Thread Rating:
  • 167 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
পঞ্চনবতি অধ্যায়




দুটো খাট আলমারি সহ কিছু আসবাব পত্র লরিতে তোলা হল,এছাড়া বাসনপত্র বাক্সপেটরা।প্রথমে কথা হয়েছিল পানুবাবুও ট্রেনে একসঙ্গে যাবে।পানুবাবুই আপত্তি করলেন এতটাকার মালপত্র বিশ্বাস করে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবেনা পানুবাবু লরিতেই যাবেন। পানুবাবু লরিতে উঠে বসতে পাঞ্চালী বলল,কাকু মনে আছে তো উত্তরায়ন?
হ্যা-হ্যা ড্রাইভার চেনে।তুমি চিন্তা কোরো না।
লরি স্টার্ট করতে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।সুখর কথা মনে পড়ল একা একা কি করছে কে জানে।রোজ রোজ হোটেলে খাওয়া সময় মত খাচ্ছে কিনা ভেবে মন খারাপ হয়।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠীল পাঞ্চালী।আজ আর চেম্বারে বসবে বলে দিয়েছে।ঘর ফাকা একটা টুল টেনে বসতে পিয়ালী মিত্র এক কাপ চা নিয়ে মেয়েকে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
চায়ে চুমুক দিয়ে পাঞ্চালী বলল,কিছু বলবে?
ভাবছি মনুটা একা একা কিযে করছে।পিয়ালী দেবী বললেন।
মামণির কথায় গা জ্বলে যায়।জামাইয়ের চিন্তায় ঘুম আসছে না।বলল,দেখো মামণি তোমার মনু একজন প্রফেসার কলেজে পড়ায়,বাচ্চা ছেলে নয়--।
কলেজে পড়ায় তো কি হয়েছে বাচ্চারও অধম।বিষয় বুদ্ধি বলতে কিছু নেই।দীপার কাছে শুনিস নি নাওয়া-খাওয়া সব বলে বলে করাতে হয়। কথা বললে বোঝা যায়--।
ওর সঙ্গে আমি পড়তাম দিনের পর দিন রোজ দেখা হতো আর তুমি একদিন কথা বলেই সব বুঝে গেছো?আচ্ছা তোমার এত চিন্তা কেন বলতো?
তুই বুঝবি না মা হলে বুঝতে পারতিস।পিয়ালী দেবী অন্য ঘরে চলে গেলেন।
এর মধ্যে মা হওয়ার কথা আসছে কেন পাঞ্চালি বুঝতে পারেনা। সেদিন দুপুরের কথা মনে পড়তে পাঞ্চালীর ঠোটে লাজুক হাসি।বাচ্চা--বাচ্চুসোনা সেদিন সকালে  যা করেছে মামণিকে তো এসব বলা যাবেনা।ঐখানে মুখ দিয়ে যা করছিল ঘেন্না-পিত্তি বলে কিছু নেই।সারা শরীরে শিহিরণ খেলে গেল।কখন দেখা হবে পাঞ্চালীর মন উচাটন।রোদ পড়লেই বেরিয়ে পড়তে হবে।ট্রেনের যা অবস্থা।একবার ফোন করার কথা কি ভেবে করল না।খেয়ে দেয়ে একটু বেলায় করলেই হবে।এখন হয়তো ব্যস্ত আছে বাচ্চু সোনা।
এন সি এস অর্থাৎ নরেশ সরকার সিনিয়ার ইংরেজী শিক্ষক।এস আর বি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের প্রশংসা তার কানে এসেছে।এটা তার পছন্দ নয়।নতুন এসেছে তেমন আলাপী নয় অল্প স্বল্প কথা হয়েছে মাঝে মাধ্যে।ঘণ্টা বাজতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে করিডোর ধরে স্টাফ রুমের দিকে ধীর পায়ে হাটতে থাকেন এন সি এস।নজরে পড়ল ক্লাস থেকে বেরিয়েছে এসআরবি ছাত্রীরা ঘিরে ধরে কথা বলছে।বিরক্ত হয় এনসিএস মুখ বেকিয়ে ওদের অতিক্রম করে স্টাফ রুমে ঢুকে গেলেন। 
এসআরবি স্টাফ রুমে ঢুকে একপাশে বসতে নরেশ বাবু বললেন,মি বোস কিছু মনে নাকরলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
সুখ হেসে বলল,অবশ্যই করবেন মনে করব কেন?
ক্লাস শেষ হতে ছেলে মেয়েরা বেরিয়ে এসে আপনাকে ঘিরে ধরে কি এমন কথা বলে?
পড়াশুনার কথাই বলে।ওদের মনে কিছু প্রশ্ন থাকে--।
কই আমাকে তো ওভাবে ঘিরে ধরে প্রশ্ন করেনা?
সুখ একটু ইতস্তত করে বলল,আপনাকে স্যার হয়তো মানে ভয় পায়।
রাইট।এই কথাই আমি বলছিলাম।শিক্ষককে যদি ভয় না পায় তাহলে আপনি ক্লাস ম্যানেজ করবেন কি করে?নরেশবাবু সুযোগ পেয়ে জোর দিয়ে কথাগুলো বলে বেশ তৃপ্তি বোধ করেন।
স্টাফ রুমে সবার নজর সেদিকে ঘুরে গেল।
সুখ সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দ্বিধা জড়িত গলায় বলল,স্যার আপনি সিনিয়ার মোস্ট শিক্ষক আপনার কাছে আমার অনেক শেখার আছে।আমি সবে অধ্যাপনায় ঢুকেছি তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি আমি যতদূর জেনেছি বুঝেছি তাতে মনে হয় ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যদি ভয়ের প্রাচীর থাকে তাহলে কম্যুনিকেট করতে সেই প্রাচীর বাধা হয়ে দাড়াবে।শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক হওয়া উচিত বন্ধুর মত।যাতে তারা ভয় সঙ্কোচের বাধা পেরিয়ে মনে খুলে নিজের কথা শেয়ার করতে পারে।ভয় তো মানুষ ভুতকেও পায়--।
হয়েছে হয়েছে।নরেশবাবু বাধা দিয়ে বললেন,এখানেও আপনি ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন নাকি?
ছি ছি কিযে বলেন আমার এখন শেখার সময়--।
নরেশ বাবু উঠে দাড়িয়ে বললেন,আপনাকে বলাই আমার ভুল হয়েছে।আপনি বন্ধুর মতো না শ্ত্রুর মিশবেন আপনার ব্যাপার-- আমার এখন ক্লাস আছে।বলে গজগজ কোরতে কোরতে স্টাফ রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। সুখ একটু অপ্রস্তুত বোধ করে।অমলবাবু বললেন,নরেশবাবুকে ভূত বলা আপনার ঠিক হয়নি।
আমি তো ওকে ভূত বলিনি।আমাকে তো কথাটা শেষ করতেই দিলেন না।আমি বলতে চেয়েছি ভূতের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে শেখার মত মানসিকতা থাকেনা। 
ঘণ্টা পড়তে একে একে সব বেরিয়ে যেতে সীমিন্তিনী কাছে এসে মুখ টিপে হেসে বললেন,আপনি সুন্দর কথা বলেন।
সুন্দর-অসুন্দরের কথা নয় আমার যা ধারণা সেকথাই বলেছি।
এখন ক্লাস নেই আপনার?
এর পরের পিরিয়ডে আছে।
এসবি পাশে বসে বললেন,আপনার সঙ্গে ভালো করে আলাপই হয়নি।আগে কি করতেন?
কিছুই না।এই আমার প্রথম চাকরি।
আমি আগে একটা কলেজে ছিলাম।তখনই মি.বেরার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়।এবার আপনি একটা বিয়ে করে ফেলুন।আমার এক ননদ আছে ওর রান্নার হাত চমৎকার।বলুন তো কথা বলতে পারি।
সুখ হাসল।
হাসলেন যে,ভাবছেন বিয়ে করেন নি কি করে জানলাম?শুনুন প্রথম কথা আপনি হোস্টেলে থাকেন।দ্বিতীয়ত আপনার উদাসীন ভাব এলোমেলো জীবন যাপন।নারী সস্পর্শে আসলে ছেলেদের মধ্যে উড়ু উড়ু ভাব থাকেনা।খুটো ছাড়া গরু এলোমেলো ঘুরে বেড়ায় এরতার ক্ষেতে মুখ দেয় সেজন্য গরুকে খুটোতে বেধে রাখতে হয়--।
এসআরবিকে অন্যমনষ্ক দেখে এসবি জিজ্ঞেস করলেন,কি ভাবছেন বলুন তো?
স্যার অকারণ আমার উপর রেগে গেলেন--।
ছাড়ুন তো--জেলাস! ছাত্রদের মধ্যে আপনার জনপ্রিয়তা দেখে ওর গাত্রদাহ বুঝলেন না।শুনুন মি.বোস  বয়সে আপনি আমার অনেক ছোটো হলেও আমার কলিগ।আপনার সঙ্গে সব কথা শেয়ার করা যায়।
একটা কথা বলব?
একটা কেন যত ইচ্ছে বলুন।
আমি যদি আপনাকে সীমাদি বলি আপত্তি করবেন?
আপত্তি করব কেন।নাম তো ডাকার জন্য।সীমা বললেও আপত্তি করব কেন?
অমলবাবু আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করলেন।আমি কি স্যারকে ভূত বলেছি?
ওর নামই অমল মনে ভর্তি মল।জানেন এক ছাত্রী একটা সোনার চেন গলায় এসেছে নীচে পানের মত পেনড্যাণ্ট।বুকে হাত দিয়ে পেন্ড্যাণ্টটা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,এটা কি সোনার?সোনা না পিতল তোমার কি দরকার।মেয়েদের বুকে হাত দিতে খুব ভাল লাগে?
সুখর এসব কথা ভাল লাগেনা বলল,বাদ দিন এসব--। 
বাদ দেবো মানে জানেন আমাকেও টারগেট করেছিল।আপনি আবার কাউকে বলবেন না।আমি নতুন জয়েন করেছি।একদিন কলেজে আসছি হঠাৎ একটা রিক্সা এসে আমার পাশে দাড়ালো।তাকিয়ে দেখলাম অমলবাবু,আমাকে রিক্সায় উঠতে বললেন।সরল মনে রিক্সায় উঠে বসলাম।কিছুক্ষন যাবার পর খেয়াল করি আমার পাছায় চাপ দিচ্ছে।ভীষণ রাগ হল বললাম,বুড়ো বয়সে একী ভীমরতি।অমনি আমতা আমতা করতে লাগল।পাছা টিপলে আমার জাত চলে যাবে বলছি না কিন্তু আমারও একটা পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে।যেকেউ টিপবে আমি এ্যালাও করব কেন? 
সুখ ভাবে নিজের বিয়ের কথা কিভাবে বলবে।মেয়েরা একটু পরচর্চা ভালবাসে।এদিক দিয়ে পাঞ্চালী অন্য রকম তার মুখে অন্যের নিন্দে শোনেনি।
কি ব্যাপার বলুন তো আমি এক নাগাড়ে বকে যাচ্ছি আপনি তো কোনো কথাই বলছেন না।অবশ্য আমিও বেশি কথা বলা ছেলেদের পছন্দ করিনা।ছেলেরা হবে গম্ভীর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন--।
সীমাদি আজ আমার বউয়ের আসার কথা মানে--।
আসার কথা মানে কোথায় আসবে?
উত্তরায়নে বাড়ী ভাড়া নিয়েছি--।
মিসেস নিশ্চয়ই গৃহ বধূ চাকরি করলে আসা সম্ভব হতো না।মি.বেরার সরকারী চাকরি অনেক ধরে করে উত্তর বঙ্গে বদলি হয়ে এসেছেন।
ও ডাক্তারী করে।স্পেশাল সাব্জেক্ট ছিল গাইনোকোলজি।
এসবি চোখ বড় বড় করে তাকালেন বললেন,আপনি তো সাংঘাতিক লোক মশায়!হাসতে হাসতে মানুষ খুন করতে পারবেন।
ঘণ্টা বেজে গেছে মল্লিকা আচার্য ঢুকে ওদের দেখে বললেন,কি ব্যাপার এসআরবি-এসবি বেশ ভালই জোট বেধেছে।
সীমন্তিনীর  কথাটা শুনতে ভালো লাগে বললেন,মিসেস আচার্য শুনেছেন এস আর বির ওয়াইফ একজন ডাক্তার?
তাই নাকি এতো সুখবর। এখানে কোথায় বসছেন?
উত্তরায়নে বসবেন।
সুখর ক্লাস আছে উঠে ক্লাসের দিকে রওনা হল।
খাওয়া দাওয়ার পর মেঝেতে মাদুর পেতে শুয়ে পড়ল পাঞ্চালী।কাকু এতক্ষনে অনেকদূর চলে গেছে।শুনেছে ট্রেনের চেয়ে বাই রোড গেলে সময় কম লাগে।মনে হয় সাতটা-আটটার মধ্যে পৌছে যাবে।নর্থ বেঙ্গলে আগে কখনো যাওয়া হয়নি।মনুটা কোথায় ভাড়া নিয়েছে কে জানে। মামণি বলছিল নাওয়া-খাওয়া সব বলে বলে করাতে হয়। সেদিন সকালে উদ্যোগী নাহলে হয়তো কিছুই হতোনা।পাশে যুবতী বউ নিয়ে একটা মানুষ কিভাবে ভুশ-ভুশ করে ঘুমোতে পারে ভেবে অবাক লাগে। ফোন করতে গিয়ে ঘড়ি দেখে বিরত হোক।ফোন করলেই বলে ক্লাসে যাচ্ছি।আর একটু বেলায় ফোন করবে।একবার যাই তোমার ক্লাস করা বের করছি। 
পারুলকে নিয়ে পিয়ালী মিত্র জিনিসপ্ত্র গোছগাছ করছেন।মেয়েটা যদি একটু সাহায্য করে।পারুল বলল,ঐ খানে খুব শীত না?
ওখানে শীত হবে কেন?শীত হচ্ছ পাহাড়ে।তোমার যা গুছিয়ে নেও।ওখানে গিয়ে এটা আনিনি ওটা আনিনি বোলো না।
পাঞ্চালী মোবাইলের বাটন টিপে কানে লাগালো।ওপাশ থেকে সাড়া পেয়ে বলল,আজ হোস্টেলে থাকতে হবেনা,উত্তরায়নে থাকবে....হ্যা জানি বিছানাপত্র নেই...যা বলছি শোনো একটা রাত...হ্যা জুলুম করছি তোমাকে যা বলেছি করবে...যখনই পৌছাই তুমি উত্তরায়ণে থাকবে ব্যাস।পাঞ্চালী ফোন রেখে নিশ্চিন্ত হল।ও জানে মনুর পক্ষে অবাধ্য হওয়া সম্ভব নয়।
 পিয়ালী দেবী ঢুকে বললেন,তুই এখনো শুয়ে আছিস তাহলে বেরোবি কখন? 
 
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by kumdev - 31-07-2023, 12:11 AM



Users browsing this thread: 31 Guest(s)