21-06-2023, 05:27 PM
(This post was last modified: 23-11-2024, 02:55 PM by Sanjay Sen. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দীর্ঘ তিন দিনের ক্লান্ত যৌন মিলনের পরে স্বামী ফেরে ট্রেনিং থেকে। সোহিনী পুরানো রোজনামচায় ফিরে আসে। তাহির এর সাথে মোবাইল এর মাধ্যমে যোগাযোগ আছে সোহিনীর কিন্তু এক্ষণ ও কোনভাবেই তাহির কে আনতে চায় না। সৌম্য নিজের কাজে আরও ব্যাপৃত হয়ে ওঠে। ট্রেনিং এর পরে ওর আরও দায়িত্ত বেড়েছে। মাঝে মাঝে ওকে দিল্লী দৌড়তে হবে সেটা সৌম্য ওকে জানায়। সোহিনীর কাছে সেই ঠাণ্ডা সৌম্য আরও যেন মিইয়ে যাওয়া মুড়ির মত হয়ে গেছে টা লক্ষ করে সোহিনী জানতে চায়, সৌম্য বলে যে কাজের চাপ ভীষণ। মাঝে মাঝে রাত্রে বেড়িয়ে যেতে হচ্ছে, কাঠ চোরদের দৌরাত্য খুবই বেড়েছে সেকথা সোহিনীর সাথে আলোচনাও করে সৌম্য। এক কোথায় সৌম্য আর সোহিনীর কেমিস্ট্রি ভীষণ সামাঞ্জস্য পূর্ণ সেকথা অস্বীকার করার নয়। এদিকে শুক্রবার সৌম্য দিল্লী যাবার কথা, আর অন্য দিকে সোহিনীর মা আসবে আগরতলায়। সৌম্য রাজি না হলেও কিছু করার নেই, আগের মারের গুজরাতের ঘটনা ওর কানে আসলেও মেনে নেয়। না করার সৎসাহস সৌম্যর নেই সে কথা সোহিনী আর সৌম্য বোঝে তাই এই বিষয়ে কোন কথা বলে বারাতে চায় না বিতর্ক, এক্ষণ ওর সামনে অনেক উন্নতি।
প্রমিতার থেকে সোহিনী জেনেছে যে বিক্রমের সাথে ওর সম্পর্ক আজও সমানে আছে। ও আসছে শুনে বিক্রম আসতে চায়, সোহিনী না করে তা সত্তে ও বিক্রম শোনেনা, প্রমিতার সাথে এক ফ্লাইট এ কলকাতা হয়ে ওঠে বিক্রম।
প্রমিতার সাথে বিক্রমের এয়ারপোর্ট এ দেখা। বিক্রম বলে-
– কি প্রমিতা, আমাকে না নিয়ে চলে যাবে?
– দেখ, আগে সোহিনীর ওখানে তুমি এই সব করেছ, আমি আর ওসব চাই না।
– ডার্লিং, তুমি জান আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবনা। তুমি ছাড়া আর কারো সাথে এক্ষণ আমি সম্পর্ক রাখিনা।
– তাতে কি!। তাছাড়া আমরা তো বাইরে যা করার করি, তোমার বাড়িতে বরের সামনে তো কিছুই করিনি।
প্রমিতা কিছুই বলে না, বোর্ডিং পাসের লাইন এ বিক্রম পাশাপাশি সিট জোগাড় করে নেয়। তারপর সিকিউরিটি চেক করে নিয়ে একটা কর্নার এ বসে পাসা পাসি। এদিক টা ফাঁকা, তাছাড়া ফ্লাইট এর সময় দেরি আছে। প্রমিতার অস্বস্তি টা কেটে গেছে ততক্ষণ। বিক্রম বলে-
– দেখ, আমি সব ব্যাবস্থা করেই যাচ্ছি, ভাবনা নেই।
– নাহ, ভাবছি না। কারন তোমার সাথে তো আর নতুন কিছু না।
– সেইটাই কথা।
হাতের ওপর হাত রেখে বিক্রম বলে-
– কোন ভয় নেই, সোহিনী ছাড়া কেউ তো জানে না আমাদের সম্পর্কের কথা।
হাতের স্পর্শে বস মানে, চুপ করে যায় প্রমিতা। কাঁধের ওপরে মাথা হেলিয়ে বিক্রম ডান হাত দিয়ে প্রমিতার বাহিতে হাত রাখে। চমকে ওঠে, আবার বিক্রম। প্রমিতা হাল ছেড়ে দেয়। আর লড়াই না করে মেনে নেয়।
সকালের পর থেকে তাহির এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি সোহিনী, ওকে জানাতে চাইছিল যে ওর মা আর বিক্রম আসছে কিন্তু ৩-৪ বার ফোন করে না পাওয়ায় হাল ছেড়ে দেয়, বিকালে মা আসবে। ওর ওখানেই উঠবে। একটা কথা ঠিক জানে যে বিক্রম আর ওর সাথে নতুন করে কোন সম্পর্কে জড়াবে না।
বিকালে সৌম্যর কাছ থেকে খবর টা পায়, তারপর টি ভি তে দেখে, তাহির আর জাকির গ্রেফতার হয়েছে দেশ বিরোধী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে। শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল সোহিনীর, এবার কি ওকেও ধরবে! কিছুক্ষণ চুপ করে শুয়ে থাকল, মোবাইল এর দিকে তাকাল যদি কোন ফোন আসে কিন্তু সেই রাত্রে ওর মা আসা পর্যন্ত আর কিছু হলনা। বিক্রম আর প্রমিতা এল রাত ১০ টা নাগাদ। সোহিনী আগে থেকেই ওদের থাকবার জন্যে দুতলায় ব্যবস্থা করে রেখেছে। যেহেতু এটা সোহিনীর জানা যে বিক্রম তার ঘরেই প্রমিতা কে নিয়ে শোবে তাই সোহিনী কোন রাখঢাক না রেখেই ওদের ওপরে পৌঁছে দেয়। একটা জিনিষ সোহিনী লক্ষ করে যে বিক্রম ওকে আর আগের চোখে দেখছে না, তবুও অস্বস্তি ওকে ছাড়ে না। ওরা ক্লান্ত, তাই খেয়ে ওপরে চলে গেলে সোহিনী সৌম্য কে ফোন করে খবর দেয়, আর জানতে পারে যে তাহির এবং জাকির এর কাছ থেকে অনেক কাগজ পত্র পাওয়া গেছে সন্ত্রাসবাদ এর। মাথা থেকে বের করতে চাইলেও বের হয় না সোহিনীর, রাত্রে কখন ঘুমিয়ে পরে ওর মনে নেই।
সকালে কাজের মেয়ের ফোনে ঘুম ভাঙ্গে, ছেলের কলেজ নেই, ছুটি, উঠে এসে দরজা খুলে দেয়। একটু পরে ছেলে কে রেডি করে ওপরে উঠে আসে, দেখে একটা সাদা ন্যুডলস্ত্রাপ সংক্ষিপ্ত রাত পোষাকে বসে আছে বারান্দায় ওর মা প্রমিতা। সোহিনী যেতেই প্রমিতা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলেও বিক্রম সামলে নেয়, ডান হাতে আঁকড়ে ধরে প্রমিতা কে তার বুকের কাছে।
– সোহিনী এসো। আমরা খুব ই ক্লান্ত, বুঝতেই পারছ, কতদিন পরে আমরা কাছা কাছি এসেছি।
– হাঁ। আসলে আমি দেখতে এলাম উঠেছ কি না। আমি খাবার পাঠাব?
– না, আমি নিয়ে আসছি, তুমি রেডি কর।
প্রমিতার লাজুক অভিব্যক্তি সোহিনীর চোখ এড়ায় না। সোহিনী নিচে এসে খাবার রেডি করে বিক্রম কে ডাকে, বিক্রম নিচে এসে নিয়ে যায়। হাসি ছাড়া আর কিছু বিনিময় হয়না, সে যাত্রা, খাবার এর প্লেট নিয়ে বিক্রম ওপরে উঠে যায়। হাঁপ ছেড়ে বাঁচে যেন সোহিনী। প্রচণ্ড টেনশন এর মধ্যে সোহিনী সারা দিন কাটায়, এর মধ্যে একবার বিক্রম এসে ওদের দুপুরের খাবার নিয়ে গেছে মাত্র, খুব স্বাভাবিক ব্যবহার করে বিক্রম যা সোহিনী কে ও স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে।
সেদিন সন্ধ্যে বেলায় প্রথম নামে প্রমিতা আর বিক্রম ওদের নীচের ঘরে। প্রমিতার পরনে লাল কাফতান, সোহিনীর চোখ এড়ায় না যে প্রমিতার মুখে একটা সুখের ঝলক আছে। বিক্রম এই প্রসঙ্গে জানায় যে ওরা দুজনে খুব খুশী। বিক্রম বলে-
– প্রমি, তুমি সোহিনী কে বল কেমন আছ?
– কি বলব?
– বল বেবি, সেই কাল রাত্রি থেকে কত কি হল আমাদের। তুমি তো কলকাতায় আমাকে একদম আস্তে দাও না।
– ওসব কথা থাক।
এই প্রসঙ্গে আলোচনা সোহিনীও চাইছে না কিন্তু এর পরের প্রসঙ্গ টা আরও মারাত্মক যা হিসাব বদলে দেয় সোহিনীর। বিক্রম বলে-
– সোহিনী, তুমি জান যে আমি দিল্লীতে খুব যাতায়াত করি, তোমার বউদি ওখানে আছে, আর এই খবর রাখি যে তুমি কেমন আছ, কি করছ। আমি চাই না কোন বাজে ছেলে বা অন্য কোন বাজে পুরুষের সাথে তুমি জড়িয়ে পর। আমার কন্টাক্ট এর সাহাজ্যে তোমার বর্তমান বন্ধু, যে তোমাকে ফাঁদে ফেলেছিল তার যথাযোগ্য ব্যবস্থা করা গেছে। আর কোনদিন ওরা তোমাকে কিছু জোর করে করাতে পারবে না। প্রমিতাও সে কথা জানে। আশা করি তুমি সেকথা বুঝতে পারছ।
সোহিনী চমকে ওঠে, বোঝে তাহিরের সাথে ওর সম্পর্ক বিক্রম জেনেছে এবং ওর মা সেকথা জেনেছে। আরও বোঝে তাহির ও জাকির কেন গ্রেফতার হয়েছে। সোহিনী বোঝে এবার গোটানোর সময় এসেছে। বিক্রম ওর ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলেও আর কাউকে ওর ধারে কাছে যে ঘেঁষতে দেবেনা সে কথা সোহিনীর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রমিতা বলে-
– সোহিনী, তোকে একটা কথা বলি, সৌম্য খুব ভালো ছেলে, ওর সাথে ভালো করে সংসার কর, আর কোন পুরুষ এর সাথে জড়াস না নতুন করে। হয়ত তুই বলবি আমার মুখে সাজে না কিন্তু আমি তোর ভালর জন্যে বলছি, নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নে। আমাদের ব্যাপার তোর মাধ্যমেই হয়েছে, এবং যা হয়েছে সেটা আমাদের সকলের ভালোর জন্যেই হয়েছে একথা বলতে দ্বিধা নেই।
– আমি তো নিজে থেকে এসব চাইনা, ওরা তো……।
– কিভাবে কি হয়েছে সেটা আমরা জানি, তাই ওকথা বলে নিজেকে আরাল করিস না।
প্রমিতার কণ্ঠে রাগ এর ছোঁয়া পেয়ে চুপ করে যায় সোহিনী। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই কারন ওর প্রশ্যয় ছাড়া তাহির এতটা এগতে পারতনা সেকথা অস্বীকার করার মত যুক্তি সোহিনীর মুখে এলনা তাই চুপ করে গেল।
বিক্রম কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে-
– আমি জানি সে কথা, সেই কারনেই উচিত শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৌম্য সামনের সপ্তাহে ফিরছে, ওর সাথে নতুন সুস্থ জীবন যাপন কর। আমি আর প্রমি যে সম্পর্কে আছি সেটা ভালবাসার সম্পর্ক, শুধু মাত্র যৌন আচারের জন্য নয় এবং প্রমি সেকথা স্বীকার করে। কাল সারা রাত আমরা তোমাকে নিয়ে অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্তে এসেছি
সোহিনী মায়ের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নেয় মা এর সম্মতি সুচক ঘাড় নাড়া। বিক্রম বলে চলে-
– তাহিরের বাড়িতে সত্যি অনেক রকমের কাগজ পত্র পাওয়া গেছে এবং সে তোমাকে তার কাজের একটা অঙ্গ হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছিল এবং ওর কাছে তোমাদের সম্পর্কের ভিডিও রেকর্ড ছিল যা অফিসার রা নষ্ট করে দিয়েছে। আমার জানা সোনা লোকেরা তোমাকে সব সময় রক্ষা করে যাবে সোহিনী। আমি তোমার সুখ ও শান্তি চাই, আর চাই সৌম্য এর মত সৎ নিষ্ঠাবান অফিসার ভারতে আরও আসুন এবং কাজ করুন। সৌম্য খুব শীঘ্রই দিল্লী তে চলে যাবে এবং গুরু দায়িত্ব ওর ওপরে আসবে। তোমার সাহচর্য ওর ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।
এক নাগারে কথা গুলো শুনে মাথা গুলিয়ে যায় সোহিনীর। সে রাত্রে একটুও ঘুমাতে পারে না সোহিনী। সারা রাত ধরে নিজেকে দুমড়ে মুচড়ে এক বদলানো সোহিনীর জন্ম দেয় সে। সন্তান কে আঁকড়ে শপথ নেয়, যে মানুষ ওর বাবা ওকে তৈরি করতে চেয়েছিলে এবং যা ও আজ পেয়েছে তা কে কোন ভাবেই হারাতে চায়না।
সকালে উঠে যখন বারান্দায় আসে, দেখে দরজা খোলা, বাইরে বেড়িয়ে দেখে ফরেস্ট গার্ড বসে আছে, ওকে দেখে প্রনাম আর কুর্নিস করে জানায় যে আজ সকালে ওর মা আর বিক্রম বাবু চলে গেছেন একটা গাড়ি করে আর বলে গেছেন পরে আপনার সাথে যোগাযোগ করে নেবেন।
ঘরে ফিরে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পরে সোহিনী। নিজেকে সামলে নিয়ে ঠাকুর ঘরে এসে ঈশ্বর কে প্রনাম করে, অঙ্গিকার করে, আজ থেকে সোহিনী এক অন্য মানুষ, যেমন তার রক্ষাকর্তা বিক্রম চায়। সে সৌম্য কে আর কোনদিন ঠকাবে না, ওর ভেতরের মানুষ টা জেগে উঠেছে অনেক দিন পরে। সে ওকে বলে আজ ত্রিপুরেশ্বরি মন্দিরে গিয়ে পূজা দিয়ে আসতে। ভেতরের আমি-টাকে আর নাকচ করে না সোহিনী। মন বলে, যৌন তৃষ্ণা হল সিগারেটের মত, যত টানবে আগুন তত বাড়বে। প্রবৃত্তির নিবৃত্তি প্রয়োজন জীবনে, আর সেই পথে এগিয়ে যাওয়াই মনস্থ করে ফেলে সোহিনী।
সকালের আলোয় বনের শেষ প্রান্তের সেগুন গাছের মাথায় হলুদ সূর্যরে আলো ওকে নতুন দিনের আলো দেখায়।
অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল
প্রমিতার থেকে সোহিনী জেনেছে যে বিক্রমের সাথে ওর সম্পর্ক আজও সমানে আছে। ও আসছে শুনে বিক্রম আসতে চায়, সোহিনী না করে তা সত্তে ও বিক্রম শোনেনা, প্রমিতার সাথে এক ফ্লাইট এ কলকাতা হয়ে ওঠে বিক্রম।
প্রমিতার সাথে বিক্রমের এয়ারপোর্ট এ দেখা। বিক্রম বলে-
– কি প্রমিতা, আমাকে না নিয়ে চলে যাবে?
– দেখ, আগে সোহিনীর ওখানে তুমি এই সব করেছ, আমি আর ওসব চাই না।
– ডার্লিং, তুমি জান আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবনা। তুমি ছাড়া আর কারো সাথে এক্ষণ আমি সম্পর্ক রাখিনা।
– তাতে কি!। তাছাড়া আমরা তো বাইরে যা করার করি, তোমার বাড়িতে বরের সামনে তো কিছুই করিনি।
প্রমিতা কিছুই বলে না, বোর্ডিং পাসের লাইন এ বিক্রম পাশাপাশি সিট জোগাড় করে নেয়। তারপর সিকিউরিটি চেক করে নিয়ে একটা কর্নার এ বসে পাসা পাসি। এদিক টা ফাঁকা, তাছাড়া ফ্লাইট এর সময় দেরি আছে। প্রমিতার অস্বস্তি টা কেটে গেছে ততক্ষণ। বিক্রম বলে-
– দেখ, আমি সব ব্যাবস্থা করেই যাচ্ছি, ভাবনা নেই।
– নাহ, ভাবছি না। কারন তোমার সাথে তো আর নতুন কিছু না।
– সেইটাই কথা।
হাতের ওপর হাত রেখে বিক্রম বলে-
– কোন ভয় নেই, সোহিনী ছাড়া কেউ তো জানে না আমাদের সম্পর্কের কথা।
হাতের স্পর্শে বস মানে, চুপ করে যায় প্রমিতা। কাঁধের ওপরে মাথা হেলিয়ে বিক্রম ডান হাত দিয়ে প্রমিতার বাহিতে হাত রাখে। চমকে ওঠে, আবার বিক্রম। প্রমিতা হাল ছেড়ে দেয়। আর লড়াই না করে মেনে নেয়।
সকালের পর থেকে তাহির এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি সোহিনী, ওকে জানাতে চাইছিল যে ওর মা আর বিক্রম আসছে কিন্তু ৩-৪ বার ফোন করে না পাওয়ায় হাল ছেড়ে দেয়, বিকালে মা আসবে। ওর ওখানেই উঠবে। একটা কথা ঠিক জানে যে বিক্রম আর ওর সাথে নতুন করে কোন সম্পর্কে জড়াবে না।
বিকালে সৌম্যর কাছ থেকে খবর টা পায়, তারপর টি ভি তে দেখে, তাহির আর জাকির গ্রেফতার হয়েছে দেশ বিরোধী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে। শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল সোহিনীর, এবার কি ওকেও ধরবে! কিছুক্ষণ চুপ করে শুয়ে থাকল, মোবাইল এর দিকে তাকাল যদি কোন ফোন আসে কিন্তু সেই রাত্রে ওর মা আসা পর্যন্ত আর কিছু হলনা। বিক্রম আর প্রমিতা এল রাত ১০ টা নাগাদ। সোহিনী আগে থেকেই ওদের থাকবার জন্যে দুতলায় ব্যবস্থা করে রেখেছে। যেহেতু এটা সোহিনীর জানা যে বিক্রম তার ঘরেই প্রমিতা কে নিয়ে শোবে তাই সোহিনী কোন রাখঢাক না রেখেই ওদের ওপরে পৌঁছে দেয়। একটা জিনিষ সোহিনী লক্ষ করে যে বিক্রম ওকে আর আগের চোখে দেখছে না, তবুও অস্বস্তি ওকে ছাড়ে না। ওরা ক্লান্ত, তাই খেয়ে ওপরে চলে গেলে সোহিনী সৌম্য কে ফোন করে খবর দেয়, আর জানতে পারে যে তাহির এবং জাকির এর কাছ থেকে অনেক কাগজ পত্র পাওয়া গেছে সন্ত্রাসবাদ এর। মাথা থেকে বের করতে চাইলেও বের হয় না সোহিনীর, রাত্রে কখন ঘুমিয়ে পরে ওর মনে নেই।
সকালে কাজের মেয়ের ফোনে ঘুম ভাঙ্গে, ছেলের কলেজ নেই, ছুটি, উঠে এসে দরজা খুলে দেয়। একটু পরে ছেলে কে রেডি করে ওপরে উঠে আসে, দেখে একটা সাদা ন্যুডলস্ত্রাপ সংক্ষিপ্ত রাত পোষাকে বসে আছে বারান্দায় ওর মা প্রমিতা। সোহিনী যেতেই প্রমিতা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলেও বিক্রম সামলে নেয়, ডান হাতে আঁকড়ে ধরে প্রমিতা কে তার বুকের কাছে।
– সোহিনী এসো। আমরা খুব ই ক্লান্ত, বুঝতেই পারছ, কতদিন পরে আমরা কাছা কাছি এসেছি।
– হাঁ। আসলে আমি দেখতে এলাম উঠেছ কি না। আমি খাবার পাঠাব?
– না, আমি নিয়ে আসছি, তুমি রেডি কর।
প্রমিতার লাজুক অভিব্যক্তি সোহিনীর চোখ এড়ায় না। সোহিনী নিচে এসে খাবার রেডি করে বিক্রম কে ডাকে, বিক্রম নিচে এসে নিয়ে যায়। হাসি ছাড়া আর কিছু বিনিময় হয়না, সে যাত্রা, খাবার এর প্লেট নিয়ে বিক্রম ওপরে উঠে যায়। হাঁপ ছেড়ে বাঁচে যেন সোহিনী। প্রচণ্ড টেনশন এর মধ্যে সোহিনী সারা দিন কাটায়, এর মধ্যে একবার বিক্রম এসে ওদের দুপুরের খাবার নিয়ে গেছে মাত্র, খুব স্বাভাবিক ব্যবহার করে বিক্রম যা সোহিনী কে ও স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে।
সেদিন সন্ধ্যে বেলায় প্রথম নামে প্রমিতা আর বিক্রম ওদের নীচের ঘরে। প্রমিতার পরনে লাল কাফতান, সোহিনীর চোখ এড়ায় না যে প্রমিতার মুখে একটা সুখের ঝলক আছে। বিক্রম এই প্রসঙ্গে জানায় যে ওরা দুজনে খুব খুশী। বিক্রম বলে-
– প্রমি, তুমি সোহিনী কে বল কেমন আছ?
– কি বলব?
– বল বেবি, সেই কাল রাত্রি থেকে কত কি হল আমাদের। তুমি তো কলকাতায় আমাকে একদম আস্তে দাও না।
– ওসব কথা থাক।
এই প্রসঙ্গে আলোচনা সোহিনীও চাইছে না কিন্তু এর পরের প্রসঙ্গ টা আরও মারাত্মক যা হিসাব বদলে দেয় সোহিনীর। বিক্রম বলে-
– সোহিনী, তুমি জান যে আমি দিল্লীতে খুব যাতায়াত করি, তোমার বউদি ওখানে আছে, আর এই খবর রাখি যে তুমি কেমন আছ, কি করছ। আমি চাই না কোন বাজে ছেলে বা অন্য কোন বাজে পুরুষের সাথে তুমি জড়িয়ে পর। আমার কন্টাক্ট এর সাহাজ্যে তোমার বর্তমান বন্ধু, যে তোমাকে ফাঁদে ফেলেছিল তার যথাযোগ্য ব্যবস্থা করা গেছে। আর কোনদিন ওরা তোমাকে কিছু জোর করে করাতে পারবে না। প্রমিতাও সে কথা জানে। আশা করি তুমি সেকথা বুঝতে পারছ।
সোহিনী চমকে ওঠে, বোঝে তাহিরের সাথে ওর সম্পর্ক বিক্রম জেনেছে এবং ওর মা সেকথা জেনেছে। আরও বোঝে তাহির ও জাকির কেন গ্রেফতার হয়েছে। সোহিনী বোঝে এবার গোটানোর সময় এসেছে। বিক্রম ওর ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলেও আর কাউকে ওর ধারে কাছে যে ঘেঁষতে দেবেনা সে কথা সোহিনীর কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রমিতা বলে-
– সোহিনী, তোকে একটা কথা বলি, সৌম্য খুব ভালো ছেলে, ওর সাথে ভালো করে সংসার কর, আর কোন পুরুষ এর সাথে জড়াস না নতুন করে। হয়ত তুই বলবি আমার মুখে সাজে না কিন্তু আমি তোর ভালর জন্যে বলছি, নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নে। আমাদের ব্যাপার তোর মাধ্যমেই হয়েছে, এবং যা হয়েছে সেটা আমাদের সকলের ভালোর জন্যেই হয়েছে একথা বলতে দ্বিধা নেই।
– আমি তো নিজে থেকে এসব চাইনা, ওরা তো……।
– কিভাবে কি হয়েছে সেটা আমরা জানি, তাই ওকথা বলে নিজেকে আরাল করিস না।
প্রমিতার কণ্ঠে রাগ এর ছোঁয়া পেয়ে চুপ করে যায় সোহিনী। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই কারন ওর প্রশ্যয় ছাড়া তাহির এতটা এগতে পারতনা সেকথা অস্বীকার করার মত যুক্তি সোহিনীর মুখে এলনা তাই চুপ করে গেল।
বিক্রম কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে-
– আমি জানি সে কথা, সেই কারনেই উচিত শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৌম্য সামনের সপ্তাহে ফিরছে, ওর সাথে নতুন সুস্থ জীবন যাপন কর। আমি আর প্রমি যে সম্পর্কে আছি সেটা ভালবাসার সম্পর্ক, শুধু মাত্র যৌন আচারের জন্য নয় এবং প্রমি সেকথা স্বীকার করে। কাল সারা রাত আমরা তোমাকে নিয়ে অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্তে এসেছি
সোহিনী মায়ের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নেয় মা এর সম্মতি সুচক ঘাড় নাড়া। বিক্রম বলে চলে-
– তাহিরের বাড়িতে সত্যি অনেক রকমের কাগজ পত্র পাওয়া গেছে এবং সে তোমাকে তার কাজের একটা অঙ্গ হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছিল এবং ওর কাছে তোমাদের সম্পর্কের ভিডিও রেকর্ড ছিল যা অফিসার রা নষ্ট করে দিয়েছে। আমার জানা সোনা লোকেরা তোমাকে সব সময় রক্ষা করে যাবে সোহিনী। আমি তোমার সুখ ও শান্তি চাই, আর চাই সৌম্য এর মত সৎ নিষ্ঠাবান অফিসার ভারতে আরও আসুন এবং কাজ করুন। সৌম্য খুব শীঘ্রই দিল্লী তে চলে যাবে এবং গুরু দায়িত্ব ওর ওপরে আসবে। তোমার সাহচর্য ওর ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।
এক নাগারে কথা গুলো শুনে মাথা গুলিয়ে যায় সোহিনীর। সে রাত্রে একটুও ঘুমাতে পারে না সোহিনী। সারা রাত ধরে নিজেকে দুমড়ে মুচড়ে এক বদলানো সোহিনীর জন্ম দেয় সে। সন্তান কে আঁকড়ে শপথ নেয়, যে মানুষ ওর বাবা ওকে তৈরি করতে চেয়েছিলে এবং যা ও আজ পেয়েছে তা কে কোন ভাবেই হারাতে চায়না।
সকালে উঠে যখন বারান্দায় আসে, দেখে দরজা খোলা, বাইরে বেড়িয়ে দেখে ফরেস্ট গার্ড বসে আছে, ওকে দেখে প্রনাম আর কুর্নিস করে জানায় যে আজ সকালে ওর মা আর বিক্রম বাবু চলে গেছেন একটা গাড়ি করে আর বলে গেছেন পরে আপনার সাথে যোগাযোগ করে নেবেন।
ঘরে ফিরে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পরে সোহিনী। নিজেকে সামলে নিয়ে ঠাকুর ঘরে এসে ঈশ্বর কে প্রনাম করে, অঙ্গিকার করে, আজ থেকে সোহিনী এক অন্য মানুষ, যেমন তার রক্ষাকর্তা বিক্রম চায়। সে সৌম্য কে আর কোনদিন ঠকাবে না, ওর ভেতরের মানুষ টা জেগে উঠেছে অনেক দিন পরে। সে ওকে বলে আজ ত্রিপুরেশ্বরি মন্দিরে গিয়ে পূজা দিয়ে আসতে। ভেতরের আমি-টাকে আর নাকচ করে না সোহিনী। মন বলে, যৌন তৃষ্ণা হল সিগারেটের মত, যত টানবে আগুন তত বাড়বে। প্রবৃত্তির নিবৃত্তি প্রয়োজন জীবনে, আর সেই পথে এগিয়ে যাওয়াই মনস্থ করে ফেলে সোহিনী।
সকালের আলোয় বনের শেষ প্রান্তের সেগুন গাছের মাথায় হলুদ সূর্যরে আলো ওকে নতুন দিনের আলো দেখায়।
অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল
|| সমাপ্ত ||