Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
#21
[Image: 20220131-225527.jpg]


গল্প - ভয়

লেখক- বাবান


ফোনটা কাট করতেই আমি বললাম - কি ব্যাপার বলোতো সুভাষ দা? কদিন ধরে দেখছি তুমি একটু কেমন যেন সিরিয়াস মার্কা হয়ে গেছো, তারপরে ঘন ঘন বৌদিকে ফোন করছো? কি ব্যাপারটা কি?

সুভাষ দা কথাগুলো আমার দিকে তাকিয়ে শুনলেও উত্তর দেবার সময় চোখ সরিয়ে নিয়ে চশমাটা মুছতে মুছতে হেসে বা বলা উচিত হাসার নকল অভিনয় করে বললেন - নানা... কিছু না... ওই আরকি

- উহু.... কিছু তো একটা ব্যাপার আছেই... নইলে তোমার মতো একটা মানুষ হটাৎ এতো চুপচাপ..... তারওপর বৌদিকে বার বার ফোন.... বার বার সব ঠিকাছে তো জিজ্ঞেস করছো... ব্যাপারটা কি? দেখো যদি ব্যাক্তিগত বা ফ্যামিলির কোনো ব্যাপার হয় আমি জানতে চাইবোনা কিন্তু কিছু যে হয়েছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি........ দেখো তুমি চাইলে আমায় বলতে পারো.. যদি আমি.....

একটানা কথাগুলি বলে থামলাম আমি। দেখি সুভাষ দা আমার দিকে তাকিয়ে। মুখে একটা হালকা হাসি.... ওটা কি আশ্বাস নাকি বিদ্রুপ? ঠিক বুঝলাম না। তিনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন - থাঙ্কস রে.... কিন্তু তোর মনে হয় কিছু করার নেই।

- আহা বলোই না.... যদি আপত্তি না থাকে

- না.. আপত্তি... অমন কিছু ব্যাপার নয়

- তাহলে বলো তো.. বলো

সুভাষ দা আমার দিকে তাকিয়ে বললো - শুনবি? তাহলে চল বাইরে যাই... এখানে একটানা বসে বেঁকে গেলাম মাইরি।

ব্রেক টাইম তখন। আমরা দুজন নিজের খাবার হাতে বাইরে এসে ছাদে গেলাম। সুভাষদা আর আমি খেতে খেতেই কথা বলছিলাম। তবে যতই শুনছিলাম আমার খাওয়ার দিকে নজর কমে যাচ্ছিলো আর সুভাষদার গল্পে হারিয়ে যাচ্ছিলাম।

- তুই তো জানিস.... আমাদের বাড়িটা ফ্লাট হচ্ছে। বহু ঝামেলা পেরিয়ে জেঠুরা রাজি হয়েছে। সে যাই হোক..... কাজ শুরুর আগে আমাদের তো শিফটিং এর প্রয়োজন ছিল। জেঠুদের খুব একটা অসুবিধা হয়নি। দিদি মানে জেঠুর মেয়ে স্নেহাদির এক বান্ধবী খুব কাছেই থাকেন। ওদের নিজেদের তলাটার জন্য ওরাও ভাড়াটে খুঁজছে... তাই খুব সহজেই দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গেলো, ঝামেলায় পড়লাম আমরা। আমরা কোথায় যাবো?

প্রোমোটার নিজেই আমাদের এই ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন। ওনার কেনা একটা বাড়ি যেটার কাজ শুরু হবে আমাদেরটার পরেই সেটায় যদি আমরা চাই থাকতে পারি। আমি আর বাবা গিয়ে সে বাড়ি একদিন দেখেও এসেছিলাম। খুব একটা যে ভক্তি এসেছিলো বলবনা। দোতলা বাড়ি কিন্তু একেবারে শেষ অবস্থা তার... ওতে থাকা কতোটা রিস্কি হতে পারে সেটাই ভাবছিলাম। ওপর থেকে ভেঙে টেঙে না পড়ে কারোর মাথায় সেই ভয় আর ওই বাড়িতে থাকার ইচ্ছা আর হলোনা। কিন্তু একটা বাড়ি তো প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন বাবার এক পরিচিত মানুষ কাল্টু বাবু। উনি আবার এই সব কাজই করে কমিশান পেয়ে থাকেন।

ওনাদের বাড়ির খুব কাছেই একটা দোতলা বাড়ির খোঁজ উনি এনে দিলেন আমাদের। আবার আমি আর বাবা গেলাম একদিন। এই বাড়িটা আমাদের বেশ পছন্দ হলো। তবে বাড়িটা সামনে থেকে বিশাল কিছু না লাগলেও বেশ ভালোই বড়ো। পেছনে একটা বাগানও আছে... যদিও সেটাকে আজ আর বাগান বলা উচিত নয়... ঝোপ ঝাড় আর একটা পুরানো কুয়ো যেটাও আর ব্যবহার হয়না। ওপরে টিন দিয়ে ঢেকে রাখা যাতে বিড়াল কুকুর আবার ভেতরে পড়ে না যায়। বাড়ির মালিক অনিমেষ কাকু নিজেই আমাদের সাথে সব ঘুরিয়ে দেখালেন। মানুষটা বেশ ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের.  ভালো লাগলো ওনার সাথে কথা বলে। একতলার একটা ভাগ উনি ভাড়া দেবেন। সেটাও আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। বেশ পুরানো বাড়ি এটাও কিন্তু ওই বাড়ির মতো ভগ্নদশা নয় মটেও এর। বেশ ভালো বড়ো দুটো শোবার ঘর। একটাই বাথরুম আর রান্নাঘর ছোট্ট হলেও আমাদের বেশ পছন্দ হলো। বাবা আমি আর অনিমেষ কাকু আলোচনার পর ঠিক করলাম এটাই হবে আমাদের কিছু সময়ের বাসস্থান।

এরপর একদিন তোর বৌদিকেও এসে দেখিয়ে গেলাম বাড়িটা। তারও বেশ পছন্দ হলো। এরপর একজন ইলেকট্রিশান কে ডেকে কয়েকটা কাজ করাতে হলো.... আর ঘরটা বাড়ির মালিক নিজেই নিজের বাড়ির কাজের লোক দিয়ে একেবারে পরিষ্কার করিয়ে নিয়েছিলেন। আগেরবার এসে যে ধুলো মাখা দেখেছিলাম পরে স্ত্রীয়ের সঙ্গে এসে দেখি একেবারে পরিষ্কার। ব্যাস... তোমার বৌদির থেকেও গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে সব গুছানোর কাজ শুরু হলো।

এক বাড়ি থেকে আরেকবাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা যে কি তার আর বিবরণ দিয়ে লাভ নেই। উফফফফ পাগল পাগল অবস্থা ছিল। বড়ো বড়ো আসবাবপত্র তো লোকেরাই নিয়ে এসেছিলো... ভাগ্গিস... একতলা বাড়ি...... কিন্তু ভাবছি এবারে যখন আবার এখান থেকে নিজেদের ফ্ল্যাটে ৫ তলায় যাবো তখন কি অবস্থা হবে!! যাকগে..... আবার ঘটনায় ফিরি। সব ঝামেলা মিটিয়ে চলে এলাম এই বর্তমানের বাসস্থানে। নিজের এতদিনের বাড়ি ছেড়ে আসার সময় বুকটা যে একটুও কেমন কেমন করেনি বলবোনা কিন্তু আমার থেকেও বেশি করেছিল আমার ছেলেটার। একটু গোমড়া মুখ ছিল এক দুদিন ওর কিন্তু তারপরে সেও মানিয়েনিয়েছিল। আমরাও হয়তো মানিয়ে নিতাম কিন্তু.........

বাবা আর মায়ের বারান্দার দিকের বড়ো ঘরটায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঘর ভর্তি নানান রকমের পুটলি, ব্যাগ, বাক্স ভর্তি জিনিসপত্র এক এক করে খোলা হচ্ছে... খাট বিছানা সেট করা, আসলে শান্ত কে অশান্ত করে আবার শান্ত করা তো সোজা ব্যাপার নয়.. তাই তার ঝক্কি তো পাওয়াতেই হবে। আমরাও এই নতুন বাড়িতে এক এক করে সব গোছগাছ করতে করতেই দিনটা পার হয়ে গেছিলো। ক্লান্তিতে যে যার মতন বিছানায় পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

পরের দিন আমি নিজের কাজে বেরিয়ে গেলাম। দুই ছেলের মায়েরা নিজের মতো একরাতেই রান্নাঘর গুছিয়ে নিয়েছিল। আমার ছেলেটাকে নিয়ে ওর দাদুই কলেজ নিয়ে যাওয়া আসা করেন। তারাও আমার মতোই বেরিয়ে গেলেন। নিজের এলাকা পাল্টালে একটা অসুবিধা তো হয়ই কিন্তু যেহেতু আমাদের বাড়ি থেকে এই এলাকা ভয়ানক কিছু দূরে নয় তাই খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হয়নি....... অসুবিধা তো অন্য জায়গায় ছিল।

কি অসুবিধার কথা বলছো তুমি? পাড়ার লাফাঙ্গা মানে বাজে ছেলেদের আড্ডা ফাড্ডা আছে নাকি ওদিকে? আমি সিগারেটটা ধরিয়ে সুভাষদা কে একটা অফার করে জিজ্ঞেস করলাম। দাদা সিগারেটটা ধরিয়ে একটা টান দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললেন - নারে ভাই....... ওসব কিছু নয়... এ ঝামেলা অন্যরকম। অন্য লেভেলে।

মানে?

সুভাষদা আরেকটা ধোয়া ছেড়ে আমায় বললেন - ভুত ফুত মানিস?

সুভাষদা আরেকটা ধোয়া ছেড়ে আমায় বললেন - ভুত ফুত মানিস?

আমি একটা টান দিতে যাচ্ছিলাম। সুভাষদার প্রশ্ন শুনে তাকালাম ওর দিকে।

- কি? ভুত?

- হুমমম.... মানিস?

- হ্যা..... মানে.... ওই আরকি ভয় লাগে গপ্পো শুনলে ওই অব্দি আরকি

- আর গপ্পো যদি সত্যি হয় তখন?

- ধুর.... ওসব ভয় দেখানোর ফন্দি ফিকির... তাছাড়া গল্প তো গল্পই.... এক মিনিট........ তুমি কি বলতে চাইছো যে তোমার এই ঝামেলাটা....... ভৌতিক কিছু?

- তাইতো মনে হচ্ছে।

খুব চিন্তিত মুখে ভুরু কুঁচকে একটা টান ছেড়ে বললেন সুভাষ দা। আমি হা করে তাকিয়ে দাদার দিকে। উনি আবার বলতে শুরু করলেন -

- দু তিনদিন কিন্তু নরমাল ভালোই কেটেছে... বলতে নেই..... আস্তে আস্তে সব গুছিয়ে নিচ্ছিলাম নিজেদের মতন করে... কিন্তু মঙ্গলবার থেকে যে কি শুরু হলো.....

- কি? কি শুরু হলো মঙ্গলবার থেকে? আমি ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।

সুভাষ দা একবার পকেট থেকে ফোনটা বার করে বোধহয় কল এসেছে কিনা চেক করে নিয়ে আবার ওটা পকেটে চালান করে বলতে শুরু করলেন -

- তোকে তো বললাম বাড়িটা বেশ ভালোই বড়ো.... একতলার একটা ভাগ আমাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে আর ওপাশেও একটা ভাগ আছে। আমাদের শোবার ঘরের পাশেই সেই বাড়ির একটা ঘর আছে। যেটা পুরো বন্ধ থাকে। এটা মঙ্গলবারের আগেরদিনের ঘটনা.. মানে সোমবার। আমি ঘুমিয়ে আছি হটাৎ একটা ঠেলায় ঘুমটা ভেঙে গেলো। আধো চোখে তাকিয়ে দেখি ছন্দা আমায় ডাকছে।

এই শুনছো? ওঠো... ওঠোনা.... এই

- হুমমম কি হলো ডাকছো কেন.. কি হলোটা কি?

- একটা আওয়াজ পাচ্ছ?

- আওয়াজ? মানে? এতো রাতে কিসের আওয়াজ? কিসব বলছো কি?

- উফফফ এতো কথা না বলে চুপ করে শোনো...

আমি চোখটা ডলে একবার দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি আড়াইটে বাজে। চারিদিক নিস্তব্ধ খালি ঝিঁঝিঁর আওয়াজ আসছে। না....... ভুল বললাম.... আরও কিছু একটা আওয়াজ কানে আসছে না? ভালো করে কান পাতলাম। কোথাও থেকে কি একটা আওয়াজ আসছে? তাইতো মনে হচ্ছে। কিছু টানার শব্দ... ভারী কিছু কেউ যেন টেনে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।

- শুনলে?

- হুমমম.... কিছু টানার শব্দ...... চেয়ার টেবিল টানাটানি করছে.... এতো রাতে এসব কি উটকো ঝামেলা ভাই? ঘর সাজানোর আর টাইম পেলোনা নাকি?

- ধ্যাৎতারিকা..... ভালো করে শোনো.... ওটা ছাড়াও একটা আওয়াজ.....

আরেকবার চোখ ডলে নিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। একটু অপেক্ষা করতেই....  হ্যা.....আমি আরেকটা আওয়াজ পেলাম। একটা হালকা হাসি। যতটা কানে এলো মনে হলো নারীর সেটি। তারপরে আবার ক্যাচ করে কিছু টানার শব্দ। কিন্তু এমন সময় কে কি টানাটানি করছে রে ভাই? আবার কে হাসাহাসি করছে।
আমি তোর বৌদিকে বললাম - ও ওপরে ওদের কেউ হবে... হয়তো রাত অব্দি জেগে থাকে ওরা.... ও ছাড়ো

- হ্যাগো? তোমার কি কান পুরো গেছে? এটা ওপরের ফ্লোর থেকে আসছে? এটা ওখান থেকে আসছে.

এই বলে ছন্দা নিজের হাতটা সামনের দিকের দেয়ালে দেখালো। মানে এই দেয়ালের ওপাশ থেকে। যদিও সেটা আমারও মনে হয়েছে..... কিন্তু ওপাশের ঘর তো বন্ধ থাকে.... ওখানে কেউ থাকেনা তো। সেটা ওকে জানাতেই ও বললো -

- জানিতো আমিও.... ওটা পুরো লক থাকে। ওটায় বাড়ির মালিকদের সব ভাঙা জিনিসপত্র আছে। তাইতো বলছি.. এতরাতে ওই ঘরে কিসের আওয়াজ?

- তুমি কি এই আওয়াজেই জেগে গেছিলে নাকি?

- নানা.... আমি তো বাথরুমে যাবো বলে উঠেছিলাম। রান্না ঘরটা ক্রস করে ঐদিকে যাচ্ছিলাম.. তখনি কানে এলো এই আওয়াজ... কিন্তু তখন.....

- তখন কি?

- না মানে তখন আওয়াজটা ওদিক থেকে আসছিলো না

- তাহলে কোনদিক থেকে আসছিলো?

- বাইরের ওই.... ওই দরজার দিক থেকে

- কি? ওই পেছনের ওই বন্ধ দরজাটার দিক থেকে? ওটার বাইরে থেকে?

- হ্যাগো...... আমি তো হাঁটতে হাঁটতে থেমে গেছিলাম। আমার তখন মনে হলো ওপাশের ওই অন্য বাড়িতে কেউ হয়তো জেগে আছে তাই রান্নাঘরের আলোটা জ্বেলেই বাথরুমে গেছিলাম। আর তখন শুনতে পাইনি। এই এখন আলো নিভিয়ে বিছানায় উঠতে গিয়ে শুনি আবার সেই হাসি... ওদিক থেকে।

আমি আবার কান খাড়া করে শুনলাম। এবারে আওয়াজটা আর আগের মতো নেই কিন্তু একেবারে থেমে যায়নি। হাসিটা থামলেও মাঝে মাঝে ওই টানার শব্দ আসছে। আমি আর কানে দিলাম না। নিশ্চই অন্য কোথাও থেকে আসছে ভেবে ছন্দাকে বোঝালাম। ও যদিও একটু কিন্তু কিন্তু করছিলো শেষে নিজেও অতটা পাত্তা না দিয়ে ছেলের পাশে শুয়ে পড়লো। আমিও শুয়ে পড়লাম। কেটে গেলো ঐরাত টুকু।

পরের দিন অফিস থেকে ফিরে টিভির সামনে বসে আমরা চা খাচ্ছি, ছেলে দাদুর সাথেই বসে কমিক্স পড়ছিলো। হটাৎ মা বললো - এই সুবু..... কালকে কি তোরা অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলি?

আমি তো অবাক, সাথে ছন্দাও। মা হটাৎ এই প্রশ্ন করলো কেন? ওই মাকে জিজ্ঞেস করলো - কই নাতো মা? যেমন রোজ শুই তেমনি তো শুয়ে পড়েছিলাম.....কেন মা? কি হয়েছ?

মা বললো - না বৌমা..... কাল রাতে আমি কেমন যেন একটা হাসির শব্দ পেয়েছিলাম। কেউ যেন হাসছিলো..... কোনো মেয়ে..... একবার ভাবলাম তুমি নাকি কিন্তু......

- কিন্তু কি মা?

হাসিটা.... মানে হাসিটা কেমন যেন..... মানে..... স্বাভাবিক না..... মানে.... একটু অন্যরকম

আমি এবারে বললাম মাকে - তুমি ঠিক কখন শুনেছ বলোতো?

- আমি কি ওতো ঘড়ি দেখেছি.... ওই তাও ধরনা তিনটের মতো হবে...... বারান্দার বাইরে থেকে হটাৎ শুনি হিহিহিহি হাসি..... আজব

এইবার আমি আর ছন্দা দুজনেই ঘাবড়ে গেলাম। প্রথমে ছন্দা আওয়াজটা শুনেছিলো বাথরুমে যেতে গিয়ে রান্নাঘরের সঙ্গে লাগোয়া ওই দরজার দিক থেকে, আর আমার মা শুনলো বারান্দার দিক থেকে....... আর দুটো...... সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে। একটা ঐদিকের কোনে তো আরেকটা সামনের দিকে। এ কিকরে হলো? আমি আর ছন্দা মুখ চাওয়া চাই করলাম।

বাবা বলল - তুমি ও ভুলভাল শুনেছ কিছু।

মা কটমট করে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো - ভুলভাল? মানে বললেই হলো ভুলভাল? আরে স্পষ্ট শুনলাম কেউ বারান্দার দিক থেকে হাসছে..... হ্যা মানে অতটা স্পষ্ট নয় কিন্তু ওটা যে ওদিক থেকেই তাতে সন্দেহ নেই, আর ইনি বলেন ভুলভাল। জানিস সুবু... তোর বাবাকেও একবার ডাকলাম.... সে তো এমন নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছেন যে উঠলোই না.... তোমার এই নাক ডাকার জ্বালাতেই তো ঘুমটা ভাঙলো। বাপরে বাপ উফফফ যেন রেলগাড়ি ছোটাচ্ছে......

বাবা আর মায়ের মিষ্টি ঝগড়াটা বেশ উপভোগ্য.... কিন্তু সেটা মোটেও আমরা উপভোগ করতে পারলাম না। একে অপরকে দেখছি। একটা অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসছিলো বার বার।

- হুমমম..... এই শুরু তাহলে? কি তাইতো?

সিগারেটের টান দিতে দিতে মাথা নাড়লো সুভাষ দা। তারপরে ধোয়া ছেড়ে আবার বলতে শুরু করলো -

- সেদিন ফেরার সময় একটু মাংস কিনে এনেছিলাম। ছেলেটা পছন্দ করে..... বৌয়ের হাতে প্যাকেটটা দিয়ে আমি ব্যাগটা সোফায় রেখে গেলাম হাত মুখ ধুয়ে বাথরুম। ফিরে এসে দেখি ব্যাগটা মাটিতে পড়ে গেছে..... যা বাবা.... ভালো করেই রেখেছিলাম... পড়ে গেল কিকরে? যাইহোক আবার তুলে ওখানে রেখে জামাটা খুলছি... আমার সামনে আবার ব্যাগটা পড়ে গেলো মাইরি!

- কি বলছো গো?

- হারে ভাই..... এবার তো আমি একদম দেখে সোফায় ঠেসে সাইড করে রেখেছিলাম আর হালকা ব্যাগ, একদিকে তো ভারীও হয়ে ছিলোনা যে বারবার একদিকে উল্টে যাবে। তখনই ছেলে এ ঘরে আসছিলো.... ওকে বললাম ওটা তুলে রাখতে। ও আবার ব্যাগটা তুলে একেবারে ধারে রেখে মায়ের কাছে চলে গেলো। আমি ভাবলাম আবার... আবার পড়লো রে। কিন্তু আজব ব্যাপার.... আর পড়লোনা... ওতো ধারে থাকা সত্ত্বেও না... কিন্তু তখন কিকরে? সে যাইহোক.. আমি আর ওতো পাত্তা না দিয়ে বাবার ঘরে গেলাম। তাকে আবার একটা স্মার্টফোন কিনে দিয়েছি সে তাতে খবর দেখছে আর মা আমার বৌয়ের সাথে মিলে মাংস রাঁধতে ব্যাস্ত। আমি বাবার সাথে বসে গল্প করছি, একটু পরেই ছেলে এসে বললো ঠাম্মি ডাকছে আমায়. গেলাম রান্নাঘরে। যেতেই মা যেটা বললো সেটা.... সেটা..... আজব 

- কি... কি বললো কাকিমা?

- যেতেই মা আমায় বললো তুই কি একটু আগে দরজার আড়ালে লুকিয়ে বিট্টুর সাথে খেলছিলি নাকি?

আমি তো আকাশ থেকে পরলুম। মা কি সব বলছে?

আমি - মানে?

- তুই ছিলিনা?

- আমি তো বাবার ঘরে ছিলাম

- ওমা.... আমি যে দেখলাম মনে হলো কেউ দরজার ধারে দাঁড়িয়ে... দরজার সাথে একদম লেগে দাঁড়িয়ে কিন্তু বোঝা যাচ্ছিলো কেউ দাঁড়িয়ে।

- সে হয়তো তোমার নাতি বল নিয়ে খেলছিল

- ধ্যাৎ..... ওর হাইট কত? আমি তো যাকে দেখলাম সে লম্বা মতো...হুমম তোর মতোই...

- মা তুমি চশমা না পরেই কাজ করছো তাইতো?

- হ্যা তো কি? আমি কি অতটা অসহায় নাকি যে ওটা ছাড়া একেবারে অন্ধ? এইতো তোকে ভালোই দেখতে পাচ্ছি..... ওরে আমি দেখলাম তো কেউ...

আমি মাকে থামিয়ে ছন্দাকে জিজ্ঞেস করলাম - তুমি কিছু দেখেছো?

- আমি তো পেঁয়াজ কাটছিলাম... মা বললো ওই দেখো তুমি নাকি দাঁড়িয়ে আছো...আমি অবশ্য তাকালাম কিন্তু কই কিচ্ছু পাইনি দেখতে

- দেখলে মা... তোমার পাশে দাঁড়িয়ে তোমার বৌমা পর্যন্ত কিছু দেখেনি

- ততক্ষনে সরে গেছিলি হয়তো....

- আরে এতো আজব ঝামেলা.... বলছি বাবার ঘরে ছিলাম

- ওমা..... তাহলে? এতটা ভুল দেখলাম?

আমি মায়ের কথায় হয়তো সেইভাবে পাত্তা দিতাম না কিন্তু মা এতবার করে বলছিলো... আর মাকে দেখে মনেও হচ্ছিলো মা কিছু একটা দেখেছে.... তাই আমি ঘর থেকে টর্চ এনে সবকটা ঘর ভালো করে চেক করলাম বিশেষ করে খাটের নিচে... যদি কোনো চোর টোর হয়। কিন্তু কই? ধুর কিস্সু নেই। শেষে মাকে সব বললাম। মা হয়তো ওই দরজার ওই সাদা পর্দা দেখে ভেবেছিলো আমি দাঁড়িয়ে। যাইহোক রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার মতন ঘুমোতে চলে আসলাম।

ও..... ভুলেই গেছিলাম.. এরমধ্যে আরেকটা ব্যাপার হয়েছিল। আমার ছেলে আবার মাংস হবার পর বায়না করেছিল একটু টেস্ট করবে তাই ওর মা একটা পিস ওকে খেতে দিয়েছিলো। খাওয়া হয়ে গেলে ও সেই বাটি রান্না ঘরে রেখে লাইট নিভিয়ে ফিরে আসার সময় নাকি রান্নাঘর থেকে টং করে একটা আওয়াজ পায়.. ওটা ও পরে আমায় বলে.....যেন বাটিতে কিছু ঠোকা লাগলো। ও আর অবশ্য দেখতে যায়নি। রাতে যখন খাবার সময় মা আর ছন্দা রান্নাঘরে যায় তখন দেখে ছেলের বাটিটা সামনেই রাখা। কিন্তু তাতে কোনো ঝোল টোল কিস্সু লেগে নেই...বিট্টু নাকি একেবারে চেটেপুটে খেয়েছে। এতো ভালো হয়েছিল নাকি রান্না। কিন্তু বিট্টুর সেটা শুনে একবার ভুরু কুঁচকে গেছিলো তারপরে আবার নরমাল হয়ে গেছিলো সেটা আমি লক্ষ করেছিলাম। 

এবারে আসি রাতের ঘটনায়। সেদিন একটা ফিল্ম দেখছিলাম ফোনে তাই কানে হেডফোন লাগানো ছিল। বেশ ভালো লাগছিলো বইটা তাই আর বন্ধ করতে ইচ্ছা করছিলোনা। শেষ হতেই ফোন রেখে কান থেকে হেডফোন সরাতেই একটা আওয়াজ কানে এলো। কটমট করমর জাতীয় ... যেন কেউ শক্ত কিছু চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। এ আওয়াজ তো আমার... শুধু আমার কেন সবার জানা। মাংসর হাড় চেবালে এমন আওয়াজ আসে।
[+] 2 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক গল্প সংকলন (চলছে) - by Sanjay Sen - 09-08-2023, 11:09 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)