02-06-2023, 03:15 PM
পর্ব - ৪
এর জন্য কিছু একটা ওকে করতেই হবে। সুনিতার বাবা রেলের একজন উচ্চপদস্ত অফিসার বাবাকে বলে ওকে একটা চাকরি করে দিতে হবে। সুনিতা বলল-এখন থেকে তোমার যেদিন যেদিন ভালো কিছু খেতে হবে আমার বাড়িতে চলে আসবে। রতন খাবার মুখে তুলে চিবোতে লাগল গিলে নিয়ে বলল - না না আমি রোজ রোজ ভালো খাবার খাবো আর আমার মা-বাবা খাবেন সেই ডাল -ভাত আমি পারবোনা। শুনে সুনিতা অবাক হলো যে এখনকার ছেলে হয়েও মা-বাবাকে এতো ভালোবাসে। সুনিতা বলল - তুমি কিচ্ছু চিন্তা করোনা তুমি খাও আমি তোমার মা-বাবার জন্য এই খাবার প্যাক করে দেবো। আর তুমি যেদিন যেদিন এখানে খাবে সব দিনিই আমি তোমার মা-বাবার জন্যেও খাবার তৈরী করে তোমার সাথে পাঠিয়ে দেবো।
সেদিনের মতো সুনিতা আর অনিতার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আসার সময় সুনিতা বলল - সপ্তাহে একদিন করে এসে আমাদের একটু সুখ দিয়ে যেও আর মনে রেখো প্রাকটিসের সময় কিন্তু কোনো ভাবেই তুমি আমার সাথে কথা বলবে না। পরে একদিন আমি তোমার বাড়িতে যাবো নিয়ে যাবে তো আমাকে ? রতন - কবে যাবে বলো আমি নিয়ে যাবো তোমাদের আমার খুব ভালো লেগেছে। সুনিতা একটা পার্সেল করেই রেখেছিল রতনের হাতে দিয়ে বলল -এই খাবারটা তোমার মা-বাবার জন্য।
রতন বাড়িতে ফিরে দেখে ওর মা বারান্দায় বসে আছেন। রতনকে দেখে বলল - এতো দেরি করতে আছে বাবা খাবি কখন তুই। রতন - মা আমি যাদের বাড়িতে গেছিলাম সেখানে আমাকে খাইয়ে দিয়েছে আর তোমাদের জন্যও খাবার পাঠিয়েছে। রতনের গলা শুনতে পেয়ে বেরিয়ে এসে বলল -এসেছিস বাবা তোর জন্যই আমরা সে থেকে অপেক্ষা করছি। কাজলের দিকে তাকিয়ে সনাতন বললেন - নাও এবার তোমার ছেলে এসে গেছে এবার তো খেতে দেবে। রতন মাকে বলল - যাও মা বাবাকে খেতে দাও আর তুমিও খেয়ে নাও।
রতনের মা-বাবা খেতে বসলেন। রতনের বাবা জিজ্ঞেস করলেন - কি রতনকে ডাকো ও খাবেনা ? ওর মা বললেন - ও খেয়ে এসেছে ওর ক্রিকেট ক্লাবের কোচের বাড়ি থেকে আর আমাদের জন্যেও খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে। বিরিয়ানি দেখে রতনের বাবা বললেন - আজকে প্রথম খাচ্ছি এর আগে কোনোদিন খাইনি। খেতে খেতে বললেন - রতন যদি ভালো খেলতে পারে তো ওর চাকরিও হয়ে যেতে পারে আমার কারখানার একজন বলছিল। আজকাল নাকি প্লেয়ার কোটায় অনেকেই চাকরি পেয়েছে কপাল ভালো থাকলে আমাদের ছেলেরও চাকরি হবে। রতন জামা কাপড় চেঞ্জ করে ওর বাবা-মায়ের কাছে এসে বলল - জানো বাবা আমাদের কালবের কোচ সুনিতা ম্যাডাম বলেছেন যে আমাদের বাড়িতে আসবে। শুনে রতনের বাবা বললেন - সেতো আসতেই পারে কিন্তু ওদের আমরা কি ভাবে আপ্পায়ন করব রে। রতন - খুবই ভালো মানুষ বাবা ওদের সাথে মিশলে তুমিও বুঝতে পারবে যে কতটা ভালো মানুষ।
পরদিন সকালে আবার রতন প্র্যাকটিসে গেল সারাদিনের প্র্যাকটিস সেরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলো। এভাবেই চলতে লাগল। লাঞ্চের সময় রতনের সাথে সুনিতার দেখা হয় কিন্ত আর বাড়িতে যাবার কথা বলেনি। রতনের মনটা খারাপ হয়ে গেল। প্রায় একমাস বাদে লাঞ্চের সময় সুনিতা খেতে এসে বলল - আজকে একবার আমাদের বাড়িতে এসো আমার বাবা-মা দেশ থেকে ফিরেছেন। খুব উৎসাহ নিয়ে রতন সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ ওদের বাড়ির গেটে এসে বেল বাজালো। দরজা খুলে দিলেন একজন খুব স্বাস্থবান উঁচু লম্বা পুরুষ মানুষ। রতন বুঝতে পারলো ইনই সুনিতার বাবা। দরোজার গোড়াতেই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে উঠে দাঁড়ালো। ভদ্রোলোক জিজ্ঞেস জিজ্ঞেস করলেন - তোমাকে তো আমি চিনিনা আমাকে প্রণাম করলে কেন ? রতন - আপনিতো সুনিতা ম্যাডামের বাবা তাই প্রণাম কোরলাম। উনি এবার বুঝতে পারলেন - সুনিতা বলেছিলো বটে রতন বলে একটি ছেলে আসবে। উনি জিজ্ঞেস করলেন - তুমি কি রতন ? রতন - হ্যা স্যার। উনি ওকে বললেন - ভিতরে এসো বাবা। ভিতরে ঢুকে রতন সেদিনের মতোই সোফাতে গিয়ে বসল। আর তখুনি সুনিতা ঘরে এসে বলল - বাবা এই হচ্ছে রতন খুব ভালো ছেলে আর খুব ভালো ক্রিকেট খেলে। সুনিতা ওর বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো - আমার বাবা হরপ্রীত সিং আর এ হচ্ছে রতন বিশ্বাস।
উনি রতনকে জিজ্ঞেস করলেন - তোমরা কি ', ? রতন - হ্যা আমার বাবা সনাতন বিশ্বাস আর মা কাজল বিশ্বাস। শুনে উনি সুনিতার দিকে তাকালেন। সুনিতা - ওতে কিছু হয় না বাবা আজকাল এরকম বিয়ে অনেক হচ্ছে তুমি ও নিয়ে ভেবোনা। রতন চমকে গেল বিয়ে মানে কার বিয়ে কার সাথে বিয়ে ভাবতে লাগল। হরপ্রীত সিং রতনকে বললেন - দেখো আমি সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পছন্দ করি। আমি তোমাকে রেলের হয়ে পার্মানেন্ট প্লেয়ার করে দেবো আর তার সাথে একটা চাকরিও তোমার হয়ে যাবে। একটু থেমে বললেন - তবে আমার একটা শর্ত আছে আমার মেয়েকে তোমায় বিয়ে করতে হবে। রতনের মাথা ঘুরতে লাগল কার সাথে বিয়ে, সুনিতার সাথে ওতো অনেক বড় ওর থেকে। সুনিতা ব্যাপারটা বুঝে ওর বাবাকে বলল - বাবা ওর সাথে কথা বলে লাভ নেই তারচেয়ে কালকেই ওর মা-বাবার সাথে কথা বললে কেমন হয়। আর আমাদের অনি খুব ভালো মেয়ে অনির রতনকে খুব পছন্দ জানিনা রতনের পছন্দ কিনা। রতনের মাথা থেকে চিন্তা দূর হলো অনিতাকে বিয়ে করতে ওর কোনো আপত্তি নেই।