Thread Rating:
  • 44 Vote(s) - 3.32 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery এভরিথিং ইজ ফেয়ার হোয়েন লাভমেকিং ইজ দেয়ার
#92
জানিনা কেন ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে গেলো। জেনি তখনো অঘোরে ঘুমাচ্ছে। বারান্দায় এসে সমুদ্রের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কাল রাতে সে খাঁচায় বদ্ধ কোনো শ্বাপদের মতো ক্রুদ্ধ গর্জন করছিলো, যেন খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এখন কোন ধ্যানমগ্ন যোগী পুরুষ এক। ঘুমিয়ে আছে যোগনিদ্রায়। শুধু তার মাথার সাদা চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে আর বুকটা নিয়মিত ছন্দে আন্দোলিত হচ্ছে। গাড়ীতে তেল ভরতে হবে, একটু দেখাও দরকার খুলে। তাই মানিব্যাগ আর গাড়ির চাবি পকেটে নিয়ে শর্টস্ আর টি-শার্ট গলিয়ে নেমে এলাম নীচে। হোটেলের ডাইনিংয়ে তখনো কোনো কর্মব্যস্ততা লক্ষ্য করলাম না। এতো সকালে খোলেও না। ভাবলাম সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে এক কাপ চা খেয়ে আসি। হোটেল থেকে সমুদ্র বড়জোর এক মিনিটের রাস্তা।

চায়ের কাপ নিয়ে মার্বেল বাঁধানো পাড়ে সমুদ্রের দিকে মুখ করে বসলাম। একটা সিগারেট জ্বেলে টানছিলাম আর সমুদ্রের সাথে কিছু ট্যুরিস্টের খুনসুটি দেখছিলাম। আমাদের হোটেলের এই দিকটা বেশ নিরিবিলি এই সকালে। হঠাৎ দেখতে পেলাম শুভশ্রী হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছে রাস্তা ধরে। সেই চিরাচরিত শাড়ি পরা, কিন্তু পায়ে একটা কেডস্ জুতো। আমাকে দেখতে পায়নি সে, পাশ কাটিয়ে যাবার সময় ডাকলাম, শুভশ্রী, কোথায় চললে এতো সকালে? আমাকে দেখতে পেয়ে দাঁড়ালো শুভশ্রী। হেসে বললো, সুপ্রভাত, এই একটু মর্নিং ওয়াক এ গেছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, একা? সে বললো, হুম, বাকীরা কেউ আসে না, সব ঘুমকাতুরে। আমি বললাম, চলো, তোমার সাথে হাঁটি। সে বললো, এসো। দুজনে হালকা পায়ে হাঁটতে শুরু করলাম। হোটেল ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে এলাম দুজনে। শুভশ্রী বললো, চলো এবার একটু বসি, অনেকটা হাঁটা হয়েছে। দুজনে বসলাম পাড়ে।

আমার দিকে তাকিয়ে শুভশ্রী বললো, তোমাকে দারুণ হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে তো? পায়জামা পাঞ্জাবি তেই দেখেছি এতোদিন। শর্টস টি-শার্টে দারুণ লাগছে! বললাম,প্রেমে পড়ে যাওনি তো? প্রেমে পড়লে প্রেমিককে সব ড্রেসেই হ্যান্ডসাম লাগে। শুভশ্রী বললো, যেখানে পড়লে উঠতে কষ্ট হয়, সেখানে পড়তে আমার ভয় লাগে। আমি বললাম, জীবনতো সমান রাস্তায় চলে না শুভশ্রী, চড়াই উৎরাই নিয়েই জীবন। এগিয়ে যেতে গেলে দুটোই আসবে, পালিয়ে তো বাঁচতে পারবে না? তারপর প্রসঙ্গ পালটে বললাম, তুমিও শাড়ি ছেড়ে অন্য কিছু পরলে দারুণ লাগবে। শুভশ্রী বললো, আমাদের বাড়িতে মেয়েদের একটাই ড্রেস, শাড়ি। অন্য কিছু পরিনি কোনোদিন, তাই সংস্কার ছাড়তে পারিনা। বললাম, তোমাদের বাড়িতে মেয়েরা অফিস কলিগদের সাথে একা বেড়াতে আসে? সকাল বেলা হাঁটতে বেরিয়ে অন্য পুরুষের সাথে এভাবে গল্প করে? সে দু'দিকে মাথা নাড়লো। বললাম, তবে? সব কিছুরই একটা শুরু হয় শুভশ্রী। পুরানো কে আঁকড়ে থাকা কোনো কাজের কথা নয়। 

শুভশ্রীর হাতের উপর আমার হাতটা রাখলাম। সে সরিয়ে নিলো না, কিন্তু মুখ নীচু করে রইলো। আমি তার হাতটা আমার কোলে টেনে নিলাম। তারপর তার কাঁধে একটা হাত রেখে নিজের দিকে টানলাম। শুভশ্রী আমার কাঁধে মাথা রাখলো। কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকার পরে বললো, ছাড়ো তমাল, আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলবো। বললাম, হারাতে খুব ভয় বুঝি? সে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। আমি বললাম, হারানোর মজা পাওনি কোনোদিন? সে বললো, এই প্রথম একা বাড়ির লোক ছাড়া বাইরে এলাম জানো? বললাম, চলো, তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যাই। সে বললো, কোথায়? হেসে বললাম গন্তব্য জানা থাকলে তো হারানো যায়না শুভশ্রী, আমরা এখন যাবো দিকশূন্যপুরে, কিন্তু বন্দনাদি থাকবে না সেখানে। শুভশ্রী মজা পেয়ে বললো, তুমি বুঝি নীললোহিত? আমি বললাম, না আমি তমাল, আর তুমি শুভশ্রী। বললাম, তুমি পাঁচ মিনিট পরে এই পথ ধরে গিয়ে বড় রাস্তায় দাঁড়াও, আমি গাড়ি নিয়ে আসছি। শুভশ্রীকে ওখানে রেখে আমি দ্রুত হাঁটা দিলাম হোটেলের দিকে।

ভাগ্য ভালোই বলতে হবে, কারো সাথে দেখা হলো না। আমি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। তারপর এগিয়ে গিয়ে তুলে নিলাম শুভশ্রীকে। সে বললো, তমাল, কেউ জানলে খারাপ বলবে না তো? বললাম, বললে বলবে? ভালো সেজে থাকার অনেক জ্বালা শুভশ্রী। আমি খারাপ, তাই কাউকে পরোয়া করিনা। শুভশ্রী বললো, ঠিক বলেছো, ভাবুক যে যা ভাববে, চলো। শুভশ্রীর পরিবর্তন আমার বেশ ভালো লাগছে। সেই গম্ভীর মনমরা ভাবটা আর তার ভিতরে নেই। অজানার পথে যাবার উত্তেজনায় তার মধ্যে বেশ একটা থ্রিল দেখা যাচ্ছে। আমি গাড়ি ছোটালাম ফুল স্পিডে।

মিনিট দশেকের ভিতরেই জনপদ পিছনে ফেলে এলাম আমরা। চলেছি উড়িষ্যার দিকে। এখানে প্রকৃতির গায়ে কৃত্রিম মেক আপ নেই। ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা সবুজ গাছের সারি এখনো কুয়াশা মেখে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকটায় বেশ শীত শীত করছে। রাস্তাটা একটা বিশাল কালো অজগরের মতো এঁকেবেঁকে চলে গেছে দূরে, মাঝে মাঝে দু চারটে গ্রাম ইতস্তত দাঁড়িয়ে আছে। মসৃণ রাস্তায় প্রচন্ড গতিতে ছুটে চলতে চলতে শুভশ্রী যেন একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে উঠলো। সবকিছুই তার কাছে নতুন লাগছে। দেখো দেখো তমাল, ওটা কি সুন্দর, এটা কি মিষ্টি..  বলে চলেছে। আমি তাকে কোনো বাঁধা দিচ্ছি না। হঠাৎ একটা জায়গা চোখে পড়তেই গাড়ি থামালাম। ঝাউয়ের ঘন বন, মাঝে একটু ছোট ফাঁক, সেখান দিয়ে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। কোনো বীচ নেই সেখানে। বালির টিলা যেখানে শেষ সেখানেই সমুদ্র তার কাছে এসে দেখা করেই আবার দূরে চলে যাচ্ছে। আমি শুভশ্রীর হাত ধরে সেদিকে চললাম। সে একটা উচ্ছল বাচ্চা মেয়ের মতো আমার সাথে চললো। সেই চেনা শুভশ্রীর ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। দুজনে গিয়ে পাশাপাশি বসলাম ঝাউবনের ছায়ায়। একজন মানুষেরও ছায়া পর্যন্ত নেই কোথায়। শুধু প্রকৃতি, ঝাউ, সমুদ্র, শুভশ্রী আর আমি। আমি শুভশ্রীর কাঁধে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলাম। কেউ কোনো কথা বললাম না, এখানে কথা বলা অপরাধ, শুধু অনুভব করতে হয়।

ফেরার পথে একটা গ্রাম্য চায়ের দোকান দেখতে পেয়ে শুভশ্রীকে বললাম, খিদে পেয়েছে? যে বললো, হুম। গাড়ি থামাতেই একটা বাচ্চা ছেলে ছুটে এলো। আমাদের আপ্যায়ন করে নিয়ে গেলো দোকানে। চেয়ার টেবিলের বালাই নেই, গ্রামের কোনো স্বশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার চারটে খুঁটির উপর দুটো গাছে গুঁড়ি সাজিয়ে বেঞ্চি বানিয়েছে। শুভশ্রীকে নিয়ে বসলাম সেখানে। দোকানি একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, জিজ্ঞেস করলাম খাবার মতো কিছু হবে? সে বললো, আপনাদের খাবার মতো তো কিছু নেই বাবু, রুটি তরকারি হবে। বলেন তো লুচি ভেজে দিতে পারি। আমি বললাম, দরকার নেই,রুটি তরকারিই দিন। তার আগে এক কাপ চা পেলে ভালো হয়। দোকানি বললো এক্ষুনি দিচ্ছি বাবু, বলেই ছোট ছেলেটাকে হাঁক দিলো। তাকে কিছু একটা বলে আমাদের দুটো কাঁচের গ্লাসে চা দিলো। চুমুক দিয়েই মন জুড়িয়ে গেলো। শুভশ্রীর দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখ চোখও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বললো, কি ভালো চা টা, তাই না? দোকানি শুনতে পেয়ে বললো, আমাদের নিজেদের গরুর দুধে করা মা, গরীব মানুষ, কিনতে তো পারি না, নিজেদের যা আছে তাই দিয়ে চালাই দোকান। খদ্দের বেশি হয়না, এই দু'চারজন জেলে আর গ্রামের মানুষ যা খায় টায়। চা খেয়ে খেতেই খেয়াল করলাম বাচ্চা ছেলেটা দুহাতে দুটো বড় সাইজের বেগুন ঝুলিয়ে নিয়ে আসছে। বোঝাই যাচ্ছে এই মাত্র ক্ষেত থেকে ছিঁড়ে নিয়ে এলো। দোকানি বেগুন দুটো তার হাত থেকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। আমি আর শুভশ্রী তাকিয়ে তাকিয়ে গ্রামের শোভা দেখতে লাগলাম।

কিছুক্ষণের ভিতরেই ভদ্রলোক শালপাতার থালায় করে গরম গরম হাতেগড়া রুটি, আলুর তরকারি আর চারপিস করে বেগুনভাজা নিয়ে এলো। বললো, আপনারা শহুরে মানুষ বাবু, এই খাবার কিভাবে খাবেন, তাই ক'টা বেগুন ভেজে দিলাম। আমি বললাম, দাদা, শহরের কোনো দোকান এই মহাভোজ খাওয়াতে পারবে না। তাদের দোকানে অনেক রকমের খাবার আছে, আলো আছে, পাখা আছে, চেয়ার টেবিল, লোকজন সব আছে, কিন্তু এই আন্তরিকতা নেই। এখানে শুধু পেট ভরে না, মন ও ভরে যায়। দোকানির মুখটা হাসিতে ভরে গেলো কথাগুলো শুনে। শুভশ্রী খেতে খেতে বললো, অপূর্ব! সেটা শুনে দোকানি তাড়াতাড়ি বললো, আর দুটো বেগুনভাজা দি মা? শুভশ্রী বললো, না দাদা, আর পারবো না। 

পেটপুরে খেলাম আমরা দুজনে। খাওয়া শেষে আরও এক রাউন্ড চা খেলাম। দাম জিজ্ঞেস করতে ভদ্রলোক বললেন, চুয়াল্লিশ টাকা। আমি যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না!বললাম, কতো?? দোকানি হয়তো ভাবলো, বেশি বলে ফেলেছে, তাই তাড়াতাড়ি বললো, আটটা রুটি তিনটাকা করে চব্বিশ টাকা, আর চার কাপ চা, কুড়ি টাকা। আমি কিছুক্ষন অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম তার দিকে। গাড়ি নিয়ে বাইরের লোক এলে যেখানে দোকানদার গলা কাটায় ব্যস্ত হয়, সেখানে এই গরীব গ্রাম্য দোকানদার এক টাকা বেশি তো চাইলোই না, উলটে বেগুনভাজার দামই নিলো না। এখনো এরা বেঁচে আছে পৃথিবীতে, তাই পৃথিবী এতো সুন্দর। তার হাতে বেশি টাকা দেওয়া তাকে এবং তার আন্তরিকতাকে অপমান করা হবে ভেবে সঠিক দাম মিটিয়ে দিলাম। তারপর বাচ্চাটাকে বললাম চলো আমাদের সাথে। সে লাফাতে লাফাতে আমাদের সাথে গাড়ি পর্যন্ত এলো। জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি? সে বললো,  বুধাই। কলেজে পড়ো? সে মাথা নাড়লো। বললাম, জামা পরোনি কেন? শীত করেনা? সে বললো, নেই.. একটা আছে, মা পরতে দেয়না। বুঝলাম কোন বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য তুলে রাখা আছে সে জামা। বাবা কি করে? সে উত্তর দিলো, নেই, ঝড়ে মাছ ধরতে গিয়ে আর আসেনি। চোখে জল চলে এলো আমার। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মানিব্যাগ থেকে দুটো পাঁচশ টাকা তার হাতে দিলাম। ছেলেটা হাত সরিয়ে নিয়ে জোরে জোরে মাথা নাড়লো, বললো, মা মারবে। আমি তার হাতে টাকাটা গুঁজে দিয়ে বললাম, মা কে বোলো এক কাকু দিয়েছে জামা কিনতে। ছেলেটা আবার লাফাতে লাফাতে দোকানের দিকে চললো, আমরা হোটেলের দিকে।

ফেরার পথে শুভশ্রী বললো, থ্যাংক ইউ তমাল, জীবনের একটা সেরা সকাল কাটালাম। তারপরে বললো, তমাল, এতোক্ষণ একা কাটালাম তোমার সাথে, সুযোগ নিলে না তো? আমি বললাম, সময় হলেই নেবো, তাড়াহুড়ো কিসের? সে বললো, তাড়াহুড়োই তো করতে দেখলাম সবাইকে একা মেয়ে পেলেই। মুচকি হেসে বললাম, তারা পাকা খেলোয়াড় না, আমি ছোটখাটো সুযোগ নেই না। শুভশ্রী মুচকি হেসে বললো, তাই বুঝি? কেমন খেলোয়াড় তুমি? বললাম, সময় হলেই বুঝতে পারবে। মনে আছে তো, স্নানের সময় শাড়ি পরে আসবে না? শুভশ্রী লজ্জা পেয়ে বললো, পরবো না? আমি বললাম,কিছু না পরে এলে আমার কোনো অসুবিধা নেই, কিন্তু তোমার বন্ধুরা আর ছাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে গেলে মুশকিলে পড়ে যাবে। আমার হাতে চিমটি কেটে শুভশ্রী হাসতে হাসতে বললো, অসভ্য! তারপর বললো, কোনটা পরবো বলো? বললাম, কালো লেগিংস আর হলুদ কুর্তিটা। সে মাথা নেড়ে বললো, আচ্ছা।
Tiger
[+] 8 users Like kingsuk-tomal's post
Like Reply


Messages In This Thread
এভরিথিং ইজ ফেয়ার হোয়েন লাভমেকিং ইজ দেয়ার - by kingsuk-tomal - 03-06-2023, 02:00 AM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)