01-07-2023, 06:53 PM
(This post was last modified: 01-07-2023, 07:09 PM by দীপ চক্কোত্তি. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
ত্রিষষ্টি পর্ব
(২)
(৩)
- “কোথায় গিয়েছিলে?’
- “আ-আ-আমি তো কলেজে গিয়েছিলাম”।
- “কলেজ থেকে টিফিনের সময় বেরিয়ে গিয়ে কোথায় গিয়েছিলে?”
- “আ-আ-আমি বন্ধদের সাথে সিনেমা গিয়েছিলাম”।
- “কোন বন্ধু? কি তার নাম?”
- “ঝিমলি, পায়েল আর আর রুনিয়া”।
- “মিথ্যা কথা বলছো তুমি। টিফিনের সময় কলেজ থেকে ছুটি করে, তুমি একাই বেরিয়েছো। আর তারপর সিনজামুল চৌধুরি বলে একটি ছেলের সাথে শিয়ালদার একটি হোটেলে সময় কাটিয়েছো”।
- “না, বাপী না”।
- “আমার সামনে মিথ্যা কথা বোলো না শ্রেয়া। লোকে বলে আমার পেছনেও দুটো চোখ আছে। শুধু পেছনে নয়, উপর-নীচ, ডায়ে-বায়ে সব জায়গায় আমার চোখ আছে। না থাকলে, একজন গলির গুন্ডা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী হতে পারতাম না। তুমি আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না। তবে তোমার খবরটা আসতে একটু দেরী হয়ে গেছে। শুধু আজ নয়, আমি খবর পেলাম, তুমি এর আগেও ছেলেটির সাথে ওই সব থার্ড ক্লাস হোটেলে সময় কাটিয়েছো”।
- “বাপী, আমি ওকে ভালবাসি”।
- “ভালোবাসার তুমি বোঝোটা কি? সবে আঠেরো পেরিয়েছো, এখনও নাক টিপলে দুধ বেরোয়। কালই তোমাকে এই কলেজ ছাড়িয়ে দিল্লী নিয়ে যাবো। ওখনেই তুমি পড়াশুনা করবে। তারপর উচ্চ মাধ্যমিকটা পাশ করলেই তোমাকে বিয়ে দিয়ে দেবো”।
- “বাপী, আমি ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবো না”।
- “কেন? ছেলেটি একে '., তার উপর আমার বিরোধী দলের যুব ফেডারেশনের নেতা। ওর সাথে তোমার বিয়ে দিলে, আমার মুখে চুনকালি লাগবে। আমার পলিটিক্যাল কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে”।
- “বাপী, তুমি তোমার পলিটিক্যাল কেরিয়ারের কথা ভাবছো, আর আমার কথা একটুও ভাবছো না?”
- “তোমার কথা ভাবছি বলেই তো, উচিৎ পরামর্শ দিচ্ছি। ও সব বাছুরে প্রেম, দু দিন চোখের আড়াল হলেই মুছে যাবে। তুমি কালই দিল্লী যাবে আমার সাথে,
গোছগাছ করে নেও”।
- “বাপী আমি তোমায় বোঝাতে পারছি না। আমি, আমি প্রেগন্যান্ট”।
চটাস করে একটা চড় পড়লো ঝুমের গালে। আচমকা এই চড়ে, ঝুম ছিটকে পড়লো ডিভানের উপর। এবং মেজোবাবু তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে, মুখের উপর বালিশ চেপে ধরলেন। বেটেখাটো লোকটার গায়ে অসম্ভব জোর। হাত পা ছুঁড়েও ঝুম ছাড়াতে পারছে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার। অন্ধকার নেমে আসছে তার চোখে। তখনই ভাইপো-দার গলার আওয়াজ শুনলো, “মেজোবাবু ছাড়ুন, ছাড়ুন। কি করছেন? ও আপনার মেয়ে শ্রেয়া নয়, শ্রেয়া মারা গেছে আজ থেকে এক যুগ আগে”।
ঝুমের মুখের উপরে চেপে ধরা বালিশের উপর থেকে চাপ কমতেই, বালিশটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, ধড়মড় করে উঠে বসলো সে। দেখলো মেজবাবুকে জাপটে জড়িয়ে ধরে রয়েছে ভাইপো-দা। আর দোর্দন্ডপ্রতাপ লোকটা শিশুর মতো কাঁদছে আর বলছে, “সেদিন যদি তুমি আমাকে আটকাতে পারতে ভাইপো, আমার ফুলের মতো মেয়েটাকে হারাতে হতো না”। টানাহ্যাঁচড়ায় মেজবাবুর মুখের মুখোস একপাশে সরে গেছে। তার নাকের উপর বড়ো একটা আঁচিল। দৌড়ে পাশের ঘরে চলে এলো ঝুম।
(২)
মেজবাবুর বাঁজখাই গলার আওয়াজ পেতেই ধনুকের ছিলার মতো ছিটকে সরে গেলো ভাইপো-দা। ধড়মড় করে উঠে বসলো ঝুমও। তোয়ালে দিয়ে অর্ধনগ্ন শরীরটাকে ঢাকতে ঢাকতে টয়লেটের দিকে যেতেই, ভাইপোদার গলা শুনতে পেলো, “স্নান কোরো না কিন্তু, ঝুম”। ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ দুটোতে প্রশ্ন মাখিয়ে তাকালো সে। ভাইপো-দা চাপা আওয়াজে উত্তর দিলো, “কারণ তুমি যে মেয়েটির রোল প্লে করছো, সে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে সাততারা হোটেলে নয়, ইয়ে …… শুয়েছিলো, শেয়ালদার একটা পাতি হোটেলে, যেখানে এটাচ্ড টয়লেটের কোনো বালাই নেই। ঘরের কোণে থাকে এক বালতি জল, সেটা দিয়েই, ইয়েটিয়ে যা ধোওয়াধুইয়ি করার, করে নিতে হয়।“ এঃ মা, ফ্রেস না হয়ে রোল প্লে করতে হবে! ভ্রু কুঁচকে সামান্য ভাবলো ঝুম, তারপর করবে না করবে না করেও প্রশ্নটা করেই ফেললো, “আচ্ছা ভাইপো-দা, এই মেয়েটি, মানে যার রোল আমি প্লে করছি, সে কি মেজবাবুর কোন আত্মীয়া?” “ওসব কথা জিজ্ঞাসা করতে নেই, ঝুম। সময় হলে সবই জানতে পারবে। এখন যাও, মুখেচোখে একটু জল দিয়ে, চুলটা আঁচড়ে নিয়ে, চটপট ওই ঘরে চলে যাও”, চাপা স্বরে বললো ভাইপো-দা। কোন কথা না বাড়িয়ে, জীবনের শেষ প্রোগ্রামের রোল-প্লে’র জন্য তৈরী হতে লাগলো ঝুম। কলেজ ড্রেসটা পড়ে আয়নার সামনে দাড়াতে, নিজেকে কলেজগার্লের মতই লাগলো। মেজবাবুর স্যুইটে ঢোকার আগে ওয়াটার বটলটা ধরিয়ে দিলো ভাইপো-দা।
(৩)
যেভাবে ক্যাব ড্রাইভারটা চালাচ্ছিলো, রীতিমত ভয় লাগছিলো ঝুমের। “আপনি গাড়ী থামান, আমি নেমে যাবো”, বললো সে। “আপনি ভয় পাবেন না, ম্যাডাম। এ ভাবে চালানোর অভ্যেস আছে আমার”, ড্রাইভারটা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলো। “তা মানে! আপনি অন্য প্যাসেঞ্জারদের সামনেও, এসব করেন?”, অবাক হয়ে বললো ঝুম। “আজ্ঞে, আমি সন্ধের পর এদিকটাতেই গাড়ী লাগাই। বেশীর ভাগ দিনই আপনার মতো মেয়েছেলেরা গাড়ীতে ওঠে। তাদের দেখেই, ……. বুঝলেন তো, একটু মুঠো মেরে নিই। কি যেন বলেন আপনারা, ফিরি এনটারটেনমেন্ট”, লোকটার দাঁতকেলানে কথাবার্তায় গা জ্বলে যাচ্ছিলো ঝুমের, তার উপর ‘মেয়েছেলে’ শব্দটা তার কানে খট করে বাজলো। “কি করবো ম্যাডাম? বাঁকুড়ার গোয়ালতোড়ে বাড়ি। মাধ্যমিক পাশ, কিন্তু দেশে কাজকম্ম নেই, তাই আপনাদের কলকাতা চলে এলাম। ড্রাইভিংটা একটু আধটু জানতাম, এখানে ড্রাইভিং কলেজে ভর্তি হয়ে, ভালো করে শিখে পাশ করলাম। প্রথমে হলুদ ট্যাক্সি চালাতাম, ইনকাম বেশী ছিলো না। এখন এসি ক্যাব চালাই, খাটনি একটু বেশী, কিন্তু কামাই ভালোই। মাস গেলে কুড়ি-পঁচিশ আরামসে চলে আসে। গাড়ীটা মালিকের। একটু একটু করে পয়সা জমাচ্ছি, নিজেই গাড়ী নামাবো, নিজেই চালাবো। তাহলে বড়লোক হয়ে যাবো। পয়সা খর্চার ভয়ে মাগীপাড়ায় যাই না। আপনাদের মতো মেয়েছেলেদের দেখেই কাজ চালিয়ে নিই। আপনা হাত, জগন্নাথ। কি বলেন ম্যাডাম?” লোকটার ভ্যাকভ্যাকানি just irritating লাগছিলো ঝুমের। আপনি গাড়ীটাকে সাইডে পার্ক করে, যা করার করে নিন তো”, বিরক্ত হয়ে বললো ঝুম। “এখানে পার্ক করলে, মামারা কেস দিয়ে দেবে। যদি আপনি পারমিশন দেন, তো আনন্দপুরের দিকে নিয়ে নিই,” বলেই লোকটা বাঁ দিকে গাড়ীটাকে নিয়ে পঞ্চান্নগ্রামের রাস্তা ধরলো।
(৪)
সুচরিতার ব্যাগে এটা কিসের ওষুধ? সুচির তো কোন রোগটোগ নেই। একটু আধটু মাথাব্যাথা আর অম্বলের সমস্যা আছে বটে, কিন্তু তার ওষুধ, ডিসপিরিন, আ্যানাসিন, ডায়েজিন, রেনটাক তো ফ্রিজের উপর রাখা ওষুধের কৌটোয় থাকে। ব্যাগে ওষুধ রাখার দরকার কি। তিনটে রো’তে সাতটা করে মোট একুশটা ক্যাপসুল, অনেকগুলি খাওয়া হয়ে গিয়েছে, ফলে নামটা পড়া যাচ্ছে না। ব্যাগের মূল খোপে মাত্র গোটা কুড়ি টাকা পাওয়া গেলো। এদিক ওদিক আরো কিছু খোপ, চেন খুলতেই বেরোলো হাবিজাবি কাগজ, ইলেকট্রিক বিল, দোকানের ফর্দ, মেয়েলি সাজগোজের জিনিষ, টিপের পাতা. ক্লিপ, লিপস্টিক আর কিছু খুচরো পয়সা। টাকা কোথায় রাখে সুচরিতা? মূল খোপের ভিতরে একটি পকেট, চেন দেওয়া। সেটা খুলতেই আরো বেশী বিষ্ময় অপেক্ষা করছিলো শানুর জন্য।
সুচরিতার ব্যাগে এটা কিসের ওষুধ? সুচির তো কোন রোগটোগ নেই। একটু আধটু মাথাব্যাথা আর অম্বলের সমস্যা আছে বটে, কিন্তু তার ওষুধ, ডিসপিরিন, আ্যানাসিন, ডায়েজিন, রেনটাক তো ফ্রিজের উপর রাখা ওষুধের কৌটোয় থাকে। ব্যাগে ওষুধ রাখার দরকার কি। তিনটে রো’তে সাতটা করে মোট একুশটা ক্যাপসুল, অনেকগুলি খাওয়া হয়ে গিয়েছে, ফলে নামটা পড়া যাচ্ছে না। ব্যাগের মূল খোপে মাত্র গোটা কুড়ি টাকা পাওয়া গেলো। এদিক ওদিক আরো কিছু খোপ, চেন খুলতেই বেরোলো হাবিজাবি কাগজ, ইলেকট্রিক বিল, দোকানের ফর্দ, মেয়েলি সাজগোজের জিনিষ, টিপের পাতা. ক্লিপ, লিপস্টিক আর কিছু খুচরো পয়সা। টাকা কোথায় রাখে সুচরিতা? মূল খোপের ভিতরে একটি পকেট, চেন দেওয়া। সেটা খুলতেই আরো বেশী বিষ্ময় অপেক্ষা করছিলো শানুর জন্য।
(৫)
- “কোথায় গিয়েছিলে?’
- “আ-আ-আমি তো কলেজে গিয়েছিলাম”।
- “কলেজ থেকে টিফিনের সময় বেরিয়ে গিয়ে কোথায় গিয়েছিলে?”
- “আ-আ-আমি বন্ধদের সাথে সিনেমা গিয়েছিলাম”।
- “কোন বন্ধু? কি তার নাম?”
- “ঝিমলি, পায়েল আর আর রুনিয়া”।
- “মিথ্যা কথা বলছো তুমি। টিফিনের সময় কলেজ থেকে ছুটি করে, তুমি একাই বেরিয়েছো। আর তারপর সিনজামুল চৌধুরি বলে একটি ছেলের সাথে শিয়ালদার একটি হোটেলে সময় কাটিয়েছো”।
- “না, বাপী না”।
- “আমার সামনে মিথ্যা কথা বোলো না শ্রেয়া। লোকে বলে আমার পেছনেও দুটো চোখ আছে। শুধু পেছনে নয়, উপর-নীচ, ডায়ে-বায়ে সব জায়গায় আমার চোখ আছে। না থাকলে, একজন গলির গুন্ডা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী হতে পারতাম না। তুমি আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না। তবে তোমার খবরটা আসতে একটু দেরী হয়ে গেছে। শুধু আজ নয়, আমি খবর পেলাম, তুমি এর আগেও ছেলেটির সাথে ওই সব থার্ড ক্লাস হোটেলে সময় কাটিয়েছো”।
- “বাপী, আমি ওকে ভালবাসি”।
- “ভালোবাসার তুমি বোঝোটা কি? সবে আঠেরো পেরিয়েছো, এখনও নাক টিপলে দুধ বেরোয়। কালই তোমাকে এই কলেজ ছাড়িয়ে দিল্লী নিয়ে যাবো। ওখনেই তুমি পড়াশুনা করবে। তারপর উচ্চ মাধ্যমিকটা পাশ করলেই তোমাকে বিয়ে দিয়ে দেবো”।
- “বাপী, আমি ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবো না”।
- “কেন? ছেলেটি একে '., তার উপর আমার বিরোধী দলের যুব ফেডারেশনের নেতা। ওর সাথে তোমার বিয়ে দিলে, আমার মুখে চুনকালি লাগবে। আমার পলিটিক্যাল কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে”।
- “বাপী, তুমি তোমার পলিটিক্যাল কেরিয়ারের কথা ভাবছো, আর আমার কথা একটুও ভাবছো না?”
- “তোমার কথা ভাবছি বলেই তো, উচিৎ পরামর্শ দিচ্ছি। ও সব বাছুরে প্রেম, দু দিন চোখের আড়াল হলেই মুছে যাবে। তুমি কালই দিল্লী যাবে আমার সাথে,
গোছগাছ করে নেও”।
- “বাপী আমি তোমায় বোঝাতে পারছি না। আমি, আমি প্রেগন্যান্ট”।
চটাস করে একটা চড় পড়লো ঝুমের গালে। আচমকা এই চড়ে, ঝুম ছিটকে পড়লো ডিভানের উপর। এবং মেজোবাবু তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে, মুখের উপর বালিশ চেপে ধরলেন। বেটেখাটো লোকটার গায়ে অসম্ভব জোর। হাত পা ছুঁড়েও ঝুম ছাড়াতে পারছে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার। অন্ধকার নেমে আসছে তার চোখে। তখনই ভাইপো-দার গলার আওয়াজ শুনলো, “মেজোবাবু ছাড়ুন, ছাড়ুন। কি করছেন? ও আপনার মেয়ে শ্রেয়া নয়, শ্রেয়া মারা গেছে আজ থেকে এক যুগ আগে”।
ঝুমের মুখের উপরে চেপে ধরা বালিশের উপর থেকে চাপ কমতেই, বালিশটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, ধড়মড় করে উঠে বসলো সে। দেখলো মেজবাবুকে জাপটে জড়িয়ে ধরে রয়েছে ভাইপো-দা। আর দোর্দন্ডপ্রতাপ লোকটা শিশুর মতো কাঁদছে আর বলছে, “সেদিন যদি তুমি আমাকে আটকাতে পারতে ভাইপো, আমার ফুলের মতো মেয়েটাকে হারাতে হতো না”। টানাহ্যাঁচড়ায় মেজবাবুর মুখের মুখোস একপাশে সরে গেছে। তার নাকের উপর বড়ো একটা আঁচিল। দৌড়ে পাশের ঘরে চলে এলো ঝুম।
ভালবাসার ভিখারি