01-08-2023, 09:03 PM
(৬)
দোতালায় উঠে যে কারুকার্য করা কাঠের বন্ধ দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে রজত বাবু কিছুক্ষণ আগে টিনাকে ডেকেছিলো, সেই দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো ইউসুফ। ছোট পিসেমশাই আর টিনার পিছন পিছন তার মায়ের সঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে সৈকত দেখলো নিচের ওয়েটিং রুমের মতোই বিশাল বড় এই ঘরটা। ঘরের দক্ষিণ এবং পূর্বদিকে জানলা থাকলেও কালো রঙের স্লাইডিং উইন্ডো গ্লাসের প্রত্যেকটি পাল্লা বন্ধ। এছাড়াও পেলমেট থেকে ঝুলন্ত সুসজ্জিত পর্দাগুলোও সব টানা রয়েছে। ঘরটির দক্ষিণপ্রান্তে পূর্বদিকের জানলার ঠিক পাশে হাল ফ্যাশনের একটি বিশাল খাট রয়েছে। খাটের ঠিক উল্টোদিকে তিনজনের বসার উপযোগী মোটা গদি আঁটা একটি সোফা আর সোফার সামনে একটি সেন্টার টেবিল, এবং সোফার বাঁদিকে দক্ষিণদিকের জানলার পাশে একটি কাঠের আলমারি রয়েছে। আলমারির পাশে বিয়াল্লিশ ইঞ্চির একটি ওয়াল হ্যাঙ্গিং টিভি। প্রায় সাতশো স্কয়্যার ফিটের মতো বড় ঘরটিতে মাত্র এই কয়েকটি আসবাবপত্র থাকায় অনেকটাই ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়েছে।
সোফার ডানদিকে সিনটেক্সের বন্ধ দরজাটি দেখে সৈকত বুঝতে পারলো ওটা বাথরুমের দরজা। বাথরুমের দরজার পাশে আরেকটি কাঠের দরজা আছে, সেটিও বন্ধ। হয়তো বন্ধ দরজাটির ওপাশে আরেকটা ঘর রয়েছে। সেন্টার টেবিল থেকে অনতিদূরে তেপায়া স্ট্যান্ডের উপর একটি বেশ বড়সড় উন্নত মানের ডিএসএলআর ক্যামেরা বসানো রয়েছে।
ঘরে ঢুকেই সমস্ত আলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলো ইউসুফ। ফলস সিলিংয়ের সঙ্গে অ্যাটাচ্ড প্রত্যেকটি এলইডি বাল্ব জ্বলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের চারদিকের দেওয়ালে লাগানো হাই পাওয়ারের ফ্লুরোসেন্ট লাইটগুলিও জ্বলে উঠলো। এতগুলো লাইট একসঙ্গে জ্বলে ওঠায় ঘরটি আলোয় ঝলমল করতে থাকার পাশাপাশি তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটা সম্ভাবনাও থেকে গিয়েছিলো। কিন্তু দুটো দেড় টনের এসি অন থাকায় এবং ফুল স্পিডে মাথার উপর দুটো সিলিং ফ্যান ঘুড়তে থাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তো প্রশমিত হলোই, তার সঙ্গে ঘরে একটি শীতল পরিবেশের সৃষ্টি হলো।
জায়গাটা ভালো না মন্দ? সেফ না আনসেফ? বিপদে ভরা, নাকি নিরাপদ? এইসব তো পরের ব্যাপার। কথায় বলে, 'পহেলে দর্শনধারী'! ঘরে ঢুকেই এরকম একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ঝাঁ চকচকে পরিবেশ, বলা ভালো শ্যুটিং স্পট দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন বন্দনা দেবী। তার মুখচোখ দেখে বোঝা গেলো, ইউসুফের মায়ের রোল করতে হবে .. এটা শুনে প্রথমে যতটা দুঃখ পেয়েছিলেন মনে, সেটাও হয়তো কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
ঘরে ঢুকেই ক্যামেরা, লাইট, প্রপস .. এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো প্রডিউসার কাম ডিরেক্টর রজত বণিক। বন্দনা দেবী ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন স্টুডিওতে রূপান্তরিত হয়ে যাওয়া সুসজ্জিত ঘরটির শোভা। যে দরজা দিয়ে তারা এই ঘরে ঢুকেছিলো, সেই দরজার দিকে হঠাৎ চোখ গেলো সৈকতের। সে দেখলো, টিনাকে ইশারায় ইউসুফ সেই দিকে ডাকছে। টিনা তার সামনে থেকে ওই দিকে চলে যেতেই, সোফার একদম কিনারে সরে এসে নিজের কান খাড়া করে ওদের কথোপকথন শোনার চেষ্টা করলো সৈকত।
সৈকত স্পষ্ট শুনতে পেলো ইউসুফ ফিসফিস করে টিনাকে বলছে, "এখন আমার আর তোমার লাভ-মেকিং সিনের যে শ্যুটটা হওয়ার কথা ছিলো, সেটা আপাতত ক্যানসেল করতে হলো। অল ইজ ওয়েল হলে, আজ রাতেই হয়ে যাবে পেন্ডিং কাজটা। এখন শুধু আমার আর তোমার কনভারসেশন আর খুব ছোট ডান্স সিকোয়েন্সটা শ্যুট হবে, বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি। আশা করি বুঝতে পেরেছো কথাগুলো কেনো বললাম! পার্টনারের সঙ্গে আমার কথা হয়ে গেছে। গেট রেডি মাই ডিয়ার হানি .." ইউসুফের এই কথার প্রত্যুত্তরে শুধু, "ওক্কে বস .." এইটুকু বলে একটা ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি হাসলো টিনা।
★★★★
"ঝুমা, তুমি গিয়ে চুপটি করে ওই খাটের উপর বসো। এখনই শ্যুটিং শুরু হবে। ক্যামেরা অন হওয়ার পর কিন্তু একটাও কথা বলা যাবে না। মন নিয়ে দেখো কিভাবে শ্যুটিং হয়। এটা হয়ে গেলে তোমার একটা সিন শ্যুট করবো। এতে তোমার স্ক্রিনটেস্টটাও নেওয়া হয়ে যাবে, আর রিহার্সালটাও হয়ে যাবে! টিনা, কস্টিউম চেঞ্জ করে নাও পাশের ঘরে গিয়ে, make it fast .. ইউসুফ take your position, আর এই ছেলেটা, কি যেন তোর নাম? তুই ক্যালানের মতো সোফার উপর বসে আছিস কেনো? যা, গিয়ে খাটে তোর মায়ের পাশে বোস।" রজত বাবুর হুঙ্কারে থতমত খেয়ে গিয়ে সোফা থেকে উঠে পড়ে বন্দনা দেবীর বাঁ'পাশে খাটের উপর গিয়ে বসলো সৈকত। সে দেখলো বাথরুমের দরজার পাশে বন্ধ থাকা কাঠের দরজার পাল্লাটা খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো টিনা। ইউসুফ গিয়ে সোফার উপর বসে টিভিটা চালিয়ে দিলো।
সৈকত ভেবেছিলো তেপায়া স্ট্যান্ডের উপর রাখা ক্যামেরাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে ডিরেক্টার কাম প্রোডিউসার তার ছোট পিসেমশাই। কিন্তু তা না করে, লোকটা খাটের উপর তার মায়ের ডানপাশে এসে বসলো। সে টিভিতে দেখেছে ডিরেক্টরেরা ক্যামেরায় চোখ রেখে অ্যাকশন, কাট .. এইসব বলে। তাহলে এই ক্ষেত্রে সেই কাজ কে করবে? "অমর .." রজত বণিকের গুরুগম্ভীর গলার এই ডাকে নিজের মনের মধ্যে দানা বাঁধতে থাকা এইসব প্রশ্নের উত্তর সে পেয়ে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই। লোকটা কোথায় ছিলো কে জানে! তার ছোট পিসেমশাইয়ের গলার আওয়াজ শোনার মিনিট খানেকের মধ্যেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো বছর পঞ্চাশের ওই খর্বকায়, শীর্ণকায়, শুকনো কাঠের মতো চেহারার, পাংশুটে মুখের ড্রাইভারটি। তারপর ধীরপায়ে তেপায়া স্ট্যান্ডের উপর রাখা ক্যামেরাটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
ছিলো রুমাল, হয়ে গেলো বিড়াল। 'যে লোকটা কিছুক্ষণ আগে তাদের গাড়ি চালিয়ে নিয়ে এলো, সে হঠাৎ করে কিভাবে ক্যামেরাম্যান হয়ে যেতে পারে!' এটা ভেবে অবাক হয়ে বন্দনা দেবী কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তার আগেই পাশের ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো টিনা। সৈকত আর অমর সহ ঘরে উপস্থিত চারজন পুরুষের সঙ্গে বন্দনা দেবীর চোখ চলে গেলো সেই দিকে। হলুদ রঙের স্লিভলেস টপ আর গাঢ় নীল রঙের শর্ট স্কার্টের বদলে তার শরীরে শোভা পাচ্ছে সাদার উপর লাল রঙের গোলাপ ফুল প্রিন্টের পাতলা সুতির কাপড়ের একটি ফ্রক। অবশ্য এটিকে ফ্রক না বলে টেপজামা বলাই বোধহয় সমীচীন হবে। কাঁধের দুপাশে শুরু ফিতে দিয়ে বাঁধা টিনার পরিধেয় বস্ত্রটির ঝুল হাঁটুর বেশ কিছুটা উপরে উঠে গিয়ে টিনার ফর্সা সুগঠিত ঊরুদ্বয়ের অনেকটাই উন্মুক্ত করেছে।
"wow .. you're looking beautiful my dear, আমার তো এখন মনে হচ্ছে, তোমার বয়ফ্রেন্ডের রোলটা আমিই কেন করলাম না! হাহাহাহা jokes apart, okay get ready, এবার কিন্তু শুরু করবো! বরাবরের মতোই বলি .. একবারে শট ওকে করার চেষ্টা করবে। গরিব প্রডিউসার আমি, বেশি এনজি হলে চাপে পড়ে যাবো ভাই। আরে এই মাতালচোদাটা চুপ কেনো? অমর .. রেডি তো?" রজত বাবুর কথায়, "আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার .." ঘাড় নাড়িয়ে এইটুকু বললো ক্যামেরা পার্সেনে রূপান্তরিত হয়ে যাওয়া ড্রাইভারটা।
সিন শুরু হওয়ার আগে হাল্কা ব্রিফিং করে দিলো ডিরেক্টর রজত বণিক, "ইউসুফ, যে এই মুভিতে আমার ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করছে, তার মা অর্থাৎ আমার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। ইউসুফ সবে এমবিএ পাস করে আমার বিজনেস দেখাশোনা করছে। সবকিছুই রয়েছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিস্টার ঘোষের লাইফে, শুধু একজন প্রকৃত সহধর্মিনী ছাড়া। প্রথম স্ত্রী বেশ কিছু বছর আগে মারা গেলেও, তিনি এতদিন বিয়ে করার কথা ভাবেননি। কিন্তু বর্তমানে দিনের শেষে বাড়িতে ফিরে কিরকম যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে তার। এছাড়াও সংসারে যদি কর্ত্রী না থাকে, তাহলে সেই সংসার শ্রীহীন হয়ে পড়ে। চাকর-বাকরের উপর ভরসা করে তো আর সংসার চলে না! তাই কয়েকদিন আগে মধ্য চল্লিশের মিস্টার ঘোষ তার ছেলের পারমিশন নিয়েই মধ্য তিরিশের অতি সাধারণ পরিবারের একজন মহিলাকে বিয়ে করে আনলেন। বিয়ে করে বাড়িতে আসার পর হাজবেন্ডের সঙ্গে খুব ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি হয় তার। এছাড়াও ইউসুফ অর্থাৎ তার স্বামীর প্রথম পক্ষের সন্তানের সঙ্গেও একটা অদ্ভুত ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়, যেটা এর পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হবে। মিস্টার ঘোষের ক্যারেক্টারটা আমি করছি। এই মুভিতে মহিলাটির নাম এখনো ঠিক করা হয়নি, যদি ঝুমা সিলেক্ট হয় ওই রোলটার জন্য, তাহলে ওর নামটাই রেখে দেবো। ইউসুফের একজন গার্লফ্রেন্ড রয়েছে, যে কলেজের ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। বর্তমানে সে একটা সমস্যায় পড়েছে। সমস্যাটা হলো সে ড্রাগ এডিক্টেড হয়ে গেছে, হাজার চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছে না। এখন যে সিনটা শ্যুট করা হবে, তার সিকোয়েন্সটা টিনার বাড়ির। বাড়ি এখন ফাঁকা, তাই ওর বয়ফ্রেন্ড ইউসুফকে ও নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়েছে। ইন্ডোর সিকোয়েন্স, তাই চড়া মেকআপ কিছু থাকবে না। বাকিটা স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী হবে। ওহো, একটা কথা তো এখানে বলতেই ভুলে গেছি; টিনার নাম এই মুভিতে টিনাই রাখা হয়েছে। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয়েছে। আমি তো আর জানতাম না ঝুমার ছেলের নাম সৈকত! বা জানলেও আজকে ওদের এখানে আসার ব্যাপারে আমার কাছে কোনো খবর ছিলো না। ক্যারেক্টারের নাম তো অনেক আগে থেকেই ঠিক করা হয়ে যায় আমাদের! এই মুভিতে ইউসুফের নাম 'সৈকত' রাখা হয়েছে, what a coincidence, তাই না? anyways, let's start ..
রজত বণিকের মুখে সিনেমাতে ইউসুফের নাম 'সৈকত' রাখার এই কথাগুলো শোনার পর যে সৈকত এবং তার মা বন্দনা দেবী চমকে উঠবে, এটাতো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই ইনফরমেশনটা যে ইউসুফের কাছেও ছিলো না, সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা গেলো।
★★★★
শুরু হলো শ্যুটিং ..
সোফার উপর বসে থাকা ইউসুফের দিকে ক্যামেরা ঘোরানো হলো। পাশের ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে সাদার উপর লাল রঙের গোলাপ ফুল প্রিন্টের পাতলা সুতির কাপড়ের ফ্রক পরিহিতা টিনা সোফায় ইউসুফের পাশে বসে একটা পা নিচে রেখে, আরেকটা পা ভাঁজ করে সোফার উপর তুলে দিলো। এরফলে অত্যন্ত ছোট ঝুলের ফ্রকটির তলা দিয়ে পরিষ্কারভাবে দেখা যেতে লাগলো টিনার গাঢ় নীল রঙের প্যান্টিটা। সেইদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে নিজের সংলাপ বলায় মন দিলো টিনা।
ইউসুফ আর টিনার কথোপকথন শুনে সৈকতের মনে হলো এটা স্ক্রিপ্টেড নয়। অর্থাৎ আগে থেকে কোনো চিত্রনাট্য পড়ে অভিনয় করছে না ওরা বা কথা বলছে না ওরা। যেহেতু এই সিনেমার গল্পটা ওদের জানা, তাই কথার পৃষ্ঠে কথা বলে অভিনয় করার চেষ্টা করছে ওরা। যদিও অভিনয়ের "অ" হচ্ছে না ওদের দু'জনের একজনের দ্বারাও। কোথায় পজ নিতে হবে, কোথায় ছাড়তে হবে, এগুলোর কোনোটাই জানে না ওরা। কথাগুলোও কিরকম যেন খেই হারিয়ে যাচ্ছে, আগের কথার সঙ্গে পরের কথার বিশেষ মিল পাওয়া যাচ্ছে না। একটা আউট এন্ড আউট অ্যাডাল্ট মুভির সস্তার অ্যাক্টারেরা যেরকম অ্যাক্টিং করে, ঠিক সেই রকমই অ্যাক্টিং হচ্ছে।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো দু'জনের কথোপকথনের মাঝে ইউসুফ বার কয়েক তার 'রিল লাইফের' প্রেমিকাকে টিনা বলে সম্বোধন করলেও, টিনা একবারের জন্যও ইউসুফকে 'সৈকত' বলেনি। কলেজের ফাইনাল ইয়ারে পড়া টিনার হঠাৎ করে ড্রাগ এডিক্টেড হয়ে পড়ার কারণ এবং তার সমাধান নিয়েই আলোচনা হচ্ছিলো দু'জনের মধ্যে। কারণ অনুধাবন করা গেলেও সমাধান নিয়ে বিশেষ সুরাহা করতে পারছিলো না দু'জনের কেউই। সস্তার সি-গ্রেড সিনেমার সি-গ্রেড স্ক্রিপ্টের মতোই হঠাৎ করে দু'জনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, একটু নেচে নিলেই হয়তো ড্রাগের নেশা চিরতরে ছুটে গেলেও যেতে পারে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। তখনই দেওয়ালে লাগানো স্পিকারগুলোর মাধ্যমে বেজে উঠলো বেসুরো নারী এবং পুরুষকণ্ঠের, ততোধিক বাজে সুরের "ओ पिया पिया, ओ पिया पिया रे, धड़के जिया रे .." এইরকম লিরিকসের একটি হিন্দি গান। বাংলা মুভিতে হিন্দি গান, ভাবা যায়? মানে যাচ্ছেতাই ব্যাপার আর কি! গানটির গায়ক গায়িকার গলা এবং সুর জঘন্য হলেও, গানটি মৌলিক, এর সুর এবং কথাগুলো কোনো জায়গা থেকে চুরি করা নয়, এটাই একমাত্র প্লাস পয়েন্ট। ওহ্, এখন তো আবার 'চুরি' শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না, বলতে হবে 'ইন্সপায়ার্ড'।
সেন্টার টেবিলের সামনে ভুলভাল স্টেপ ফেলে নাচতে থাকা টিনার ঠিক পেছনে এসে দাঁড়িয়ে তার পার্টনারকে কম্প্যানি দেওয়ার জন্য পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে একটা হাত টিনার ফ্রক আবৃত টাইট স্তনজোড়ার ঠিক নিচে রেখে আরেকটা হাত পেটের উপর রাখলো ইউসুফ। একসময় গানের বেসুরো পুরুষ কন্ঠটির সঙ্গে লিপসিঙ্ক করতে করতে পেটের উপর থাকা হাতটা নামিয়ে আনলো ফ্রকের ঝুলের শেষ প্রান্তে। তারপর হঠাৎ করেই হাতটা ঢুকিয়ে দিলো টিনার দুই পায়ের মাঝখানে।
"এইইই .. গানের মধ্যে এসব কি করছো তুমি? এখন তো শ্যুটিং চলছে, এগুলো যদি রেকর্ডিং হয়ে যায় তাহলে তো খুব খারাপ হবে! যাই বলুন রজত দা, আপনার এই পার্টনার মানে আমার ছেলের বন্ধু ইউসুফ কিন্তু ভীষণ দুষ্টু। আসলে ছোটবেলা থেকে ওকে কেউ শাসন করেনি তো, সেজন্য ওর সাহস এত বেড়ে গেছে। আপনি এখনই 'কাট' বলুন, আর ওকে আচ্ছা করে বকে দিন। আর একটা কথা, ওর নাম সিনেমায় আপনি 'সৈকত' রেখে একদম ঠিক করেন নি রজত দা! নামটা পাল্টাতে হবে আপনাকে।" হঠাৎ করেই কথাগুলো বলে উঠলেন বন্দনা দেবী।
"cut it cut it .. what's wrong with you ঝুমা? তোমাকে বললাম না একটু আগে, ক্যামেরা স্টার্ট হলে নিজের মুখটা বন্ধ রাখবে! দিলে তো এত ভালো একটা সিন নষ্ট করে! নাচের সিকোয়েন্সটা আবার retake করতে হবে এখন আমাকে; do you have any idea, তোমার এই বোকামির জন্য কতগুলো টাকা লোকসান হলো আমার? দ্যাখো, সিন চলার সময় আমরা এমন কিছু unnatural কাজকর্ম করি, যেটা দৃষ্টিকটু হতেই পারে। কিন্তু পরবর্তীকালে এডিট করার সময় সবকটা সিন আমরা কেটে বাদ দিয়ে দিই। যার সঙ্গে জিনিসটা হচ্ছে, তার যখন কোনো প্রবলেম নেই! তাহলে তুমি কেন মাঝখান থেকে কথা বলে নষ্ট করলে পুরো ডান্স সিকোয়েন্সটা? আর শোনো, এই ফিল্মের প্রডিউসার এবং ডাইরেক্টর দুটোই আমি। তাই আমি ডিসাইড করবো কাকে বকুনি দেবো আর কাকে ভালোবাসবো। আর একটা কথা, আমি সিদ্ধান্ত নেবো কোন ক্যারেক্টারের কি নাম হবে, তুমি নয়।" নিজের বাজখাঁই গলায় চিৎকার করে উঠলো রজত বণিক। তারপর গলার স্বর কিছুটা নামিয়ে ইউসুফ আর টিনার উদ্দেশ্যে বললো, "চলো অনেক কথা হয়েছে, take your position, এ্যাকশন ."
রজত বাবুর ধমক খেয়ে এবং তার বোকামির জন্য টাকার লোকশান হয়েছে এটা শুনে অপরাধী মতো মুখ করে চুপ করে গেলেন বন্দনা দেবী। এদিকে আবার ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছে সেই বেসুরো গানের সঙ্গে ভালগার নাচের দৃশ্য। এবার যেন বাড়াবাড়িটা আরও বেশি করছিলো ইউসুফ। বেসুরো গানের সঙ্গে বেতালা নাচ করতে করতে মাঝে মাঝেই টিনার ফ্রকের ঝুলটা উপর দিকে তুলে তার গাঢ় নীল রঙের প্যান্টির পুরোটাই উন্মুক্ত করে দিচ্ছিলো সে। তার পার্টনারের এইরূপ কুকর্মে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে হাসিমুখে নিজের কোমর দুলিয়ে যাচ্ছিলো টিনা।
মিনিট পাঁচেক পর ডাইরেক্টর কাম প্রোডিউসার রজত বণিক "কাট" বলাতে গান থামলো, তার সঙ্গে নাচও। অভিনেতা এবং অভিনেত্রী এই দু'জন কতটা রিলিফড ফিল করলো জানা নেই, তবে সৈকত এবং তার মা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো .. এই বিষয়ে সন্দেহ নেই। "তুমি এখন যাও, দরকার হলে পরে তোমাকে ডেকে নেবো।" রজত বণিকের এই উক্তিতে ক্যামেরাম্যান অমর তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
"আমি তাহলে এবার চেঞ্জ করে নিই? অনেকটা দেরি হয়ে গেছে, প্রায় তিনটে বাজতে চললো। এবার তো আমাকে বাড়ি যেতে হবে!" ইউসুফের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে রুমাল দিয়ে ঘাড়, গলার ঘাম মুছতে মুছতে জিজ্ঞাসা করলো টিনা।
"আরে কি করবে এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে গিয়ে? কোন সুখ-শান্তি অপেক্ষা করে রয়েছে তোমার জন্য বাড়িতে? থাকার মধ্যে তো ওই একটা মাতাল বুড়োভাম বাবা। তুমি বাড়িতে ফিরলে কি না ফিরলে তাতে যার কিছুই যায় আসে না। শুধু মদ খাওয়ার পয়সাটা তোমার কাছ থেকে পেলেই হলো। এখনো তো তোমাকে পেমেন্ট করাই হয়নি। টাকাটা ঢুকুক আমাদের একাউন্টে, তারপর পাঠিয়ে দেওয়া হবে তোমাকে। সেইজন্য তো আরও কিছুক্ষণ ওয়েট করতেই হবে তোমাকে। তাছাড়া আজকে যেটার জন্য তোমাকে বুক করা হয়েছে, সেই সিনটাই তো হয়নি! সুচরিতা, দিয়া, শ্রেয়া, দোলন এরা এলে তো দিব্যি গল্প করতে করতে সময় কাটিয়ে দাও, তখন তো এখান থেকে যাওয়ার নাম করো না! আমি বলি কি .. থেকে যাও এখানে। কাজ হলে ওভারটাইম পাবে। বুড়োচোদাকে ফোন করে জানিয়ে দাও, তোমার ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে।" টিনার কোমরটা এক হাতে ধরে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে নিয়ে আদুরে গলায় কথাগুলো বললো ইউসুফ।
"ওক্কে .. একবার যখন বলে দিয়েছো, তখন আমি 'না' বললে কি আর তুমি শুনবে? পেমেন্টের ব্যাপারটা একটু বাড়িয়ে দিও প্লিজ। আমি পাশের ঘরে গেলাম, কয়েকটা ফোন করতে হবে।" এই বলে কাঠের দরজাটা খুলে পাশের ঘরটায় ঢুকে গেলো টিনা।
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~