18-06-2023, 10:23 PM
পর্বঃ- ০৩
কেউ ভাবছে লিমন আর তৌহিদ খুন করে এখান থেকে পালিয়ে গেছে। আবার কেউ বলছে তাহলে ওভাবে দরজা না খুলে মাটি খুঁড়ে বের হবাে তো উপযুক্ত কারণ পাচ্ছি না। কিন্তু সকল মানুষের কথা কানে না নিয়ে সশরীরে গিয়ে সাজু দেখতে চাচ্ছে। কবিতার কাছে কল দিয়ে বললো " জরুরি কাজে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি, পৌঁছে তারপর কথা হবে তোমার সঙ্গে। "
সাজুদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট, যেহেতু তাদের পাশের জেলা হচ্ছে পিরোজপুর তাই সরাসরি সে আগে বাড়িতে যাবে। তারপর সেখান থেকে নিজস্ব বাইক নিয়ে পিরোজপুর যাওয়া যাবে। গুলিস্তান থেকে "দোলা পরিবহন" এর লঞ্চ পারাপারের গাড়ির টিকিট সংগ্রহ করলো। অনেকদিন পর সে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে, দাদা-দাদীর সঙ্গে কতদিন তার দেখা হয় না।
যেহেতু লঞ্চ পারাপারের গাড়ি তাই ফেরির মধ্যে অপেক্ষা করার ঝামেলা নেই। কবে যে স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে?
|
গ্রামের মধ্যে এখন এক অস্থিরতা তৈরি হয়ে গেছে যেটা কল্পনার মধ্যে ছিল না। পুলিশ সারাক্ষণ শুধু আনাগোনা করছে, প্রায় সবাইকে কিছু না কিছু জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। মনিরুলের পরিবারের কান্না আর আহাজারিতে সবচেয়ে বেশি আকাশ ভারি হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পাড়ে এমন কিছু নেই যেটা খুনির কাছে পৌঁছাতে পারে। দারোগা সাহেব যখন সাজুর কথা শুনলেন তখন একটু ভ্রু কুঁচকে যেন কিছু ভাবলেন।
সাজু যখন লিমনদের গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়িতে ফিরে কোনরকমে ফ্রেশ হয়ে বাইক নিয়ে চলে এসেছে। সাজু স্থানীয় বাজারে এসে পারভেজকে কল দিল, পারভেজ তখন বাজারেই ছিল। বাজারের একপার্শ্বে বিশাল জটলা, সেখানে সবাই ঘিরে আছে এবং পুলিশ ও দেখা যাচ্ছে।
সাজু সেখানে এগিয়ে গিয়ে পারভেজের সঙ্গে সরাসরি হাত মিলিয়ে নিল। তারপর যখন জানতে পারলো যে তৌহিদ ফিরে এসেছে তখন অবাক হয়ে নিজেই সেদিকে এগিয়ে গেল।
প্রায় ঘন্টা খানিক পরে পুলিশ তৌহিদকে নিয়ে থানায় রওনা দিল। তার আগে সাজু ভাই একবার মনিরুল আর লিমনদের ঘর দেখে এসেছেন। সব মোটামুটি ঠিক আছে কিন্তু মনিরুলদের বাড়িতে যে ঘরে লিমন আর তৌহিদ ছিল সেখানে মাটি খুঁড়ে বের হবার স্থান দেখে প্রশ্ন জাগলো। তখন সে বুঝতে পারছে যে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর তৌহিদের কাছে পাওয়া যাবে।
পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে সাজুও গিয়েছে থানার, কারণ পুলিশ বলছে, যা কিছু জিজ্ঞেস করার সব থানায় গিয়ে করবে।
- সাজু ভাই তৌহিদকে বললো, লিমন এখন কোন যায়গা আছে? আর সেদিন রাতে তোমরা কীভাবে কি করেছো?
- তৌহিদ আস্তে আস্তে বললো, সাজু ভাই আমি এখন জানি না লিমন কোথায়। কারণ আমাকে ওরা পিরোজপুরের সি অফিস মোড়ে এসে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। তারপর সেখান থেকে আমি একাই এসেছি এখানে, লিমনের মধ্যে পশু ভর করেছে। ও কাউকে ছাড়বে না।
- মনিরকে কে খুন করেছে?
- লিমন।
- তুমি তখন কোথায় ছিলে?
- আমাকে আরও দুটো লোক ধরে রেখেছিল।
- মানে কি? সেখানে আবার আরও দুটো লোক কীভাবে এসেছে?
- আমি জানি না।
- তুমি আর লিমন যে ঘরে ছিলে সেই ঘরের মধ্যে মাটি সিধ কেটেছে কে? আমি সেখানে গিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে ভিতর থেকে মাটি খুঁড়ে বের হয়েছ তোমরা।
- হ্যাঁ সাজু ভাই, লিমন নিজে মাটি খুঁড়ে বের হবার ব্যবস্থা করেছে। আমার এমনিতেই কান পাতলা তাই যখন ধুপধাপ শব্দ হলো তখন তাকিয়ে দেখি লিমন মাটি কাটছে। কিন্তু ভাই আপনি কীভাবে বুঝতে পেরেছেন?
- খুবই স্বাভাবিক, মাটি কেটে কেটে ভিতরের দিকে কাটা মাটি জমানো হয়েছে। যদি বাহির হতে কেউ আসতো তাহলে তো বাহিরে মাটির স্তুপ জমা থাকতো।
- হ্যাঁ ঠিক তাই, আমি বিছানা থেকে নেমে তখন বললাম " কিরে লিমন কি হয়েছে? " লিমন তখন আমাকে চুপ করতে বললো, তারপর জানলা দিয়ে বাহিরে তাকাতে বলছে। আমি তাকিয়ে দেখি যে সম্মুখে পুকুর পাড়ে কারা যেন দাঁড়িয়ে আছে।
- কীভাবে দেখলে?
- তাদের একজনের হাতে সিগারেট ছিল আর সেই সিগারেটের আগুন ওঠানামা করছে। তবে সামান্য আস্তে আস্তে কথাও কানে বাজছিল।
- তারপর?
- আমরা সেখান থেকে গর্ত দিয়ে আস্তে করে বের হলাম।
- দরজা খুলে বের হলে না কেন?
- কারণ দরজা বাহির থেকে বন্ধ ছিল।
- তাহলে কি মনির...?
- হ্যাঁ। লিমন সেজন্যই বাহিরে গিয়েছে এবং আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম কারণ দুটো লোক লিমনের পরিচিত। তারা তখন মনিরকে হাত পা আর মুখ বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে, লিমন সেখানে গিয়েই ওদের একজনের হাত থেকে একটা বড় ছুরি নিয়ে মনিরুল ভাইয়ের গলা কেটে দিল।
- কি বলছো তুমি? এতটা সহজ? আর লিমনের সঙ্গে তাদের কিসের সম্পর্ক?
- আমি জানি না, আমি এতটা হতভম্ব হয়ে গেছি যে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে মাথা ঘুরে পরলাম। আর তারপর যখন হুঁশ হয়েছে তখন আমি একটা টিন দিয়ে ছাউনি করা ঘরের মধ্যে বন্দী।
- লিমন সেখানে ছিল না?
- না, তবে আরেকটা লোক এসেছিল কিছুক্ষণ পরে আর তিনি বলেছেন যে আমাকে নাকি তারা পাঠিয়ে দেবে। তবে শহরের মধ্যে ছেড়ে দেবে কারণ গ্রামের মধ্যে নিয়ে গেলে প্রচুর ঝামেলা হতে পারে।
- লিমনের কথা জিজ্ঞেস করোনি?
- হ্যাঁ, তারা বললো, আমি লিমনের বন্ধু তাই তারা আমাকে বাঁচতে দিচ্ছে নাহলে আমাকেও শেষ করে দিত। আমি যেন পিরোজপুর থেকে সরাসরি খুলনা শহরে চলে যাই আর কাউকে কিছু না বলি। যদি কিছু বলি তাহলে আমারও প্রচুর বিপদের মুখে পরতে হবে। লিমন নাকি তার মা-বাবার খুনী কে সেটা জানতে পেরেছে তাই এক এক করে সবাইকে হত্যা করতে চায় ও। আর যেহেতু তার বাবা তাকে এসব খুনোখুনি করতে নিষেধ করেছে তাই "সরি আব্বাজান" ব্যবহার করবে।
- কিছুটা বুঝতে পারছি, কিন্তু এখনো অনেক কিছু জানার বাকি। তবে লিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা আমার খুব দরকার, যিনি আমাকে এখানে আসার জন্য অনুরোধ করছে সে নিজেই এখন...?
- আমি এসব বলতে চাই নাই কিন্তু গ্রামের সবাই আর পুলিশ আমাকেও সন্দেহ করছে তাই এখন বাধ্য হয়ে বলছি।
- ঠিক আছে তুমি আপাতত পুলিশ হেফাজতে থাকো তারপর দেখি কি করা যায়।
- আচ্ছা ঠিক আছে সাজু ভাই, কিন্তু লিমন যে এভাবে পরিবর্তন হবে কখনো ভাবিনি। মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে কীভাবে কি হয়ে গেল? আর তার সঙ্গে লোক দুটো যুক্ত আছে, কি ভয়ঙ্কর।
★★
থানা থেকে বের হয়ে সাজু নিজের এলাকায় চলে এসেছে, রাতের মধ্যে সেই গ্রামে থাকার কোন মানে হয় না, আর পারভেজ তো থানায় আসার আগেই বিদায় নিয়ে চলে গেছে। রাত দশটার দিকে বাড়িতে ফিরে ডিনার করে নিজের বিছানায় শুয়ে সজীব এর কাছে কল দিল। আসার পথে সজীব কল দিছিল কিন্তু তখন কথা বলতে পারে নাই।
- হ্যাঁ সজীব, কি খবর?
- বেশি ভালো না সাজু।
- কেন?
- রুহির মা অসুস্থ, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রুহি এখন সেই হাসপাতালে আছে, আমি তো চট্টগ্রামে আছি আর তুইও আজকে নাকি বাড়িতে গেলি।
- হ্যাঁ পিরোজপুরে একটা মামলার মধ্যে জড়িয়ে যাবার সম্ভবনা আছে, তবে আগের চেয়ে এটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে।
- কিরকম?
- ছেলেটা খুলনায় আমরা যেই মেসে ছিলাম সেই মেসেই থাকে, ওর মা-বাবা দুজনেই যেকোনো অদৃশ্য কারণে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সেগুলোর পিছনে একটা চক্র কাজ করছে, তাদের সন্দেহ করে এখন ওই ছেলে খুন করা শুরু করেছে।
- বেশ জটিল সমস্যা।
- হ্যাঁ, আর একা একা ভালো লাগে না, রকি বা তুই যেকোনো একজন সঙ্গী হলে ভালো হতো।
- তাহলে ছুটি নিয়ে আসবো নাকি?
- যদি পারিস তবে বেশ ভালো হবে।
- ঠিক আছে কালকে অফিসে গিয়ে দেখি।
- মেলা মেলা ধন্যবাদ বন্ধু।
- আচ্ছা তুই একটু সময় করে রুহির কাছে কল দিয়ে কথা বলিস, বেচারির বাবার তো তোর জন্য ফাঁসি হয়ে গেল। এখন তার মা অসুস্থ হয়ে গেছে তাই খুব কান্না করছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
তিন-চারদিন ধরে শরীরে হালকা জ্বর, গতকাল রাতে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছিল। আজকে ভ্রমণ করে আরও বেশি ক্লান্ত লাগছে, তাই বিছানায় শুয়ে একটু পরেই ঘুমিয়ে গেল সাজু ভাই।
সকাল বেলা সাড়ে দশটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাও আবার দাদির ডাকাডাকিতে। দাদির কাছে জানতে পারলো যে, কে যেন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।
বাহিরে এসে সাজু তাকে চিনতে পারছে না, তবে লোকটা বেশ বয়স্ক। বসে বসে তারা দাদার সঙ্গে গল্প করছে, সাজু মনে মনে ভাবলাে " দাদা আবার নতুন করে বিয়ে দেবে নাকি? "
- সাজু বললো, আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন আপনি?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন? আর আপনি কিন্তু আমার দাদার বয়সী তাই নাতি হিসেবে তুমি করে বললে খুশি হবো।
- ঠিক আছে তাই হবে, আর আমি লিমনের নানা তাই সম্পর্ক ঠিকই আছে।
- কোন লিমন?
- যার মা-বাবা দুজনই খুন হয়েছে, আর লিমন নিজে এখন কোথায় আছে কেউ জানে না।
- আপনি তার নানা?
- হ্যাঁ, তবে আপন নানা নয়, ওর মায়ের সম্পর্কে চাচা হই আমি। লিমনের নানা মারা গেছে অনেক আগেই, তারপর থেকে ওর মাকে আমিই মানুষ করেছিলাম।
- বুঝতে পেরেছি কিন্তু...
- আমি গতকালই লিমনের সেই মোটরসাইকেল ওয়ালা বন্ধুর কাছে শুনেছি যে সাজু নামের এক গোয়েন্দা আসবে। সারাদিন অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু যখন এলে তখন দেখা করতে পারলাম না।
- কিন্তু কেন?
- আজকে সকালে থানায় গিয়ে তোমার বিষয় জানতে পারি, তবে গতকালই লিমনের বন্ধুর কাছে শুনেছি তোমার বাসা বাগেরহাট আর এই উপজেলায়। আমি একসময় পিরোজপুর জেলা কলেজের শিক্ষক ছিলাম, আমার এক ছাত্র আছে তোমাদের এই গ্রামের মধ্যে। আজকে সকালে যখন তাকে তোমার নাম করে জিজ্ঞেস করেছি তখন সে তোমার ঠিকানা দিয়েছে।
- আমাকে এতটা জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে বের করার কারণ কি?
- লিমনের মা-বাবার বিপদের আশঙ্কা আমি আগে করেছিলাম, আর তারাও জানতো।
- মানে?
- লিমনের বাবার কাছে একটা স্বর্নের পুতুল আছে খাঁটি স্বর্নের পুতুল।
- বলেন কি? কীভাবে কি?
এমন সময় সাজুর মোবাইল বেজে উঠল, নাম্বার দেখেই চিনতে পারলো সাজু। গতকাল রাতে থানা থেকে বের হবার সময় সাজু ভাই থানার দারোগা সাহেবের নাম্বার নিয়ে এসেছেন এবং তার নিজের নাম্বারও দিয়ে এসেছে।
- হ্যালো... স্যার?
- সাজু সাহেব আপনি কোথায়?
- আমি তো বাড়িতে, আপনি?
- আমি এখন সেই লিমনদের গ্রামের মধ্যে তাদের স্থানীয় বাজারে আছি। লিমন তো আজকে রাতে এই বাজারের হোটেল মালিক শাহজাহান নামের লোকটাকে খুন করেছে।
- কি...? আর কীভাবে নিশ্চিত হলেন খুনটা যে লিমন করেছে?
- লাশের পাশে চিরকুট ছিল "সরি আব্বাজান" আর আপনাকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা লেখা।
- আমাকে উদ্দেশ্য করে?
- হ্যাঁ সাজু সাহেব।
- কি লেখা আছে সেখানে?
- লেখা আছে, " সাজু ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ, আপনাকে যখন আমি ডেকেছি তখনও আমি রহস্য জানতাম না। কিন্তু এখন আমার চোখের সামনে সবকিছু পরিষ্কার, তাই আপনার কোন সাহায্যের দরকার নেই। আমার মা-বাবার হত্যার বিচার আমি নিজেই করবো, খুব ভালো হয় যদি আপনি আর আমাদের গ্রামে না আসেন। কারণ আপনি থাকলে আমার ঝামেলা হবে, তাই আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমার পথের মধ্যে যদি কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়ান তাহলে কিন্তু আপনাকেও বিপদে পরতে হবে। তৌহিদকে মেরে ফেলা উচিত ছিল, শালাকে বন্ধু ভেবে ছেড়ে দিছি আর সে সবকিছু বলে দিয়েছে। ভেবেছিলাম যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিশোধ নিতে পারবো কিন্তু ওর জন্য আর হলো না। তৌহিদকে সাবধানে থাকতে বলবেন কারণ ওকে নিষেধ করার পরও যখন সবকিছু বলে দিয়েছে তখন কিছুটা মূল্য দিতে হবে তাকে। এই শাহজাহান কাকা আমার বাবার সঙ্গে বেঈমানী করেছে, বাবার কাছ থেকে পুতুলের কথা জেনে সেটা আরেকজনকে বলে দিয়েছে তাই একে ঘুম পারিয়ে দিলাম। এখনো অনেক কিছু ঘটনার বাকি আছে তবে খেলাটা আমিই চাই। "
;
চলবে...?
কেউ ভাবছে লিমন আর তৌহিদ খুন করে এখান থেকে পালিয়ে গেছে। আবার কেউ বলছে তাহলে ওভাবে দরজা না খুলে মাটি খুঁড়ে বের হবাে তো উপযুক্ত কারণ পাচ্ছি না। কিন্তু সকল মানুষের কথা কানে না নিয়ে সশরীরে গিয়ে সাজু দেখতে চাচ্ছে। কবিতার কাছে কল দিয়ে বললো " জরুরি কাজে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি, পৌঁছে তারপর কথা হবে তোমার সঙ্গে। "
সাজুদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট, যেহেতু তাদের পাশের জেলা হচ্ছে পিরোজপুর তাই সরাসরি সে আগে বাড়িতে যাবে। তারপর সেখান থেকে নিজস্ব বাইক নিয়ে পিরোজপুর যাওয়া যাবে। গুলিস্তান থেকে "দোলা পরিবহন" এর লঞ্চ পারাপারের গাড়ির টিকিট সংগ্রহ করলো। অনেকদিন পর সে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে, দাদা-দাদীর সঙ্গে কতদিন তার দেখা হয় না।
যেহেতু লঞ্চ পারাপারের গাড়ি তাই ফেরির মধ্যে অপেক্ষা করার ঝামেলা নেই। কবে যে স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে?
|
গ্রামের মধ্যে এখন এক অস্থিরতা তৈরি হয়ে গেছে যেটা কল্পনার মধ্যে ছিল না। পুলিশ সারাক্ষণ শুধু আনাগোনা করছে, প্রায় সবাইকে কিছু না কিছু জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। মনিরুলের পরিবারের কান্না আর আহাজারিতে সবচেয়ে বেশি আকাশ ভারি হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পাড়ে এমন কিছু নেই যেটা খুনির কাছে পৌঁছাতে পারে। দারোগা সাহেব যখন সাজুর কথা শুনলেন তখন একটু ভ্রু কুঁচকে যেন কিছু ভাবলেন।
সাজু যখন লিমনদের গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়িতে ফিরে কোনরকমে ফ্রেশ হয়ে বাইক নিয়ে চলে এসেছে। সাজু স্থানীয় বাজারে এসে পারভেজকে কল দিল, পারভেজ তখন বাজারেই ছিল। বাজারের একপার্শ্বে বিশাল জটলা, সেখানে সবাই ঘিরে আছে এবং পুলিশ ও দেখা যাচ্ছে।
সাজু সেখানে এগিয়ে গিয়ে পারভেজের সঙ্গে সরাসরি হাত মিলিয়ে নিল। তারপর যখন জানতে পারলো যে তৌহিদ ফিরে এসেছে তখন অবাক হয়ে নিজেই সেদিকে এগিয়ে গেল।
প্রায় ঘন্টা খানিক পরে পুলিশ তৌহিদকে নিয়ে থানায় রওনা দিল। তার আগে সাজু ভাই একবার মনিরুল আর লিমনদের ঘর দেখে এসেছেন। সব মোটামুটি ঠিক আছে কিন্তু মনিরুলদের বাড়িতে যে ঘরে লিমন আর তৌহিদ ছিল সেখানে মাটি খুঁড়ে বের হবার স্থান দেখে প্রশ্ন জাগলো। তখন সে বুঝতে পারছে যে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর তৌহিদের কাছে পাওয়া যাবে।
পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে সাজুও গিয়েছে থানার, কারণ পুলিশ বলছে, যা কিছু জিজ্ঞেস করার সব থানায় গিয়ে করবে।
- সাজু ভাই তৌহিদকে বললো, লিমন এখন কোন যায়গা আছে? আর সেদিন রাতে তোমরা কীভাবে কি করেছো?
- তৌহিদ আস্তে আস্তে বললো, সাজু ভাই আমি এখন জানি না লিমন কোথায়। কারণ আমাকে ওরা পিরোজপুরের সি অফিস মোড়ে এসে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। তারপর সেখান থেকে আমি একাই এসেছি এখানে, লিমনের মধ্যে পশু ভর করেছে। ও কাউকে ছাড়বে না।
- মনিরকে কে খুন করেছে?
- লিমন।
- তুমি তখন কোথায় ছিলে?
- আমাকে আরও দুটো লোক ধরে রেখেছিল।
- মানে কি? সেখানে আবার আরও দুটো লোক কীভাবে এসেছে?
- আমি জানি না।
- তুমি আর লিমন যে ঘরে ছিলে সেই ঘরের মধ্যে মাটি সিধ কেটেছে কে? আমি সেখানে গিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে ভিতর থেকে মাটি খুঁড়ে বের হয়েছ তোমরা।
- হ্যাঁ সাজু ভাই, লিমন নিজে মাটি খুঁড়ে বের হবার ব্যবস্থা করেছে। আমার এমনিতেই কান পাতলা তাই যখন ধুপধাপ শব্দ হলো তখন তাকিয়ে দেখি লিমন মাটি কাটছে। কিন্তু ভাই আপনি কীভাবে বুঝতে পেরেছেন?
- খুবই স্বাভাবিক, মাটি কেটে কেটে ভিতরের দিকে কাটা মাটি জমানো হয়েছে। যদি বাহির হতে কেউ আসতো তাহলে তো বাহিরে মাটির স্তুপ জমা থাকতো।
- হ্যাঁ ঠিক তাই, আমি বিছানা থেকে নেমে তখন বললাম " কিরে লিমন কি হয়েছে? " লিমন তখন আমাকে চুপ করতে বললো, তারপর জানলা দিয়ে বাহিরে তাকাতে বলছে। আমি তাকিয়ে দেখি যে সম্মুখে পুকুর পাড়ে কারা যেন দাঁড়িয়ে আছে।
- কীভাবে দেখলে?
- তাদের একজনের হাতে সিগারেট ছিল আর সেই সিগারেটের আগুন ওঠানামা করছে। তবে সামান্য আস্তে আস্তে কথাও কানে বাজছিল।
- তারপর?
- আমরা সেখান থেকে গর্ত দিয়ে আস্তে করে বের হলাম।
- দরজা খুলে বের হলে না কেন?
- কারণ দরজা বাহির থেকে বন্ধ ছিল।
- তাহলে কি মনির...?
- হ্যাঁ। লিমন সেজন্যই বাহিরে গিয়েছে এবং আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম কারণ দুটো লোক লিমনের পরিচিত। তারা তখন মনিরকে হাত পা আর মুখ বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে, লিমন সেখানে গিয়েই ওদের একজনের হাত থেকে একটা বড় ছুরি নিয়ে মনিরুল ভাইয়ের গলা কেটে দিল।
- কি বলছো তুমি? এতটা সহজ? আর লিমনের সঙ্গে তাদের কিসের সম্পর্ক?
- আমি জানি না, আমি এতটা হতভম্ব হয়ে গেছি যে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে মাথা ঘুরে পরলাম। আর তারপর যখন হুঁশ হয়েছে তখন আমি একটা টিন দিয়ে ছাউনি করা ঘরের মধ্যে বন্দী।
- লিমন সেখানে ছিল না?
- না, তবে আরেকটা লোক এসেছিল কিছুক্ষণ পরে আর তিনি বলেছেন যে আমাকে নাকি তারা পাঠিয়ে দেবে। তবে শহরের মধ্যে ছেড়ে দেবে কারণ গ্রামের মধ্যে নিয়ে গেলে প্রচুর ঝামেলা হতে পারে।
- লিমনের কথা জিজ্ঞেস করোনি?
- হ্যাঁ, তারা বললো, আমি লিমনের বন্ধু তাই তারা আমাকে বাঁচতে দিচ্ছে নাহলে আমাকেও শেষ করে দিত। আমি যেন পিরোজপুর থেকে সরাসরি খুলনা শহরে চলে যাই আর কাউকে কিছু না বলি। যদি কিছু বলি তাহলে আমারও প্রচুর বিপদের মুখে পরতে হবে। লিমন নাকি তার মা-বাবার খুনী কে সেটা জানতে পেরেছে তাই এক এক করে সবাইকে হত্যা করতে চায় ও। আর যেহেতু তার বাবা তাকে এসব খুনোখুনি করতে নিষেধ করেছে তাই "সরি আব্বাজান" ব্যবহার করবে।
- কিছুটা বুঝতে পারছি, কিন্তু এখনো অনেক কিছু জানার বাকি। তবে লিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা আমার খুব দরকার, যিনি আমাকে এখানে আসার জন্য অনুরোধ করছে সে নিজেই এখন...?
- আমি এসব বলতে চাই নাই কিন্তু গ্রামের সবাই আর পুলিশ আমাকেও সন্দেহ করছে তাই এখন বাধ্য হয়ে বলছি।
- ঠিক আছে তুমি আপাতত পুলিশ হেফাজতে থাকো তারপর দেখি কি করা যায়।
- আচ্ছা ঠিক আছে সাজু ভাই, কিন্তু লিমন যে এভাবে পরিবর্তন হবে কখনো ভাবিনি। মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে কীভাবে কি হয়ে গেল? আর তার সঙ্গে লোক দুটো যুক্ত আছে, কি ভয়ঙ্কর।
★★
থানা থেকে বের হয়ে সাজু নিজের এলাকায় চলে এসেছে, রাতের মধ্যে সেই গ্রামে থাকার কোন মানে হয় না, আর পারভেজ তো থানায় আসার আগেই বিদায় নিয়ে চলে গেছে। রাত দশটার দিকে বাড়িতে ফিরে ডিনার করে নিজের বিছানায় শুয়ে সজীব এর কাছে কল দিল। আসার পথে সজীব কল দিছিল কিন্তু তখন কথা বলতে পারে নাই।
- হ্যাঁ সজীব, কি খবর?
- বেশি ভালো না সাজু।
- কেন?
- রুহির মা অসুস্থ, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রুহি এখন সেই হাসপাতালে আছে, আমি তো চট্টগ্রামে আছি আর তুইও আজকে নাকি বাড়িতে গেলি।
- হ্যাঁ পিরোজপুরে একটা মামলার মধ্যে জড়িয়ে যাবার সম্ভবনা আছে, তবে আগের চেয়ে এটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে।
- কিরকম?
- ছেলেটা খুলনায় আমরা যেই মেসে ছিলাম সেই মেসেই থাকে, ওর মা-বাবা দুজনেই যেকোনো অদৃশ্য কারণে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সেগুলোর পিছনে একটা চক্র কাজ করছে, তাদের সন্দেহ করে এখন ওই ছেলে খুন করা শুরু করেছে।
- বেশ জটিল সমস্যা।
- হ্যাঁ, আর একা একা ভালো লাগে না, রকি বা তুই যেকোনো একজন সঙ্গী হলে ভালো হতো।
- তাহলে ছুটি নিয়ে আসবো নাকি?
- যদি পারিস তবে বেশ ভালো হবে।
- ঠিক আছে কালকে অফিসে গিয়ে দেখি।
- মেলা মেলা ধন্যবাদ বন্ধু।
- আচ্ছা তুই একটু সময় করে রুহির কাছে কল দিয়ে কথা বলিস, বেচারির বাবার তো তোর জন্য ফাঁসি হয়ে গেল। এখন তার মা অসুস্থ হয়ে গেছে তাই খুব কান্না করছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
তিন-চারদিন ধরে শরীরে হালকা জ্বর, গতকাল রাতে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছিল। আজকে ভ্রমণ করে আরও বেশি ক্লান্ত লাগছে, তাই বিছানায় শুয়ে একটু পরেই ঘুমিয়ে গেল সাজু ভাই।
সকাল বেলা সাড়ে দশটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাও আবার দাদির ডাকাডাকিতে। দাদির কাছে জানতে পারলো যে, কে যেন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।
বাহিরে এসে সাজু তাকে চিনতে পারছে না, তবে লোকটা বেশ বয়স্ক। বসে বসে তারা দাদার সঙ্গে গল্প করছে, সাজু মনে মনে ভাবলাে " দাদা আবার নতুন করে বিয়ে দেবে নাকি? "
- সাজু বললো, আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন আপনি?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন? আর আপনি কিন্তু আমার দাদার বয়সী তাই নাতি হিসেবে তুমি করে বললে খুশি হবো।
- ঠিক আছে তাই হবে, আর আমি লিমনের নানা তাই সম্পর্ক ঠিকই আছে।
- কোন লিমন?
- যার মা-বাবা দুজনই খুন হয়েছে, আর লিমন নিজে এখন কোথায় আছে কেউ জানে না।
- আপনি তার নানা?
- হ্যাঁ, তবে আপন নানা নয়, ওর মায়ের সম্পর্কে চাচা হই আমি। লিমনের নানা মারা গেছে অনেক আগেই, তারপর থেকে ওর মাকে আমিই মানুষ করেছিলাম।
- বুঝতে পেরেছি কিন্তু...
- আমি গতকালই লিমনের সেই মোটরসাইকেল ওয়ালা বন্ধুর কাছে শুনেছি যে সাজু নামের এক গোয়েন্দা আসবে। সারাদিন অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু যখন এলে তখন দেখা করতে পারলাম না।
- কিন্তু কেন?
- আজকে সকালে থানায় গিয়ে তোমার বিষয় জানতে পারি, তবে গতকালই লিমনের বন্ধুর কাছে শুনেছি তোমার বাসা বাগেরহাট আর এই উপজেলায়। আমি একসময় পিরোজপুর জেলা কলেজের শিক্ষক ছিলাম, আমার এক ছাত্র আছে তোমাদের এই গ্রামের মধ্যে। আজকে সকালে যখন তাকে তোমার নাম করে জিজ্ঞেস করেছি তখন সে তোমার ঠিকানা দিয়েছে।
- আমাকে এতটা জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে বের করার কারণ কি?
- লিমনের মা-বাবার বিপদের আশঙ্কা আমি আগে করেছিলাম, আর তারাও জানতো।
- মানে?
- লিমনের বাবার কাছে একটা স্বর্নের পুতুল আছে খাঁটি স্বর্নের পুতুল।
- বলেন কি? কীভাবে কি?
এমন সময় সাজুর মোবাইল বেজে উঠল, নাম্বার দেখেই চিনতে পারলো সাজু। গতকাল রাতে থানা থেকে বের হবার সময় সাজু ভাই থানার দারোগা সাহেবের নাম্বার নিয়ে এসেছেন এবং তার নিজের নাম্বারও দিয়ে এসেছে।
- হ্যালো... স্যার?
- সাজু সাহেব আপনি কোথায়?
- আমি তো বাড়িতে, আপনি?
- আমি এখন সেই লিমনদের গ্রামের মধ্যে তাদের স্থানীয় বাজারে আছি। লিমন তো আজকে রাতে এই বাজারের হোটেল মালিক শাহজাহান নামের লোকটাকে খুন করেছে।
- কি...? আর কীভাবে নিশ্চিত হলেন খুনটা যে লিমন করেছে?
- লাশের পাশে চিরকুট ছিল "সরি আব্বাজান" আর আপনাকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা লেখা।
- আমাকে উদ্দেশ্য করে?
- হ্যাঁ সাজু সাহেব।
- কি লেখা আছে সেখানে?
- লেখা আছে, " সাজু ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ, আপনাকে যখন আমি ডেকেছি তখনও আমি রহস্য জানতাম না। কিন্তু এখন আমার চোখের সামনে সবকিছু পরিষ্কার, তাই আপনার কোন সাহায্যের দরকার নেই। আমার মা-বাবার হত্যার বিচার আমি নিজেই করবো, খুব ভালো হয় যদি আপনি আর আমাদের গ্রামে না আসেন। কারণ আপনি থাকলে আমার ঝামেলা হবে, তাই আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমার পথের মধ্যে যদি কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়ান তাহলে কিন্তু আপনাকেও বিপদে পরতে হবে। তৌহিদকে মেরে ফেলা উচিত ছিল, শালাকে বন্ধু ভেবে ছেড়ে দিছি আর সে সবকিছু বলে দিয়েছে। ভেবেছিলাম যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিশোধ নিতে পারবো কিন্তু ওর জন্য আর হলো না। তৌহিদকে সাবধানে থাকতে বলবেন কারণ ওকে নিষেধ করার পরও যখন সবকিছু বলে দিয়েছে তখন কিছুটা মূল্য দিতে হবে তাকে। এই শাহজাহান কাকা আমার বাবার সঙ্গে বেঈমানী করেছে, বাবার কাছ থেকে পুতুলের কথা জেনে সেটা আরেকজনকে বলে দিয়েছে তাই একে ঘুম পারিয়ে দিলাম। এখনো অনেক কিছু ঘটনার বাকি আছে তবে খেলাটা আমিই চাই। "
;
চলবে...?
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)