Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
#17
[Image: Polish-20230808-104722004.jpg]

|| জীবন বীমা ||

কলমে:-  রুমা পঞ্চাধ্যায়ী

  বাসের একেবারে পিছনের সিটে বসে কানে হেডফোন গুঁজে একমনে গান শুনে যাচ্ছে উজান। বেসরকারি চাকরির মাইনেটা যেমন বেশি, খাটনিও অনেক। তাই বাড়ি ফেরার সময় নিজের পছন্দের গান শুনে মাথাটা হালকা করে নেয় উজান। বাসে লোক বলতে তিন কি চারজন। বাইরে শ্রাবণের ধারা বয়ে চলেছে। এতক্ষণ চোখ বুজে বসেছিল ও, এবার চোখটা খুলতেই অবাক হল। এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি একগাল হাসি নিয়ে ওর মুখের দিকেই চেয়ে রয়েছে। কান থেকে হেডফোনটা খুলে উজান লোকটিকে বলল, "কিছু বলবেন কাকাবাবু?"

লোকটি একেবারে আপ্লুত হয়ে ওর পাশেই ধপাস করে  বসে পড়ল। "হ্যা! বলব তো! অনেক কথা আছে! আসলে আমি অনেকক্ষন ধরে লক্ষ্য করছিলাম তুমি কেমন চুপটি করে বসে আছ, শরীর টরির খারাপ নাকি?"

"কৈ না তো? আসলে আমি তো আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না!"

"আরে! চিনবে কি করে? আমিও তো তোমাকে চিনিনা! তাতে কি হয়েছে? চেনা না হলে কি কথা বলতে নেই?"

"না না! তা কেন! আমি সেটা বলতে চাইনি!"

"কতটুকু জীবন আমাদের! এরমধ্যে যতটা পারি লোকের সাথে নিজের পরিচয় বাড়াই! চলে তো যাবই একদিন, তাও কিছু লোকের তো মনে থেকে যাবে। কি তাই না? আমি নেতাই সামন্ত! তোমার নাম কি বাবা?"
"নমস্কার! আমি উজান মিত্র!"

"তা কলেজ থেকে ফেরা হচ্ছে নাকি!"

"আজ্ঞে না! অফিস থেকে!"

"অফিস? বাঃ বাঃ! তোমায় তো আমি কলেজের ছাত্র ভেবেছিলাম হে!"

একটু লাজুক হেসে উজান হেডফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল। আজ আর গান শোনা হবে না। এই দেখে লোকটা যেন আরো আনন্দ পেল। আবার অদ্ভুতভাবে হেসে বলে উঠল, "গান শুনছিলে নাকি?"

"হ্যাঁ! অফিস থেকে ফেরার পথে রোজ গান শুনি। সময়টা কেটে যায়।"

"বাঃ! তা ভালো! তোমার বাড়িতে কে কে আছে?"
"বাবা, মা আর আমি।"

"বিয়ে হয়নি?"

এবার অদ্ভুতভাবে লোকটার দিকে তাকালো উজান। ঘটক নাকি? মুখে বলল, "আজ্ঞে না!"

"শোনো! বাসে ট্রামে যাতায়াত করো, জীবনের ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই তোমার কিছু হয়ে গেলে তোমার বাবা মায়ের কি হবে, সেটা ভেবেছো? তাই বলছি আজই একটা জীবন বীমা করে নাও। দেখবে তুমি চলে গেলেও তোমার বুড়ো বাবা মায়ের কোনোদিন ভাতের অভাব হবে না।"

"কথাটা আপনি মন্দ বলেননি। তবে এখন আর বীমা করে লাভ নেই। দুমাস আগে যদি আপনার সাথে দেখা হত, খুব ভালো হত জানেন!"

"মানে? ঠিক বুঝলাম না বাবা!"

"দুমাস আগে এই বাসটায় করে অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। বাসে আমি ড্রাইভার এর কন্ডাক্টর ছাড়া আর কেউই ছিল না। হঠাৎ কোথা থেকে একটা লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এসে এই বাসটায় ধাক্কা মারে। বাসচালক কোনোভাবে বুঝতে পেরে আগেই চম্পট দেয়। কিন্তু আমি আর কন্ডাক্টর দাদা প্রাণ হারাই!"

উজানের কথা শেষ হতেই নেতাই সামন্ত উচ্চস্বরে হেসে ওঠেন, যেন কত না মজার কথা তিনি শুনেছেন। হাসতে হাসতে নিজের চশমা খুলে চোখ মুছে সবেমাত্র কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ দেখলেন, ওনার পাশের সিটটা এখন ফাঁকা, উজান নেই সেখানে।একটু আগে যেই বাসে উনি বসেছিলেন মুহূর্তে তার চেহারা পাল্টে একটা ভগ্নস্তুপের রূপ নিয়েছে। একটু আগেই যেখানে ঝা চকচকে সিট ছিল, চারিদিকে আলো জ্বলছিল, এসি চলছিল সেই বাস এখন ভাঙাচোরা কঙ্কালসম পড়ে আছে!

নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন নেতাই সামন্ত। বাইরের দিকে বেরোতেই যাবেন হঠাৎ একটা অট্টহাসি ওনার বুক কাপিয়ে দিল। ওনার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে কেউ হাসছে! গলার কাছে যেন আটকে রয়েছে প্রাণটা। একটা ঢোক গিলে পিছনে ফিরতেই ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড় হলো নেতাইয়ের। ওনার সামনে এখন যে উজান দাড়িয়ে আছে তার চেহারা আর সৌম্য নয়, বিভৎস। মাথার একপাশ থেতলে গেছে, কাধের হাড়টা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে এসেছে, গায়ে পড়ে থাকা সাদা জামাটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে! ওর ঠিক পাশেই দাড়িয়ে আছে আরেকটি বছর ষোলো কি সতেরোর ছেলে, খুব মায়া ভরা চেহারা। তারও ঘাড়টা মটকে একপাশে কাত হয়ে রয়েছে, পা টা ভেঙে উল্টে গেছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। কি বিভৎস সেই রূপ। ভয় আর করুণা মিশে অদ্ভুত একটা অনুভুতি হল নেতাই সামন্তর। গা গুলিয়ে বমি আসল ওনার। টলমলে পায় কোনোমতে বাসের বাইরে বেড়িয়ে এসেই জ্ঞান হারালেন নেতাই সামন্ত।

জ্ঞান ফিরতে নিজেকে ব্যাস টার্মিনালের ভিতরে একটা বেঞ্চের উপর উদ্ধার করলেন নেতাই। আশেপাশে ভিড় জমেছে। তার মধ্যে থেকেই একটা অল্পবয়সী ছেলে বলে উঠল, "কি কাকা! ভূত দেখে ভিমড়ি খেয়েছ নাকি?"

নেতাই তার কোনো উত্তর করলেন না। শুধু ঈশ্বরের এই অদ্ভুত নিয়তির খেলার এক নির্বাক দর্শক হয়ে রয়ে গেলেন।

|| সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 6 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক গল্প সংকলন (চলছে) - by Sanjay Sen - 08-08-2023, 10:56 AM



Users browsing this thread: