18-07-2023, 04:05 PM
পর্ব-২৫
বিভাসদা কে ফোন করলাম - বিভাসদা ফোন ধরে বললেন - কি খবর সব ঠিক আছে তো ? আমি- হ্যা সব ঠিক আছে মেয়ে দেখতে এসেছি আর সেখান থেকেই ফোন করছি আপনাকে। একটা রিকোয়েস্ট ছিল আমার। বিভাসদা - আরেবাবা এতো কিন্তু কিন্তু করছো কেন। আমি কথাটা বলতেই বিভাস দা বললেন - ঠিক আছে সোমবার আমি পার্সোনাল ডিপার্টমেন্টে গিয়ে তোমার ১০ দিনের ছুটির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এর থেকে কিন্তু বেশি ছুটি এখন তুমি পাবে না। শুনে আমি খুশি হয়ে বললাম - না না দাদা আপনি যা করলেন। আসলে মেয়ের বাড়ির লোকেদেরও খুব ইচ্ছে তাই এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু করতে হচ্ছে। আমার বিয়ে আগামী শুক্রবার ঠিক করছি আর রবিবার রিসেপশন। আপনাকে কিন্তু আসতেই হবে। বিভাসদা - কোনো এমার্জেন্সি না হলে আমি চলে আসবো। ছুটির ব্যাপারটা মিটে যেতে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নামলাম। মা-বাবাকে কথাটা বলতে মা বললেন - এর মধ্যেই বিয়ে কি করে হবে সব জোগাড় করতেই তো দশ পনেরদিন লেগে যাবে। আমি বেঁকে বসলাম বললাম যদি সামনের শুক্রবার আমার বিয়ে দিতে পারো তো ঠিক আছে না হলে আমি কাকলিকে এমনিই নিয়ে চলে যাবো এই বলে দিলাম।
বাবা শুনে বললেন - দেখ বাবা মেয়ের বাবাকে জিজ্ঞেস করি আগে। আমি বললাম চলো তাহলে এখুনি সব কিছু ঠিক করে নি। বিমান বাবু কে কথাটা বলতে উনি বললেন - এভাবে সম্ভব হবে না বাবা। আমি তখন বললাম - ঠিক আছে আমি তাহলে কালকেই কাকলিকে নিয়ে দিল্লি চলে যাচ্ছি আর ওখানে গিয়ে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে নেবো আমরা। বিমান বাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন - বিয়ের আগেই তুমি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যেতে চাইছো ? আমি - হ্যা কাকলির সাথে আমার কথা হয়ে গেছে ও রাজি আছে। আর তাতে বেশি খরচ হবে না। এরমধ্যে কাকলির মা বেশ গম্ভীর হয়ে বললেন - শুনেছ তোমার বড় মেয়ে কি বলছে ? বিমান বাবু - কি বলল সে আবার। উনি বললেন যে কালকেই ও সুমনের সাথে দিল্লি যেতে চাইছে ওখানে গিয়ে নাকি দুজনে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করবে। বিমান বাবু - অরে ছেলেও তো সে কোথাই বলছে। বুঝেছো জামাই-মেয়ে দুজনে মাইল প্ল্যান করেছে। বিমান বাবু পাত্র হাত ছাড়া করতে চাইছেন না আর আবার বিয়ের আগেই মেয়ে সুমনের সাথে চলে যাবে সেটাও মেনে নিতে পারছেন না। একটু বাদে বললেন - আগে দেখি সামনের শুক্রবার কোনো দিন আছে কিনা। আমি শুনে বললাম - সে দিন থাকুক আর নাই থাকুক শুক্রবারই আমাদের বিয়ে হবে আর দিন না থাকলে রেজিস্ট্রি করে নেবো আর সেটাও ওই শুক্রবারেই।
বিমান বাবু পাঁজি নিয়ে দেখে বললেন - একটা লগ্ন আছে একটু বেশি রাতে। ঠিক আছে বাবা ঐদিনই তোমাদের বিয়ে হবে। আমি এবার খুশি হয়ে বললাম - শুনুন আপনাকে কিছুই দিতে হবে না শুধু শাড়ি পড়িয়ে দিলেই হবে আমি পরে ওকে সব কিছু দিয়ে সাজিয়ে দেব। একবার কাকলিকে ডেকেদিন ওর সামনেই কথা হোক আর এতে যদি ওর আপত্তি থাকে।
কাকলিকে ওর মা দেখে আনলেন -ওকে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম -তোমার এই শুক্রবারে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি আছে ? কাকলি - আমাকে আজকে বিয়ে দিলেও কোনো অসুবিধা নেই আমি সবেতেই রাজি তুমি আমাকে যে ভাবে রাখবে আমি সেভাবেই তোমার সাথে থাকবো।
কাকলির মা বললেন - দেখ গয়নাগাটি করতে হবে নিমন্ত্রণ পত্র ছাপাতে হবে কিছু লোককে তো বলতে হবে। এর মধ্যে সব কি করে হবে বল।
আমি শুনে বললাম - এখুনি একটা বয়ান বানিয়ে ফেলুন আর আমি কালকেই ছাপিয়ে দিয়ে যাবো আপনাকে। আর আপনাদের মেয়ে এখন আমার বৌ হতে চলেছে আর আমার মা-বাবার মেয়ে সুতরাং আমাদেরও একটা দায়িত্ত আছে। আমাদের কিছুই চাইনা আমার মা তার মেয়েকে সাজিয়ে নিয়ে যাবেন। মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম - কি মা তাইতো। মা বললেন - ঠিক আমি আমার মেয়েকে সাজিয়ে নিয়ে যাবো ওর নিজের বাড়িতে। আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম - এমন মা আর সারা ভারতে খুঁজলে পাওয়া যাবে না। কাকলির মা এবার বললেন - ঠিক আছে দিদি ও এখন আপনার মেয়ে আপনারা যা বুঝবেন সেটাই করুন আমরা আর কি বলবো। বিমান বাবু - নিমন্ত্রণ পত্রের একটা খসড়া করে আমাকে দিয়ে বললেন - একটু দেখে নিও যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে। আমি একটু পড়ে নিয়ে বললাম - না না একদম ঠিক আছে। কাকলির দিকে তাকিয়ে বললাম - তুমি খুশি তো ? কাকলি আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো যে ও খুব খুশি। দুপুরের খাওয়ার সময়ও বিয়ে নিয়ে আলোচনা চলল। বিকেলের দিকে আমি বাবাকে বললাম বাবা এবার আমাদের যেতে হবে অনেক কাজ করতে হবে। বিমান বাবু বললেন - যেমন দায়িত্ত নিয়েছো এখন তোমাকেই সামলাতে হবে। শুনে বললাম -আমার কোনো অসুবিধা হবে না সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে। বিভাসদাকে ফোন করে আমার সোমবারের টিকিট ক্যান্সেল করতে বলে দিলাম। উনি বললেন আমার জন্য আরো কোনো কাজ থাকলে জানাও। তোমার সব কাজ আমি করে দেব। ফেরার টিকিটের ডিটেইলস আমাকে পাঠিয়ে দিও আমি টিকিট করে তোমার মেইলে পাঠিয়ে দেব।
বাড়িতে না ঢুকে আগে গেলাম দিলীপের কাছে ওর এই পাড়ায় অনেক ক্ষমতা। ওকে গিয়ে সব বললাম - শুনে খুশিতে জড়িয়ে ধরে বলল - তুই বিয়ে করছিস ভেবে আমার বুকে একটা বোঝা ছিল সেটা নেমে গেলো রে। তোকে কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমি সব ব্যবস্থা করে দেব। প্যান্ডের ক্যাটারিংয়ের সব। আমি শুনে বললাম - আমার শশুর বাড়ির ব্যাপারটাও তোকে দেখতে হবে সেটা মাথায় রাখিস তুই। দিলীপ আমাকে বলল - গুরু তোর শশুর বাড়িতে তো আমাকে কেউই চেনেন না। আমি - সে কালকে আমার সাথে যাস পরিচয় করিয়ে দেব।
দিলীপ - ব্যাস হয়ে গেলো তুই নিশ্চিন্তে থাকে আর কাকা -কাকিমাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলিস। আমি বাড়ি ঢুকলাম। মা - আমাকে ডেকে বললেন - বাবা কয়েকটা গয়না তো কিনতে হবে কালকে তাহলে আমার আর তোর বাবার সাথে একবার বেরোতে হবে তোকে।
আমি - ঠিক আছে কালকে সকালের দিকে যাওয়া যাবে। বাবা বললেন - সে না হয় গেলাম কিন্তু বৌমার হাতের মাপ কি ভাবে পাবো।
আমি - ঠিক আছে আমি কাকলির বাবাকে ফোনে বলে দিচ্ছি। মেক বললাম - ওনাদের ফোন নম্বরটা আমাকে দাও তো আমি ফোনে বলে দিচ্ছি যাতে সকালের দিকে কাকলিকে একবার পাঠিয়ে দেয় আমাদের বাড়ি। আমি ফোন করতেই কাকলি ফোন ধরলো। ওকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা কোথায় ওনাকে দাও একটু কথা আছে। কাকলি মজা করে বলল - কেন বাবার মেয়েকে দিয়ে চলবে না ? আমি - সে চলবে তবে এখন তোমার বাবাকেই আমার চাই। কাকলি - কেন গো ? আমি - তোমার বাবাকে বলতে ভুলে গেছিলাম যে আমার দশলাখ টাকা পন লাগবে। শুনে প্রথমে কাকলি একটু ঘাবড়ে গেলো কেননা আমি বেশ গম্ভীর হয়ে কথাগুলো বলেছি। ও চুপ করে আছে হঠাৎ পিছন থেকে কাকলির বাবার গলা শুনলাম উনি জিজ্ঞেস করলেন কার ফোন রে মা ? কাকলি কিছু না বলেই ফোনটা ওর বাবার হাতে দিয়ে দিলো। উনি হ্যালো বলতে - আমি বললাম আমি তাড়াহুড়োতে একেবারে ভুলে গেছিলাম যে কাকলির হাতের মাপ জামা কাপড়ের মাপ তো নেওয়া হয়নি। তাই বোলছিলাম যে আপনি যদি দোয়া করে সকাল দশটা নাগাদ কাকলিকে আমাদের বাড়িতে দিয়ে যান তো ভালো হয়। বুঝতেই পারছেন সময় তো বেশি নেই তাই। শুনে উনি বললেন - এতো ভালোই হলো আমরাও কালকে বেরোবো কাকলিকে নিয়ে। তাহলে একসাথেই জাওয়া যাবে। আমি শুনে বললাম খুব ভালো হয় তাহলে। আপনারা আমাদের বাড়িতে চলে আসুন একটা গাড়ি নিয়ে চলে যাবো। উনি বললেন ঠিক আছে বাবা ঠিক দশটায় আমরা পৌঁছে যাবো।