04-08-2023, 03:06 PM
|| কিসের এতো ভয় ||
লেখনীতে: সমন্বয় সেনগুপ্ত ও দেবসীমা সেনগুপ্ত
(গল্পটি সম্পূর্ণভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য)
"ট্যাক্সি" সোনিয়ার চিৎকার শুনে অবশেষে একটি ট্যাক্সি দাঁড়ায়, যাক এই ঝড়বৃষ্টির রাতে একটা ট্যাক্সি পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হয় সোনিয়া। সেই বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, প্রায় ৩ ঘন্টার ওপর মুশলধারে বৃষ্টি হয়েই চলেছে তবু থামার কোনো নামগন্ধ নেই। বেরোনোর সময়ে একবার মোবাইলে সোনিয়া দেখেছে যে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে জল জমে যাওয়ার জন্য, কি ভাবে সে বাড়ি ফিরবে সেটা নিয়ে চিন্তিত ছিলো কিন্তু এখন ট্যাক্সি পেয়ে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেলো, হয়তো অনেক টাকা চেয়ে বসবে ট্যাক্সি ড্রাইভার কিন্তু তাতে কোনো অসুবিধা নেই। সোনিয়া দৌড়ে ট্যাক্সির কাছে আসতেই দেখে অন্য দিক থেকে আরেকজন লোক ট্যাক্সির ড্রাইভারের সাথে কথা বলছে, এটা দেখে সোনিয়া একটু বিরক্ত হয় কারন এক তো ট্যাক্সিটা সে থামিয়েছে আর তার ওপরে লোকটি রং সাইড থেকে এসে ড্রাইভারের সাথে কথা বলছে। সোনিয়া একটু গম্ভীরভাবে লোকটির উদ্দেশ্যে বলে, "এই যে মিস্টার, এই ট্যাক্সিটা কিন্তু প্রথমে আমি দাঁড় করিয়েছি, আপনি হঠাৎ ভুল দিক থেকে এভাবে এসে দখল করতে পারেন না।" লোকটি কিছু বলার আগেই ড্রাইভার বলে, "আমি আপনাদের কাউকেই নিয়ে যেতে পারবো না, আমার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে, এই বৃষ্টি বাদলার রাতে আপনাদের ছাড়তে গেলে আমার আর হয়তো বাড়ি ফেরাই হবেনা।
নেহাত এই লোকটি ট্যাক্সির একদম সামনে চলে এলো তাই বাধ্য হয়ে থামাতে হলো নাহলে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতো। আমি সেটাই ওনাকে বলছিলাম কিন্তু উনি বলছেন যে এক্ষুনি ওনার কোথাও একটা যাওয়া দরকার আর সেজন্য আমি যতো টাকা চাইবো উনি দেবেন।" এবারে লোকটি কাদো কাদো স্বরে বলে, "প্লিজ ভাই আমার হাসপাতালে যাওয়াটা খুব জরুরী, একজনের জীবন মরণের ব্যাপার, ঠিক সময়ে না পৌঁছালে জানিনা কি হবে। যতো টাকা চাইবে আমি দেবো কিন্তু প্লিজ না কোরো না, এত রাতে এই বৃষ্টিতে আর কোনো গাড়ি পাবো না, তুমিই শেষ ভরসা। আর ম্যাডাম আপনি যদি কিছু মনে না করেন তো আমার সাথে শেয়ারে ট্যাক্সিটা বুক করে নিন না, খুব অসুবিধায় পড়েছি নাহলে বলতাম না। আমি পুরো ভাড়াটা দিয়ে দেবো আর আপনি চাইলে আগে আপনাকে ড্রপ করা হবে।" লোকটির কথা শুনে সোনিয়া ভাবে যে তার হয়তো সত্যি কোনো এমারজেন্সি রয়েছে, এই বৃষ্টিতে হাসপাতালে যাবে আর কারো জীবন মরণের ব্যাপার বলছে মানে হয়তো কোনো কাছের মানুষ ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে, এই অবস্থায় লোকটার সাহায্য করা উচিৎ। সে বলে, "ঠিক আছে আপনি যেতে পারেন আমার কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু ভাড়া আমি আর আপনি অর্ধেক অর্ধেক দেবো আর ড্রাইভার দাদা আপনি আগে হাসপাতালে চলুন, বেশি দূর তো নয়, ওনাকে ছেড়ে আমাকে ড্রপ করে দেবেন না হয়। আমার অতো তাড়া নেই।" এই কথা বলে সোনিয়া ছাতা বন্ধ করে ট্যাক্সিতে উঠে বসে, লোকটিও ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে পড়ে, ছাতা থাকা সত্ত্বেও দুজনেই ভিজে গেছিলো।
ড্রাইভার আবার বিরক্ত হয়ে বলে, "আপনাদের তো বললাম যে আমি এখন যেতে পারবো না, কেনো জোর জবরদস্তি করছেন? নামুন তো।" এই কথা শুনে লোকটি দুটো করকরে ৫০০ টাকার নোট বের করে ড্রাইভারের মুখের সামনে ধরে বলে, "এটা রাখো অ্যাডভান্স, তোমাকে তো বলছি যতো টাকা চাইবে দেবো শুধু আমাদের পৌঁছে দাও। এখান থেকে হাসপাতাল যেতে খুব বেশি হলে ৩০ মিনিট লাগবে, বৃষ্টির জন্য সেটা ১০-১৫ মিনিট বেশি লাগতে পারে। ম্যাডামের বাড়ি কতদূর?" সোনিয়া তার বাড়ির ঠিকানা জানিয়ে বলে তার বাড়ি বেশি দূর না, সেটা শুনে লোকটি বলতে থাকে, "খুব বেশি হলে তোমার ১ ঘন্টা মতো লাগবে আমাদের ছাড়তে আর সেজন্য যতো টাকা চাইবে দেবো বলছি তো, তাহলে কেনো এতো ন্যাকামি করছো ভাই?" ড্রাইভার টাকাটা নিয়ে নিজের জামার পকেটে পুরে আর কোনো কথা না বলে ট্যাক্সি স্টার্ট করে।
ট্যাক্সি চলতে শুরু করলে লোকটি সোনিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, "আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম, আমার নাম রাজা সেন, নাইস টু মিট ইউ।" সোনিয়া লোকটার সাথে হাত মিলিয়ে নিজের পরিচয় দেয়, লোকটা এবারে ড্রাইভারকে বলে, "তোমার নাম কি ভাই? এভাবে ড্রাইভার ভাই বলতে ভালো লাগছেনা। আর কোনো গান থাকলে চালাও তো, এই বৃষ্টির আওয়াজ শুনতে শুনতে কান খারাপ হয়ে যাচ্ছে যে।" ড্রাইভার বলে তার নাম জাহির আর এটাও জানায় যে তার কাছে কোনো গান নেই। রাজা লোকটি এই কথা শুনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মোবাইলে একটি আজব রকমের ইংরেজি গান চালিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে গুনগুন করতে থাকে, গানটির কথাগুলি এরকম-
"Baby, I'm preying on you tonight
Hunt you down, eat you alive
Just like animals, animals, like animals"
সোনিয়ার একটু আজব লাগে ব্যাপারটা, যে কিনা একটু আগেই বললো কারো জীবন মরণের ব্যাপার আর হাসপাতালে যাচ্ছে সে কিনা এখন এইরকম আচরণ করছে? মনে মনে লোকটাকে তার একটু সন্দেহ হয়। হঠাৎ তার চোখ পড়ে যায় ট্যাক্সির রিয়ার ভিউ মিররের দিকে, সে দেখে ড্রাইভার জাহির তার দিকে খুব খারাপ ভাবে তাকিয়ে আছে। সোনিয়া একটা সাদা রঙের শার্ট পড়েছিলো, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ফলে শার্টটি তার শরীরের সাথে মিশে গেছে আর কোনোভাবে শার্টের প্রথম বোতামটি খুলে গেছে, জাহির সেদিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো। সোনিয়া সাথে সাথে বোতামটি লাগিয়ে নিয়ে নিজের ব্যাগটা দিয়ে বুক ঢেকে বসে, সেটা দেখে জাহির একবার হেসে চোখ সরিয়ে নেয়। সোনিয়া এই ব্যাপারটায় খুব ভয় পেয়ে যায়, সে বুঝতে পারে যে জাহির লোকটা মোটেও সুবিধার নয়, রাজা লোকটা একটু পাগলাটে হতে পারে কিন্তু এখন অবধি ওর আচরণ দেখে মনে হয়নি তার কোনো কুমতলব রয়েছে। কিন্তু সে যদি আগে হাসপাতালে নেমে যায় তারপর তো সোনিয়াকে একা ট্যাক্সিতে করে যেতে হবে, জাহির যদি তখন তার সাথে কিছু করতে চায় তাহলে কি হবে?
এই বৃষ্টির রাতে তো কেউ সাহায্য করতেও আসবেনা, কোনো এক ফাঁকা জায়গায় হয়তো সে লাশ হয়ে পড়ে থাকবে আর কাল সকালে সারা শহর ওর খবর শুনবে। না না এটা তো হতে দেওয়া যায়না, তার এক্ষুনি রাজার সাথে কথা বলতে হবে যাতে আগে তাকে বাড়িতে ছেড়ে দেওয়া হয় আর তারপর যেনো রাজা হাসপাতালে যায়। সে তো প্রথমে এটাই বলেছিলো সোনিয়াই তো পাকামি করে আগে হাসপাতালে যেতে বললো। সোনিয়া রাজাকে একবার আসতে করে ধাক্কা মেরে বলে, "মিস্টার রাজা, একটু শুনবেন?" রাজা গুনগুন করতে করতে চোখ মেলে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ ট্যাক্সির লাইট নিভে মিশকালো অন্ধকারে চারিদিক ঢেকে যায় আর জাহির ট্যাক্সি থামিয়ে দেয়, সোনিয়া ভয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে, "এ কি হলো? লাইট নেভালেন কেনো হঠাৎ?"
জাহির বলে, "আরে ম্যাডাম বলবেন না, বৃষ্টির জন্য মনে হয় ইঞ্জিনে জল ঢুকে কিছু একটা হয়েছে তাই মাঝে মাঝে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর লাইট নিভে যাচ্ছে, এজন্য তো আপনাদের ট্যাক্সিতে তুলতে চাইনি। একটু সময় দিন, স্টার্ট হয়ে যাবে।" এই কথা বলে জাহির আবার ট্যাক্সি স্টার্ট করতে শুরু করে। রাজা বলে, "জাহির ভাই তোমার গাড়ির ডিকিতে কি কিছু আছে?কেমন একটা আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।" জাহির বলে, "ও কিছু না দাদা, আজ আমার ছেলের জন্মদিন তাই একটা খেলনা কিনেছি, সেটাই রয়েছে, বৃষ্টির জল ঢুকে মনে হয় আওয়াজটা হচ্ছে।" রাজা এবারে সোনিয়াকে বলে, "আপনি কি কিছু বলবেন? ডাকলেন যে আমাকে।" সোনিয়া বলতে যাবে তখন হঠাৎ একজন লোক বাইরে থেকে ট্যাক্সির বন্ধ কাঁচের জানালায় আওয়াজ করে ডাকতে থাকে, সোনিয়া ভয়ে চিৎকার করে রাজার দুই হাত চেপে ধরে।
লোকটার আচমকা এভাবে এসে পড়ায় রাজা আর জাহিরও ভয় পেয়ে যায়, অন্ধকারে তার মুখ দেখা যাচ্ছিলো না, জাহির জানলা থেকে মুখ বের করে জিজ্ঞেস করে, "কে তুমি? কি চাই? এভাবে কাঁচে মারছো কেনো?" লোকটি বলে, "সামনে একটা গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ আছে, আমিও যেতে পারছিনা কারন গাছটা সরানো আমার একার কাজ না, আপনারা একটু সাহায্য করবেন? নাহলে কিন্তু আপনারাও যেতে পারবেন না।" লোকটির কথা শুনে জাহির ট্যাক্সি থেকে নেমে এগিয়ে দেখতে যায়। এই সুযোগে সোনিয়া রাজাকে বলে যে তাকে যদি আগে ড্রপ করা হয় তাহলে খুব ভালো হয় কারন অনেকটা রাত হয়ে গেছে বলে তার বাড়ির লোক খুব চিন্তা করছে। রাজা এক কথায় রাজি হয়ে যায়, সোনিয়া রাজার হাত ধরে বলে, "আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আমি বুঝতে পারছি যে আপনার জলদি হাসপাতালে যাওয়াটা খুব দরকার তবু আপনি আমার কথাটা শুনলেন। দেখবেন ভগবান ঠিক আপনাকে সাহায্য করবেন, আপনার যে কাছের মানুষ হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি খুব জলদি সুস্থ হয়ে যাবেন।" রাজা এই কথা শুনে হেসে বলে, "না না আমার কোনো কাছের মানুষ ভর্তি নেই, আসলে ব্যাপারটা একটু জটিল, গতকাল যে ঘটনাটা হয়েছে শুনেছেন আশা করি, সেই ঘটনার সাথেই জড়িত।" রাজা আরো কিছু বলতো কিন্তু তার আগে জাহির এসে বলে, "দাদা শুনুন না একটু সাহায্য লাগবে, সামনে গাছের ডাল পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে আর আমরা দুজন মিলেও সেটা সরাতে পারছিনা, আপনি একটু হাত লাগাবেন?" রাজা এটা শুনে ট্যাক্সির দরজা খুলে বেরোতে গেলে সোনিয়া বলে যে সেও যাবে কিন্তু জাহির বারন করে, রাজাও তাকে ট্যাক্সি থেকে বেরোতে বারণ করে বলে যে তারা কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে, অগত্যা সোনিয়া ট্যাক্সিতেই বসে থাকে। রাজা ও জাহির এগিয়ে গেলে সে মোবাইল বের করে দেখে টাওয়ার নেই, একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি কমার কোনো লক্ষণ নেই, বরং মেঘ ঝলকানির ভ্রুকুটি যেনো জানান দিয়ে যাচ্ছে যে এখনো আরো বৃষ্টি হওয়া বাকি।
কিছুক্ষন পরে রাজা ও জাহির ফিরে আসে, তাদের কথা শুনে সোনিয়া বুঝতে পারে যে তারা গাছের ডালটা সরাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু একটা মুশকিল হয়ে যায়, যে লোকটি ওদের ট্যাক্সির জানালায় ধাক্কা মারছিলো আর যার সাহায্যে ওরা ডালটা সরিয়েছে সে জাহিরকে বলে যে তাকে তার বাড়ি অবধি ছেড়ে দিতে আর সেজন্য সে টাকা দিতেও প্রস্তুত। তার নিজের বাইক আছে কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার দরুন এখন সেটা আর স্টার্ট হচ্ছেনা। জাহির এটা শুনে সোনিয়া আর রাজাকে জিজ্ঞেস করে তাদের অসুবিধা আছে কিনা, রাজা লোকটির বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করে, লোকটি নিজের ঠিকানা বললে রাজা সোনিয়াকে বলে, "হাসপাতালের একটু আগেই ঠিকানাটা, আপনার যদি অসুবিধা না থাকে তো ওনাকে বসিয়ে নি ট্যাক্সিতে? আগে আপনাকে ড্রপ করে তারপর আমরা আমাদের ঠিকানায় চলে যাবো।" সোনিয়াকে আগে ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে জাহির বলে, "সে কি আপনারা যে বললেন আগে হাসপাতালে যেতে?" রাজা একটু জোর দিয়ে বলে, "না আগে ওনাকে ছেড়ে দাও, ওনার বাড়ির লোক চিন্তা করছে, যতোই হোক উনি একজন মহিলা।" জাহির আর কোনো কথা না বলে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ট্যাক্সি স্টার্ট করার চেষ্টা করে, অন্ধকারে তার মুখ দেখতে না পেলেও সোনিয়া ভালো করেই বুঝতে পারে যে সে এটা শুনে একটু নিরাশ হয়েছে, হয়তো তার মনে হয়েছে যে শিকারটা হাত ফস্কে গেলো। লোকটি ট্যাক্সিতে উঠে জাহিরের পাশের সিটে বসে নিজের নাম বলে রঘু।
কিছুক্ষন চেষ্টা করার পরে ইঞ্জিন স্টার্ট হয় আর ট্যাক্সির আলোটাও জ্বলে ওঠে, আলোতে এবার লোকটির মুখ দেখতে পায় সোনিয়া, তার মুখ দেখে মনে হয় কোনো ছিচকে চোর। রাজা তখন রুমাল বের করে নিজের মাথা ও মুখ মুছতে ব্যস্ত ছিলো, রঘু আলো জ্বলতেই সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে তাকে ভালো করে মাপতে থাকে, সেটা দেখে সোনিয়ার গা ঘিনঘিন করে ওঠে ও সে নিজের মুখ সরিয়ে নেয়। সত্যি এখনের দিনে বেশিরভাগ লোকই এরকম, একটু সুযোগ পেলেই মেয়েদের খারাপ নজরে দেখতে শুরু করে, রাজার মতো লোক খুব কমই রয়েছে। এটা ভেবে সে রাজার দিকে তাকায়, সে দেখে মুখ মুছে রাজা রুমালটা দিয়ে মুখ ঢেকে সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে, মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। এটা দেখে সোনিয়ার একটু ভয় লাগে, এখন যদি রঘু আর জাহির ওকে কিছু করে তাহলে কি হবে? সে একবার রাজাকে ডাকতে যায় কিন্তু নিজেকে আটকে নেয়। তার মনে হয় যে এভাবে ওনাকে বারবার বিরক্ত করা ঠিক হচ্ছেনা, উনি হয়তো খুব ক্লান্ত তাই একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। তার মনে হয় যে সে হয়তো একটু বেশিই ভাবছে, এসব কিছুই হবেনা। আর কিছু না ভেবে সোনিয়া নিজের মোবাইলে একটা গেম খেলতে শুরু করে।
কিছুদূর যাওয়ার পরে হঠাৎ রঘু বলতে শুরু করে, "বৃষ্টির জন্য রাস্তাঘাটে লোকজন কম কিন্তু এই সময়ে পুলিশ পাহারা থাকা উচিত, নাহলে যে কোনো মানুষের মৃত্যু হতে পারে। অবশ্য আমি শুনেছি কিছু পুলিশ সিভিল ড্রেসে ঘুরে বেড়াচ্ছে খুনিকে ধরার জন্য। ও ধরা না পড়লে জানিনা আর কতজনকে খুন করবে।" জাহির জিজ্ঞেস করে, "কেনো কি হয়েছে?" সোনিয়াও কৌতুহলী দৃষ্টিতে রঘুর দিকে তাকায়। রঘু বলে, "সে কি খবর শোনো নি? গতকাল রাতেও খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো, কোনো কারণে শহরের একটা বড় অ্যাসাইলেমে শর্ট সার্কিট হয়ে যায় আর অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে কয়েকজন কয়েদি পালিয়ে যায়। ওদের মধ্যে একজন সাইকো সিরিয়াল কিলার রয়েছে যে কিনা আজ অবধি অনেক লোককে খুন করেছে। পুলিশ অনুমান করছে যে সে সাধারণ মানুষের বেশেই শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।" এতটা শুনে সোনিয়া খুব ভয় পায়, সাধারণ মানুষের বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানে তো সে রাজা, জাহির বা রঘুও হতে পারে। রাজা হঠাৎ মুখে রুমাল চাপা অবস্থায় বলে, "শুধু এটাই না, সে সাইকো হলেও যথেষ্ট সেয়ানা। পুলিশ ওর ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেনি কারন পালানোর সময়ে অ্যাসাইলেমের রেকর্ড রুমে আগুন লাগিয়ে দেয় আর নিজের ব্যাপারে সমস্ত তথ্য নষ্ট করে দিয়ে যায়। এমনকি যে ডাক্তার ওর চিকিৎসা করতো তাকে ও দুজন গার্ডকেও মেরে ফেলে, এরা ছাড়া আর তেমন কেউ ওর ব্যাপারে জানতো না। পুলিশ শুধুমাত্র একটা চান্স নিয়েই ওকে খুঁজছে, সিরিয়াল কিলার তো তাই বেশিক্ষণ কাউকে না মেরে থাকতে পারবেনা, কোথাও যদি অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাওয়া যায় এই আশা নিয়েই তার খোঁজ চলছে। কিন্তু জাহির ভাই তুমি এই ব্যাপারে জানো না কেনো? আজ সকাল থেকে তো প্রতিটা খবরের চ্যানেলে এটাই দেখানো হচ্ছে আর সকালে পুলিশ তো প্রতিটা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে গিয়ে সব ড্রাইভারকে সাবধান করেছে কারন খুনি গতরাতে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারকে খুন করেছে। আসলে তোমাদের তো রাতের দিকে বাইরে থাকতে হয় তাই তোমাদের টার্গেট করা খুব সহজ, কেউ একটু বেশি টাকার লোভ দেখালে তোমরা তাকে বিশ্বাস করে ট্যাক্সিতে বসিয়ে নাও আর তারপর সে সুযোগ বুঝে নিজের কাজ করে ফেলে। এত সহজে কি আর কাউকে মারতে পারবে খুনি?" এই কথা শুনে জাহির একটা জোরে ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে বলে, "আমার বাড়ির টিভি খারাপ আর আজ সকালে আমার শরীরটা ভালো ছিলো না বলে আমি বেরোইনি তাই এই ব্যাপারে কিছুই জানিনা।" রঘু একটু অবাক হয়ে রাজাকে জিজ্ঞেস করে, "আপনি খুনির ব্যাপারে এতকিছু জানলেন কি করে? খবরে তো এতকিছু বলা হয়নি।" তখনই আবার ট্যাক্সির লাইট অফ হয়ে চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়, অন্ধকারে সোনিয়া তার ব্যাগটা নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। কিছুক্ষন সম্পূর্ন নিস্তব্ধতা, বৃষ্টির আওয়াজ ছাড়া কিছুই শোনা যায়না, তারপর হঠাৎ কয়েকটি চাপা আওয়াজ ও রঘুর আর্তনাদে নিমেষের মধ্যে সমস্ত নিস্তব্ধতা কেটে যায়। জাহির অনেক চেষ্টা করে আবার লাইট জ্বালিয়ে নিজের পাশের সিটে রঘুর গলাকাটা লাশ দেখে ভয়ে চিৎকার করে ট্যাক্সির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। সোনিয়া রঘুর লাশ দেখে ভয়ে চিৎকার করে রাজার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে, রাজা তখন নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটি পিস্তল বের করে বলে, "আপনি একদম ভয় পাবেন না ম্যাডাম।" সোনিয়া এটা দেখে ভয়ে দূরে সরে গিয়ে তাড়াতাড়ি ট্যাক্সির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে জাহিরের কাছে গিয়ে বলে, "ওই লোকটাই খুনি, পিস্তল বের করেছে, ও আমাদেরও মেরে ফেলবে।"
জাহির ওর কথা শুনে ভয়ে পালাতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। তখনই রাজা ট্যাক্সি থেকে বেরিয়ে জাহিরের দিকে পিস্তল তাক করে বলে, "একদম নাটক করবেনা, আর এক পা এগোলে গুলি করবো। আমি জানি এই ট্যাক্সিটা তোমার না, সত্যি করে বলো তুমি কে আর ট্যাক্সির ডিকিতে কার লাশ আছে?" সোনিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "মানে? কি বলছেন আপনি? আপনার কাছে পিস্তল এলো কোথা থেকে? আপনি কে আগে সেটা বলুন।" রাজা বলে, "আমি DCP সমন্তক সেনগুপ্ত আর এটা আমার সার্ভিস রিভলভার। খুনিকে ধরতে আমরা পুলিশরা সিভিল ড্রেসে ঘুরে বেড়াচ্ছি। গতকাল রাতে খুনি যে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে মারতে চেয়েছিলো সে বেঁচে আছে। কিছুক্ষন আগেই তার জ্ঞান ফিরেছে আর তাই তার বয়ান নিতে আমি হাসপাতালে যাচ্ছি। আমি ট্যাক্সিতে উঠে এই ট্যাক্সির নাম্বারটা আমার একজন সহকারীকে পাঠাই, সে খোঁজ নিয়ে জানিয়েছে যে এটা ইমাদ নামের কোনো ড্রাইভারের, এই জাহির আদৌ কোনো ট্যাক্সি ড্রাইভার না। তারপর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছে না নাহলে আমি এতক্ষণে খুনির ব্যাপারে জেনে যেতাম। আমার সন্দেহ যে এই জাহিরই খুনি। কি জাহির সত্যিটা বলবে?" জাহির উঠে দাঁড়িয়ে বলে, "এটা ঠিক যে এই ট্যাক্সিটা আমার না, আমার বন্ধু ইমাদের। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি খুনি নই। আমি শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে একটা গ্যাংয়ের হয়ে আর্মস পাচার করি। ওরা যেখানে বলে সেখানে কখনো আমি আর কখনো ইমাদ ট্যাক্সির ডিকিতে ভরে পৌঁছে দিয়ে আসি। আজ ইমাদ নিজে আসেনি আর আমাকেও আসতে বারণ করছিলো কিন্তু আমি টাকার লোভে ওর কথা না শুনেই ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি আর্মস ডেলিভার করতে। যদি জানতাম এসব সাইকো কিলারের ব্যাপার স্যাপার তাহলে বেরোতামই না। আপনি চাইলে আমার ডিকি চেক করতে পারেন স্যার।" সমন্তক বলে, "হ্যাঁ দেখাও দেখি কি আছে। আপনি ভয় পাবেন না সোনিয়া ম্যাডাম, আমি আছি আপনার সাথে।" এটা বলে সমন্তক জাহিরের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ওর সাথে ডিকির দিকে এগোতে থাকে। সোনিয়া কিছু না বলে ভয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো ও কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। গাড়ির ডিকিটা খুলতেই সমন্তক দেখে তার মধ্যে একটা বড়ো কালো রঙের ব্যাগ, জাহির সেটা বের করতে যাবে তখনই সমন্তকের মোবাইলে এক এক করে মেসেজ আসতে থাকে, মেসেজ টোন শুনে সে মোবাইল বের করে দেখে তুহিন ওকে ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, টেক্সট কিছুতেই মেসেজ করতে বাকি রাখেনি, এছাড়া ওর ২০টা মিসকলের একটা মেসেজও আসে।
সমন্তক বুঝতে পারে যে এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে তাই আর দেরি না করে সে তুহিনকে কল করে। কল রিসিভ করে তুহিন বলে, "তুমি কোথায় আছো স্যাম? চিন্তা হচ্ছিলো আমাদের তোমাকে ফোনে না পেয়ে। কতক্ষনে আসছো? বাবিনের জ্ঞান ফিরেছে আর ওকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি খুনির ব্যাপারে।" সমন্তক বলে, "প্রায় চলেই এসেছি ভাই, মনে হচ্ছে খুনিকে পেয়ে গেছি তাই একটু আটকে পড়েছি। এই তো স্টার গ্যারেজের পাশে দাঁড়িয়ে আছি।" তুহিন বলে, "খুনিকে ধরে ফেলেছো? তা ম্যাডামকে দেখতে কেমন? বাবিন তো বলছে একদম নায়িকার মতো দেখতে আর চোখের নিচে একটা কাটা দাগ রয়েছে।" সমন্তক এটা শুনে যেনো স্তব্ধ হয়ে যায়, চোখের নিচে কাটা দাগ তো সে একটু আগেই একজনের দেখেছে, সে তুহিনকে বলে, "কি বলছো? খুনি একজন মহিলা?" তুহিন বলে, "হ্যাঁ সেটাই তো শুনলাম, কেনো তুমি আবার কাকে ধরলে?"
সমন্তক কিছু বলার আগেই জাহির ব্যাগটা খুলে বলে, "এই দেখুন স্যার, শুধু বন্দুক পিস্তল আর বুলেট রয়েছে। আমি তো বললাম আমি খুনি নই।" সমন্তক সেটা দেখে পেছনে তাকাতে যাবে তার আগেই কেউ একটা পাথর দিয়ে ওর মাথায় সজোরে আঘাত করে, ব্যাথার চোটে সে রাস্তায় পড়ে যায়, পিস্তলটা হাত থেকে পড়ে যাওয়ায় কেউ সেটাকে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দেয়। জাহির এটা দেখে অবাক হয়ে আক্রমণকারীর দিকে তাকিয়ে বলে, "একি ম্যাডাম আপনি হঠাৎ ওনাকে মারলেন কেন?" এটা শুনে সোনিয়া হাসতে হাসতে বলে, "এটা না করলে তোকে মারবো কি করে? ও তো পুলিশ, আমাকে আটকাবে তাই না? তোর চোখ দুটো আমাকে যেভাবে দেখেছে তাতে তোকে না মারলে যে আমার রাতে ঘুম আসবেনা, স্বপ্নে তোর চোখদুটো আমাকে ভয় দেখাবে। কিসের এতো ভয়? ভয়কে তো জয় করতেই হবে।" সমন্তক কোনোমতে বলে, "জাহির পালাও এখান থেকে।" জাহির কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোনিয়া চোখের নিমেষে নিজের হাতে ধরা একটা ছুরি দিয়ে ওর গলা কেটে দেয়, ছটফট করতে করতে জাহির রাস্তায় পড়ে যায়, ফিনকি দিয়ে রক্তের স্রোত বইতে থাকে আর ভেজা রাস্তায় বৃষ্টির জলে রক্ত মিশে লাল হয়ে যায়। জাহিরকে ছটফট করতে দেখে হাসতে হাসতে সোনিয়া সমন্তকের দিকে তাকিয়ে গান গাইতে শুরু করে, "তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার।"
সমন্তক নিজের আসন্ন মৃত্যুকে অনুভব করে সোনিয়াকে বলে, "আমাকে মেরে ফেললেও তুমি কিন্তু বাঁচতে পারবেনা, একদিন তো ধরা পড়বে আর এবারে সোজা ফাঁসিকাঠে উঠবে। আর পাগলামির দোহাই দিয়ে অ্যাসাইলেমে পাঠানো হবে না তোমায়।" সোনিয়া সমন্তকের কাছে এসে ওর গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, "কে বলেছে তোমাকে মেরে ফেলবো আমি? অনেকদিন পর কোনো পুরুষ পেলাম যে আমাকে খারাপ নজরে দেখে নি। তোমার ছোঁয়াটা কতো পবিত্র, মানুষের লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট হয় কিন্তু আমার যে লাভ অ্যাট ফার্স্ট টাচ হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ভাগ্য কতোটা খারাপ দেখো, তুমি কিনা পুলিশ আর আমি একজন খুনি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসতে পারবে না? সেই ছোটবেলা থেকে আমি শুধুমাত্র একটু ভালোবাসাই খুঁজেছি জানো কিন্তু কখনো কেউ আমাকে ভালোবাসেনি, সবাই আমাকে শুধু ব্যবহার করেছে। ছোটবেলায় বাবা মা মারা যাওয়ার পর আমি জ্যেঠু আর জ্যেঠির কাছেই থাকতাম, জ্যেঠু আমাকে রোজ রাতে রেপ করতো, খুব ব্যথা হতো আমার কিন্তু চিৎকার করতে গেলে জ্যেঠু আমার মুখ চেপে ধরতো। তখন আমার মাত্র ৭ বছর বয়স, ওসব বুঝতামও না। যেদিন বুঝতে পারলাম আমি জ্যেঠিকে গিয়ে বলি কিন্তু উনি উল্টে আমাকেই মারধর আর গালিগালাজ করেন। এরপর ওরা আমাকে একটা অনাথ আশ্রমে রেখে আসে, সেখানেও একজন সিকিউরিটি গার্ডের খারাপ নজর আমার ওপরে পড়ে। কি দোষ ছিলো আমার? দেখতে সুন্দর হওয়াটাই কি আমার দোষ? দীর্ঘদিন এগুলো চলার ফলে আমি স্বপ্নে ওদের লালসায় ভরা চোখ দেখতে পেতাম আর ভয়ে আমার ঘুম ভেঙে যেতো। ঘুমাতে না পারলে যে আমি মরে যেতাম তাই একদিন ওদের দুজনকেই আমি খুন করি, তারপর গিয়ে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি। খুনের দায়ে আমাকে অ্যারেস্ট করা হয় কিন্তু আমার মানসিক অবস্থা দেখে আমাকে অ্যাসাইলেমে পাঠানো হয়, সেখানেও ডাক্তার আর দুজন গার্ড আমাকে বাজেভাবে টাচ করতো, আমার সাথে নোংরামি করতো। গতকাল ওদের মেরে অনেকদিন পর আবার শান্তিতে ঘুমিয়েছি জানো? এছাড়া আরো অনেককে আমি খুন করেছি যাদের চোখ আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয়নি। আজ এই দুজনকে না মারলেও আমার ভয়ে ঘুম আসতো না। কিন্তু আজ খুব ভালো ঘুম আসবে আমি জানি, স্বপ্নে তোমাকে দেখতেও পারি। শুধুমাত্র একটু শান্তিতে ঘুমানোর জন্যই আমি খুনগুলো করেছি। আচ্ছা আমি এবারে আসি কেমন? খুব ঘুম পেয়েছে। খুব জলদি আবার ফিরে আসবো তোমার কাছে। তুমি ভেবে দেখো আমাকে ভালোবাসতে পারবে কিনা।" এতটা বলে মেয়েটি তুমি যে আমার গানটা গাইতে গাইতে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে চলে যেতে থাকে। সমন্তক ওঠার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যাথার চোটে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। কিছুক্ষন পর মেয়েটি অন্ধকারে মিলিয়ে গেলে সে পুলিশ জিপের আওয়াজ শুনতে পায়, ওর কাছে এসে জিপটা থামলে সেটা থেকে তুহিন নেমে ওকে জিপে তুলে বলে, "ফোনে হঠাৎ একটা মারের আওয়াজ আর তোমার আর্তনাদ শুনে বুঝতে পারি যে তুমি বিপদে পড়েছো, তাই সাথে সাথে আমরা রওনা হই। খুনিকে কি তুমি দেখেছো?" সমন্তক হেসে বলে, "সবথেকে বড় খুনি হলো আমাদের সমাজ। মানুষ তো শুধু একটা মানুষের শরীরকে খুন করে কিন্তু সমাজ একটা মানুষের আত্মাকে খুন করে ফেলে আর তখনই একজন খুনির জন্ম হয়।"
|| সমাপ্ত ||