24-07-2023, 01:49 PM
(This post was last modified: 24-07-2023, 01:51 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
চতুর্নবতি অধ্যায়
প্রাতঃরাশ সেরে সকাল নটায় এসে বসে তারপর দম ফেলার ফুরসৎ হয়না।ড মিত্রের চেম্বার তার মেয়েও চিকিৎসা খারাপ করে না।মহিলা ডাক্তার হওয়ায় মহিলা রোগীদের ভীড় একটু বেশী মন খুলে সব কথা বলতে পারে। একেরপর এক রোগী আসতে থাকে পাঞ্চালী মনযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।ইদানীং শরীরের মধ্যে কেমন একটা হয় বিয়ের আগে এমনটা হতোনা।গেছে তো গেছে প্রায় সপ্তা খানেক হতে চলল।সকালে নাম লিখিয়েছিল পানুবাবু একে একে নাম ধরে ডাকতে থাকেন।বেলা প্রায় একটা শেষ রোগী দেখতে থাকে পাঞ্চালী।
পান্নালাল বিশ্বাস আগে ড মিত্রের কম্পাউণ্ডার ছিলেন।রোগী দেখা শেষ হলে পাঞ্চালী সব গোছগাছ করতে থাকে এমন সময় এখন বয়স্কা মহিলা ঢুকে পড়তে পান্নাবাবুর সঙ্গে বচশা শুরু হল।
কি ভেবেছেন আপনারা উনিও তো মানুষ।সারাদিন রোগী দেখলে চলবে?
একবার কথা বলে চলে যাব--।
কাল এসে নাম লেখাবেন।
পাঞ্চালী বলল,কাকু আসতে দিন।
স্থুলদেহী এক মহিলা প্রবেশ করলেন।
বলুন কি সমস্যা?
কোমরে হাটুতে বিষ ব্যথা।
পাঞ্চালী শাড়ির ভিতরে হাত ঢুকিয়ে কোমরে চাপ দিয়ে বলল,লাগছে?
বেশ আরাম হয়।
কি সুন্দর সারা গা-হাত-পা টিপে দিয়েছিল পাঞ্চালীর মনে পড়তে রক্তিম হয়।কিছুক্ষন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরীক্ষা করে জিজ্ঞেস করল,অমাবস্যা পূর্ণিমায় বাড়ে?
হ্যা হ্যা ঠিক বলেছেন।মাঝে মাঝে দাড়াতে পারিনা।
পাঞ্চালী প্রেস্ক্রিপশন লিখতে লিখতে বলল,সময় লাগবে।সকালে উঠে হাটাহাটি করবেন আর কয়েকটা আসন দেখিয়ে দিচ্ছি--অভ্যাস করবেন।
আগে কানাই ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম--
ঠিক আছে এই ওষুধগুলো নিয়মিত খা্বে?এই মলমটা মালিশ করবেন।
মহিলা বেরিয়ে যেতে পাঞ্চালী ফোনের বাটন টিপে কানে লাগায়।
ওপাশ থাকে সাড়া এল,এইমাত্র ভাবছিলাম তোমাকে ফোন করার কথা--।
এখন কোথায়?
ক্লাসে যাচ্ছি--।
আজ কি খেলে?
আজ খাওয়া হয়নি।এই ঘণ্টার পর অফ আছে ভাবছি তখন খেতে যাব।
পাঞ্চালীর চোখ ছলছল করে উঠল বলল,সকালে খাওনি কেন?
আরে বোলোনা হোটেলে এত ভীড় ছিল কলেজের দেরী হয়ে যাচ্ছে--।তুমি চিন্তা কোরোনা আমার অভ্যেস আছে।
না খেয়ে কলেজ গেছে পাঞ্চালীর মনটা খারাপ হয়।মোমো বলছিল বলে বলে সব করাতে হয়।পাঞ্চালী জিজ্ঞেস কোড়ল,তোমাকে যে বলেছিলাম--।
ওহ আসল কথাই বলা হয়নি।ঘর পেয়েছি একতলায় তুমি যেমন বলেছিলে--
অন্য কেউ নিয়ে নেবে নাতো?
না না বুক করে অগ্রিম দিয়ে চাবি নিয়ে নিয়েছি।আমি অবশ্য হোস্টেলেই থাকি--।
পাঞ্চালীর মন নেচে ওঠে বলল, কেন হোস্টেলে কেন?
কলেজ থেকে বাড়ীটা একটু দূরে--।
তুমি একটা লোক দিয়ে পরিস্কার করে রাখো আমি শিগগীরি যাচ্ছি।
তুমি আসবে! উফস কি আনন্দ হচ্ছে কতকাল দেখিনি তোমায়।
আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে?
ইচ্ছে করবে না?তুমি কিযে বলো না --
ঠিক আছে ক্লাসে যাও টিকিট কেটে খবর দেবো।
ফোন রেখে নিজেকে খুব হাল্কা বোধ হয়।এমন খবর পাবে আশাই করেনি।পান্নাবাবুর সঙ্গে চোখাচুখি হতে বলল,কাকু গোপালনগরের পাট এবার গোটাতে হবে।
একেবারে চলে যাচ্ছ?
হ্যা সবাইকে নিয়ে যাব।
পান্নাবাবু কি যেন ভাবেন তারপর বললেন,ডাক্তারবাবু চলে যাবার পর ভেবেছিলাম কম্পাউণ্ডারগিরি ছেড়ে দেব।তোমাকে দেখে আবার শুরু করলাম।বয়স হলে সংসারে বোঝা--।
আপনি যাবেন আমার সঙ্গে?
পান্নাবাবু অবাক হয়ে পাঞ্চালীকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,কোথায় যাবে?
আমার হাজব্যাণ্ড শিলিগুড়ি কলেজে অধ্যাপনা করেন।
হাজব্যাণ্ড?তুমি বিয়ে করেছো?
পাঞ্চালী ইতস্তত করে বলল,বাপি মারা যাবার একমাসের মধ্যে বিয়েটা করতে হল সেজন্য কাউকে বলা হয়নি।
ভালো করেছো।সংসারে একজন পুরুষ মানুষেরখুব দরকার।কিন্তু মা আমি গেলে তোমার অসুবিধে হবে না?
অসুবিধের কি আছে?বড় বাড়ি ভাড়া নিয়েছে তাছাড়া আপনি আমার অভিভাবকের মত--।অজানা জায়গায় একজন কম্পাউণ্ডার তো দরকার--।
কথাটা মন্দ বলোনি গোপালনগর ছেড়ে কোথাও যাওয়া হয়নি--।
আপনি একটা কাজ করবেন?
কি কাজ মা?
এক রাতের জার্নি আপনি যদি--।
ঠিক আছে মা তুমি নাম গুলো লিখে দাও আমি রাণাঘাটে গিয়ে আজই টিকিট কাটার ব্যবস্থা করছি।
একটা কাগজে পাঞ্চালি নাম বয়স লিখে পান্নাবাবুর হাতে দিতে পানুবাবু বললেন,পারুলও যাবে?
হ্যা ওতো আমাদেরই একজন আর আপনার নাম লেখা হয়নি--।পাঞ্চালী ব্যাগ খুলে টাকা বের করে দিল।
টাকা নিয়ে পানুবাবু বললেন,তুমি কোনো চিন্তা কোরোনা ও বেলা আমার একটু দেরী হলে তুমি চালিয়ে নিও।
কাকু আপনার অসুবিধে হবে নাতো?
পান্নাবাবু হাসলেন।দেখো মা তোমার কাকীমা মারা যাবার পর বউমা সংসারের কত্রী এত অসম্মান এত অছেদ্দা সহ্য করে পড়েছিলাম।এই ভালো হল।
পাঞ্চালী উপরে উঠে যেতে পান্নাবাবু মধুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।মধু এসে দরজা বন্ধ করবে।
ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।কয়েকজন স্টাফ রুমে বসে আলাপ করছে।ইংরেজীর অধ্যাপক এনসিএস বললেন,আচ্ছা নতুন যিনি এসেছেন ওর সঙ্গে আলাপ হয়েছে?
আলাপ মানে অল্পস্বল্প কথা হয়েছে।ওর বাবাও নাকি অধ্যাপনা করতেন।কেন আপনার সঙ্গে আলাপ হয়নি।
ওই আপনারই মতো।মনে হল একটু দেমাকী।
হে-হে-হে পলাশবাবু হেসে উঠলেন।দেমাকী?কথা একটু কম বলেন আমার কিন্তু তেমন মনে হল না।
বাংলার অধ্যাপক অমলবাবু বললেন,বোসের কথা বলছেন?সবে তো এসেছে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
ঘণ্টা বাজতে সুখ ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ল।তার সঙ্গে কিছু মেয়ে বেরিয়ে এল একজন জিজ্ঞেস করল,স্যার একটা প্রশ্ন করব?
ক্লাসের বাইরে কোনো প্রশ্ন নয় কিছু জানার থাকলে ক্লাসেই করবে।
একটি মেয়ে বলল,স্যার আমরা কয়েকজন আপনার কাছে পড়তে চাই,আপনি পড়াবেন?
সুখ এক মুহূর্ত ভেবে বলল,দেখো যারা পড়ায় তাদেরও বাড়ীতে পড়তে হয়।আমার সময় হবে না।আচ্ছা ক্লাসে যা পড়াই তোমরা বুঝতে পারো না?
না না স্যার আপনি খুব ভালো পড়ান।
আচ্ছা কিছু প্রশ্ন থাকলে যখন ক্লাস থাকবে জিজ্ঞেস কোরো।
এর পরের পিরিয়ড অফ এই ফাকে হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসার কথা মনে হল।স্টাফ রুমে ঢুকে নিজের ড্রয়ারে চক ডাস্টার রেখে বেরিয়ে গেল।নরেশবাবু বললেন,দেখলেন আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই ওর।
সীমন্তিনী বললেন,তা কেন হয়তো ওর কোনো কাজ আছে।
দেখুন ম্যাডাম আমাদেরও কাজ আছে তাই বলে একটু কথা বলার ভদ্রতা থাকবে না।
পাঞ্চালী আসবে বলেছে কবে আসবে,একা আসবে নাকি মামণিকেও নিয়ে আসবে কিছু বলেনি।এক্টু অস্থির বোধ করে।টাকা পয়সা যা ছিল বাড়ী ভাড়া করতে সব শেষ।বেতন না পাওয়া অবধি কটাদিন টানাটানির মধ্যে চালাতে হবে।একটা বুদ্ধি খেলে গেল,কটা দিন নিরামীষ দিয়ে চালিয়ে দেবে। মাথার মধ্যে হাজার চিন্তা।সামনের হোটেলে মজুর মিস্ত্রীরা খায়।ওখানে দাম কম ভেবে এগোতে যাবে ইশিকা রাইকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।
স্যার কুথায় চললেন ক্লাস নাই?
একটু ঘুরতে বেরিয়েছি আপনি এদিকে কোথায়?
টিফিন আনতে পারি নি নিয়ে আসলাম।ম্যাডাম কবে আসবে?
শিগরিই আসার কথা।সুখ হেসে বলল।
এরা এত কথা বলে সুখ বিরক্ত হয়।ম্যাডাম কবে আসবে সে খবরে তোমার দরকার কি?
ম্যাডাম আসলে বলবেন একদিন দার্জিলিং নিয়ে যাব।
পরে মনে হল ট্রাইবাল মেয়েরা বেশ জলি।খারাপ তো কিছু বলেনি আসলে চুপি চুপি হোটেলে ঢুকতে পারছে না সে জন্য খারাপ লাগছে।
আপনার হাজব্যাণ্ড দার্জিলিং থাকেন?কথাটা বলেই নিজের উপর বিরক্ত হয় সুখ।
ওর সঙ্গে আমার এ্যাডজাস্ট হয় না।দারু পিতা দারু সে নফরৎ আছে।
পরের ঘণ্টার সময় হয়ে এল।আজ আর খাওয়া হবে না।দুজনে কলেজের দিকে এগোতে থাকে।
ঈশিকা বলতে থাকে,আমার লাইফটা বরবাদ করে দিল।তন মন কিছুই সুখ পেল না।বাঙালি বহুৎ দরদী দিল হয় বহুৎ পরসন্দ আমার--
কি কুক্ষনে স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করতে গেল। সুখর ইচ্ছে করছে নিজের পাছায় কষে লাথি কষায়।
রাস্তা পেরোতে গিয়ে হোচট খেল।পাঞ্চালী কি তার কথা মনে করছে।নিজের মনে হাসল।
প্রাতঃরাশ সেরে সকাল নটায় এসে বসে তারপর দম ফেলার ফুরসৎ হয়না।ড মিত্রের চেম্বার তার মেয়েও চিকিৎসা খারাপ করে না।মহিলা ডাক্তার হওয়ায় মহিলা রোগীদের ভীড় একটু বেশী মন খুলে সব কথা বলতে পারে। একেরপর এক রোগী আসতে থাকে পাঞ্চালী মনযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।ইদানীং শরীরের মধ্যে কেমন একটা হয় বিয়ের আগে এমনটা হতোনা।গেছে তো গেছে প্রায় সপ্তা খানেক হতে চলল।সকালে নাম লিখিয়েছিল পানুবাবু একে একে নাম ধরে ডাকতে থাকেন।বেলা প্রায় একটা শেষ রোগী দেখতে থাকে পাঞ্চালী।
পান্নালাল বিশ্বাস আগে ড মিত্রের কম্পাউণ্ডার ছিলেন।রোগী দেখা শেষ হলে পাঞ্চালী সব গোছগাছ করতে থাকে এমন সময় এখন বয়স্কা মহিলা ঢুকে পড়তে পান্নাবাবুর সঙ্গে বচশা শুরু হল।
কি ভেবেছেন আপনারা উনিও তো মানুষ।সারাদিন রোগী দেখলে চলবে?
একবার কথা বলে চলে যাব--।
কাল এসে নাম লেখাবেন।
পাঞ্চালী বলল,কাকু আসতে দিন।
স্থুলদেহী এক মহিলা প্রবেশ করলেন।
বলুন কি সমস্যা?
কোমরে হাটুতে বিষ ব্যথা।
পাঞ্চালী শাড়ির ভিতরে হাত ঢুকিয়ে কোমরে চাপ দিয়ে বলল,লাগছে?
বেশ আরাম হয়।
কি সুন্দর সারা গা-হাত-পা টিপে দিয়েছিল পাঞ্চালীর মনে পড়তে রক্তিম হয়।কিছুক্ষন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরীক্ষা করে জিজ্ঞেস করল,অমাবস্যা পূর্ণিমায় বাড়ে?
হ্যা হ্যা ঠিক বলেছেন।মাঝে মাঝে দাড়াতে পারিনা।
পাঞ্চালী প্রেস্ক্রিপশন লিখতে লিখতে বলল,সময় লাগবে।সকালে উঠে হাটাহাটি করবেন আর কয়েকটা আসন দেখিয়ে দিচ্ছি--অভ্যাস করবেন।
আগে কানাই ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম--
ঠিক আছে এই ওষুধগুলো নিয়মিত খা্বে?এই মলমটা মালিশ করবেন।
মহিলা বেরিয়ে যেতে পাঞ্চালী ফোনের বাটন টিপে কানে লাগায়।
ওপাশ থাকে সাড়া এল,এইমাত্র ভাবছিলাম তোমাকে ফোন করার কথা--।
এখন কোথায়?
ক্লাসে যাচ্ছি--।
আজ কি খেলে?
আজ খাওয়া হয়নি।এই ঘণ্টার পর অফ আছে ভাবছি তখন খেতে যাব।
পাঞ্চালীর চোখ ছলছল করে উঠল বলল,সকালে খাওনি কেন?
আরে বোলোনা হোটেলে এত ভীড় ছিল কলেজের দেরী হয়ে যাচ্ছে--।তুমি চিন্তা কোরোনা আমার অভ্যেস আছে।
না খেয়ে কলেজ গেছে পাঞ্চালীর মনটা খারাপ হয়।মোমো বলছিল বলে বলে সব করাতে হয়।পাঞ্চালী জিজ্ঞেস কোড়ল,তোমাকে যে বলেছিলাম--।
ওহ আসল কথাই বলা হয়নি।ঘর পেয়েছি একতলায় তুমি যেমন বলেছিলে--
অন্য কেউ নিয়ে নেবে নাতো?
না না বুক করে অগ্রিম দিয়ে চাবি নিয়ে নিয়েছি।আমি অবশ্য হোস্টেলেই থাকি--।
পাঞ্চালীর মন নেচে ওঠে বলল, কেন হোস্টেলে কেন?
কলেজ থেকে বাড়ীটা একটু দূরে--।
তুমি একটা লোক দিয়ে পরিস্কার করে রাখো আমি শিগগীরি যাচ্ছি।
তুমি আসবে! উফস কি আনন্দ হচ্ছে কতকাল দেখিনি তোমায়।
আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে?
ইচ্ছে করবে না?তুমি কিযে বলো না --
ঠিক আছে ক্লাসে যাও টিকিট কেটে খবর দেবো।
ফোন রেখে নিজেকে খুব হাল্কা বোধ হয়।এমন খবর পাবে আশাই করেনি।পান্নাবাবুর সঙ্গে চোখাচুখি হতে বলল,কাকু গোপালনগরের পাট এবার গোটাতে হবে।
একেবারে চলে যাচ্ছ?
হ্যা সবাইকে নিয়ে যাব।
পান্নাবাবু কি যেন ভাবেন তারপর বললেন,ডাক্তারবাবু চলে যাবার পর ভেবেছিলাম কম্পাউণ্ডারগিরি ছেড়ে দেব।তোমাকে দেখে আবার শুরু করলাম।বয়স হলে সংসারে বোঝা--।
আপনি যাবেন আমার সঙ্গে?
পান্নাবাবু অবাক হয়ে পাঞ্চালীকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,কোথায় যাবে?
আমার হাজব্যাণ্ড শিলিগুড়ি কলেজে অধ্যাপনা করেন।
হাজব্যাণ্ড?তুমি বিয়ে করেছো?
পাঞ্চালী ইতস্তত করে বলল,বাপি মারা যাবার একমাসের মধ্যে বিয়েটা করতে হল সেজন্য কাউকে বলা হয়নি।
ভালো করেছো।সংসারে একজন পুরুষ মানুষেরখুব দরকার।কিন্তু মা আমি গেলে তোমার অসুবিধে হবে না?
অসুবিধের কি আছে?বড় বাড়ি ভাড়া নিয়েছে তাছাড়া আপনি আমার অভিভাবকের মত--।অজানা জায়গায় একজন কম্পাউণ্ডার তো দরকার--।
কথাটা মন্দ বলোনি গোপালনগর ছেড়ে কোথাও যাওয়া হয়নি--।
আপনি একটা কাজ করবেন?
কি কাজ মা?
এক রাতের জার্নি আপনি যদি--।
ঠিক আছে মা তুমি নাম গুলো লিখে দাও আমি রাণাঘাটে গিয়ে আজই টিকিট কাটার ব্যবস্থা করছি।
একটা কাগজে পাঞ্চালি নাম বয়স লিখে পান্নাবাবুর হাতে দিতে পানুবাবু বললেন,পারুলও যাবে?
হ্যা ওতো আমাদেরই একজন আর আপনার নাম লেখা হয়নি--।পাঞ্চালী ব্যাগ খুলে টাকা বের করে দিল।
টাকা নিয়ে পানুবাবু বললেন,তুমি কোনো চিন্তা কোরোনা ও বেলা আমার একটু দেরী হলে তুমি চালিয়ে নিও।
কাকু আপনার অসুবিধে হবে নাতো?
পান্নাবাবু হাসলেন।দেখো মা তোমার কাকীমা মারা যাবার পর বউমা সংসারের কত্রী এত অসম্মান এত অছেদ্দা সহ্য করে পড়েছিলাম।এই ভালো হল।
পাঞ্চালী উপরে উঠে যেতে পান্নাবাবু মধুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।মধু এসে দরজা বন্ধ করবে।
ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।কয়েকজন স্টাফ রুমে বসে আলাপ করছে।ইংরেজীর অধ্যাপক এনসিএস বললেন,আচ্ছা নতুন যিনি এসেছেন ওর সঙ্গে আলাপ হয়েছে?
আলাপ মানে অল্পস্বল্প কথা হয়েছে।ওর বাবাও নাকি অধ্যাপনা করতেন।কেন আপনার সঙ্গে আলাপ হয়নি।
ওই আপনারই মতো।মনে হল একটু দেমাকী।
হে-হে-হে পলাশবাবু হেসে উঠলেন।দেমাকী?কথা একটু কম বলেন আমার কিন্তু তেমন মনে হল না।
বাংলার অধ্যাপক অমলবাবু বললেন,বোসের কথা বলছেন?সবে তো এসেছে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
ঘণ্টা বাজতে সুখ ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ল।তার সঙ্গে কিছু মেয়ে বেরিয়ে এল একজন জিজ্ঞেস করল,স্যার একটা প্রশ্ন করব?
ক্লাসের বাইরে কোনো প্রশ্ন নয় কিছু জানার থাকলে ক্লাসেই করবে।
একটি মেয়ে বলল,স্যার আমরা কয়েকজন আপনার কাছে পড়তে চাই,আপনি পড়াবেন?
সুখ এক মুহূর্ত ভেবে বলল,দেখো যারা পড়ায় তাদেরও বাড়ীতে পড়তে হয়।আমার সময় হবে না।আচ্ছা ক্লাসে যা পড়াই তোমরা বুঝতে পারো না?
না না স্যার আপনি খুব ভালো পড়ান।
আচ্ছা কিছু প্রশ্ন থাকলে যখন ক্লাস থাকবে জিজ্ঞেস কোরো।
এর পরের পিরিয়ড অফ এই ফাকে হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসার কথা মনে হল।স্টাফ রুমে ঢুকে নিজের ড্রয়ারে চক ডাস্টার রেখে বেরিয়ে গেল।নরেশবাবু বললেন,দেখলেন আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই ওর।
সীমন্তিনী বললেন,তা কেন হয়তো ওর কোনো কাজ আছে।
দেখুন ম্যাডাম আমাদেরও কাজ আছে তাই বলে একটু কথা বলার ভদ্রতা থাকবে না।
পাঞ্চালী আসবে বলেছে কবে আসবে,একা আসবে নাকি মামণিকেও নিয়ে আসবে কিছু বলেনি।এক্টু অস্থির বোধ করে।টাকা পয়সা যা ছিল বাড়ী ভাড়া করতে সব শেষ।বেতন না পাওয়া অবধি কটাদিন টানাটানির মধ্যে চালাতে হবে।একটা বুদ্ধি খেলে গেল,কটা দিন নিরামীষ দিয়ে চালিয়ে দেবে। মাথার মধ্যে হাজার চিন্তা।সামনের হোটেলে মজুর মিস্ত্রীরা খায়।ওখানে দাম কম ভেবে এগোতে যাবে ইশিকা রাইকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।
স্যার কুথায় চললেন ক্লাস নাই?
একটু ঘুরতে বেরিয়েছি আপনি এদিকে কোথায়?
টিফিন আনতে পারি নি নিয়ে আসলাম।ম্যাডাম কবে আসবে?
শিগরিই আসার কথা।সুখ হেসে বলল।
এরা এত কথা বলে সুখ বিরক্ত হয়।ম্যাডাম কবে আসবে সে খবরে তোমার দরকার কি?
ম্যাডাম আসলে বলবেন একদিন দার্জিলিং নিয়ে যাব।
পরে মনে হল ট্রাইবাল মেয়েরা বেশ জলি।খারাপ তো কিছু বলেনি আসলে চুপি চুপি হোটেলে ঢুকতে পারছে না সে জন্য খারাপ লাগছে।
আপনার হাজব্যাণ্ড দার্জিলিং থাকেন?কথাটা বলেই নিজের উপর বিরক্ত হয় সুখ।
ওর সঙ্গে আমার এ্যাডজাস্ট হয় না।দারু পিতা দারু সে নফরৎ আছে।
পরের ঘণ্টার সময় হয়ে এল।আজ আর খাওয়া হবে না।দুজনে কলেজের দিকে এগোতে থাকে।
ঈশিকা বলতে থাকে,আমার লাইফটা বরবাদ করে দিল।তন মন কিছুই সুখ পেল না।বাঙালি বহুৎ দরদী দিল হয় বহুৎ পরসন্দ আমার--
কি কুক্ষনে স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করতে গেল। সুখর ইচ্ছে করছে নিজের পাছায় কষে লাথি কষায়।
রাস্তা পেরোতে গিয়ে হোচট খেল।পাঞ্চালী কি তার কথা মনে করছে।নিজের মনে হাসল।