17-06-2023, 09:10 PM
পর্ব- সতেরো
কফি শপে মুখোমুখি দুজনে বসে আছে, সামনে থাকা সিরামিকের প্রিন্টেড কফি কাপ থেকে ধোঁয়া উঠছে কুন্ডলী পাকিয়ে। একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে আর চোখে চোখ পড়তেই দুরন্ত গতিতে নজর সড়িয়ে নিচ্ছে৷ মুখমন্ডলে ভেসে উঠছে লাজের রক্তিম আভাস আর সেই সাথে মুগ্ধতার বর্ণিল ছটা। কেউ কোন কথা বলছে না কারও মুখে আওয়াজ নেই তবুও কতো কথা হয়ে যাচ্ছে চোখের ভাষায়। দুজন চেনা মানুষও সামনাসামনি বসে আছে তবুও তাদের মাঝে কেন এতো লুকোচুরি কিসের জন্য মনের কোনে খানিক অস্বস্তির লাজ।
কফি টা কি ঠান্ডা করে খাবে নাকি?
(রুমার কথাতেই নীরবতা ভাঙে দুজনার মাঝে)
না না, তা পরে কোথায় যাবে বলো..
কোথায় আবার....! বাসায় যাবো (ঠোঁটের কোণে জেগে উঠা হাসিটা লুকায়)
মানে? তুমি না বলেছিলে...
কি বলেছিলাম আমি আবার?
আজ আমরা ঘুরতে যাবো।
এটা কথা হয়েছিল নাকি, কি জানি...
তেমনটাই তো কথা হয়েছিল, তুমি ভুলে গেলে নাকি?
খিলখিল করে হাসতে থাকে রুমা, রুমার ওমন পাগল করা হাসিতে অনির্বাণ খানিক হতবাক হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বাদেই ও বুঝতে পারে রুমা এতোক্ষণ ধরে ওর সাথে দুষ্টামি করছিলো। নিজেকে এমন করে বোকা হতে দেখে নিজেও হেসে উঠে রুমার সাথে। দুজনার খুনসুটির মাঝেই কফির কাপে চুমুক পড়ে, ক্যাফেইনের প্রভাবে চাঙা হয়ে উঠে শরীর সাথে মনটাও। মনের উৎফুল্লতা ছড়িয়ে পড়ে শরীর জুড়ে, ঢেউ খেলায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
কফি শপ থেকে বেড়িয়ে অনির্বাণ রা রিক্সা নেয় ঘুরতে যাবার উদ্দেশ্যে, এবার ওদের গন্তব্য বোটানিক্যাল গার্ডেন। হুড তোলা রিক্সায় উঠেই অনির্বাণ একহাত বাড়িয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় রুমাকে। ওদের মাঝের ফাঁক গলে মাছি তো দূরেই থাক কোন পিঁপড়ে যাবারও কোন সম্ভাবনা নেই। প্যাডেল দেয়া রিক্সাটা একটু ধীর গতিতেই চলছে সেই সাথে অনির্বাণও ধীরে ধীরে নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসছে। ওর হাত খেলতে শুরু করেছে রুমার নরম বাহু জুড়ে৷ আঙুলের খেলায় তালুর মর্দনে গা গরম করে তুলছে। সুড়সুড়ি জাগাচ্ছে অনুভূতি প্রবন দেহে। অনির্বাণের হাতের স্পর্শ সোজা হয়ে বসতে দিচ্ছে না রুমাকে, দেহের ভেতরের অবস্থার পরিবর্তনে উসখুস করছে তখন থেকেই। আগে থেকেই কল্পনায় ভেসে যাওয়া মেঘের নরম ছোঁয়াতে গরম হয়ে থাকা শরীরটা প্রেমিকের উষ্ণ স্পর্শে আরও তাতিয়ে উঠছে। সমস্ত শরীর থেকে রক্ত দ্রুত বেগে ছুটছে মস্তিষ্কের দিকে। রক্তের গরমে নাকের ডগায় ঘামের মুক্তার মত বিন্দু জমতে শুরু করেছে। শ্বাসের দীর্ঘসূত্রতায় নাকে পাটা গুলো ফুলে উঠছে।
অনির্বাণের সুযোগ সন্ধানী মন কেবলি পায়তারা করছে শরীর খুঁজে নেবার। ওর সচল হাত ফাঁক খুঁজছে প্রেয়সীর নরম বুকে চড়ে বেড়াবার। তবে মনে হালকা ভয়, যদি রুমা রিয়্যাক্ট এ পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। রাস্তাঘাটে বিব্রত হতে চায় না সে তবুও মনের খুচখুচ কমছে না। মনের মাঝে দু-টানা চলার মাঝেই আঙুল গুলো রুমার হাতের নিচ দিয়ে রাস্তা করে নেবার চেষ্টা করছে। লক্ষ একটাই প্রেয়সীর বুকের উপর জেগে উঠা এভারেস্ট জয় করা। তবে রুমাও সহজে রণে ভঙ্গ দেবার মেয়ে নয়। সেও হাত চেপে অনির্বাণ কে বাঁধা দেয়, তবে সেই বাঁধা টা কতক্ষণ টিকে থাকে সেটা সময় বলে দিবে। অনির্বাণের আঙুল খেলতে শুরু করে রুমার তুলতুলে শরীর নিয়ে। রুমার গায়ে কাতুকুতু লাগতেই নড়েচড়ে বসে। হাসি খেলতে থাকে ঠোঁটের কিনারায়। এবার খানিক ধৈর্য হারা অনির্বাণ জোর খাটাতে চায়, তবে তার প্রেয়সী আর পরীক্ষা নিতে নারাজ। নিজের শরীরটা হালকা নরম করতেই রুমার বগলের নিচ দিয়ে অনির্বাণ হাত এগিয়ে যায় নরম পর্বত চূড়ার দিকে৷ পুরোটা হাতের মুঠোর আয়ত্তে আসে না, তবুও হাতের তালুতে পিষে দেয় নরম মাংসেরঢিপি টাকে৷ শক্ত মর্দনে হিসিয়ে উঠে রুমা তবু দাঁতে ঠোঁট চেপে ধরে গোঙানির শব্দটাকে আটকে রাখতে চায়। নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে অনির্বাণ কে আটকাতে চায় তবে তাতে সুবিধা হয় না তেমন কোন। আজ বুঝি অনির্বাণ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে নিজেকে ছুটাচ্ছে দুরন্ত ঘোড়ার মত যে নাকি অশ্বমেধ যজ্ঞের সেই ঘোড়া যার পথ অবরোধ করলেই যুদ্ধ অনিবার্য৷ রুমাও হয়তো সেটা বুঝতে পেরে ওড়না টা টেনে বুকটা ভালো করে ঢেকে দেয়। যেন ওদের ক্রিয়াকলাপ বাকিদের চক্ষুগোচর না হয়।
প্যাডেল দেয়া রিক্সা টা এগিয়ে চলছে ঢিমেতালে চালক মহাশয় ডানে বায়ে হেলেদুলে পায়ের চাপে প্যাডেল ঘুরাচ্ছে।
আলেয়ার হৃদয়ে হাওয়া লেগেছে সদা বসন্তের হাওয়া। এ হাওয়ায় ফাগুনের মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে থাকে, মন পল্লবে নতুন কচি পাতার আবির্ভাব ঘটতে থাকে। নতুন কুড়িতে ফুলের পাপড়ি ধরছে তাতেই ভ্রমরের আনাগোনা বাড়ছে। হৃদয় আকাশে রঙধনুর সাতরঙা ছটায় উজ্জল হয়ে উঠে মুখমণ্ডল। শরীর জুড়ে খেলা করে অনুভূতির অদ্ভুত সব নতুন নতুন খেলা। মন যেন নতুন উড়তে শেখা পাখি, বারবার ডানা ঝাপটায় উড়ে যেতে। শূণ্যে ভেসে বেড়াতে আর নতুনত্বের স্বাদ নিতে।
সুমনের উপস্থিতির প্রভাব আলেয়ার আমুল বদলে যাওয়ার পেছনের সবচেয়ে বড় কারিগর। আজকাল বড্ড উড়ু উড়ু করা মনের নাগাল পায় না সে। কোন এক মায়াবী জগতে তার বাস, যেখানে কল্পনার ছলেও পাওয়া যায় স্বর্গ সুখের আভাস। ভাবতে ভালো লাগে ভালো লাগে গুনগুনিয়ে গান গাইতে। ভালো লাগে দুষ্টুমির ছলে মান অভিমানের খেলা খেলতে। নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, ভালো লাগে কল্পনার অলীক সাগরে সাঁতরে বেড়াতে। ভাগ্যিস সেখানে ডুবে যাবার কোন ভয় নেই, ভয় নেই বেদনার নীলে তলিয়ে যাবার।
আজ কৌশিক স্যারের শরীরটা ভালো নেই তাই পড়ানোর ঝামেলা নেই। তবে কয়েকটা কাজ আছে সেই সাথে নিজের পড়ার একটা বিষয় সামান্য বাকি ছিল তাই সেটাই স্যারের বাসাতেই করে নিচ্ছিলো৷ তবে আজ কেন জানি কাজে গতি নেই, মন বারে বারে খেই হারাচ্ছে। এই জন্যই বলে "অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাস"। সেই কারণেই বারংবার সুমনের খেয়াল খেলা করছে মনের উঠোন জুড়ে।
সুমনের অদ্ভুত অদ্ভুত সব আবদার আর ইঙ্গিত বহ কথা গুলো কানের কাছে বাজছে। যখন সুমন কথাগুলো বলে তখন রাগ হলেও অন্যসময় সেগুলো ভাবতে গেলেই কেমন একটা শিরশির ভাব অনুভব হয় সমস্ত শরীর জুড়ে। মাথায় ঘুরপাক খায় নানান খেয়াল, ঠোঁটের কোনে জেগে উঠে মিষ্টি হাসি। উচাটন মন আজও তেমন ভাবনার সাগর মন্থনে নেমেছে আলেয়া, ওর নিজের সাথেই নিজের কথোপকথন। সেখানে কল্পনায় সুমনের সাথে চলছে আলেয়ার প্রেম আলাপন....
জানো আমার মনের খোলা আকাশ জুড়ে, তোমার অপেক্ষায় অনেক কত শত মেঘ বয়ে যায়। অপেক্ষায় থাকি আবার কখন আসবে তুমি আবার আমার মনের বারান্দায়, তোমার ভাবসাতেই আমার সময় কেটে যায়। আবার কি আসবে তুমি, আমার ভালো লাগার অনেক ইচ্ছেঘুড়ি তোমায় নিয়ে আমি আকাশ পাঠাবো। তোমার মনের আকাশে যেখানে গাইবে তুমি আনমনে। আমি চিঠি লিখে তোমার আকাশে পাঠাবো। তোমার মনের আকাশের বিস্তৃত খোলা মাঠে গান গাইবো, বসন্তের বাতাসে কোকিলের সুরে।
আমার মনের কোনের রঙ্গিন বাতাস তোমার অপেক্ষায়।অনেক সৃষ্টি বয়ে যাবে তোমার বুক জুড়ে, তখন কি আসবে তুমি আবার আমার মনের বারান্দায়। তোমার আলো বয়ে যায় আমার দৃষ্টি জুড়ে পথের দিশারী হয়ে। আবার আসবে তুমি নাকি, আমার ভালো লাগার রঙিন ইচ্ছেঘুড়ি হয়ে।
কারো শুকনো কাশির শব্দে ভ্রম ভাঙে আলেয়ার, পাশ ফিরে মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখে কৌশিক দাঁড়িয়ে আছে ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি। আলেয়া থতমত করে উঠে দাঁড়ায়, কি বলবে সেটা ভাবতে গিয়ে ইতস্তত বোধ করে।
স্যা...আআর আপনে ক..কঅখন এলেন
হাতের ইশারায় আলেয়া কে বসতে বলে
বসো বসো বারবার উঠে দাঁড়াতে হবে না। তা কি ব্যাপার ওমন মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছিলে তখন থেকে।
আলেয়ার মুখ লাজে রাঙা হয়ে উঠে, স্যার না জানি কখন থেকে এখানে দাড়িয়ে আছে। ইশশ! স্যার কি কিছু বুঝতে পারলো,
না মানে স্যার ঐ একটা বিষয় আর কি...
হুমম বুঝতে পেরেছি হয়তো ব্যাপারটা (মুখটা বিস্তৃত করে হাসি ফুটে উঠে)
অনির্বাণ রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেটের পাশেই টিকিট কাউন্টারের দিকে যেতে লাগলো পেছন পেছন রুমাও চলছে। রিক্সা থেকে নামার আগেই রুমা ওড়নাটা ঘুমটার মত করে টেনে দিয়েছে মুখের উপর। জায়গাটা কপোত-কপোতীদের বিশেষ করে যারা একটু একান্তে সময় কাটাতে চায় কিন্তু হোটেল রুম নেবার ঝক্কি পোহাতে চায় না তাদের জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেনের গাছের আড়াল সবচেয়ে উত্তম জায়গা। কপোত-কপোতীদের প্রেমলীলার হালকার উপর ঝাপসা খেলা গুলো ঝুপের আড়ালে বেশ ভালোই চলে। প্রকৃতির নিরিবিলি পরিবেশে তাদের বিরক্ত করার কেউ নেই, আশপাশেরর সবাই ব্যস্ত নিজেদের স্ব স্ব কর্মে। তবে আরও ভালো ও নির্ভার পরিবেশ চাইলে গার্ডদের কিছু চা নাস্তার মূল্য ধরিয়ে দিলেই ব্যাস। পাঁচ তারকা হোটেলেও বোধহয় এমন পরিবেশ পাওয়া যাবে না।
সারি সারি গাছেে মাঝ দিয়ে চলাচলের চিকন রাস্তাটা ধরে অনির্বাণ আর রুমা এগিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার পথে মন না চাইলেও দুষ্টু চোখ জোড়া এদিক ওদিকে নজর ফেলে। আর তাতে যা হবার তাই হয় আলিঙ্গনে বাঁধা যুগলের লীলাখেলা দৃষ্টিগোচর হয়েই পড়ে৷ আর সঙ্গে সঙ্গে মন আর শরীর দুটোই মুচড় দিয়ে উঠে। হৃদপিণ্ডের হঠাৎ বাড়তি লাফালাফি জানান দেয় কামোত্তেজনার জোয়ার আসতে শুরু করেছে। সঠিক একটা জায়গা খোঁজার জন্য অনির্বাণ শকুন দৃষ্টি এদিক ওদিক চোখ বুলায়। আজ যেন গার্ডেনের মানুষের পদচারণা একটু বেশিই। উহু! সাধারণ মানুষ নয় কিন্তু এরা সবাই খেলোয়াড় খেলতে এসেছে, মনের খেলা নাকি শরীর খেলা সেটা জানতে হলে নজর রাখতে হবে।
অবশেষে একটা পরিষ্কার জায়গা দেখে রুমাকে নিয়ে ঐদিকে এগিয়ে যায় অনির্বাণ। সবুজ ঘাসের গালিচায় বসে পড়ে দুজনে, উঁচু গাছের ঝোপটা আড়াল করে দেয় ওদের। অনির্বাণ যেন আজ একটু বেশিই গা ঘেসে বসেছে রুমার। দুটো উতপ্ত শরীরের ক্রিয়াশীল ইলেকট্রনের ছোটাছুটি আরও বেড়ে যায় দেহ দুটির ঘর্ষণে। ইলেক্ট্রনের স্থানান্তরে শক্তির উৎপন্ন মানবদেহের ক্ষেত্রে যেটা উত্তেজনার সৃষ্টি। প্রতিটা কোষ অত্যাধিক সচলতায় নিজেদের সংবেদন বাড়ায়। দ্রুত চলতে থাকা নিঃশ্বাসে আসা অক্সিজের পুড়িয়ে এনার্জি তৈরী করতে থাকে। বাড়তি এনার্জি মন আর দেহের উদ্দীপনা বৃদ্ধি করতে থাকে৷ হাত পায়ের শিরায় টান ধরে, মস্তিষ্কের স্নায়ুর হরমোন নিঃসরণে প্রভূত পরিবর্তনে কামনার জাগরন ঘটে। কামচারী দেহ আকর্ষণ অনুভব করে বিপরীতের প্রতি, ভোগের নেশা চড়তে থাকে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে।
অনির্বাণের বাহু জোড়া আঁকড়ে ধরে নিজের প্রেয়সীকে নিজের বুকের সাথে। ওর বুকের ধুকপুকানির আওয়াজটা রুমার কানে পৌঁছে গেছে এতোক্ষণে। সে নিজেকে এলিয়ে দেয় প্রেমিকের হৃদয় বালিশে। হাতের টানে রুমাকে নিজের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে, যেন নিজের সাথে মিশিয়ে নেবার ইচ্ছা জেগেছে মনে। অনির্বাণের মাথা নেমে এসেছো রুমার কাঁধের কাছে, উষ্ণ নিঃশ্বাসে পুড়িয়ে দিচ্ছে প্রেয়সীর কোমল ত্বক। অনির্বাণের নিঃশ্বাসের শব্দে রুমার শরীর জুড়ে রক্তের স্রোত বেগ বাড়ায়। মাথার মাঝে কামনার পোকা গুলো কিলবিল করতে থাকে। শিরদাঁড়া কেমন অবশের মত লাগে, হাত পায়ে তালু ঘামতে শুরু করে৷ অনির্বাণের ঠোঁটের স্পর্শে কোমল চামড়ায় আগুন ধরায় তবে তার মাঝে অদ্ভুত এক সুখের আভাস। পুড়ে যাবার মাঝেও যেন অসীম সুখ লুকিয়ে আছে। ঘাড়ে কাঁধে পাগলের মত চুমো খেতে থাকা অনির্বাণের মাথা নিজের সাথে চেপে ধরে রুমা। পাল্টা আক্রমণে ও নিজেও সিক্ত করতে থাকে প্রেমিকের বুক। প্রতিটা চুমোতে উত্তেজনার পারদ বাড়ায় শরীরে। অনির্বাণের হাত পাগলের মত ছুটতে থাকে প্রেমিকার শরীরে, শক্ত মর্দনে রক্তিম করে তুলে নরম চামড়া।
কাম ভাবে আবিষ্ট দুটো শরীর যেন নিজেদের নিয়ে মেতে উঠেছে খোলা আকাশের নিচে৷ না না মাথার উপর নাম না জানা বিশাল গাছ ছাতির মত নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে বুঝি ওদের মতো কপোত-কপোতীদের আড়াল দিতে। একে অন্যের ঠোঁটের দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে চুম্বনের প্রগাঢ় স্বাদ আস্বাদনে। চোখ বন্ধ করে চুমোতে লিপ্ত অনির্বাণ রুমার কাছে হয়তো এই ধরনী জনমানবহীন কোন এক সবুজ উপত্যকা৷ যেখানে ওদের উপস্থিতিটাই একমাত্র কাম্য দুটো উত্তেজিত দেহকে শান্ত করার মহান উদ্দেশ্যে। এর মাঝেই অনির্বাণের চঞ্চল হাত খানা নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নিয়েছে রুমার বুকের নরম মাংসেরঢিপি গুলোকে। জামার নিচ দিয়ে চালনা করে হাতে উষ্ণ স্পর্শ নিজের বুকের মোলায়েম ত্বকে অনুভব করতেই কাটা মাছের মত তড়পাতে রুমা৷ শরীরে ভেতরে বুঝি ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে ততোক্ষণে। অনির্বাণের প্রতিটা ছোঁয়াতে যেন কামনার আগুনের ফুলকি হয়ে রুমাকে পুড়াচ্ছে। অনির্বাণের ভেজা ঠোঁট আস্তে আস্তে নেমে আসে রুমার বুকের কাছে। হালকা করে জিভের ডগা বুলাতে থাকে মসৃণ চামড়ার উপর। ওমন আলতো উষ্ণ ছোঁয়াতে পুরো শরীর কেঁপে অদ্ভুত এক শিরশিরে অনুভবে। ভালোলাগার আবেশে প্রেমিকের মাথা চেঁপে ধরে নিজের বুকের সাথে।
হঠাৎ করেই শুকনো পাতা পায়ে মাড়ানো মচমচে শব্দে কানখাড়া হয় দুজনার। এদিকেই হয়তো কেউ আসছে, সাবধানতার জন্য একে অন্যকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে। খানিক তফাতে বসা দুজনেই নিজেদের পোশাক ঠিক করতে ব্যস্ত, তবে তাদের এলোমেলো নিঃশ্বাস আর হাঁপাতে থাকার দৃশ্য ইশারা করে কিছু ঘটার।
অতি উচ্ছাসে উদ্বেলিত মাধুরী মন আজ যেন উড়তে জানা পাখির মতই, সদা ডানা ঝাপটায় বিশাল আকাশের নীলে ডানা মেলে নিজেকে ভাসাতে। আজ এই প্রথম মায়ের কোন কাজের অনুরোধে এতটা শান্তি আর আনন্দ অনুভব করছে সে। ছোট্ট একটা কাজ তবুও সেটা গুরুত্ব আজ যেন ওর কাছে বিশাল কয়ে ধরা দিয়েছে৷ এর মূল্য হয়তো জাগতিক হিসেবে পরিমাপ করা যাবে না।
মাধুরী যতই নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করুক না কেন ওর মুখমন্ডলে ভেতরের উত্তেজনার রেশ টা ফুটে উঠছিলো। জুসের বোতল খানা নিয়ে মাধুরী এগিয়ে যায় অতিথির দিকে, আর মনে মনে সাজিয়ে নেয় কি বলবে সে। এর আগেও যতবার ভেবে নিয়েছে কি বলবে কিন্তু মুখোমুখি দাঁড়াতেই সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। কি বলবে কি করবে সেটাই তো তখন মাথায় আসে না কি এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সেটা এক মাধুরীই জানে।
গেটের কাছেই নিখিলের সাথে দেখা হয় মাধুরীর, আগের দারোয়ানের সাথে ভালো বুঝাপড়া ছিল মাধুরীর। তখন অবশ্য এই পরিত্যক্ত বাড়িতে ঘনঘন যাতায়াত ছিল। তবে নিখিল কে ওর তেমন একটা সুবিধার মনে হয় না, আগে প্রায়ই পানির লাইনের এখানে ওকে বাদানুবাদ করতে দেখেছে৷ নিখিল মিষ্টি হেসে ছোট গেটটা খুলে দেয় মাধুরী কে ভেতরে যাবার রাস্তা করে দিতে। মাধুরী আপন মনে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে, আর মাত্র কয়েক পা তারপরই লক্ষ্যে পৌঁছানোর হাতছানি। গুটি গুটি পায়ে এগোতে থাকে মাধুরী, তবে সদর দরজার কাছেই ওর পা থমকে দাঁড়ায় মস্তিষ্কের সতর্কবার্তায়। বসার ঘরে দুজন মানুষের কথোপকথন ওর কানে বাজে, উঁকি দিতেই চোখে পড়ে কৌশিক আর আলেয়ার হাসতে হাসতে কিছু বলার দৃশ্য। মাধুরী সেখানেই স্থির জয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, মূহুর্তেই মনের কোনে বিষাদের রাগ বাজতে থাকে। হৃদয়ে ভয় উঠে হারিয়ে ফেলার যে মানুষটা যে নাকি কখনো তার হয়েই উঠেনি। তবুও কেন মন হয় তাকে কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে ওর কাছ থেকে। একজন মানুষ আরেক জনের সাথে কথা বলতেই পারে সেটা স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু মাধুরীর কেন মনে হিংসে হয় সেটাই বুঝতে পারে না। মনে কেন সংশয় জাগে সেটার ভিত্তি কি তাও অজানা রয়ে যায়। মাধুরীর মন আঙিনায় রাগ জমা হয়, ও মনে মনে ভাবে দিব্যি তো হাসি খুশিতেই মেতে আছে, তাহলে আর কিসের শরীর খারাপ তার। আর অসুস্থই যদি না হয় তাহলে আর জুস দিয়ে কি করবে? দিবে না সেটা ওকে কোন দরকার নেই এটার কেনই বা দেবো...। মাধুরী সেখান থেকে চলে আসার জন্য পেছন ঘুরতেই আবার থমকে দাঁড়ায়, ভেতরের কিছু কথা আবারও কানে আসছে...
তোমাকে না বারণ করেছি আমাকে বারবার স্যার বলে ডাকবে না আমার অস্বস্তি হয় (কৌশিকের কথা টা শুনে মাধুরীর গায়ে জ্বালা ধরে,
ইশশ! ভাব দেখো তাকে নাকি স্যার বলে ডাকলে অস্বস্তি হয় তাহলে কি বলে ডাকলে খুশি হবে?? সেটাও বলে দিক..
বিড়বিড় করতে থাকে মাধুরী)
তাহলে কি বলে ডাকবো আপনাকে??
আগে আপনে আজ্ঞে টা বন্ধ করো নিজেকে কেমন বুড়ো বুড়ো লাগে।
(মাধুরী আবারও বিড়বিড় করে উঠে
এহহ! উনি যেন ২০ বছরের যুবক..)
মাথা চুলকায় আলেয়া,
তাহলে!!
তুমি আমার বয়সে ছোট আর আমার যদি একটা বোন থাকতো তবে তোমার বয়সীই হতো। তবে তো মিটেই গেল তুমি আমাকে দাদা বলে ডেকো, কেমন!
(ওদিকে মাধুরীর আনন্দ দেখে কে!৷ পারলে একটু নেচেই নিতো এখানে। সে যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেয়েছে। যাক বাবা একটা ব্যাপার তো ক্লিয়ার হলো। ওনাকে নিজের বোনের মত দেখে মানে তারা ভাই বোন তাহলে যত খুশি কথা বলুক নো সমস্যা)
আচ্ছা চেষ্টা করবো।
ফিরে যেতে উদ্যত মাধুরী নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টায়, না এবার নিজের লক্ষ্যে এগোতে হবে গন্তব্যে সামনে থাকা কালো মেঘের আস্তরণ সড়ে গিয়েছে৷ মাধুরী আবার এগিয়ে যায় ঘরের ভেতরে যাবার উদ্দেশ্যে।
গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে মাধুরী কৌশিক আলেয়াদের দিকে। ওরা পিছন ফিরে বসে আছে তাই ওকে দেখতে পায় নি। মাধুরী ওদের পেছনের টি টেবিলে হালকা শব্দ করে জুসের বোতল টা রেখে বলে উঠে,
স্যার মা আপনার জুস টা পাঠালো আপনার নাকি শরীরটা ভালো না তাই। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন...
হঠাৎ মাধুরী কন্ঠ শুনে ওরা দুজনেই আতকে উঠে পিছন ফিরে, মাধুরীকে দেখেই কৌশিকের মুখের হাসিটা আরো বিস্তৃত হয়
হুমম শরীরটা আজ ভালো লাগছে না, আন্টিকে আমার পক্ষ থেকে একটা থ্যাংকস দিও।
শরীর যে কেমন খারাপ সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি, দিব্যি তো হা হা হি হি করছিলো এতোক্ষণ
(মাধুরীকে বিড়বিড় করতে দেখে কৌশিক হালকা এগিয়ে আসে ওর দিকে)
কি ব্যাপার কিছু কি বললে?
থতমত খায় মাধুরী
ন..না না কি কিইই বলবো আবার। ঐ তো জুসটা খেয়ে নিন।
এখনি খেতে হবে?
(আহ্লাদী ভঙ্গিতে বলে উঠে কৌশিক)
ওমন ভাব দেখে রাগ হয় মাধুরীর, চোখ দুটো বড় বড় করে বলে
হুমম এক্ষুনি, এটা খেলে তবেই না শরীর টা ভালো লাগবে।
মাধুরী কে রাগতে দেখে কৌশিক মিষ্টি করে একটা হাসি দেয়,
তাহলে এখনি খেয়ে নিচ্ছি, কি বল..
হুম
পাশেই বসে থাকা আলেয়া মুচকি মুচকি হাসছে।
মাধুরী একটা গ্লাস এনে তাতে জুস ঢেলে দিয়ে কৌশিকের দিকে এগিয়ে দেয়। মাধুরীর হাত থেকে গ্লাস টা নেবার সময় ওর আঙুল গুলো ছুঁয়ে যায় ছোট্ট চাঁপা কলির মত নরম মাধুরীর আঙুল গুলোকে। ঘটনা টা কি ইচ্ছাকৃত নাকি অনভিপ্রেত সেটা জানার দরকার নেই আমাদের আমরা শুধু উপভোগ করে চলেছি। কৌশিক হালকে স্পর্শেই মাধুরীর সারা দেহে বিদ্যুৎ খেলে যায়। মন জুড়ে অসময়ে বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করে৷ অদ্ভুত এক অনুভূতিতে গ্রাস করে নেয় ওকে, নিজের নজর লুকিয়ে রাখে কৌশিকের কাছে হয়তো ধরা পড়ে যাবার ভয়। মনে হয় ওর চোখের দিকে তাকালেই যেন বলে দিতে পারবে ও কি বলতে চাইছে, কি ঘটে চলেছে অন্তরের গুপ্ত প্রকোষ্ঠে। মাধুরীর মন অস্থির হয়ে উঠে কেন জানি নিজেতে আটকে রাখতে পারে না, ওখানে দাড়িয়ে থাকলে হয়তো কিছু একটা ঘটেই যাবে তাই ও পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।
আপনি সবটা জুস শেষ করবেন কিন্তু, আমি পরে এসে বোতল টা নিয়ে যাবো।
কথাটা বলেই ও দৌড়ে বেড়িয়ে আসে ওখান থেকে। এক দৌড়ে নিজেদের বাসার সামনের বাগনটার কাছে এসে হাঁপাতে থাকে। একটু ধাতস্থ হতেই বোকার মত হাসতে থাকে...
মাধুরীর মন কিছু বলতে চাইছে তবে সেটা কেনজানি মুখ ফুটে আসছে তাই সেটা ভেতরে ভেতরেই আওড়াতে থাকে
আমার মন কেমনের বারান্দায় তুমি এসো তবে সেখানে তুমি হেসে দাঁড়িওনা প্লিজ। এতে যে আমার দুটো ক্ষতি এক, আমার মন কেমন টা হারিয়ে যাবে
দুই, আমি হয়তো আমাকে ভুলে যাবো!
দুটোই বেশুমার ক্ষতি!
তাই এসোনা প্লিজ তুমি এসো না, যদিও বা তুমি এসে দাঁড়াও তবে প্লিজ হেসো না! তুমি এসে যদি সত্যিই আবার চলে যাও গতবারের মতো, তবে আমি তোমার সাথে সাথে এই মন কেমনটিও হারাবো। শুধু কি তাই আমার এই বারান্দার বন্ধু বাতাসটিকেও যে হারাবো।
তাই তুমি এসোনা, ওখানে এসোনা আর। আমার মন কেমনের বারান্দায় এসো না,প্লিজ!!
আজ অনেকদিন পর আবার রুগ্ন টেবিলটার উপর রাখা ছোট্ট আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্মী। খানিক আগেই বাড়ি ফিরে গা ধুয়ে পড়নের শাড়িটা পাল্টে সন্ধ্যা বাতি দিয়ে ঘরে এসেছে। আজ আর অন্যদিনের মত আটপৌরে শাড়ি নয়, ট্রাঙ্ক থেকে একটা ভালো শাড়ি বের করে সেটাই পড়েছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো আঁচড়িয়ে বেনী করে নিয়েছে। মাঝখানের সিঁথি ভর্তি সিঁদুর টা জ্বলজল করছে। এবার টেবিলে রাখা টিপের পাতা থেকে একটা লাল রঙের টিপ পড়ে নিল কপালে৷ চোখের নিচে কাজল টেনেছে আর শুকনো ঠোঁটে লিপস্টিকের আবরণ। আজ অনেকদিন পর মুখে হালকা স্নো পাউডার দিয়েছিল লক্ষ্মী। তাতেই যেন ওর সৌন্দর্যে প্লাবন এসেছে। নিজেকেই নিজের কাছে কেমন নতুন লাগছে। বারবার আয়নার সামনে এদিক ওদিক ঘুড়ে নিজের পরিপাটি রুপ লাবণ্য টাকে উপভোগ করছে৷ নিজেকে নিয়ে আজ যেন সে বিভোর।
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে আতকে উঠে লক্ষ্মী, বুকের ভেতরটা ধুকপুক করতে থাকে৷ ওর মন হয়তো জানে কে আসতে পারে এই মূহুর্তে, তবুও আড়ষ্ট গলায় জিজ্ঞেস করে,
কেডা?
বিপরীত থেকে উত্তর আসে,
আমি...
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনেও আজানা কারণে লক্ষ্মীর শরীরটা হালকা কেঁপে উঠে।