01-07-2023, 08:19 PM
বন্দনার অধ্যায়
(১)
ফোনে নন্দনাকে তার জ্যাঠতুতো দিদি বন্দনা দেবীর ওই কথাগুলো বলার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে, সেটা জানার জন্য আমাদের আরও বছর দেড়েক পিছিয়ে যেতে হবে।
নন্দনা দেবীর বাবারা চার ভাই ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সেজো এবং ছোটভাই জীবিত রয়েছেন। নন্দনাদের শরিকের বাড়ি ছিলো। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় বাবাকে হারায় সে, তার দু'বছর পর মা। বাবা-মা দু'জনকে হারিয়ে একমাত্র সন্তান নন্দনা তাদের অংশের সম্পত্তি তার সেজো কাকার কাছে বিক্রি করে দিয়ে ওখানকার পাঠ চুকিয়ে দিয়েছিলো। বাপের বাড়ির দিকের আত্মীয়দের সঙ্গে সেই অর্থে কোনো যোগাযোগ না থাকলেও, তার জেঠুর মেয়ে বন্দনার সঙ্গে যোগাযোগটা রয়ে গিয়েছিলো নন্দনার। নন্দনার মা বাবার মতো তার জেঠু আর জেঠিমা অর্থাৎ বন্দনা দেবীর বাবা-মাও বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।
নন্দনার থেকে তার জেঠুর মেয়ে প্রায় বছর ছয়েকের বড় ছিলো। এবছর একচল্লিশে পড়লেন বন্দনা দেবী। আঠারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় বন্দনার। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরানোর পর আর পড়াশোনা এগোয়নি তার। কুড়ি বছরেই সন্তানের মা হয় সে। তার শ্বশুরমশাইও গত হয়েছেন বছর তিনেক হলো, শাশুড়িমা অবশ্য এখনো জীবিত রয়েছেন। বড় ননদ এবং ছোট ননদ দুজনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর হলো। বন্দনা দেবীর স্বামী শান্তিরঞ্জন বাবুর কাপড়ের দোকান। শ্বশুরবাড়ি লিলুয়াতে হলেও তার স্বামীর পৈত্রিক ব্যবসা অর্থাৎ কাপড়ের দোকান উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতে হওয়ার জন্য বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর বাড়ি থেকে যাতায়াত করলেও, পরবর্তীতে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বারাসাতেই বাড়ি-ভাড়া করে থাকেন শান্তিরঞ্জন বাবু। ওখানকার ব্যবসায়ী সমিতির নিয়ম অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ থাকে। তাই বুধবার অনেক রাতে লিলুয়ার বাড়িতে এসে আবার শুক্রবার ভোরবেলা বারাসাতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান তিনি। সর্বদা ধুতি আর শার্ট পড়া, বছর পঞ্চাশের স্বল্পভাষী, অমায়িক, নিরীহ গোছের শান্তি বাবু একদমই শান্তিপ্রিয় মানুষ। তার চেহারা এবং মাথার টাকটা দেখলে অনেক সময় হরিপদ কেরানির কথা মনে পড়ে যায়।
১৯৮৬ সালে শুধুমাত্র শিক্ষাগত ও গবেষনা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য এডুকেশানাল রিসার্চ নেটওয়ার্কের (ERNET) মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রথম শুরু হয় আমাদের দেশে। তার প্রায় দশ বছর বছর পর ১৯৯৫ সাল থেকে জনসাধারণের জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার উন্মুক্ত হয়। তারপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। কম্পিউটার তো ছিলোই, একবিংশ শতাব্দীতে এসে মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট এখন অনেকেরই হাতের মুঠোয়। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সহায়তায় চলছে মনুষ্যজাতির ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমের একটা থেকে আরেকটায় সমানতালে বিচরণ। দশ বছর আগেও ইন্টারনেট পরিষেবা যতটা না দ্রুত ছিলো, বর্তমানে তা আরও বেশি দ্রুতগতির। তবুও মাঝেমধ্যে যেকোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশের ক্ষেত্রে খানিকটা অতিরিক্ত সময় নিলে আমরা অতিমাত্রায় বিরক্ত হয়ে পড়ি। এর একমাত্র কারণ হলো মানুষের এখন সবকিছু ইনস্ট্যান্ট চাই। ইনস্ট্যান্ট খাবার, ইনস্ট্যান্ট সার্ভিস, ইনস্ট্যান্ট গ্লো, ইনস্ট্যান্ট বিনোদনসহ .. আরও কত কী!
ইন্টারনেটের প্রভাব পৃথিবীকে আগের থেকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে .. এ কথা ঠিক। ইন্টারনেটের কারণে আজকে আমরা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পুরে ফেলেছি .. এ কথাও সত্য। কিন্তু প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, ঠিক সেরকম ভাবেই ইন্টারনেটের একটা অশুভ দিক হচ্ছে অবাধ যৌনতা। সেটা হাই স্পিড ইন্টারনেটের দ্বারা পর্নোগ্রাফি দেখার মধ্যে দিয়েই হোক বা রগরগে যৌন উপন্যাস পড়ার মধ্যে দিয়েই হোক .. যুব-সমাজকে গ্রাস করছে, যুব-সমাজের মেরুদন্ড গুঁড়িয়ে দিচ্ছে এই সর্বনাশা ইন্টারনেট। ছাত্রাবস্থায় থাকা যুবসমাজ একটি জাতির ভবিষ্যত। তারা যুগ-চাহিদাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণের প্রতীক। অথচ এই যুবসমাজকে আজ ধ্বংস করে দিচ্ছে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যুগান্তকারী বিষ্ময়কর আবিষ্কার ইন্টারনেট। এর ফলে সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে বেলেল্লাপনা ও যৌনতা। পরিবার তো সমাজের বাইরে নয় .. পরিবার নিয়েই সৃষ্টি হয় আমাদের সমাজ। এই ইন্টারনেটের প্রভাবে কি করে একটি পরিবারের কিছু সদস্যের জীবন সম্পূর্ণ অন্য খাতে বইতে শুরু করলো, সেটাই আমরা দেখতে পাবো বন্দনার অধ্যায়ের পরবর্তী পর্বগুলিতে।
★★★★
বন্দনা দেবীর ছেলে সৈকত বর্তমানে বেলুড়ের লালবাবা কলেজে ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। কিন্তু একেবারে শুরুর থেকে বলতে গেলে আমাদের প্রায় আরও দেড় বছর পিছিয়ে যেতে হবে, এটা প্রথমেই বলেছি। সৈকত হায়ার সেকেন্ডারি পাস করে লালবাবা কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলো। চেহারা এবং স্বভাবচরিত্র তার বাবার মতোই হয়েছে। তবে তার বাবা শান্তিরঞ্জন বাবু নিরীহ এবং স্বল্পভাষী হলেও মানুষজনের সঙ্গে মিশতে তিনি ভালোবাসেন। তাই বেশ কিছু বন্ধুবান্ধবও আছে তার। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সৈকত একদমই বিপরীত মেরুর মানুষ। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত সাধারণ মানের সৈকত খেলাধুলায় এবং অন্যান্য এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিতেও বরাবর তার বন্ধুদের থেকে পিছিয়ে থাকতো। তাই ছোটবেলা থেকেই তার মনে নিজেকে নিয়ে একটা হীনমন্যতা তৈরি হয়েছিলো। ফলস্বরূপ বন্ধুদের থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো সে। এই সমস্যা কৈশোরকালে অনেকেরই হয়ে থাকে। উপযুক্ত সময় কাউন্সিলিং করালে সমস্যার সমাধানও হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। কিন্তু বাড়ির কর্তা অর্থাৎ অজিত বাবু বাড়িতে না থাকার দরুন সাংসারিক কাজ, রান্নাবান্না, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা শশুর (যখন উনি বেঁচে ছিলেন) শাশুড়িকে দেখাশোনা .. এইসব নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয়/হতো বন্দনা দেবীকে, যে তার ছেলের এই সমস্যাটা নজরে পড়েনি তার।
খেলাধুলার প্রতি কোনোদিনই উৎসাহ ছিলো না সৈকতের। পড়াশোনা করতে যখন ভালো লাগতো না, তখন গল্পের বই পড়ে বা টিভিতে বস্তাপচা সিরিয়ালগুলো দেখে সময় কাটতো তার। তবে সে অনেকদিন ধরেই তার বাবার কাছে একটা কম্পিউটারের জন্য বায়না করছিলো। উচ্চমাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিশনে (বর্তমান যুগের নিরিখে খুবই খারাপ রেজাল্ট) পাশ করার পর, তাদের পরিবারের পরম্পরা অনুযায়ী হায়ার সেকেন্ডারির গণ্ডি না পেরানো তার বাবা শান্তি বাবু অতিমাত্রায় খুশি হয়ে তাকে কম্পিউটার কিনে দেয় এবং অনলাইন ক্লাসের কথা মাথায় রেখে ইন্টারনেট কানেকশনও করিয়ে দেয়।
বাড়িতে কম্পিউটার আসার পর যেন আরও ঘরকুনো হয়ে গেলো সৈকত। আগে তাও বিকেলবেলা একা একাই সামনের পার্কটাতে কয়েক চক্কর ঘুরে আসতো সে। কিন্তু এখন ওই কলেজে যাওয়ার টাইমটুকু ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখেনা সৈকত। এমনকি নিজের পরিবারের বাকি সদস্য, যেমন বাবা বাড়িতে এলে তার সঙ্গে বসে দু'দন্ড কথা বলা, মা এবং ঠাকুমাকে সময় দেওয়া .. এইসব কোনোকিছুই ইচ্ছে করে না তার। নিজের ঘরে ঢুকে দরজা আটকে সারাদিন কম্পিউটারে মুখ গুঁজে বসে থাকে। তার বাবা বাড়িতে এলে যদি কিছু জিজ্ঞাসা করে, তাহলে একটা উত্তর তার মুখে জোগানোই থাকে, "অনলাইন ক্লাস হচ্ছে.."
প্রতিদিন আনলিমিটেড ডেটার সৌজন্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যত পর্নসাইট আছে .. সবগুলোতে সারাদিনে একবার, দু'বার, তিনবার করে বিচরণ করতো সৈকত। বিনা বাধায়, কারোর কোনো শাসন বারণ ছাড়াই প্রতিদিন ভার্চুয়ালি অবাধ যৌনতা দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই বিকৃতমনস্ক হয়ে উঠলো সৈকত .. যেখানে উঠতে, বসতে, খেতে, ঘুমোতে সর্বদা যৌনতা বিরাজ করতো। কিন্তু ক্রমাগত পর্নোগ্রাফি দেখে কিংবা রগরগে যৌন উপন্যাস পড়েও একাকীত্ব কাটতে চাইছিলো না তার। সঙ্গীবিহীন, বন্ধু-বান্ধবীহীন জীবনটা ক্রমশ একঘেঁয়ে হয়ে উঠছিলো সৈকতের। তার কলেজের বেশ কিছু সহপাঠী এবং পাড়ার অনেক পরিচিতই ফেসবুকে রয়েছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে যাদের কাছে প্রতিনিয়ত করুনার পাত্র হয়ে চলেছে সে, ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে নতুন করে আর তাদের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকতে চাইলো না সৈকত। যদি কথা বলার কোনো সঙ্গী পাওয়া যায়, যদি নতুন কোনো বন্ধু জুটে যায় .. এই আশায় নিজের নামটা একই রেখে, বায়োতে কোনোরকম ইনফরমেশন যুক্ত না করে, প্রোফাইল পিকচারের জায়গায় একটি বহুল প্রচলিত অ্যাডাল্ট সাইটের আইকনের ছবি দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুললো সে। প্রোফাইল পিকচারের জায়গায় ওই আইকনটি দেওয়ার ফলে ভবিষ্যতে যে তাকে কত বড় দাম দিতে হবে সেটা তখন বোঝেনি সৈকত।
★★★★
যতই ঘরকুনো হোক আর যতই হীনমন্যতায় ভুগুক না কেনো, এই বয়সী কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের তো অপজিট সেক্স অর্থাৎ মেয়েদের প্রতি একটু দুর্বলতা থাকবেই। তাই ফেসবুকে অচেনা সুন্দরী মেয়ের ছবি দেখলেই ফটাফট ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে থাকলো সৈকত। প্রথম কয়েকদিন কোনো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলো না তার কাছে। সে যে'কটা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলো একটাও একসেপ্টেড তো হলোই না, উল্টে তার রিকোয়েস্ট পাঠানো প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্ট থেকে তাকে ব্লক করে দেওয়া হলো। এর পেছনে প্রথম কারণ যদি অচেনা ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতে না চাওয়া হয়ে থাকে, দ্বিতীয় কারণ হলো প্রোফাইল পিকচারের জায়গায় দেওয়া সেই বহুল প্রচলিত অ্যাডাল্ট সাইটের আইকনের ছবি। তবে এই দ্বিতীয় কারণটি বোঝার মতো মাথায় বুদ্ধি ছিলো না তার। প্রত্যেকটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট রিজেক্ট হয়ে গিয়ে ফেসবুকে জয়েন করার সাতদিন পরেও তার ফ্রেন্ডলিস্টের বন্ধুসংখ্যা শূন্য থাকায় যথেষ্টই মুষড়ে পড়েছিলো সৈকত।
এমনিতে নির্ঝঞ্ঝাট এবং শান্তশিষ্ট মানুষ হলেও তার বাবা বাড়িতে থাকলে সারাদিন দরজা বন্ধ করে কম্পিউটার চালিয়ে বসে থাকার সাহস পায় না সৈকত। সকালেই শান্তি বাবু বারাসাত ফিরে গেছেন। সৈকতের মন তাই অনেকটাই হাল্কা। কলেজ থেকে ফিরে বাড়িতে টুকটাক কাজকর্ম করার পর একটা লম্বা ঘুম দিলো সে। তারপর সন্ধেবেলা ঘুম থেকে উঠে কলেজের বইগুলো নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতে করতে যেই সাড়ে ন'টা বাজলো, ডিনার সেরে নিজের ঘরের দরজা আটকে কম্পিউটার খুলে বসলো সৈকত। প্রতিদিনের অভ্যাসমতো অ্যাডাল্ট সাইটগুলোতে একবার করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে ফেসবুক ওপেন করলো সে। ফেসবুক খোলার সঙ্গে সঙ্গে মনটা গার্ডেন গার্ডেন হয়ে গেলো সৈকতের। এতদিন হাজার হাজার মানুষকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর পর যার প্রত্যেকটা রিকোয়েস্ট রিজেক্ট হয়ে গেছে, আজ তাকেই কিনা "আলফা গ্রেট" নামের কেউ একজন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে।
রিকোয়েস্টটা একসেপ্ট করার আগে সেই ব্যক্তি মহিলা না পুরুষ, কোথায় থাকে, কি করে, কেমন দেখতে .. এগুলো জানার জন্য তার প্রোফাইলে ঢুঁ মারলো সৈকত। প্রোফাইল পিকচার দেওয়া নেই, জেন্ডার উল্লেখ করা নেই এবং প্রোফাইলটি লক করা .. তাই কিছুই বুঝতে পারলো না সে। তবুও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার লোভ সামলাতে পারলো না বন্ধুহীন নিঃসঙ্গ সৈকত। সেই ব্যক্তির বন্ধু হয়েও তার সম্পর্কে কোনো তথ্যই সংগ্রহ করতে পারলো না সে। আলফা গ্রেটের প্রোফাইল দেখে যা বুঝলো, অ্যাকাউন্টটি মাস ছয়েক আগে খোলা হলেও, আজ পর্যন্ত কোনো ছবি, স্ট্যাটাস কিছুই আপলোড করা হয়নি। এমনকি ফ্রেন্ডলিস্টটাও 'অনলি মি' করা রয়েছে। 'মালটা কে? নিশ্চয়ই তারই মতো কোনো ক্ষ্যাপাচোদা হবে ..' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সৈকত লগআউট করতে যাবে ঠিক এমন সময় টুং করে তার মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ ঢুকলো।
"হাই.." সৈকত দেখলো বাংলাতেই মেসেজ করেছে ফেসবুকের তার একমাত্র নতুন বন্ধু। নাম বিদেশিদের মতো হলেও, তারমানে ব্যক্তিটি বাঙালি .. এটা ভেবে, "হ্যালো .." রিপ্লাই করলো সৈকত। শুরু হলো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নতুন বন্ধু হওয়া দুই অপরিচিত ব্যক্তির চ্যাটিং।
- "তোমার আইডিতে সৈকত নাম দেওয়া আছে, তার মানে ধরে নিচ্ছি তুমি ছেলে .."
- "আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি ছেলে .. আপনি?"
- "আমিও .. কোথায় থাকো?"
- "সেটা বলা কি ঠিক হবে?"
- "আরে, আমি তোমার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইনি। আমি জানতে চাইছি তুমি পশ্চিমবঙ্গে থাকো তো?"
- "আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনি?"
- "আমার কথাগুলোরই প্রতিধ্বনি করছো কেনো? তোমার নিজের কিছু জিজ্ঞাস্য নেই? যাগ্গে বাদ দাও, কি করো তুমি? চাকরি না ব্যবসা?
- "না না, ওগুলোর কোনোটাই করি না। আমি তো কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলাম সবে। আপনি?
- "ও আচ্ছা, তার মানে তুমি বাচ্চা ছেলে! তা, কোন কলেজে পড়ো? কোন স্ট্রিম? সাবজেক্ট কম্বিনেশন কি কি?"
- "লালবাবা কলেজে বিএ জেনারেল নিয়ে ডে সেকশনে পড়ি আমি। সাবজেক্ট কম্বিনেশন .. ফিলোসফি, এডুকেশন আর পলিটিকাল সায়েন্স।"
- "লালবাবা কলেজ তো বেলুড়ে। তারমানে, বেলুড়ে বা তার আশেপাশে থাকো তুমি। তাই তো?"
বয়স অল্প, তার উপর এর আগে চ্যাটিং করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই কলেজের নামটা মুখ ফস্কে বেরিয়ে যেতেই সে বুঝতে পারলো, বড় ভুল হয়ে গেছে তার। "না না, আমি ভুল বলেছিলাম। আমি লালবাবা কলেজে পড়ি না। আমি তো সিটি কলেজে পড়ি।" কথাগুলো টাইপ করে নিজের ভুল ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করলো অপরিণত মস্তিষ্কের সৈকত।
- "তুমি ধরা পড়ে গেছো বাছাধন। এখন আর কলেজের নাম পাল্টে ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে লাভ নেই। আরে বাবা, আমি তোমার কলেজে গিয়ে হামলা করবো না, ভয় পেয়ো না। পাস কোর্সে পড়ছো, তারমানে অনার্স পাওনি! হায়ার সেকেন্ডারিতে রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয়নি বুঝি?"
- "আমাদের পরিবারে কেউ উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোয় নি। তার মধ্যে প্রথম আমিই উচ্চমাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিশনে পাস করেছি।"
- "তাই? তা তোমাদের পরিবারে কে কে আছে?"
- "আমি, ঠাকুমা আর মা .. দাদু রিসেন্টলি মারা গেছেন। বাবার কাপড়ের দোকান আছে বারাসাতে। সপ্তাহে দু'দিনের জন্য বাড়ি আসে।
- "বুঝলাম .. ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছো তারমানে তোমার বয়স আঠারো প্লাস, তাইতো?
- "ঊনিশ .."
- "আচ্ছা বুঝলাম। আর তোমার মায়ের?"
- "মায়ের কি?"
- "বয়েস, আবার কি? এখানে বয়স নিয়েই তো কথা হচ্ছে.."
- "সম্ভবত ঊনচল্লিশ .. কিন্তু কেন বলুন তো?"
- "কোনো কারণ নেই, এমনি জিজ্ঞাসা করলাম। তুমিও চাইলে আমাকে যা খুশি জিজ্ঞাসা করতে পারো। কিন্তু তুমি তো কিছু বলছো না, তাই আমিই প্রশ্ন করছি। যাই হোক, তোমার বাবার বয়স কতো?"
- "প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে .."
- "তার মানে তো তোমার মায়ের সঙ্গে বাবার বয়সের অনেকটাই ডিফারেন্স! তোমার বাবা কি শক্ত-সামর্থ্য হাটাকাট্টা মানুষ, নাকি বুড়ো হয়ে গেছে?
- "হাটাকাট্টা উনি কোনোকালেই ছিলেন না। খুবই সাধারণ মানের চেহারা, মাঝারি উচ্চতা। খুব বুড়ো হয়ে যান নি, তবে বছরখানেক আগে বাবার সুগার ধরা পড়েছে, তাই ডায়েট কন্ট্রোলের জন্য চেহারাটা একদম ভেঙে গেছে।"
- "বুঝলাম .. তোমার ডিপিতে এইরকম একটা অ্যাডাল্ট সাইটের আইকনের পিকচার সেট করেছো কেনো? সারাদিন পর্নোগ্রাফি দেখো আর সেক্স স্টোরিজ পড়ো .. তাই না?"
সৈকত ভেবেছিলো ফেসবুকে এমন একজন অচেনা মানুষের বন্ধু সে হবে, যে কিনা তারই মতো হবে, যার কোনো ধারণা থাকবে না তার দুর্বলতা সম্পর্কে, সেগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে না তার পরিচিত মানুষজনদের মতো। কিন্তু এই ব্যক্তি তো সম্পূর্ণ অন্য মেরুর মানুষ। তার পড়াশোনা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করছে, সে পড়াশোনায় ভালো না এটা জানার পর, হাল্কাভাবে হলেও ব্যঙ্গাত্মক উক্তি করছে। তাই কিছুটা বিব্রত হয়েই সৈকত টাইপ করলো, "আচ্ছা তখন থেকে আপনি আমাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। আপনি কি করেন? আপনার বয়স কতো? আপনার আসল নামটাই বা কি? আর আপনিও তো কোনো প্রোফাইল পিকচার দেননি!"
- "প্রোফাইল পিকচার দিইনি ঠিকই, কিন্তু তোমার মতো তো সেখানে অ্যাডাল্ট সাইটের আইকনের ছবি লাগাইনি বাওয়া! ঠিক আছে, তুমি যা যা জিজ্ঞাসা করলে, সবকিছুই বলবো। তার আগে আমার প্রশ্নটার উত্তর দাও। সারাদিন পর্নোগ্রাফি দেখো আর সেক্স স্টোরিজ পড়ো? আরে আমার সামনে আবার লজ্জা কি? আমরা তো এখন ভার্চুয়াল বন্ধু। তুমিও আমাকে দেখতে পাচ্ছ না, আমিও তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না। মনে যা থাকবে একদম খুলে বলবে। তারপর দেখবে কত হাল্কা লাগছে ভেতরটা.."
- "হ্যাঁ মানে, না মানে সারাদিন নয়। কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পর যখন সময় পাই তখন যাই ওইসব সাইটে।"
- "কি ধরনের পর্নোগ্রাফি দেখতে ভালো লাগে তোমার? স্বদেশী নাকি বিদেশী?"
- "স্বদেশী মানে ইন্ডিয়ান বলতে চাইছেন? ধুর, কি আছে ইন্ডিয়ান পর্ন মুভিগুলোতে? বেশিরভাগই তো সফ্টকোর না হলে এমএমএস!"
- "কে বলেছে তোমায়? হ্যাঁ, ফরেনের পর্ন মুভিজ গুলোর সঙ্গে এখনো সেই অর্থে পাল্লা দিতে না পারলেও, আগের থেকে অনেক সাবলীল হয়েছে ভারতীয় নীল ছবির দুনিয়া, aagmaals.cx এই সাইটে একবার ঢুকো। বিভিন্ন এডাল্ট সাইট থেকে বাছাই করা প্রচুর ভালো ভালো হার্ডকোর ইন্ডিয়ান পর্ন মুভিজ পাবে।"
এইতো, এই আলোচনাগুলো করার জন্যই তো একজন সঙ্গী খুজছিলো সৈকত। চ্যাটিংটা এতক্ষণ তার কাছে boring মনে হলেও, এখন আস্তে আস্তে ইন্টারেস্ট বাড়ছে তার। "ও .. এই সাইটটার নাম জানতাম না, আপনি যখন বলছেন তখন নিশ্চয়ই দেখবো .." কম্পিউটারে টাইপ করলো সৈকত।
- "তাহলে তুমি বিদেশী পর্নোগ্রাফি বেশি দেখো, তাই তো? আচ্ছা এর মধ্যে কোন সেগমেন্টটা তোমার বেশি পছন্দ .. cuckold, incest, forced, old & young, interracial, bbw নাকি Japanese porn? যদিও এগুলো ছাড়াও হাজার হাজার সেগমেন্ট রয়েছে।"
- "ওইভাবে তো ভেবে দেখিনি, আর অত বিভাগের নামও আমি জানিনা। তবে আমার MILF porn দেখতে খুব ভালো লাগে। তার মধ্যে যদি হিরোইনের চুলের রঙ কালো হয়, তাহলে আরো বেশি উত্তেজনা অনুভব করি।"
- "বটে? তা, সেই মিল্ফদের কারা চুদলে তুমি বেশিমাত্রায় উত্তেজনা অনুভব করো? অপেক্ষাকৃত কমবয়সী ছেলেরা, নাকি বেশি বয়সী আঙ্কেলরা?"
আলোচনা যত দীর্ঘায়িত হচ্ছিলো, ধীরে ধীরে ততই এক্সাইটেড হয়ে পড়ছিলো সে। "দুই ক্ষেত্রে দু-রকমের উত্তেজনা অনুভব করি। আমার অনুভূতিটা আমি এখানে ঠিক লিখে বোঝাতে পারছি না। তবে সেই স্বাস্থ্যবতী কালো চুলের মিল্ফগুলোকে যদি তাদের থেকে কমবয়সী কোনো ছেলে ডমিনেট করে ভোগ করে, তাহলে আমার উত্তেজনা বেশি হয় .." কথাগুলো কম্পিউটারে টাইপ করলো সৈকত।
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~