29-06-2023, 08:39 PM
পঞ্চপঞ্চাশৎ পর্ব
(৩)
প্রথমবার ওরা মিট করেছিলো সিটি সেন্টার টু-এর টি জাংশনে। পয়লা বৈশাখের দিন ছিল সেটা। কর্পোরেট সেক্টরে মেয়েরা সাধারনত শাড়ী পড়ে না, কারণ বাসে-ট্রামে চলতে ফিরতে অসুবিধা হয়। শুধু বছরের কয়েকটা বিশেষ দিন, যেমন সরস্বতী পুজো, বাংলা নববর্ষ, মহালয়া, দুর্গাষ্টমী ইত্যাদি দিনগুলিতে শাড়ী পড়াটাই এখানকার রেওয়াজ। সেই রীতি অনুযায়ী মায়ের একটা ময়ূরকন্ঠী রঙের মুর্শিদাবাদ সিল্ক পড়েছিলো ঝুম, সাথে একটা কাঁচা হলুদ রঙের, চোলি টাইপের, ডিপকাট, স্লিভলেস ব্লাউজ। ফলে খয়েরী রঙের পিঠে, একটা সরু স্ট্রিপ ছাড়া, বাকিটা খোলা ছিল। কাঁধ এবং বুকেরও বেশীর ভাগটাই উন্মুক্ত ছিল। শাড়ীটা নাভির ইঞ্চিদুয়েক নিচে বাঁধায়, চিতলমাছের মতো তার পাতলা, রুপোলি তলপেট, সুগভীর নাভিসহ দৃশ্যমান ছিল। শাড়ীটা এমন টাইট ভাবে লেপ্টে ছিল শরীরে, যে উল্টানো তানপুরার মতো তার পাছাটা প্রকট হয়ে উঠেছিল। হোলির দিনের প্রোগাম করে পাওয়া টাকা থেকে একটা hair straightener কিনেছিল, সেটা দিয়ে চুলটা straight করে মুখের লুকটাই পাল্টে গিয়েছিলো। খুব চড়া মেকআপ ঝুম কোনো দিনই করে না। ছ’টা নাগাদ ডিউটি থেকে বেরোনোর সময়, ওয়াশরুমে গিয়ে, moisturizing cleanser দিয়ে মুখটা ধুয়ে, একটা ছোট্ট হার্ট শেপড টিপ পড়ে নিয়েছিলো।
কলেজ মোড় থেকে VS3 ধরে সিটি সেন্টার টু পৌঁছে গেছিলো ঝুম। বেঁটে বেঁটে আ্যকাশিয়া পামগাছগুলোর পাশে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো অর্ক। দুর থেকে দেখেই চিনতে পেরেছিলো ঝুম, ফেসবুকে ওর ফটোগুলো এতবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে। এন্ট্র্যান্স লবির একটা পিলারের আড়ালে দাড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে অর্ককে দেখছিলো ঝুম। ফর্সা গালে হাল্কা দাড়ি, অবিন্যস্ত চুল, একটা ডার্ক রেড প্রোলাইন গেঞ্জী আর জিন্স পড়েছে, কি আ্যাট্রাকটিভ লাগছে ছেলেটাকে। মাথা নিচু করে ট্যাবে খুটুরখুটুর করছে। তখনই মেসেজ ঢুকলো ঝুমের মোবাইলে, “Where R U?” না, আর অপেক্ষা করানো ঠিক হবে না। ধীর পায়ে হেঁটে অর্কের সামনে গিয়ে, হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে হাস্কি গলায় বললো, “হাই আই আ্যম ঝুম”। ট্যাব থেকে মুখ তুলে, স্বপ্নালু চোখ দুটো মেলে, হাতজোড় করে, শান্ত গলায় বললো, “নমস্কার, আমি অর্ক”। উফ্ফ্, মরেই যাবে না কি ঝুম! সাধারনত ছেলেরা ঝুমের প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু এই প্রথম সে কোন ছেলের প্রতি ফিদাহ্ হলো। ইচ্ছা করছে, এক্ষুনি ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে, ওর পাতলা ঠোঁটদুটো মুখে পুরে চুষতে থাকে। কিন্তু ছেলেটা তো চোখ তুলে তাকে দেখছেই না। তার এত আবেদনময়ী সাজ কি বৃথা যাবে? আঁচল ঠিক করার বাহানায়, দুটো আঙ্গুল বুকের খাঁজে ঢুকিয়ে, আঁচলটা আর একটু নামিয়ে আধখানা স্তন বার করে দিলো। তখনই অর্কের গলা শোনা গেলো, “আপনি চা prefer করেন, না কফি?”
“Will you please stop this ‘আপনি-আজ্ঞে’। আমার মতো তুমি বলতে পারো না?” ঝাঁঝিয়ে উঠলো ঝুম।
“Nope. But I can call you ‘তুই’. Will that be okay for you”. চটপট জবাব এলো।
হেসে ফেললো ঝুম, “You are just impossible”.
“মশলা চা খাবি না bubble tea?” জিজ্ঞাসা অর্কর।
তারপর থেকে এই চলছে। ঝুম অর্ককে তুমি বলে ডাকে আর অর্ক তাকে তুই। বেশ বিরাজ বৌ টাইপের প্রেম। যদিও ঝুম ওসব ক্লাসিক সাহিত্য-টাহিত্য পড়ে না। অর্কর কিন্তু কম্পিউটারের বাইরেও অনেক পড়াশুনো আছে, ও-ই গল্পটা শুনিয়েছে।
ভালবাসার ভিখারি