30-06-2023, 11:37 PM
(This post was last modified: 01-07-2023, 10:17 PM by দীপ চক্কোত্তি. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
একষষ্টি পর্ব
(১)
লালবাতি লাগানো ক্যাডিল্যাক গাড়ীটা সরু গলিটার ভিতরে ঢুকতেই পারলো না। গলির মোড়েই, গাড়ীটাকে সাইড করে দাঁড় করাতে বলে, গাড়ী থেকে নামলেন লোকসভার সদস্য তথা রাজ্যে বিরোধী দলের সভাপতি সুধীর রঞ্জন চৌধুরি। এমনিতে টিপিক্যাল রাজনৈতিক নেতাদের মতো ধুতি-পাঞ্জাবি বা পাঞ্জাবি-পাজামা তিনি পড়েন না। বরং রঙচঙে জামা বা কলার তোলা টি শার্ট এবং প্যান্টেই তাকে বেশী দেখা যায়। তবে আজ কিনা একটা বিশেষ দিন, তার একমাত্র পুত্র, অর্কর জন্য মেয়ে দেখতে এসেছেন তিনি। তাই আজ তার পরনে দুধসাদা ধুতি-পাঞ্জাবি। মেয়ে দেখাটা অবশ্য জাস্ট একটা ফর্মালিটি, মেয়ে তো অর্ক পছন্দই করে রেখেছে। তিনি এসে মেয়েটিকে একবার চোখের দেখা দেখে, মেয়েটির বাড়ীর লোকের সঙ্গে কথা বলে, বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে, ব্যাপারটাকে একটা সামাজিক রূপ দেবেন। আজকালকার ছেলেমেয়ে সব, যাকে পছন্দ করবে, তাকেই বিয়ে করবে। এ ব্যাপারে বাবা-মায়ের কোন ভূমিকাই নেই। বারণ করতে গেলে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে, বাধা দিলে সুইসাইড করবে, দুটোই সুধীর বাবুর কাছে কাম্য নয়। এতে তার পলিটিক্যাল ইমেজে কালো ছোপ পড়ে। বিশেষ করে এই ব্যাপারে যখন তিনি অলরেডী একবার হাত পুড়িয়েছেন।
তাছাড়া অর্কর উপরে তার অগাধ আস্থা আছে। অত্যন্ত মেধাবী, ভদ্র, নম্র, তার এই সন্তান যেন দৈত্যকূলে প্রল্হাদ। তার মতো মারকুটে, ডানপিটে, বদমেজাজী লোকের এমন সন্তান কি করে হয়, ভেবেই পান না সুধীর রঞ্জন। ছেলেমেয়েদের বড়ো হয়ে ওঠার পিছনে তার অবদান খুবই কম, শুধু টাকার যোগান দেওয়া ছাড়া। ক্লাশে বরাবর ফার্স্ট হওয়া অর্ক অবশ্য স্কলারশিপও পেত। তার রাজনৈতিক প্রভাবের কোনরকম সূযোগ না নিয়ে, জয়েন্ট এনট্রান্সে প্রথম দিকে rank করে, মাধবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বিই করে সে। এরপর গেট পরীক্ষায় ৯৮ পার্সেন্টাইল পেয়ে খানপুর আইআইটি থেকে এম টেক করে অর্ক। এরপর বিনা কোন সুপারিশে, বিখ্যাত মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানি সফ্টেক ইন্টারন্যাশানাল কোম্পানিতে জয়েন করে সে। ইতিমধ্যে বারদুয়েক বিদেশ ঘুরেও এসেছে। সুধীর রঞ্জন চেয়েছিলেন অর্ক কোনো সরকারী সংস্থায় যোগ দিক। সেই ব্যাপারে কথা-টথা বলে ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন।
কিন্তু অর্ক অন্য ধাতুতে গড়া, বাবার সুপারিশে চাকরি বা অন্য কোনরকম সুবিধা সে নিতে রাজি নয়। একদিকে যেমন ছেলের জন্য তার গর্ব হয়, কারণ তিনি নিজেও একজন self made man, সমাজের একদম নিচুতলা থেকে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে এই জায়গায় এসেছেন। না শিক্ষাদীক্ষা, না বংশপরিচয়, কোনটাই তাকে সমাজের শিখরে উঠতে সাহায্য করেনি। অর্কও সেই স্বভাবই পেয়েছে। আবার অন্যদিকে দুঃখও হয়, তার সুপারিশে কতো লোক কতো ভাল কলেজে ভর্তি হচ্ছে, চাকরি পাচ্ছে, অথচ তার নিজের সন্তান কোন জায়গায় তার নাম ভাঙ্গিয়ে সুবিধা নেয় না। অর্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনের সময় তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সেই পদমর্য্যাদার সুবাদে কনভোকেশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান। ওখানে গিয়ে যখন তিনি বললেন, তার পুত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এবং আজ সেও ডিগ্রী পাবে, সবাই অবাক হয়ে গেল। সুধীর রঞ্জন বুঝতে পারলেন, চার বছরে তার ছেলে, একবারের জন্য, তার বাবার প্রকৃত পরিচয় দেয় নি। অর্ক কি তাকে ঘৃণা করে? অর্ক কি তার মা এবং বোনের মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করে? এই ব্যাপারে কোথাও যেন একটা অপরাধবোধ কাজ করে তার মধ্যে। তাই তো অর্ক যখন তাকে জানালো, সে একটি মেয়েকে ভালবাসে এবং তাকেই বিয়ে করতে চায়, সম্মতি দিতে এক মূহূর্ত দেরি করেন নি তিনি। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলেন, মেয়েটি অত্যন্ত সাধারণ নিম্নমধ্যবিও পরিবারের সন্তান। কিন্তু আপত্তি করেন নি তিনি। আর তাই আজ এসেছেন, ছেলের পছন্দে স্বীকৃতি দিতে।
ভালবাসার ভিখারি