08-08-2023, 03:18 PM
ষণ্ণবতি অধ্যায়
সুখর শেষ পিরিয়ডে ক্লাস নেই।ক্লাসের পর চোখে মুখে জল দিয়ে অধ্যক্ষের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।স্যারকে জানানো দরকার মনে হল।দরজা দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে বলল,আসতে পারি স্যার?
হ্যা আসুন আসুন।বসুন মি বোস।কেমন লাগছে আমাদের কলেজ?
সামনের চেয়ারে বসে হেসে বলল,ভালোই লাগছে। স্যার যেকথা বলতে এসেছিলাম, আমার ফ্যামিলি কাল-পরশু এসে যাবে।আমি হোস্টেল ছেড়ে দেবো।
হ্যা খুব ভাল কথা।হোস্টেল ছাত্রদের জন্য প্রয়োজনে এক-আধজনকে বাধ্য হয়ে রাখতে হয়।আপনার বাড়ী তো রঙ হয়ে গেছে ইলেক্ট্রিকের কাজও শেষ।আপনি গেছিলেন ওদিকে?
আজ একবার যাব ভাবছি।স্যার বাকী টাকাটা আমি কাল-পরশু দিয়ে দেবো।
ঠিক আছে।দেখুন মি বোস সুপ্তিরা টাকার জন্য বাড়ি ভাড়া দিচ্ছে না আপনাকে আগেও বলেছি। নিয়মিত ঝাড়পোছ হবে মূলত মেন্টেন্যান্সের জন্য ভাড়া দেওয়া--।
হ্যা স্যার আমরা যত্ন নিয়ে ব্যবহার করবো।
শুনুন মি বোস টাকা আমাকে দিতে হবে না।প্রিন্সিপাল মশায় একটা কাগজে কি লিখে এগিয়ে দিয়ে বললেন,এখানে জমা করে দেবেন।
সুখ কাগজটা নিয়ে দেখল লেখা সুপ্তি মজুমদার এসবিআই পার্ক এভেনিউ ইউএসএ,এ্যাকাউণ্ট নম্বর।কাগজটা ভাজ করে পকেটে রেখে দিল। কিভাবে টাকা জমা করতে সুখ জানে না প্রিন্সিপাল মশায়কে সেকথা বলে না।পাঞ্চালী নিশ্চয়ই এসব জানবে।
প্রিন্সিপাল সাহেব উদাস গলায় বলতে থাকেন,সুপ্তির বাবা দীনেশ আমার বিশেষ বন্ধু ছিল।যখন বেচে ছিল প্রায়ই আমি কলতানে গিয়ে আড্ডা দিতাম।
হঠাৎ না বলেকয়ে চলে যাবে ভাবতেও পারিনি।অনেক যত্ন নিয়ে বানিয়েছিল কলতান।পিছনে ছোট্ট বাগান পাখিদের কলতান শোনা যেতো ঘরে বসে।সুপ্তি অবশ্য পড়াশুনা করেছে দার্জিলিং কনভেণ্টে।একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল প্রিন্সিপালের গলায়।
ছুটির ঘণ্টা বাজলো,ছেলে মেয়েদের শোরগোল শোনা গেল।প্রিন্সিপাল সাহেব বললেন,কোনো অসুবিধে হলে বলবেন।
সুখ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আমি তাহলে আসি স্যার?
যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,স্যার একটা কথা।
প্রিন্সিপাল চোখ তুলে তাকালেন।
গ্যারেজ ঘরটা যদি চেম্বার হসেবে ব্যবহার করি আপত্তি নেইতো?
ভ্রু কুচকে প্রিন্সিপাল বললেন,সাবলেট করবেন?
না না মানে আমার স্ত্রী ডাক্তার ওই বসবে।
ডাক্তার এতো খুবই ভালো কথা অবশ্যই বসবে।পাড়ার লোকে উপকৃত হবে।
আসি স্যার?
কলেজ ছুটি হয়ে গেছে।অধ্যাপকরা বেরোবার জন্য তৈরী হচ্ছেন। সুখ বেরিয়ে গেট অবধি এসে ইতস্তত করে।পাঞ্চালীর এই একটা দোষ বলা ঠিক হবেনা বরং বলা যায় স্টাইল।সব কিছু আগে খুলে বলবে না।আসবাব পত্র বিছানা কিছুই নেই ফাকা বাড়ি।অব্যবহৃত পড়ে ছিল অনেককাল।হঠাৎ সন্ধান পেয়ে গেল।অনেক শখ করে বানিয়েছিলেন বাড়ীটা স্বামী স্ত্রী থাকতেন একমাত্র মেয়ে এ্যামেরিকায় থাকে।ভদ্রমহিলা বিধবা হবার কিছুকাল পর মেয়ে মাকে নিজের কাছে নিয়ে যায় সেই থেকে ফাকা পড়ে আছে বাড়ীটা। খালি মেঝেতে শোওয়া যায়। আসবে তো কাল সকালে রাতে ওখানে থাকার কি দরকার।হোস্টেলে ছিল না কোথায় ছিল পাঞ্চালী জানবে কিভাবে একবার ভাবলো।পরক্ষণে মনে হল এটা প্রতারণা পাঞ্চালীর সঙ্গে এমন করতে মন সায় দিল না।যাক একটা তো মোটে রাত।পার্কে শুয়েও রাত কাটাতে হয়েছে তাকে।
কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে,কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?
সুখ ফিরে দেখল এসবি বলল,না না কার জন্য অপেক্ষা করবো।
হোস্টেলে গিয়ে কি করবেন?
কি আর পোশাক বদলে একটু হাটতে বেরবো।
হাটতে হাটতে আসুন না একদিন আমার ওখানে।
হ্যা একদিন দাদার সঙ্গে আলাপ হবে।
আর দাদা! দাদার ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।আপনার ওয়াইফ কি এখানে প্রাকটিস করবেন?
ডাক্তার যখন চুপচাপ বসে থাকবেনা।ওর বাবাও নামকরা ডাক্তার দেবাঞ্জন মিত্র--।
হ্যা নাম শুনেছি কিছুদিন আগে মারা গেলেন কাগজ বেরিয়েছিল।ওয়াইফ ড মিত্রের মেয়ে?
ওর ভাইও ডাক্তার অবশ্য বিদেশে থাকে।
অমলবাবুকে আসতে দেখে সীমন্তিনী বললেন,ঐ আসছে,আমি যাই। আপনার সঙ্গে কথা বলছি দেখে আপনাকে-আমাকে জড়িয়ে গল্প তৈরী করবে।সীমন্তিনী চলে গেলেন।রাস্তায় নেমে রিক্সায় চেপে বসলেন সীমন্তিনী।ম্যারেড জানলে অমলবাবুর কথাটা বলতেন না।অবশ্য বললেই বা কি হয়েছে বানিয়ে তো বলে নি।লোকটার খুব ছোকছোকানি।এসবি কি মনে করেছে কে জানে।ছেলেটাকে বেশ অন্যরকম মনে হয়।এক্টু চাপা স্বভাবের নিজের কথা বলতে সঙ্কোচ।যদি বাসায় আসে সঙ্কোচ কাটিয়ে দেবেন।
সুখ হোস্টেলে ফিরে পোশাক বদলায়।'কলতান' বাড়ীর নামটা অদ্ভুত।পাঞ্চালী শুনে জিজ্ঞেস করেছিল,ওখানে গোলমাল হয় নাকি?সুখ হোস্টেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল।হোস্টেলে ছেলেদের জন্য রান্না হয়।বললে হয়তো এক থালা ভাত তাকেও দিত কিন্তু সুখ বাইরে খায়।স্যার বললেন রঙ হয়ে গেছে সুখ উত্তরায়নের দিকে হাটতে থাকে।গাড়ীর চেয়ে এই রাস্তায় রিক্সার চলাচল বেশী।ধীরে ধীরে আলো কমে আসে।সুখ মনে মনে স্থির করে আজ আর হোস্টেলে ফিরবে না তাড়াতাড়ি কোনো হোটেলে খেয়ে কলতানে ঢুকে পড়বে।নতুন রঙ হয়েছে মনে হয়না মশার খুব উপদ্রব হবে।
সারাদিন না খেয়েছিল।মোমোর কথা মনে পড়ল।কলেজে বেরোবার আগে তাকে খাইয়ে বের হতো।একা একা কি করছে কে জানে।চোখ ঝাপসা হয়ে এল।তালুর পিছন দিয়ে চোখ মুছে এদিক ওদিক তাকালো।মোমোকে একা রেখে কলেজের চাকরিটা করবে না ভেবেছিল।মোমোর জোরাজুরিতে সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়।মোমোর জন্যই তাকে বিয়ে করতে হল।নিজের চেয়েও তার চিন্তা মনুর জন্য।মনুর নাড়ি নক্ষত্র মোমো জানে।পাঞ্চালী কিছুই জানে না সেজন্য তার মনে সারাক্ষন এক অপরাধ বোধ তাকে তাড়িয়ে ফিরছে।পাঞ্চালী আসবে শোনার পোর থেকেই একটা অস্বস্তি বহন করছে।আবার পাঞ্চালীর মূখোমুখী হতে হবে।কলতানের কাছাকাছি এসে পড়েছে।নজরে পড়ে সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা ট্রাক।ট্রাকের উপর দুটী ছায়ামূর্তি বিড়ি টানছে।সুখর বিরক্তিতে কুচকে যায়।একেবারে কলতানের সামনে ঐটা কি পার্কিং করার জায়গা?সুখ দ্রুত হাটতে থাকে।
রাস্তায় আলো জ্বলে উঠেছে। গোপাল্পুর থেকে চলে আসার পর মোমোর আশ্রয়ে বেশ নিশ্চিন্তে কাটছিল।যেন ছিন্নমূল নরম মাটী খুজে পেয়েছে।মোমোর মমতা মাখানো চোখদুটো চোখের উপর ভেসে ওঠে। এখানে আসার পর একবারও ফোন করেনি।সেও চেষ্টা করে মোমোর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।বলছে নম্বর চেক করতে। নর্থ বেঙ্গল থেকে কলকাতায় ফোন করা যায়না নাকি?কলকাতায় গিয়ে কড়া করে ওকে বলতে হবে,আমাকে পাঠিয়ে দিয়ে দিব্যি আছো?
আচমকা একজন বয়স্ক লোক সামনে এসে তাকে গভীরভাবে লক্ষ্য করেন।ভদ্রলোককে কোথায় যেন দেখেছে মনে হল বলল,কিছু বলবেন?
তুমি মানে আপনি মাস্টারমশায়ের ছেলে না?
হ্যা মনে পড়েছে সুখ বলল,আপনি পানুবাবু গোপাল নগরে থাকতেন?
ডাক্তারদিদি মালপত্তর পাঠিয়েছেন।পান্নাবাবু লরি দেখিয়ে বললেন।
পাঞ্চালী কেন কলতানে থাকতে বলেছিল এবার পরিষ্কার হয়ে গেল।সুখ কলতানের দরজা খুলেদিতে ওরা একে একে মালপত্তর নামাতে থাকে।সুখর কথা মতো কোনটা কোথায় থাকবে সেইভাবে রাখতে থাকে।সুখর মাথায় এখন অন্য চিন্তা।
আচ্ছা আপনারা কখন বেরিয়েছেন?
এই ভোরবেলা বেরিয়েছি।ওরা আজ সন্ধ্যের ট্রেনে উঠবে--।
খাওয়া-দাওয়া?
পথে হোটেলে খেয়ে নিয়েছি।
রাতে তো খাওয়ার ব্যবস্থা কোরতে হয়।তার পকেটের যা অবস্থা কিভাবে কিকরবে বুঝতে পারেনা।ওর কাছে হয়তো টাকা আছে তবু ভদ্রতার খাতিরে তো তার বলা উচিত।মাল পত্তর সব সাজিয়ে রেখেছে।ঐ লোকগুলোর সঙ্গে পান্নাবাবু বেরিয়ে গেলেন।সুখ ঠিক করল যা টাকা আছে একজনের কোনো মতে হয়ে যাবে।আজ রাতটা সে উপোস করে কাটিয়ে দেবে।কিছুক্ষন পর পান্নাবাবু ফিরে এসে এক গোছা টাকা হাতে দিয়ে বললেন,এই টাকা বেচেছে।
সুখ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, রাত হয়েছে চলুন আমরা খেয়ে আসি।
সুখর শেষ পিরিয়ডে ক্লাস নেই।ক্লাসের পর চোখে মুখে জল দিয়ে অধ্যক্ষের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।স্যারকে জানানো দরকার মনে হল।দরজা দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে বলল,আসতে পারি স্যার?
হ্যা আসুন আসুন।বসুন মি বোস।কেমন লাগছে আমাদের কলেজ?
সামনের চেয়ারে বসে হেসে বলল,ভালোই লাগছে। স্যার যেকথা বলতে এসেছিলাম, আমার ফ্যামিলি কাল-পরশু এসে যাবে।আমি হোস্টেল ছেড়ে দেবো।
হ্যা খুব ভাল কথা।হোস্টেল ছাত্রদের জন্য প্রয়োজনে এক-আধজনকে বাধ্য হয়ে রাখতে হয়।আপনার বাড়ী তো রঙ হয়ে গেছে ইলেক্ট্রিকের কাজও শেষ।আপনি গেছিলেন ওদিকে?
আজ একবার যাব ভাবছি।স্যার বাকী টাকাটা আমি কাল-পরশু দিয়ে দেবো।
ঠিক আছে।দেখুন মি বোস সুপ্তিরা টাকার জন্য বাড়ি ভাড়া দিচ্ছে না আপনাকে আগেও বলেছি। নিয়মিত ঝাড়পোছ হবে মূলত মেন্টেন্যান্সের জন্য ভাড়া দেওয়া--।
হ্যা স্যার আমরা যত্ন নিয়ে ব্যবহার করবো।
শুনুন মি বোস টাকা আমাকে দিতে হবে না।প্রিন্সিপাল মশায় একটা কাগজে কি লিখে এগিয়ে দিয়ে বললেন,এখানে জমা করে দেবেন।
সুখ কাগজটা নিয়ে দেখল লেখা সুপ্তি মজুমদার এসবিআই পার্ক এভেনিউ ইউএসএ,এ্যাকাউণ্ট নম্বর।কাগজটা ভাজ করে পকেটে রেখে দিল। কিভাবে টাকা জমা করতে সুখ জানে না প্রিন্সিপাল মশায়কে সেকথা বলে না।পাঞ্চালী নিশ্চয়ই এসব জানবে।
প্রিন্সিপাল সাহেব উদাস গলায় বলতে থাকেন,সুপ্তির বাবা দীনেশ আমার বিশেষ বন্ধু ছিল।যখন বেচে ছিল প্রায়ই আমি কলতানে গিয়ে আড্ডা দিতাম।
হঠাৎ না বলেকয়ে চলে যাবে ভাবতেও পারিনি।অনেক যত্ন নিয়ে বানিয়েছিল কলতান।পিছনে ছোট্ট বাগান পাখিদের কলতান শোনা যেতো ঘরে বসে।সুপ্তি অবশ্য পড়াশুনা করেছে দার্জিলিং কনভেণ্টে।একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল প্রিন্সিপালের গলায়।
ছুটির ঘণ্টা বাজলো,ছেলে মেয়েদের শোরগোল শোনা গেল।প্রিন্সিপাল সাহেব বললেন,কোনো অসুবিধে হলে বলবেন।
সুখ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আমি তাহলে আসি স্যার?
যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,স্যার একটা কথা।
প্রিন্সিপাল চোখ তুলে তাকালেন।
গ্যারেজ ঘরটা যদি চেম্বার হসেবে ব্যবহার করি আপত্তি নেইতো?
ভ্রু কুচকে প্রিন্সিপাল বললেন,সাবলেট করবেন?
না না মানে আমার স্ত্রী ডাক্তার ওই বসবে।
ডাক্তার এতো খুবই ভালো কথা অবশ্যই বসবে।পাড়ার লোকে উপকৃত হবে।
আসি স্যার?
কলেজ ছুটি হয়ে গেছে।অধ্যাপকরা বেরোবার জন্য তৈরী হচ্ছেন। সুখ বেরিয়ে গেট অবধি এসে ইতস্তত করে।পাঞ্চালীর এই একটা দোষ বলা ঠিক হবেনা বরং বলা যায় স্টাইল।সব কিছু আগে খুলে বলবে না।আসবাব পত্র বিছানা কিছুই নেই ফাকা বাড়ি।অব্যবহৃত পড়ে ছিল অনেককাল।হঠাৎ সন্ধান পেয়ে গেল।অনেক শখ করে বানিয়েছিলেন বাড়ীটা স্বামী স্ত্রী থাকতেন একমাত্র মেয়ে এ্যামেরিকায় থাকে।ভদ্রমহিলা বিধবা হবার কিছুকাল পর মেয়ে মাকে নিজের কাছে নিয়ে যায় সেই থেকে ফাকা পড়ে আছে বাড়ীটা। খালি মেঝেতে শোওয়া যায়। আসবে তো কাল সকালে রাতে ওখানে থাকার কি দরকার।হোস্টেলে ছিল না কোথায় ছিল পাঞ্চালী জানবে কিভাবে একবার ভাবলো।পরক্ষণে মনে হল এটা প্রতারণা পাঞ্চালীর সঙ্গে এমন করতে মন সায় দিল না।যাক একটা তো মোটে রাত।পার্কে শুয়েও রাত কাটাতে হয়েছে তাকে।
কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে,কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?
সুখ ফিরে দেখল এসবি বলল,না না কার জন্য অপেক্ষা করবো।
হোস্টেলে গিয়ে কি করবেন?
কি আর পোশাক বদলে একটু হাটতে বেরবো।
হাটতে হাটতে আসুন না একদিন আমার ওখানে।
হ্যা একদিন দাদার সঙ্গে আলাপ হবে।
আর দাদা! দাদার ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।আপনার ওয়াইফ কি এখানে প্রাকটিস করবেন?
ডাক্তার যখন চুপচাপ বসে থাকবেনা।ওর বাবাও নামকরা ডাক্তার দেবাঞ্জন মিত্র--।
হ্যা নাম শুনেছি কিছুদিন আগে মারা গেলেন কাগজ বেরিয়েছিল।ওয়াইফ ড মিত্রের মেয়ে?
ওর ভাইও ডাক্তার অবশ্য বিদেশে থাকে।
অমলবাবুকে আসতে দেখে সীমন্তিনী বললেন,ঐ আসছে,আমি যাই। আপনার সঙ্গে কথা বলছি দেখে আপনাকে-আমাকে জড়িয়ে গল্প তৈরী করবে।সীমন্তিনী চলে গেলেন।রাস্তায় নেমে রিক্সায় চেপে বসলেন সীমন্তিনী।ম্যারেড জানলে অমলবাবুর কথাটা বলতেন না।অবশ্য বললেই বা কি হয়েছে বানিয়ে তো বলে নি।লোকটার খুব ছোকছোকানি।এসবি কি মনে করেছে কে জানে।ছেলেটাকে বেশ অন্যরকম মনে হয়।এক্টু চাপা স্বভাবের নিজের কথা বলতে সঙ্কোচ।যদি বাসায় আসে সঙ্কোচ কাটিয়ে দেবেন।
সুখ হোস্টেলে ফিরে পোশাক বদলায়।'কলতান' বাড়ীর নামটা অদ্ভুত।পাঞ্চালী শুনে জিজ্ঞেস করেছিল,ওখানে গোলমাল হয় নাকি?সুখ হোস্টেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল।হোস্টেলে ছেলেদের জন্য রান্না হয়।বললে হয়তো এক থালা ভাত তাকেও দিত কিন্তু সুখ বাইরে খায়।স্যার বললেন রঙ হয়ে গেছে সুখ উত্তরায়নের দিকে হাটতে থাকে।গাড়ীর চেয়ে এই রাস্তায় রিক্সার চলাচল বেশী।ধীরে ধীরে আলো কমে আসে।সুখ মনে মনে স্থির করে আজ আর হোস্টেলে ফিরবে না তাড়াতাড়ি কোনো হোটেলে খেয়ে কলতানে ঢুকে পড়বে।নতুন রঙ হয়েছে মনে হয়না মশার খুব উপদ্রব হবে।
সারাদিন না খেয়েছিল।মোমোর কথা মনে পড়ল।কলেজে বেরোবার আগে তাকে খাইয়ে বের হতো।একা একা কি করছে কে জানে।চোখ ঝাপসা হয়ে এল।তালুর পিছন দিয়ে চোখ মুছে এদিক ওদিক তাকালো।মোমোকে একা রেখে কলেজের চাকরিটা করবে না ভেবেছিল।মোমোর জোরাজুরিতে সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়।মোমোর জন্যই তাকে বিয়ে করতে হল।নিজের চেয়েও তার চিন্তা মনুর জন্য।মনুর নাড়ি নক্ষত্র মোমো জানে।পাঞ্চালী কিছুই জানে না সেজন্য তার মনে সারাক্ষন এক অপরাধ বোধ তাকে তাড়িয়ে ফিরছে।পাঞ্চালী আসবে শোনার পোর থেকেই একটা অস্বস্তি বহন করছে।আবার পাঞ্চালীর মূখোমুখী হতে হবে।কলতানের কাছাকাছি এসে পড়েছে।নজরে পড়ে সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা ট্রাক।ট্রাকের উপর দুটী ছায়ামূর্তি বিড়ি টানছে।সুখর বিরক্তিতে কুচকে যায়।একেবারে কলতানের সামনে ঐটা কি পার্কিং করার জায়গা?সুখ দ্রুত হাটতে থাকে।
রাস্তায় আলো জ্বলে উঠেছে। গোপাল্পুর থেকে চলে আসার পর মোমোর আশ্রয়ে বেশ নিশ্চিন্তে কাটছিল।যেন ছিন্নমূল নরম মাটী খুজে পেয়েছে।মোমোর মমতা মাখানো চোখদুটো চোখের উপর ভেসে ওঠে। এখানে আসার পর একবারও ফোন করেনি।সেও চেষ্টা করে মোমোর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।বলছে নম্বর চেক করতে। নর্থ বেঙ্গল থেকে কলকাতায় ফোন করা যায়না নাকি?কলকাতায় গিয়ে কড়া করে ওকে বলতে হবে,আমাকে পাঠিয়ে দিয়ে দিব্যি আছো?
আচমকা একজন বয়স্ক লোক সামনে এসে তাকে গভীরভাবে লক্ষ্য করেন।ভদ্রলোককে কোথায় যেন দেখেছে মনে হল বলল,কিছু বলবেন?
তুমি মানে আপনি মাস্টারমশায়ের ছেলে না?
হ্যা মনে পড়েছে সুখ বলল,আপনি পানুবাবু গোপাল নগরে থাকতেন?
ডাক্তারদিদি মালপত্তর পাঠিয়েছেন।পান্নাবাবু লরি দেখিয়ে বললেন।
পাঞ্চালী কেন কলতানে থাকতে বলেছিল এবার পরিষ্কার হয়ে গেল।সুখ কলতানের দরজা খুলেদিতে ওরা একে একে মালপত্তর নামাতে থাকে।সুখর কথা মতো কোনটা কোথায় থাকবে সেইভাবে রাখতে থাকে।সুখর মাথায় এখন অন্য চিন্তা।
আচ্ছা আপনারা কখন বেরিয়েছেন?
এই ভোরবেলা বেরিয়েছি।ওরা আজ সন্ধ্যের ট্রেনে উঠবে--।
খাওয়া-দাওয়া?
পথে হোটেলে খেয়ে নিয়েছি।
রাতে তো খাওয়ার ব্যবস্থা কোরতে হয়।তার পকেটের যা অবস্থা কিভাবে কিকরবে বুঝতে পারেনা।ওর কাছে হয়তো টাকা আছে তবু ভদ্রতার খাতিরে তো তার বলা উচিত।মাল পত্তর সব সাজিয়ে রেখেছে।ঐ লোকগুলোর সঙ্গে পান্নাবাবু বেরিয়ে গেলেন।সুখ ঠিক করল যা টাকা আছে একজনের কোনো মতে হয়ে যাবে।আজ রাতটা সে উপোস করে কাটিয়ে দেবে।কিছুক্ষন পর পান্নাবাবু ফিরে এসে এক গোছা টাকা হাতে দিয়ে বললেন,এই টাকা বেচেছে।
সুখ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, রাত হয়েছে চলুন আমরা খেয়ে আসি।