28-06-2023, 08:04 PM
পঞ্চাশৎ পর্ব
(৩)
এই নিয়ে সাত-আট বার রেসের মাঠে এলো শানু, অবশ্যই লাল্টুদার সাথে – তার ল্যংবোট হয়ে। আজকাল মূলতঃ লাল্টুদার তল্পিবাহক হয়েই দেখা যায় তাকে – যাকে সাদা বাংলায় বলে ‘চামচা’। এ নিয়ে অবশ্য শানুর মধ্যে কোন হীণমন্যতা নেই; rather হীণমন্যতা বোধ করার জায়গাতেও সে নেই। লোকে বলে তার বউ লাল্টুদার রক্ষিতা এবং সে নিজে লাল্টুদার চামচা। “যা খুশী ওরা বলে বলুক ওদের কথায় কি আসে যায়”। শানুর কাছে লাল্টুদা ভগবানতুল্য। তার মতো একটা চূড়ান্ত অপদার্থ, জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরাজিত মানুষ এবং তার পরিবারের গ্রাসাচ্ছদনের ব্যবস্থা করেছেন তিনি ভগবান ছাড়া আর কি। লোকে তাকে চিটিংবাজ, তোলাবজ যাই বলুক না কেন। সারাদিন জনগণের সেবা করে ক্লান্ত লোকটা সুচরিতার কাছে আসে একটু সেবা পেতে। সুচি কোনদিন মাথা টিপে দিলো, কোনদিন গুনগুন করে একটা গান শোনালো, কোনদিন একটা আবৃত্তি করলো। হ্যাঁ লাল্টুদা অনেক পাল্টে গেছে। এখন সে ভালো ভালো গান, কবিতা শোনে। সুচি কোনদিন হয়তো গাইলো, “ওগো দুখজাগানিয়া, তোমায় গান শোনাবো”, কোনদিন বা “ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে”; তবে লাল্টুদার সবথেকে পছন্দের গান, “আমার সকল রসের ধারা, তোমাতে আজ হোক না সারা”।
গানের অন্তর্নিহিত অর্থের মাথামুন্ডু সে কিছুই বোঝে না, কিন্তু সুচির মতো চামরি মাগীর গলায় রসের কথা শুনলেই, তার রস চুপচুপে তালশাঁসটার কথা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, আর তার দু পায়ের ফাঁকের কালো কোবরাটা ফোঁস করে ওঠে। এই সাংস্কৃতিক পরিবেশকে মূহূর্তে ভুলুন্ঠিত করে, শিকারী হায়নার মতো সে ঝাপিয়ে পড়ে, সুচরিতার কাঁধে কামড়ে দেয়। চোক পাকিয়ে ছদ্মরাগ দেখায় সুচরিতা, ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমানের স্বরে বলে, “উফ্ফ্, লাল্টুদা, তুমি না জানোয়ার একটা। দিলে তো কামড়ে, লাগে না বুঝি”। এই, এই, এই অদায়ে (এটি একটি হিন্দী শব্দ, এর সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ আমার জানা নেই), এর জন্যই লাল্টু মাগীর উপর ফিদা্হ হয়ে যায়। না হলে, মেয়েছেলের শরীর লাল্টু অনেক ঘেঁটেছে। এক সময় সে বলতোও বটে, “হেঁজীপেঁজী নূরজহান, শায়া তুললে সব সমান।“ কিন্তু এখন আর বলে না। যবে থেকে সে সুচরিতার সংস্পর্শে এসেছে, তবে থেকে আর বলে না।। কি যেন আছে এই মেয়েটির মধ্যে। বুকে দুটো মাংসের তাল, পেছনে দুটো মাংসের ঢিপি, দু পায়ের মাঝে রসালো চেরা, শুধু এটুকুই তার একমাত্র সম্পদ নয়, তার উপরেও আরো কিছু আছে, তার কাজলকালো চোখের বাঁকা চাহনি, পালতোলা নৌকার মতো ভুরুর ভঙ্গিমা, কমলালেবুর কোয়ার মতো দুটো ঠোঁট সামান্য ফাঁক করে অস্ফুট শীৎকার এ সবই লাল্টুর হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়। হৃদয় বলে মানুষের শরীরে যে একটা অঙ্গ অছে, সেটাই লালু ভুলে গিয়েছিলো। নারী সম্পর্কে তার যাবতীয় অনুভূতি কেন্দ্রীভূত ছিলো, দু পায়ের ফাঁকের ওই আলকাতরা রঙের মুশলটাতে। সুচরিতার স্পর্শে লাল্টুর হৃদয় যেন জেগে উঠেছে। কি গানটা যেন গায় সুচি, “আমার হৃদয়, তোমার আপন হাতের দোলায়, দোলাও, দোলাও, দোলাও, আমার হৃদয় ……”।
ভালবাসার ভিখারি