19-06-2023, 10:39 PM
পর্বঃ২৮
"ফাহিম, এই ফাহিম।" ইরিনা ডাকলো।
ফাহিম ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর দিলো, "উঁহু!"
"কত ঘুমাবে?" ইরিনা বিরক্ত কন্ঠে বলল।
"মাত্রই তো ঘুমালাম।" ফাহিমের চোখে ঘুম।
"লঞ্চে উঠেই তো ঘুমাই গেলে। এদিকে আমি একা বসে আছি। আমার ভাল লাগছে না।"
"একা কেনো? রিয়া ও রুদ্র কোথায়?" ফাহিম মাথা উঠিয়ে, চোখ ডলতে ডলতে জিজ্ঞেস করলো। সে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে।
"তারা কেউ নেই। কোথায় আছে তাও জানিনা।"
"জানো না মানে? বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে।"
"সেটা তো আমিও জানি।"
"তাহলে, কোথায় ওঁরা?"
"হয়তো, ভিজছে দুজনে!"
"এই সময়? জ্বর আসবে তো।"
"এলে আসবে।"
"কি হয়েছে তোমার?"
"কি হবে?"
"এরকম ভাবে কথা বলছ কেনো?"
"কেমন করে?"
"আচ্ছা বাদ দেও। ভাল লাগছে না এখন ঝগড়া করতে।"
"আমি ঝগড়া করছি?" ইরিনা এবার আরো বেশি রেগে গেল।
"আমি সেভাবে বলিনি।"
"তাহলে কীভাবে বলেছ? আমি সবসময় ঝগড়া করি, এটা বুঝাতে চাচ্ছ?"
"আমি সেটাও বলিনি।"
"তুমি সেটাই বুঝিয়েছ। আমার কাজ তো ঝগড়া করা।"
ফাহিম আর কিছু বলল না। সে চুপচাপ রইলো। ইরিনার কোনো কারণে মুড খারাপ, ফাহিম সেটা বুঝতে পারছে। সে এটাও জানে, এখন সে কথা বাড়ালে একটা ঝামেলা হয়ে যাবে। তারচেয়ে বরং চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
"কি হলো, কথা বলছ না কেনো? ইরিনা বলল।
"কেবিনের মধ্যে আর ভালো লাগছে না। চলো বাইরে থেকে হেঁটে আসি। বৃষ্টি কমে গেছে।" ফাইম কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে কথাটা বলল।
ইরিনাও আর কথা বাড়ালো না। তারও ইচ্ছে করছে বাইরে যেতে। সে তো এটাই চেয়েছিল। কিন্তু তাকে একা রেখে ফাহিম এসেই ঘুম। সে বোকার মত বসে ছিল এতো সময়। এই কারণেই তার মুড অফ হয়ে আছে। তার একটুও ভালো লাগছে না।
ইরিনারা বাইরে বেরুতেই রুদ্র ও রিয়াকে দেখলো। তারা একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজনেই ভিজে একাকার। রিয়ার হাতটা রুদ্রের হাতের ভেতর রাখা।
ইরিনা ডাকলো, "রিয়া!"
রুদ্রের হাতের ভেতর থেকে রিয়া দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। দুইজনে সামান্য সড়ে দাঁড়ালো। তারপর নিজেদের গুছিয়ে নিলো।
"হ্যাঁ বল ইরিনা।" রিয়া বলল।
"তোরা তো একদম ভিজে গেছিস। ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে নে, নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে৷" ইরিনা বলল।
"ওহ হ্যাঁ। এইতো যাচ্ছি।" রিয়া বলল।
'রুদ্র, তুইও।" ইরিনা বলল।
রিয়া এবং রুদ্র কেবিনের দিকে গেলো। ফাহিম ও ইরিনা রেলিংএর দিকে হেঁটে এসে দাঁড়ালো। বাইরে বাতাস ঠান্ডা। শরীরে কাটা দিচ্ছে। সামান্য শীত শীত করছে। ফাহিম হঠাৎ ইরিনার হাত ধরে টেনে নিয়ে মুঠোয় ভরে নিলো। ইরিনা কিছু বলল না। সে এগিয়ে এসে ফাহিমের সাথে মিশে দাঁড়ালো।
রিয়া এসেই ওয়াশরুমে চলে গেলো ভেজা কাপড় চেঞ্জ করতে। এই ফাঁকে রুদ্র কেবিনের মধ্যেই দ্রুত কাপড় চেঞ্জ করার জন্য শার্ট খুললো। যখনই প্যান্ট খুলতে যাবে তখনই হঠাৎ রিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। তাৎক্ষণিক ঘটনায় রিয়া রুদ্রকে দেখে লজ্জা পেয়ে সে আবার ওয়াশরুমে ঢুলে গেলো। রুদ্রও অনেক লজ্জা পেলো। ভাগ্য ভাল, সে প্যান্টটা তখনও খুলেনি। সে ভেবেছিল, রিয়ার চেঞ্জ হতে সময় লাগবে। কিন্তু রিয়া চেঞ্জ না করেই বেরিয়ে এসেছে।
"ভেতরে আসতে পারি?" রিয়া ওয়াশরুমের ভেতর থেকে রুদ্রকে বলল।
"হ্যাঁ, অবশ্যই।" রুদ্র ইতিমধ্যেই ব্যাগ থেকে লুঙ্গি বের করে ল্যান্ট পরে নিয়েছে। সেই সাথে একটা টি-শার্টও গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে।
রিয়া আবার বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। সে বলল, "সরি!"
"সমস্যা নেই।" রুদ্র লজ্জাজড়িত কন্ঠে বলল। সে আবার বলল, "তুমি চেঞ্জ করো নি কেনো?"
"একটা কাপড় নিতে ভুলে গেছি। তাই তখন সেটা নিতেই বের হয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারিনি তুমি এখানেই চেঞ্জ করবে।" রিয়া বলল।
"কি কাপড়?" কথার প্রসঙ্গে রুদ্র জিজ্ঞেস করল। সে আর আগের প্রসঙ্গে গেলো না।
"মেয়েদের কাপড়।" রিয়া ভদ্রতার সাথে উত্তর দিলো।
রুদ্র বুঝতে পেরে আর কিছুই বলল না।
রিয়া তার ব্যাগ থেকে তার প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে আবার ওয়াশরুম দ্রুত ঢুকে গেলো।
রুদ্র অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল। তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। কেনো লাগছে সে জানেনা।
রিয়া বেড়িয়ে এলো মিনিট দশেক পরে। হলুদ রঙের একটা ড্রেস পরেছে রিয়া। ভেজা চুল। রিয়াকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। রুদ্র এক দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়া সেটা বুঝতে পেরেও সে একবারও রুদ্রের দিকে তাকায় নি। সে সোজা তার খাটের দিকে হেঁটে গেলো। ব্যাগ থেকে একটা টিপ বের করে কপালে পরলো। ঠোঁটে হালকা লিপিস্টিক দিলো। মুখে ক্রিম মাখালো। তারপর চিরুনি বের করে চুল আছড়াতে আছড়াতে রুদ্রের দিকে ফিরলো। রুদ্র তখনও তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাদের চোখাচোখি হলো।
রুদ্র কিছু একটা বলতে যাবে ওমনি দরজা দিয়ে ইরিনা আর ফাহিম ঢুকলো৷ সে কথাটা আর বলল না।
"অনেক রাত হয়েছে। তোদের ঘুম আসে নি?" ইরিনা বলল।
রিয়া বলল, "আমার প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।"
"ঘুমিয়ে পড়ো। ভালো লাগবে।" রুদ্র বলল।
"তাহলে তোরা ঘুমা। আমি আর রুদ্র চলে যাচ্ছি। ব্যাগ-ট্যাগ এখানেই থাকুক।" ফাহিম বলল।
"আচ্ছা। সকালে দেখা হবে।" ইরিনা বলল।
"সকালে তো আমরা পৌঁছে যাবো।" ফাহিম বলল।
"শুভ রাত্রি।" ইরিনা বলল।
"শুভ রাত্রি।" একসাথেই ফাহিম ও রুদ্র বলে বেরিয়ে গেলো।
হুট করে টিকেট কাটার জন্য তারা একটা কেবিন পেয়েছে। বাকীগুলো আগে থেকেই বুকিং করা ছিল। তখন রিয়া এবং ইরিনার জন্য কেবিন নিলেও রুদ্র, ফাহিম ও আলিফের জন্য রুদ্র নিজেই ডেকে টিকিট কেটেছে। এক রাতের ব্যাপার, তাই এতো প্যারা নেয় নি। কিন্তু আলিফ শেষ পর্যন্ত এলো না।
রুদ্র কেবিন থেকে বেরিয়ে এসেই একটা সিগারেট ধরালো। তার পাশে ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্রের অর্ধেক সিগারেট খাওয়া হলে ফহিম বলল, "আমাকে একটু দে তো।"
"সিগারেট খাবি?" রুদ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। সে আবার বলল, "হঠাৎ, তুই তো সিগারেট খান না!"
"ইচ্ছে করছে।"
রুদ্র সিগারেটটা ফাহিমকে দিয়ে বলল, "তোর কি মন খারাপ?
"মন খারাপ না। প্যারায় আছি রে। রিলেশন মানেই ভীষণ একটা প্যারা। আর ভালো লাগে না।"
"ইরিনার সাথে আবার ঝামেলা হয়েছে?"
"কি আর বলন। ঝামেলা আমাদের ছাড়েই না। সম্পর্কটা এই ভালো, এই খারাপ।"
"কি হয়েছে?"
"মধ্যবিত্ত ভালোবাসায় যা হয়।"
"এই সব হবেই। মান অভিমান ছাড়া কি ভালোবাসা পূর্ণতা পায়?"
"না রে, সেটা বেপার না। কিন্তু ইরিনা চাচ্ছে এখনই ওর বাবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে। তুই বল রুদ্র, আমি এখন কিভাবে ইরিনার বাবার সাথে দেখা করি। এদিকে ওর জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। দুঃসম্পর্কের এক কাজিনের সাথে ওর বিয়ের কথাবার্তা প্রায় ঠিক। এখন আমি কি করবো? আমি এদিকেও যেতে পারছি না, ওদিকেও যেতে পারছি না। ঠিক মাঝে আটকে পড়েছি।" এটুকু বলে ফাহিম থামলো।
রুদ্র আরেকটা সিগারেট বের করে ধরালো।
ফাহিম অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল, "একটা কথা এখনো ইরিনাকে বলিনি।"
"কি কথা?" রুদ্র জানতে চাইলো।
"আমি স্কলারশিপ পেয়েছি। এপ্লাই করেছিলাম, ভাবিনি যে পেয়ে যাবো।" ফাহিম বলল।
"কনগ্রাচুলেশন!"
"এখন আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানিতে চলে গেলে আমাদের সম্পর্কে পরিণতি কি হবে? ইরিনার কি হবে? এতোদিন ইরিনা কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে? এমনিতেই ইরিনার বাবা-মা চাচ্ছে দ্রুত ওর বিয়েটা দিয়ে দিতে। এই জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার কথাটা আমি ইরিনাকে কয়েকবার বলতে চেয়েও পারি নি।"
"কি বলব আমি বুঝে উঠতে পারছি না। তবে আমি বলল, স্কলারশিপ পাওয়ার খবরটা তুই ইরিনাকে বল। ইরিনা বুঝবে। এটা আমার বিশ্বাস। এতো খুশির একটা খবর। এভাবে কাউকে না বলে আছিস কীভাবে?"
"আমি নিজেই সিন্ধান্ত নিতে পারছি না, এই মুহুর্তে আমার করনীয় কি!"
"তোর মন কি চাচ্ছে?"
"সত্যি বলতে আমি স্কলারশিপটা নিতে চাচ্ছি। কিন্তু এটা চাইলে, ইরিনাকে ছেড়ে দেওয়া লাগে। আমি সেটা করতে পারবো না। আমি ওকে প্রচন্ড ভালোবাসি।"
"সেটা আমরা সবাই জানি। তুই আগে ইরিনাকে সবকিছু ভেঙে বুঝিয়ে বল। তুই দেখ ও কি বলে। তারপর সিন্ধান্ত নিস।"
"হুম সেটাই করবো। ঢাকায় ফিরেই ইরিনাকে সবকিছু ভেঙে বুঝিয়ে বলবো।"
"হ্যাঁ, সেটাই কর।"
"চল, গিয়ে একটু রেস্ট নেই।"
"আচ্ছা চল।"
রুদ্ররা বরিশাল পৌঁছালো সকালে। বরিশাল নেমেই সাত্যকিকে কল করলো ইরিনা। সাত্যকির বলা ঠিকানায় যাওয়া জন্য একটা অটো ঠিক করলো।
অটো চলছে। সকালের মৃদু বাতাস এসে সবাইকে শীতল করে দিচ্ছে। তিরিশ মিনিটের মধ্যে তারা যথাস্থানে পৌঁছে গেলো। অটো থেকে নেমে ইরিনা আবার সাত্যকিকে ফোন দিলো।
"আমরা চলে এসেছি। এখন কি করবো?" ইরিনা বলল।
"তোরা যেখানেই আছিস সেখানে একটু অপেক্ষা কর। আমার এক কাজিন গেছে, তোদের নিয়ে আসার জন্য। আমিই আসতাম, কিন্তু আজ গায়ে হলুদ তাই আমাকে বের হতে দেই নি।" সাত্যকি বলল।
"আরে সমস্যা নেই।" ইরিনা বলল।
"আচ্ছা, ফোন রাখ। আমি ওকে তোর নাম্বার দিয়েছি। তোকে কল দিবে।"
"আচ্ছা।"
ইরিনা ফোন কাটতে কাটতে তার ফোনে ফোন এলো। সে রিসিভ করলো।
"হ্যালো!" ইরিনা বলল।
"নমস্কার। ইরিনা দিদি বলছেন?"
"হ্যাঁ।"
"আমি রাকিব। সাত্যকি দিদি আপনার নাম্বার দিয়েছে।" রাকিব বলল।
"ওহ, আচ্ছা। কোথায় তুমি?" ইরিনা বলল।
"আমিতো স্ট্যান্ডেই। আপনারা কোথায়?" রাকিব বলল।
"অটো যেখানে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে সেখানেই।" ইরিনা আশেপাশে তাকালো। সে আবার বলল, "বিসমিল্লাহ ভাতের হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।"
"ওহ আচ্ছা। আপনারা ওখানেই থাকেন। আমি এক মিনিটের মধ্যে আসছি।"
"আচ্ছা, আসো।"
রাকিব এক মিনিটের আগেই চলে এলো। সে এসেই হাঁপাচ্ছে। সবাই বুঝতে পারলো, রাকিব দৌড়ে এসেছে।
"পানি খাও।" রুদ্র হাতে থাকা পানির বোতলটা রাকিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল।
রাকিব পানি খেলো। তারপর সবাইকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা করলো।
"কত সময় লাগবে?" ফাহিম জিজ্ঞেস করলো।
"হেঁটে যেতে পাঁচ মিনিট লাগবে।" রাকিব উত্তর দিলো।
বাড়ির কাছে যেতেই দেখলো গেটে সাত্যকি দাঁড়িয়ে আছে। ইরিনা ছুঁটে গিয়ে সাত্যকিকে জড়িয়ে ধরলো। তার পিছে সবাই এলো। রিয়াও সাত্যকিকে জড়িয়ে ধরলো।
"আলিফ কোথায়?" সাত্যকি জিজ্ঞেস করল।
"ও আসে নি।" রুদ্র উত্তর দিলো।
"আসে নি মানে?"
রুদ্র সংক্ষেপে সবটাই বলল সাত্যকিকে।
সাত্যকি সবটা শুনে মন খারাপ করলো।
"আলিফকে একটা কল দিয়ে চলে আসতে বল। আজ তো গায়ে হলুদ। কাল বিয়ে। অন্তত বিয়েতে যেনো আসে।" সাত্যকি বলল।
"ওকে তো ফোনেও পাচ্ছি না।" রুদ্র বলল।
"তবুও একটা কল দিয়ে দেখ।" সাত্যকি বলল।
আলিফের নাম্বারে রুদ্র কল দিলো। নাম্বার বন্ধ। রাতে কল ঢুকেছে। এখন নাম্বার বন্ধ বলছে। রুদ্রের রাগ হলো। আলিফ এমন করবে কেউই ভাবেনি। রুদ্র কয়েকবার কল দিয়ে ফোন বন্ধ পেয়ে রাগে আর ফোন দিলো না।
"আচ্ছা, ওকে না হয় পরে কল দেওয়া যাবে। তোরা ভেতরে চল। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।"
সাত্যকির গায়ে হলুদ শুরু হলো সন্ধ্যার দিকে। রুদ্র, রিয়া, ইরিনা এবং ফাহিম এগারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে। ঘুম থেকে উঠলে সাত্যকি এসে তাদের নিয়ে বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তারপর তারা বাড়িটা ঘুরেফিরে দেখেছে। রাকিব সবাইকে নিয়ে তাদের এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। রাকিব বয়সে ছোট হলেও অল্প সময়ে সবার সাথে ভাল একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে হয়েছে।
গায়ে হলুদ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নাচ গান আয়োজন করা হয়। বরকে ও নিতবরকে সারা গায়ে যে হলুদ মাখানো হয় সেটা দিয়েই কন্যাকে হলুদ মাখানো হয়েছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়। তারপরও নাচা-গানা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। রুদ্র, রিয়া, ফাহিম নাচলেও ইরিনা একটা গান পরিবেশন করে। ইরিনার গান শুনে সবাই দারুণ প্রসংশা করেছে৷ সাত্যকির এক মামা মুগ্ধ হয়ে ইরিনাকেও বকশিসও দিয়েছে। ইরিনা নিবেনে, তবুও সবার অনুরোধে নিতে বাধ্য হয়েছে।
রাতটা হাসি আনন্দে দ্রুত চলে গেলো৷ রুদ্র সন্ধ্যার দিকে আলিফকে আরো কয়েকবার কল দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। আলিফের ফোন বন্ধ। রুদ্রের রাগটা এখন টেনশনে রুপান্তর হলেও সে সেটাকে তেমন গুরুত্ব দেয় নি। আলিফ মাঝেমাঝে এমন করে। মন খারাপ থাকলে ফোন বন্ধ করে রাখে।
পরদিন সকাল থেকেই বিয়ের আমেজ শুরু হয়। পুরো বাড়ি লোকে ভর্তি। সবাই বিভিন্ন কাজ করছে। শুধু রুদ্রদের কোনো কাজ নেই। তারা ঘুরেফিরে সবকিছু দেখছে। শুধু রিয়া এবং ইরিনা সাত্যকিকে নিয়ে পার্লারে গিয়েছে।
বর বরণের মাধ্যমে বিবাহের মূল অনুষ্ঠান শুরু হলো বিকালে। তারপর একে একে সাত পাক, বিভাহোমা, শুভদৃষ্টি, মালা বদল, সম্প্রদান, অঞ্জলি, সিঁদুর দানের মাধ্যমে বিবাহ সম্পূর্ণ হয়েছে। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেছে। সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে সাত্যকির বিয়ে দেখেছে৷ সবাই অনেক মজা করেছে।
রুদ্রদের লঞ্চের টিকেট কাটা। তার আজ রাতেই ঢাকায় ফিরবে। সাত্যকি চলে গেলে তারাও বেরিয়ে পরলো ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তারা সাত্যকির বাসা থেকে বেরিয়ে বাজারে এসে চা খেতে বসলো। ঠিক তখন চায়ের দোকানের টিভিতে নিউজের চ্যানেলে একটা খবর দেখে রুদ্র, রিয়া, সাত্যকি ও ফাহিমের গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলো। তারা তাদের চোখ কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। টিভিতে এই মুহুর্তে এক যুবকের ছবি ভেসে উঠেছে এবং বলা হচ্ছে, "প্রেমিক প্রেমিকাকে জিম্মি করে প্রেমিকাকে গন''. এবং প্রেমিককে ভয়ংকর ভাবে মারধর করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ভয়ংকর কাজ কারা করেছে এখনো সেটা স্পষ্ট ভানে জানা যায় নি। দুইজনেই এই মুহুর্তে হাসপাতালে ভর্তি। তারা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।"
খবরটা শুনে রুদ্র স্থির থাকতে পারছে না। টিভিতে দেখানো ছবিটা আলিফের। তাহলে আলিফের সাথে নদী ছিল। নদীকে কিছু অমানুষ গন''. করেছে। কথাটা ভাবতেই রুদ্রের সম্পূর্ণ শরীর রাগে ঘিনঘিন করে উঠলো সেই সব অমানুষের প্রতি। অন্য দিকে বুক ফেটে তার কান্না আসছে আলিফের জন্য, নদীর জন্য। রুদ্র সত্যি সবাইকে অবাক করে দিয়ে কেঁদে ফেললো। রিয়া, ইরিনা ও ফাহিম সবাই-ই রুদ্রকে শান্তনা দিলেও কাজ হলো না। তারাও সবাই শোকে কাতর। কে কাকে সামলাবে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না।
রুদ্র দ্রুত ঢাকায় যেতে চাচ্ছে। কয়েকবার সে বলেছে, "সে বাসে করে চলে যাবে।" কিন্তু রুদ্রকে একা কেউ ছাড়েনি। এছাড়াও ঘন্টাখানেক পরে তাদের লঞ্চ। তাই সবাই রুদ্রকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখে দিলো। তারা এখন সবাই-ই চাচ্ছে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছাতে।
চলবে.....!
"ফাহিম, এই ফাহিম।" ইরিনা ডাকলো।
ফাহিম ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর দিলো, "উঁহু!"
"কত ঘুমাবে?" ইরিনা বিরক্ত কন্ঠে বলল।
"মাত্রই তো ঘুমালাম।" ফাহিমের চোখে ঘুম।
"লঞ্চে উঠেই তো ঘুমাই গেলে। এদিকে আমি একা বসে আছি। আমার ভাল লাগছে না।"
"একা কেনো? রিয়া ও রুদ্র কোথায়?" ফাহিম মাথা উঠিয়ে, চোখ ডলতে ডলতে জিজ্ঞেস করলো। সে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে।
"তারা কেউ নেই। কোথায় আছে তাও জানিনা।"
"জানো না মানে? বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে।"
"সেটা তো আমিও জানি।"
"তাহলে, কোথায় ওঁরা?"
"হয়তো, ভিজছে দুজনে!"
"এই সময়? জ্বর আসবে তো।"
"এলে আসবে।"
"কি হয়েছে তোমার?"
"কি হবে?"
"এরকম ভাবে কথা বলছ কেনো?"
"কেমন করে?"
"আচ্ছা বাদ দেও। ভাল লাগছে না এখন ঝগড়া করতে।"
"আমি ঝগড়া করছি?" ইরিনা এবার আরো বেশি রেগে গেল।
"আমি সেভাবে বলিনি।"
"তাহলে কীভাবে বলেছ? আমি সবসময় ঝগড়া করি, এটা বুঝাতে চাচ্ছ?"
"আমি সেটাও বলিনি।"
"তুমি সেটাই বুঝিয়েছ। আমার কাজ তো ঝগড়া করা।"
ফাহিম আর কিছু বলল না। সে চুপচাপ রইলো। ইরিনার কোনো কারণে মুড খারাপ, ফাহিম সেটা বুঝতে পারছে। সে এটাও জানে, এখন সে কথা বাড়ালে একটা ঝামেলা হয়ে যাবে। তারচেয়ে বরং চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
"কি হলো, কথা বলছ না কেনো? ইরিনা বলল।
"কেবিনের মধ্যে আর ভালো লাগছে না। চলো বাইরে থেকে হেঁটে আসি। বৃষ্টি কমে গেছে।" ফাইম কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে কথাটা বলল।
ইরিনাও আর কথা বাড়ালো না। তারও ইচ্ছে করছে বাইরে যেতে। সে তো এটাই চেয়েছিল। কিন্তু তাকে একা রেখে ফাহিম এসেই ঘুম। সে বোকার মত বসে ছিল এতো সময়। এই কারণেই তার মুড অফ হয়ে আছে। তার একটুও ভালো লাগছে না।
ইরিনারা বাইরে বেরুতেই রুদ্র ও রিয়াকে দেখলো। তারা একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজনেই ভিজে একাকার। রিয়ার হাতটা রুদ্রের হাতের ভেতর রাখা।
ইরিনা ডাকলো, "রিয়া!"
রুদ্রের হাতের ভেতর থেকে রিয়া দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। দুইজনে সামান্য সড়ে দাঁড়ালো। তারপর নিজেদের গুছিয়ে নিলো।
"হ্যাঁ বল ইরিনা।" রিয়া বলল।
"তোরা তো একদম ভিজে গেছিস। ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে নে, নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে৷" ইরিনা বলল।
"ওহ হ্যাঁ। এইতো যাচ্ছি।" রিয়া বলল।
'রুদ্র, তুইও।" ইরিনা বলল।
রিয়া এবং রুদ্র কেবিনের দিকে গেলো। ফাহিম ও ইরিনা রেলিংএর দিকে হেঁটে এসে দাঁড়ালো। বাইরে বাতাস ঠান্ডা। শরীরে কাটা দিচ্ছে। সামান্য শীত শীত করছে। ফাহিম হঠাৎ ইরিনার হাত ধরে টেনে নিয়ে মুঠোয় ভরে নিলো। ইরিনা কিছু বলল না। সে এগিয়ে এসে ফাহিমের সাথে মিশে দাঁড়ালো।
রিয়া এসেই ওয়াশরুমে চলে গেলো ভেজা কাপড় চেঞ্জ করতে। এই ফাঁকে রুদ্র কেবিনের মধ্যেই দ্রুত কাপড় চেঞ্জ করার জন্য শার্ট খুললো। যখনই প্যান্ট খুলতে যাবে তখনই হঠাৎ রিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। তাৎক্ষণিক ঘটনায় রিয়া রুদ্রকে দেখে লজ্জা পেয়ে সে আবার ওয়াশরুমে ঢুলে গেলো। রুদ্রও অনেক লজ্জা পেলো। ভাগ্য ভাল, সে প্যান্টটা তখনও খুলেনি। সে ভেবেছিল, রিয়ার চেঞ্জ হতে সময় লাগবে। কিন্তু রিয়া চেঞ্জ না করেই বেরিয়ে এসেছে।
"ভেতরে আসতে পারি?" রিয়া ওয়াশরুমের ভেতর থেকে রুদ্রকে বলল।
"হ্যাঁ, অবশ্যই।" রুদ্র ইতিমধ্যেই ব্যাগ থেকে লুঙ্গি বের করে ল্যান্ট পরে নিয়েছে। সেই সাথে একটা টি-শার্টও গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে।
রিয়া আবার বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। সে বলল, "সরি!"
"সমস্যা নেই।" রুদ্র লজ্জাজড়িত কন্ঠে বলল। সে আবার বলল, "তুমি চেঞ্জ করো নি কেনো?"
"একটা কাপড় নিতে ভুলে গেছি। তাই তখন সেটা নিতেই বের হয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারিনি তুমি এখানেই চেঞ্জ করবে।" রিয়া বলল।
"কি কাপড়?" কথার প্রসঙ্গে রুদ্র জিজ্ঞেস করল। সে আর আগের প্রসঙ্গে গেলো না।
"মেয়েদের কাপড়।" রিয়া ভদ্রতার সাথে উত্তর দিলো।
রুদ্র বুঝতে পেরে আর কিছুই বলল না।
রিয়া তার ব্যাগ থেকে তার প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে আবার ওয়াশরুম দ্রুত ঢুকে গেলো।
রুদ্র অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল। তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। কেনো লাগছে সে জানেনা।
রিয়া বেড়িয়ে এলো মিনিট দশেক পরে। হলুদ রঙের একটা ড্রেস পরেছে রিয়া। ভেজা চুল। রিয়াকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। রুদ্র এক দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়া সেটা বুঝতে পেরেও সে একবারও রুদ্রের দিকে তাকায় নি। সে সোজা তার খাটের দিকে হেঁটে গেলো। ব্যাগ থেকে একটা টিপ বের করে কপালে পরলো। ঠোঁটে হালকা লিপিস্টিক দিলো। মুখে ক্রিম মাখালো। তারপর চিরুনি বের করে চুল আছড়াতে আছড়াতে রুদ্রের দিকে ফিরলো। রুদ্র তখনও তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাদের চোখাচোখি হলো।
রুদ্র কিছু একটা বলতে যাবে ওমনি দরজা দিয়ে ইরিনা আর ফাহিম ঢুকলো৷ সে কথাটা আর বলল না।
"অনেক রাত হয়েছে। তোদের ঘুম আসে নি?" ইরিনা বলল।
রিয়া বলল, "আমার প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।"
"ঘুমিয়ে পড়ো। ভালো লাগবে।" রুদ্র বলল।
"তাহলে তোরা ঘুমা। আমি আর রুদ্র চলে যাচ্ছি। ব্যাগ-ট্যাগ এখানেই থাকুক।" ফাহিম বলল।
"আচ্ছা। সকালে দেখা হবে।" ইরিনা বলল।
"সকালে তো আমরা পৌঁছে যাবো।" ফাহিম বলল।
"শুভ রাত্রি।" ইরিনা বলল।
"শুভ রাত্রি।" একসাথেই ফাহিম ও রুদ্র বলে বেরিয়ে গেলো।
হুট করে টিকেট কাটার জন্য তারা একটা কেবিন পেয়েছে। বাকীগুলো আগে থেকেই বুকিং করা ছিল। তখন রিয়া এবং ইরিনার জন্য কেবিন নিলেও রুদ্র, ফাহিম ও আলিফের জন্য রুদ্র নিজেই ডেকে টিকিট কেটেছে। এক রাতের ব্যাপার, তাই এতো প্যারা নেয় নি। কিন্তু আলিফ শেষ পর্যন্ত এলো না।
রুদ্র কেবিন থেকে বেরিয়ে এসেই একটা সিগারেট ধরালো। তার পাশে ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্রের অর্ধেক সিগারেট খাওয়া হলে ফহিম বলল, "আমাকে একটু দে তো।"
"সিগারেট খাবি?" রুদ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। সে আবার বলল, "হঠাৎ, তুই তো সিগারেট খান না!"
"ইচ্ছে করছে।"
রুদ্র সিগারেটটা ফাহিমকে দিয়ে বলল, "তোর কি মন খারাপ?
"মন খারাপ না। প্যারায় আছি রে। রিলেশন মানেই ভীষণ একটা প্যারা। আর ভালো লাগে না।"
"ইরিনার সাথে আবার ঝামেলা হয়েছে?"
"কি আর বলন। ঝামেলা আমাদের ছাড়েই না। সম্পর্কটা এই ভালো, এই খারাপ।"
"কি হয়েছে?"
"মধ্যবিত্ত ভালোবাসায় যা হয়।"
"এই সব হবেই। মান অভিমান ছাড়া কি ভালোবাসা পূর্ণতা পায়?"
"না রে, সেটা বেপার না। কিন্তু ইরিনা চাচ্ছে এখনই ওর বাবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে। তুই বল রুদ্র, আমি এখন কিভাবে ইরিনার বাবার সাথে দেখা করি। এদিকে ওর জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। দুঃসম্পর্কের এক কাজিনের সাথে ওর বিয়ের কথাবার্তা প্রায় ঠিক। এখন আমি কি করবো? আমি এদিকেও যেতে পারছি না, ওদিকেও যেতে পারছি না। ঠিক মাঝে আটকে পড়েছি।" এটুকু বলে ফাহিম থামলো।
রুদ্র আরেকটা সিগারেট বের করে ধরালো।
ফাহিম অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল, "একটা কথা এখনো ইরিনাকে বলিনি।"
"কি কথা?" রুদ্র জানতে চাইলো।
"আমি স্কলারশিপ পেয়েছি। এপ্লাই করেছিলাম, ভাবিনি যে পেয়ে যাবো।" ফাহিম বলল।
"কনগ্রাচুলেশন!"
"এখন আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানিতে চলে গেলে আমাদের সম্পর্কে পরিণতি কি হবে? ইরিনার কি হবে? এতোদিন ইরিনা কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে? এমনিতেই ইরিনার বাবা-মা চাচ্ছে দ্রুত ওর বিয়েটা দিয়ে দিতে। এই জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার কথাটা আমি ইরিনাকে কয়েকবার বলতে চেয়েও পারি নি।"
"কি বলব আমি বুঝে উঠতে পারছি না। তবে আমি বলল, স্কলারশিপ পাওয়ার খবরটা তুই ইরিনাকে বল। ইরিনা বুঝবে। এটা আমার বিশ্বাস। এতো খুশির একটা খবর। এভাবে কাউকে না বলে আছিস কীভাবে?"
"আমি নিজেই সিন্ধান্ত নিতে পারছি না, এই মুহুর্তে আমার করনীয় কি!"
"তোর মন কি চাচ্ছে?"
"সত্যি বলতে আমি স্কলারশিপটা নিতে চাচ্ছি। কিন্তু এটা চাইলে, ইরিনাকে ছেড়ে দেওয়া লাগে। আমি সেটা করতে পারবো না। আমি ওকে প্রচন্ড ভালোবাসি।"
"সেটা আমরা সবাই জানি। তুই আগে ইরিনাকে সবকিছু ভেঙে বুঝিয়ে বল। তুই দেখ ও কি বলে। তারপর সিন্ধান্ত নিস।"
"হুম সেটাই করবো। ঢাকায় ফিরেই ইরিনাকে সবকিছু ভেঙে বুঝিয়ে বলবো।"
"হ্যাঁ, সেটাই কর।"
"চল, গিয়ে একটু রেস্ট নেই।"
"আচ্ছা চল।"
রুদ্ররা বরিশাল পৌঁছালো সকালে। বরিশাল নেমেই সাত্যকিকে কল করলো ইরিনা। সাত্যকির বলা ঠিকানায় যাওয়া জন্য একটা অটো ঠিক করলো।
অটো চলছে। সকালের মৃদু বাতাস এসে সবাইকে শীতল করে দিচ্ছে। তিরিশ মিনিটের মধ্যে তারা যথাস্থানে পৌঁছে গেলো। অটো থেকে নেমে ইরিনা আবার সাত্যকিকে ফোন দিলো।
"আমরা চলে এসেছি। এখন কি করবো?" ইরিনা বলল।
"তোরা যেখানেই আছিস সেখানে একটু অপেক্ষা কর। আমার এক কাজিন গেছে, তোদের নিয়ে আসার জন্য। আমিই আসতাম, কিন্তু আজ গায়ে হলুদ তাই আমাকে বের হতে দেই নি।" সাত্যকি বলল।
"আরে সমস্যা নেই।" ইরিনা বলল।
"আচ্ছা, ফোন রাখ। আমি ওকে তোর নাম্বার দিয়েছি। তোকে কল দিবে।"
"আচ্ছা।"
ইরিনা ফোন কাটতে কাটতে তার ফোনে ফোন এলো। সে রিসিভ করলো।
"হ্যালো!" ইরিনা বলল।
"নমস্কার। ইরিনা দিদি বলছেন?"
"হ্যাঁ।"
"আমি রাকিব। সাত্যকি দিদি আপনার নাম্বার দিয়েছে।" রাকিব বলল।
"ওহ, আচ্ছা। কোথায় তুমি?" ইরিনা বলল।
"আমিতো স্ট্যান্ডেই। আপনারা কোথায়?" রাকিব বলল।
"অটো যেখানে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে সেখানেই।" ইরিনা আশেপাশে তাকালো। সে আবার বলল, "বিসমিল্লাহ ভাতের হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।"
"ওহ আচ্ছা। আপনারা ওখানেই থাকেন। আমি এক মিনিটের মধ্যে আসছি।"
"আচ্ছা, আসো।"
রাকিব এক মিনিটের আগেই চলে এলো। সে এসেই হাঁপাচ্ছে। সবাই বুঝতে পারলো, রাকিব দৌড়ে এসেছে।
"পানি খাও।" রুদ্র হাতে থাকা পানির বোতলটা রাকিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল।
রাকিব পানি খেলো। তারপর সবাইকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা করলো।
"কত সময় লাগবে?" ফাহিম জিজ্ঞেস করলো।
"হেঁটে যেতে পাঁচ মিনিট লাগবে।" রাকিব উত্তর দিলো।
বাড়ির কাছে যেতেই দেখলো গেটে সাত্যকি দাঁড়িয়ে আছে। ইরিনা ছুঁটে গিয়ে সাত্যকিকে জড়িয়ে ধরলো। তার পিছে সবাই এলো। রিয়াও সাত্যকিকে জড়িয়ে ধরলো।
"আলিফ কোথায়?" সাত্যকি জিজ্ঞেস করল।
"ও আসে নি।" রুদ্র উত্তর দিলো।
"আসে নি মানে?"
রুদ্র সংক্ষেপে সবটাই বলল সাত্যকিকে।
সাত্যকি সবটা শুনে মন খারাপ করলো।
"আলিফকে একটা কল দিয়ে চলে আসতে বল। আজ তো গায়ে হলুদ। কাল বিয়ে। অন্তত বিয়েতে যেনো আসে।" সাত্যকি বলল।
"ওকে তো ফোনেও পাচ্ছি না।" রুদ্র বলল।
"তবুও একটা কল দিয়ে দেখ।" সাত্যকি বলল।
আলিফের নাম্বারে রুদ্র কল দিলো। নাম্বার বন্ধ। রাতে কল ঢুকেছে। এখন নাম্বার বন্ধ বলছে। রুদ্রের রাগ হলো। আলিফ এমন করবে কেউই ভাবেনি। রুদ্র কয়েকবার কল দিয়ে ফোন বন্ধ পেয়ে রাগে আর ফোন দিলো না।
"আচ্ছা, ওকে না হয় পরে কল দেওয়া যাবে। তোরা ভেতরে চল। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।"
সাত্যকির গায়ে হলুদ শুরু হলো সন্ধ্যার দিকে। রুদ্র, রিয়া, ইরিনা এবং ফাহিম এগারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে। ঘুম থেকে উঠলে সাত্যকি এসে তাদের নিয়ে বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তারপর তারা বাড়িটা ঘুরেফিরে দেখেছে। রাকিব সবাইকে নিয়ে তাদের এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। রাকিব বয়সে ছোট হলেও অল্প সময়ে সবার সাথে ভাল একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে হয়েছে।
গায়ে হলুদ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নাচ গান আয়োজন করা হয়। বরকে ও নিতবরকে সারা গায়ে যে হলুদ মাখানো হয় সেটা দিয়েই কন্যাকে হলুদ মাখানো হয়েছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়। তারপরও নাচা-গানা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। রুদ্র, রিয়া, ফাহিম নাচলেও ইরিনা একটা গান পরিবেশন করে। ইরিনার গান শুনে সবাই দারুণ প্রসংশা করেছে৷ সাত্যকির এক মামা মুগ্ধ হয়ে ইরিনাকেও বকশিসও দিয়েছে। ইরিনা নিবেনে, তবুও সবার অনুরোধে নিতে বাধ্য হয়েছে।
রাতটা হাসি আনন্দে দ্রুত চলে গেলো৷ রুদ্র সন্ধ্যার দিকে আলিফকে আরো কয়েকবার কল দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। আলিফের ফোন বন্ধ। রুদ্রের রাগটা এখন টেনশনে রুপান্তর হলেও সে সেটাকে তেমন গুরুত্ব দেয় নি। আলিফ মাঝেমাঝে এমন করে। মন খারাপ থাকলে ফোন বন্ধ করে রাখে।
পরদিন সকাল থেকেই বিয়ের আমেজ শুরু হয়। পুরো বাড়ি লোকে ভর্তি। সবাই বিভিন্ন কাজ করছে। শুধু রুদ্রদের কোনো কাজ নেই। তারা ঘুরেফিরে সবকিছু দেখছে। শুধু রিয়া এবং ইরিনা সাত্যকিকে নিয়ে পার্লারে গিয়েছে।
বর বরণের মাধ্যমে বিবাহের মূল অনুষ্ঠান শুরু হলো বিকালে। তারপর একে একে সাত পাক, বিভাহোমা, শুভদৃষ্টি, মালা বদল, সম্প্রদান, অঞ্জলি, সিঁদুর দানের মাধ্যমে বিবাহ সম্পূর্ণ হয়েছে। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেছে। সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে সাত্যকির বিয়ে দেখেছে৷ সবাই অনেক মজা করেছে।
রুদ্রদের লঞ্চের টিকেট কাটা। তার আজ রাতেই ঢাকায় ফিরবে। সাত্যকি চলে গেলে তারাও বেরিয়ে পরলো ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তারা সাত্যকির বাসা থেকে বেরিয়ে বাজারে এসে চা খেতে বসলো। ঠিক তখন চায়ের দোকানের টিভিতে নিউজের চ্যানেলে একটা খবর দেখে রুদ্র, রিয়া, সাত্যকি ও ফাহিমের গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলো। তারা তাদের চোখ কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। টিভিতে এই মুহুর্তে এক যুবকের ছবি ভেসে উঠেছে এবং বলা হচ্ছে, "প্রেমিক প্রেমিকাকে জিম্মি করে প্রেমিকাকে গন''. এবং প্রেমিককে ভয়ংকর ভাবে মারধর করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ভয়ংকর কাজ কারা করেছে এখনো সেটা স্পষ্ট ভানে জানা যায় নি। দুইজনেই এই মুহুর্তে হাসপাতালে ভর্তি। তারা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।"
খবরটা শুনে রুদ্র স্থির থাকতে পারছে না। টিভিতে দেখানো ছবিটা আলিফের। তাহলে আলিফের সাথে নদী ছিল। নদীকে কিছু অমানুষ গন''. করেছে। কথাটা ভাবতেই রুদ্রের সম্পূর্ণ শরীর রাগে ঘিনঘিন করে উঠলো সেই সব অমানুষের প্রতি। অন্য দিকে বুক ফেটে তার কান্না আসছে আলিফের জন্য, নদীর জন্য। রুদ্র সত্যি সবাইকে অবাক করে দিয়ে কেঁদে ফেললো। রিয়া, ইরিনা ও ফাহিম সবাই-ই রুদ্রকে শান্তনা দিলেও কাজ হলো না। তারাও সবাই শোকে কাতর। কে কাকে সামলাবে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না।
রুদ্র দ্রুত ঢাকায় যেতে চাচ্ছে। কয়েকবার সে বলেছে, "সে বাসে করে চলে যাবে।" কিন্তু রুদ্রকে একা কেউ ছাড়েনি। এছাড়াও ঘন্টাখানেক পরে তাদের লঞ্চ। তাই সবাই রুদ্রকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখে দিলো। তারা এখন সবাই-ই চাচ্ছে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছাতে।
চলবে.....!
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)