Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#70
পর্বঃ৩০


        ইন্সপেক্টর আবির দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে বসে আছে থানার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। সে নদীর সাথে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বর্ননা দিচ্ছে।
        "স্যার, ঘটনাটি ঘটে আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিক। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় নদী এবং আলিফ নামে ছেলেটি এগারোটার দিকে বাসা থেকে বের হয়। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তারা দুইজনে একই বাসায় ভাড়া থাকে এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। নদীর মায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, "সে সেদিন সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন সাহায্যের জন্য নদী তার বন্ধু আলিফকে ডাকে। এবং একটা সময় তার অবস্থা গুরুতর হলে তারা দুইজনে ডাক্তার ডাকতে বাসা থেকে বের হয়। তারপর তারা আর বাসায় ফিরে আসে নি।" এছাড়াও আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তাদের বাসার কাছাকাছি যে দুইটা ফার্মেসী ছিল সেদিন সেই দুইটা ফার্মেসিই দশটার দিকে বন্ধ করে দিয়েছিল। ফার্মেসির লোকদের সাথে কথা বলে সত্যতা যাচাই করেছি। আমরা ধরণা করেছি, তারা উপায় না পেয়ে বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে আরেকটা ফার্মেসির দিকে যাওয়ার পথেই একদল ছেলে তাদের অপহরণ করে পাশে একটা পরিত্যক্ত বিল্ডিং এ নিয়ে যায়। সেখানেই নদীকে গণ;., করা হয় এবং নদীর সাথে থাকা ছেলেটিকে কিল ঘুসি লাথি সহ বাশ দিয়ে সবাই মিলে এলোপাথাড়ি মারধর করে।" 
        ইন্সপেক্টর আবির প্রাথমিক ঘটনাটা সংক্ষেপে বলে থামলো। বসে থাকা অফিসাররা কোনো কথা বলল না। তারা আরো কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। 

        ইন্সপেক্টর আবির তার সামনে থাকা ল্যাপটপে ক্লিক করতেই তার পিছনে থাকা প্রজেক্টরের পর্দায় চারজনের ছবি ভেসে উঠলো। ঘরের মধ্যে থাকা সবাই সেই ছবির দিকে তাকালো। আবির ছবিগুলোর দিকে লক্ষ করে বলল, "স্যার, তদন্ত কার্যক্রমে আমরা মোট চয়জনের বিভিন্ন ধরনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে যাওয়ার পথে একটা পুরনো গ্যারেজ বাঁধে, ভাগ্যক্রমে সেই গ্যারেজের গেটের সামনেই একটা সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। আমরা সেই সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। সেই ফুটেজে দেখা যায়, চারটা ছেলে নদী এবং আলিফের কাঁধে হাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সেই ফুটেজ দেখে চারজনের মধ্যে দুইজনকে সনাক্ত করে গতকাল গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তাদের জবানবন্দি নিয়েই সারা রাত অভিযান চালিয়ে আজ ভোরের দিকে বাকী দুই আসামিকেও আমরা গ্রেপ্তার করি। এদের মধ্যে ডিএনএ টেস্টে ঈষান, বিপুল এবং মোহন্ত বিশ্বাসের নমুনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ;.,ের স্বীকারোক্তি দিয়েছে বাকী একজন।"

        ইন্সপেক্টর আবিরের কথা শেষ হলে ঘরের লাইট জ্বলে উঠলো। অনেকটা সময় মৃদু অন্ধকারে থাকার ফলে হঠাৎ লাইটের আলোটা সবার চোখে লাগলো। 
        মিটিং শেষ হলে সবাই একে একে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগল। সেই সময় আবির হেঁটে এসে থানার এসপি আতাহারকে সালাম দিয়ে বলল, "স্যার, কিছু জরুরি কথা ছিল।"
        আতাহার বলল, " কিছুসময় পরে আমার অফিসে আসুন।" 
        আবির বলল, "আচ্ছা স্যার।"

        ইন্সপেক্টর আবির মিনিট দশেক পরে এসপি স্যারের অফিসে গেলো। এসপি আতাহার তাকে দেখেই ভেতরে আসতে বলল এবং তাকে বসতে বলল। আতাহার ফোনে কথা বলছে। তাকে ব্যস্ত দেখে আবির চুপচাপ চেয়ারে বসল।

        আতাহার কথা শেষ করে আবিরের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল, "বুঝলেন আবির সাহেব, নেতারা যখন সমস্যায় পড়ে তখন আমাদের মত চুনোপুঁটিদের গুরুত্ব বেড়ে যায়। এই দেখুন না, সকাল থেকে বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছে আমাদের এমপি সাহেব।"
        আবির চুপ রইলো। আতাহার আবার বলল, "হ্যাঁ, কি এমন জরুরি কথা বলতে চান আমাকে বলে ফেলুন দ্রুত। আমি আবার বেরোবো। দুপুরে একটা লান্সের দাওয়াত আছে।"
        আবিরের বুঝতে সমস্যা হলো না আতাহার সাহেব এমপি স্যারের সাথে দেখা করতে যাবে। আবির বলল, "স্যার আসলে...।" আবির তোতলানো মত করে বলল।
        "ভয়ের কিছু নেই, বলে ফেলুন।" আতাহার বলল।
        "নদী মেয়েটার ;.,ের মামলাটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।" আবির বলল।
        আতাহারের চোখ মুখ গম্ভীর হয়ে উঠলো। সে বলল, " চারজনের নামে প্রামান সহ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চার্জশিট জমা দিয়ে দেও। এই কেস নিয়ে আর আগানোর দরকার নেই। আগে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছি সেভাবেই কাজ করুন। কোনো ঝামেলা হোক সেটা আমি চাই না।" 
        "স্যার, তবুও বিষয়টা আমরা এভাবে এড়িয়ে যেতে পারি না। ভিকটিম বিষয়টা তুললে আমরা কি করবো?" আতাহারের ধমকে আবির আর কিছুই বলতে পারলো না।
        "আপনি আসতে পারেন। আর হ্যাঁ, আমাকে না জানিয়ে নিজ থেকে কোনো কিছু করতে যাবেন না। আজকের মধ্যেই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চার্জশিট জমা দিয়ে দিন। বাকীটা আদালত দেখবে। আমাদের কাজ এখানেই সমাপ্ত। এবার আপনি আসতে পারেন।" 

        আবির হতাশ হয়ে এসপি স্যারের রুম থেকে বেরুলো। সে জানতো এটাই হবে। তবুও শেষ একটা চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিল সে। আবির ঘামছে। নদী নামের বোবা মেয়েটার জন্য তার কষ্ট হচ্ছে। হতভাগা একটা মেয়ে। অবশ্য এদেশের সব মেয়েরাই হতভাগা। এখানে ধর্ষকদের শাস্তি কবে আর ঠিকমতো হয়েছে? আবির দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তার এই চাকরির বয়সে সে অনেক কিছু দেখেছে। দেখেও তাকে সবসময় নিশ্চুপ থাকতে হয়েছে। এখন তার এইসব সয়ে গেছে। এখন তার বেশি মন খারাপ হয় না। সে জানে, নদীর ;.,ের মামলাটা দীর্ঘ দিন আদালতে ঝুলে থাকবে। সে এ-ও জানে এই মামলার রায় কি হবে। সে এতোটা নিশ্চিত কারণ এই মালার সাথে রাঘব বোয়াল জড়িত। 

        আবির বিকালের দিকে একবারে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। তার মন আজ ভাল না। সে এসপি স্যারের কথামতো চার্জশিট জমা দিয়ে কি মনে করে হাসপাতালে দিকে গেলো সে নিজেও জানে না। সে হাসপাতালে সামনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রইল। সে মূলত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। সে কি ভিকটিমের সাথে দেখা করবে কি করবে না বুঝে উঠতে পারছে না। তার মন যাচ্ছে একবার দেখা করে আসতে কিন্তু এভাবে দেখা করা উচিত হবে কিনা সে বুঝতে পারছে না। সে অবশেষে যখন চলে যাবে সিন্ধান্ত নিলো তখন তাকে কেউ পিছন থেকে ডাকলো। সে ঘুরে তাকালো। 

        "কেমন আছে?" রুদ্র জিজ্ঞেস করল।
        "জি আলহামদুলিল্লাহ ভাল। আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।" আবির বলল।
        "আমি আলিফের বন্ধু।" রুদ্র উত্তর দিলো।
        "ওহ হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আমাদের সেদিন কথা হয়েছিল।" 
        "হ্যাঁ, হঠাৎ এদিকে? জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছেন?" 
        "না, জিজ্ঞাবাদের তেমন কিছু নেই। আসামী ধরা পড়েছে এবং তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে।" 
        কথাটা শুনে রুদ্রের মন ভাল হয়ে গেল। সে বলল, "কবে?" 
        "চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছি। আমাদের কাজ শেষ। এখন বাকীটা আদালত দেখবে।" আবির বলল।
        "আপনাকে ধন্যবাদ। আসামীদের এতো দ্রুত সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করার জন্য।"
        "আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমাদের ভাগ্য ভালো যে একটা সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট ভাবেই আসামিদের সনাক্ত করা গেছে। তাই দ্রুতই কেসটা সমাধান হয়ে গেছে।" 
        "তবুও আপনাকে ধন্যবাদ। আজকাল পুলিশদের উপর একটুও বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু আপনাদের মত কিছু নিষ্ঠাবান পুলিশ আছে বলেই মানুষের বিশ্বাস এখনো বেঁচে আছে।" 

        রুদ্রের শেষ কথাগুলো আবিরের মন খারাপ করে দিলো। সে জানে কেনো এতো দ্রুত কেসটা সমাধান হয়েছে, কেনো-ই বা আসামি এতো দ্রুত গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু সে সেইসব কথা রুদ্রকে না বলেই সে বলল, "আজ চলি। আশা করি আদালত সঠিক ভাবে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।" আবির কথাটা শেষ করে দ্রুত হেঁটে চলে গেল। তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতর জমানো রাগ ক্ষোভ তাকে ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে। তার কেবল মনে হচ্ছে, বোবা না হয়েও বোবার মত বেঁচে থাকা জীবন সবচেয়ে নোংরা।  

        রুদ্র বসে আছে আলিফের পাশে। আলিফ এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। নদীও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে আজকাল নদী কারো সাথে তেমন একটা কথা বলে না। সে সারাক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে থাকে। তার যেনো আর কিছু বলার নেই। তার সব কথা হারিয়ে গেছে। কথা বলার ইচ্ছেটা মরে গেছে। সে মৃত মানুষের মত বেঁচে আছে।

        এখন সন্ধ্যা। আলিফ কেবিনে একা বসে আছে। এতোক্ষণ রুদ্র তার পাশেই ছিল। জরুরি কাজে সে একটু বাইরে গেছে। আলিফ হাত বাড়িয়ে টিভির রিমোটটা হাতে নিয়ে তার রুমে থাকা টিভিটা চালু করলো। চ্যানেল পরবর্তী করতে করতে একটা খবরে তার চোখ স্থির হয়ে রইল। তার চোখেমুখে তীব্র ক্ষোভ ফুটে উঠছে। তার ভেতর প্রচন্ড রেগ জমা হচ্ছে। ঠিক তখনই রুদ্র রুমে ঢুকলো। সে রুদ্রকে দেখেই চিৎকার করা বলল, "ওরা চারজন ছিলো না পাঁচজন ছিল। খবরে কেনো শুধু চারজনের কথা বলছে রুদ্র? কেনো?" 

চলবে...

( এই পর্বে ভুল ভ্রান্তি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আসলে আমার সীমিত জ্ঞানে যতটুকু পেরেছি লিখছি। ) 
(লেখকঃসবুজ আহম্মেদ মুরসালিন)
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - by Bangla Golpo - 19-06-2023, 10:42 PM



Users browsing this thread: 17 Guest(s)