11-08-2023, 11:38 AM
আমি বসে আছি ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরির বারান্দায়। আজকে শেষ পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষা মন্দ হয় নি, যতোটা ভয় পেয়েছিলাম ততটা খারাপ হয় নি। বসেছি ছায়ার দিকে। শীতকালে সবাই রোদে বসতে ভালোবাসে। আমিও বাসি, তবু ছায়াময় কোণ বেছে নিয়েছি, কারণ ঐ দিকটায় ভিড় কম।
আমি লক্ষ্য করলাম আমার দিকে হেঁটে হেঁটে মুনজেরিন আসছে। আমি তাকে চিনি, তার নাম জানি, সে যে ধবধবে শাদা গাড়িটাতে করে আসে তার নম্বরও জানি, ঢাকা ভ-৫৭৭২। শুধু আমি একা নই আমাদের ক্লাসের সব ছেলেই জানে। সবাই কোনো-না-কোনো ছলে মুনজেরিনের সঙ্গে কথা বলেছে, অনেকেই তার বাসায় গেছে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ তার জন্যে নোট এবং বইপত্র জোগাড় করেছে। মুনজেরিন হচ্ছে সেই ধরনের মেয়ে যার সাথে কথা বলতে, যার জন্য কিছু-একটা করতে কারোর আপত্তি থাকে না। ছেলেরা গভীর আগ্রহ এবং আনন্দ নিয়ে এদের সঙ্গে মেশে এবং জানে এই জাতীয় মেয়েদের সঙ্গে তারা কখনোই খুব ঘনিষ্ঠ হতে পারবে না। এরা যথাসময়ে বাবা-মার পছন্দ করা একটি ছেলেকে বিয়ে করবে। যে ছেলে সাধারণত থাকে বিদেশে। কিন্তু আমার প্রতি সম্ভবত মুনজেরিনের কোন দুর্বলতা আছে, প্রায়শই দেখি সে আমার সাথে কথা বলতে আসে, তাঁর বাসায় যাওয়ার নেমন্ত্রন দেয়। সেই নেমন্ত্রণ স্বাভাবিক নেমন্ত্রনের চেয়ে বেশি কিছু, আমি এসব ভালো করে বুঝিই নি এতদিন। এখন সব বুঝি। মুনিরা আন্টি আমায় সব যেন হাতেকলমে শিখিয়েছে।
মুনজেরিন আমার সামনে এসে দাঁড়াল। মাথার স্কার্ফ খুলে ফেলে বলল, “কেমন আছ?” আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আন্তরিক সুরে বললাম, “ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?” মুনজেরিন বিভ্রান্ত হয়ে গেল। আমি আপনি করে বলব তা সে আশা করেনি। তাকে অপ্রস্তুত এবং লজ্জিত মনে হলো। সে এখন কী করে তাই আমার দেখার ইচ্ছা। তুমি করেই চালিয়ে যায়, না আপনি ব্যবহার করে। বাংলাভাষাটা বড়ই গোলমেলে। মাঝে মাঝেই তরুণ-তরুণীদের বিভ্রান্ত করে। মুনজেরিন নিজেকে সামলে নিলো। সহজ গলায় বলল, “আপনি আপনি করছেন কেন? আমাকে অস্বস্তিতে ফেলবার জন্যে? আমি এত সহজে অস্বস্তিতে পড়ি না।” আমি বললাম, “বস মুনজেরিন।” মুনজেরিন বসতে বসতে বলল, “অনেকদিন থেকেই তোমারে আমার বাসায় যেতে বলি! যাও না কেন! ভার্সিটিটে এসে কি রকম চুরের মতো লুকিয়ে থাকো। মনে হয় যেনো কাউকে এড়িয়ে চলছো।”
সারা বিকেল-সন্ধ্যা মুনজেরিনের সাথে বসে বসে আড্ডা দিলাম। অনেক কিছু নিয়ে আলাপ হলো। একটা সময় বুঝলাম এই মেয়েটা আমার প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল। সম্ভবত প্রেমে-টেমে পড়েছে। সেটা কি করে বুঝলাম? আমার আর মুনজেরিনের আলাপের একটা নমুনা দিচ্ছি, এতেই ক্লিয়ার হবে ব্যপারটা। আলাপের এক পর্যায় মুনজেরিন বললো,
- “তুমি কি জানো আমি তোমার কথা খুব ভাবি?
- আমি জানি।
- সত্যি জানো?
- হ্যাঁ জানি।
- কী করে জানো?
- ভালোবাসা টের পাওয়া যায়।
অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে মুনজেরিন বলল, “কেন জানি তোমার কথা আমার সবসময় মনে হয়। এর নাম কি ভালোবাসা?” আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম, “আমার জানা নেই, মুনজেরিন।“
মুনজেরিনকে আমি অপছন্দ করি কিংবা পাত্তা দিতে চাই না, ব্যাপারটা তা না। মুনজেরিনের শারীরিক গড়ন যদিও খুব গতানুগতিক তবে সে যথেষ্ট রূপবতী, তাঁর উপর বিরাট বড়লোকের মেয়ে, পড়াশোনাতেও বেশ ভালো। কিন্তু আমার আসলে এসবে এখন মন নেই, মুনিরা আন্টির কাছে আমি যে স্বর্গ পেয়েছি তাঁর তুলনা অন্যকিছুর সাথেই চলে না, মুনিরা আন্টির শরীরের নেশায় মাতাল আমার তখন অন্য কারো দিকেই চোখ পড়ে না। ফেরার সময় মুনজেরিন আমাকে তাঁর সাদা গাড়িতে করে মেসে পৌঁছে দিতে চাইলো, আমি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে রিকসায় চড়ে বসলাম। আড্ডা-টাড্ডা দিয়ে মেসে ফিরতে ফিরতে বাজলো রাত ৯টা। আমার মাথায় তখন মুনিরা আন্টি আর তাঁর লাস্যময়ি শরীর। মুনজেরিনের প্রেম প্রেম কথাসব আমার মনের কামভাব বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ, আজ রাতে আন্টিকে চুদে সেই গরম কমাতে হবে। মেসে ফিরেই আন্টিকে ফোন দিলাম। ফোন বন্ধ। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও দেখলাম ফোন বন্ধ। মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করলাম, মেসেজ ডেলীভারড হয় না। বাধ্য হয়ে আন্টির বাসার ল্যান্ডলাইনে ফোন দিলাম। ফোন বেজে যায়, কেউ রিসিভ করে না। একই সাথে বিস্ময় এবং ভয় আমাকে জাপটে ধরলো। খামোখা ফোনের পিছনে সময় নষ্ট না করে আমি সরাসরি বাসায় যাওয়ার মনস্থির করলাম।
রাত দশটার দিকে মুনিরা আন্টির ফ্ল্যাটে কলিং বেল চাপলাম। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দিলো তনিমা। আমি ড্রয়িং রুমে বসলাম, একটু পরেই মুনিরা আন্টি রুমে প্রবেশ করলো। আমায় দেখে যেনো ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন মুনিরা আন্টি। মুখে কোন কথা নেই। আমি স্বাভাবিকভাবে অনেকগুলো প্রশ্ন করলাম। ভালো আছেন কিনা? ফোন বন্ধ কেন? কিছু হয়েছে কিনা? মুনিরা আন্টি নিরুত্তর। প্রশ্নের জবাব তো বহুদূর মুখে কোন শব্দ নেই তাঁর! আমার দিকে তাকাচ্ছেন না পর্যন্ত, ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আমাকে যেনো অগ্রাহ্য করে যাচ্ছেন, যেন আমায় এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন। আমি পুরো ব্যাপারটা বুঝে উঠার আগেই এমন এক ধাক্কা খেলাম যে পিলেচমকে যাওয়ার উপক্রম। অতি পরিচিত এক কণ্ঠস্বর বললো, “কি অবস্থারে তন্ময়!” আমি হতবিহবল চোখে তাকিয়ে দেখলাম জিশান রুমে ঢুকেছে। জিশান রুমে ঢুকতেই মুনিরা আন্টি দ্রুত বেরিয়ে গেলো। অস্বস্তি আর উৎকন্ঠায় আমার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “তুই কবে দেশে আসলি! আমায় ফোন দিস নাই কেন এসে।” জিশান বিরক্ত হওয়ার ভঙ্গিতে বললো, “দিছিলাম। তোর ফোন বন্ধ দেখাইলো। তোর আগের মেসের ঠিকানায় গিয়ে দেখলাম, তুই সেই মেস নাকি ছেড়ে দিয়েছিস। তাই আর যোগাযোগ করতে পারিনি।” আমি নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম, “ক্যাম্পাসে যেতি, সবার সাথে দেখা হয়ে যেতো সুযোগে।” জিশান হতাশ ভঙ্গিতে বললো, “নারে, ঐ ক্যাম্পাসে যাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার আর হয় না।” আমি প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য বললাম, “আচ্ছা বাদ দে এসব কথা। তুই আচমকা দেশে আসলি যে!” জিশানের চোখে মুখে বিস্ময়, বললো, “ও! তুই তাহলে ঘটনাটা জানিস না।” আমি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি ঘটনা?” জিশান বললো, “আম্মু তো খুব বিশ্রী রকমের একটা ব্যাপারে ফেঁসে গেছে রে।” আমার পিলে চমকে যাওয়ার অবস্থা! জিশান কি আমার আর আন্টির ব্যাপারটাকে ইঙ্গিত করে কিছু বলছে। তাও জিজ্ঞেস করলাম, “কি ব্যপারে! কি হইছে!!!” জিশান বললো, “বলছি, বলছি। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। সব খুলে বলছি, তোর হেল্পও প্রয়োজনরে দোস্ত। চল তোকে নিয়ে বের হই। এই কয়েকদিন বলতে গেলে আমি গৃহদন্দি সময় কাটাচ্ছি। তোকে দেখে কি যে আনন্দ লাগছে।”
হাঁটতে হাঁটতে জিশান আমায় যা বললো তাতে বুঝলাম কেনো মুনিরা আন্টি আমার সাথে এমন আচরণ করেছে। না, জিশান মোটেও আমার আর মুনিরা আন্টির সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলে নি। এই কয়েকদিনে সম্পূর্ণ অন্য রকমের একটা সমস্যা মুনিরা আন্টিকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। এক ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রনার সম্মুখীন মুনিরা আন্টি হয়েছে।
~ডায়েরীর এই জায়গায় একটা পেপার কাটিং, স্টেপলিং করে ডায়েরির সাথে এঁটে রাখা। পেপার কাটিংটা খানিকটা এরকম।~
উত্তরার ল্যাবএইড ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আইরিন আক্তার মুন্নী নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার বিকালে, স্পেশালাইজড হাসপাতালের ডাক্তার মুনিরা ফেরদৌসি দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রোগীর বিক্ষুদ্ধ স্বজনরা ঘটনার পর পরই ওই হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মৃতের স্বামী শাহ আলম মীর ডাক্তারের অবহেলার কারণে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে উত্তরার ল্যাবএইড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার এবং ডাক্তার মুনিরা ফেরদৌসির বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
~~~
বেশ রাত অব্দি জিশানের সাথে ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাটলাম। অতীতের স্মৃতিরোমন্থন করে দুজনেই বেশ আবেগ তাড়িত হয়ে উঠলাম। রাতে বাইরে খাওয়া দাওয়া করে, আমার নতুন মেসের ঠিকানা দিয়ে আমি মেসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। ফেরার আগ মুহূর্তে জিশান বললো,
“আমি চাচ্ছি, আম্মুকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে। কিছুদিন ওখানে থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হলে আবার না হয় দেশে ফিরবে। অথবা যদি ওখানেই প্র্যাকটিস চালু করতে চায়, সেটাও করতে পারে। আম্মু দেশের বাইরে যেতে চাচ্ছে না। তুই যদি একটু বুঝিয়ে বলিস, তাহলে হয়তো বুঝবে। তোর কথা তো আম্মু শুনবে।” আমি লজ্জা এবং অনুতাপ নিয়ে তাকালাম জিশানের দিকে, আমাকে নিরুত্তর দেখে জিশান বলল, “দেখ তন্ময়, তোর আর মায়ের ব্যাপারটা আমি জানি। আমি এসব নিয়ে অতো বদারড না। বয়স কিংবা সম্পর্ক নিয়ে যে ট্যাঁবু আমাদের সোসাইটিতে বিদ্যমান তাতে কোনকালেই আমার সম্মতি ছিলো না। যাইহোক, তোরা দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক, তোঁরা জানিস তোদের জন্য কোনটা ভালো। তোঁরা সেটাই করছিস, সেখানে আমার সম্মতি অসম্মতি ম্যাটার করে না। এনিয়ে তোকে আমার কাছে অপরাধবোধে ভোগার কিছু নেই। আমি এসব নিয়ে মোটেও কিছু ভাবছি না।” আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, “ঠিকাছে আমি কথা বলে দেখবো। দেখি কিছু সমাধান করতে পারি কিনা।”
~~~
রিকশায় উঠেই মুনিরা আন্টিকে ফোন করার উদ্দেশ্যে ফোন হাতে নিলাম। লক খুলতেই দেখলাম, স্ক্রিনে ভাসছে, “1 new message”. মুনিরা আন্টির নাম্বার থেকে এসেছে মেসেজটা। মেসেজ ওপেন করে আমার আক্কেলগুড়ুম। বিশাল লম্বা এক মেসেজ, এতো লম্বা লেখা সাধারণত মানুষ চিঠিতে বা মেইলে লেখে। এতো লম্বা মেসেজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠার আগেই অকূলপাথারে পরলাম মেসেজটা পড়তে গিয়ে। মুনিরা আন্টি লিখেছে,
“তন্ময়, আমার পাপ শেষমেশ আমাকে টেনে জাহান্নামে নিয়ে এসেছে। ছেলের বন্ধুর সাথে যৌনতার যে অজাচার, অধর্ম, অন্যায় আমি দিনের দিন করে যাচ্ছিলাম, তারই শাস্তিস্বরূপ এমন একটা ঘটনার শিকার আমি হলাম। আমি রাতে ঘুমাতে পারি না, ঐ মৃত মহিলার চেহারা আমার মুখের সামনে ভেসে বেড়ায়। ঐ মহিলা চিৎকার করে বলে, যতদিন তুই এমন অজাচার চালিয়ে যাবি, তোর হাতে তোর রোগীরা মরবে। আমি জানি, ব্যাপারটা একান্তই সাইকোলজিক্যাল। কিন্তু একই সাথে আমাকে এক চূড়ান্ত অপরাধবোধ চোরাবালির মতো গিলে খাচ্ছে। সমাজ, পরিবারের ছি ছি-র ভয় আমি কোনোকালেই করিনি। কিন্তু নিজের সামনেই যে আজ নিজে দাঁড়াতে পারছি না। নিজের শরীরের প্রতি নিজের ঘেন্না চলে আসছে, নিজেকে আয়নায় দেখলে লজ্জা, অপরাধবোধে আত্মহ্ননের পথ বেছে নিতে ইচ্ছে করে। মনে হচ্ছে, অন্তরীক্ষে বসা এক অতি ক্ষমতাধর আমার এই অজাচরের শাস্তি সরূপ আমার হাতেই একজনের মৃত্যু ঘটিয়েছেন। যাইহোক, এই মেসেজটাই তোর সাথে আমার শেষ কথা। আমি চাই না, এই সম্পর্ক আর এক বিন্দু আগাক। আমি জানি, আমি নিজের অপরাধবোধের কারণে তোর সাথে যেটা করছি সেটা অন্যায়। আচমকা এভাবে একটা সম্পর্ক শেষ করে দেয়া যায় না। কিন্তু আমার পরিস্থিতিটা বুঝ, আমি এই অজাচার আর করতে পারবো না। আমি জানি, আমাকে বন্ধুর মা সেই আগের আন্টিরূপে তুই কখনোই দেখতে পারবি না আর। তাও চেষ্টা কর, ভুলে যা আমাদের মধ্যে যা হয়েছে। বিদায়, ভালো থাকি।”
মেসেজ পড়া শেষ হতেই আমি ফোন দিলাম মুনিরা আন্টিকে। ফোন বেজেই গেলো, আন্টি পিক করলো না। সারারাতে অন্তত ৩০ বার আন্টিকে ফোন দিলাম, আন্টি একটা বারও ফোন উঠালো না। আমি বেশ কয়েকটা মেসেজও করলাম, মেসেজ ডেলিভারড হলো, কিন্তু আন্টি কোন রিপ্লে করলো না। আচমকা নিজের অতি পরিচিত মুনিরা আন্টি বড্ড অচেনা কেউ মনে হল। একটা দুর্ঘটনা যে মানুশকে এভাবে বদলে দিতে পারে, আমি কল্পনাই করি নি।
~~~
আমি লক্ষ্য করলাম আমার দিকে হেঁটে হেঁটে মুনজেরিন আসছে। আমি তাকে চিনি, তার নাম জানি, সে যে ধবধবে শাদা গাড়িটাতে করে আসে তার নম্বরও জানি, ঢাকা ভ-৫৭৭২। শুধু আমি একা নই আমাদের ক্লাসের সব ছেলেই জানে। সবাই কোনো-না-কোনো ছলে মুনজেরিনের সঙ্গে কথা বলেছে, অনেকেই তার বাসায় গেছে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ তার জন্যে নোট এবং বইপত্র জোগাড় করেছে। মুনজেরিন হচ্ছে সেই ধরনের মেয়ে যার সাথে কথা বলতে, যার জন্য কিছু-একটা করতে কারোর আপত্তি থাকে না। ছেলেরা গভীর আগ্রহ এবং আনন্দ নিয়ে এদের সঙ্গে মেশে এবং জানে এই জাতীয় মেয়েদের সঙ্গে তারা কখনোই খুব ঘনিষ্ঠ হতে পারবে না। এরা যথাসময়ে বাবা-মার পছন্দ করা একটি ছেলেকে বিয়ে করবে। যে ছেলে সাধারণত থাকে বিদেশে। কিন্তু আমার প্রতি সম্ভবত মুনজেরিনের কোন দুর্বলতা আছে, প্রায়শই দেখি সে আমার সাথে কথা বলতে আসে, তাঁর বাসায় যাওয়ার নেমন্ত্রন দেয়। সেই নেমন্ত্রণ স্বাভাবিক নেমন্ত্রনের চেয়ে বেশি কিছু, আমি এসব ভালো করে বুঝিই নি এতদিন। এখন সব বুঝি। মুনিরা আন্টি আমায় সব যেন হাতেকলমে শিখিয়েছে।
মুনজেরিন আমার সামনে এসে দাঁড়াল। মাথার স্কার্ফ খুলে ফেলে বলল, “কেমন আছ?” আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আন্তরিক সুরে বললাম, “ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?” মুনজেরিন বিভ্রান্ত হয়ে গেল। আমি আপনি করে বলব তা সে আশা করেনি। তাকে অপ্রস্তুত এবং লজ্জিত মনে হলো। সে এখন কী করে তাই আমার দেখার ইচ্ছা। তুমি করেই চালিয়ে যায়, না আপনি ব্যবহার করে। বাংলাভাষাটা বড়ই গোলমেলে। মাঝে মাঝেই তরুণ-তরুণীদের বিভ্রান্ত করে। মুনজেরিন নিজেকে সামলে নিলো। সহজ গলায় বলল, “আপনি আপনি করছেন কেন? আমাকে অস্বস্তিতে ফেলবার জন্যে? আমি এত সহজে অস্বস্তিতে পড়ি না।” আমি বললাম, “বস মুনজেরিন।” মুনজেরিন বসতে বসতে বলল, “অনেকদিন থেকেই তোমারে আমার বাসায় যেতে বলি! যাও না কেন! ভার্সিটিটে এসে কি রকম চুরের মতো লুকিয়ে থাকো। মনে হয় যেনো কাউকে এড়িয়ে চলছো।”
সারা বিকেল-সন্ধ্যা মুনজেরিনের সাথে বসে বসে আড্ডা দিলাম। অনেক কিছু নিয়ে আলাপ হলো। একটা সময় বুঝলাম এই মেয়েটা আমার প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল। সম্ভবত প্রেমে-টেমে পড়েছে। সেটা কি করে বুঝলাম? আমার আর মুনজেরিনের আলাপের একটা নমুনা দিচ্ছি, এতেই ক্লিয়ার হবে ব্যপারটা। আলাপের এক পর্যায় মুনজেরিন বললো,
- “তুমি কি জানো আমি তোমার কথা খুব ভাবি?
- আমি জানি।
- সত্যি জানো?
- হ্যাঁ জানি।
- কী করে জানো?
- ভালোবাসা টের পাওয়া যায়।
অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে মুনজেরিন বলল, “কেন জানি তোমার কথা আমার সবসময় মনে হয়। এর নাম কি ভালোবাসা?” আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম, “আমার জানা নেই, মুনজেরিন।“
মুনজেরিনকে আমি অপছন্দ করি কিংবা পাত্তা দিতে চাই না, ব্যাপারটা তা না। মুনজেরিনের শারীরিক গড়ন যদিও খুব গতানুগতিক তবে সে যথেষ্ট রূপবতী, তাঁর উপর বিরাট বড়লোকের মেয়ে, পড়াশোনাতেও বেশ ভালো। কিন্তু আমার আসলে এসবে এখন মন নেই, মুনিরা আন্টির কাছে আমি যে স্বর্গ পেয়েছি তাঁর তুলনা অন্যকিছুর সাথেই চলে না, মুনিরা আন্টির শরীরের নেশায় মাতাল আমার তখন অন্য কারো দিকেই চোখ পড়ে না। ফেরার সময় মুনজেরিন আমাকে তাঁর সাদা গাড়িতে করে মেসে পৌঁছে দিতে চাইলো, আমি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে রিকসায় চড়ে বসলাম। আড্ডা-টাড্ডা দিয়ে মেসে ফিরতে ফিরতে বাজলো রাত ৯টা। আমার মাথায় তখন মুনিরা আন্টি আর তাঁর লাস্যময়ি শরীর। মুনজেরিনের প্রেম প্রেম কথাসব আমার মনের কামভাব বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ, আজ রাতে আন্টিকে চুদে সেই গরম কমাতে হবে। মেসে ফিরেই আন্টিকে ফোন দিলাম। ফোন বন্ধ। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও দেখলাম ফোন বন্ধ। মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করলাম, মেসেজ ডেলীভারড হয় না। বাধ্য হয়ে আন্টির বাসার ল্যান্ডলাইনে ফোন দিলাম। ফোন বেজে যায়, কেউ রিসিভ করে না। একই সাথে বিস্ময় এবং ভয় আমাকে জাপটে ধরলো। খামোখা ফোনের পিছনে সময় নষ্ট না করে আমি সরাসরি বাসায় যাওয়ার মনস্থির করলাম।
রাত দশটার দিকে মুনিরা আন্টির ফ্ল্যাটে কলিং বেল চাপলাম। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দিলো তনিমা। আমি ড্রয়িং রুমে বসলাম, একটু পরেই মুনিরা আন্টি রুমে প্রবেশ করলো। আমায় দেখে যেনো ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন মুনিরা আন্টি। মুখে কোন কথা নেই। আমি স্বাভাবিকভাবে অনেকগুলো প্রশ্ন করলাম। ভালো আছেন কিনা? ফোন বন্ধ কেন? কিছু হয়েছে কিনা? মুনিরা আন্টি নিরুত্তর। প্রশ্নের জবাব তো বহুদূর মুখে কোন শব্দ নেই তাঁর! আমার দিকে তাকাচ্ছেন না পর্যন্ত, ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আমাকে যেনো অগ্রাহ্য করে যাচ্ছেন, যেন আমায় এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন। আমি পুরো ব্যাপারটা বুঝে উঠার আগেই এমন এক ধাক্কা খেলাম যে পিলেচমকে যাওয়ার উপক্রম। অতি পরিচিত এক কণ্ঠস্বর বললো, “কি অবস্থারে তন্ময়!” আমি হতবিহবল চোখে তাকিয়ে দেখলাম জিশান রুমে ঢুকেছে। জিশান রুমে ঢুকতেই মুনিরা আন্টি দ্রুত বেরিয়ে গেলো। অস্বস্তি আর উৎকন্ঠায় আমার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “তুই কবে দেশে আসলি! আমায় ফোন দিস নাই কেন এসে।” জিশান বিরক্ত হওয়ার ভঙ্গিতে বললো, “দিছিলাম। তোর ফোন বন্ধ দেখাইলো। তোর আগের মেসের ঠিকানায় গিয়ে দেখলাম, তুই সেই মেস নাকি ছেড়ে দিয়েছিস। তাই আর যোগাযোগ করতে পারিনি।” আমি নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম, “ক্যাম্পাসে যেতি, সবার সাথে দেখা হয়ে যেতো সুযোগে।” জিশান হতাশ ভঙ্গিতে বললো, “নারে, ঐ ক্যাম্পাসে যাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার আর হয় না।” আমি প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য বললাম, “আচ্ছা বাদ দে এসব কথা। তুই আচমকা দেশে আসলি যে!” জিশানের চোখে মুখে বিস্ময়, বললো, “ও! তুই তাহলে ঘটনাটা জানিস না।” আমি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি ঘটনা?” জিশান বললো, “আম্মু তো খুব বিশ্রী রকমের একটা ব্যাপারে ফেঁসে গেছে রে।” আমার পিলে চমকে যাওয়ার অবস্থা! জিশান কি আমার আর আন্টির ব্যাপারটাকে ইঙ্গিত করে কিছু বলছে। তাও জিজ্ঞেস করলাম, “কি ব্যপারে! কি হইছে!!!” জিশান বললো, “বলছি, বলছি। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। সব খুলে বলছি, তোর হেল্পও প্রয়োজনরে দোস্ত। চল তোকে নিয়ে বের হই। এই কয়েকদিন বলতে গেলে আমি গৃহদন্দি সময় কাটাচ্ছি। তোকে দেখে কি যে আনন্দ লাগছে।”
হাঁটতে হাঁটতে জিশান আমায় যা বললো তাতে বুঝলাম কেনো মুনিরা আন্টি আমার সাথে এমন আচরণ করেছে। না, জিশান মোটেও আমার আর মুনিরা আন্টির সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলে নি। এই কয়েকদিনে সম্পূর্ণ অন্য রকমের একটা সমস্যা মুনিরা আন্টিকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। এক ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রনার সম্মুখীন মুনিরা আন্টি হয়েছে।
~ডায়েরীর এই জায়গায় একটা পেপার কাটিং, স্টেপলিং করে ডায়েরির সাথে এঁটে রাখা। পেপার কাটিংটা খানিকটা এরকম।~
ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
উত্তরার ল্যাবএইড ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আইরিন আক্তার মুন্নী নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার বিকালে, স্পেশালাইজড হাসপাতালের ডাক্তার মুনিরা ফেরদৌসি দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রোগীর বিক্ষুদ্ধ স্বজনরা ঘটনার পর পরই ওই হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মৃতের স্বামী শাহ আলম মীর ডাক্তারের অবহেলার কারণে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে উত্তরার ল্যাবএইড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার এবং ডাক্তার মুনিরা ফেরদৌসির বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
~~~
বেশ রাত অব্দি জিশানের সাথে ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাটলাম। অতীতের স্মৃতিরোমন্থন করে দুজনেই বেশ আবেগ তাড়িত হয়ে উঠলাম। রাতে বাইরে খাওয়া দাওয়া করে, আমার নতুন মেসের ঠিকানা দিয়ে আমি মেসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। ফেরার আগ মুহূর্তে জিশান বললো,
“আমি চাচ্ছি, আম্মুকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে। কিছুদিন ওখানে থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হলে আবার না হয় দেশে ফিরবে। অথবা যদি ওখানেই প্র্যাকটিস চালু করতে চায়, সেটাও করতে পারে। আম্মু দেশের বাইরে যেতে চাচ্ছে না। তুই যদি একটু বুঝিয়ে বলিস, তাহলে হয়তো বুঝবে। তোর কথা তো আম্মু শুনবে।” আমি লজ্জা এবং অনুতাপ নিয়ে তাকালাম জিশানের দিকে, আমাকে নিরুত্তর দেখে জিশান বলল, “দেখ তন্ময়, তোর আর মায়ের ব্যাপারটা আমি জানি। আমি এসব নিয়ে অতো বদারড না। বয়স কিংবা সম্পর্ক নিয়ে যে ট্যাঁবু আমাদের সোসাইটিতে বিদ্যমান তাতে কোনকালেই আমার সম্মতি ছিলো না। যাইহোক, তোরা দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক, তোঁরা জানিস তোদের জন্য কোনটা ভালো। তোঁরা সেটাই করছিস, সেখানে আমার সম্মতি অসম্মতি ম্যাটার করে না। এনিয়ে তোকে আমার কাছে অপরাধবোধে ভোগার কিছু নেই। আমি এসব নিয়ে মোটেও কিছু ভাবছি না।” আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, “ঠিকাছে আমি কথা বলে দেখবো। দেখি কিছু সমাধান করতে পারি কিনা।”
~~~
রিকশায় উঠেই মুনিরা আন্টিকে ফোন করার উদ্দেশ্যে ফোন হাতে নিলাম। লক খুলতেই দেখলাম, স্ক্রিনে ভাসছে, “1 new message”. মুনিরা আন্টির নাম্বার থেকে এসেছে মেসেজটা। মেসেজ ওপেন করে আমার আক্কেলগুড়ুম। বিশাল লম্বা এক মেসেজ, এতো লম্বা লেখা সাধারণত মানুষ চিঠিতে বা মেইলে লেখে। এতো লম্বা মেসেজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠার আগেই অকূলপাথারে পরলাম মেসেজটা পড়তে গিয়ে। মুনিরা আন্টি লিখেছে,
“তন্ময়, আমার পাপ শেষমেশ আমাকে টেনে জাহান্নামে নিয়ে এসেছে। ছেলের বন্ধুর সাথে যৌনতার যে অজাচার, অধর্ম, অন্যায় আমি দিনের দিন করে যাচ্ছিলাম, তারই শাস্তিস্বরূপ এমন একটা ঘটনার শিকার আমি হলাম। আমি রাতে ঘুমাতে পারি না, ঐ মৃত মহিলার চেহারা আমার মুখের সামনে ভেসে বেড়ায়। ঐ মহিলা চিৎকার করে বলে, যতদিন তুই এমন অজাচার চালিয়ে যাবি, তোর হাতে তোর রোগীরা মরবে। আমি জানি, ব্যাপারটা একান্তই সাইকোলজিক্যাল। কিন্তু একই সাথে আমাকে এক চূড়ান্ত অপরাধবোধ চোরাবালির মতো গিলে খাচ্ছে। সমাজ, পরিবারের ছি ছি-র ভয় আমি কোনোকালেই করিনি। কিন্তু নিজের সামনেই যে আজ নিজে দাঁড়াতে পারছি না। নিজের শরীরের প্রতি নিজের ঘেন্না চলে আসছে, নিজেকে আয়নায় দেখলে লজ্জা, অপরাধবোধে আত্মহ্ননের পথ বেছে নিতে ইচ্ছে করে। মনে হচ্ছে, অন্তরীক্ষে বসা এক অতি ক্ষমতাধর আমার এই অজাচরের শাস্তি সরূপ আমার হাতেই একজনের মৃত্যু ঘটিয়েছেন। যাইহোক, এই মেসেজটাই তোর সাথে আমার শেষ কথা। আমি চাই না, এই সম্পর্ক আর এক বিন্দু আগাক। আমি জানি, আমি নিজের অপরাধবোধের কারণে তোর সাথে যেটা করছি সেটা অন্যায়। আচমকা এভাবে একটা সম্পর্ক শেষ করে দেয়া যায় না। কিন্তু আমার পরিস্থিতিটা বুঝ, আমি এই অজাচার আর করতে পারবো না। আমি জানি, আমাকে বন্ধুর মা সেই আগের আন্টিরূপে তুই কখনোই দেখতে পারবি না আর। তাও চেষ্টা কর, ভুলে যা আমাদের মধ্যে যা হয়েছে। বিদায়, ভালো থাকি।”
মেসেজ পড়া শেষ হতেই আমি ফোন দিলাম মুনিরা আন্টিকে। ফোন বেজেই গেলো, আন্টি পিক করলো না। সারারাতে অন্তত ৩০ বার আন্টিকে ফোন দিলাম, আন্টি একটা বারও ফোন উঠালো না। আমি বেশ কয়েকটা মেসেজও করলাম, মেসেজ ডেলিভারড হলো, কিন্তু আন্টি কোন রিপ্লে করলো না। আচমকা নিজের অতি পরিচিত মুনিরা আন্টি বড্ড অচেনা কেউ মনে হল। একটা দুর্ঘটনা যে মানুশকে এভাবে বদলে দিতে পারে, আমি কল্পনাই করি নি।
~~~
পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কত বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। এই ধরুন হল্যান্ডের এক সাহেব আমস্টারডামের এক পাঁচতারকা হোটেল শুয়েছিলো সকালে উঠে দেখল সে পিগমি হয়ে গেছে। বা ধরুন জন উইলিয়াম স্টীথ নামক এক একলা মানুষের কথা, নিজের ছোট্ট লগহাউজে যার একাকী বসবার, একদিন শিকার করে ফিরে দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকে সে হতভম্ব। দেখে কোথায় সে একলা! তাঁর লগহাউজে বাস করছে তারই এক পরিবার। বা ধরুন আপনার আমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়ানো পিঁপড়া, পানির নিচে দু’দিনও বেঁচে থাকতে পারে। বা ধরুন কলকাতার এক দেরদেড়ে গোবিন্দপুর গ্রামের এক গুবেচেরা কুশল হাজরা হঠাৎ করে দাবী করে বসলো সে আসলে এন্টনি ফিরিঙ্গি। তাঁর পুনর্জন্ম হয়েছে, একে একে বলে যেতে থাকলো এন্টনির জীবনের অদ্ভুত সব সত্য ঘটনা। এমন কত বিস্ময়কর ব্যাপার, আপনার আমার আশেপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। কটার দিকেইবা আমাদের মনোযোগ যায়। কিন্তু নিজের সাথে ঘটলে মনোযোগ না দিয়ে কি আর পারা যায়! যে মুনিরা আন্টি আমার স্পর্শের জন্য পাগল হয়ে থাকতো, সমাজ কিংবা পরিবারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পাশের রুমে নিজের মেয়েদের শুনিয়ে শুনিয়ে চিৎকার করে করে আমার চুদন খেয়েছে, সেই মুনিরা আন্টি চোখের পলকে যেনো আমাকে ভুলে গেলো। ফোন তুলে না, মেসেজ রিপ্লে করে না। জিশান দেশে আছে বিধায়, প্রায় প্রতিদিন ওদের বাসায় যাওয়া হতো। কিন্তু মুনিরা আন্টি একটাবার ফিরেও তাকাতো না আমার দিকে। যেনো তন্ময় নামক কেউ এই পৃথিবীতে অস্তিস্ত রাখে না। আমি আস্তে আস্তে বুঝলাম, আন্টি আমার জন্য গন কেইস। এই মহিলাকে এখন আমি আর চিনিনা। সম্পূর্ণ বদলে গিয়ে অন্য কিছু হয়ে গেছে। আমিও তাঁর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে, ফোন দেয়া, মেসেজ দেয়া, বাসায় গেলে কথা বলার চেষ্টা, সব বন্ধ করে দিলাম। আস্তে আস্তে বাসায় যাওয়াই বন্ধ করে দিলাম। বিশেষত জিশান যখন, আবার বিদেশ চলে গেলো। আমি একেবারেই বন্ধ করে দিলাম ওদের বাসায় যাওয়া। আচমকা এক রাতে দুই নর-নারীর আদিম উদ্দীপনায় শুরু হওয়া এক সম্পর্ক, একদমই সাদামাটা আর এলেমেলো ভাবে শেষ হয়ে গেলো, বিকেলের আলোর মতো। আমি চেষ্টা করলাম মুনিরা আন্টি নামক মানুষের অস্তিত্ব আমার স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে, ভাগ্যিস তখন মুনজেরিন আমার পাশে ছিলো। আমি আস্তে আস্তে মুনিরা আন্টিকে ভুলে মুনজেরিনের সাথে সম্পর্ক জড়িয়ে পড়তে লাগলাম। আচমকা মুনজেরিনের মধ্যেই নিজের জীবনের অন্তনিহিত অর্থ খুঁজে পেলাম যেনো। মুনজেরিন আর আমার সম্পর্কটা হয়তো দারুণ এক পরিণতির দিকে গড়াতো, যদি না সেই সময় বিশ্রী এই ঘটনাটা না ঘটতো।