং রুম, একটা প্রশস্ত ব্যালকনি, একটা চত্তড়া বাথরুম, যেখানে একটা বাথটাব পাতা, আর একটা বড়সড় বেডরুমের সাথে একটা মাঝারি আকারের লাগোয়া বাথরুম মিলে গোটা একখানা সুইট। লিভিং রুমের বাঁ ধারে আবার একটা মিনিবার আছে, যেখানে নানা জাতের বিদেশী মদের বোতল সারি বেঁধে সাজানো রয়েছে। সুইটটা দামি আসবাবপত্র দিয়ে সুন্দর করে সাজানোগোছানো। লিভিং রুমের মাঝামাঝি একটা সেগুন কাঠের ছোট কফি টেবিলকে কেন্দ্রে রেখে নরম গদিযুক্ত বড় সোফা আর তিনটে চেয়ার গোল করে পাতা। ঠিক তার উল্টো দিকের দেওয়ালে ঝুলছে একটা বিশাল ৪৬ ইঞ্চি টিভি। বার কাউন্টারের সামনে দুটো গোল স্টিলের চেয়ার রাখা আছে। তার মধ্যে একটা চেয়ারের উপর আবার একটা কালো ব্যাগ বসানো রয়েছে। লিভিং রুমের চার ধারে চারটে বড় বড় আলোর স্ট্যান্ড দাঁড় করানো আছে। বেডরুমে ডানদিকের দেওয়াল ঘেঁষে সাদা চাদরে ঢাকা নরম গদিযুক্ত বিরাট একখানা বিছানা পাতা। বাঁ দিকের দেওয়ালে একটা বড়সড় তোষাখানা রাখা। বিছানার বিপরীত দেওয়ালে একটা ৩২ ইঞ্চি টিভি টাঙানো রয়েছে। গোটা সুইটটা জুড়ে বড় বড় সব কাঁচের জানলা, যাতে ভিতরে প্রচুর পরিমানে আলো-বাতাস খেলা করতে পারে।
রমা সুইটে ঢুকতেই এজেন্সির কর্ণধার এগিয়ে এসে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে সোফাতে নিয়ে গিয়ে নিজের পাশে বসালেন, "ওয়াও! তোমাকে তো আজ ফাটাফাটি লাগছে। উইথ দ্যাট হট বডি অফ ইয়োরস অ্যান্ড সেক্সি ড্রেস, ইউ আর লুকিং লাইক এ কিলার। আই অ্যাম অ্যাবসলিউটলি ইম্প্রেসড।"
ওনার অভিনব তারিফের উত্তরে রমা ন্যাকামো করে বললো, "তুমিই তো আমাকে সকালে হোয়াটস্যাপে বললে যে আজ যেন আমি রিভিলিং কিছু গায়ে চাপাই। এইটা কিন্তু আমার খুব ফেবারিট ড্রেস। দেখো আবার দুষ্টুমি করে কালকের মতো এটাকেও নষ্ট করে দিও না। কাল রাতে তোমার পাল্লায় পরে এত মদ খেয়েছিলাম যে আমার শাড়ি-ব্লাউজটা তো খারাপ করেই ফেলেছি, প্লাস আবার সায়াটাও হারিয়ে বসে আছি। আজ কিন্তু আমার এই ড্রেসটার কোনো ক্ষতি হতে আমি দেবো না। হলে পরে তোমাকে এমনই আরেকখানা আমাকে কিনে দিতে হবে।"
তার ছিনালপনা দেখে রাজদীপ সেন অট্টহাসি দিয়ে উঠলেন, "হাঃ হাঃ! হাঃ হাঃ! অফকোর্স, কিনে দেবো। তবে তুমি চিন্তা করো না। আজ তোমার ড্রেসের ক্ষতি হওয়ার তেমন সুযোগ নেই। ওটা তুমি বেশিক্ষণ গায়ে পরে থাকার সুযোগ পাবে না। এনিওয়ে, আশা করি তোমার হাবি ডিয়ারেস্ট কাল রাতের জন্য কোনো গড়বড় করেনি। যদি বেশিকিছু বেগড়বাই করে থাকে, তাহলে আমাকে বিন্দাস জানাও। আই ক্যান ইজিলি ফিক্স ইট। ভোলাকে পাঠিয়ে দিলে, ওই তোমার বরকে আচ্ছা করে শায়েস্তা করে দেবে। দেখবে ব্যাটা আর তোমাকে কোনোদিনও জ্বালাবার সাহস পাবে না। আমি চাই যে তুমি পুরো হান্ড্রেড পার্সেন্ট ফ্রি মাইন্ডে কাজ করো। ফর দ্যাট, তোমার ডোমেস্টিক লাইফে কমপ্লিট পিস থাকাটা জরুরি। কি বলো? ইফ ইউ নিড মি টু ডু এনিথিং, জাস্ট সে ইট। ইট উইল বি ডান রাইট অ্যাওয়ে।"
এজেন্সির মালিকের প্রতিশ্রুতি শুনে রমা ঠোঁট বেকিয়ে হাসলো, "ওহ, থ্যাংকস আরডি। বাট নো থ্যাংকস। আমার বেকার বরটাকে কি করে বাগে রাখতে, সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে। তুমি ফালতু ওকে বেশি পাত্তা দিচ্ছো। দীপক একটা মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ। আমার মুখের ওপর কথা বলার সাহস ওর অন্তত নেই। কালকে আমি বাড়ি ফেরার পর থেকে, একটা কথাও বলেনি। উল্টে আমি হুকুম দিতে আজ সকালে ম্যাকডোনাল্ডস থেকে আমার জন্য চিকেন বার্গার কিনে এনেছে। তাই ওকে নিয়ে ফালতু ভেবে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। দীপক আমার পোষ মানা কুকুর। আমি উঠতে বললে উঠবে, আমি বসতে বললে বসবে।"
রমাকে এমন বিশ্রীভাবে তার আপন বিবাহিত স্বামীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে শুনে রাজদীপবাবু যথেষ্ট খুশি হয়ে এবার সরাসরি কাজের কথায় চলে এলেন, "গুড! ভেরি গুড! এবার তাহলে তোমার টিমের সাথে ইন্ট্রোটা সেরে ফেলো। উই হ্যাভ এ স্মল টিম ফর ইউ টুডে। তোমার সাথে আলাপ করবে বলে সবাই উৎসুক হয়ে বসে আছে।"
সুইটে এজেন্সির মালিক ছাড়াও যে আরো তিনটে পুরুষ রয়েছে, সেটা রমা ঢুকেই দেখেছে। তিনজনের বয়সই যথেষ্ট কম। খুব বেশি হলে বাইশ কি তেইশ। তবে চেহারায় পার্থক্য আছে। একজন বেঁটেখাটো মোটাসোটা। বাকি দুজন আবার জোড়া ভরত। ছয় ফুটের উপর লম্বা। ব্যায়াম করা তাগড়াই চেহারা। তবে তিনজনেরই চোখ-মুখ বেশ ধারালো। মোটাসোটা ছোকরাটা একটা নীল হাওয়াই টি-শার্ট আর সাদা খাঁকি পড়েছে। বাকি দুজনের গায়ে কালো স্পোর্টস গেঞ্জি আর ছেঁড়াফাটা জিন্স। তিনজনেই এগিয়ে এসে একে একে অত্যন্ত উৎসাহের সাথে রমার সঙ্গে করমর্দন করলো। রাজদীপবাবুই পরিচয় করিয়ে দিলেন, "মিট ইওর টিম - রনি, টিটো অ্যান্ড স্যান্ডি। রনি তোমার ভিডিও শুট করবে। টিটো অ্যান্ড স্যান্ডি উইল বি ইওর মেল কো-স্টারস। অল অফ দেম আর হাইলি প্রফেশনালস অ্যান্ড নো দিজ গেম ভেরি ওয়েল। তাই তোমার কোনো চাপ নেই। জাস্ট ফলো দেয়ার লিড। ওরা যেমনটা চাইবে, ঠিক তেমনটা করার চেষ্টা করবে। ডোন্ট হোল্ড ব্যাক ইওরসেল্ফ। গেট সিনফুল। গেট উইকেড। গিভ ইওর বেস্ট শট অ্যান্ড ইউ উইল ডু গ্রেট। আই হোপ, আজ তোমাকে নিয়ে আমরা বেশ কিছু এ-ওয়ান সেন্সেশনাল ভিডিওজ বানাতে পারবো। নাও, আমি আর তোমাদের সময় নষ্ট করবো না। এবার বেরোবো। একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। রনি, আজ রাত দশটার মধ্যে একটা সুপার-ডুপার হট অ্যান্ড স্পাইসি প্যাকেজ আমার হাতে রেডি চাই। তাই দেরি না করে এবার কাজে লেগে পড়ো। রমা, শুটিং হয়ে গেলে রনি, টিটো অ্যান্ড স্যান্ডি বেরিয়ে যাবে। তুমি কিন্তু আবার দুম করে চলে যেও না। এখানেই ওয়েট করো। আজ রাতে তোমার জন্য একটা স্পেশাল অ্যারেঞ্জমেন্ট প্ল্যান করেছি। শুটের পর তো তোমাকে আর খালি হাতে ফেরত পাঠানো যায় না। ওকে, এবার তবে চলি। অল দ্য বেস্ট ফর ইয়োর ফার্স্ট শুট।"
এজেন্সির মালিক রমাদেরকে বাই বলে বিদায় নেওয়ার পর ভিডিওগ্রাফার রনি কাজে লেগে পড়লো। সে সোজা গিয়ে কালো ব্যাগ থেকে একটা দামি বিদেশি পোর্টেবল ক্যামকডার বের করলো। ক্যামেরার লেন্সগুলো ভালো করে পরখ করে ব্যাগটাকে সোজা বার কাউন্টারের পিছনে ফেলে দিলো, যাতে ওটাকে আর দেখা না যায়। তারপর সোজা গটগটিয়ে হেঁটে এসে রমার গা ঘেঁষে সোফাতে বসলো আর তার দিকে তারিফের চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে উৎসাহ ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো, "কি ম্যাডাম, আপনার প্রথম প্রফেশনাল ভিডিও তোলার জন্য ফুল রেডি তো? কেমন লাগছে? ফিলিং এক্সসাইটেড? আরডি স্যার আমাদের কাছে আপনার যা তারিফ করলেন, তারপর থেকে আমরা কিন্তু আপনার সাথে কাজ করবো বলে ভীষণ ইগার হয়ে রয়েছি। আর আপনাকে দেখার পর বলতেই পারি যে উনি মোটেও ভুল বলেননি। ইউ রিয়ালি আর দ্য পারফেক্ট কম্বো অফ প্রিটি ফেস, হট বডি অ্যান্ড বোল্ড আউটলুক।"
ছোকরা ভিডিওগ্রাফারের উচ্ছসিত প্রশংসার প্রত্যুত্তরে রমা হেসে দিলো, "থ্যাংকস ফর দ্য কমপ্লিমেন্টস। সত্যি বলতে, জীবনে প্রথমবার প্রফেশনালি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবো বলে আমিও খুবই উত্তেজিত। তবে একটু নার্ভাসও লাগছে।"
রমা মিথ্যে কিছু বলেনি। এর আগে তার মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে সে প্রচুর ইনস্টাগ্রাম রিলস ভিডিও তুলেছে ঠিকই, কিন্তু পেশাদার ক্যামেরার সামনে তাকে কখনো দাঁড়াতে হয়নি। সে প্রকৃতপক্ষেই খানিকটা স্নায়ুচাপে ভুগছিলো। তার উদ্বেগকে রনি হেসে উড়িয়ে দিলো, "ওহ দ্যাটস কোয়াইট ন্যাচারাল। বাট নট টু ওয়ারী, ম্যাডাম। ইয়োর প্রব হ্যাজ এ সিম্পল সল্যুশন। লাকিলি সেটা হাতের কাছেই আছে।"
রমাকে আস্বস্ত করতে ছোকরা ভিডিওগ্রাফার দাঁত খিঁচিয়ে হেসে ততক্ষনাৎ তার টি-শার্টের পকেটের ভিতর থেকে সাদা মতো পাউডার ভর্তি প্লাস্টিকের একটা ছোট্ট পাউচ প্যাকেট বের করে, সেটার মুখ খুলে সাবধানে টেবিলের উপর ঢেলে একটা লম্বা সরু লাইন টানলো। তারপর একগাল হেসে বললো, "নিন ম্যাডাম, এবার লক্ষী মেয়ের মতো এটাকে চটপট টেনে নিন দেখি। আঙ্গুল দিয়ে নাকের একটা ফুটোকে চেপে ধরে অন্য ফুটোটা দিয়ে একবারে গোটাটা টেনে ফেলুন। টানলেই বুঝতে পারবেন কি অসাধারণ জিনিস। স্ট্রেস-ফেস নিমেষের মধ্যে আপনার মন থেকে সব উধাও হয়ে যাবে। নিজেকে এত হালকা মনে হবে, যেন আকাশে উড়ছেন।"
একটা অপরিচিত অল্পবয়সী ছোকরা এমন অম্লানবদনে তাকে কোকেন চাখতে বলছে দেখে রমার উদ্বেগ কোথায় বেড়ে যাবে। তা না হয়ে, উল্টে সে ছোকরার এককথায় আস্বস্ত হয়ে উঠে, তার কুপ্রস্তাব মেনে, তৎক্ষণাৎ সামনে ঝুঁকে পরে টেবিল থেকে পাউডারের গোটা লাইনটা ছোড়ার বাতলে দেওয়া পদ্ধতিতে নাক দিয়ে টেনে নিলো। কোকেন সোজা তার ব্রহ্মতালুতে গিয়ে ধাক্কা মারলো আর পলক ফেলতে না ফেলতেই তার মাথাটা যেন কোনো জাদুবলে বিলকুল খালি হয়ে গেলো। প্রকৃতপক্ষেই সে এতটাই হালকা অনুভব করলো যে তার মনে হলো যেন সে হাওয়ায় ভাসছে। তার চারিপাশটা হঠাৎ করে ভীষণ রঙিন লাগতে লাগলো। রনি তাকে একদম ঠিক কথাই বলেছে। সে এমন এক স্বপ্নের দুনিয়ায় ঢুকে পড়লো, যেখানে মানসিক চাপ বলে কোনোকিছুর অস্তিত্বই নেই। এবার চাইলে সে অতি অনাসায়ে দুনিয়াও জয় করতে পারে।
কোকেন টেনে মুহূর্তের মধ্যে রমার চোখ দুটো ভাবলেশহীন হয়ে উঠলো। বিনা কারণে তার সুন্দর মুখে নিষ্পাপ হাসি ফুটে উঠলো। রনি সেটা লক্ষ্য করে মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো, "কেমন লাগছে বেবি? ফিলিং গুড? গট ইওর কনফিডেন্স ব্যাক? আর ইউ রেডি নাউ?"
রমা দাঁত বের করে হেসে গদগদ স্বরে জবাব দিলো, "ওহ নিশ্চয়ই! আমি তৈরী। আমার সত্যিই দারুণ লাগছে। চলো এবার শুরু করি।"
তাকে আত্মবিশ্বাসে ডগমগ করে ফুটতে দেখে ছোকরা ভিডিওগ্রাফার একগাল হেসে বললো, "গ্রেট! আমি তো আগেই বলেছিলাম, দিজ শিট ওয়ার্কস ম্যাজিক। এবার একদম রিল্যাক্স করে আমার কথা মন দিয়ে শোনো। প্রথমে তোমায় সোলো শুট করবো। সিনটা হলো তুমি স্বামীর সাথে হানিমুনে এসেছো। কিন্তু তোমার ওয়ার্কহলিক হাজব্যান্ড তোমাকে হোটেলে একা ফেলে রেখে বাইরে ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং করতে ব্যস্ত। তাই তুমি একা একাই বাইরে থেকে অনেকক্ষণ ঘুরে বেরিয়ে আবার হোটেলে ফিরে এসেছো। এতক্ষণ ধরে ঘোরাফেরা করে তোমার খুব গরম লেগে গেছে। তুমি খুব ঘামছো। ইউ আর ফিলিং কোয়াইট থার্স্টি। তেষ্টা মেটাতে তুমি সুইটে ঢুকে প্রথমেই মিনিবারে গিয়ে একটা বোতল আর গ্লাস বের করলে। গ্লাস ভর্তি করে মদ ঢেলে ধীরে ধীরে অর্ধেকটা শেষ করলে। ড্রিংক করার সময় তোমার আবার স্মোক না করলে চলে না। তাই কাউন্টারের উপরে রাখা সিগারেটের কেস থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালে আর সেটা টানতে টানতে গ্লাসের বাকি মদটা খতম করলে। মোটামুটি এই হলো সিন। ওকে বেব? ডিড ইউ গেট এভরিথিং ক্রিস্টাল ক্লিয়ার?"
জবাবে রমা মুখে কিছু বললো না, কেবল আলতো হেসে মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলো যে সে বুঝে গেছে। রনি উচ্ছসিত হয়ে উঠলো, "গুড! এবার তোমাকে ক্যামেরার জন্য একটু তৈরী হতে হবে। তেমন কিছু না। তুমি যথেষ্ট ভালো মেকআপ করে আছো। আর তোমার ড্রেস নিয়ে তো কিছু বলারই দরকার নেই। ইটস সো হট। শুধু তোমার মুখে-টুকে একটু জল ছিটোতে হবে। যাতে করে মনে হয়, তুমি সত্যিই গরমে ঘামছো।"
রনি উঠে গিয়ে বাথরুম থেকে একটা প্লাস্টিকের মগে জল নিয়ে এসে যত্ন সহকারে রমার কপালে, গলায়, বুকের খাঁজে আর পেটেতে অল্প অল্প ছিটিয়ে দিয়ে তাকে বললো, "এবার সোজা তোমার ভ্যানিটি হাতে নিয়ে দরজার বাইরে যাও আর ওটাকে বন্ধ করে দাঁড়াও। আমি ভিতর থেকে অ্যাকশন বললেই তুমি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়বে। তারপর তোমার হাতের ভ্যানিটিটা সোফাতে ছুঁড়ে দেবে। তারপর একটা ছোট্ট ডায়ালগ বলবে - ওহ ইটস সো হট আউটসাইড। ইট মেড মি থার্স্টি। ওহ আই নিড এ ড্রিংক। ডায়ালগটা বলে আস্তে আস্তে হেঁটে মিনিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। তুমি দাঁড়ালেই আমি কাট বলবো অ্যান্ড ইউ আর ডান। সিনের মাঝে কোথাও কোনো ভুল হলে, আমি কাট বলবো আর তুমি ইমিডিয়েটলী থেমে যাবে। আমরা আবার সেই জায়গা থেকে শুরু করবো। ওকে? অল গুড? গট ইট?"
রমা ঘাড় নেড়ে জানালো যে সে বুঝে গেছে। রনির নির্দেশমত সে সোফা ছেড়ে উঠে ধীরপদে হেঁটে সুইটের বাইরে চলে গেলো আর দরজাটা আস্তে করে লাগিয়ে দিয়ে দাঁড়ালো। এক মিনিট যেতে না যেতেই ভিতর থেকে রনি অ্যাকশন বলে উঠলো আর সেও অমনি দরজা খুলে সুইটের ভিতরে ঢুকলো। ঢুকতেই দেখলো যে প্রায় ফুট তিনেক দুরুত্ব থেকে রনি পোর্টেবল ক্যামেরাটা তার দিকে তাক করে ধরে ভিডিও তুলছে। আর টিটো ও স্যান্ডি লিভিং রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুজনের নজরই তার দিকে আটকে আছে। ক্যামেরা দেখে রমা এক সেকেন্ডের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তার হাতের ভ্যানিটি ব্যাগখানা সোফাতে ছুঁড়ে ফেলে আগে থেকে শেখানো সংলাপটি পাখি পড়ার মতো বলে ফেললো। তারপর অলসপদে হেঁটে গিয়ে বার কাউন্টারের সামনে দাঁড়ালো।
গোটা শট একটা টেকেই ওকে হয়ে যাওয়ায় ছোকরা ভিডিওগ্রাফার উচ্ছসিত স্বরে রমার তারিফ করে উঠলো, "ওয়ান্ডারফুল! গ্রেট শট বেব। ইউ লুক রিয়ালি সেক্সি অন ক্যামেরা। এবার আমরা পরের সিনটা তুলবো। এবার তুমি কাউন্টারে ঢুকে ওই সাজানো র্যাক থেকে একটা বোতল তুলে কাউন্টারের উপর রাখবে। যে কোনো বোতল পিক করতে পারো। হুইস্কি, জিন, রাম, ভদকা। যা খুশি। যা খেতে তোমার মন চায়। কাউন্টারের উপর দেখেছো তো চারটে গ্লাস পাশাপাশি সাজানো আছে। যে কোনো একটা তুলে, বোতলের ছিপি খুলে ভর্তি করে ওতে ওয়াইন ঢালবে। পাশে দেখো আইস বক্স রাখা আছে। ওখান থেকে দুটো কিউব বের করে ড্রিংকে মেশাবে। তারপর একদম রিল্যাক্স করে গ্লাসে ছোট্ট ছোট্ট সিপ মেরে অর্ধেকটা খালি করে ফেলবে। তারপর আবার একটা ছোট্ট ডায়ালগ বলবে - ওহ আই নিড এ স্মোক! বলে কাউন্টারে রাখা সিগারেট কেসটা থেকে একটা বের করে, লাইটার দিয়ে ধরাবে আর স্মোক করতে করতে, আবার ছোট্ট ছোট্ট সিপে গোটা গ্লাসটা খালি করে দেবে। বুঝে গেছো?"
এবার কিন্তু রমা এক টেকে শট ওকে করতে পারলো না। শুরুটা মসৃণ হলেও, আচমকা হ্যাঁচকা মেরে থেমে যেতে হলো। রনির নির্দেশ মতো সে বারের সাজানো তাক থেকে প্রথমে একটা জিনের বোতল নামিয়ে কাউটারের উপর রেখে একটা কাঁচের গ্লাসে ভর্তি করে মদ ঢাললো। তারপর বরফের বাক্স খুলে দুটো বরফের টুকরো বের করে এনে মদে মিশিয়ে নিয়ে ছোট ছোট চুমুকে গ্লাসটাকে অর্ধেক খালি করে ফেললো। এরপর সিগারেটের কেশ খুলে একটা সিগারেট বের করে লাইটার জ্বালিয়ে ধরালো। কিন্তু জ্বলন্ত সিগারেটটা ঠোঁটের ফাঁকে চেপে ধরে একটা টান দিতেই, গন্ডগোল বেঁধে গেলো। আসলে এর আগে কোনোদিনও সে ধূমপান করেনি। অভ্যাস না থাকায়, সিগারেটটা টানতেই ধোঁয়া সোজা গিয়ে তার গলায় ধাক্কা মারলো আর তৎক্ষণাৎ সে কাশতে শুরু করলো।
রমা কাশতে লাগতেই ছোকরা ভিডিওগ্রাফার কাট বলে চিল্লিয়ে উঠলো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সে তাকে হালকা করে বকুনি দিলো, "বেব, তোমার আগে বলা উচিত ছিলো যে ইউ নেভার স্মোকড। সিনটা পুরো ভেস্তে গেলো। ওকে, নেবার মাইন্ড। আবার তুলবো। বাট ফার্স্ট, ইউ নিড টু নো হাউ টু স্মোক এ সিগারেট। ইটজ ইজি। সিগারেটে ছোট করে টান দেবে। ধোঁয়াটা মুখের ভিতরে গেলে তুমি সেটা গেলার চেষ্টা করবে না। হয় মুখ খুলে বের করে দাও, নয় তো নিঃস্বাসের সাথে নাক দিয়ে বের করতে পারতো। বুঝতে পারলে? ওকে, এবার একটু প্র্যাক্টিস করে নাও। ওয়ান্স ইউ গেট ইউসড টু ইট, আবার ক্যামেরা চালু করবো।"
রমা বাধ্য মেয়ের মতো রনির শেখানো কায়দায় হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটা টানার চেষ্টা করলো। প্রথম কয়েকটা টানে সে কেশে উঠলেও, অল্পক্ষণের মধ্যেই সে সিগারেট টানতে অভ্যস্ত হয়ে গেল। আবার ক্যামেরা চালু হলে পরে সে এবার অনাসায়ে ধূমপান ও মদ্যপান একসাথে করে শট ওকে করে ফেললো। কাঙ্ক্ষিত কার্যোদ্ধার হয়ে যেতেই রনি উল্লাসে ফেটে পড়লো, "ব্রাভো রমা! এগেইন এ গ্রেট শট। ইউ পুল্ড ইট অফ লাইক এ রিয়াল চ্যাম্প। এবার গিয়ে সোফায় বসে রিল্যাক্স করো। অ্যান্ড হোয়াইল ইউ রিল্যাক্স, ইউ মে ওয়ান্ট টু এনজয় ইওরসেল্ফ উইথ অ্যানাদার স্মোক অ্যান্ড ড্রিংক।"
একে রমার রক্তে কোকেনের বিষ মিশে গিয়েছিলো। তার ওপর আবার দ্বিতীয় সিনেই তাকে এক গ্লাস ভর্তি মদ গিলতে হলো। তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দিলো। দ্বিতীয় সিনটা ভালোভাবে উতরে যাওয়ায় সে বেশ উত্তেজিত বোধ করছিলো। সোফায় আরাম করে বসে সময় কাটানোর জন্য আরেকটু ধূমপান ও মদ্যপান করার প্রস্তাবটা মদ্যপ অবস্থায় তার কাছে যথেষ্ট জুতসই লাগলো। সে তৎক্ষণাৎ রনির পরামর্শ মেনে হাতের খালি গ্লাসটাতে আবার মদ ঢেলে নিয়ে, তাতে বরফ মিশিয়ে, আরেকখানা সিগারেট ধরিয়ে অলসপায়ে ফিরে গিয়ে সোফাতে বসলো। তারপর আরাম করে ধূমপান করতে করতে গ্লাসে চুমুক দিতে লাগলো। ওদিকে দ্বিতীয় সিনটা শুট করার পর ছোকরা ভিডিওগ্রাফার বার কাউন্টারের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। সে মেঝে থেকে কালো ব্যাগটা তুলে ভিতর থেকে একটা ল্যাপটপ বের করে আনলো। তারপর সেটার সাথে ক্যামেরা সংযুক্ত করে এইমাত্র তোলা রমার ভিডিও দুটোকে ল্যাপটপের স্ক্রীনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।
রমা সুইটে ঢুকতেই এজেন্সির কর্ণধার এগিয়ে এসে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে সোফাতে নিয়ে গিয়ে নিজের পাশে বসালেন, "ওয়াও! তোমাকে তো আজ ফাটাফাটি লাগছে। উইথ দ্যাট হট বডি অফ ইয়োরস অ্যান্ড সেক্সি ড্রেস, ইউ আর লুকিং লাইক এ কিলার। আই অ্যাম অ্যাবসলিউটলি ইম্প্রেসড।"
ওনার অভিনব তারিফের উত্তরে রমা ন্যাকামো করে বললো, "তুমিই তো আমাকে সকালে হোয়াটস্যাপে বললে যে আজ যেন আমি রিভিলিং কিছু গায়ে চাপাই। এইটা কিন্তু আমার খুব ফেবারিট ড্রেস। দেখো আবার দুষ্টুমি করে কালকের মতো এটাকেও নষ্ট করে দিও না। কাল রাতে তোমার পাল্লায় পরে এত মদ খেয়েছিলাম যে আমার শাড়ি-ব্লাউজটা তো খারাপ করেই ফেলেছি, প্লাস আবার সায়াটাও হারিয়ে বসে আছি। আজ কিন্তু আমার এই ড্রেসটার কোনো ক্ষতি হতে আমি দেবো না। হলে পরে তোমাকে এমনই আরেকখানা আমাকে কিনে দিতে হবে।"
তার ছিনালপনা দেখে রাজদীপ সেন অট্টহাসি দিয়ে উঠলেন, "হাঃ হাঃ! হাঃ হাঃ! অফকোর্স, কিনে দেবো। তবে তুমি চিন্তা করো না। আজ তোমার ড্রেসের ক্ষতি হওয়ার তেমন সুযোগ নেই। ওটা তুমি বেশিক্ষণ গায়ে পরে থাকার সুযোগ পাবে না। এনিওয়ে, আশা করি তোমার হাবি ডিয়ারেস্ট কাল রাতের জন্য কোনো গড়বড় করেনি। যদি বেশিকিছু বেগড়বাই করে থাকে, তাহলে আমাকে বিন্দাস জানাও। আই ক্যান ইজিলি ফিক্স ইট। ভোলাকে পাঠিয়ে দিলে, ওই তোমার বরকে আচ্ছা করে শায়েস্তা করে দেবে। দেখবে ব্যাটা আর তোমাকে কোনোদিনও জ্বালাবার সাহস পাবে না। আমি চাই যে তুমি পুরো হান্ড্রেড পার্সেন্ট ফ্রি মাইন্ডে কাজ করো। ফর দ্যাট, তোমার ডোমেস্টিক লাইফে কমপ্লিট পিস থাকাটা জরুরি। কি বলো? ইফ ইউ নিড মি টু ডু এনিথিং, জাস্ট সে ইট। ইট উইল বি ডান রাইট অ্যাওয়ে।"
এজেন্সির মালিকের প্রতিশ্রুতি শুনে রমা ঠোঁট বেকিয়ে হাসলো, "ওহ, থ্যাংকস আরডি। বাট নো থ্যাংকস। আমার বেকার বরটাকে কি করে বাগে রাখতে, সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে। তুমি ফালতু ওকে বেশি পাত্তা দিচ্ছো। দীপক একটা মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ। আমার মুখের ওপর কথা বলার সাহস ওর অন্তত নেই। কালকে আমি বাড়ি ফেরার পর থেকে, একটা কথাও বলেনি। উল্টে আমি হুকুম দিতে আজ সকালে ম্যাকডোনাল্ডস থেকে আমার জন্য চিকেন বার্গার কিনে এনেছে। তাই ওকে নিয়ে ফালতু ভেবে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। দীপক আমার পোষ মানা কুকুর। আমি উঠতে বললে উঠবে, আমি বসতে বললে বসবে।"
রমাকে এমন বিশ্রীভাবে তার আপন বিবাহিত স্বামীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে শুনে রাজদীপবাবু যথেষ্ট খুশি হয়ে এবার সরাসরি কাজের কথায় চলে এলেন, "গুড! ভেরি গুড! এবার তাহলে তোমার টিমের সাথে ইন্ট্রোটা সেরে ফেলো। উই হ্যাভ এ স্মল টিম ফর ইউ টুডে। তোমার সাথে আলাপ করবে বলে সবাই উৎসুক হয়ে বসে আছে।"
সুইটে এজেন্সির মালিক ছাড়াও যে আরো তিনটে পুরুষ রয়েছে, সেটা রমা ঢুকেই দেখেছে। তিনজনের বয়সই যথেষ্ট কম। খুব বেশি হলে বাইশ কি তেইশ। তবে চেহারায় পার্থক্য আছে। একজন বেঁটেখাটো মোটাসোটা। বাকি দুজন আবার জোড়া ভরত। ছয় ফুটের উপর লম্বা। ব্যায়াম করা তাগড়াই চেহারা। তবে তিনজনেরই চোখ-মুখ বেশ ধারালো। মোটাসোটা ছোকরাটা একটা নীল হাওয়াই টি-শার্ট আর সাদা খাঁকি পড়েছে। বাকি দুজনের গায়ে কালো স্পোর্টস গেঞ্জি আর ছেঁড়াফাটা জিন্স। তিনজনেই এগিয়ে এসে একে একে অত্যন্ত উৎসাহের সাথে রমার সঙ্গে করমর্দন করলো। রাজদীপবাবুই পরিচয় করিয়ে দিলেন, "মিট ইওর টিম - রনি, টিটো অ্যান্ড স্যান্ডি। রনি তোমার ভিডিও শুট করবে। টিটো অ্যান্ড স্যান্ডি উইল বি ইওর মেল কো-স্টারস। অল অফ দেম আর হাইলি প্রফেশনালস অ্যান্ড নো দিজ গেম ভেরি ওয়েল। তাই তোমার কোনো চাপ নেই। জাস্ট ফলো দেয়ার লিড। ওরা যেমনটা চাইবে, ঠিক তেমনটা করার চেষ্টা করবে। ডোন্ট হোল্ড ব্যাক ইওরসেল্ফ। গেট সিনফুল। গেট উইকেড। গিভ ইওর বেস্ট শট অ্যান্ড ইউ উইল ডু গ্রেট। আই হোপ, আজ তোমাকে নিয়ে আমরা বেশ কিছু এ-ওয়ান সেন্সেশনাল ভিডিওজ বানাতে পারবো। নাও, আমি আর তোমাদের সময় নষ্ট করবো না। এবার বেরোবো। একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। রনি, আজ রাত দশটার মধ্যে একটা সুপার-ডুপার হট অ্যান্ড স্পাইসি প্যাকেজ আমার হাতে রেডি চাই। তাই দেরি না করে এবার কাজে লেগে পড়ো। রমা, শুটিং হয়ে গেলে রনি, টিটো অ্যান্ড স্যান্ডি বেরিয়ে যাবে। তুমি কিন্তু আবার দুম করে চলে যেও না। এখানেই ওয়েট করো। আজ রাতে তোমার জন্য একটা স্পেশাল অ্যারেঞ্জমেন্ট প্ল্যান করেছি। শুটের পর তো তোমাকে আর খালি হাতে ফেরত পাঠানো যায় না। ওকে, এবার তবে চলি। অল দ্য বেস্ট ফর ইয়োর ফার্স্ট শুট।"
এজেন্সির মালিক রমাদেরকে বাই বলে বিদায় নেওয়ার পর ভিডিওগ্রাফার রনি কাজে লেগে পড়লো। সে সোজা গিয়ে কালো ব্যাগ থেকে একটা দামি বিদেশি পোর্টেবল ক্যামকডার বের করলো। ক্যামেরার লেন্সগুলো ভালো করে পরখ করে ব্যাগটাকে সোজা বার কাউন্টারের পিছনে ফেলে দিলো, যাতে ওটাকে আর দেখা না যায়। তারপর সোজা গটগটিয়ে হেঁটে এসে রমার গা ঘেঁষে সোফাতে বসলো আর তার দিকে তারিফের চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে উৎসাহ ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো, "কি ম্যাডাম, আপনার প্রথম প্রফেশনাল ভিডিও তোলার জন্য ফুল রেডি তো? কেমন লাগছে? ফিলিং এক্সসাইটেড? আরডি স্যার আমাদের কাছে আপনার যা তারিফ করলেন, তারপর থেকে আমরা কিন্তু আপনার সাথে কাজ করবো বলে ভীষণ ইগার হয়ে রয়েছি। আর আপনাকে দেখার পর বলতেই পারি যে উনি মোটেও ভুল বলেননি। ইউ রিয়ালি আর দ্য পারফেক্ট কম্বো অফ প্রিটি ফেস, হট বডি অ্যান্ড বোল্ড আউটলুক।"
ছোকরা ভিডিওগ্রাফারের উচ্ছসিত প্রশংসার প্রত্যুত্তরে রমা হেসে দিলো, "থ্যাংকস ফর দ্য কমপ্লিমেন্টস। সত্যি বলতে, জীবনে প্রথমবার প্রফেশনালি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবো বলে আমিও খুবই উত্তেজিত। তবে একটু নার্ভাসও লাগছে।"
রমা মিথ্যে কিছু বলেনি। এর আগে তার মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে সে প্রচুর ইনস্টাগ্রাম রিলস ভিডিও তুলেছে ঠিকই, কিন্তু পেশাদার ক্যামেরার সামনে তাকে কখনো দাঁড়াতে হয়নি। সে প্রকৃতপক্ষেই খানিকটা স্নায়ুচাপে ভুগছিলো। তার উদ্বেগকে রনি হেসে উড়িয়ে দিলো, "ওহ দ্যাটস কোয়াইট ন্যাচারাল। বাট নট টু ওয়ারী, ম্যাডাম। ইয়োর প্রব হ্যাজ এ সিম্পল সল্যুশন। লাকিলি সেটা হাতের কাছেই আছে।"
রমাকে আস্বস্ত করতে ছোকরা ভিডিওগ্রাফার দাঁত খিঁচিয়ে হেসে ততক্ষনাৎ তার টি-শার্টের পকেটের ভিতর থেকে সাদা মতো পাউডার ভর্তি প্লাস্টিকের একটা ছোট্ট পাউচ প্যাকেট বের করে, সেটার মুখ খুলে সাবধানে টেবিলের উপর ঢেলে একটা লম্বা সরু লাইন টানলো। তারপর একগাল হেসে বললো, "নিন ম্যাডাম, এবার লক্ষী মেয়ের মতো এটাকে চটপট টেনে নিন দেখি। আঙ্গুল দিয়ে নাকের একটা ফুটোকে চেপে ধরে অন্য ফুটোটা দিয়ে একবারে গোটাটা টেনে ফেলুন। টানলেই বুঝতে পারবেন কি অসাধারণ জিনিস। স্ট্রেস-ফেস নিমেষের মধ্যে আপনার মন থেকে সব উধাও হয়ে যাবে। নিজেকে এত হালকা মনে হবে, যেন আকাশে উড়ছেন।"
একটা অপরিচিত অল্পবয়সী ছোকরা এমন অম্লানবদনে তাকে কোকেন চাখতে বলছে দেখে রমার উদ্বেগ কোথায় বেড়ে যাবে। তা না হয়ে, উল্টে সে ছোকরার এককথায় আস্বস্ত হয়ে উঠে, তার কুপ্রস্তাব মেনে, তৎক্ষণাৎ সামনে ঝুঁকে পরে টেবিল থেকে পাউডারের গোটা লাইনটা ছোড়ার বাতলে দেওয়া পদ্ধতিতে নাক দিয়ে টেনে নিলো। কোকেন সোজা তার ব্রহ্মতালুতে গিয়ে ধাক্কা মারলো আর পলক ফেলতে না ফেলতেই তার মাথাটা যেন কোনো জাদুবলে বিলকুল খালি হয়ে গেলো। প্রকৃতপক্ষেই সে এতটাই হালকা অনুভব করলো যে তার মনে হলো যেন সে হাওয়ায় ভাসছে। তার চারিপাশটা হঠাৎ করে ভীষণ রঙিন লাগতে লাগলো। রনি তাকে একদম ঠিক কথাই বলেছে। সে এমন এক স্বপ্নের দুনিয়ায় ঢুকে পড়লো, যেখানে মানসিক চাপ বলে কোনোকিছুর অস্তিত্বই নেই। এবার চাইলে সে অতি অনাসায়ে দুনিয়াও জয় করতে পারে।
কোকেন টেনে মুহূর্তের মধ্যে রমার চোখ দুটো ভাবলেশহীন হয়ে উঠলো। বিনা কারণে তার সুন্দর মুখে নিষ্পাপ হাসি ফুটে উঠলো। রনি সেটা লক্ষ্য করে মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো, "কেমন লাগছে বেবি? ফিলিং গুড? গট ইওর কনফিডেন্স ব্যাক? আর ইউ রেডি নাউ?"
রমা দাঁত বের করে হেসে গদগদ স্বরে জবাব দিলো, "ওহ নিশ্চয়ই! আমি তৈরী। আমার সত্যিই দারুণ লাগছে। চলো এবার শুরু করি।"
তাকে আত্মবিশ্বাসে ডগমগ করে ফুটতে দেখে ছোকরা ভিডিওগ্রাফার একগাল হেসে বললো, "গ্রেট! আমি তো আগেই বলেছিলাম, দিজ শিট ওয়ার্কস ম্যাজিক। এবার একদম রিল্যাক্স করে আমার কথা মন দিয়ে শোনো। প্রথমে তোমায় সোলো শুট করবো। সিনটা হলো তুমি স্বামীর সাথে হানিমুনে এসেছো। কিন্তু তোমার ওয়ার্কহলিক হাজব্যান্ড তোমাকে হোটেলে একা ফেলে রেখে বাইরে ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং করতে ব্যস্ত। তাই তুমি একা একাই বাইরে থেকে অনেকক্ষণ ঘুরে বেরিয়ে আবার হোটেলে ফিরে এসেছো। এতক্ষণ ধরে ঘোরাফেরা করে তোমার খুব গরম লেগে গেছে। তুমি খুব ঘামছো। ইউ আর ফিলিং কোয়াইট থার্স্টি। তেষ্টা মেটাতে তুমি সুইটে ঢুকে প্রথমেই মিনিবারে গিয়ে একটা বোতল আর গ্লাস বের করলে। গ্লাস ভর্তি করে মদ ঢেলে ধীরে ধীরে অর্ধেকটা শেষ করলে। ড্রিংক করার সময় তোমার আবার স্মোক না করলে চলে না। তাই কাউন্টারের উপরে রাখা সিগারেটের কেস থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালে আর সেটা টানতে টানতে গ্লাসের বাকি মদটা খতম করলে। মোটামুটি এই হলো সিন। ওকে বেব? ডিড ইউ গেট এভরিথিং ক্রিস্টাল ক্লিয়ার?"
জবাবে রমা মুখে কিছু বললো না, কেবল আলতো হেসে মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলো যে সে বুঝে গেছে। রনি উচ্ছসিত হয়ে উঠলো, "গুড! এবার তোমাকে ক্যামেরার জন্য একটু তৈরী হতে হবে। তেমন কিছু না। তুমি যথেষ্ট ভালো মেকআপ করে আছো। আর তোমার ড্রেস নিয়ে তো কিছু বলারই দরকার নেই। ইটস সো হট। শুধু তোমার মুখে-টুকে একটু জল ছিটোতে হবে। যাতে করে মনে হয়, তুমি সত্যিই গরমে ঘামছো।"
রনি উঠে গিয়ে বাথরুম থেকে একটা প্লাস্টিকের মগে জল নিয়ে এসে যত্ন সহকারে রমার কপালে, গলায়, বুকের খাঁজে আর পেটেতে অল্প অল্প ছিটিয়ে দিয়ে তাকে বললো, "এবার সোজা তোমার ভ্যানিটি হাতে নিয়ে দরজার বাইরে যাও আর ওটাকে বন্ধ করে দাঁড়াও। আমি ভিতর থেকে অ্যাকশন বললেই তুমি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়বে। তারপর তোমার হাতের ভ্যানিটিটা সোফাতে ছুঁড়ে দেবে। তারপর একটা ছোট্ট ডায়ালগ বলবে - ওহ ইটস সো হট আউটসাইড। ইট মেড মি থার্স্টি। ওহ আই নিড এ ড্রিংক। ডায়ালগটা বলে আস্তে আস্তে হেঁটে মিনিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। তুমি দাঁড়ালেই আমি কাট বলবো অ্যান্ড ইউ আর ডান। সিনের মাঝে কোথাও কোনো ভুল হলে, আমি কাট বলবো আর তুমি ইমিডিয়েটলী থেমে যাবে। আমরা আবার সেই জায়গা থেকে শুরু করবো। ওকে? অল গুড? গট ইট?"
রমা ঘাড় নেড়ে জানালো যে সে বুঝে গেছে। রনির নির্দেশমত সে সোফা ছেড়ে উঠে ধীরপদে হেঁটে সুইটের বাইরে চলে গেলো আর দরজাটা আস্তে করে লাগিয়ে দিয়ে দাঁড়ালো। এক মিনিট যেতে না যেতেই ভিতর থেকে রনি অ্যাকশন বলে উঠলো আর সেও অমনি দরজা খুলে সুইটের ভিতরে ঢুকলো। ঢুকতেই দেখলো যে প্রায় ফুট তিনেক দুরুত্ব থেকে রনি পোর্টেবল ক্যামেরাটা তার দিকে তাক করে ধরে ভিডিও তুলছে। আর টিটো ও স্যান্ডি লিভিং রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুজনের নজরই তার দিকে আটকে আছে। ক্যামেরা দেখে রমা এক সেকেন্ডের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তার হাতের ভ্যানিটি ব্যাগখানা সোফাতে ছুঁড়ে ফেলে আগে থেকে শেখানো সংলাপটি পাখি পড়ার মতো বলে ফেললো। তারপর অলসপদে হেঁটে গিয়ে বার কাউন্টারের সামনে দাঁড়ালো।
গোটা শট একটা টেকেই ওকে হয়ে যাওয়ায় ছোকরা ভিডিওগ্রাফার উচ্ছসিত স্বরে রমার তারিফ করে উঠলো, "ওয়ান্ডারফুল! গ্রেট শট বেব। ইউ লুক রিয়ালি সেক্সি অন ক্যামেরা। এবার আমরা পরের সিনটা তুলবো। এবার তুমি কাউন্টারে ঢুকে ওই সাজানো র্যাক থেকে একটা বোতল তুলে কাউন্টারের উপর রাখবে। যে কোনো বোতল পিক করতে পারো। হুইস্কি, জিন, রাম, ভদকা। যা খুশি। যা খেতে তোমার মন চায়। কাউন্টারের উপর দেখেছো তো চারটে গ্লাস পাশাপাশি সাজানো আছে। যে কোনো একটা তুলে, বোতলের ছিপি খুলে ভর্তি করে ওতে ওয়াইন ঢালবে। পাশে দেখো আইস বক্স রাখা আছে। ওখান থেকে দুটো কিউব বের করে ড্রিংকে মেশাবে। তারপর একদম রিল্যাক্স করে গ্লাসে ছোট্ট ছোট্ট সিপ মেরে অর্ধেকটা খালি করে ফেলবে। তারপর আবার একটা ছোট্ট ডায়ালগ বলবে - ওহ আই নিড এ স্মোক! বলে কাউন্টারে রাখা সিগারেট কেসটা থেকে একটা বের করে, লাইটার দিয়ে ধরাবে আর স্মোক করতে করতে, আবার ছোট্ট ছোট্ট সিপে গোটা গ্লাসটা খালি করে দেবে। বুঝে গেছো?"
এবার কিন্তু রমা এক টেকে শট ওকে করতে পারলো না। শুরুটা মসৃণ হলেও, আচমকা হ্যাঁচকা মেরে থেমে যেতে হলো। রনির নির্দেশ মতো সে বারের সাজানো তাক থেকে প্রথমে একটা জিনের বোতল নামিয়ে কাউটারের উপর রেখে একটা কাঁচের গ্লাসে ভর্তি করে মদ ঢাললো। তারপর বরফের বাক্স খুলে দুটো বরফের টুকরো বের করে এনে মদে মিশিয়ে নিয়ে ছোট ছোট চুমুকে গ্লাসটাকে অর্ধেক খালি করে ফেললো। এরপর সিগারেটের কেশ খুলে একটা সিগারেট বের করে লাইটার জ্বালিয়ে ধরালো। কিন্তু জ্বলন্ত সিগারেটটা ঠোঁটের ফাঁকে চেপে ধরে একটা টান দিতেই, গন্ডগোল বেঁধে গেলো। আসলে এর আগে কোনোদিনও সে ধূমপান করেনি। অভ্যাস না থাকায়, সিগারেটটা টানতেই ধোঁয়া সোজা গিয়ে তার গলায় ধাক্কা মারলো আর তৎক্ষণাৎ সে কাশতে শুরু করলো।
রমা কাশতে লাগতেই ছোকরা ভিডিওগ্রাফার কাট বলে চিল্লিয়ে উঠলো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সে তাকে হালকা করে বকুনি দিলো, "বেব, তোমার আগে বলা উচিত ছিলো যে ইউ নেভার স্মোকড। সিনটা পুরো ভেস্তে গেলো। ওকে, নেবার মাইন্ড। আবার তুলবো। বাট ফার্স্ট, ইউ নিড টু নো হাউ টু স্মোক এ সিগারেট। ইটজ ইজি। সিগারেটে ছোট করে টান দেবে। ধোঁয়াটা মুখের ভিতরে গেলে তুমি সেটা গেলার চেষ্টা করবে না। হয় মুখ খুলে বের করে দাও, নয় তো নিঃস্বাসের সাথে নাক দিয়ে বের করতে পারতো। বুঝতে পারলে? ওকে, এবার একটু প্র্যাক্টিস করে নাও। ওয়ান্স ইউ গেট ইউসড টু ইট, আবার ক্যামেরা চালু করবো।"
রমা বাধ্য মেয়ের মতো রনির শেখানো কায়দায় হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটা টানার চেষ্টা করলো। প্রথম কয়েকটা টানে সে কেশে উঠলেও, অল্পক্ষণের মধ্যেই সে সিগারেট টানতে অভ্যস্ত হয়ে গেল। আবার ক্যামেরা চালু হলে পরে সে এবার অনাসায়ে ধূমপান ও মদ্যপান একসাথে করে শট ওকে করে ফেললো। কাঙ্ক্ষিত কার্যোদ্ধার হয়ে যেতেই রনি উল্লাসে ফেটে পড়লো, "ব্রাভো রমা! এগেইন এ গ্রেট শট। ইউ পুল্ড ইট অফ লাইক এ রিয়াল চ্যাম্প। এবার গিয়ে সোফায় বসে রিল্যাক্স করো। অ্যান্ড হোয়াইল ইউ রিল্যাক্স, ইউ মে ওয়ান্ট টু এনজয় ইওরসেল্ফ উইথ অ্যানাদার স্মোক অ্যান্ড ড্রিংক।"
একে রমার রক্তে কোকেনের বিষ মিশে গিয়েছিলো। তার ওপর আবার দ্বিতীয় সিনেই তাকে এক গ্লাস ভর্তি মদ গিলতে হলো। তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দিলো। দ্বিতীয় সিনটা ভালোভাবে উতরে যাওয়ায় সে বেশ উত্তেজিত বোধ করছিলো। সোফায় আরাম করে বসে সময় কাটানোর জন্য আরেকটু ধূমপান ও মদ্যপান করার প্রস্তাবটা মদ্যপ অবস্থায় তার কাছে যথেষ্ট জুতসই লাগলো। সে তৎক্ষণাৎ রনির পরামর্শ মেনে হাতের খালি গ্লাসটাতে আবার মদ ঢেলে নিয়ে, তাতে বরফ মিশিয়ে, আরেকখানা সিগারেট ধরিয়ে অলসপায়ে ফিরে গিয়ে সোফাতে বসলো। তারপর আরাম করে ধূমপান করতে করতে গ্লাসে চুমুক দিতে লাগলো। ওদিকে দ্বিতীয় সিনটা শুট করার পর ছোকরা ভিডিওগ্রাফার বার কাউন্টারের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। সে মেঝে থেকে কালো ব্যাগটা তুলে ভিতর থেকে একটা ল্যাপটপ বের করে আনলো। তারপর সেটার সাথে ক্যামেরা সংযুক্ত করে এইমাত্র তোলা রমার ভিডিও দুটোকে ল্যাপটপের স্ক্রীনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।