21-07-2023, 12:02 PM
পর্ব-৩৩
পায়েলের ঘুম ভাঙতে দেখে আমি ঘুমোচ্ছি। আমাকে ডেকে তুলে বলল - এই যায় এবার তোমাকে খুঁজতে এখুনি চলে আসবে আর এই অবস্থায় দেখলে কি গবে বুঝতে পারছো।আমি উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে বাড়িতে গেলাম। মা আমাকে দেখে বললেন - এইতো খোকা এসে গেছে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন - তুই চা খেয়ে এবার পোশাক পাল্টে ফেল বাবা। এখুনি সবাই আসতে শুরু করবে। সাড়েছটা বেজে গেছে। আমি সেভ করে চা খেলাম বুড়ি আমাকে চা দিয়ে বলল - তোমার বন্ধু আমাকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে আর দুবার করেছে আমাকে। রাতেও বলেছে আমাকে করবে। আমি - ঠিক আছে এখন চুপ কর কেউ শুনে ফেললে মুশকিল হবে। চা শেষ করে বুড়িকে কাপ দিয়ে বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে একটা টাওয়েল জড়িয়ে আমার ঘরে এলাম। সেখানে সব মেয়েদের ভিড়। নিশা কাকলিকে সাজাচ্ছে আরো অনেক মেয়ে রয়েছে আমার পাড়ার মেয়ে সব। আমাকে ঢুকতে দেখে একজন টিপ্পুনি কাটলো - টাওয়েল পরে বরের প্রবেশ। সবাই হেসে উঠলো। নিশা সবাইকে চুপ করিয়ে বলল - এখন টাওয়েল ছাড়া এলে তোমরা খুশি হতে তাইনা। একটা ফাজিল মেয়ে বলল - তাহলে তো দেখতাম বরের জিনিসটা কেমন। নিশা - দেখতে চাসনা দেখলে তোমাদের কুটকুটানি উঠবে তখন বাথরুমে ছুটবে। কাকলি এবার হেসে বলল - ঠিক বলেছো খুব রস হয়েছে এদের। ওদের দিকে তাকিয়ে বলল - দেখার ইচ্ছে থাকলে সাহস করে আমার ঘরে থেকো আজ রাতে দেখতে পাবে। এবার সবাই চুপ নতুন বৌয়ের কথা শুনে। আমি ধুতি আর পাঞ্জাবি নিয়ে পাশের ঘরে গেলাম। বাবা আমাকে ধুতি পড়িয়ে দিলেন গায়ে ভালো করে পাউডার লাগিয়ে বললেন - এবার গেঞ্জিটা পরে তারপর পাঞ্জাবিটা পড়েনে। আমি সব হয়ে যাবার পরে বাবা আমার গায়ে একটা ফারফিউম স্প্রে করে দিলেন বললেন - এটা তোর কাছে রাখ আমি তোর জন্য কিনেছি। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম - তোমার সব দিকে খেয়াল আছে তোমার মতো বাবা পাওয়া খুবই ভাগ্যের। বাবা শুনে হেসে বললেন - ওরে সব বাবারাই এমন হয় যখন বাবা হবি তখন বুঝবি বাবার কাছে সন্তান কতখানি।
মেয়ের বাড়ি থেকে সবাই চলে এলো। ছুটকি আমাকে দেখেই আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলল - আমি সেই টং থেকে সেজে বলছি চলো তাড়াতাড়ি সেই দেরি করেই বেরোলো। আমি ঘর দেখে বললাম সবে সাড়ে সাতটা বাজে গো। ছুটকি - আমার তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো তাই ওদের তারা দিছিলাম। কাকলির মা-বাবা আমার কাছে জিজ্ঞেস করলেন - বাবা শরীর ঠিক আছে তো ? আমি - হ্যা আমি ফিট আর আপনার মেয়েও খুব খুশিতে আছে। কাকলির মা বললেন - আমি জানি যে বাড়িতে তোমার মায়ের মতো মা আছেন আর তোমার মতো যার স্বামী সে কি করে খুশি না থেকে পারে। আমি ওনাদের প্রণাম করলাম। বাবা কাকলির বাবাকে নিয়ে গেলেন চা খাওয়াবেন বলে। দিলীপকে দেখছিনা। কাকলির সাজগোজ হয়ে যেতে ওকে নিয়ে সোফাতে বসিয়ে দিলো। ওখানে যেতে দেখি দিলীপ নিজেই ট্রে নিয়ে সবাইকে চা বিতরণ করছে। আমি ওকে বললাম - তুই এসব করছিস কেন রে কেটারারের লোক কোথায় গেলো। দিলীপ - আছে অনেক লোক তো তাই কন্যা যাত্রীদের আমি নিজেই আপ্যায়ণ করছি। দেখতে হবে তো আমাকে আমার বোনের বৌভাত বলে কথা। আমি-ওকে বললাম শালা বাবু আমি কি ব্যাড আমাকে চা দিবিনা ? দিলীপ - তোর আর আমার বোনের জন্য স্পেশাল চা হচ্ছে আমাকে দুমিনিট সময় দে আমি এখুনি নিয়ে আসছি।
সত্যি সত্যি একটু বাদেই দিলীপ আমাদের দুজনের জন্য চা নিয়ে এলো। কাকলিকে দেখে বলল - না বোন ইটা স্পেশাল চা তোর জন্য বানিয়েছি।
কাকলি ওর দিকে তাকিয়ে বলল - দাদা তুমি এতো কষ্ট করতে গেলে কেন সবাই যে চা খাচ্ছে সেটা হলেই তো হতো। দিলীপ - আমার বোন আমার কাছে স্পেশাল তাই স্পেশাল চা। ট্রে নিচে নামিয়ে রেখে বলল - দাঁড়া আমার মা-বাবা এসেছেন ওদিকে আছেন ডেকে আনছি দেখবে আমার বোনকে কি রকম পরীর মতো লাগছে। দিলীপ চলে গেলো একটু বাদে ওর মা-বাবাকে নিয়ে হাজির। দিলীপ একটা গয়নার বাক্স বের করে ওর মায়ের হাতে দিয়ে বলল - নাও মা এই তোমার মেয়ে কাকলি আমি ওকে আমার বোন বানিয়েছি তুমি নিজে হাতে এই হার পরিয়ে দাও ওকে। দিলীপের মা দিলীপের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন - সত্যি আমার মেয়েকে অসাধারণ সুন্দরী লাগছে দে আমি ওর গলায় পরিয়ে দি।
গলায় একটা সুন্দর হার পড়িয়ে দিলো। কাকলি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল - তুমি বস আমার পাশে। দিলীপ একটা চেয়ার এনে মা কে বসিয়ে বলল - তুমি এখানেই থাকো আমার অনেক কাজ। আমি ওকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি ওই রকম একটা ছেবলা ছেলের ভিতরটা যে এতো সুন্দর আমি জানতাম না। এ যেন এক নতুন দিলীপ। আমি কাকিমার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে বললাম - কাকিমা আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে সেটা আপনাকে রাখতে হবে। কাকিমা আমার দিকে তাকিয়ে বলেন - কি এমন কথা রে বল না।
আমি -দিলীপ একটা মেয়েকে পছন্দ করেছে ওকেই বিয়ে করবে আমাকে বলেছে। মেয়েটি খুব সুন্দরি তবে ওর আগে একটা বিয়ে হয়েছিল কিন্তু ওর স্বামী ছিলো সমকামী তাই স্বামীর কাছে এক মাসও থাকেনি। দিল্লির মেয়ে এই ঘটনার পরে ওর বাবাও মারা যান মা ওর বিয়ের আগেই গত হয়েছিলেন। মেয়েটা খুব ভালো দিল্লিতে নিজের ফ্ল্যাট আছে মানে ওর বাবার ফ্ল্যাট এখন ওর। কাকিমা জিজ্ঞেস করলেন - মেয়ে কি করে রে ?
আমি - মেয়ে ওখানকার কলেজে পড়ায়, ইংরিজির প্রফেসর খুব ভালো মেয়ে খুব মিশুকে , দাঁড়ান আমি ওকে ডেকে আনছি। তবে সেটা আপনার মতামতের ওপরে নির্ভর করছে। কাকিমা - শোন্ বাবা আমার কোনো আপত্তি নেই যে বিয়ে করবে সে যখন নিজেই পছন্দ করেছে তবে তোর কাকাকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখ। আমি - সে কাকাকে আমি জিজ্ঞেস করছি শুধু আপনি রাজি হলেই তো হবেনা। আমি দিলীপের বাবাকে খুঁজতে লাগলাম। ওনাকে দেখলাম আমার বাবা কাকলির বাবা আর দিলীপের বাবা এক সাথে বসে চা খাচ্ছেন আর গল্প করছেন। আমি কাছে যেতে দিলীপের বাবা বললেন - তুমি যে বিয়ে করেছো এতে আমি ভীষণ খুশি আর তোমার বৌকে দেখলাম যেমন সুন্দরী তেমনি ভালো তোমার বাবা আমাকে সেটাই বলছিলেন। দেখোনা আমার দিলীপের জন্য তোমার জানা শোনা কোনো মেয়ে যদি পাও।
আমি - সে কারণেই আমি খুজছিলাম আপনাকে। ওনাকে সবটা খুলে বললাম। সাথে এও বললাম যে কাকিমার কোনো আপত্তি নেই।
দিলীপের বাবা আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন - দাদা কি করবো আপনি একটা সাজেশন দিন্ না আমাকে।বাবা শুনে বললেন - খোকা যখন বোপলছে যে মেয়েটা ভালো তখন আর কোনো কোথায় থাকতে পারেনা ওর ওপর আমার অনেক বিশ্বাস। দিলীপের বাবা বললেন - সে আমার ওর ওপরে বিশ্বাস আছে। শুনে বললেন - দেখুন বৌদি যখন রাজি তখন আপনি আর কিন্তু কিন্তু করবেন না রাজি হয়ে যান যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে আর যা হবে সেটাও ভালোই হবে। দিলীপের বাবা আমাকে বললেন - একবা মেয়েকে তো দেখতে হবে শুনেছি সে দিল্লি থেকে তোমার বিয়েতে এসেছে। আমি - এখুনি ওকে ডেকে আনাচ্ছি। ছুটকি ওর দিদির কাছে যাচ্ছিলো ওকে ডেকে বললাম- পায়েল দিদি আর নিশা দিদিকে
চিনিস ? ছুটকি - চিনবো না কেন ওই তো প্যান্ডেলের বাইরে তোমার বসের সাথে গল্প করছে। আমি বললাম - জানা ওদের ডেকে এখানে নিয়ে আয়। ছুটকি চলে গেলো আর একটু বাদে পায়েল আর নিশার হাত ধরে নিয়ে এলো আমাদের কাছে। সাথে বিভাসদাও আছেন।
নিশাকে বললাম - দিলীপের বাবা প্রণাম করো। নিশা প্রণাম করতে কাকা ওর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন বললেন সুখী হও। তারপর নিশাকে জিজ্ঞেস করলেন - তুমি আমার ছেলেকে বিয়ে করতে চাও ? দেখো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই তুমি না চাইলে জোর করে কিছু করা হবে না। নিশা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে বললাম - বলো তুমি কি চাও। নিশা বলল - আমি ওকে বিয়ে করতে চাই যদি আপনি পারমিশন দেন। কাকা আর কিছু বললেন না। পায়েল এসে কাকাকে প্রণাম করে বলল - খুব ভালো হবে আপনার ছেলের বৌ ও খুব বড় মনের মানুষ। নিশা আবার বলল - আমার একটা অনুরোধ আছে আপনার কাছে আমি আর ছাদনা তলায় গিয়ে বসতে চাইনা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হলে ভালো হয়। আমি সব পুরোনো স্মৃতি ভুলতে চাই। কাকা আমাকে বললেন - সেকি সুমন অগ্নি সাক্ষী করে বিয়ে হবেনা। জানিনা তোমার কাকিমা শুনলে কি বলবেন। আমি বললাম - আমি কাকিমাকে বলেছি ওনার কোনো আপত্তি নেই। নিশা এখন পরিচয় হিনা ওকে একটা সামাজিক পরিচয় দেওয়া আমাদের সকলের কর্তব্য। ও যখন চাইছে যে ওর আগের বিয়ের স্মৃতি ভুলতে তখন ওকে জোর করা কি ঠিক হবে ?
আমার বাবা কাকাকে বোঝালেন শুনে কাকা বললেন - দেখো সুমন আমার মাথায় কিছু আসছেনা তুমি সবটা সামলিও। বিভাসদা বাংলা সবটা বুঝতে না পারলেও কিছুটা বুঝে কাকাকে বললেন - আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমার সবাই সুমনের সাথে আছি।
সব ঠিক হয়ে গেলো যে আগামী কালকে এখানেই রেজিস্ট্রি হবে এই পেন্ডেলেই এখানেই উভয় পক্ষের লোকেরা নিমন্ত্রিত থাকবেন।