14-06-2023, 12:24 AM
পর্ব -২৪
আমি তোমাকে চেয়েছি,
সকাল, দুপুর, রাত্রির মত করে।
আমি তোমাকে চেয়েছি,
মেঘেদের মত করে, বৃষ্টির মত করে।
আমি তোমাকে চেয়েছি,
আমার সকল সুখে, আনন্দে, দুঃখে।
আমি শুধু তোমাকে চেয়েছি,
আমার মন খারাপে, আমার একাকিত্বে!
আমি তোমাকে চেয়েছি,
আমার সকল চাওয়াতে, হাসিতে।
আমি শুধুই তোমাকে চেয়েছি,
আমার সকল ভালোবাসাতে!
রুদ্র,
তোকে কখনো বলিনি, আমি কেমন আছি। আমি কেমন আছি সেটা অবশ্য বলার দরকার পরে না। আমি নিশ্চিত, আমার চিঠি পড়ে তুই বুঝে যাস আমি কেমন থাকি, কেমন আছি, কেমন থাকবো? তবে আজ আমি ভালো আছি। প্রচন্ড রকম ভালো আছি। ভালো থাকার কারণ কি জানিস? আজ আমার মন ভালো। ভীষণ রকম ভালো। সেটা অবশ্য তোর জন্যই। হঠাৎ আজ পুরনো ডায়রিটা খুলতেই একটা পুরনো চিরকুট পাই। সেখানে গোটাগোটা অক্ষরে তোর হাতের লেখায় উপরের লাইনগুলো লেখা ছিল।
রুদ্র, তোর কি সেদিনের কথা মনে আছে? যেদিন আমি তোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, তার পরের দিন তুই আমার হাতে গুজে দিয়েছিলি একটা নীলরঙা চিরকুট। তখন সেই চিরকুট আমি রেগে ফেলে দিয়েছিলাম রাস্তায়। তারপর তুই চলে যেতেই আমি আবার কুড়িয়ে নিয়েছিলাম। কি ভেবে কুড়িয়ে নিয়েছিলাম তখন বুঝিনি। এখন জানি, আসলে তোর মত একটা ইডিয়টকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কেনো ভালোবাসলাম তোকে? পৃথিবীতে এতো এতো মানুষ থাকতে তোকেই কেনো ভালোবাসতে গেলাম? তুই-বা আমাকেই কেনো ভালোবাসলি? এই সব কথা ভেবেছিস কখনো? আচ্ছা, এই সব কথা বাদ দিয়ে আজকের কথা বলি। আজ হঠাৎ চিরকুটটা পেয়েই সেই পুরনোদিনের স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। সেই সব দিন ছিলো বৈচিত্রময়, ছিলো ভালোবাসায় মুড়ানো এক একটা দিন।
রুদ্র,
আজ আমি চিরকুটের লেখাটা আমি ভীষণ ভাবে অনুভব করতে পারছি। আজকে চিরকুটটা পড়ে যতটা অনুভব করতে পেরেছি, তখন এতোটা পারিনি। কি সুন্দর করেই না তুই বলেছিস; তোমাকে চাই, সকাল, দুপুর, রাত্রির মত করে। তোমাকে চাই, মেঘেদের মত করে, বৃষ্টির মত করে। কত সহজ দুইটা লাইন কিন্তু যতটা সহজ সরল ততটা কি? সকাল ছাড়া যেমন দুপুরের অস্তিত্ব নেই, দুপুর ছাড়া রাত্রীর, রাত ছাড়া সকালে, মেঘ ছাড়া বৃষ্টির, আমাকে ছাড়া তোর। তারপর বলেছিস; তোমাকে চাই, আমার সকল সুখে, আনন্দে, দুঃখে। আমার মন খারাপে, আমার একাকিত্বে! আমার সকল চাওয়াতে, হাসিতে। আমার সকল ভালোবাসাতে! আমাকে কি করে তুই এতোটা ভালোবাসলি, যে আমাকে ছাড়া তোর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না? আমি আসলেই বোকা। আমি তোর ভালোবাসার মূল্য দিতে পারি নি!
রুদ্র, আজ কোনো মন খারাপের কথা বলবো না। চিঠি জুড়ে আজ শুধু ভালোবাসার কথাই হোক, ক্ষতি কি? ভালোবাসার কথা এলেই, কি মনে পড়ে জানিস? মনে পড়ে, সেই সব দিনের কথা। একটা পাগল প্রেমিক, আর একটা পাগলী প্রেমিকা, শহর জুড়ে কি সব কান্ড টা-ই না ঘটাচ্ছিল।
এই মুহুর্তে আমার চিঠি পড়ে তোর ঠিক কোন ঘটনার কথা মনে পড়ছে? যদি আমাকে জিজ্ঞেস করিস, তাহলে আমি বলবো যেদিন ভ্যানের পিছে বসে শহর ঘুরেছিলাম, সেদিনের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। সেবার কি কান্ড ঘটিয়েছিলি তুই, মনে আছে তোর? আমরা-তো সবসময় রিকসায় ঘুরি। সেবার ঠিক করলাম ভ্যান গাড়িতে করে শহর ঘুরবো। তারপর দুইজনে একটা ভ্যান ঠিক করলাম। কিন্তু ভ্যান চালক বলল, সামনে খালি রেখে পিছে বসা যাবে না। তখন বহুকষ্টে ছোট্ট দুইটা ছেলেকে নিয়ে এসে ওদের সামনে বসিয়ে আমরা দুইজন বসলাম পিছে। তারপর ঘুরে বেড়ালাম শহরের অলিগলির পথ ধরে অজানা গন্তব্যে। তখন প্রায় সন্ধ্যা ছিলো। আকাশে তখনও দিনের শেষ আলোটুকু রয়ে গেছে। হঠাৎ তুই আমার আরেকটু কাছে সরে এলি। তারপর যেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখলি তুই, ওমনি রাস্তা দিয়ে উল্টোদিকে যাওয়া দুইটা ছেলে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে রইলো আমাদের দিকে। আমার তখন ভীষণ লজ্জা লাগছিল। আমি হাত দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলাম। তোর দিকেও তাকাতে পারছিলাম। তুইও না, হুটহাট কি করিস নিজেই বুঝিস না। আস্ত একটা পাগল।
রুদ্র, এখন আর কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে না। এখন আমি ডুব দিবো আমাদের স্মৃতিতে। তারপর হারিয়ে যাবো এই পৃথিবী থেকে বহুদূরে অন্য এক জগতে। যাওয়া আগে হঠাৎ দেখা কবিতার মত করে তোকে আজ বলতে ইচ্ছে করছে, "আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে- কিছুই কি নেই বাকি?" নাকি, "রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে৷"
ইতি তরু।
রিয়া চিঠিটা পড়া শেষ করে চোখ বন্ধ করলো। সে সকাল থেকে তরুর চিঠি পড়ে যাচ্ছে। গতকাল রুদ্রের সাথে দেখা করতে গেলে, সে তাকে তরুর লেখা পাঁচটা চিঠি দিয়েছে। রিয়া-ই আগেরবার বায়না ধরেছিল, তরুর চিঠি পড়বে। সে প্রথমে ভেবেছিল রুদ্র আপত্তি করবে। কিন্তু তার এক কথায় রুদ্র রাজি হয়ে যাওয়াতে রিয়া খানিকটা অবাক হয়েছিলো।
দীর্ঘ সময় চোখ বন্ধ করে থেকে অবশেষে রিয়া চোখ খুললো। সে বুকের মধ্যে কেমন অদ্ভুত একটা কষ্ট অনুভব করছে। সেটা কার জন্য সে বুঝে উঠতে পারছে না। এছাড়াও তার মনে নানা প্রশ্ন জেগেছে। সে যতটুকু জানে, রুদ্রের সাথে তরুর কখনো দেখা হয় নি। তাহলে তরুর চিঠিগুলোতে সে কোন রুদ্রের কথা বারবার বলেছে। তরু কোন রুদ্রকে ভালোবাসে? রুদ্রকে প্রশ্নগুলো করলে সে কি মনে করবে। সে সবসময় দেখেছে, তরুর প্রসঙ্গ এলেই রুদ্রের মন খারাপ হয়ে যায়।
রিয়া চিঠিগুলো ভাজ করে সুন্দর ভাবে রেখে দিলো। চিঠিগুলো রুদ্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সে ফিরিয়ে দেওয়া আগে আরেকবার চিঠিগুলো পড়বে। এতো সুন্দর করে কীভাবে মানুষ চিঠি লিখে? তরুর চিঠিগুলো আসলেই ভীষণ সুন্দর। যে-ই পড়ুক না কেনো, চিঠিগুলো পড়ার পরে তরুর প্রতি অজান্তেই একটা মায়া জন্মে যাবে। রিয়ারও মায়া লাগছে তরুর জন্য। সেও কৌতুহল বোধ করছে। এতোদিন সে শুধু রুদ্রের মুখে তরুর কথা শুনেছে। আজ তরুর নিজের কথা চিঠিতে পড়ে মেয়েটার প্রতি তার ভীষণ মায়া হচ্ছে। তার ও ইচ্ছে করছে তরুকে একবার দেখতে। তার সাথে কথা বলতে। তার গল্পটা জানতে।
রিয়ার এই প্রথম মনে হলো, রুদ্রকে দোষ দেওয়া যায় না। রুদ্রের জায়গায় অন্য কেউ হলে সেও তরুর খোঁজ করতো। তার নিজেরই এখন তরুর সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা অদ্ভুত। আজকাল সময়ে এই রকম মানুষ আছে তার ভাবতেই অবাক লাগছে। কিন্তু আসলেই আছে। এতো এতো মানুষের ভীড়েও কিছু মানুষ আছে যারা ভালোবাসতে পারে। কিন্তু এতো ভালোবেসে কেনো তরুর প্রতিটা চিঠিতে বিচ্ছেদের করুন সুর? রিয়ার মাথায় এলোমেলো হাজারও ভাবনা এসে জড় হচ্ছে একে একে। সে আর কিছু ভাবতে চাচ্ছে না, তবুও তরুর চিঠিগুলো বারবার তাকে ভাবতে বাধ্য করছে। তরুর কথা, রুদ্রের কথা, সে ক্রমাগত ভেবে যাচ্ছে।
রিয়া তার পরের দিনই রুদ্রের সাথে দেখা করলো। সে নিজের কৌতুহল নিজের ভেতর চেপে রাখতে পারলো না।
"একটা প্রশ্ন আছে?" রিয়া বলল।
"একটাই?" রুদ্র জিজ্ঞেস করলো।
"আসলে...! রিয়া কথা শেষ করতে পারলো না।
"আচ্ছা বলো। আমি উত্তর দিবো।" রুদ্র নিজ থেকেই বলল।
রিয়া আর রুদ্র বসে আছে একটা পার্কের বেঞ্চে। তারা আজ কফিশপে যায় নি। রুদ্র নিজ থেকেই বলেছে, চলো আজ অন্য কোথাও বসি। প্রতিদিন একজায়গায় যেতে ভালো লাগে না।
"কি ভাবছো?" রিয়া প্রশ্ন করবে বলেও তাকে চুপচাপ দেখে রুদ্র জানতে চাইলো।
"কোন প্রশ্নটা আগে করবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।" রিয়া সহজ সরল ভাবে বলল।
"একটা দিয়ে শুরু করলেই হয়।"
"আচ্ছা, রিয়া কি তোমাকেই চিঠি লিখছে? মানে আমি বোঝায়ে চাচ্ছি...!" এটুকু বলে রিয়া থামলো। তাকে আর কিছুই বলতে হলো না।
"তরুর চিঠিগুলো আমার কাছে, আমার ঠিকানায় আসছে ঠিকই। কিন্তু চিঠিগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা না।"
"তাহলে...?" রিয়ার মধ্যে কৌতুহল।
"আসলে আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম, কেউ মজা করে আমাকে ঠিঠি পাঠাচ্ছে। কিন্তু কয়েকটা চিঠি পড়ার পরে আমার ভুল ভাঙে। আর যত দিন যেতে থাকলো, তত আমি বুঝতে পারলাম কেউ আমার সাথে মজা করছে না। হয়তো, তরুর চিঠিগুলো ভুল করে আমার ঠিকানায় আসছে।"
"কিন্তু, চিঠিতে যে রুদ্র নাম লেখা।"
"সেটা কাকতালীয়। হয়তো, তরু যাকে চিঠি লিখছে তার নামও রুদ্র। আমাদের নামটা কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে।"
"তোমরা এখন যে ফ্লাটে থাকো, সেই ফ্লাটে আগে কারা থাকতো খোঁজ নিয়েছিলে?"
"কি বলতে চাচ্ছ?" হঠাৎই রুদ্রের ভিতর ভীষণ কৌতুহল জাগলো। সে আবার বলল, "তুমি কি বলতে চাচ্ছ? আমার এখন যে বাসায় আছি, সেই বাসায় আগে তরুর চিঠিতে লেখা যে রুদ্র, সে থাকত?"
"হ্যাঁ, সেটা হতেই পারে। আর সেটা হওয়ার সম্ভাবনাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি।"
"বিষয়টি আগে আমার মাথায়ই আসেনি। হ্যাঁ, এটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।"
"কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো, যদি কোন খোঁজ পাও। রুদ্রকে পাওয়া গেলে, তরুকেও পাওয়া যাবে।"
"আমরা এবাসায় এসেছি প্রায় দুইবছর হয়ে গেছে। এই বাসায় আসার ছয় মাস পরে হুট করে একদিন তরুর চিঠি আসা শুরু হয়। তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহের বুধবারে রেগুলার চিঠি আসতেই থাকলো। আনুমানিক আট মাসের মত তরুর চিঠি এসেছে। তারপর দেখতে দেখতে আরো অনেক মাস কেটে গেছে, তবুও তরুর আর কোনো চিঠি আসে নি।" রুদ্রের মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো। শেষের কথাগুলো বলার সময় তার কন্ঠের সুর কেমন অদ্ভুত ক্লেশকর শোনালো।
"হতাশ হয়ো না। একদিন আমরা ঠিকই তরুর খোঁজ পাবো। তুমি দেখো। আমার বিশ্বাস, আমরা তরুর খোঁজ পাবোই।" রুদ্রকে মনমরা দেখে রিয়া তাকে আত্মবিশ্বাস দেওয়ার জন্য কথাগুলো বলল। কিন্তু সে মিথ্যে বলেনি। তার মন বলছে, তারা একদিন ঠিকই তরুর খোঁজ পাবে।
"আশা করাই সবচেয়ে সুন্দরতম চিন্তা। আমরা আশা করি বলেই বারবার চেষ্টা করি। বারবার ব্যর্থ হয়েও মানুষ চেষ্টা করে। যদি মানুষের মধ্যে আশা না থাকতো, তাহলে পৃথিবীটা এতো সহজ সুন্দর হতো না।"
"উঁহু, একদম ঠিক বলেছ।" রুদ্রের কথাগুলো রিয়ার ভীষণ ভালো লাগল। সেও আশা করে একদিন সে ঠিকই রুদ্রকে পাবে। এই আশাটাই তাকে ভালো রাখে, সুখে রাখে।
"চলো, উঠি।"
"কোথায় যাবে?"
"সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখানে থাকাটা ঠিক হবে না।"
"রিকসায় ঘুরবে?" রিয়া আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
"আজও?"
"উঁহু! তোমার সাথে রিকসায় ঘুরতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। সারাটা জীবন যদি রিকসায়ই কেটে যেত, তাহলে মন্দ হতো না। দুইজনে গল্প করতে করতে জীবনটা কাটিয়ে দিতাম।"
রিয়ার কথা শুনে রুদ্র হেসে দিলো
"হাসছো কেনো?" রিয়া অভিমানী কন্ঠে জানতে চাইলো।
"এমনিতেই।" রুদ্র বলল।
"মিথ্যে বলবে না। আমার কথা শুনে হাসছো, তাই না? আচ্ছা, বোকার মত কথা বলার জন্য সরি।" রিয়ার মন খারাপ হলো। রুদ্র প্রায় সময় তার কথা শুনে হাসে। সেও হুটহাট বাচ্চাদের মত উল্টাপাল্টা কথা বলে। কিন্তু তার মনে তাৎক্ষণিক যা আসে সে সেটাই বলে দেয়। এই সামান্য কারণে হাসতে হবে? রুদ্রের প্রতি তার অভিমান ক্রমাগত বাড়ছে।
"মন খারাপ কেনো করছো? কেউ কি সারাজীবন রিকসায় কাটাতে পারে? হ্যাঁ ধরলাম পারবে কিন্তু রিকসা যে চালাবে সে কীভাবে সারাজীবন শুধু রিকসা চালিয়ে যাবে? এই কথা ভেবেই হুট করে হাসি পেয়ে গেলো। আচ্ছা, সরি। আর হাসবো না। মন খারাপ করো না, প্লিজ।"
"আমি মোটেও মন খারাপ করিনি। মন খারাপ কেনো করবো? আমি কে?"
"আচ্ছা আজ তুমি যতক্ষণ চাইবে, ততক্ষণ দুইজন রিকসা করে শহর ঘুরবো।"
"আমি কোথাও যাবো না। তুমি থাকো, আমি বাসায় চললাম।" রিয়া এটা বলেই বসা থেকে উঠে হাঁটা শুরু করলো৷
রুদ্র অবাক হলো। এই সামান্য কারণে রিয়া রাগ করবে সে বুঝতে পারে নি। সেও উঠে দ্রুত হেঁটে রিয়ার কাছে গেলো। সে তাকে ডাকলো। তাকে থামতে বলল। কিন্তু রিয়া সে সব কথা শুনলো না। সে হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।
রুদ্র ছুঁটে গিয়ে রিয়ার হাত ধরে রিয়াকে থামালো। সে বলল, "এভাবে মন খারাপ করে চলে যেও না। তাহলে আমার নিজেরই প্রচন্ড খারাপ লাগবে এটা ভেবে যে আমি কারো মন খারাপ করে দিয়েছি।"
"আমি মন খারাপ করি নি। আমি শুধু বাসায় যেতে চাচ্ছি।" রিয়া সোজাসাপ্টা বলল।
"একটু আগেই না বললে, রিকসায় ঘুরবে।"
"হ্যাঁ, বলেছিলাম। কিন্তু এখন ইচ্ছে করছে না।"
"আচ্ছা, এখন কি ইচ্ছে করছে?"
"আমি শুধু বাসায় চলে যেতে চাচ্ছি।"
"এখনো অভিমান করে আছ, তাই এরকম ভাবে কথা বলছ। আমি বললাম তো সরি। এবার অন্তত আমাকে মাফ করে দেও।"
"আমিও তো বললাম আমি রাগ করে নেই।"
"না, আছো। আমি সেটা বুঝতে পারছি। আচ্ছা বলো কি করলে রাগ কমে যাবে?"
"যা করতে বলব সেটা করবে?"
"হ্যাঁ, যদি তাতে তোমার রাগ কমে গিয়ে মন ভালো হয়।"
"আচ্ছা, তাহলে চলো আজ ভ্যানে করে শহরটা ঘুরি।"
"ভ্যানে করে? ভ্যান কেনো? রিকসায় করে ঘুরলেই তো হচ্ছে।"
"না, আমি রিকসায় ঘুরতে চাচ্ছি না। তুমি কি ভ্যানে করে আমাকে ঘুরাবে? না ঘুরালে আমি চললাম।"
"আচ্ছা, চলো। তুমি যা বললে সেটাই।"
রিয়া এবং রুদ্র একটা ভ্যান ঠিক করলো। এই সন্ধ্যা রাতে ভ্যান পেতে তাদের অনেক কষ্ট হলো। তবুও শেষ মুহুর্তে তারা একটা ভ্যান পেতেই রিয়া ভীষণ খুশি হলো। সে মনে মনে এটাই চেয়েছিল।
রিয়া বসে আছে ভ্যানে। সে তার ভাবনায় ডুবে আছে। রুদ্র মাঝেমধ্যে দুই একটা কথা বলছে। কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই। সে তার নিজস্ব জগতে ডুবে আছে। সে জগতে রুদ্রও তার মত করে তাকে ভীষণ ভালোবাসে।
চলবে...
আমি তোমাকে চেয়েছি,
সকাল, দুপুর, রাত্রির মত করে।
আমি তোমাকে চেয়েছি,
মেঘেদের মত করে, বৃষ্টির মত করে।
আমি তোমাকে চেয়েছি,
আমার সকল সুখে, আনন্দে, দুঃখে।
আমি শুধু তোমাকে চেয়েছি,
আমার মন খারাপে, আমার একাকিত্বে!
আমি তোমাকে চেয়েছি,
আমার সকল চাওয়াতে, হাসিতে।
আমি শুধুই তোমাকে চেয়েছি,
আমার সকল ভালোবাসাতে!
রুদ্র,
তোকে কখনো বলিনি, আমি কেমন আছি। আমি কেমন আছি সেটা অবশ্য বলার দরকার পরে না। আমি নিশ্চিত, আমার চিঠি পড়ে তুই বুঝে যাস আমি কেমন থাকি, কেমন আছি, কেমন থাকবো? তবে আজ আমি ভালো আছি। প্রচন্ড রকম ভালো আছি। ভালো থাকার কারণ কি জানিস? আজ আমার মন ভালো। ভীষণ রকম ভালো। সেটা অবশ্য তোর জন্যই। হঠাৎ আজ পুরনো ডায়রিটা খুলতেই একটা পুরনো চিরকুট পাই। সেখানে গোটাগোটা অক্ষরে তোর হাতের লেখায় উপরের লাইনগুলো লেখা ছিল।
রুদ্র, তোর কি সেদিনের কথা মনে আছে? যেদিন আমি তোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, তার পরের দিন তুই আমার হাতে গুজে দিয়েছিলি একটা নীলরঙা চিরকুট। তখন সেই চিরকুট আমি রেগে ফেলে দিয়েছিলাম রাস্তায়। তারপর তুই চলে যেতেই আমি আবার কুড়িয়ে নিয়েছিলাম। কি ভেবে কুড়িয়ে নিয়েছিলাম তখন বুঝিনি। এখন জানি, আসলে তোর মত একটা ইডিয়টকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কেনো ভালোবাসলাম তোকে? পৃথিবীতে এতো এতো মানুষ থাকতে তোকেই কেনো ভালোবাসতে গেলাম? তুই-বা আমাকেই কেনো ভালোবাসলি? এই সব কথা ভেবেছিস কখনো? আচ্ছা, এই সব কথা বাদ দিয়ে আজকের কথা বলি। আজ হঠাৎ চিরকুটটা পেয়েই সেই পুরনোদিনের স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। সেই সব দিন ছিলো বৈচিত্রময়, ছিলো ভালোবাসায় মুড়ানো এক একটা দিন।
রুদ্র,
আজ আমি চিরকুটের লেখাটা আমি ভীষণ ভাবে অনুভব করতে পারছি। আজকে চিরকুটটা পড়ে যতটা অনুভব করতে পেরেছি, তখন এতোটা পারিনি। কি সুন্দর করেই না তুই বলেছিস; তোমাকে চাই, সকাল, দুপুর, রাত্রির মত করে। তোমাকে চাই, মেঘেদের মত করে, বৃষ্টির মত করে। কত সহজ দুইটা লাইন কিন্তু যতটা সহজ সরল ততটা কি? সকাল ছাড়া যেমন দুপুরের অস্তিত্ব নেই, দুপুর ছাড়া রাত্রীর, রাত ছাড়া সকালে, মেঘ ছাড়া বৃষ্টির, আমাকে ছাড়া তোর। তারপর বলেছিস; তোমাকে চাই, আমার সকল সুখে, আনন্দে, দুঃখে। আমার মন খারাপে, আমার একাকিত্বে! আমার সকল চাওয়াতে, হাসিতে। আমার সকল ভালোবাসাতে! আমাকে কি করে তুই এতোটা ভালোবাসলি, যে আমাকে ছাড়া তোর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না? আমি আসলেই বোকা। আমি তোর ভালোবাসার মূল্য দিতে পারি নি!
রুদ্র, আজ কোনো মন খারাপের কথা বলবো না। চিঠি জুড়ে আজ শুধু ভালোবাসার কথাই হোক, ক্ষতি কি? ভালোবাসার কথা এলেই, কি মনে পড়ে জানিস? মনে পড়ে, সেই সব দিনের কথা। একটা পাগল প্রেমিক, আর একটা পাগলী প্রেমিকা, শহর জুড়ে কি সব কান্ড টা-ই না ঘটাচ্ছিল।
এই মুহুর্তে আমার চিঠি পড়ে তোর ঠিক কোন ঘটনার কথা মনে পড়ছে? যদি আমাকে জিজ্ঞেস করিস, তাহলে আমি বলবো যেদিন ভ্যানের পিছে বসে শহর ঘুরেছিলাম, সেদিনের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। সেবার কি কান্ড ঘটিয়েছিলি তুই, মনে আছে তোর? আমরা-তো সবসময় রিকসায় ঘুরি। সেবার ঠিক করলাম ভ্যান গাড়িতে করে শহর ঘুরবো। তারপর দুইজনে একটা ভ্যান ঠিক করলাম। কিন্তু ভ্যান চালক বলল, সামনে খালি রেখে পিছে বসা যাবে না। তখন বহুকষ্টে ছোট্ট দুইটা ছেলেকে নিয়ে এসে ওদের সামনে বসিয়ে আমরা দুইজন বসলাম পিছে। তারপর ঘুরে বেড়ালাম শহরের অলিগলির পথ ধরে অজানা গন্তব্যে। তখন প্রায় সন্ধ্যা ছিলো। আকাশে তখনও দিনের শেষ আলোটুকু রয়ে গেছে। হঠাৎ তুই আমার আরেকটু কাছে সরে এলি। তারপর যেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখলি তুই, ওমনি রাস্তা দিয়ে উল্টোদিকে যাওয়া দুইটা ছেলে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে রইলো আমাদের দিকে। আমার তখন ভীষণ লজ্জা লাগছিল। আমি হাত দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলাম। তোর দিকেও তাকাতে পারছিলাম। তুইও না, হুটহাট কি করিস নিজেই বুঝিস না। আস্ত একটা পাগল।
রুদ্র, এখন আর কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে না। এখন আমি ডুব দিবো আমাদের স্মৃতিতে। তারপর হারিয়ে যাবো এই পৃথিবী থেকে বহুদূরে অন্য এক জগতে। যাওয়া আগে হঠাৎ দেখা কবিতার মত করে তোকে আজ বলতে ইচ্ছে করছে, "আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে- কিছুই কি নেই বাকি?" নাকি, "রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে৷"
ইতি তরু।
রিয়া চিঠিটা পড়া শেষ করে চোখ বন্ধ করলো। সে সকাল থেকে তরুর চিঠি পড়ে যাচ্ছে। গতকাল রুদ্রের সাথে দেখা করতে গেলে, সে তাকে তরুর লেখা পাঁচটা চিঠি দিয়েছে। রিয়া-ই আগেরবার বায়না ধরেছিল, তরুর চিঠি পড়বে। সে প্রথমে ভেবেছিল রুদ্র আপত্তি করবে। কিন্তু তার এক কথায় রুদ্র রাজি হয়ে যাওয়াতে রিয়া খানিকটা অবাক হয়েছিলো।
দীর্ঘ সময় চোখ বন্ধ করে থেকে অবশেষে রিয়া চোখ খুললো। সে বুকের মধ্যে কেমন অদ্ভুত একটা কষ্ট অনুভব করছে। সেটা কার জন্য সে বুঝে উঠতে পারছে না। এছাড়াও তার মনে নানা প্রশ্ন জেগেছে। সে যতটুকু জানে, রুদ্রের সাথে তরুর কখনো দেখা হয় নি। তাহলে তরুর চিঠিগুলোতে সে কোন রুদ্রের কথা বারবার বলেছে। তরু কোন রুদ্রকে ভালোবাসে? রুদ্রকে প্রশ্নগুলো করলে সে কি মনে করবে। সে সবসময় দেখেছে, তরুর প্রসঙ্গ এলেই রুদ্রের মন খারাপ হয়ে যায়।
রিয়া চিঠিগুলো ভাজ করে সুন্দর ভাবে রেখে দিলো। চিঠিগুলো রুদ্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সে ফিরিয়ে দেওয়া আগে আরেকবার চিঠিগুলো পড়বে। এতো সুন্দর করে কীভাবে মানুষ চিঠি লিখে? তরুর চিঠিগুলো আসলেই ভীষণ সুন্দর। যে-ই পড়ুক না কেনো, চিঠিগুলো পড়ার পরে তরুর প্রতি অজান্তেই একটা মায়া জন্মে যাবে। রিয়ারও মায়া লাগছে তরুর জন্য। সেও কৌতুহল বোধ করছে। এতোদিন সে শুধু রুদ্রের মুখে তরুর কথা শুনেছে। আজ তরুর নিজের কথা চিঠিতে পড়ে মেয়েটার প্রতি তার ভীষণ মায়া হচ্ছে। তার ও ইচ্ছে করছে তরুকে একবার দেখতে। তার সাথে কথা বলতে। তার গল্পটা জানতে।
রিয়ার এই প্রথম মনে হলো, রুদ্রকে দোষ দেওয়া যায় না। রুদ্রের জায়গায় অন্য কেউ হলে সেও তরুর খোঁজ করতো। তার নিজেরই এখন তরুর সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা অদ্ভুত। আজকাল সময়ে এই রকম মানুষ আছে তার ভাবতেই অবাক লাগছে। কিন্তু আসলেই আছে। এতো এতো মানুষের ভীড়েও কিছু মানুষ আছে যারা ভালোবাসতে পারে। কিন্তু এতো ভালোবেসে কেনো তরুর প্রতিটা চিঠিতে বিচ্ছেদের করুন সুর? রিয়ার মাথায় এলোমেলো হাজারও ভাবনা এসে জড় হচ্ছে একে একে। সে আর কিছু ভাবতে চাচ্ছে না, তবুও তরুর চিঠিগুলো বারবার তাকে ভাবতে বাধ্য করছে। তরুর কথা, রুদ্রের কথা, সে ক্রমাগত ভেবে যাচ্ছে।
রিয়া তার পরের দিনই রুদ্রের সাথে দেখা করলো। সে নিজের কৌতুহল নিজের ভেতর চেপে রাখতে পারলো না।
"একটা প্রশ্ন আছে?" রিয়া বলল।
"একটাই?" রুদ্র জিজ্ঞেস করলো।
"আসলে...! রিয়া কথা শেষ করতে পারলো না।
"আচ্ছা বলো। আমি উত্তর দিবো।" রুদ্র নিজ থেকেই বলল।
রিয়া আর রুদ্র বসে আছে একটা পার্কের বেঞ্চে। তারা আজ কফিশপে যায় নি। রুদ্র নিজ থেকেই বলেছে, চলো আজ অন্য কোথাও বসি। প্রতিদিন একজায়গায় যেতে ভালো লাগে না।
"কি ভাবছো?" রিয়া প্রশ্ন করবে বলেও তাকে চুপচাপ দেখে রুদ্র জানতে চাইলো।
"কোন প্রশ্নটা আগে করবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।" রিয়া সহজ সরল ভাবে বলল।
"একটা দিয়ে শুরু করলেই হয়।"
"আচ্ছা, রিয়া কি তোমাকেই চিঠি লিখছে? মানে আমি বোঝায়ে চাচ্ছি...!" এটুকু বলে রিয়া থামলো। তাকে আর কিছুই বলতে হলো না।
"তরুর চিঠিগুলো আমার কাছে, আমার ঠিকানায় আসছে ঠিকই। কিন্তু চিঠিগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা না।"
"তাহলে...?" রিয়ার মধ্যে কৌতুহল।
"আসলে আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম, কেউ মজা করে আমাকে ঠিঠি পাঠাচ্ছে। কিন্তু কয়েকটা চিঠি পড়ার পরে আমার ভুল ভাঙে। আর যত দিন যেতে থাকলো, তত আমি বুঝতে পারলাম কেউ আমার সাথে মজা করছে না। হয়তো, তরুর চিঠিগুলো ভুল করে আমার ঠিকানায় আসছে।"
"কিন্তু, চিঠিতে যে রুদ্র নাম লেখা।"
"সেটা কাকতালীয়। হয়তো, তরু যাকে চিঠি লিখছে তার নামও রুদ্র। আমাদের নামটা কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে।"
"তোমরা এখন যে ফ্লাটে থাকো, সেই ফ্লাটে আগে কারা থাকতো খোঁজ নিয়েছিলে?"
"কি বলতে চাচ্ছ?" হঠাৎই রুদ্রের ভিতর ভীষণ কৌতুহল জাগলো। সে আবার বলল, "তুমি কি বলতে চাচ্ছ? আমার এখন যে বাসায় আছি, সেই বাসায় আগে তরুর চিঠিতে লেখা যে রুদ্র, সে থাকত?"
"হ্যাঁ, সেটা হতেই পারে। আর সেটা হওয়ার সম্ভাবনাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি।"
"বিষয়টি আগে আমার মাথায়ই আসেনি। হ্যাঁ, এটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।"
"কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো, যদি কোন খোঁজ পাও। রুদ্রকে পাওয়া গেলে, তরুকেও পাওয়া যাবে।"
"আমরা এবাসায় এসেছি প্রায় দুইবছর হয়ে গেছে। এই বাসায় আসার ছয় মাস পরে হুট করে একদিন তরুর চিঠি আসা শুরু হয়। তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহের বুধবারে রেগুলার চিঠি আসতেই থাকলো। আনুমানিক আট মাসের মত তরুর চিঠি এসেছে। তারপর দেখতে দেখতে আরো অনেক মাস কেটে গেছে, তবুও তরুর আর কোনো চিঠি আসে নি।" রুদ্রের মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো। শেষের কথাগুলো বলার সময় তার কন্ঠের সুর কেমন অদ্ভুত ক্লেশকর শোনালো।
"হতাশ হয়ো না। একদিন আমরা ঠিকই তরুর খোঁজ পাবো। তুমি দেখো। আমার বিশ্বাস, আমরা তরুর খোঁজ পাবোই।" রুদ্রকে মনমরা দেখে রিয়া তাকে আত্মবিশ্বাস দেওয়ার জন্য কথাগুলো বলল। কিন্তু সে মিথ্যে বলেনি। তার মন বলছে, তারা একদিন ঠিকই তরুর খোঁজ পাবে।
"আশা করাই সবচেয়ে সুন্দরতম চিন্তা। আমরা আশা করি বলেই বারবার চেষ্টা করি। বারবার ব্যর্থ হয়েও মানুষ চেষ্টা করে। যদি মানুষের মধ্যে আশা না থাকতো, তাহলে পৃথিবীটা এতো সহজ সুন্দর হতো না।"
"উঁহু, একদম ঠিক বলেছ।" রুদ্রের কথাগুলো রিয়ার ভীষণ ভালো লাগল। সেও আশা করে একদিন সে ঠিকই রুদ্রকে পাবে। এই আশাটাই তাকে ভালো রাখে, সুখে রাখে।
"চলো, উঠি।"
"কোথায় যাবে?"
"সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখানে থাকাটা ঠিক হবে না।"
"রিকসায় ঘুরবে?" রিয়া আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
"আজও?"
"উঁহু! তোমার সাথে রিকসায় ঘুরতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। সারাটা জীবন যদি রিকসায়ই কেটে যেত, তাহলে মন্দ হতো না। দুইজনে গল্প করতে করতে জীবনটা কাটিয়ে দিতাম।"
রিয়ার কথা শুনে রুদ্র হেসে দিলো
"হাসছো কেনো?" রিয়া অভিমানী কন্ঠে জানতে চাইলো।
"এমনিতেই।" রুদ্র বলল।
"মিথ্যে বলবে না। আমার কথা শুনে হাসছো, তাই না? আচ্ছা, বোকার মত কথা বলার জন্য সরি।" রিয়ার মন খারাপ হলো। রুদ্র প্রায় সময় তার কথা শুনে হাসে। সেও হুটহাট বাচ্চাদের মত উল্টাপাল্টা কথা বলে। কিন্তু তার মনে তাৎক্ষণিক যা আসে সে সেটাই বলে দেয়। এই সামান্য কারণে হাসতে হবে? রুদ্রের প্রতি তার অভিমান ক্রমাগত বাড়ছে।
"মন খারাপ কেনো করছো? কেউ কি সারাজীবন রিকসায় কাটাতে পারে? হ্যাঁ ধরলাম পারবে কিন্তু রিকসা যে চালাবে সে কীভাবে সারাজীবন শুধু রিকসা চালিয়ে যাবে? এই কথা ভেবেই হুট করে হাসি পেয়ে গেলো। আচ্ছা, সরি। আর হাসবো না। মন খারাপ করো না, প্লিজ।"
"আমি মোটেও মন খারাপ করিনি। মন খারাপ কেনো করবো? আমি কে?"
"আচ্ছা আজ তুমি যতক্ষণ চাইবে, ততক্ষণ দুইজন রিকসা করে শহর ঘুরবো।"
"আমি কোথাও যাবো না। তুমি থাকো, আমি বাসায় চললাম।" রিয়া এটা বলেই বসা থেকে উঠে হাঁটা শুরু করলো৷
রুদ্র অবাক হলো। এই সামান্য কারণে রিয়া রাগ করবে সে বুঝতে পারে নি। সেও উঠে দ্রুত হেঁটে রিয়ার কাছে গেলো। সে তাকে ডাকলো। তাকে থামতে বলল। কিন্তু রিয়া সে সব কথা শুনলো না। সে হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।
রুদ্র ছুঁটে গিয়ে রিয়ার হাত ধরে রিয়াকে থামালো। সে বলল, "এভাবে মন খারাপ করে চলে যেও না। তাহলে আমার নিজেরই প্রচন্ড খারাপ লাগবে এটা ভেবে যে আমি কারো মন খারাপ করে দিয়েছি।"
"আমি মন খারাপ করি নি। আমি শুধু বাসায় যেতে চাচ্ছি।" রিয়া সোজাসাপ্টা বলল।
"একটু আগেই না বললে, রিকসায় ঘুরবে।"
"হ্যাঁ, বলেছিলাম। কিন্তু এখন ইচ্ছে করছে না।"
"আচ্ছা, এখন কি ইচ্ছে করছে?"
"আমি শুধু বাসায় চলে যেতে চাচ্ছি।"
"এখনো অভিমান করে আছ, তাই এরকম ভাবে কথা বলছ। আমি বললাম তো সরি। এবার অন্তত আমাকে মাফ করে দেও।"
"আমিও তো বললাম আমি রাগ করে নেই।"
"না, আছো। আমি সেটা বুঝতে পারছি। আচ্ছা বলো কি করলে রাগ কমে যাবে?"
"যা করতে বলব সেটা করবে?"
"হ্যাঁ, যদি তাতে তোমার রাগ কমে গিয়ে মন ভালো হয়।"
"আচ্ছা, তাহলে চলো আজ ভ্যানে করে শহরটা ঘুরি।"
"ভ্যানে করে? ভ্যান কেনো? রিকসায় করে ঘুরলেই তো হচ্ছে।"
"না, আমি রিকসায় ঘুরতে চাচ্ছি না। তুমি কি ভ্যানে করে আমাকে ঘুরাবে? না ঘুরালে আমি চললাম।"
"আচ্ছা, চলো। তুমি যা বললে সেটাই।"
রিয়া এবং রুদ্র একটা ভ্যান ঠিক করলো। এই সন্ধ্যা রাতে ভ্যান পেতে তাদের অনেক কষ্ট হলো। তবুও শেষ মুহুর্তে তারা একটা ভ্যান পেতেই রিয়া ভীষণ খুশি হলো। সে মনে মনে এটাই চেয়েছিল।
রিয়া বসে আছে ভ্যানে। সে তার ভাবনায় ডুবে আছে। রুদ্র মাঝেমধ্যে দুই একটা কথা বলছে। কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই। সে তার নিজস্ব জগতে ডুবে আছে। সে জগতে রুদ্রও তার মত করে তাকে ভীষণ ভালোবাসে।
চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)