16-07-2023, 08:22 PM
(This post was last modified: 16-07-2023, 08:25 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
"ওঠ বাবু .. সাড়ে আটটা বেজে গেছে। আর কত ঘুমাবি রে? কলেজ যাবি না?" পরের দিন সকালে তার মায়ের চিৎকারে আর পাঁচটা দিনের মতোই নিরস, একঘেঁয়ে, বিরক্তিকর গুডমর্নিং দিয়ে শুরু হলো সৈকতের। আজ আর বিছানায় শুয়ে গড়িমসি করলো না সে। বিছানায় উঠে বসে আড়চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো মশারি ভাঁজ করছে তার মা। সেই এক চোখ, সেই এক মুখ, সেই এক কথা বলার ধরন, হাঁটাচলা, আগেরদিন রাতে পড়া সুতির হাতকাটা নাইটিটা .. এই সবকিছু আগের মতোই রয়েছে। তবুও কেন জানিনা আজ তার মা'কে ভীষণ অচেনা লাগছিলো সৈকতের।
একটা কথাও না বলে বাথরুমে ঢুকে গেলো সে। প্রাতঃকৃত্য সেরে, দাঁত মেজে শাওয়ারটা খুলে দিলো সৈকত। আগেরদিন রাতে তার মা আর ইউসুফের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের কথা কথা মনে পড়ে গেলো তার। ধূর্ত শয়তান ইউসুফটা নিজের কথার জালে, ছলে বলে কৌশলে তার মায়ের মুখ দিয়ে ঠিক বের করে নিলো তাদের অসুখী দাম্পত্য জীবনের কথা। কিন্তু পারিবারিক অশান্তি সম্পর্কে তার মা যে কথাগুলোর আভাস দিয়েছিলো, অর্থাৎ তার ঠাকুমা এবং পিসিদের তার মায়ের প্রতি অত্যাচারের কথা। সেগুলো তো তার চোখে কোনোদিন পড়েনি! তাহলে কি এই ঘটনাগুলো কোনোদিন ঘটেনি? নাকি ঘটেছে, তার চোখে আড়ালে! হয়তো তার মা তাকে কোনোদিন জানতেই দেয়নি এসব। কিরকম কায়দা করে তার মা'কে 'তুমি' সম্বোধনের অনুমতি আদায় করে ফেললো ইউসুফ ভাই, আর তার সঙ্গে তার মাকেও ওকে 'তুমি' করে বলতে হবে সেটাও প্রমিস করিয়ে নিলো! কিন্তু ছেলেটা কি চায়? ও কি তার মায়ের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেই ক্ষান্ত থাকবে, নাকি ওর অন্য কোনো প্ল্যান আছে? কিছুই বুঝতে পারলো না সৈকত।
ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেও নিজের মনকে শান্ত করতে পারছিলো না সে। এই সবকিছু তাকে বন্ধ করতে হবে। ফোনটাই তো যত নষ্টের মূল! ওটা যদি ইউসুফকে ফেরত দিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তো আর কোনো সমস্যা থাকবে না। "ফোনটা তাহলে আমাকে দিয়ে দাও, কলেজের যদি ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে ওটা ওকে আমি দিয়ে দেবো।" খাওয়া শেষ করে তার মায়ের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললো সৈকত।
"হ্যাঁ, ফোনটা তো দিয়ে দেওয়ারই কথা। কিন্তু উনি যদি আজ তোদের কলেজের না আসেন। এত দামী একটা ফোন নিয়ে যাবি, তারপর যদি ফোনটা চুরি হয়ে যায়! তুই যা ক্যাবলা, তোর তো কোনো খেয়াল থাকে না। তার থেকে ভালো তুই উনাকে ফোন করে জেনে নে, আজ উনি কলেজে আসবেন কিনা! যদি আসেন তাহলে আমি ফোনটা তোকে দিয়ে দেবো আর যদি না আসেন তাহলে থাক আমার কাছে, যবে উনি আসবেন, তবে দেবো।" তার মায়ের এই কথায় সৈকত দুটো জিনিস লক্ষ্য করলো। প্রথমতঃ হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে ইউসুফকে 'তুমি' করে বললেও তার সামনে আপনি-আজ্ঞে করে বলছে। আর দ্বিতীয়তঃ তার মায়ের মুখে ফোন ফেরত দেওয়ার কথা শুনে, মায়ের প্রতি কনফিডেন্সটা যেন একটু বেড়ে গেলো সৈকতের।
মনে মনে খুশি হয়ে সে নিজের ছোট মাল্টিমিডিয়া ফোনটা থেকে বার তিনেক ইউসুফকে কল করলেও ফোন তুললো না তার বন্ধু। "ও তো ফোন তুলছে না। আমার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি বেরোচ্ছি। ঠিক আছে ফোনটা আজকে রেখে দাও। পরে ওকে ফোন করে জেনে নেবো কবে আসবে, সেদিন দিয়ে দিও।" এই বলে বিদায় নিলো সৈকত।
কলেজে ঢোকার আগেও একবার ইউসুফকে ফোন করলো সে, কিন্তু এবারও কোনো রেসপন্স এলো না। সোমবার খুব চাপ থাকে .. একটার পর একটা ক্লাস হয়ে চললো আর তার সঙ্গে ফোন করার কথাটাও মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো সৈকতের। সাড়ে তিনটে নাগাদ কলেজ ছুটি হওয়ার পর গেট দিয়ে বেরিয়েই সে দেখলো নিজের রয়্যাল এনফিল্ড বাইকটা নিয়ে কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইউসুফ।
"কি গো .. তোমাকে সকাল থেকে এতবার ফোন করলাম। ফোনটা ধরলে না তো! তুমি আজকে কলেজে আসছো জানলে, আমি ফোনটা নিয়ে আসতাম। মা ফোনটা দিতে চেয়েছিলো আমাকে। বলছিলাম, তুমি কি অন্য কোনো কাজে কলেজে এসেছো? নাকি আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য?" কথাগুলো বলে ইউসুফের দিকে এগিয়ে গেলো সৈকত।
- "এত কথা বলিস কেন তুই? বেশি না বকে চুপচাপ আমার বাইকের পেছনে ওঠ .."
- "কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে? তুমি কি আবার আমাদের বাড়ি যাবে?"
- "ঠিক করেছি তোকে সোনাগাছিতে নিয়ে গিয়ে বেচে দেবো আজকে, রেন্ডিগুলোর ফাইফরমাশ খাটবি। যদিও তোকে বেচলে একটা টাকাও আমি পাবো না, উল্টে আমার পকেট থেকেই টাকা দিতে হবে ওদেরকে। ফালতু না হেজিয়ে চুপচাপ বাইকের পেছনে ওঠ, একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাবো তোকে। কলেজের ছেলেগুলো কিন্তু তোকে দেখছে, এরপর প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারবি তো?"
ইউসুফের এই কথায় আর দ্বিরুক্তি না করে তার রয়্যাল এনফিল্ডের পেছনের সিটে চেপে বসলো সৈকত। সঙ্গে সঙ্গে বাইক স্টার্ট দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গেলো ইউসুফ। মিনিট দশেক পর বাইকটা ওই এলাকার একটা নামকরা রেস্টুরেন্টের সামনে থামলো। "সেই কোন সকালে খেয়ে বেরিয়েছিস, এখন বিকেল হয়ে গেলো। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? চল, তোকে তোর পছন্দের খাবার খাওয়াবো।" এই বলে সৈকতকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকে গেলো ইউসুফ।
এমনিতেই ফাস্টফুডের জন্য পাগল সৈকত। তার উপর এইরকম একটা নামকরা রেস্টুরেন্টে এসে বেজায় খুশি হলো সে। তার ফেভারিট ফিস কবিরাজি অর্ডার দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই টেবিলে দিয়ে গেলো খাবারটা। "তুমি তো শুধু মশালা কোল্ডড্রিঙ্ক নিলে, সলিড কিছু খাবে না? কবিরাজিতে কামড় বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলো সৈকত।
- "নাহ্ .. দুপুরে দেরি করে লাঞ্চ করেছি, তাই পেট ভর্তি। তখন ফোন নিয়ে যেন কি বলছিলিস?"
- "তোমাকে অনেকবার ফোন করেছিলাম, সেটাই বলছিলাম। আমার মিসডকল পাওনি?"
- "পেয়েছি .. না না, তারপর কি যেন বলছিলিস, আমাকে ফোন ফেরত দিয়ে দিবি .."
- "ও আচ্ছা, যে ফোনটা তুমি কালকে দিয়েছিলে, মা বলছিলো ওটা নিয়ে গিয়ে তোমাকে দিয়ে দিতে .. সেই জন্যই তো তোমাকে ফোন করেছিলাম।"
- "তোর মা নিজে থেকে এই কথাটা বলেছে?"
- "না মানে, আমিই মা'কে বলেছিলাম ফোনটা দিয়ে দেওয়ার জন্য .."
- "বুঝলাম, কেনো ফেরত দিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলিস? কাল রাতে হোয়াটসঅ্যাপে তোর মা আর আমার কথোপকথন পড়ে মাথাখারাপ হয়ে গেছে, নিজের মায়ের প্রতি সব কনফিডেন্স চলে গেছে, তাই তো?"
- "না মানে, হ্যাঁ মানে .. সেরকম কিছু নয়, আসলে ফোনটা ফেরত দিয়ে দিতে হবে, এরকমই তো কথা হয়েছিলো।"
"এরকম কোনো কথা হয়নি। তোর মা গতকাল ফোনটা ফেরত দিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলো ঠিকই। কিন্তু আজ আর রাজি হবে না। বিশ্বাস না হয়, বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে দ্যাখ। তাছাড়া একজন গৃহবধূ হয়ে তোর মা স্মার্টফোন পেয়ে গেলো, তুই তার ছেলে হয়ে এখনো মাল্টিমিডিয়া ফোন ইউজ করছিস! ব্যাপারটা তোর হজম করতে কষ্ট হচ্ছে, ইগোতে লাগছে তোর। তাই তো? আমি যেটা প্রমিস করি, সেটা রাখি। তোকে বলেছিলাম আমার পুরনো ফোনটা তোকে দিয়ে দেবো। এই নে, এটা ব্যবহার কর .." কথাগুলো বলে নিজের পকেট থেকে একটা স্মার্টফোন বের করে সৈকতের দিকে এগিয়ে দিলো ইউসুফ।
"থ্যাঙ্ক ইউ দাদা, সরি থ্যাঙ্ক ইউ ইউসুফ ভাই। কিন্তু মা ফোনটা ফেরত দিতে আর রাজি হবে না কেনো?" ইউসুফের দেওয়া ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো সৈকত।
"সেটার রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তোকে যে ফোনটা দিলাম সেটার মধ্যে। কাল সকালে যখন তোদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখন আমার সঙ্গে এই ফোনটাও ছিলো। নতুন ফোনটা অন করে সেটা থেকে যখন হোয়াটসঅ্যাপ ইন্সটল করছিলাম, তখনই এই ফোনটা পকেট থেকে একবার বের করে একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে দুটো ফোন merge করে দিয়েছিলাম। তবে 'মাদার ফোন' এটাই, অর্থাৎ ওখান থেকে সমস্ত ইনফরমেশন এটার মধ্যে আসবে। কিন্তু এটার থেকে কোনো ইনফর্মেশন ওই ফোনে যাবে না। তোর মোটা মাথায় অবশ্য এইসব কথা ঢুকবে না। আসল কথা হলো এবার থেকে আর স্ক্রিনশট পাঠানোর দরকার নেই। তোর মায়ের সঙ্গে শুধু আমার নয়, যেকোনো ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা এমনি সাধারন মেসেজ .. সবকিছুই তুই দেখতে পাবি এই ফোনটার মাধ্যমে। এখন থেকে তোকে আর চেয়ারে পা ঝুলিয়ে বসে কম্পিউটার করতে করতে মশার কামড় খেতে হবে না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইলে সব কিছু দেখতে পারবি। রিচার্জ করে দিয়েছি, চিন্তা নেই। বোঝা গেলো? খাওয়া কমপ্লিট? এবার চল তাড়াতাড়ি তোকে বাড়ির সামনের রাস্তাটায় নামিয়ে দিয়ে আসি। আমার আবার একটা এসাইনমেন্ট রয়েছে।" কথাগুলো বলে চেয়ার থেকে উঠে পড়লো ইউসুফ।
"মায়ের সঙ্গে কি তোমার আজ হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়েছে?" বাইকে করে বাড়ি ফেরার পথে ইউসুফকে প্রশ্ন করলো সৈকত।
"আমি আর নিজে থেকে তোকে কিছু বলবো না। যা জানার, যা দেখার .. সব এই ফোনের মাধ্যমেই দেখতে পারবি। আমি লুকিয়ে চুরিয়ে কিছু করতে ভালোবাসি না। যা করবো তোর চোখের সামনে করবো। ভালো কথা, এই ফোনটা কিন্তু লুকিয়ে রাখিস। তা নাহলে তোরই বিপদ। চলি রে, টা টা ..'' সৈকতকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো ইউসুফ।
একটা গোটা ফিস কবিরাজি সাঁটিয়ে পেটে আর এক ফোঁটাও জায়গা ছিলো না তার। তাই বাড়িতে ফিরে জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে ইউসুফের কাছ থেকে পাওয়া স্মার্টফোনটা নিয়ে নিজের ঘরে এসে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে খাটের উপর বসলো সৈকত। উপহার হিসাবে পাওয়া জীবনে প্রথম স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য মনে যেমন একটা আনন্দ হচ্ছিল তার, ততোধিক ভেতর ভেতর একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছিলো রেস্টুরেন্টে ইউসুফ ভাইয়ের বলা শেষ কথাগুলো মনে করে। তাহলে কি সে বেরিয়ে যাওয়ার পর তার মায়ের সঙ্গে আজ কথা হয়েছে ইউসুফের? জানতেই হবে তাকে। মোবাইলটা অন করতেই ফোনের ভেতর আগে থেকে ইন্সটল করে রাখা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের নোটিফিকেশন এলো। সৈকত দেখলো এটা তার মায়ের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট। ইউসুফ ভাই তারমানে ঠিক কথাই বলেছিলো। এর আগে তার মায়ের হোয়াটসঅ্যাপের সমস্ত কথোপকথন চলে এসেছে তার মোবাইলে, এবং ভবিষ্যতেও তার মা হোয়াটসঅ্যাপে যা কিছু লিখবে সব চলে আসবে তার মোবাইলে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে বন্দনা দেবীর হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বক্সে চোখ রাখলো সৈকত।
বেলা ১১টা ৩০ ..
ইউসুফ - "কি করছো এখন? মোবাইলটা ফেলে দিয়েছো? নাকি যত্ন করে রেখে দিয়েছো?"
দুপুর ১টা ২০ ..
বন্দনা - "ও মা .. এত দামী মোবাইল ফেলে দিতে যাবো কেন? রেখে দিয়েছি আমার কাছে। আপনার সঙ্গে দেখা হলে ফেরত দিয়ে দেবো। এইমাত্র দেখলাম আপনার পাঠানো ম্যাসাজটা, সরি মেসেজটা। উত্তর দিতে দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত।
- "আবার 'আপনি'? কাল যে কথা হলো আমাদের মধ্যে .. আমাকে 'তুমি' করে বলবে! আমি যে মোবাইলটা ফেরত নেবো না, সেটা তো তোমাকে কালকেই বলে দিয়েছি। তোমার যদি আমার দেওয়া জিনিস ব্যবহার করতে সঙ্কোচবোধ হয় তাহলে ওটা ফেলে দিও।"
- "ইশশ .. এত দামী জিনিস কি কেউ ফেলে দেয়? তোমার অনেক পয়সা আছে, তুমি হয়তো তাই করো, আমি এটা করতে পারবো না।"
- "কি করছিলে এতক্ষন?"
- "ঘরের কাজকর্ম করলাম, তারপর স্নান করলাম, পুজো করলাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম, এখন এসে বিছানায় একটু বসেছি।"
- "আচ্ছা আমার যে পয়সা আছে সেটা তুমি কি করে বুঝলে?"
- "তুমি তখন বললে না যে তুমি মডেলিং করো! আমি জানি মডেলদের অনেক পয়সা। তাছাড়া এই অল্প বয়সেই ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছো, অত দামী একটা বাইক! টাকা না থাকলে কি ফ্ল্যাট, গাড়ি এসব কেনা যায়?"
- "আমার চারচাকাও রয়েছে। এনিওয়ে, মডেলিং সে ইয়াদ আয়া .. সেই সময় ল্যাপটপে তোমার ছেলের কলেজের ডকুমেন্টারি ফিল্মটা দেখতে দেখতে হঠাৎ করে ওই ছবিটা এসে পড়ায় তুমি খুব embarrassed ফিল করেছো তাই না? আসলে তখন বললাম না, ওটা এডিট করা হয়নি! যাই হোক, ওটার জন্য I'm sorry .."
- "কোন ছবি?"
- "ওই যে গো, একদম শেষের দিকে bare body তে নিচে শুধুমাত্র একটা সাদা রঙের ফ্রেঞ্চি পড়ে আমার যে ফটোটা তুমি দেখলে, সেইটার কথা বলছি।"
- "তাই? আমি অতটা খেয়াল করিনি গো .."
- "তুমি ছবিটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে, তোমার ছেলে পেছন থেকে কেশে উঠলো আর সঙ্গে সঙ্গে তুমি সোফা থেকে উঠে পড়লে। ভুলে গেলে এই সবকিছু এত তাড়াতাড়ি? এবার তো মনে হচ্ছে তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে! এক মিনিট দাড়াও, তোমার স্মৃতিশক্তি যাতে ফিরে আসে সেই চেষ্টা করছি।
মনে পড়েছে এবার?
(মিনিট পাঁচেক পর) - "হুঁ .."
- "কি করছিলে এতক্ষণ? তখন তোমার ছেলে থাকায় ভালো করে ছবিটা দেখতে পাওনি। তাই এখন ভালো করে দেখছিলে, তাই না? হাহাহাহা .."
- "ধ্যাৎ কি বলছো এসব? ছবিটা কি করে ডিলিট করবো সেটাই ভাবছি।"
- "ঠিক আছে, এরপর যেদিন তোমার সঙ্গে দেখা হবে, আমি শিখিয়ে দেবো কি করে ডিলিট করতে হয় ছবি। আবার চাইলে তুমি ডিলিট নাও করতে পারো, পাসওয়ার্ড দিয়ে নতুন কোনো ফোল্ডার বানিয়ে তার মধ্যে রেখে দিতে পারো। যাগ্গে বাদ দাও, 'তুমি' করে ডাকলে তো ম্যাডাম বলা যায় না! তোমাকে কি বলে ডাকি বলো তো?"
- "তোমাকে দেখলে তো মনে হয় আমার থেকে অনেকটা ছোট। তোমার বয়স কতো?"
- "আঠাশে পড়বো .."
- "ওহ্ .. তাহলে তো আমার থেকে অনেকটাই ছোট .."
- "সে তো ছোটই, কিন্তু কি বলে ডাকবো সেটা তো বললে না! আন্টি বললে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, ভাবিজি ডাকটার মধ্যে আবার কোনো আপনত্ব নেই। আচ্ছা তুমি আমাকে তোমার বন্ধু বলে মনে করো তো?"
- "বন্ধু কিনা জানিনা তবে, পরিচয় তো হয়েছেই .."
- "বন্ধুত্ব হচ্ছে তো আস্তে আস্তে, এটা তো মানবে?"
- "হুঁ .."
- "তাহলে একজন বন্ধুর তো আরেকজন বন্ধুকে নাম ধরেই ডাকা উচিৎ .. ঠিক কিনা বলো?"
- "হ্যাঁ এতে ভুল কিছু নেই .."
- "তোমার ভালো নামটা ভীষণ সেকেলে এবং boring , নামটা শুনলেই মনে হয় একজন মহিলা পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলছি, যে সারাদিন পুজো অর্চনা, ঠাকুরের বন্দনা নিয়ে থাকে। মজা করলাম, please don't mind, তোমার কোনো ডাক নাম নেই?"
- "আছে তো, আমার ডাকনাম ঝুমা .."
- "আমি কি তোমাকে ঝুমা বলে ডাকতে পারি?"
- "মা বাবা চলে যাওয়ার পর এই নামে আমাকে আর কেউ ডাকেনি। ভুলতেই বসেছিলাম প্রায় আমার ডাকনামটা।"
- "ঠিক আছে তাহলে এবার থেকে তোমাকে ঝুমা বলেই ডাকবো, কেমন?"
- "আচ্ছা ডেকো .. তুমি এখন কোথায়? শুটিংয়ে, মানে অফিসে? আমি না হয় একজন গৃহবধূ, আমার কোনো কাজ নেই। কিন্তু তুমি এই ভর দুপুরবেলায় বসে বসে আমার সঙ্গে কথা বলছো, তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম।"
- "শুটিং ফ্লোরেই রয়েছি, লাঞ্চ ব্রেক চলছিলো, তাই তোমার সঙ্গে গল্প করছিলাম। তিনটে বাজতে চললো প্রায়। ঠিক আছে এবার তাহলে রাখি। রাতে আসছো তো?"
- "কোথায়?"
- "কোথায় আবার? হোয়াটসঅ্যাপে। তোমাকে তো আর আমি নিজের বেডরুমে ডাকতে পারিনা!"
- "ধ্যাৎ , আবার আজেবাজে কথা? আচ্ছা ঠিক আছে আসবো।"
- "চলো টা টা .. "
- "শেষে ওটা কি হলো?"
- "কোনটা? ও আচ্ছা, ওই লাভ সাইনটার কথা বলছো? come on ঝুমা, একজন বন্ধু আর একজন বন্ধুকে এটা দিতেই পারে। এতে এত চমকে যাওয়ার কিছু হয়নি।"
- "আচ্ছা ঠিক আছে, বুঝলাম। টা টা .."
ফোনটা পাশে রেখে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সৈকত। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো কি পরিমান ধুরন্ধর এবং শয়তান এই ইউসুফ। কি কুক্ষণে যে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়েছিল সে! গতকাল কায়দা করে 'আপনি' থেকে 'তুমি'তে চলে গিয়ে তার মা এবং বাবার অসুখী দাম্পত্য জীবনের কথা জেনে নিয়েছিল হারামিটা। আজ আবার তার মায়ের ডাকনাম ধরে ডাকার পারমিশনটাও নিয়ে নিলো। কত বড় অসভ্য এবং ইতর ওই ইউসুফ, আগের দিনের তার ওই খালি গায়ে শুধুমাত্র জাঙিয়া পরা ফটোটা আবার তার মা'কে দেখালো।
"কলেজ থেকে আসার পরে কিছু না খেয়ে সেই যে দরজা আটকে ঘরে ঢুকে গেলি! পড়াশোনার খুব চাপ বেড়েছে, তাই না? সাড়ে ন'টা বাজতে চললো সেদিকে খেয়াল আছে? খেতে দিয়েছি। আমি কিন্তু খেতে বসে গেলাম, তাড়াতাড়ি আয়।" মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে স্মার্টফোনটা বালিশের তলায় লুকিয়ে রেখে বিছানা থেকে নেমে ঘরের দরজা খুলে বেরোলো সৈকত।
একটা কথাও না বলে বাথরুমে ঢুকে গেলো সে। প্রাতঃকৃত্য সেরে, দাঁত মেজে শাওয়ারটা খুলে দিলো সৈকত। আগেরদিন রাতে তার মা আর ইউসুফের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের কথা কথা মনে পড়ে গেলো তার। ধূর্ত শয়তান ইউসুফটা নিজের কথার জালে, ছলে বলে কৌশলে তার মায়ের মুখ দিয়ে ঠিক বের করে নিলো তাদের অসুখী দাম্পত্য জীবনের কথা। কিন্তু পারিবারিক অশান্তি সম্পর্কে তার মা যে কথাগুলোর আভাস দিয়েছিলো, অর্থাৎ তার ঠাকুমা এবং পিসিদের তার মায়ের প্রতি অত্যাচারের কথা। সেগুলো তো তার চোখে কোনোদিন পড়েনি! তাহলে কি এই ঘটনাগুলো কোনোদিন ঘটেনি? নাকি ঘটেছে, তার চোখে আড়ালে! হয়তো তার মা তাকে কোনোদিন জানতেই দেয়নি এসব। কিরকম কায়দা করে তার মা'কে 'তুমি' সম্বোধনের অনুমতি আদায় করে ফেললো ইউসুফ ভাই, আর তার সঙ্গে তার মাকেও ওকে 'তুমি' করে বলতে হবে সেটাও প্রমিস করিয়ে নিলো! কিন্তু ছেলেটা কি চায়? ও কি তার মায়ের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেই ক্ষান্ত থাকবে, নাকি ওর অন্য কোনো প্ল্যান আছে? কিছুই বুঝতে পারলো না সৈকত।
ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেও নিজের মনকে শান্ত করতে পারছিলো না সে। এই সবকিছু তাকে বন্ধ করতে হবে। ফোনটাই তো যত নষ্টের মূল! ওটা যদি ইউসুফকে ফেরত দিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তো আর কোনো সমস্যা থাকবে না। "ফোনটা তাহলে আমাকে দিয়ে দাও, কলেজের যদি ইউসুফ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে ওটা ওকে আমি দিয়ে দেবো।" খাওয়া শেষ করে তার মায়ের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললো সৈকত।
"হ্যাঁ, ফোনটা তো দিয়ে দেওয়ারই কথা। কিন্তু উনি যদি আজ তোদের কলেজের না আসেন। এত দামী একটা ফোন নিয়ে যাবি, তারপর যদি ফোনটা চুরি হয়ে যায়! তুই যা ক্যাবলা, তোর তো কোনো খেয়াল থাকে না। তার থেকে ভালো তুই উনাকে ফোন করে জেনে নে, আজ উনি কলেজে আসবেন কিনা! যদি আসেন তাহলে আমি ফোনটা তোকে দিয়ে দেবো আর যদি না আসেন তাহলে থাক আমার কাছে, যবে উনি আসবেন, তবে দেবো।" তার মায়ের এই কথায় সৈকত দুটো জিনিস লক্ষ্য করলো। প্রথমতঃ হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে ইউসুফকে 'তুমি' করে বললেও তার সামনে আপনি-আজ্ঞে করে বলছে। আর দ্বিতীয়তঃ তার মায়ের মুখে ফোন ফেরত দেওয়ার কথা শুনে, মায়ের প্রতি কনফিডেন্সটা যেন একটু বেড়ে গেলো সৈকতের।
মনে মনে খুশি হয়ে সে নিজের ছোট মাল্টিমিডিয়া ফোনটা থেকে বার তিনেক ইউসুফকে কল করলেও ফোন তুললো না তার বন্ধু। "ও তো ফোন তুলছে না। আমার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি বেরোচ্ছি। ঠিক আছে ফোনটা আজকে রেখে দাও। পরে ওকে ফোন করে জেনে নেবো কবে আসবে, সেদিন দিয়ে দিও।" এই বলে বিদায় নিলো সৈকত।
★★★★
কলেজে ঢোকার আগেও একবার ইউসুফকে ফোন করলো সে, কিন্তু এবারও কোনো রেসপন্স এলো না। সোমবার খুব চাপ থাকে .. একটার পর একটা ক্লাস হয়ে চললো আর তার সঙ্গে ফোন করার কথাটাও মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো সৈকতের। সাড়ে তিনটে নাগাদ কলেজ ছুটি হওয়ার পর গেট দিয়ে বেরিয়েই সে দেখলো নিজের রয়্যাল এনফিল্ড বাইকটা নিয়ে কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইউসুফ।
"কি গো .. তোমাকে সকাল থেকে এতবার ফোন করলাম। ফোনটা ধরলে না তো! তুমি আজকে কলেজে আসছো জানলে, আমি ফোনটা নিয়ে আসতাম। মা ফোনটা দিতে চেয়েছিলো আমাকে। বলছিলাম, তুমি কি অন্য কোনো কাজে কলেজে এসেছো? নাকি আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য?" কথাগুলো বলে ইউসুফের দিকে এগিয়ে গেলো সৈকত।
- "এত কথা বলিস কেন তুই? বেশি না বকে চুপচাপ আমার বাইকের পেছনে ওঠ .."
- "কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে? তুমি কি আবার আমাদের বাড়ি যাবে?"
- "ঠিক করেছি তোকে সোনাগাছিতে নিয়ে গিয়ে বেচে দেবো আজকে, রেন্ডিগুলোর ফাইফরমাশ খাটবি। যদিও তোকে বেচলে একটা টাকাও আমি পাবো না, উল্টে আমার পকেট থেকেই টাকা দিতে হবে ওদেরকে। ফালতু না হেজিয়ে চুপচাপ বাইকের পেছনে ওঠ, একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাবো তোকে। কলেজের ছেলেগুলো কিন্তু তোকে দেখছে, এরপর প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারবি তো?"
ইউসুফের এই কথায় আর দ্বিরুক্তি না করে তার রয়্যাল এনফিল্ডের পেছনের সিটে চেপে বসলো সৈকত। সঙ্গে সঙ্গে বাইক স্টার্ট দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গেলো ইউসুফ। মিনিট দশেক পর বাইকটা ওই এলাকার একটা নামকরা রেস্টুরেন্টের সামনে থামলো। "সেই কোন সকালে খেয়ে বেরিয়েছিস, এখন বিকেল হয়ে গেলো। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? চল, তোকে তোর পছন্দের খাবার খাওয়াবো।" এই বলে সৈকতকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকে গেলো ইউসুফ।
এমনিতেই ফাস্টফুডের জন্য পাগল সৈকত। তার উপর এইরকম একটা নামকরা রেস্টুরেন্টে এসে বেজায় খুশি হলো সে। তার ফেভারিট ফিস কবিরাজি অর্ডার দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই টেবিলে দিয়ে গেলো খাবারটা। "তুমি তো শুধু মশালা কোল্ডড্রিঙ্ক নিলে, সলিড কিছু খাবে না? কবিরাজিতে কামড় বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলো সৈকত।
- "নাহ্ .. দুপুরে দেরি করে লাঞ্চ করেছি, তাই পেট ভর্তি। তখন ফোন নিয়ে যেন কি বলছিলিস?"
- "তোমাকে অনেকবার ফোন করেছিলাম, সেটাই বলছিলাম। আমার মিসডকল পাওনি?"
- "পেয়েছি .. না না, তারপর কি যেন বলছিলিস, আমাকে ফোন ফেরত দিয়ে দিবি .."
- "ও আচ্ছা, যে ফোনটা তুমি কালকে দিয়েছিলে, মা বলছিলো ওটা নিয়ে গিয়ে তোমাকে দিয়ে দিতে .. সেই জন্যই তো তোমাকে ফোন করেছিলাম।"
- "তোর মা নিজে থেকে এই কথাটা বলেছে?"
- "না মানে, আমিই মা'কে বলেছিলাম ফোনটা দিয়ে দেওয়ার জন্য .."
- "বুঝলাম, কেনো ফেরত দিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলিস? কাল রাতে হোয়াটসঅ্যাপে তোর মা আর আমার কথোপকথন পড়ে মাথাখারাপ হয়ে গেছে, নিজের মায়ের প্রতি সব কনফিডেন্স চলে গেছে, তাই তো?"
- "না মানে, হ্যাঁ মানে .. সেরকম কিছু নয়, আসলে ফোনটা ফেরত দিয়ে দিতে হবে, এরকমই তো কথা হয়েছিলো।"
"এরকম কোনো কথা হয়নি। তোর মা গতকাল ফোনটা ফেরত দিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলো ঠিকই। কিন্তু আজ আর রাজি হবে না। বিশ্বাস না হয়, বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে দ্যাখ। তাছাড়া একজন গৃহবধূ হয়ে তোর মা স্মার্টফোন পেয়ে গেলো, তুই তার ছেলে হয়ে এখনো মাল্টিমিডিয়া ফোন ইউজ করছিস! ব্যাপারটা তোর হজম করতে কষ্ট হচ্ছে, ইগোতে লাগছে তোর। তাই তো? আমি যেটা প্রমিস করি, সেটা রাখি। তোকে বলেছিলাম আমার পুরনো ফোনটা তোকে দিয়ে দেবো। এই নে, এটা ব্যবহার কর .." কথাগুলো বলে নিজের পকেট থেকে একটা স্মার্টফোন বের করে সৈকতের দিকে এগিয়ে দিলো ইউসুফ।
"থ্যাঙ্ক ইউ দাদা, সরি থ্যাঙ্ক ইউ ইউসুফ ভাই। কিন্তু মা ফোনটা ফেরত দিতে আর রাজি হবে না কেনো?" ইউসুফের দেওয়া ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো সৈকত।
"সেটার রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তোকে যে ফোনটা দিলাম সেটার মধ্যে। কাল সকালে যখন তোদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখন আমার সঙ্গে এই ফোনটাও ছিলো। নতুন ফোনটা অন করে সেটা থেকে যখন হোয়াটসঅ্যাপ ইন্সটল করছিলাম, তখনই এই ফোনটা পকেট থেকে একবার বের করে একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে দুটো ফোন merge করে দিয়েছিলাম। তবে 'মাদার ফোন' এটাই, অর্থাৎ ওখান থেকে সমস্ত ইনফরমেশন এটার মধ্যে আসবে। কিন্তু এটার থেকে কোনো ইনফর্মেশন ওই ফোনে যাবে না। তোর মোটা মাথায় অবশ্য এইসব কথা ঢুকবে না। আসল কথা হলো এবার থেকে আর স্ক্রিনশট পাঠানোর দরকার নেই। তোর মায়ের সঙ্গে শুধু আমার নয়, যেকোনো ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা এমনি সাধারন মেসেজ .. সবকিছুই তুই দেখতে পাবি এই ফোনটার মাধ্যমে। এখন থেকে তোকে আর চেয়ারে পা ঝুলিয়ে বসে কম্পিউটার করতে করতে মশার কামড় খেতে হবে না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইলে সব কিছু দেখতে পারবি। রিচার্জ করে দিয়েছি, চিন্তা নেই। বোঝা গেলো? খাওয়া কমপ্লিট? এবার চল তাড়াতাড়ি তোকে বাড়ির সামনের রাস্তাটায় নামিয়ে দিয়ে আসি। আমার আবার একটা এসাইনমেন্ট রয়েছে।" কথাগুলো বলে চেয়ার থেকে উঠে পড়লো ইউসুফ।
"মায়ের সঙ্গে কি তোমার আজ হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়েছে?" বাইকে করে বাড়ি ফেরার পথে ইউসুফকে প্রশ্ন করলো সৈকত।
"আমি আর নিজে থেকে তোকে কিছু বলবো না। যা জানার, যা দেখার .. সব এই ফোনের মাধ্যমেই দেখতে পারবি। আমি লুকিয়ে চুরিয়ে কিছু করতে ভালোবাসি না। যা করবো তোর চোখের সামনে করবো। ভালো কথা, এই ফোনটা কিন্তু লুকিয়ে রাখিস। তা নাহলে তোরই বিপদ। চলি রে, টা টা ..'' সৈকতকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো ইউসুফ।
★★★★
একটা গোটা ফিস কবিরাজি সাঁটিয়ে পেটে আর এক ফোঁটাও জায়গা ছিলো না তার। তাই বাড়িতে ফিরে জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে ইউসুফের কাছ থেকে পাওয়া স্মার্টফোনটা নিয়ে নিজের ঘরে এসে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে খাটের উপর বসলো সৈকত। উপহার হিসাবে পাওয়া জীবনে প্রথম স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য মনে যেমন একটা আনন্দ হচ্ছিল তার, ততোধিক ভেতর ভেতর একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছিলো রেস্টুরেন্টে ইউসুফ ভাইয়ের বলা শেষ কথাগুলো মনে করে। তাহলে কি সে বেরিয়ে যাওয়ার পর তার মায়ের সঙ্গে আজ কথা হয়েছে ইউসুফের? জানতেই হবে তাকে। মোবাইলটা অন করতেই ফোনের ভেতর আগে থেকে ইন্সটল করে রাখা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের নোটিফিকেশন এলো। সৈকত দেখলো এটা তার মায়ের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট। ইউসুফ ভাই তারমানে ঠিক কথাই বলেছিলো। এর আগে তার মায়ের হোয়াটসঅ্যাপের সমস্ত কথোপকথন চলে এসেছে তার মোবাইলে, এবং ভবিষ্যতেও তার মা হোয়াটসঅ্যাপে যা কিছু লিখবে সব চলে আসবে তার মোবাইলে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে বন্দনা দেবীর হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বক্সে চোখ রাখলো সৈকত।
বেলা ১১টা ৩০ ..
ইউসুফ - "কি করছো এখন? মোবাইলটা ফেলে দিয়েছো? নাকি যত্ন করে রেখে দিয়েছো?"
দুপুর ১টা ২০ ..
বন্দনা - "ও মা .. এত দামী মোবাইল ফেলে দিতে যাবো কেন? রেখে দিয়েছি আমার কাছে। আপনার সঙ্গে দেখা হলে ফেরত দিয়ে দেবো। এইমাত্র দেখলাম আপনার পাঠানো ম্যাসাজটা, সরি মেসেজটা। উত্তর দিতে দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত।
- "আবার 'আপনি'? কাল যে কথা হলো আমাদের মধ্যে .. আমাকে 'তুমি' করে বলবে! আমি যে মোবাইলটা ফেরত নেবো না, সেটা তো তোমাকে কালকেই বলে দিয়েছি। তোমার যদি আমার দেওয়া জিনিস ব্যবহার করতে সঙ্কোচবোধ হয় তাহলে ওটা ফেলে দিও।"
- "ইশশ .. এত দামী জিনিস কি কেউ ফেলে দেয়? তোমার অনেক পয়সা আছে, তুমি হয়তো তাই করো, আমি এটা করতে পারবো না।"
- "কি করছিলে এতক্ষন?"
- "ঘরের কাজকর্ম করলাম, তারপর স্নান করলাম, পুজো করলাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম, এখন এসে বিছানায় একটু বসেছি।"
- "আচ্ছা আমার যে পয়সা আছে সেটা তুমি কি করে বুঝলে?"
- "তুমি তখন বললে না যে তুমি মডেলিং করো! আমি জানি মডেলদের অনেক পয়সা। তাছাড়া এই অল্প বয়সেই ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছো, অত দামী একটা বাইক! টাকা না থাকলে কি ফ্ল্যাট, গাড়ি এসব কেনা যায়?"
- "আমার চারচাকাও রয়েছে। এনিওয়ে, মডেলিং সে ইয়াদ আয়া .. সেই সময় ল্যাপটপে তোমার ছেলের কলেজের ডকুমেন্টারি ফিল্মটা দেখতে দেখতে হঠাৎ করে ওই ছবিটা এসে পড়ায় তুমি খুব embarrassed ফিল করেছো তাই না? আসলে তখন বললাম না, ওটা এডিট করা হয়নি! যাই হোক, ওটার জন্য I'm sorry .."
- "কোন ছবি?"
- "ওই যে গো, একদম শেষের দিকে bare body তে নিচে শুধুমাত্র একটা সাদা রঙের ফ্রেঞ্চি পড়ে আমার যে ফটোটা তুমি দেখলে, সেইটার কথা বলছি।"
- "তাই? আমি অতটা খেয়াল করিনি গো .."
- "তুমি ছবিটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে, তোমার ছেলে পেছন থেকে কেশে উঠলো আর সঙ্গে সঙ্গে তুমি সোফা থেকে উঠে পড়লে। ভুলে গেলে এই সবকিছু এত তাড়াতাড়ি? এবার তো মনে হচ্ছে তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে! এক মিনিট দাড়াও, তোমার স্মৃতিশক্তি যাতে ফিরে আসে সেই চেষ্টা করছি।
মনে পড়েছে এবার?
(মিনিট পাঁচেক পর) - "হুঁ .."
- "কি করছিলে এতক্ষণ? তখন তোমার ছেলে থাকায় ভালো করে ছবিটা দেখতে পাওনি। তাই এখন ভালো করে দেখছিলে, তাই না? হাহাহাহা .."
- "ধ্যাৎ কি বলছো এসব? ছবিটা কি করে ডিলিট করবো সেটাই ভাবছি।"
- "ঠিক আছে, এরপর যেদিন তোমার সঙ্গে দেখা হবে, আমি শিখিয়ে দেবো কি করে ডিলিট করতে হয় ছবি। আবার চাইলে তুমি ডিলিট নাও করতে পারো, পাসওয়ার্ড দিয়ে নতুন কোনো ফোল্ডার বানিয়ে তার মধ্যে রেখে দিতে পারো। যাগ্গে বাদ দাও, 'তুমি' করে ডাকলে তো ম্যাডাম বলা যায় না! তোমাকে কি বলে ডাকি বলো তো?"
- "তোমাকে দেখলে তো মনে হয় আমার থেকে অনেকটা ছোট। তোমার বয়স কতো?"
- "আঠাশে পড়বো .."
- "ওহ্ .. তাহলে তো আমার থেকে অনেকটাই ছোট .."
- "সে তো ছোটই, কিন্তু কি বলে ডাকবো সেটা তো বললে না! আন্টি বললে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, ভাবিজি ডাকটার মধ্যে আবার কোনো আপনত্ব নেই। আচ্ছা তুমি আমাকে তোমার বন্ধু বলে মনে করো তো?"
- "বন্ধু কিনা জানিনা তবে, পরিচয় তো হয়েছেই .."
- "বন্ধুত্ব হচ্ছে তো আস্তে আস্তে, এটা তো মানবে?"
- "হুঁ .."
- "তাহলে একজন বন্ধুর তো আরেকজন বন্ধুকে নাম ধরেই ডাকা উচিৎ .. ঠিক কিনা বলো?"
- "হ্যাঁ এতে ভুল কিছু নেই .."
- "তোমার ভালো নামটা ভীষণ সেকেলে এবং boring , নামটা শুনলেই মনে হয় একজন মহিলা পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলছি, যে সারাদিন পুজো অর্চনা, ঠাকুরের বন্দনা নিয়ে থাকে। মজা করলাম, please don't mind, তোমার কোনো ডাক নাম নেই?"
- "আছে তো, আমার ডাকনাম ঝুমা .."
- "আমি কি তোমাকে ঝুমা বলে ডাকতে পারি?"
- "মা বাবা চলে যাওয়ার পর এই নামে আমাকে আর কেউ ডাকেনি। ভুলতেই বসেছিলাম প্রায় আমার ডাকনামটা।"
- "ঠিক আছে তাহলে এবার থেকে তোমাকে ঝুমা বলেই ডাকবো, কেমন?"
- "আচ্ছা ডেকো .. তুমি এখন কোথায়? শুটিংয়ে, মানে অফিসে? আমি না হয় একজন গৃহবধূ, আমার কোনো কাজ নেই। কিন্তু তুমি এই ভর দুপুরবেলায় বসে বসে আমার সঙ্গে কথা বলছো, তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম।"
- "শুটিং ফ্লোরেই রয়েছি, লাঞ্চ ব্রেক চলছিলো, তাই তোমার সঙ্গে গল্প করছিলাম। তিনটে বাজতে চললো প্রায়। ঠিক আছে এবার তাহলে রাখি। রাতে আসছো তো?"
- "কোথায়?"
- "কোথায় আবার? হোয়াটসঅ্যাপে। তোমাকে তো আর আমি নিজের বেডরুমে ডাকতে পারিনা!"
- "ধ্যাৎ , আবার আজেবাজে কথা? আচ্ছা ঠিক আছে আসবো।"
- "চলো টা টা .. "
- "শেষে ওটা কি হলো?"
- "কোনটা? ও আচ্ছা, ওই লাভ সাইনটার কথা বলছো? come on ঝুমা, একজন বন্ধু আর একজন বন্ধুকে এটা দিতেই পারে। এতে এত চমকে যাওয়ার কিছু হয়নি।"
- "আচ্ছা ঠিক আছে, বুঝলাম। টা টা .."
ফোনটা পাশে রেখে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সৈকত। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো কি পরিমান ধুরন্ধর এবং শয়তান এই ইউসুফ। কি কুক্ষণে যে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়েছিল সে! গতকাল কায়দা করে 'আপনি' থেকে 'তুমি'তে চলে গিয়ে তার মা এবং বাবার অসুখী দাম্পত্য জীবনের কথা জেনে নিয়েছিল হারামিটা। আজ আবার তার মায়ের ডাকনাম ধরে ডাকার পারমিশনটাও নিয়ে নিলো। কত বড় অসভ্য এবং ইতর ওই ইউসুফ, আগের দিনের তার ওই খালি গায়ে শুধুমাত্র জাঙিয়া পরা ফটোটা আবার তার মা'কে দেখালো।
"কলেজ থেকে আসার পরে কিছু না খেয়ে সেই যে দরজা আটকে ঘরে ঢুকে গেলি! পড়াশোনার খুব চাপ বেড়েছে, তাই না? সাড়ে ন'টা বাজতে চললো সেদিকে খেয়াল আছে? খেতে দিয়েছি। আমি কিন্তু খেতে বসে গেলাম, তাড়াতাড়ি আয়।" মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে স্মার্টফোনটা বালিশের তলায় লুকিয়ে রেখে বিছানা থেকে নেমে ঘরের দরজা খুলে বেরোলো সৈকত।
~ কিছুক্ষণের মধ্যেই পরবর্তী আপডেট আসছে ~