25-07-2023, 04:07 PM
~ খোজাকরণ ~
সেকালে ক্ষমতাবান রাজা, বাদশাদের অনেকেই নিজেদের দখলে প্রচুর নারী রাখতো। এরা ছিলো শুধুই মনোরঞ্জনের জন্য। এই ধরনের নারীদেরকে বলে ‘রক্ষিতা’। প্রাচীন চীনে হারেমে প্রায় ২০ হাজার নারী ছিলো। রক্ষিতা রাখার প্রধান কারণ জৈবিক চাহিদা পূরণ, অর্থাৎ কাম চরিতার্থ করা। এবং আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে অধিক পরিমাণ সন্তান উৎপাদন করা। রাজকীয় রক্তে অধিক পরিমাণ উত্তরাধিকার রেখে যাওয়া। রাজ পরিবার যেন বিলুপ্ত হয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা।
এই নারীগুলোকে জোর করে ধরে আনা হতো কিংবা তাদের পরিবার থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা হতো। তাই এরা যেন পালিয়ে না যায় বা ভেতরে ভেতরে কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি করতে না পারে, তার জন্য পাহারাদার রাখা হতো। নারী দিয়ে পাহারার কাজ চলে না, পাহারাদার হতে হবে কোনো পুরুষ। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা দেখা দেয়, পাহারাদার হিসেবে যে যে পুরুষ থাকবে তারা আবার রক্ষিতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবে না তো?
রক্ষিতাদের ঔরসে শুধুই রাজ রক্তের উত্তরাধিকার তৈরি হবার পাশাপাশি বাইরের রক্ত মিশ্রিত হয়ে যাবার একটা ভয় থেকেই যায়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য রাজারা একটা পথ বেছে নেয়। পাহারাদারদের যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া। যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার প্রক্রিয়াকেই বলে 'খোজাকরণ'। যাদের যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া হয়, তাদের বলে ‘খোজা’। ইংরেজি Eunuch শব্দের প্রতিশব্দ হচ্ছে খোজা। ইউনাক শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Eunoukhos থেকে, যার অর্থ শয়নকক্ষের পাহারাদার।
খোজাকরণ মূলত তিন ধরনের হতে পারে। প্রথমতঃ শুধু পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা; দ্বিতীয়তঃ শুধুমাত্র শুক্রথলী কেটে আলাদা করে দেওয়া এবং তৃতীয়তঃ পুরুষাঙ্গ ও শুক্রথলী উভয়ই কেটে ফেলা। প্রাচীন চীনে তৃতীয় প্রকার খোজাকরণ প্রচলিত ছিলো। এই প্রক্রিয়ায় খুব ধারালো ছুরির সাহায্যে পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ উভয়ই কেটে ফেলা হতো। চীনে খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ অব্দ থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া প্রচলিত ছিলো। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি অনেক বেশি। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর মানুষের মৃত্যু হতো। মৃত্যুহার কমানোর জন্য ধীরে ধীরে পুরুষাঙ্গ রেখে শুধুমাত্র শুক্রথলী কেটে খোজা বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
প্রাচীন চৈনিক সাম্রাজ্যে খোজাকরণের কাজটি করা হতো মূল প্রাসাদের বাইরে বিচ্ছিন্ন কোনো স্থানে। রাজ প্রাসাদের চারদিকে দেয়ালঘেরা সীমানা থাকে। এই সীমানার কোনো একটি স্থানে ব্যবহার করা হয় না, এমন একটি পাহারাকক্ষ থাকে, যা দরকার পড়ে না বলে ব্যবহার করা হয় না। এই ধরনের পরিত্যক্ত ঘরকে ব্যবহার করা হতো খোজাকরণের অপারেশন থিয়েটার হিসেবে।
প্রথমে ব্যক্তিটিকে ঐ কক্ষে নিয়ে একটি কাঠের পাটাতনে শুইয়ে দেয়া হতো। তারপর হালকা গরম জল দিয়ে যৌনাঙ্গ ও যৌনাঙ্গের আশেপাশের স্থান ধুয়ে নেয়া হতো। এরপর অবশ করতে পারে এমন উপাদানের প্রলেপ দিয়ে যৌনাঙ্গকে অবশ করে ফেলা হতো। তখনকার সময়ে অবশকারী হিসেবে প্রচণ্ড ঝালযুক্ত মরিচ বাটা ব্যবহার করা হতো। অবশ করার পর সহযোগীরা মিলে দেহটিকে কাঠের পাটাতনের সাথে শক্ত করে বেঁধে ফেলতো। তারপর দুইজন সহকারী দুই পা ফাঁকা করে ধরে রাখতো যেন যৌনাঙ্গ কাটার সময় পায়ের দ্বারা কোনো অসুবিধা না হয়। দুইজন তো দুই পায়ে শক্ত করে ধরে রাখতোই, তার উপর আরো দুইজন কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে একজন হাত দুটি বেঁধে চেপে ধরে রাখতো।
কর্তক ব্যক্তি সুবিধা করে দুই পায়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শুক্রথলী ও পুরুষাঙ্গ হাতের মুষ্টির ভেতর ধরতো। যৌনাঙ্গ মুষ্টির ভেতরে রেখে শায়িত ব্যক্তির কাছ থেকে সম্মতি আদায় নেওয়া হতো যে, তিনি স্বেচ্ছায় খোজাকরণ করতে দিচ্ছেন। সম্মতি পাবার সাথে সাথে চোখের পলকেই ধারালো ছুরি দিয়ে একসাথে কেটে ফেলা হতো মুষ্টির ভেতরে থাকা অণ্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ।
এই অবস্থায় প্রচুর রক্তপাত হতো। এই ধাপ শেষ করার পর থাকে বড় চ্যালেঞ্জটি। রোগীটিকে এই ধাক্কা কাটিয়ে তুলে বাঁচানো যাবে কিনা। কর্তন প্রক্রিয়া শেষ করার পরেই মূত্রনালিতে একটি নল প্রবেশ করিয়ে দেয়া হতো। প্রস্রাব বের হবার রাস্তা যেন বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য এই নল প্রবেশ করানো হতো। নল ছিলো অনেকটা আজকের যুগের স্যালাইনের পাইপের মতো, এর ভেতর দিয়ে প্রস্রাব বের হতো।
এরপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রোগীকে ওই কক্ষে তিন দিন রেখে দেওয়া হতো। ওই সময়ে রোগীকে কোনো প্রকার খাবার দেয়া হতো না। এই ধাপ পার করতে পারলে চতুর্থ দিনে রোগীকে প্রস্রাব করতে বলা হতো। যদি প্রস্রাব করতে পারতো তাহলে অপারেশন সফল হয়েছে বলে ধরে নেয়া হতো, আর যদি প্রস্রাব করতে না পারতো তাহলে ধরা হতো এই অপারেশন সফল হয়নি। এক্ষেত্রে রোগী ব্যথা ও ইনফেকশনে মারা যেত। তবে প্রাচীন চীনারা ধীরে ধীরে এই কাজে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছিলো যে অপারেশনে মৃত্যুহার নেমে এসেছিল প্রতি হাজারে ১ জন। এবং তাদের সুন্দরী রক্ষিতারাও নিরাপদ থাকতো এই সমস্ত পাহারাদারদের হাত থেকে।
--★★--
তথ্যসূত্রঃ- State Watch