18-07-2023, 01:48 PM
পর্ব-২২
নিজের ঘরে গিয়ে জামা-কাপড় ছেড়ে বাথরুমে ঢুকলাম জাঙ্গিয়া নিয়ে। সেটাকে সাবান দিয়ে কেচে স্নান করে বেরিয়ে এলাম। মাকে বললাম - ভীষণ খিদে পেয়েছে খেতে দাও। মা- আয় বস খেতে দিচ্ছি। বাবা আর আমি খেয়ে নিয়ে উঠতে মা খেতে বসলেন। বাবা আমাকে নিয়ে বসার ঘরে গিয়ে তিনটে খাম দিয়ে বললেন - দেখো তো এর মধ্যে কোনটা তোমার পছন্দ। আমি - আমার পছন্দ অপছন্দের কথা বাদ দাও তোমাদের যাকে পছন্দ তাকেই দেখে আসি চলো। আমাদের কথার মাঝেই মা চলে এলেন বললেন - তবুও বাবা একবার দেখে বল না। বাধ্য হয়েই খাম থেকে তিনটে ফটো বের করে দেখতে লাগলাম। তিনজনকেই মোটামুটি ভালোই বলা চলে। আমি মাকে সে কথা জানাতে মা বললেন তাহলে তিনজনকে দেখে আসি। দুটো মেয়ে বারাসাতের আর একটা একটু দূরে কৃষ্ণনগরে। মা বললেন - তাহলে কালকে সকাল বেলা বারাসতের মেয়েকে দেখে আসি। আমি বললাম - সেটাই ভালো কালকে খুব ভোরে উঠে কৃষ্ণনগরে যাওয়া যাবে। আমার খুব ঘুম পেতে মা-বাবাকে বলে শুতে চলে গেলাম।
বিছানায় মাথা রেখেছি আর তখনি ফোন এলো পায়েলের। জিজ্ঞেস করতে লাগলো কখন পৌঁছেছি এই সব কথা বলে ও ফোন রেখে দিলো। বুঝলাম যে ওর বর ধরে কাছেই আছে। আমি নিশাকে ফোন করলাম - নিশা ফোন ধরে বলল - হাই কি করছো তুমি। বললাম - এইতো খেয়েদেয়ে শুতে এলাম খুব ঘুম পাচ্ছে তাই। নিশা বলল - হবেইতো সারাদিন অফিস করে এতোটা জার্নি করে গেছো তুমি ঘুমিয়ে পড়ো পরে কথা হবে।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে বাজারে গেলাম। এটাই আমার জীবনের প্রথম বাজারে যাওয়া। আমাকে যারাই দেখছে সবাই জিজ্ঞেস করছে - কি ব্যাপার তোর বাবার কি শরীর খারাপ নাকি যে তুই বাজারে এলি। আমার একটু রাগ হলো বাবা সারাজীবন আমাদের জন্যে চাকরি করে ,বাজার করে গেছেন তাই বলে আমি ছেলে হয়ে যখন চাকরি করছি আমি বাজারে আসতে পারিনা। যাইহোক - সবার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শেষে সবজি বাজার করে মাছের বাজারে গিয়ে ঢুকলাম। সেখানে দিলীপের সাথে দেখা ও মাছ কিনছে , আমাকে দেখে কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল - কবে এলি তুই ?
আমি বললাম ও আবার জিজ্ঞেস করল - কদিন থাকবি রে ? আমি - সোমবার বিকেলে চলে যাবো। দিলীপ শুনে বলল - আজকে রাতে আসবি একবার ক্লাবে ? আমি কোনোদিনই পাড়ার ক্লাবে যায়নি আর যেতেও চাইনা তাই ওকে বললাম - নারে তার থেকে তুই রাতে আমাদের বাড়ি চলে আয় কথা হবে। মাই মাছ কেনার জন্য দিলীপের সাহায্য নিলাম। ও দেখেশুনে দরদাম করে আমাকে ইলিশ মাছ কিনিয়ে দিলো। আমার মায়ের খুবই পছন্দের মাছ এটা। কিছুটা চিকেন কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। অতো বাজার দেখে মা একেবারে তেড়ে এলেন বললেন - আমি জানি তোর এখন অনেক টাকা তাই বলে কি সব টাকা এই ভাবে খরচ করতে হবে। আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম - রাগ করছো কেন মা তোমার ছেলে কি তোমাদের জন্য আজ পর্যন্ত কিছু করেছে। একটু বেশি খরচ করে বাজারটাই তো শুধু করেছি। এতদিন তো বাবা সব করলেন আমার গায়ে একটুও আঁচড় পড়তে দেন নি। বাবা ঘর ঠেকলে বেরিয়ে মাকে শান্ত করে বললেন - তুমি অতো রাগ করছো কেন ছেলে সখ করে একটু বেশি বাজার করেছে তো কি হয়েছে। তোমার তো আনন্দ হয় উচিত না করে তুমি রাগ করছো। সেটা কি আমি না হয়ে ছেলে নিজে বাজারে গেছে
বলে। এবার মা বললেন - না না ও বাজারে গেছে বলে আমি রাগ করিনি তুমি চলো রান্না ঘরে কি করেছে খোকা দেখে তারপর বলো। বাবাকে নিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখালেন - দেখো এত্তো বড় একটা ইলিশ আর এক গাদা চিকেন এনেছে। বাবা দেখে বললেন - অনেক টাকার মাছে এনেছে খোকা বুঝলাম কিন্তু তুমি ইলিশ মাছ ভালো বাস ছেলে কিন্তু সে কথা ভোলেনি তোমার জন্য ইলিশ কিনেছে। আমি মাকে বললাম - এবার কি আমাকে একটু চা বিস্কিট দেবে , অবশ্য তোমার যদি আমাকে বকাবকি শেষ হয়ে থাকে। মা হাতের কাছে একটা খুঁটি তুলে তেড়ে এলেন বললেন তুই কি সেই ছোট বেলার মতো আমার কাছে খুন্তির বাড়ি খাবি। আমি - হ্যা খেতে রাজি আছে যদি তুমি আমাকে মারতে পারো। মা এবার হেসে ফেললেন তুই এখনো সেই ছোট বেলার মতোই আছিস রে খোকা। বস তোর বাবাও চা খান নি তুই এলে খাবেন বলে বসে আছেন।
তিনজনে চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিলো। মা বললেন - আমার তো বাবা ওই কোর্ট মোড়ের মেয়েটাকে বেশি পছন্দ আগে ওকেই দেখে নিয়ে পরে না হয় কলোনি মোড়ের মেয়ে দেখব। বাবা জিজ্ঞেস করলেন - ওদের বলেছো তো আজকে সকালেই মেয়ে দেখতে যাচ্ছি আমরা ? মা - হ্যা আমি বলে দিয়েছি ঠিক দশটা নাগাদ আমার যাবো আর বিকেলের দিকে কলোনি মোড়ের মেয়ে দেখবো। আমি স্নানে ঢুকলাম - স্নান সেরে বেরোতে মা খেতে দিলেন। এবার মা আর বাবা একে একে স্নান সরে নিলেন। মা পুজো সেরে বাবা আর মা দুজনে জলখাবার খেয়ে নিলেন। আমার রেডি হয়ে একটা অটো ধরে কোর্ট মোর একটা বাড়ির সামনে নামলাম। যে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতেই বাড়ি থেকে এক ভদ্রলোক বেরিয়ে আমাদের আমন্ত্রণ করে ভিতরে নিয়ে বসালেন। বললেন - বিকেলে এলে বেশি ভালো হতো। উত্তর বাবা বললেন - দেখুন কালকে রাতে আমার ছেলে এসেছে নতুন চাকরি তাই বেশি ছুটি এখন ও নিতে পারবে না তাই সকালে আপনার মেয়েকে দেখে বিকেলে আর একটা দেখে নেব . ছেলে আমার আবার সোমবার চলে যাবে। ওনার নাম বিমান বোস। উনি ভিতরে গেলেন এক মহিলা সাথে একটি সাজুগুজু করা একটি মেয়েকে নিয়ে ঢুকলেন। মেয়েটির হাতে ট্রে তাতে তিনটে মিষ্টির প্লেট। মেয়েটি সামনে রেখে মা বাবাকে প্রণাম করে সমানে রাখা একটা চেয়ারে বসল। বাবা নাম জিজ্ঞেস করতে বলল - কাকলি। বিএ ফাইনাল ইয়ার। মা টুকি টাকি কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। আমি মেয়েটার মুখের দিকে তাকাইনি। মা আমাকে বললেন - একবার চোখ মেলে চেয়ে দেখ। আমি চোখ তুলে চাইতে মেয়েটি হাত তুলে নমস্কার করল। আমিও করলাম। আমার থেকে দু-তিন বছরের ছোট হবে। সুন্দর সাস্থ মাই দুটো কাপড়ের ওপর থেকো বেশ সুন্দর লাগছে। হাতের আঙ্গুল গুলোও ভীষণ সুন্দর। শুনেছি এরকম হাতের আঙ্গুল যাদের তারা নাকি শিল্পী হয়। আমি ওকে প্রশ্ন করলাম - আপনি কি গান শেখেন ? কাকলি - আমার দিকে তাকিয়ে বলল - হ্যা শিখি। আমি আবার বললাম - আমি কিন্তু দিল্লিতে থাকি মা-বাবাকে ছেড়ে দিল্লি যেতে কোনো আপত্তি নেই তো ?
কাকলি - খারাপ লাগবে সেট আপনারও কলকাতা ছেড়ে দিল্লিতে থাকতে তো প্রথমে খারাপই লেগেছিলো তাইনা। এটা ঠিক বলেছে। আমি এবার জিজ্ঞেস করলাম - তোমরা কভাইবোন ? কাকলি - আমারা তিন বোন ও এক ভাই। ভাই সবার ছোট। আমি - আর কাউকে তো দেখছি না।