28-06-2023, 07:59 PM
পঞ্চাশৎ পর্ব
(১)
এ এক আজব দুনিয়া। এখানে শোনা যায় মূহূ্র্তের মধ্যে রাজা ফকির এবং ফকির রাজা বনে যায়। রাজাকে ফকির বনতে অথবা ফকিরকে রাজা বনতে তো দেখে নি শানু, কিন্তু অনেক স্বল্পবিত্ত মানুষকে, দিনের শেষে কপাল চাপড়াতে দেখেছে। সব খেলার সেরা খেলা হলো জুয়ো খেলা আর সব জুয়োর সেরা জুয়ো হলো ঘোড়ার রেস। কোটি কোটি টাকার হাত বদল হয় এই মাঠে, তার সবকটার রঙই যে সাদা, সে কথা কেউ মাথার দিব্যি দিয়ে বলবে না। কলকাতা ছাড়া মুম্বাই-পুণে, ব্যাঙ্গালুরু-মহীশুর, চেন্নাই-হায়দ্রাবাদ, দিল্লীতেও এই রেস খেলা হয়। কলকাতায় সাধারনত শীতকালে এবং বর্যাকালে রেস খেলা হয়, কিন্তু উইন্টার সিজনটাই বেশী জনপ্রিয়। এই সময় দেশবিদেশ থেকে ঘোড়ার মালিকরা তাদের বিখ্যাত ঘোড়াগুলো নিয়ে আসে। আসেন বিখ্যাত ট্রনার এবং জকিরা। থাউজ্যান্ড গিনি - টু থাউজ্যান্ড গিনি, পুলিশ কমিশনার্স কাপ, ডার্বি ইত্যাদি বড় বড় ইভেন্টগুলো এই সময়ই হয়। শীতের রোদ্দুরে পিঠ সেঁকতে সেঁকতে, বিয়ারের জাগে চুমুক দিতে দিতে, প্রতি রেসে দশ হাজার থেকে এক পেটি টাকা বাজি ধরনেওয়ালা বড়বাজারের গদীর মালিক, উঠতি বড়লোক প্রমোটর, পি ডাব্লু ডির কন্ট্রাকটর ইত্যাদিরা যেমন আসেন, তেমনই আসে কর্পোরেশনের নিম্নবিত্ত কেরাণীবাবু থেকে শুরু করে অটোওয়ালা, রিক্সাওয়ালা মায় ভিখারী অবধি, যাদের প্রতি রেসে দু-একশ টাকা বাজী ধরার মতো পুঁজিই সম্বল। দুপুরে মুড়ি-বাদাম খেয়ে, ছেঁড়া-ফুটো গেঞ্জী-জাঙ্গিয়া পড়ে, সারা সপ্তাহ ধরে বাঁচানো পয়সা, ঘোড়ার ল্যাজে বেঁধে, লোকগুলো যে কি সুখ পায়, তা বোঝা মুশকিল।
তা সে গদীর মালিকই হোক বা কেরাণীবাবু, সকলেই হুমড়ী খেয়ে পড়ে একটি পাতলা চটি বইয়ের উপর, যার বিভিন্ন নাম আছে, যেমন Turf News, Race Guide, Best of Luck ইত্যাদি। এগুলিতে আজ কোন রেসে কোন ঘোড়া দৌড়াচ্ছে, তার মালিক কে, ট্রেনার কে, জকি কে, মায় তার কুষ্ঠী ঠিঁকুজী সব দেওয়া থাকে। আর সবশেষে দেওয়া থাকে, টিপস, অর্থ্যাৎ কোন রেসে কোন ঘোড়া জিতবে, কোন ঘোড়া দ্বিতীয় স্থানে থাকবে, আর কোন ঘোড়াই বা তৃতীয় স্থানে থাকবে। পান্টাররা, যারা রেসে বাজী ধরে, তাদের এই মাঠের ভাষায় পান্টার বলা হয়, এই বই পড়েই আন্দাজ করার চেষ্টা করে, কোন ঘোড়ার উপর টাকা লাগালে, জেতার সম্ভাবনা আছে। শানুর ভাবলেও অবাক লাগে, এতসব অশিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত মানুষ, কি করে, আগাগোড়া ইংরাজীতে লেখা এই গাইডবুক পড়ে মর্মোদ্ধার করে, নিজের রক্তজল করে উপার্জন করা পয়সা, জুয়োতে উড়িয়ে দেয়।
সাধারনত উইন অর্থ্যাৎ কোন ঘোড়া কোন রেসে জিতবে তার উপরেই বেশীর ভাগ লোক টাকা লাগায়। এছাড়াও আছে সেকেন্ড প্লেস, অর্থ্যাৎ কোন ঘোড়া দ্বিতীয় স্থানে থাকবে, অথবা শুধুই প্লেস, অর্থ্যাৎ নিজের পছন্দের ঘোড়া প্রথম, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়, যে কোন পজিশনে থাকলেই জেতা যাবে। তবে এ সব স্টেকে ডিভিডেন্ড কম থাকে। এর পর আছে কুইনালা-টানালা। কুইনালা অর্থ্যাৎ কোন দুটি ঘোড়া প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে থাকবে (যে কোন অর্ডারে) তার উপর বাজী ধরা আর টানালা অর্থ্যাৎ কোন তিনটি ঘোড়া প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে থাকবে (যে কোন অর্ডারে) তার উপর বাজী ধরা। তার উপর আছে, ট্রেবল অর্থ্যাৎ পরপর তিনটি রেসে কোন ঘোড়া জিতবে তার উপরে বাজী ধরা। আর সবার উপর আছে, জ্যাকপট অর্থ্যাৎ পরপর পাঁচটি রেসে কোন ঘোড়া জিতবে তার উপরে বাজী ধরা। যেদিন কারো ভাগ্যে জ্যাকপটের শিঁকে ছেঁড়ে, বাকিরা তাকে ইর্ষার চোখে দেখে এবং বলে “আজ লছ্মিজী নে ইনকে ছাপ্পড় ফাড়কে দিয়া।“ হয়তো একদিন জ্যাকপট জিতে ওই ব্যক্তি যতো টাকা কামিয়েছে, মাসের বাকি দিনগুলোতে ওর থেকে বেশী গচ্চা দিয়েছে। তবুও জ্যাকপট হচ্ছে জ্যাকপট, যার যেদিন লাগে, সে দিনটা তার। পাগলের মতো চীৎকার করতে থাকে জ্যাকপট জেতা সেই ভাগ্যবান, “হর কুত্তে কা দিন বদলতা হ্যায়”।
ভালবাসার ভিখারি