19-06-2023, 10:39 PM
পর্বঃ২৯
রুদ্র বসে আছে আলিফের পাশে৷ আলিফ বেডে ঘুমাচ্ছে। তাকে কড়া ডোজের ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে৷ এলোপাতাড়ি মারধর করার ফলে আলিফের অবস্থা ভীষণ খারাপ। একটানা দুইদিন বেহুশ থাকার পরে আজ সকালে তার হুস ফিরেছে৷ আলিফের হুস ফেরার পরে, সে তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করলে ডাক্তার এসে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে, "রোগীকে কয়েকদিন এভাবেই ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হবে। শরীরের নানা জায়গার হাড় মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সেহেতু জেগে থাকলে রোগী ব্যথার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবে না। ডাক্তার আরো বলেছে, সপ্তাহ খানেক রোগীকে ঘুম রেখে চিকিৎসা করা হবে। আমরা যখন দেখবো সে সুস্থ হয়ে উঠছে, শরীর নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত স্থান গুলোকে রিকভারি করছে, ব্যথার যন্ত্রণা কমে আসছে তখন সে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং পরবর্তীতে তার অবস্থা দেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে৷ তবে এখন আপনাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একটু সময় লাগবে, তবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। বিপদ কেটে গেছে।"
রুদ্র বেশকিছু সময় আলিফের পাশে বসে রইলো৷ তারপর সে আলিফের রুম থেকে বের হয়ে নদীর কেবিনের দিকে গেলো। অবশ্য নিচে নামার জন্য তাকে এদিক দিয়ে যাওয়া লাগবে৷ সে যখন নদীর কেবিনের সামনে এলো ঠিক সেই মুহুর্তে দুইটা পুলিশ এসে দাঁড়ালো। তারা দুইজনে কিছু একটা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা করছে। রুদ্র সেদিকে লক্ষ না করে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সে সরাসরি হাসপাতালে নিচে এসে একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ালো। এক কাপ চা নিলো সাথে একটা সিগারেট। চা এবং সিগারেট খাওয়া শেষ হলে সে আবার হাসপাতালে ভেতরে ঢুকলো। নদীর কেবিনে সামনে এলে সে দেখলো পুলিশ দুইজন নেই। চলে গেছে ভেবে রুদ্র সোজা আলিফের কেনিনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। কেবিনে এসে দেখলো পুলিশ দুইজন ভেতরে আলিফের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছে ডাক্তার। রুদ্র হেঁটে ভেতর ঢুকলো। ডাক্তারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আলিফের জ্ঞান ফিরেছে। পুলিশ আলিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
"আপনি কি তাদের দেখলে চিনতে পারবেন?" দুইজন পুলিশের মধ্যে গোঁফওয়ালা লোকটা আলিফকে জিজ্ঞাসা করলো।
রুদ্র আলিফের দিকে তাকালো। আলিফকে আগে কি কি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে রুদ্র জানেনা।
আলিফ মাথা নাড়িয়ে পুলিশকে উত্তর দিলো সে তাদের দেখলে চিনতে পারবে।
"আমরা তদন্ত করছি। যারা আপনাদের সাথে এমনটা করেছে তাদেরকে আমরা দ্রুতই সনাক্ত করে গ্রেফতার করবো।" ফর্সা লোকটা বলল। তার পাশে থাকা গোঁফওয়ালা লোকটাও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।
রুদ্র আলিফের দিকে তাকালো। আলিফ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। রুদ্র বুঝতে পেরে ডাক্তারকে ইশারা করলো।
আলিফকে দেখে ডাক্তার পুলিশদের বলল, "আজকে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না। রোগীর অবস্থা এখনো ভালো না।"
"তাহলে আজ আমরা চললাম। আবার কথা হবে আলিফ সাহেব। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। আপনার সুস্থ হয়ে উঠে এখন খুব জরুরি।" গোঁফওয়ালা পুলিশটা বলল।
পুলিশ বেড়িয়ে গেলে রুদ্র তাদের পিছে পিছে বেড়িয়ে এলো। সে ডাকলো, "শুনুন।"
দুইজনই রুদ্রের ডাক শুনে ঘুরে তাকালো।
"আমি রুদ্র। আলিফের বন্ধু।" রুদ্র কথাটা বলে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য।
"আমি আবির। কিছু বলবেন?"
"হ্যাঁ।" রুদ্র বলল।
"জি বলুন।"
"আসলে জানতে চাচ্ছিলাম কেসের অগ্রগতি কতদূর।"
"আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত আসামীদের সনাক্ত করার।" আবির বলল।
রুদ্র বুঝতে পারলো পুলিশ তাকে এই মুহুর্তে কোনো তথ্য বলতে চাচ্ছে না। সে বলল, "আপনাদের উপর বিশ্বাস আছে। এই রকম জঘন্য কাজ যারা করেছে আশা করি আপনারা তাদের দ্রুত গ্রেফতার করবেন।"
"ধন্যবাদ।" কথা বলেই তারা হেঁটে চলে গেল।
রুদ্রের বিষয়টা ভাল লাগলো না। তার মনে হলো পুলিশ কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছে। সে ঘটনা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আলিফের রুমে ফিরে এলো। এসে দেখে আলিফ আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। ডাক্তার তাকে আবার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছে। মাত্রই ডাক্তার বেরিয়ে গেলো।
বিকালে রিয়া এবং ইরিনা এলো আলিফকে দেখতে। হাসপাতালের নিচেই রুদ্রের সাথে তাদের দেখা হয়ে গেলো। রুদ্র হাসপাতালে পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। রুদ্রকে দেখেই ইরিনা এসে বলল, 'আলিফ আর নদীর কি খবর?"
ইরিনাকে বসতে বলে রুদ্র বলল, "ভাল না৷ কারোই হুস নেই। আলিফের হুস ফিরলে যন্ত্রণায় চিৎকার করে। তাই ডাক্তার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে ঘুম পারিয়ে রাখে। অন্য দিকে নদীর হুস ফিরলেও সজ্ঞানে থাকে না। একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। ডাক্তার বলেছে একটু সময় লাগবে দুইজনেরই সুস্থ হতে।"
"তোমার কি খবর?" ইরিনার পাশে বসে থাকা রিয়া বলল।
"ভালো।" রুদ্র নিষ্প্রাণ ভাবে উত্তর দিলো।
"তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি ভালো আছো? সারাদিন খাওয়া দাওয়া হয়ছে?" রিয়া আবার বলল।
"হ্যাঁ, খেয়েছি।" রুদ্র সংক্ষেপে উত্তর দিলো।
"কি খেয়েছ? চা আর সিগারেট?"
রুদ্র আর কোনো উত্তর দিলো না। রিয়াই বলল, "পুরোটা সময় কি হাসপাতালেই ছিলে?"
"উঁহু!" রুদ্র উত্তর দিলো।
"তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।" রিয়া থামলো। সে হাতটা বাড়ির টেবিলের উপর থাকা রুদ্রের হাতের উপর হাত রেখে বলল, "তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে? এভাবে চলতে থাকলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।"
"আমার কিচ্ছু হবে না।" রুদ্র কথাটা ভেঙে ভেঙে বলল। সে আবার বলল, "রিয়া, আলিফ আর নদীর এটা কি হয়ে গেলো? কেনো এমনটা হলো? মানুষ কি করে এতো পশু হতে পারে। ওদের বুকে কি কোনো দয়ামায়া নেই? এভাবে দুইটা মানুষকে প্রায় মেরেই ফেললো।" রুদ্র কন্ঠ এবার ভাড়ী শুনালো।
"মন খারাপ করিস না রুদ্র। সব ঠিক হয়ে যাবে।" ইরিনা বলল।
"কিচ্ছু ঠিক হবে না ইরিনা। আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিস না। আলিফের জ্ঞান ফিরলে বা ও সুস্থ হলে ওকে কি বলে বোঝাবো? ও নদীকে ভীষণ ভালোবাসে। নদীকে-ই বা কি করে স্বাভাবিক করবো। কিছুই ঠিক হবে না। কিছুই না!" রুদ্র প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে সে নিজেকে সামলে নিয়েছে।
রুদ্রের এই কথায় সবাই নিরব হয়ে গেলো।
"চলো রুদ্র!" রিয়ার কথায় নিরবতা ভাঙলো।
"কোথায় যাবো?" রুদ্র জানতে চাইলো৷
"তোমার বাসায়। বাসায় গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে আবার আসবো।" রিয়া বলল।
রুদ্র কিছু বলার আগেই ইরিনা বলল, "হ্যাঁ রুদ্র, বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। ভালো লাগবে। তোরা না আসা পর্যন্ত আমি এখানে আছি। চিন্তার কিছুই নেই।"
রিয়া ও ইরিনার জোড়াজুড়িতে রুদ্র অবশেষে যেতে বাধ্য হলো। একটা রিকসা ঠিক করে রিয়া ও রুদ্র চলে গেলে ইরিনা প্রথম গেলো নদীর রুমে। নদী ঘুমিয়ে আছে। তার পাশে তার মা বসে আছে। ইরিনা এগিয়ে গিয়ে বলল, "কেমন আছেন আন্টি?"
"ভালো না মা। তুমি কে? ঠিক চিনতে পারলাম না" নদীর মা জানতে চাইলো।
"আন্টি আমি ইরিনা, নদীর ফ্রেন্ড।"
"ওহ আচ্ছা। তুমি ভালো আছো?"
"হ্যাঁ, আন্টি আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?" ইরিনা কিছু না ভেবে আবারও আগের প্রশ্নটা করলো।
"কি আর বলবো মা। আমার জন্য আজ আমার মেয়ের কি থেকে কি হয়ে গেলো।" নদীর মা কেঁদে দিলো।
ইরিনা বলল, "আন্টি এভাবে ভেঙে পড়বেন না। আমাদের হাতে তো কিছুই নেই। তবে যারা এই কাজ করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে।"
"তারা শাস্তি পেলেই কি আমার মেয়েটা আগের জীবনটা ফিরে পাবে? পাবে না!" নদীর মা কান্নায় ভেঙে পড়লো।
ইরিনা আরো কাছে এসে নদীর মাকে জড়িয়ে ধরলো।
নিরব কান্নায় কিছুটা সময় কেটে গেলে ইরিনা রিয়াকে দেখে আলিফের রুমে এলো। আলিফও ঘুমিয়ে আছে। ইরিনার মন খারাপ হলো। দুইটা ভালোবাসার মানুষকে এভাবে, এই অবস্থায় দেখে যে কারোই চোখে জল চলে আসবে। ইরিনার চোখও ভিজে গেলো। কিন্তু সেই ভেজা চোখে আরো খানিকটা দুঃখ ঢেলে দিলো ফাহিমের বলা কথাগুলো। ইরিনা তার চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না। আলিফের রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদলো সে। সে তাকিয়ে আছে দূরের আকাশের দিকে।
ফাহিমের সাথে বেশকিছু দিন ধরেই ইরিনার ঝামেলা চলছিল। সেই ঝামেলা আরো বাড়ে যখন ইরিনার বাসা থেকে ইরিনার জন্য পাত্র ঠিক করে ফেলে। ইরিনা বারবার বলেছিল ফাহিমকে তার বাবার সাথে গিয়ে দেখা করার জন্য। কিন্তু ফাহিম রাজি হয় নি। ইরিনাও বাসায় ফাহিমের কথা বললে বাসা থেকে বিয়ের জন্য ইরিনাকে প্রেসার দেওয়া শুরু করে। সে কোনো ভাবেই বাসায় রাজি করাতে পারছিল না। অবশেষে যখন সে তার বাবাকে মোটামুটি রাজি করিয়ে ফেলল তখনই ফাহিমের কথাগুলো তার সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিলো।
ঢাকা ফিরেই পরের দিন ইরিনাকে দেখা করতে বলে ফাহিম। ইরিনা দেখা করতে এলে ফাহিম তাকে জানায়, সে স্কলারশিপ পেয়েছে। সে জার্মানি যেতে চায়। কথাটা শুনে প্রথমে ইরিনা খুশি হলেও পরক্ষণেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সে সেটা ফাহিমকে বুঝতে দেয় না। ফাহিমের চোখে মুখে উত্তেজনা, আনন্দ এবং তার হাসিমুখ দেখে সে আর জানাতে পারে না যে সে তার বাবাকে রাজি করিয়েছে তাদের বিয়ের জন্য।
"কংগ্রাচুলেশন।" ইরিনা নিষ্প্রাণ ভাবে ফাহিমকে বলে।
"তুমি কি খুশি হয়েছো?" ফাহিম জিজ্ঞেস করে।
"আমি কেন খুশি হবো না? আমি অনেক খুশি হয়েছি।"
"সত্যি বলছো?"
"মিথ্যা কেন বলব!"
"আমি ভেবেছিলাম তুমি মন খারাপ করবে।"
"এত খুশির একটা সংবাদ শুনে কেউ মন খারাপ করে?"
"তুমি সত্যি খুশি তো?"
"হ্যাঁ, আমি ভীষণ খুশি।" ইরিনা আবার বলল, "তাহলে কবে যাচ্ছো?"
"কাগজপত্র ঠিক করতে দুই মাস তো লাগবে আনুমানিক।"
"ওহ আচ্ছা।"
সেদিন ফাহিমের সাথে ইরিনার আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ কথা হয় নি। ফাহিম একটিবারও বলেনি, "তুমি কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে?" ফাহিম ধরেই নিয়েছে, ইরিনা অপেক্ষা করবে না। এই বিষয়টাই ইরিনাকে তীব্র কষ্ট দিয়েছে। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। ফাহিম তো তাকে একবার হলেও জিজ্ঞেস করবে, সে অপেক্ষা করবে কি-না? কিন্তু ফাহিম তেমন কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।
ইরিনার কান্না বেড়ে গেলো। ফাহিম কি করে এতো বদলে গেলো? যে মানুষটা তাকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারতো না সে আজ তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ইরিনা বহুকষ্টে নিজেকে সামলে নিলো। সে বাইরে বেরিয়ে এলো। খোলা বাতাসে তার একটু ভালো লাগছে। সে বাইরেই হাঁটাহাঁটি করলো বেশকিছু সময়। রুদ্র আর রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো।
"আমি এখানেই অপেক্ষা করছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে এসো।" রিকসা থেকে নেমে রিয়া কথাগুলো রুদ্রকে বলল।
"এখানে থাকবে মানে? বাসায় চলো। এখানে থেকে অপেক্ষা করতে হবে না।" রুদ্র জোর গলায় বলল।
"আমার কোন সমস্যা হবে না। হুট করে তোমার বাসায় গেলে কে কি ভাববে?"
"কেউ কিছু ভাববে না। এখানে একা একা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে না।"
রুদ্রের জোড়াজুড়িতে রিয়া প্রথমবারের মতো রুদ্রের বাসায় গেল। বাসায় যাওয়ার পর রুদ্র সবার সাথে রিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিল। সবাই বলতে তার মা আর তার বোন।
রিয়াকে বসতে বলে রুদ্র ফ্রেস হতে চলে গেল। রিয়া ডাইনিং রুমের সোফায় বসে ছিল। তার পাশে বসে আছে মিলি। সে রিয়াকে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখছে। জাহানারা রান্নাঘরে গেছে খাবার রেডি করতে।
"তুমি কি রুদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো?" মিলি আচমকা প্রশ্ন করে বসে রিয়াকে।
মিলির কাছ থেকে এরকম একটা প্রশ্ন রিয়া আশা করেনি৷ সে কিছু সময়ের জন্য থতমত হয়ে গেল। সে বলল, "তোমার কি মনে হয়?"
"আমার মনে হয় তুমি রুদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো!" মিলি মুখে হাসি এনে কথাটা বলল।
মিলির কথা শুনে রিয়া হেসে দিলো। সে বলল, "তোমার রুদ্র ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না!" কথাটা বলার সময় রিয়ার বুকের মধ্যে অদ্ভুত একটা কষ্ট হল।
"তাহলে কাকে ভালোবাসে?" মিলি আবার প্রশ্ন করল।
"আমিতো জানিনা।"
"তাহলে তুমি কি আমার রুদ্র ভাইয়ের বন্ধু?"
"তেমনটা ও না।"
"তাহলে?"
রিয়ার উত্তর দেওয়ার আগেই রুদ্র চলে এলো। রুদ্রের চুল ভেজা। তাকে দেখতে আগের থেকে অনেকটা ফ্রেশ লাগছে। সে যে টি-শার্টটা পরেছে সেটা এখানে সেখানে ভেজা। রুদ্র দ্রুত গোসল করে ভালোভাবে শরীরটাও মুছে নি। রুদ্রকে দেখতে অনেক আকর্ষনীয় লাগছে। রিয়া হঠাৎ রুদ্রের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। এত সুন্দর কারও দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যায় না।
রুদ্র হেঁটে এসে মিলির পাশে বসলো। সে রিয়াকে বলল, "তোমরা কি নিয়ে গল্প করছিলে?"
"তোমাকে নিয়ে।" রিয়া উত্তর দিলো।
"আমাকে নিয়ে?" রুদ্র আশ্চর্য হল। সে আবার বলল, "আমার নামে কি কি বদনাম করলে।"
"তোমাকে বলা যাবে না ভাইয়া।" মিলি কথাটা শেষ করে দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেল।
"রুদ্র, তোরা খেতে আয়।" জাহানারা ডাকলো।
"রিয়া, চলো খাবে।" রুদ্র বলল।
"আমি খাব না, আমি খেয়েই এসেছি।" রিয়া বলল।
"এটা বললে হবে না, তুমি প্রথম এসেছ আমাদের বাসায়। একটু তো খেতেই হবে।"
"প্লিজ রুদ্র রিকোয়েস্ট করো না।"
"তুমি কিছু না খেলে মা মন খারাপ করবে।"
রুদ্রের শেষের কথাটা রিয়া ফেলে দিতে পারল না।
রিয়া আর রুদ্র খাওয়া শেষ করেই বেড়িয়ে গেলো। খাওয়ার সময় রিয়ার সাথে জাহানারার দুই একটা কথা হল। জাহানারা তাকে আবার আসতে বলল। রিয়া আসবে বলে কথা দিয়েছে।
রিয়া আর রুদ্র হাসপাতালে পৌঁছেই খবরটা পেলো। যে চারজন নদী এবং আলিফের সাথে এরকম জঘন্য কাজ করেছে তাদের মধ্যে পুলিশ দুইজনকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করেছে। খবরটা শুনে সবাই খুশি হলো। কিন্তু পুরো ঘটনাটা শোনার জন্য সবাই আলিফ এবং নদীর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করতে থাকলো।
চলবে....
রুদ্র বসে আছে আলিফের পাশে৷ আলিফ বেডে ঘুমাচ্ছে। তাকে কড়া ডোজের ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে৷ এলোপাতাড়ি মারধর করার ফলে আলিফের অবস্থা ভীষণ খারাপ। একটানা দুইদিন বেহুশ থাকার পরে আজ সকালে তার হুস ফিরেছে৷ আলিফের হুস ফেরার পরে, সে তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করলে ডাক্তার এসে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে, "রোগীকে কয়েকদিন এভাবেই ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হবে। শরীরের নানা জায়গার হাড় মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সেহেতু জেগে থাকলে রোগী ব্যথার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবে না। ডাক্তার আরো বলেছে, সপ্তাহ খানেক রোগীকে ঘুম রেখে চিকিৎসা করা হবে। আমরা যখন দেখবো সে সুস্থ হয়ে উঠছে, শরীর নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত স্থান গুলোকে রিকভারি করছে, ব্যথার যন্ত্রণা কমে আসছে তখন সে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং পরবর্তীতে তার অবস্থা দেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে৷ তবে এখন আপনাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একটু সময় লাগবে, তবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। বিপদ কেটে গেছে।"
রুদ্র বেশকিছু সময় আলিফের পাশে বসে রইলো৷ তারপর সে আলিফের রুম থেকে বের হয়ে নদীর কেবিনের দিকে গেলো। অবশ্য নিচে নামার জন্য তাকে এদিক দিয়ে যাওয়া লাগবে৷ সে যখন নদীর কেবিনের সামনে এলো ঠিক সেই মুহুর্তে দুইটা পুলিশ এসে দাঁড়ালো। তারা দুইজনে কিছু একটা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা করছে। রুদ্র সেদিকে লক্ষ না করে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সে সরাসরি হাসপাতালে নিচে এসে একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ালো। এক কাপ চা নিলো সাথে একটা সিগারেট। চা এবং সিগারেট খাওয়া শেষ হলে সে আবার হাসপাতালে ভেতরে ঢুকলো। নদীর কেবিনে সামনে এলে সে দেখলো পুলিশ দুইজন নেই। চলে গেছে ভেবে রুদ্র সোজা আলিফের কেনিনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। কেবিনে এসে দেখলো পুলিশ দুইজন ভেতরে আলিফের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছে ডাক্তার। রুদ্র হেঁটে ভেতর ঢুকলো। ডাক্তারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আলিফের জ্ঞান ফিরেছে। পুলিশ আলিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
"আপনি কি তাদের দেখলে চিনতে পারবেন?" দুইজন পুলিশের মধ্যে গোঁফওয়ালা লোকটা আলিফকে জিজ্ঞাসা করলো।
রুদ্র আলিফের দিকে তাকালো। আলিফকে আগে কি কি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে রুদ্র জানেনা।
আলিফ মাথা নাড়িয়ে পুলিশকে উত্তর দিলো সে তাদের দেখলে চিনতে পারবে।
"আমরা তদন্ত করছি। যারা আপনাদের সাথে এমনটা করেছে তাদেরকে আমরা দ্রুতই সনাক্ত করে গ্রেফতার করবো।" ফর্সা লোকটা বলল। তার পাশে থাকা গোঁফওয়ালা লোকটাও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।
রুদ্র আলিফের দিকে তাকালো। আলিফ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। রুদ্র বুঝতে পেরে ডাক্তারকে ইশারা করলো।
আলিফকে দেখে ডাক্তার পুলিশদের বলল, "আজকে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না। রোগীর অবস্থা এখনো ভালো না।"
"তাহলে আজ আমরা চললাম। আবার কথা হবে আলিফ সাহেব। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। আপনার সুস্থ হয়ে উঠে এখন খুব জরুরি।" গোঁফওয়ালা পুলিশটা বলল।
পুলিশ বেড়িয়ে গেলে রুদ্র তাদের পিছে পিছে বেড়িয়ে এলো। সে ডাকলো, "শুনুন।"
দুইজনই রুদ্রের ডাক শুনে ঘুরে তাকালো।
"আমি রুদ্র। আলিফের বন্ধু।" রুদ্র কথাটা বলে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য।
"আমি আবির। কিছু বলবেন?"
"হ্যাঁ।" রুদ্র বলল।
"জি বলুন।"
"আসলে জানতে চাচ্ছিলাম কেসের অগ্রগতি কতদূর।"
"আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত আসামীদের সনাক্ত করার।" আবির বলল।
রুদ্র বুঝতে পারলো পুলিশ তাকে এই মুহুর্তে কোনো তথ্য বলতে চাচ্ছে না। সে বলল, "আপনাদের উপর বিশ্বাস আছে। এই রকম জঘন্য কাজ যারা করেছে আশা করি আপনারা তাদের দ্রুত গ্রেফতার করবেন।"
"ধন্যবাদ।" কথা বলেই তারা হেঁটে চলে গেল।
রুদ্রের বিষয়টা ভাল লাগলো না। তার মনে হলো পুলিশ কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছে। সে ঘটনা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আলিফের রুমে ফিরে এলো। এসে দেখে আলিফ আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। ডাক্তার তাকে আবার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছে। মাত্রই ডাক্তার বেরিয়ে গেলো।
বিকালে রিয়া এবং ইরিনা এলো আলিফকে দেখতে। হাসপাতালের নিচেই রুদ্রের সাথে তাদের দেখা হয়ে গেলো। রুদ্র হাসপাতালে পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। রুদ্রকে দেখেই ইরিনা এসে বলল, 'আলিফ আর নদীর কি খবর?"
ইরিনাকে বসতে বলে রুদ্র বলল, "ভাল না৷ কারোই হুস নেই। আলিফের হুস ফিরলে যন্ত্রণায় চিৎকার করে। তাই ডাক্তার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে ঘুম পারিয়ে রাখে। অন্য দিকে নদীর হুস ফিরলেও সজ্ঞানে থাকে না। একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। ডাক্তার বলেছে একটু সময় লাগবে দুইজনেরই সুস্থ হতে।"
"তোমার কি খবর?" ইরিনার পাশে বসে থাকা রিয়া বলল।
"ভালো।" রুদ্র নিষ্প্রাণ ভাবে উত্তর দিলো।
"তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি ভালো আছো? সারাদিন খাওয়া দাওয়া হয়ছে?" রিয়া আবার বলল।
"হ্যাঁ, খেয়েছি।" রুদ্র সংক্ষেপে উত্তর দিলো।
"কি খেয়েছ? চা আর সিগারেট?"
রুদ্র আর কোনো উত্তর দিলো না। রিয়াই বলল, "পুরোটা সময় কি হাসপাতালেই ছিলে?"
"উঁহু!" রুদ্র উত্তর দিলো।
"তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।" রিয়া থামলো। সে হাতটা বাড়ির টেবিলের উপর থাকা রুদ্রের হাতের উপর হাত রেখে বলল, "তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে? এভাবে চলতে থাকলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।"
"আমার কিচ্ছু হবে না।" রুদ্র কথাটা ভেঙে ভেঙে বলল। সে আবার বলল, "রিয়া, আলিফ আর নদীর এটা কি হয়ে গেলো? কেনো এমনটা হলো? মানুষ কি করে এতো পশু হতে পারে। ওদের বুকে কি কোনো দয়ামায়া নেই? এভাবে দুইটা মানুষকে প্রায় মেরেই ফেললো।" রুদ্র কন্ঠ এবার ভাড়ী শুনালো।
"মন খারাপ করিস না রুদ্র। সব ঠিক হয়ে যাবে।" ইরিনা বলল।
"কিচ্ছু ঠিক হবে না ইরিনা। আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিস না। আলিফের জ্ঞান ফিরলে বা ও সুস্থ হলে ওকে কি বলে বোঝাবো? ও নদীকে ভীষণ ভালোবাসে। নদীকে-ই বা কি করে স্বাভাবিক করবো। কিছুই ঠিক হবে না। কিছুই না!" রুদ্র প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে সে নিজেকে সামলে নিয়েছে।
রুদ্রের এই কথায় সবাই নিরব হয়ে গেলো।
"চলো রুদ্র!" রিয়ার কথায় নিরবতা ভাঙলো।
"কোথায় যাবো?" রুদ্র জানতে চাইলো৷
"তোমার বাসায়। বাসায় গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে আবার আসবো।" রিয়া বলল।
রুদ্র কিছু বলার আগেই ইরিনা বলল, "হ্যাঁ রুদ্র, বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। ভালো লাগবে। তোরা না আসা পর্যন্ত আমি এখানে আছি। চিন্তার কিছুই নেই।"
রিয়া ও ইরিনার জোড়াজুড়িতে রুদ্র অবশেষে যেতে বাধ্য হলো। একটা রিকসা ঠিক করে রিয়া ও রুদ্র চলে গেলে ইরিনা প্রথম গেলো নদীর রুমে। নদী ঘুমিয়ে আছে। তার পাশে তার মা বসে আছে। ইরিনা এগিয়ে গিয়ে বলল, "কেমন আছেন আন্টি?"
"ভালো না মা। তুমি কে? ঠিক চিনতে পারলাম না" নদীর মা জানতে চাইলো।
"আন্টি আমি ইরিনা, নদীর ফ্রেন্ড।"
"ওহ আচ্ছা। তুমি ভালো আছো?"
"হ্যাঁ, আন্টি আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?" ইরিনা কিছু না ভেবে আবারও আগের প্রশ্নটা করলো।
"কি আর বলবো মা। আমার জন্য আজ আমার মেয়ের কি থেকে কি হয়ে গেলো।" নদীর মা কেঁদে দিলো।
ইরিনা বলল, "আন্টি এভাবে ভেঙে পড়বেন না। আমাদের হাতে তো কিছুই নেই। তবে যারা এই কাজ করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে।"
"তারা শাস্তি পেলেই কি আমার মেয়েটা আগের জীবনটা ফিরে পাবে? পাবে না!" নদীর মা কান্নায় ভেঙে পড়লো।
ইরিনা আরো কাছে এসে নদীর মাকে জড়িয়ে ধরলো।
নিরব কান্নায় কিছুটা সময় কেটে গেলে ইরিনা রিয়াকে দেখে আলিফের রুমে এলো। আলিফও ঘুমিয়ে আছে। ইরিনার মন খারাপ হলো। দুইটা ভালোবাসার মানুষকে এভাবে, এই অবস্থায় দেখে যে কারোই চোখে জল চলে আসবে। ইরিনার চোখও ভিজে গেলো। কিন্তু সেই ভেজা চোখে আরো খানিকটা দুঃখ ঢেলে দিলো ফাহিমের বলা কথাগুলো। ইরিনা তার চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না। আলিফের রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদলো সে। সে তাকিয়ে আছে দূরের আকাশের দিকে।
ফাহিমের সাথে বেশকিছু দিন ধরেই ইরিনার ঝামেলা চলছিল। সেই ঝামেলা আরো বাড়ে যখন ইরিনার বাসা থেকে ইরিনার জন্য পাত্র ঠিক করে ফেলে। ইরিনা বারবার বলেছিল ফাহিমকে তার বাবার সাথে গিয়ে দেখা করার জন্য। কিন্তু ফাহিম রাজি হয় নি। ইরিনাও বাসায় ফাহিমের কথা বললে বাসা থেকে বিয়ের জন্য ইরিনাকে প্রেসার দেওয়া শুরু করে। সে কোনো ভাবেই বাসায় রাজি করাতে পারছিল না। অবশেষে যখন সে তার বাবাকে মোটামুটি রাজি করিয়ে ফেলল তখনই ফাহিমের কথাগুলো তার সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিলো।
ঢাকা ফিরেই পরের দিন ইরিনাকে দেখা করতে বলে ফাহিম। ইরিনা দেখা করতে এলে ফাহিম তাকে জানায়, সে স্কলারশিপ পেয়েছে। সে জার্মানি যেতে চায়। কথাটা শুনে প্রথমে ইরিনা খুশি হলেও পরক্ষণেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সে সেটা ফাহিমকে বুঝতে দেয় না। ফাহিমের চোখে মুখে উত্তেজনা, আনন্দ এবং তার হাসিমুখ দেখে সে আর জানাতে পারে না যে সে তার বাবাকে রাজি করিয়েছে তাদের বিয়ের জন্য।
"কংগ্রাচুলেশন।" ইরিনা নিষ্প্রাণ ভাবে ফাহিমকে বলে।
"তুমি কি খুশি হয়েছো?" ফাহিম জিজ্ঞেস করে।
"আমি কেন খুশি হবো না? আমি অনেক খুশি হয়েছি।"
"সত্যি বলছো?"
"মিথ্যা কেন বলব!"
"আমি ভেবেছিলাম তুমি মন খারাপ করবে।"
"এত খুশির একটা সংবাদ শুনে কেউ মন খারাপ করে?"
"তুমি সত্যি খুশি তো?"
"হ্যাঁ, আমি ভীষণ খুশি।" ইরিনা আবার বলল, "তাহলে কবে যাচ্ছো?"
"কাগজপত্র ঠিক করতে দুই মাস তো লাগবে আনুমানিক।"
"ওহ আচ্ছা।"
সেদিন ফাহিমের সাথে ইরিনার আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ কথা হয় নি। ফাহিম একটিবারও বলেনি, "তুমি কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে?" ফাহিম ধরেই নিয়েছে, ইরিনা অপেক্ষা করবে না। এই বিষয়টাই ইরিনাকে তীব্র কষ্ট দিয়েছে। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। ফাহিম তো তাকে একবার হলেও জিজ্ঞেস করবে, সে অপেক্ষা করবে কি-না? কিন্তু ফাহিম তেমন কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।
ইরিনার কান্না বেড়ে গেলো। ফাহিম কি করে এতো বদলে গেলো? যে মানুষটা তাকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারতো না সে আজ তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ইরিনা বহুকষ্টে নিজেকে সামলে নিলো। সে বাইরে বেরিয়ে এলো। খোলা বাতাসে তার একটু ভালো লাগছে। সে বাইরেই হাঁটাহাঁটি করলো বেশকিছু সময়। রুদ্র আর রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো।
"আমি এখানেই অপেক্ষা করছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে এসো।" রিকসা থেকে নেমে রিয়া কথাগুলো রুদ্রকে বলল।
"এখানে থাকবে মানে? বাসায় চলো। এখানে থেকে অপেক্ষা করতে হবে না।" রুদ্র জোর গলায় বলল।
"আমার কোন সমস্যা হবে না। হুট করে তোমার বাসায় গেলে কে কি ভাববে?"
"কেউ কিছু ভাববে না। এখানে একা একা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে না।"
রুদ্রের জোড়াজুড়িতে রিয়া প্রথমবারের মতো রুদ্রের বাসায় গেল। বাসায় যাওয়ার পর রুদ্র সবার সাথে রিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিল। সবাই বলতে তার মা আর তার বোন।
রিয়াকে বসতে বলে রুদ্র ফ্রেস হতে চলে গেল। রিয়া ডাইনিং রুমের সোফায় বসে ছিল। তার পাশে বসে আছে মিলি। সে রিয়াকে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখছে। জাহানারা রান্নাঘরে গেছে খাবার রেডি করতে।
"তুমি কি রুদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো?" মিলি আচমকা প্রশ্ন করে বসে রিয়াকে।
মিলির কাছ থেকে এরকম একটা প্রশ্ন রিয়া আশা করেনি৷ সে কিছু সময়ের জন্য থতমত হয়ে গেল। সে বলল, "তোমার কি মনে হয়?"
"আমার মনে হয় তুমি রুদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো!" মিলি মুখে হাসি এনে কথাটা বলল।
মিলির কথা শুনে রিয়া হেসে দিলো। সে বলল, "তোমার রুদ্র ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না!" কথাটা বলার সময় রিয়ার বুকের মধ্যে অদ্ভুত একটা কষ্ট হল।
"তাহলে কাকে ভালোবাসে?" মিলি আবার প্রশ্ন করল।
"আমিতো জানিনা।"
"তাহলে তুমি কি আমার রুদ্র ভাইয়ের বন্ধু?"
"তেমনটা ও না।"
"তাহলে?"
রিয়ার উত্তর দেওয়ার আগেই রুদ্র চলে এলো। রুদ্রের চুল ভেজা। তাকে দেখতে আগের থেকে অনেকটা ফ্রেশ লাগছে। সে যে টি-শার্টটা পরেছে সেটা এখানে সেখানে ভেজা। রুদ্র দ্রুত গোসল করে ভালোভাবে শরীরটাও মুছে নি। রুদ্রকে দেখতে অনেক আকর্ষনীয় লাগছে। রিয়া হঠাৎ রুদ্রের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। এত সুন্দর কারও দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যায় না।
রুদ্র হেঁটে এসে মিলির পাশে বসলো। সে রিয়াকে বলল, "তোমরা কি নিয়ে গল্প করছিলে?"
"তোমাকে নিয়ে।" রিয়া উত্তর দিলো।
"আমাকে নিয়ে?" রুদ্র আশ্চর্য হল। সে আবার বলল, "আমার নামে কি কি বদনাম করলে।"
"তোমাকে বলা যাবে না ভাইয়া।" মিলি কথাটা শেষ করে দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেল।
"রুদ্র, তোরা খেতে আয়।" জাহানারা ডাকলো।
"রিয়া, চলো খাবে।" রুদ্র বলল।
"আমি খাব না, আমি খেয়েই এসেছি।" রিয়া বলল।
"এটা বললে হবে না, তুমি প্রথম এসেছ আমাদের বাসায়। একটু তো খেতেই হবে।"
"প্লিজ রুদ্র রিকোয়েস্ট করো না।"
"তুমি কিছু না খেলে মা মন খারাপ করবে।"
রুদ্রের শেষের কথাটা রিয়া ফেলে দিতে পারল না।
রিয়া আর রুদ্র খাওয়া শেষ করেই বেড়িয়ে গেলো। খাওয়ার সময় রিয়ার সাথে জাহানারার দুই একটা কথা হল। জাহানারা তাকে আবার আসতে বলল। রিয়া আসবে বলে কথা দিয়েছে।
রিয়া আর রুদ্র হাসপাতালে পৌঁছেই খবরটা পেলো। যে চারজন নদী এবং আলিফের সাথে এরকম জঘন্য কাজ করেছে তাদের মধ্যে পুলিশ দুইজনকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করেছে। খবরটা শুনে সবাই খুশি হলো। কিন্তু পুরো ঘটনাটা শোনার জন্য সবাই আলিফ এবং নদীর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করতে থাকলো।
চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)