27-07-2023, 08:28 PM
"তখন অফিস রুমে কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো ওই ফটোগুলো দেখছিলিস তাই না?" সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে উঠতে প্রশ্ন করলো রজত বণিক।
"ক..কই না তো! আপনি কোন কাঠের ফ্রেমের কথা বলছেন, ঠিক বুঝতে পারলাম না।" তার পিসেমশাইয়ের কথার উত্তরে কিছুটা থতমত খেয়ে গিয়ে বললো সৈকত।
"চোপ একদম, মিথ্যা কথা বললে লাথি মেরে সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দেবো। শালা, হারামি বাপের হারামি ছেলে! তুমি চেনো না আমাকে বাঞ্চোদ! তুই যে তোতলাচ্ছিস, তাতেই প্রমাণ হয়ে যায় তুই মিথ্যে কথা বলছিস। তাছাড়া আমার এই চোখদুটো কিন্তু সাংঘাতিক, ভুল দেখা তো দুরস্থান, আমি সামনে থাকলে এই দুটো এড়িয়ে কিছু করা প্রায় অসম্ভব।" মাঝ সিঁড়িতে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে সৈকতের চোখের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো রজত বাবু।
"আ..আজ্ঞে হ্যাঁ পিসেমশাই। না মানে, হ্যাঁ মানে আমি ওই একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তো, তাই ছবিগুলোর দিকে চোখ চলে গিয়েছিল আমার। আপনি কিছু মনে করবেন না আর মাকেও প্লিজ বলবেন না কথাগুলো।" পিসেমশাইয়ের গর্জনে প্যান্টে পেচ্ছাপ করে দেওয়ার মতো অবস্থায় চলে গিয়ে মিনমিন করে উত্তর দিলো সৈকত।
- "তুই কি তোর বাপের সঙ্গেও আপনি-আজ্ঞে করে কথা বলিস? 'তুমি' করে বলবি আমাকে। ঠিক আছে এত ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই, আমি তোকে সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দেবো না। আর আমার সামনে এত লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই, একদম মন খুলে কথা বলবি। তা ওই ছবিগুলো কোন কোন নায়িকার, সেটা চিনতে পেরেছিস?"
- "আ..আমি কি করে চিনবো পিসেমশাই? আমি তো এই প্রথম দেখলাম ছবির ওই মেয়েগুলোকে।"
- "আবার মিথ্যে কথা? তুই ওদের খুব ভালোভাবেই চিনতে পেরেছিস। তুই যে এডাল্ট সাইটের পোকা, সেটা আমি তোর বন্ধু মানে আমার পার্টনারের কাছ থেকে আগেই শুনেছি। শুধু তোর মায়ের ব্যাপারে আগে থেকে কোনো ইনফরমেশন আমার পার্টনার দেয়নি বলে আজকের সারপ্রাইজটা সত্যিই লাজবাব হয়ে রইলো আমার কাছে। তবে আগে থেকে জানলে বাড়িটা পুরো সাফ করে রাখতাম, আজ আর কোনো অ্যাসাইনমেন্ট রাখতাম না। ঠিক আছে, কিছু পরোয়া নেহি, কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হবে।"
'কিসের অ্যাসাইনমেন্ট? কেনই বা আগে থেকে বাড়ি সাফ করে রাখার কথা বললো তার পিসেমশাই? আর কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার অর্থই বা কি?' এই কথাগুলোর কোনো অর্থ খুঁজে পেলো না সৈকত। "মে আই কাম ইন টিনা? শাওয়ার নেওয়া কমপ্লিট তোমার? লাঞ্চ করেছো?" দোতলায় পৌঁছে কাঠের বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রজত বাবুর এই উক্তিতে ভাবনার ঘোর কাটলো সৈকতের।
'টিনা বলে কাকে ডাকলো তার পিসেমশাই? তবে কি, তবে কি, এ নিচের অফিস রুমে দেখা সেই ছবির টিনা? সত্যিই যদি তাই হয়, তাহলে তো সে আর তার মা একটা ভয়ঙ্কর জায়গায় এসে পড়েছে! কি করে বেরোবে তারা এখান থেকে?' ভাবনার জালে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছিলো সৈকত।
"তোমার আর ভেতরে আসার দরকার নেই রজত। এলেই তো আবার দুষ্টুমি শুরু করবে। সকাল থেকে একটা শট already দেওয়া হয়ে গেছে আমার। আরও একটা বাকি, make it fast রজত! তোমার পার্টনার ইউসুফকে ডাকো। লাঞ্চ করা, শাওয়ার নেওয়া, সবকিছুই হয়ে গেছে। শট দুটো কমপ্লিট করে I have to go, নিচে গাড়ি আছে তো? আচ্ছা কেউ কি এসেছে? একজন মহিলার গলার আওয়াজ পাচ্ছিলাম .." ঠিক তখনই হলুদ রঙের একটি স্লিভলেস টপ আর গাঢ় নীল রঙের একটি শর্ট স্কার্ট, যেটির ঝুল হাঁটুর বেশ কিছুটা উপরে উঠে রয়েছে .. এইরকম একটি ড্রেস পড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এসে কথাগুলো বললো একজন মেয়ে।
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করতে লাগলো সৈকতের। ভারতীয় পর্ন ছবিগুলি দেখার সময় যে মেয়েটির নগ্ন শরীর দেখে উত্তেজিত হয়ে কতবার যে সে বাথরুমে গিয়ে হস্তমৈথুন করেছে, তার ঠিক নেই! কিছুক্ষণ আগেও ঊর্ধ্বাঙ্গের অন্তর্বাসহীন অবস্থায় ভেজা সাদা শাড়ি পড়া অবস্থায় নিচের অফিস রুমে যে মেয়েটি ছবি দেখে সে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো। সেই মেয়েটি বর্তমানে সশরীরে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
"হ্যাঁ, একজন ভদ্রমহিলা এসেছে, আমার রিলেটিভ। একদম ফ্রেশ আর এই লাইনে নতুন। ঠিকঠাক খেলিয়ে তুলতে পারলে মালামাল হয়ে যাবো ডার্লিং। বলছিলাম, পাখির পায়ে শিকল পরানোর জন্য তোমার একটু সাহায্য দরকার। এইসব ক্ষেত্রে তো তোমাকে কিছু বলে দিতে হয় না .. কি করতে হবে আর কি বলতে হবে! তুমি একটু নিচে এসে ব্যাপারটা দেখো। চিন্তা করো না, পনেরো মিনিটের মধ্যে তোমার একাউন্টে আজকের টাকাটা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ এই ব্যাপারটার জন্য এক্সট্রা দিয়ে দেবো, don't worry .." কথাগুলো অবলীলায় বলে টিনার কাঁধে হাত রেখে পুনরায় সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করলো রজত বণিক। তার পিসোমশাইকে অনুসরণ করতে থাকা সৈকত লক্ষ্য করলো তার দিকে ফিরেও তাকালো না মেয়েটি।
উপরে দেখা তার চমকের রেশ তখনো কাটেনি। কিন্তু নিচে নামার পর তার জন্য যে এরকম একটা দৃশ্য অপেক্ষা করে থাকবে, সেটা বোধহয় স্বপ্নেও কোনোদিন কল্পনা করেনি সৈকত। "আরে, কুছ তো শরম কারো ইয়ার তুমলোগ। আমি এখানে ঝুমার নন্দাই উপস্থিত রয়েছি, সর্বোপরি ওর ছেলে এখানে রয়েছে, আর তোমরা খুল্লামখুল্লা চুম্মাচাটি করে যাচ্ছ?" অফিস রুমে প্রবেশ করে উচ্চকণ্ঠে কথাগুলো বললো রজত বণিক।
তার পিসেমশাইয়ের গলার আওয়াজ শুনে সৈকত তাকিয়ে দেখলো, তখনও তার মা চেয়ারে বসে রয়েছে আর তার মায়ের গালটা রুমাল দিয়ে মুছে দিচ্ছে ইউসুফ। "আরে তুমি যেটা ভাবছো সেরকম কিছু নয়, খাইয়ে দিতে দিতে ঝুমার গালে মাংসের ঝোল লেগে গেছিলো, হাত দিয়ে মুছতে গিয়ে দেখলাম আরো ঘেঁটে গেলো। তাই মানে জিভ দিয়ে একটু .. হেহেহে .." অসভ্যের মতো গা জ্বালানি একটা হাসি দিয়ে কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে জানালো ইউসুফ।
তারমানে, ইউসুফ ভাই তার মায়ের গালে জিভ দিয়ে চেটে পরিষ্কার করে দিচ্ছিলো? ছিঃ ছিঃ ছিঃ! ... আর ভাবতে পারলো না সৈকত।
"অনেক সাইড টক হয়েছে, এবার আসল কথায় আসি। আলাপ করিয়ে দিই .. ইনি হলেন মিসেস বন্দনা গুহ, আমার শ্যালকের স্ত্রী। আর এ হলো মিস টিনা, আমি যে ফিল্মগুলো প্রডিউস করি তার একজন হিরোইন।" সৈকত দেখলো তার পিসেমশাইয়ের কথা শেষ হওয়ার পর হলুদ রঙের স্লিভলেস টপ আর গাঢ় নীল রঙের শর্ট স্কার্ট পরিহিতা টিনা এগিয়ে গেলো চেয়ারে বসে থাকা তার মায়ের দিকে। তারপর নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, "নাইস টু মিট ইউ, মিসেস গুহ .."
বন্দনা দেবী চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে নমস্কার করলেন টিনাকে। তারপর অতিরিক্ত উৎসাহ দেখিয়ে বললেন, "আপনি হিরোইন? কোন কোন সিনেমায় অভিনয় করেছেন আপনি? টিভিতে দেখায় নিশ্চয়ই আপনার সিনেমাগুলো? আমি ভীষণ সিনেমা দেখতে ভালোবাসি। আপনার করা সিনেমাগুলোর নাম জানলে, দেখতাম।"
তার সিনেমাগুলো টিভিতে দেখায় কিনা .. হঠাৎ করে বন্দনা দেবীর মুখ থেকে এইরকম প্রশ্ন শুনে প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে "খুক্ খুক্ খুক্ খুক্" করে কেশে উঠে, তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে রজত বাবুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে টিনা মৃদুস্বরে উক্তি করলো, "she is very innocent .." তারপর আবার বন্দনা দেবীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো, "আমার ছবিগুলো তো টিভিতে দেখায় না মিসেস গুহ! তবে ওটিটি প্লাটফর্মে রয়েছে আমার অভিনয় করা বেশ কিছু ফিল্ম। আপনার বন্ধু ইউসুফকে বলবেন, ও দেখিয়ে দেবে আপনাকে। আপনি কি কাজের জন্য, আই মিন অ্যাক্টিং বা মডেলিংয়ের জন্য এখানে এসেছেন?"
- "না না, সেরকম কোনো ইচ্ছে নিয়ে আমি এখানে আসিনি। আমি তো এখানে ফিল্মের শ্যুটিং দেখতে এসেছিলাম। ইউসুফ, মানে আমার ছেলের বন্ধু অবশ্য আমাকে বলেছিলো এখানে যদি ফিল্মের অথবা বিজ্ঞাপনের প্রডিউসার থাকেন, তাহলে আমি করতে পারি এরকম কোনো কাজ হলে ও বলবে।"
- "এখানে তো আমাদের প্রডিউসার কাম ডিরেক্টর, এবং অ্যাকটার দু'জনেই উপস্থিত রয়েছে। আর দুজনের সঙ্গেই আপনার সম্পর্ক ভালো, তার মধ্যে একজন আবার আপনার পূর্ব পরিচিত। একসঙ্গে যখন এতকিছু comfort zone পাচ্ছেন, তখন I think you should join with us .. আমি রজত স্যারকে এই মুহূর্তে সবার সামনেই রিকোয়েস্ট করছি, at present আমাদের যে মুভিটার শ্যুটিংটা চলছে, সেটাতে যেন আপনাকে কোনো একটা ক্যারেক্টারের জন্য উনি ভাবেন!"
টিনা নামের মেয়েটির সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা না থাকার জন্য, তার মুখে কথাগুলো শোনার পর হঠাৎ করেই নিজের স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার আনন্দে বন্দনা দেবীর মুখমণ্ডলে যখন একটি উজ্জ্বল আভা ফুটে উঠলো! ঠিক তখনই টিনা আসলে কোন ধরনের সিনেমায় কাজ করে, সেই সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সৈকতের চোখেমুখে এক অজানা আশঙ্কার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠলো। "মা, তুমি আর ওদের ফাঁদে পা দিও না! চলো, আমরা এখনি এখান থেকে চলে যাই .." চিৎকার করে কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করলো তার। কিন্তু নিজের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার তাগিদে এবং ছোট পিসেমশাইয়ের রক্তচক্ষুর দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারলো না সৈকত।
"বলতে পারেন, আমি সিনেমার পোকা। বাংলা হিন্দি সব ধরনের সিনেমাই আমি দেখি। আসলে বাড়ির কাজকর্ম শেষ হয়ে যাওয়ার পর একটা কিছু নিয়ে তো ব্যস্ত থাকতে হবে! নাচ, আঁকা, গান, সেলাই .. এসব বিষয়ে কোনোদিনই আমার আগ্রহ ছিলো না। তাই টিভি সিরিয়াল আর সিনেমা দেখাটাকেই নিজের মনোরঞ্জনের জন্য বেছে নিয়েছিলাম। অল্প বয়সে তো হলে গিয়ে সিনেমা দেখতাম! কিন্তু বিয়ে হওয়ার পর, সৈকতের বাবা আমাকে একদিনের জন্যও সিনেমা হলে নিয়ে যায়নি, তাই এখন টিভিই ভরসা। এমত অবস্থায় সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পাওয়ার কথা শুনে আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে, আপনাদেরকে বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু সিনেমায় কাজ করা বোধহয় আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ, ওর বাবা বিশেষ করে আমার শাশুড়ি এবং বড় ননদ যদি জানতে পারে আমি সিনেমায় নেমেছি, তাহলে বিশাল অশান্তি হবে।" ইচ্ছা সত্বেও কোনো জিনিস করতে না পারার মধ্যে যে একটা চাপা কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে, সেইরূপ ভঙ্গিতেই কথাগুলো বললেন বন্দনা দেবী।
"hold on hold on .. 'সিনেমায় নামা' এই কথাটাতে আমার যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। সিনেমা করা কি কোনো নিষিদ্ধ কাজ বা কোনো গর্হিত অপরাধ? যে ওটা করতে গেলে নামতে হবে তোমাকে। আমি তো সবাইকে নিজের সম্বন্ধে বলি, 'সিনেমায় উঠেছি' নেমেছি নয়। যাইহোক, তোমার সঙ্গে এই ক'দিন কথা বলে যেটুকু বুঝেছি, শ্বশুরবাড়ির লোকজন শুধু তোমার থেকে নিয়েই গেছে, তোমাকে দেয়নি কিছুই। বিয়ের পর মা-বাবাকে ছেড়ে যখন মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে আসে, তখন স্বামীর ঘরকে নিজের ঘর আর শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের মা-বাবা মনে করে মেয়েরা। এটাই তাদের শেখানো হয় ছোটবেলা থেকে, তোমাকেও শেখানো হয়েছিলো নিশ্চয়ই। তাই তুমিও সৈকতের দাদু-ঠাকুমাকে নিজের মা-বাবার মতোই ভক্তি শ্রদ্ধা করতে। কিন্তু একদিনের জন্যেও কি ওদের কাছ থেকে পিতৃ-মাতৃসুলভ স্নেহ এবং ভালোবাসা পেয়েছিলে? নাকি এখন পাও? নিজের বুকে হাত দিয়ে বলতো, স্বামীর ভালবাসা পেয়েছো কোনোদিন? তাহলে কিসের এত শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের অশান্তির ভয় পাচ্ছো তুমি? এতদিন তো নিজের শখ-আহ্লাদ সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়ে, সেবা করলে ওনাদের। এবার একটু নিজের জন্যও বাঁচো! তাছাড়া স্বাবলম্বী হবে তুমি, দু'হাতে রোজগার করবে .. এটাও কি কম কিছু? এই লাইনে টাকার অঙ্কটাও কিন্তু নেহাত কম নয়!" এতক্ষণ ধরে চলা ইউসুফের ভাষণ শুনে বন্দনা দেবী কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগেই আবার " খুক্ খুক্ .." কেশে উঠলো টিনা।
একে রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর। ইউসুফের কথাগুলো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলো রজত বণিক, "আরে আমি তো একটু আগেই বললাম, ওর শ্বশুরবাড়ির সবকটা লোক ঢ্যামনা। নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা। ঝুমার মতো এইরকম একটা সরল সাদাসিধে ভালো মেয়ে ওদের বাড়ির বউ হয়ে গিয়েছিল বলেই সংসার টা এখনো টিকে রয়েছে। অন্য কোন মেয়ে হলে, কবে সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে বেরিয়ে চলে আসতো! তাছাড়া তুমি যে অশান্তি ভয় পাচ্ছ, সেরকম কিছুই হবে না। কারণ, আমি যে ফিল্মগুলো বানায় মানে প্রডিউস করি সেগুলো কোনদিনও টিভিতে দেখায় না, in fact সিনেমা হলেও রিলিজ হয় না। এগুলো শুধু কিছু সিলেক্টিভ ওয়েবসাইটে দেখা যায়। ওই যে তোমাকে একটু আগে টিনা বললো .. ওটিটি প্লাটফর্মে রয়েছে ওর বেশ কিছু অভিনয় করা সিনেমা! তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে, এখন এই বুড়ি বয়সে তোমার শাশুড়ি নিশ্চয়ই ইন্টারনেট ঘেঁটে তোমার করা সিনেমাগুলো দেখতে যাবে না! আর তোমার বর? সে তো ইন্টারনেট কি .. খায় না মাথায় মাখে? সেটাই জানেনা। ওয়েবসাইট কিংবা ওটিটি প্লাটফর্ম .. এই কথাগুলো শান্তিরঞ্জন কোনোদিন শুনেছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। তাহলে তোমার বরেরও তোমার অভিনয় করা ছবিগুলো দেখার কোনো প্রশ্নই উঠছে না। তাছাড়া আমার সিনেমায় অভিনয় করা পুরুষ এবং নারী চরিত্রগুলোকে এমনভাবে মেকআপ করিয়ে সাজানো হয় যে, তাদের সিনেমায় অভিনয় করার সময় একদম অন্যরকম দেখতে লাগে। আর অভিনয় করবো বললেই তো অভিনয় করা যায় না। আমি যতই তোমার পরিচিত হই না কেন, একজন প্রডিউসার এবং ডিরেক্টর হিসেবে তোমার স্ক্রিনটেস্ট অবশ্যই নেওয়া হবে। পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই অভিনয় করার সুযোগ পাবে।"
দুইদিক থেকে মস্তিষ্ক প্রক্ষালন এবং উপর্যপুরি আশ্বাসের বাণী শুনে এই দুই ব্যক্তিকে তার সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী বলে মনে হলো সৈকতের নির্বোধ মায়ের। শুধু তাই নয়, সে নিজেকে যতটা চেনে, তার থেকে এই দুই ব্যক্তি যেন তাকে অত্যাধিক এক্সপ্লোর করতে পেরেছে, এটাও মনে হলো তার। "ঠিক আছে আপনারা যেরকম বলছেন, সেরকম যদি হয় তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।" খুশিতে গদগদ হয়ে উক্তি করলেন বন্দনা দেবী।
"আমরা যে ফিল্মের শ্যুটিংটা শুরু করবো একটু পরে, সেটারই কোনো একটা রোলে কয়েকটা ডেমো শট করিয়ে নাও মিসেস গুহকে দিয়ে। এতে ওনার এক্সপেরিয়েন্সটাও হয়ে যাবে, আর তোমারও স্ক্রিনটেস্ট নেওয়া হয়ে যাবে। ভুল বললাম কিছু?" রজত বণিকের শার্টের বোতাম ঠিক করার অছিলায় ন্যাকা ন্যাকা ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো টিনা।
"একদম ঠিক কথা বলেছো। তুমি কখনো ভুল বলতে পারো? মাই সুইটু .." টিনার গালদুটো টিপে দিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে হাসতে জবাব দিলো রজত বাবু।
"আসলে, আমরা তো শর্টফিল্ম বানাই! শুটিং যদিও অনেকক্ষণ ধরেই হয়, কিন্তু এডিট করার পর আধঘন্টা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ডিউরেশন হয় আমাদের ফিল্মগুলোর। তাই ক্যারেক্টার খুব বেশি থাকে না। ম্যাক্সিমাম পাঁচটা থেকে ছ'টা ক্যারেক্টার নিয়ে আমাদের ফিল্মগুলো হয়। বর্তমানে যে সিনেমাটার শ্যুটিং চলছে, সেটাতে চারটে ক্যারেক্টার রয়েছে। বাবা, মা, ছেলে আর ছেলের বান্ধবী। বাবার রোলটা আমার পার্টনার মানে এই ফিল্মের প্রডিউসার অ্যান্ড ডাইরেক্টর মিস্টার রজত করছে। ছেলে আমি, আমার আই মিন ছেলের বান্ধবীর রোলটা করছে টিনা। আর বাবা, আই মিন রজতের ওয়াইফের রোলের জন্য অলরেডি একজন নিউকামারকে ঠিক করা হয়ে গিয়েছে। সে অডিশনে পাশও করে গেছে। কিন্তু টিনা যখন বললো, তার উপর তুমি আমার একজন এত ভালো বান্ধবী, এছাড়া আমার পার্টনারের রিলেটিভ তুমি .. তাই তোমাকে একটা সুযোগ দেয়ার জন্য তোমার স্ক্রিনটেস্ট নিয়ে নিচ্ছি। যদি উতরে যাও, তাহলে রোলটা তুমিই করবে।" ইউসুফের মুখে কথাগুলো শোনার পর খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকা মুখমণ্ডলে একটা কালো ছায়া নেমে এলো বন্দনা দেবীর।
"মায়ের রোল?" দুঃখী দুঃখী মুখ করে জিজ্ঞাসা করলেন বন্দনা দেবী।
"দ্যাখো, আমি তো আগেই বললাম মাত্র চারটেই ক্যারেক্টার রয়েছে এই ফিল্মে। দু'জন পুরুষ আর দু'জন মহিলা। টিনা তো আগেই সিলেক্ট হয়ে গেছে। ওর যা বয়স এবং ফিগার, ওকে তো তুমি রিপ্লেস করতে পারবেনা! সিনেমাতে আমার বান্ধবীর রোলে কি তোমাকে মানাবে? তুমিই বলো! তাছাড়া ও আমাদের স্টার অ্যাক্ট্রেস। রইলো বাকি আর মাত্র একটাই নারীচরিত্র। তবে এই সিনেমায় আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করা মিস্টার রজতের ওয়াইফ হলেও তুমি আমার জন্মদাত্রী মা মোটেও নও এখানে। তুমি ওনার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করবে। ওনার প্রথম ওয়াইফ অর্থাৎ আমার নিজের মা মারা যাওয়ার পর উনি তোমাকে বিয়ে করেছেন। আর মায়ের রোল বলতে এখানে তুমি সেই প্রাচীনপন্থী বয়স্কা কোনো নারীকে কল্পনা করো না। তোমার রোলটাও যথেষ্ট মডার্ন হবে, জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। অনেক কথা হয়ে গেছে, এবার শ্যুটিং শুরু করতে হবে। আমাদের দোতলায় স্টুডিওতে যেতে হবে। চলো .." কথাগুলো বলে দ্রুতপায়ে ইউসুফ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলো। ওকে ফলো করলো রজত বণিক আর টিনা। আর সবার পেছনে সৈকত এবং তার মা ধীরে ধীরে উঠতে লাগলো সিঁড়ি দিয়ে।
"ক..কই না তো! আপনি কোন কাঠের ফ্রেমের কথা বলছেন, ঠিক বুঝতে পারলাম না।" তার পিসেমশাইয়ের কথার উত্তরে কিছুটা থতমত খেয়ে গিয়ে বললো সৈকত।
"চোপ একদম, মিথ্যা কথা বললে লাথি মেরে সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দেবো। শালা, হারামি বাপের হারামি ছেলে! তুমি চেনো না আমাকে বাঞ্চোদ! তুই যে তোতলাচ্ছিস, তাতেই প্রমাণ হয়ে যায় তুই মিথ্যে কথা বলছিস। তাছাড়া আমার এই চোখদুটো কিন্তু সাংঘাতিক, ভুল দেখা তো দুরস্থান, আমি সামনে থাকলে এই দুটো এড়িয়ে কিছু করা প্রায় অসম্ভব।" মাঝ সিঁড়িতে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে সৈকতের চোখের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো রজত বাবু।
"আ..আজ্ঞে হ্যাঁ পিসেমশাই। না মানে, হ্যাঁ মানে আমি ওই একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তো, তাই ছবিগুলোর দিকে চোখ চলে গিয়েছিল আমার। আপনি কিছু মনে করবেন না আর মাকেও প্লিজ বলবেন না কথাগুলো।" পিসেমশাইয়ের গর্জনে প্যান্টে পেচ্ছাপ করে দেওয়ার মতো অবস্থায় চলে গিয়ে মিনমিন করে উত্তর দিলো সৈকত।
- "তুই কি তোর বাপের সঙ্গেও আপনি-আজ্ঞে করে কথা বলিস? 'তুমি' করে বলবি আমাকে। ঠিক আছে এত ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই, আমি তোকে সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দেবো না। আর আমার সামনে এত লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই, একদম মন খুলে কথা বলবি। তা ওই ছবিগুলো কোন কোন নায়িকার, সেটা চিনতে পেরেছিস?"
- "আ..আমি কি করে চিনবো পিসেমশাই? আমি তো এই প্রথম দেখলাম ছবির ওই মেয়েগুলোকে।"
- "আবার মিথ্যে কথা? তুই ওদের খুব ভালোভাবেই চিনতে পেরেছিস। তুই যে এডাল্ট সাইটের পোকা, সেটা আমি তোর বন্ধু মানে আমার পার্টনারের কাছ থেকে আগেই শুনেছি। শুধু তোর মায়ের ব্যাপারে আগে থেকে কোনো ইনফরমেশন আমার পার্টনার দেয়নি বলে আজকের সারপ্রাইজটা সত্যিই লাজবাব হয়ে রইলো আমার কাছে। তবে আগে থেকে জানলে বাড়িটা পুরো সাফ করে রাখতাম, আজ আর কোনো অ্যাসাইনমেন্ট রাখতাম না। ঠিক আছে, কিছু পরোয়া নেহি, কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হবে।"
'কিসের অ্যাসাইনমেন্ট? কেনই বা আগে থেকে বাড়ি সাফ করে রাখার কথা বললো তার পিসেমশাই? আর কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার অর্থই বা কি?' এই কথাগুলোর কোনো অর্থ খুঁজে পেলো না সৈকত। "মে আই কাম ইন টিনা? শাওয়ার নেওয়া কমপ্লিট তোমার? লাঞ্চ করেছো?" দোতলায় পৌঁছে কাঠের বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রজত বাবুর এই উক্তিতে ভাবনার ঘোর কাটলো সৈকতের।
'টিনা বলে কাকে ডাকলো তার পিসেমশাই? তবে কি, তবে কি, এ নিচের অফিস রুমে দেখা সেই ছবির টিনা? সত্যিই যদি তাই হয়, তাহলে তো সে আর তার মা একটা ভয়ঙ্কর জায়গায় এসে পড়েছে! কি করে বেরোবে তারা এখান থেকে?' ভাবনার জালে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছিলো সৈকত।
"তোমার আর ভেতরে আসার দরকার নেই রজত। এলেই তো আবার দুষ্টুমি শুরু করবে। সকাল থেকে একটা শট already দেওয়া হয়ে গেছে আমার। আরও একটা বাকি, make it fast রজত! তোমার পার্টনার ইউসুফকে ডাকো। লাঞ্চ করা, শাওয়ার নেওয়া, সবকিছুই হয়ে গেছে। শট দুটো কমপ্লিট করে I have to go, নিচে গাড়ি আছে তো? আচ্ছা কেউ কি এসেছে? একজন মহিলার গলার আওয়াজ পাচ্ছিলাম .." ঠিক তখনই হলুদ রঙের একটি স্লিভলেস টপ আর গাঢ় নীল রঙের একটি শর্ট স্কার্ট, যেটির ঝুল হাঁটুর বেশ কিছুটা উপরে উঠে রয়েছে .. এইরকম একটি ড্রেস পড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এসে কথাগুলো বললো একজন মেয়ে।
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করতে লাগলো সৈকতের। ভারতীয় পর্ন ছবিগুলি দেখার সময় যে মেয়েটির নগ্ন শরীর দেখে উত্তেজিত হয়ে কতবার যে সে বাথরুমে গিয়ে হস্তমৈথুন করেছে, তার ঠিক নেই! কিছুক্ষণ আগেও ঊর্ধ্বাঙ্গের অন্তর্বাসহীন অবস্থায় ভেজা সাদা শাড়ি পড়া অবস্থায় নিচের অফিস রুমে যে মেয়েটি ছবি দেখে সে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো। সেই মেয়েটি বর্তমানে সশরীরে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
"হ্যাঁ, একজন ভদ্রমহিলা এসেছে, আমার রিলেটিভ। একদম ফ্রেশ আর এই লাইনে নতুন। ঠিকঠাক খেলিয়ে তুলতে পারলে মালামাল হয়ে যাবো ডার্লিং। বলছিলাম, পাখির পায়ে শিকল পরানোর জন্য তোমার একটু সাহায্য দরকার। এইসব ক্ষেত্রে তো তোমাকে কিছু বলে দিতে হয় না .. কি করতে হবে আর কি বলতে হবে! তুমি একটু নিচে এসে ব্যাপারটা দেখো। চিন্তা করো না, পনেরো মিনিটের মধ্যে তোমার একাউন্টে আজকের টাকাটা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ এই ব্যাপারটার জন্য এক্সট্রা দিয়ে দেবো, don't worry .." কথাগুলো অবলীলায় বলে টিনার কাঁধে হাত রেখে পুনরায় সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করলো রজত বণিক। তার পিসোমশাইকে অনুসরণ করতে থাকা সৈকত লক্ষ্য করলো তার দিকে ফিরেও তাকালো না মেয়েটি।
★★★★
উপরে দেখা তার চমকের রেশ তখনো কাটেনি। কিন্তু নিচে নামার পর তার জন্য যে এরকম একটা দৃশ্য অপেক্ষা করে থাকবে, সেটা বোধহয় স্বপ্নেও কোনোদিন কল্পনা করেনি সৈকত। "আরে, কুছ তো শরম কারো ইয়ার তুমলোগ। আমি এখানে ঝুমার নন্দাই উপস্থিত রয়েছি, সর্বোপরি ওর ছেলে এখানে রয়েছে, আর তোমরা খুল্লামখুল্লা চুম্মাচাটি করে যাচ্ছ?" অফিস রুমে প্রবেশ করে উচ্চকণ্ঠে কথাগুলো বললো রজত বণিক।
তার পিসেমশাইয়ের গলার আওয়াজ শুনে সৈকত তাকিয়ে দেখলো, তখনও তার মা চেয়ারে বসে রয়েছে আর তার মায়ের গালটা রুমাল দিয়ে মুছে দিচ্ছে ইউসুফ। "আরে তুমি যেটা ভাবছো সেরকম কিছু নয়, খাইয়ে দিতে দিতে ঝুমার গালে মাংসের ঝোল লেগে গেছিলো, হাত দিয়ে মুছতে গিয়ে দেখলাম আরো ঘেঁটে গেলো। তাই মানে জিভ দিয়ে একটু .. হেহেহে .." অসভ্যের মতো গা জ্বালানি একটা হাসি দিয়ে কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে জানালো ইউসুফ।
তারমানে, ইউসুফ ভাই তার মায়ের গালে জিভ দিয়ে চেটে পরিষ্কার করে দিচ্ছিলো? ছিঃ ছিঃ ছিঃ! ... আর ভাবতে পারলো না সৈকত।
"অনেক সাইড টক হয়েছে, এবার আসল কথায় আসি। আলাপ করিয়ে দিই .. ইনি হলেন মিসেস বন্দনা গুহ, আমার শ্যালকের স্ত্রী। আর এ হলো মিস টিনা, আমি যে ফিল্মগুলো প্রডিউস করি তার একজন হিরোইন।" সৈকত দেখলো তার পিসেমশাইয়ের কথা শেষ হওয়ার পর হলুদ রঙের স্লিভলেস টপ আর গাঢ় নীল রঙের শর্ট স্কার্ট পরিহিতা টিনা এগিয়ে গেলো চেয়ারে বসে থাকা তার মায়ের দিকে। তারপর নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, "নাইস টু মিট ইউ, মিসেস গুহ .."
বন্দনা দেবী চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে নমস্কার করলেন টিনাকে। তারপর অতিরিক্ত উৎসাহ দেখিয়ে বললেন, "আপনি হিরোইন? কোন কোন সিনেমায় অভিনয় করেছেন আপনি? টিভিতে দেখায় নিশ্চয়ই আপনার সিনেমাগুলো? আমি ভীষণ সিনেমা দেখতে ভালোবাসি। আপনার করা সিনেমাগুলোর নাম জানলে, দেখতাম।"
তার সিনেমাগুলো টিভিতে দেখায় কিনা .. হঠাৎ করে বন্দনা দেবীর মুখ থেকে এইরকম প্রশ্ন শুনে প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে "খুক্ খুক্ খুক্ খুক্" করে কেশে উঠে, তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে রজত বাবুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে টিনা মৃদুস্বরে উক্তি করলো, "she is very innocent .." তারপর আবার বন্দনা দেবীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো, "আমার ছবিগুলো তো টিভিতে দেখায় না মিসেস গুহ! তবে ওটিটি প্লাটফর্মে রয়েছে আমার অভিনয় করা বেশ কিছু ফিল্ম। আপনার বন্ধু ইউসুফকে বলবেন, ও দেখিয়ে দেবে আপনাকে। আপনি কি কাজের জন্য, আই মিন অ্যাক্টিং বা মডেলিংয়ের জন্য এখানে এসেছেন?"
- "না না, সেরকম কোনো ইচ্ছে নিয়ে আমি এখানে আসিনি। আমি তো এখানে ফিল্মের শ্যুটিং দেখতে এসেছিলাম। ইউসুফ, মানে আমার ছেলের বন্ধু অবশ্য আমাকে বলেছিলো এখানে যদি ফিল্মের অথবা বিজ্ঞাপনের প্রডিউসার থাকেন, তাহলে আমি করতে পারি এরকম কোনো কাজ হলে ও বলবে।"
- "এখানে তো আমাদের প্রডিউসার কাম ডিরেক্টর, এবং অ্যাকটার দু'জনেই উপস্থিত রয়েছে। আর দুজনের সঙ্গেই আপনার সম্পর্ক ভালো, তার মধ্যে একজন আবার আপনার পূর্ব পরিচিত। একসঙ্গে যখন এতকিছু comfort zone পাচ্ছেন, তখন I think you should join with us .. আমি রজত স্যারকে এই মুহূর্তে সবার সামনেই রিকোয়েস্ট করছি, at present আমাদের যে মুভিটার শ্যুটিংটা চলছে, সেটাতে যেন আপনাকে কোনো একটা ক্যারেক্টারের জন্য উনি ভাবেন!"
টিনা নামের মেয়েটির সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা না থাকার জন্য, তার মুখে কথাগুলো শোনার পর হঠাৎ করেই নিজের স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার আনন্দে বন্দনা দেবীর মুখমণ্ডলে যখন একটি উজ্জ্বল আভা ফুটে উঠলো! ঠিক তখনই টিনা আসলে কোন ধরনের সিনেমায় কাজ করে, সেই সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সৈকতের চোখেমুখে এক অজানা আশঙ্কার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠলো। "মা, তুমি আর ওদের ফাঁদে পা দিও না! চলো, আমরা এখনি এখান থেকে চলে যাই .." চিৎকার করে কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করলো তার। কিন্তু নিজের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার তাগিদে এবং ছোট পিসেমশাইয়ের রক্তচক্ষুর দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারলো না সৈকত।
"বলতে পারেন, আমি সিনেমার পোকা। বাংলা হিন্দি সব ধরনের সিনেমাই আমি দেখি। আসলে বাড়ির কাজকর্ম শেষ হয়ে যাওয়ার পর একটা কিছু নিয়ে তো ব্যস্ত থাকতে হবে! নাচ, আঁকা, গান, সেলাই .. এসব বিষয়ে কোনোদিনই আমার আগ্রহ ছিলো না। তাই টিভি সিরিয়াল আর সিনেমা দেখাটাকেই নিজের মনোরঞ্জনের জন্য বেছে নিয়েছিলাম। অল্প বয়সে তো হলে গিয়ে সিনেমা দেখতাম! কিন্তু বিয়ে হওয়ার পর, সৈকতের বাবা আমাকে একদিনের জন্যও সিনেমা হলে নিয়ে যায়নি, তাই এখন টিভিই ভরসা। এমত অবস্থায় সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পাওয়ার কথা শুনে আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে, আপনাদেরকে বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু সিনেমায় কাজ করা বোধহয় আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ, ওর বাবা বিশেষ করে আমার শাশুড়ি এবং বড় ননদ যদি জানতে পারে আমি সিনেমায় নেমেছি, তাহলে বিশাল অশান্তি হবে।" ইচ্ছা সত্বেও কোনো জিনিস করতে না পারার মধ্যে যে একটা চাপা কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে, সেইরূপ ভঙ্গিতেই কথাগুলো বললেন বন্দনা দেবী।
"hold on hold on .. 'সিনেমায় নামা' এই কথাটাতে আমার যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। সিনেমা করা কি কোনো নিষিদ্ধ কাজ বা কোনো গর্হিত অপরাধ? যে ওটা করতে গেলে নামতে হবে তোমাকে। আমি তো সবাইকে নিজের সম্বন্ধে বলি, 'সিনেমায় উঠেছি' নেমেছি নয়। যাইহোক, তোমার সঙ্গে এই ক'দিন কথা বলে যেটুকু বুঝেছি, শ্বশুরবাড়ির লোকজন শুধু তোমার থেকে নিয়েই গেছে, তোমাকে দেয়নি কিছুই। বিয়ের পর মা-বাবাকে ছেড়ে যখন মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে আসে, তখন স্বামীর ঘরকে নিজের ঘর আর শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের মা-বাবা মনে করে মেয়েরা। এটাই তাদের শেখানো হয় ছোটবেলা থেকে, তোমাকেও শেখানো হয়েছিলো নিশ্চয়ই। তাই তুমিও সৈকতের দাদু-ঠাকুমাকে নিজের মা-বাবার মতোই ভক্তি শ্রদ্ধা করতে। কিন্তু একদিনের জন্যেও কি ওদের কাছ থেকে পিতৃ-মাতৃসুলভ স্নেহ এবং ভালোবাসা পেয়েছিলে? নাকি এখন পাও? নিজের বুকে হাত দিয়ে বলতো, স্বামীর ভালবাসা পেয়েছো কোনোদিন? তাহলে কিসের এত শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের অশান্তির ভয় পাচ্ছো তুমি? এতদিন তো নিজের শখ-আহ্লাদ সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়ে, সেবা করলে ওনাদের। এবার একটু নিজের জন্যও বাঁচো! তাছাড়া স্বাবলম্বী হবে তুমি, দু'হাতে রোজগার করবে .. এটাও কি কম কিছু? এই লাইনে টাকার অঙ্কটাও কিন্তু নেহাত কম নয়!" এতক্ষণ ধরে চলা ইউসুফের ভাষণ শুনে বন্দনা দেবী কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগেই আবার " খুক্ খুক্ .." কেশে উঠলো টিনা।
একে রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর। ইউসুফের কথাগুলো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলো রজত বণিক, "আরে আমি তো একটু আগেই বললাম, ওর শ্বশুরবাড়ির সবকটা লোক ঢ্যামনা। নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা। ঝুমার মতো এইরকম একটা সরল সাদাসিধে ভালো মেয়ে ওদের বাড়ির বউ হয়ে গিয়েছিল বলেই সংসার টা এখনো টিকে রয়েছে। অন্য কোন মেয়ে হলে, কবে সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে বেরিয়ে চলে আসতো! তাছাড়া তুমি যে অশান্তি ভয় পাচ্ছ, সেরকম কিছুই হবে না। কারণ, আমি যে ফিল্মগুলো বানায় মানে প্রডিউস করি সেগুলো কোনদিনও টিভিতে দেখায় না, in fact সিনেমা হলেও রিলিজ হয় না। এগুলো শুধু কিছু সিলেক্টিভ ওয়েবসাইটে দেখা যায়। ওই যে তোমাকে একটু আগে টিনা বললো .. ওটিটি প্লাটফর্মে রয়েছে ওর বেশ কিছু অভিনয় করা সিনেমা! তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে, এখন এই বুড়ি বয়সে তোমার শাশুড়ি নিশ্চয়ই ইন্টারনেট ঘেঁটে তোমার করা সিনেমাগুলো দেখতে যাবে না! আর তোমার বর? সে তো ইন্টারনেট কি .. খায় না মাথায় মাখে? সেটাই জানেনা। ওয়েবসাইট কিংবা ওটিটি প্লাটফর্ম .. এই কথাগুলো শান্তিরঞ্জন কোনোদিন শুনেছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। তাহলে তোমার বরেরও তোমার অভিনয় করা ছবিগুলো দেখার কোনো প্রশ্নই উঠছে না। তাছাড়া আমার সিনেমায় অভিনয় করা পুরুষ এবং নারী চরিত্রগুলোকে এমনভাবে মেকআপ করিয়ে সাজানো হয় যে, তাদের সিনেমায় অভিনয় করার সময় একদম অন্যরকম দেখতে লাগে। আর অভিনয় করবো বললেই তো অভিনয় করা যায় না। আমি যতই তোমার পরিচিত হই না কেন, একজন প্রডিউসার এবং ডিরেক্টর হিসেবে তোমার স্ক্রিনটেস্ট অবশ্যই নেওয়া হবে। পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই অভিনয় করার সুযোগ পাবে।"
দুইদিক থেকে মস্তিষ্ক প্রক্ষালন এবং উপর্যপুরি আশ্বাসের বাণী শুনে এই দুই ব্যক্তিকে তার সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী বলে মনে হলো সৈকতের নির্বোধ মায়ের। শুধু তাই নয়, সে নিজেকে যতটা চেনে, তার থেকে এই দুই ব্যক্তি যেন তাকে অত্যাধিক এক্সপ্লোর করতে পেরেছে, এটাও মনে হলো তার। "ঠিক আছে আপনারা যেরকম বলছেন, সেরকম যদি হয় তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।" খুশিতে গদগদ হয়ে উক্তি করলেন বন্দনা দেবী।
★★★★
"আমরা যে ফিল্মের শ্যুটিংটা শুরু করবো একটু পরে, সেটারই কোনো একটা রোলে কয়েকটা ডেমো শট করিয়ে নাও মিসেস গুহকে দিয়ে। এতে ওনার এক্সপেরিয়েন্সটাও হয়ে যাবে, আর তোমারও স্ক্রিনটেস্ট নেওয়া হয়ে যাবে। ভুল বললাম কিছু?" রজত বণিকের শার্টের বোতাম ঠিক করার অছিলায় ন্যাকা ন্যাকা ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো টিনা।
"একদম ঠিক কথা বলেছো। তুমি কখনো ভুল বলতে পারো? মাই সুইটু .." টিনার গালদুটো টিপে দিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে হাসতে জবাব দিলো রজত বাবু।
"আসলে, আমরা তো শর্টফিল্ম বানাই! শুটিং যদিও অনেকক্ষণ ধরেই হয়, কিন্তু এডিট করার পর আধঘন্টা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ডিউরেশন হয় আমাদের ফিল্মগুলোর। তাই ক্যারেক্টার খুব বেশি থাকে না। ম্যাক্সিমাম পাঁচটা থেকে ছ'টা ক্যারেক্টার নিয়ে আমাদের ফিল্মগুলো হয়। বর্তমানে যে সিনেমাটার শ্যুটিং চলছে, সেটাতে চারটে ক্যারেক্টার রয়েছে। বাবা, মা, ছেলে আর ছেলের বান্ধবী। বাবার রোলটা আমার পার্টনার মানে এই ফিল্মের প্রডিউসার অ্যান্ড ডাইরেক্টর মিস্টার রজত করছে। ছেলে আমি, আমার আই মিন ছেলের বান্ধবীর রোলটা করছে টিনা। আর বাবা, আই মিন রজতের ওয়াইফের রোলের জন্য অলরেডি একজন নিউকামারকে ঠিক করা হয়ে গিয়েছে। সে অডিশনে পাশও করে গেছে। কিন্তু টিনা যখন বললো, তার উপর তুমি আমার একজন এত ভালো বান্ধবী, এছাড়া আমার পার্টনারের রিলেটিভ তুমি .. তাই তোমাকে একটা সুযোগ দেয়ার জন্য তোমার স্ক্রিনটেস্ট নিয়ে নিচ্ছি। যদি উতরে যাও, তাহলে রোলটা তুমিই করবে।" ইউসুফের মুখে কথাগুলো শোনার পর খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকা মুখমণ্ডলে একটা কালো ছায়া নেমে এলো বন্দনা দেবীর।
"মায়ের রোল?" দুঃখী দুঃখী মুখ করে জিজ্ঞাসা করলেন বন্দনা দেবী।
"দ্যাখো, আমি তো আগেই বললাম মাত্র চারটেই ক্যারেক্টার রয়েছে এই ফিল্মে। দু'জন পুরুষ আর দু'জন মহিলা। টিনা তো আগেই সিলেক্ট হয়ে গেছে। ওর যা বয়স এবং ফিগার, ওকে তো তুমি রিপ্লেস করতে পারবেনা! সিনেমাতে আমার বান্ধবীর রোলে কি তোমাকে মানাবে? তুমিই বলো! তাছাড়া ও আমাদের স্টার অ্যাক্ট্রেস। রইলো বাকি আর মাত্র একটাই নারীচরিত্র। তবে এই সিনেমায় আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করা মিস্টার রজতের ওয়াইফ হলেও তুমি আমার জন্মদাত্রী মা মোটেও নও এখানে। তুমি ওনার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করবে। ওনার প্রথম ওয়াইফ অর্থাৎ আমার নিজের মা মারা যাওয়ার পর উনি তোমাকে বিয়ে করেছেন। আর মায়ের রোল বলতে এখানে তুমি সেই প্রাচীনপন্থী বয়স্কা কোনো নারীকে কল্পনা করো না। তোমার রোলটাও যথেষ্ট মডার্ন হবে, জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। অনেক কথা হয়ে গেছে, এবার শ্যুটিং শুরু করতে হবে। আমাদের দোতলায় স্টুডিওতে যেতে হবে। চলো .." কথাগুলো বলে দ্রুতপায়ে ইউসুফ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলো। ওকে ফলো করলো রজত বণিক আর টিনা। আর সবার পেছনে সৈকত এবং তার মা ধীরে ধীরে উঠতে লাগলো সিঁড়ি দিয়ে।
ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন


![[Image: 1651523193-82479-gif-url.gif]](https://i.ibb.co/dL2MFd5/1651523193-82479-gif-url.gif)
![[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]](https://i.ibb.co/V2jFPGW/Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e04c001a911ac0.gif)
![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)