31-05-2023, 08:37 PM
বলা নেই কওয়া নেই .. আগের থেকে কোনো টিজার দেওয়া নেই .. কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করা নেই .. হঠাৎ করেই যদি আপডেট এসে যায়, সেটাকেই বোধহয় চমক বলে। আর এইরকম চমক দিতে এবং পেতে দুটোই ভালো লাগে। কি .. তাই তো পাঠকবন্ধুরা? বলেছিলাম কয়েকদিনের মধ্যেই আপডেট দেবো .. দিয়ে দিলাম।
নন্দনা দেবী দেখলো, ঘরের পাখা বন্ধ। তার ছেলে খাটের উপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে রয়েছে এবং ঠকঠক করে কাঁপছে এই অসম্ভব গরমেও। এই দৃশ্য দেখে দৌড়ে গিয়ে ছেলের গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠলো সে .. জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে বাপ্পার। সময় যত অতিবাহিত হতে লাগলো দুঃশ্চিন্তার মাত্রা ততই বাড়তে লাগলো নন্দনা দেবীর।
গতকাল রাতে তার স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ার জন্য আজ ফোন করেনি চিরন্তন। অভিমান এবং তার সঙ্গে সঙ্গে রাগ আর ক্ষোভের পারদ চড়তে থাকলো নন্দনা দেবীর। মোবাইলটা একবার হাতে নিয়ে তার স্বামীর নম্বরে রিং করতে গিয়েও থেমে গেলো সে। জলপট্টি আর প্যারাসিটামলেও কোনো কাজ হচ্ছিলো না। ক্রমশ বাড়তে থাকলো বাপ্পার শরীরের তাপমাত্রা। সুযোগ থাকলেও ডক্টর প্রমোদকে সে ডাকতো কিনা জানা নেই, তবে বিকেলে মালতীর কাছ থেকে বাপ্পার মা শুনেছে শ্রমিকদের বিক্ষোভ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অর্ধেকের বেশি স্টাফ ঘেরাও হয়ে রয়েছে ফ্যাক্টরিতে। তার মধ্যে কোম্পানির ডাক্তারও রয়েছে। তাই এমতাবস্থায় ইচ্ছে থাকলেও বাড়িতে ডাক্তার কল করার উপায়ও নেই।
"যদি কখনো বিপদে পড়ো এবং সেই বিপদ থেকে আমিই একমাত্র তোমাকে বা তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারি, আমার প্রতি যদি এমন বিশ্বাস আর ভরসা জন্মায় .. তাহলে আমাকে ডেকো, আমি অবশ্যই আসবো। তোমার ছেলের অঙ্কের খাতার শেষ পৃষ্ঠায় আমার ফোন নম্বর লেখা আছে .." হঠাৎ করেই বিপুল বাবুর বলা এই শেষ কথাগুলো মনে পড়লো নন্দনা দেবীর। তৎক্ষণাৎ তার ছেলের অঙ্কের খাতাটা খাটের উপর থেকে তুলে নিয়ে তার শেষ পৃষ্ঠাটা উল্টে বাপ্পার মা দেখলো সেখানে জ্বলজ্বল করছে একটি ফোন নম্বর।
ফোন নম্বরটা তার ছেলের অঙ্কের খাতায় কখন, কি ভাবে, কোন পরিস্থিতিতে লেখা হয়েছে .. এই সব কিছু ভাবার অবকাশ বা মনের অবস্থা ছিলো না নন্দনা দেবীর। নিজের ফোন থেকে কম্পিতহস্তে বিপুল বাবুর মোবাইল নম্বরটা ডায়াল করলো সে। বাপ্পার জ্বর সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানিয়ে, ফোনটা কেটে দেওয়ার মিনিট পনেরো পর কলিংবেল বেজে উঠলো। নন্দনা দেবী তৎক্ষণাৎ দ্রুত পায়ে ড্রয়িংরুমে পৌঁছে সদর দরজা খুলে দেখলো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রকাণ্ড চেহারার অধিকারী দানবাকৃতি বিপুল বাবু। এই ব্যক্তিকেই সে এখন আশা করেছিলো, কারণ সে তো নিজেই তাকে ফোন করে ডেকেছে। কিন্তু বিপুল বাবুর বর্তমান পোশাক এবং শরীরী ভাষার যে প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠলো তার চোখে, সেটা বোধহয় আশা করেনি বাপ্পার মাতৃদেবী। একটা গাঢ় লাল রঙের আলখাল্লার মতো পোশাক পড়েছে সে। কপালে মোটা করে সিঁদুরের তিলক কাটা .. যা নাকের উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। মাথায় একটা লাল রঙের কাপড়, ফেট্টির মতো করে বাঁধা। গলায় বিভিন্ন আকৃতির বেশ কয়েকটি রুদ্রাক্ষের মালা ঝুলছে। রক্তবর্ণ চোখদুটি কোনো বিশেষ কারণে অতিমাত্রায় ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে।
কদাকার বিপুল বাবুকে তান্ত্রিকের এই ভয়ঙ্কর তান্ত্রিকের বেশে দেখে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো নন্দনা দেবীর। একটা কথাও বের হলো না মুখ দিয়ে, শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার ভাসুরের দিকে। "ভেতরে আসতে বলবে না বৌমা?" গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো বিপুল বাবু। দরজার এক পাশে সরে দাঁড়ালো নন্দনা। দুলকি চালে ভেতরে প্রবেশ করলো তান্ত্রিক বিপুল। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা।
শরীরের তাপমাত্রার পারদ তো চড়ছিলই, অতঃপর জ্বরের ঘোরে ছটফট করতে করতে ভুল বকতে শুরু করে দেওয়া বাপ্পার কাছে গিয়ে তার মাথায় আলতো করে কয়েকবার হাত বুলিয়ে দিলো বিপুল বাবু। তারপর নিজের কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগটা থেকে রাংতায় মোড়ানো একটা মোড়ক বের করে এনে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নন্দনা দেবীর হাতে দিয়ে বললো, "এর ভেতরে যেটা আছে সেটা আগে ওকে জলে গুলে খাইয়ে দাও।"
তার ভাসুরের হাত থেকে কাগজের মোড়কটা নিয়ে, তারপর সেটা খুলে বাপ্পার মা দেখলো .. মোড়কটার মধ্যে কিছু পরিমাণ সাদা রঙের পাউডার রয়েছে। তার ভাসুরের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে কিছুটা ইতস্ততঃ করে নন্দনা দেবী প্রশ্ন করলো, "এটা কি? মানে আমি বলছিলাম, এটা খাওয়ানো কি এখন ঠিক হবে?"
"আমি তখন তোমাকে কি বলেছিলাম বৌমা, মনে আছে? আমাকে যখন পুরোপুরি ভরসা এবং বিশ্বাস করতে পারবে তখনই আমার সাহায্য চাইবে। ও তো আমার ভাইপো হয়, আমি ওর খারাপ চাইবো না। আমি যখন দিয়েছি ওষুধটা তখন নির্দ্বিধায় খাইয়ে দাও, কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবে ফল পাবে। আর যদি ফল না পাও তাহলে আমাকে পুলিশে দিও, কেমন?" বিপুল বাবুর মুখে এই কথাগুলো শুনে আশ্বস্ত হয়ে পাউডারটা জলে গুলে বাপ্পাকে খাইয়ে দিলো তার মা।
মিনিট দশেকের মধ্যেই শরীরের তাপমাত্রা অদ্ভুতভাবে কমে গিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করে দিলো, তার সঙ্গে ছটফট করতে করতে ভুল বকাটাও কমে গেলো বাপ্পার। তার ছেলের শারীরিক পরিবর্তন দেখে, বলা ভালো এইরকম মিরাকেলের সাক্ষী হয়ে মনটা আনন্দে ভরে উঠলো নন্দনা দেবীর, তার সঙ্গে একটা প্রগাঢ় কৃতজ্ঞতাবোধ জন্মালো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তান্ত্রিকরূপী ওই লোকটার প্রতি। মাটিতে বসে বিপুল বাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে তার ভাইয়ের স্ত্রী বললো, "আপনি সাক্ষাৎ দেবতুল্য মানুষ। যদি কিছু ভুল করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দেবেন। জ্বর তো কমেছে মনে হচ্ছে, কিন্তু কাল যে ওর অঙ্ক পরীক্ষা। ও কি আদৌ পরীক্ষা দিতে যেতে পারবে .. এটা ভেবেই ভীষণ চিন্তা হচ্ছে এখন।"
নিজের দুই হাত দিয়ে তার ভাইয়ের স্ত্রীর দুই কাঁধ ধরে মাটি থেকে উঠিয়ে বিপুল বাবু বললো, "চিন্তা করো না .. তোমার ছেলে কাল ঠিক সময়ে পরীক্ষা দিতে যাবে। ও তো অঙ্কে কাঁচা, তাই অঙ্ক পরীক্ষার ফলাফল কোনোবার ভালো হয় না, তাই তো? এবারের সিলেবাসে থাকা গণিত বইয়ের প্রশ্নমালার প্রত্যেকটি অঙ্ক কিন্তু ও সঠিকভাবে করেছে। তার মানে কাল যে অঙ্কই আসুক না কেনো, ও সেটা করতে পারবে। এখন ওকে বিরক্ত করো না, চুপচাপ এই ঘরে শুয়ে ঘুমোতে দাও। জলে গুলে যে মিশ্রণটা ওকে খাওয়ালে, সেটার মধ্যে ওষুধের সঙ্গে পথ্যও রয়েছে। তাই রাতে আর ওকে ডেকে ঘুম থেকে তুলে খাওয়ার দেওয়ার দরকার নেই, ওর পেট ভর্তি আছে। এই ঘরে লোকের উপস্থিতিতে ও আবার অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।"
বিপুল বাবুর মুখে তার ছেলে পুনরায় অসুস্থ হয়ে যেতে পারে এটা শুনে, "ও আচ্ছা তাহলে তো এই ঘরে আমাদের আর থাকাটা ঠিক হবে না। ঠিক আছে চলুন তাহলে ডাইনিং রুমেই না হয় যাই আমরা। সকালে আপনি যে কথাগুলো বলছিলেন, তার সম্বন্ধে আপনাকে দু-একটা প্রশ্ন করার আছে .." এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নন্দনা দেবী। তাকে অনুসরণ করে ঘর থেকে বেরিয়ে পশ্চিম দিকের বেডরুমের দরজাটা বাইরে থেকে আটকে দিলো বিপুল বাবু। সেটা দেখে কিছু একটা বলতে গিয়েও, বলতে পারলো না বাপ্পার মা।
"আপনি সকালে রাগ করে খেয়ে যান নি, রাতে কিন্তু খেয়ে যেতে হবে আপনাকে। এখন তো প্রায় সাড়ে আটটা বাজতে চললো, আপনাকে আবার অনেকটা পথ যেতে হবে। আপনাকে এখনই খেতে দিয়ে দিচ্ছি, কেমন! আচ্ছা, আপনি কি এখান থেকে তারাপীঠ যাবেন? নাকি নিয়ামতপুরে? নাকি দক্ষিণপাড়ায় থেকে যাবেন অশোক বাবুদের বাড়ি?" টেবিলে খাবার সার্ভ করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা দেবী।
'এত কিছুর পরেও আমাকে খাইয়ে-দাইয়ে বিদায় করতে চাইছিস, তাও আবার এই রাতের বেলায়? এতটা জেদ তোর? এতটা সতীসাধ্বী নারী তুই? বেশ .. ঠিক আছে। তোর সতীত্ব কি করে নষ্ট হয়, সেটা আজ নিজের চোখেই দেখতে পাবি তুই।' এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চেয়ার টেনে খেতে বসলো বিপুল বাবু। তারপর তার ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি কখন কোথায় যাবো, তা আমি নিজেও জানিনা বৌমা। এই চত্বরেই আমার ডজন খানেক ভক্ত আছে। রাতে কোথাও না কোথাও একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চয়ই পেয়ে যাবো। তুমি যেন একটু আগে কি জিজ্ঞাসা করবে বলছিলে আমাকে?"
"না মানে, সকালে আপনি তখন আমার, মানে আমার পরিবারের বিপদের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলেন, আমি সেগুলো শুনে প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ এইরকম কিছু ঘটা অসম্ভব কিছু নয়। পরশুদিন আমাদের কোয়ার্টারে সাপ ঢুকেছিলো। সাপটাকে ঢুকতে আমি নিজে না দেখলেও আমার স্বামীর এক সহকর্মী আর আমাদের কাজের মাসি মালতী দেখেছিলো .. সেই সাপ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। তারপর আজ সকালে মালতীর কাছ থেকে খবর পেলাম ফ্যাক্টরিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। হয়তো লকআউট হয়ে যাবে কারখানা। এর আগে যখন একবার কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন শ্রমিকরা সবাই ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলো। তাই আপনার দ্বিতীয় কথাটাও সত্যি হতে পারে। তবে একটা কথা বলছি কিছু মনে করবেন না, প্রথমে আপনার কথাগুলো শুনে আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমার ছেলের কাছ থেকে শুনে এগুলো বলছেন। তাই ওকে আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিন্তু ও বললো এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি ওর। তখনই আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে আসছিলাম, আর আপনি রেগে চলে গেলেন। আচ্ছা, সত্যিই কি এরকম বিপদ হতে পারে? আপনি তো সব জানেন। আপনার ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে, সে প্রমাণ আমি একটু আগেই পেয়েছি। বলুন না, আমাদের কোনো বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?" তার ভাসুরের সামনে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে খাবার দিতে দিতে অনুনয় করে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
বিপুল বাবু লক্ষ্য করলো সকালের জামাকাপড়, অর্থাৎ সবুজ রঙের ছাপা শাড়ি আর কালো রঙের স্লিভলেস ব্লাউজটা তখনো পড়েছিলো নন্দনা। তার ভাইয়ের বউকে দেখে সে বুঝতে পারলো ছেলের হঠাৎ করে হওয়া শরীর খারাপের জন্য বিকালে গা ধুয়ে কাপড়জামা ছাড়ার অবকাশ পায়েনি সে। তবে সকালে যেরকম বুক থেকে শাড়ির আঁচল সরে গিয়ে স্তন বিভাজিকা উন্মুক্ত হয়ে পড়লে কিংবা অসাবধানতায় ওই একই কারণে তার নগ্ন কোমর এবং সমগ্র তলপেট উন্মুক্ত হয়ে নগ্ন গভীর কুয়োর মতো নাভিটা প্রকাশ পেলে তৎক্ষণাৎ সেটাকে আড়াল করার চেষ্টা করছিলো তার ভাইয়ের স্ত্রী। এখন হয়তো তড়িঘড়ি সেটা করার খুব একটা চেষ্টা করছে না সে। ভরসা এবং বিশ্বাস .. এই দুটোই তারমানে অর্জন করতে পেরেছে বিপুল বাবু।
নন্দনা দেবীর কথাগুলো শুনে তার ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বিপুল বললো, "আমি জানি তো তুমি আমাকে অবিশ্বাস করেছিলে, তবে তার জন্য আমি কিছু মনে করিনি। যাক সে কথা, সম্ভাবনার কথা কি বলছো? নিশ্চিত বিপদ আছে বলেই তো কথাগুলো বলেছিলাম। তা না হলে সর্প দংশনের কথা আমি বললাম কি করে, বলো তো? আমি তো আর তোমার বাড়িতে সাপ ঢোকার কথাটা জানতাম না। শুধু তাই নয়, আজ রাতে বিক্ষোভ দেখাতে কেউ আসবে না তোমাদের এই ক্যাম্পাসে। কিন্তু ডাকাত পড়বে বাড়িতে। এই ডাকাত অন্য কেউ নয়, তোমার স্বামীর ফ্যাক্টরি ওয়ার্কারদের মধ্যেই কেউ কেউ। ওরা তো জানে এখন ক্যাম্পাসের অর্ধেক কোয়ার্টার খালি। বাড়িতে শুধু তুমি আর তোমার ছেলে, এমতাবস্থায় রাতের বেলা যদি অপরিচিত এক বা একাধিক লোক বাড়িতে ঢুকে আসে, তাহলে তাদের সামলাতে পারবে তো?"
"মানে .. মানে আপনি সত্যি বলছেন এরকম কিছু ঘটতে চলেছে? ভয় তো আমার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। এই বিপদ ঠেকানোর কি কোনো উপায় নেই?" অত্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়ে কম্পিত কন্ঠে জানতে চাইলো নন্দনা দেবী।
"আমি যখন উপস্থিত রয়েছি, তখন উপায় তো অবশ্যই থাকবে বা এর কোনো প্রতিকার করার চেষ্টা আমি নিশ্চয়ই করবো .. সেই প্রসঙ্গে পড়ে আসছি। কিন্তু আমি ধ্যানযোগে আরেকটা কথাও জানতে পেরেছি। তোমার স্বামী মানে আমার ভাইয়ের সঙ্গে তো বর্তমানে তোমার সম্পর্ক একদমই ভালো নেই। কি, ঠিক বললাম তো?" তার ভাইয়ের স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো বিপুল।
কথাগুলো শুনে এতটাই অবাক হয়ে গেলো নন্দনা দেবী, যে কি রিয়্যাকশন দেবে সেটা বুঝতে না পেরে প্রথমে চোখ বড় বড় করে তার ভাসুরের দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ ফসকে বলে ফেললো, "আ..আপনি এই কথা কি করে .. ?" তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, "না মানে সেরকম কিছু নয় তো .."
"তুমি ভালো করেই জানো আমি তন্ত্রবলে সব জানতে পেরে যাই .. তাই আমার সামনে একদম মিথ্যা কথা বলার চেষ্টা করবে না। ঠিক আছে, সেরকম কিছু যদি না হয় .. তাহলে এখনই আমার সঙ্গে ফোন করো তো তোমার স্বামীকে! জানাও তোমার ছেলের শরীর খারাপের কথা।" ধমক দিয়ে উঠে কথাগুলো বললো তান্ত্রিক বিপুল।
হার্জিন্দার আর তার দুই বন্ধুর সামনে তাকে ওইভাবে বলার জন্য চিরন্তনের উপর অভিমান করে সে তো সত্যিই তার স্বামীর সঙ্গে গতকাল ফোনে কথা বলেনি, ফোনটা তার ছেলেকে দিয়ে দিয়েছিলো। এবং সে এটাও ভালো করে জানে, সেই জন্যই চিরন্তন আজ তাকে ফোন করেনি। তাই তার ভাসুরের মুখে কথাগুলো শুনে কোনো উত্তর দিতে না পেরে, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো নন্দনা দেবী।
ধীরে ধীরে তার কথার জালে বাপ্পার মাতৃদেবী ফেঁসে যাচ্ছে এটা বুঝতে পেরে নিজের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের ক্ষমতা প্রয়োগ করে পুনরায় বলতে শুরু করলো বিপুল বাবু, "স্বামীকে যখন ফোন করতে পারলে না তার মানে আমার কথাগুলো যে সত্যি, এটা প্রমাণ হয়ে গেলো। একটু আগে কি বলছিলে যেন, তোমার বাড়ির কাজের লোক আর আমার ভাইয়ের অফিসের এক সহকর্মী সাপ ঢুকতে দেখেছে এই কোয়ার্টারে। সেটা কবে?"
"পরশুদিন দুপুরবেলা .. কাজের মাসির কাছ থেকে অবশ্য পরেরদিন সাপের কথাটা শুনেছি আমি, মানে গতকাল।" মাথা নিচু করেই উত্তর দিলো নন্দনা দেবী।
- "আর তোমার স্বামীর অফিসের সহকর্মী? সে কখন দেখলো সাপ ঢুকতে? আর তোমাকেই বা জানালো কখন?"
- "ওইদিন .."
- "ওইদিন মানে? ঠিক করে বলো .."
- "মানে যেদিন সাপ ঢুকেছিলো .. পরশুদিন .."
- "কখন?"
- "বেলার দিকে .."
- "বেলার দিকে সে সাপ ঢুকতে দেখলো তোমার বাড়িতে। অথচ তুমি দেখলে না! তুমি তখন কোথায় ছিলে? কি করছিলে?"
ধূর্ত তান্ত্রিকটার অনবরত চলতে থাকা পুলিশি জেরার মুখে পড়ে নন্দনা দেবী মুখ ফসকে বলে ফেললো, "আমি তো বাথরুমে কাপড়জামা ধুচ্ছিলাম.." কথাটা বলেই চুপ করে গেলো সে।
মাগীটাকে পুরোপুরিভাবে জালে জড়ানোর সুযোগ আসন্ন এটা বুঝতে পেরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বিপুল বাবু জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি বাথরুমে কাপড়জামা ধুচ্ছিলে, বাইরের দরজা খোলা ছিলো। সদর দরজা দিয়ে সাপটা ঢুকে পড়েছিলো আর সেই খবরটা দিতেই এসেছিলো তোমার স্বামীর সহকর্মী, তাই তো?"
তার ভাসুরের কথায় সম্মতি জানিয়ে ঘাড় নাড়লো নন্দনা দেবী।
- "তুমি তো বললে .. তোমার বাড়িতে কাজের লোক রয়েছে, তাহলে সে কাপড়জামা ধোয়ে না?"
- "হ্যাঁ ওই তো সবকিছু করে, আমি শুধু বাসি জামাকাপড়, মানে যেটা তখন পড়ে থাকি, সেগুলো নিজেই ধুয়ে নিই স্নানের সময়।"
- "মানে, এই শাড়ি, ব্লাউজ, সায়া .. এইগুলো?"
- "না .. মানে এগুলো তো স্নান করে উঠে পড়ি। রাতের বেলায় তো .."
"জন্মের সময় কি তোমার মুখে কেউ ইয়ে গুঁজে দিয়েছিলো? অর্ধেক কথা পেটে আর অর্ধেক কথা মুখে কেন তোমার? যেটা বলবে পরিষ্কার করে বলো .." ফের ধমক দিয়ে উঠলো বিপুল বাবু।
তার ভাসুরের ধমকে কাজ হলো ওষুধের মতো। থতমত খেয়ে গিয়ে নন্দনা দেবী বলে উঠলো, "নাইটি আর আন্ডার গারল্যান্ড .."
"আন্ডার গারল্যান্ড? সেটা আবার কি? তুমি বোধহয় আন্ডার-গারমেন্টস বলতে চাইছো! মানে নাইটি আর ব্রা-প্যান্টির কথা বলছো, তাইতো? ওইগুলি তুমি স্নানের সময় নিজেই ধুয়ে নাও।" মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো বিপুল বাবু।
ভাসুরের মুখে নিজের অন্তর্বাসের কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেয়ে গিয়ে শুধুমাত্র "হুঁ .." এটুকুই বললো নন্দনা দেবী।
"সেদিনও তুমি ওইগুলোই ধুচ্ছিলে, আর সেই সময় আমার ভাইয়ের অফিসের সহকর্মী ঢুকে পরে বাড়িতে আর বাথরুমে গিয়ে তোমাকে সাপের কথা বলে। কি তাইতো? এই এক মিনিট এক মিনিট .. তুমি তোমার নাইটি আর তার সঙ্গে রাতে পড়া ব্রা-প্যান্টি ধুচ্ছিলে। তারমানে তুমি ল্যাংটো হয়েছিলে সম্পূর্ণ। বাড়ির সদর দরজা খুলেই এইসব করছিলে? ছিঃ ছিঃ আমি তো ভাবতেই পারছি না, তোমাকে ল্যাংটো অবস্থায় দেখেছে আমার ভাইয়ের কলিগ?" কারোর জন্য পরিবারের সম্মান চলে গেলে তাকে যেভাবে শাসন করা হয়, ঠিক সেই ভাবেই তার ভাইয়ের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললো বিপুল বাবু।
"না না তা নয়, আমি নাইটি পড়েছিলাম তো .." ভাসুরের শাসনে কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে উত্তর দিলো তার ভাইয়ের স্ত্রী।
"তাহলে কি ধুচ্ছিলে?" গলার স্বর গম্ভীর রেখেই জানতে চাইলো তান্ত্রিকটা।
"ওই .. আন্ডার, মানে ওই ভেতরে পড়ার ওই জিনিস দুটো। আসলে আমার কাজের মাসি মালতী কাজ সেরে যাওয়ার আগে আমাকে ডেকে দিয়ে গেলে আমি সদর দরজা আটকে স্নান করি। কিন্তু সেদিন সাপের ভয়ে মালতী আমাকে না ডেকেই পালিয়ে গেলো, আর হার্জিন্দার জি মানে আমার স্বামীর সহকর্মী এসে সেই খবরটা আমাকে দিলেন।" আমতা আমতা করে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি বিপুল বাবু তার ভাইপো বাপ্পার কাছ থেকে আগেই জেনে নিয়েছিলো আগের দিন পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পর তার মায়ের সঙ্গে সে তিনজন অপরিচিত আঙ্কেলকে দেখেছে, এবং জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছে তার মায়ের শরীর খারাপের জন্য ট্রিটমেন্ট করতে ওরা এখানে এসেছিলো। এই পুরো ব্যাপারটার সম্পর্কে আগেই অবগত হওয়ার জন্য সেই সূত্র ধরে পুলিশি জেরার মতো একটার পর একটা প্রশ্ন করে নন্দনার সঙ্গে দু'দিন ধরে ঘটে চলা সমস্ত ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জেনে নিলো ধূর্ত তান্ত্রিকটা। প্রথমদিন হার্জিন্দার এবং পরেরদিন সে আর তার দুই বন্ধুর সঙ্গে তার ভাইয়ের স্ত্রীর ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা শুনলো বিপুল। এমনকি যে কারণে তার স্বামীর উপর নন্দনা দেবীর অভিমান বা রাগ হয়েছে, সেটাও পরিষ্কার হলো তার সামনে।
"তারমানে, তোমার জ্বর নিয়ে নিজের স্বামীকে তুমি মিথ্যে কথা বলেছো। তোমার কিছুই হয়নি, তুমি অন্য কারণে বাড়িতে লোক ডেকেছিলে। হ্যাঁ সেটা তোমার ফিগার কন্ট্রোলের ট্রিটমেন্টের জন্য হতে পারে, কিন্তু জ্বরের কথাটা সত্যি নয়। তবে আমার ভাই কতগুলো বাইরের লোকের সামনে ফোনটা স্পিকারে থাকা সত্ত্বেও তোমার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে সেটা ক্ষমার অযোগ্য। আমি তো বলবো ও এটা ইচ্ছে করে করেছে। যে বউয়ের জন্য তুই সন্তানের বাবা হতে পেরেছিস .. সেই বউকেই এখন অপমান করে অবহেলা করে বলছিস 'তোমার শরীর নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই, আমার ছেলেই আমার কাছে সব..' ছিঃ ছিঃ আমি তো এটা ভাবতেও পারি না। অবশ্য তোমার সম্পর্কে এই ধরনের কিছু কথা ও আমাকে আগেও বলেছে.." সবকিছু জেনে সবকিছু শুনে এবার নিজের খেলা শুরু করলো ধূর্ত তান্ত্রিকটা।
|| ৭ ||
নন্দনা দেবী দেখলো, ঘরের পাখা বন্ধ। তার ছেলে খাটের উপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে রয়েছে এবং ঠকঠক করে কাঁপছে এই অসম্ভব গরমেও। এই দৃশ্য দেখে দৌড়ে গিয়ে ছেলের গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠলো সে .. জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে বাপ্পার। সময় যত অতিবাহিত হতে লাগলো দুঃশ্চিন্তার মাত্রা ততই বাড়তে লাগলো নন্দনা দেবীর।
গতকাল রাতে তার স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ার জন্য আজ ফোন করেনি চিরন্তন। অভিমান এবং তার সঙ্গে সঙ্গে রাগ আর ক্ষোভের পারদ চড়তে থাকলো নন্দনা দেবীর। মোবাইলটা একবার হাতে নিয়ে তার স্বামীর নম্বরে রিং করতে গিয়েও থেমে গেলো সে। জলপট্টি আর প্যারাসিটামলেও কোনো কাজ হচ্ছিলো না। ক্রমশ বাড়তে থাকলো বাপ্পার শরীরের তাপমাত্রা। সুযোগ থাকলেও ডক্টর প্রমোদকে সে ডাকতো কিনা জানা নেই, তবে বিকেলে মালতীর কাছ থেকে বাপ্পার মা শুনেছে শ্রমিকদের বিক্ষোভ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অর্ধেকের বেশি স্টাফ ঘেরাও হয়ে রয়েছে ফ্যাক্টরিতে। তার মধ্যে কোম্পানির ডাক্তারও রয়েছে। তাই এমতাবস্থায় ইচ্ছে থাকলেও বাড়িতে ডাক্তার কল করার উপায়ও নেই।
"যদি কখনো বিপদে পড়ো এবং সেই বিপদ থেকে আমিই একমাত্র তোমাকে বা তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারি, আমার প্রতি যদি এমন বিশ্বাস আর ভরসা জন্মায় .. তাহলে আমাকে ডেকো, আমি অবশ্যই আসবো। তোমার ছেলের অঙ্কের খাতার শেষ পৃষ্ঠায় আমার ফোন নম্বর লেখা আছে .." হঠাৎ করেই বিপুল বাবুর বলা এই শেষ কথাগুলো মনে পড়লো নন্দনা দেবীর। তৎক্ষণাৎ তার ছেলের অঙ্কের খাতাটা খাটের উপর থেকে তুলে নিয়ে তার শেষ পৃষ্ঠাটা উল্টে বাপ্পার মা দেখলো সেখানে জ্বলজ্বল করছে একটি ফোন নম্বর।
ফোন নম্বরটা তার ছেলের অঙ্কের খাতায় কখন, কি ভাবে, কোন পরিস্থিতিতে লেখা হয়েছে .. এই সব কিছু ভাবার অবকাশ বা মনের অবস্থা ছিলো না নন্দনা দেবীর। নিজের ফোন থেকে কম্পিতহস্তে বিপুল বাবুর মোবাইল নম্বরটা ডায়াল করলো সে। বাপ্পার জ্বর সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানিয়ে, ফোনটা কেটে দেওয়ার মিনিট পনেরো পর কলিংবেল বেজে উঠলো। নন্দনা দেবী তৎক্ষণাৎ দ্রুত পায়ে ড্রয়িংরুমে পৌঁছে সদর দরজা খুলে দেখলো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রকাণ্ড চেহারার অধিকারী দানবাকৃতি বিপুল বাবু। এই ব্যক্তিকেই সে এখন আশা করেছিলো, কারণ সে তো নিজেই তাকে ফোন করে ডেকেছে। কিন্তু বিপুল বাবুর বর্তমান পোশাক এবং শরীরী ভাষার যে প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠলো তার চোখে, সেটা বোধহয় আশা করেনি বাপ্পার মাতৃদেবী। একটা গাঢ় লাল রঙের আলখাল্লার মতো পোশাক পড়েছে সে। কপালে মোটা করে সিঁদুরের তিলক কাটা .. যা নাকের উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। মাথায় একটা লাল রঙের কাপড়, ফেট্টির মতো করে বাঁধা। গলায় বিভিন্ন আকৃতির বেশ কয়েকটি রুদ্রাক্ষের মালা ঝুলছে। রক্তবর্ণ চোখদুটি কোনো বিশেষ কারণে অতিমাত্রায় ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে।
কদাকার বিপুল বাবুকে তান্ত্রিকের এই ভয়ঙ্কর তান্ত্রিকের বেশে দেখে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো নন্দনা দেবীর। একটা কথাও বের হলো না মুখ দিয়ে, শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার ভাসুরের দিকে। "ভেতরে আসতে বলবে না বৌমা?" গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো বিপুল বাবু। দরজার এক পাশে সরে দাঁড়ালো নন্দনা। দুলকি চালে ভেতরে প্রবেশ করলো তান্ত্রিক বিপুল। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা।
★★★★
শরীরের তাপমাত্রার পারদ তো চড়ছিলই, অতঃপর জ্বরের ঘোরে ছটফট করতে করতে ভুল বকতে শুরু করে দেওয়া বাপ্পার কাছে গিয়ে তার মাথায় আলতো করে কয়েকবার হাত বুলিয়ে দিলো বিপুল বাবু। তারপর নিজের কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগটা থেকে রাংতায় মোড়ানো একটা মোড়ক বের করে এনে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নন্দনা দেবীর হাতে দিয়ে বললো, "এর ভেতরে যেটা আছে সেটা আগে ওকে জলে গুলে খাইয়ে দাও।"
তার ভাসুরের হাত থেকে কাগজের মোড়কটা নিয়ে, তারপর সেটা খুলে বাপ্পার মা দেখলো .. মোড়কটার মধ্যে কিছু পরিমাণ সাদা রঙের পাউডার রয়েছে। তার ভাসুরের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে কিছুটা ইতস্ততঃ করে নন্দনা দেবী প্রশ্ন করলো, "এটা কি? মানে আমি বলছিলাম, এটা খাওয়ানো কি এখন ঠিক হবে?"
"আমি তখন তোমাকে কি বলেছিলাম বৌমা, মনে আছে? আমাকে যখন পুরোপুরি ভরসা এবং বিশ্বাস করতে পারবে তখনই আমার সাহায্য চাইবে। ও তো আমার ভাইপো হয়, আমি ওর খারাপ চাইবো না। আমি যখন দিয়েছি ওষুধটা তখন নির্দ্বিধায় খাইয়ে দাও, কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবে ফল পাবে। আর যদি ফল না পাও তাহলে আমাকে পুলিশে দিও, কেমন?" বিপুল বাবুর মুখে এই কথাগুলো শুনে আশ্বস্ত হয়ে পাউডারটা জলে গুলে বাপ্পাকে খাইয়ে দিলো তার মা।
মিনিট দশেকের মধ্যেই শরীরের তাপমাত্রা অদ্ভুতভাবে কমে গিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করে দিলো, তার সঙ্গে ছটফট করতে করতে ভুল বকাটাও কমে গেলো বাপ্পার। তার ছেলের শারীরিক পরিবর্তন দেখে, বলা ভালো এইরকম মিরাকেলের সাক্ষী হয়ে মনটা আনন্দে ভরে উঠলো নন্দনা দেবীর, তার সঙ্গে একটা প্রগাঢ় কৃতজ্ঞতাবোধ জন্মালো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তান্ত্রিকরূপী ওই লোকটার প্রতি। মাটিতে বসে বিপুল বাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে তার ভাইয়ের স্ত্রী বললো, "আপনি সাক্ষাৎ দেবতুল্য মানুষ। যদি কিছু ভুল করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দেবেন। জ্বর তো কমেছে মনে হচ্ছে, কিন্তু কাল যে ওর অঙ্ক পরীক্ষা। ও কি আদৌ পরীক্ষা দিতে যেতে পারবে .. এটা ভেবেই ভীষণ চিন্তা হচ্ছে এখন।"
নিজের দুই হাত দিয়ে তার ভাইয়ের স্ত্রীর দুই কাঁধ ধরে মাটি থেকে উঠিয়ে বিপুল বাবু বললো, "চিন্তা করো না .. তোমার ছেলে কাল ঠিক সময়ে পরীক্ষা দিতে যাবে। ও তো অঙ্কে কাঁচা, তাই অঙ্ক পরীক্ষার ফলাফল কোনোবার ভালো হয় না, তাই তো? এবারের সিলেবাসে থাকা গণিত বইয়ের প্রশ্নমালার প্রত্যেকটি অঙ্ক কিন্তু ও সঠিকভাবে করেছে। তার মানে কাল যে অঙ্কই আসুক না কেনো, ও সেটা করতে পারবে। এখন ওকে বিরক্ত করো না, চুপচাপ এই ঘরে শুয়ে ঘুমোতে দাও। জলে গুলে যে মিশ্রণটা ওকে খাওয়ালে, সেটার মধ্যে ওষুধের সঙ্গে পথ্যও রয়েছে। তাই রাতে আর ওকে ডেকে ঘুম থেকে তুলে খাওয়ার দেওয়ার দরকার নেই, ওর পেট ভর্তি আছে। এই ঘরে লোকের উপস্থিতিতে ও আবার অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।"
বিপুল বাবুর মুখে তার ছেলে পুনরায় অসুস্থ হয়ে যেতে পারে এটা শুনে, "ও আচ্ছা তাহলে তো এই ঘরে আমাদের আর থাকাটা ঠিক হবে না। ঠিক আছে চলুন তাহলে ডাইনিং রুমেই না হয় যাই আমরা। সকালে আপনি যে কথাগুলো বলছিলেন, তার সম্বন্ধে আপনাকে দু-একটা প্রশ্ন করার আছে .." এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নন্দনা দেবী। তাকে অনুসরণ করে ঘর থেকে বেরিয়ে পশ্চিম দিকের বেডরুমের দরজাটা বাইরে থেকে আটকে দিলো বিপুল বাবু। সেটা দেখে কিছু একটা বলতে গিয়েও, বলতে পারলো না বাপ্পার মা।
★★★★
"আপনি সকালে রাগ করে খেয়ে যান নি, রাতে কিন্তু খেয়ে যেতে হবে আপনাকে। এখন তো প্রায় সাড়ে আটটা বাজতে চললো, আপনাকে আবার অনেকটা পথ যেতে হবে। আপনাকে এখনই খেতে দিয়ে দিচ্ছি, কেমন! আচ্ছা, আপনি কি এখান থেকে তারাপীঠ যাবেন? নাকি নিয়ামতপুরে? নাকি দক্ষিণপাড়ায় থেকে যাবেন অশোক বাবুদের বাড়ি?" টেবিলে খাবার সার্ভ করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা দেবী।
'এত কিছুর পরেও আমাকে খাইয়ে-দাইয়ে বিদায় করতে চাইছিস, তাও আবার এই রাতের বেলায়? এতটা জেদ তোর? এতটা সতীসাধ্বী নারী তুই? বেশ .. ঠিক আছে। তোর সতীত্ব কি করে নষ্ট হয়, সেটা আজ নিজের চোখেই দেখতে পাবি তুই।' এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চেয়ার টেনে খেতে বসলো বিপুল বাবু। তারপর তার ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি কখন কোথায় যাবো, তা আমি নিজেও জানিনা বৌমা। এই চত্বরেই আমার ডজন খানেক ভক্ত আছে। রাতে কোথাও না কোথাও একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চয়ই পেয়ে যাবো। তুমি যেন একটু আগে কি জিজ্ঞাসা করবে বলছিলে আমাকে?"
"না মানে, সকালে আপনি তখন আমার, মানে আমার পরিবারের বিপদের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে যে কথাগুলো বলেছিলেন, আমি সেগুলো শুনে প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ এইরকম কিছু ঘটা অসম্ভব কিছু নয়। পরশুদিন আমাদের কোয়ার্টারে সাপ ঢুকেছিলো। সাপটাকে ঢুকতে আমি নিজে না দেখলেও আমার স্বামীর এক সহকর্মী আর আমাদের কাজের মাসি মালতী দেখেছিলো .. সেই সাপ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। তারপর আজ সকালে মালতীর কাছ থেকে খবর পেলাম ফ্যাক্টরিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। হয়তো লকআউট হয়ে যাবে কারখানা। এর আগে যখন একবার কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন শ্রমিকরা সবাই ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলো। তাই আপনার দ্বিতীয় কথাটাও সত্যি হতে পারে। তবে একটা কথা বলছি কিছু মনে করবেন না, প্রথমে আপনার কথাগুলো শুনে আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমার ছেলের কাছ থেকে শুনে এগুলো বলছেন। তাই ওকে আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিন্তু ও বললো এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি ওর। তখনই আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে আসছিলাম, আর আপনি রেগে চলে গেলেন। আচ্ছা, সত্যিই কি এরকম বিপদ হতে পারে? আপনি তো সব জানেন। আপনার ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে, সে প্রমাণ আমি একটু আগেই পেয়েছি। বলুন না, আমাদের কোনো বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?" তার ভাসুরের সামনে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে খাবার দিতে দিতে অনুনয় করে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
বিপুল বাবু লক্ষ্য করলো সকালের জামাকাপড়, অর্থাৎ সবুজ রঙের ছাপা শাড়ি আর কালো রঙের স্লিভলেস ব্লাউজটা তখনো পড়েছিলো নন্দনা। তার ভাইয়ের বউকে দেখে সে বুঝতে পারলো ছেলের হঠাৎ করে হওয়া শরীর খারাপের জন্য বিকালে গা ধুয়ে কাপড়জামা ছাড়ার অবকাশ পায়েনি সে। তবে সকালে যেরকম বুক থেকে শাড়ির আঁচল সরে গিয়ে স্তন বিভাজিকা উন্মুক্ত হয়ে পড়লে কিংবা অসাবধানতায় ওই একই কারণে তার নগ্ন কোমর এবং সমগ্র তলপেট উন্মুক্ত হয়ে নগ্ন গভীর কুয়োর মতো নাভিটা প্রকাশ পেলে তৎক্ষণাৎ সেটাকে আড়াল করার চেষ্টা করছিলো তার ভাইয়ের স্ত্রী। এখন হয়তো তড়িঘড়ি সেটা করার খুব একটা চেষ্টা করছে না সে। ভরসা এবং বিশ্বাস .. এই দুটোই তারমানে অর্জন করতে পেরেছে বিপুল বাবু।
নন্দনা দেবীর কথাগুলো শুনে তার ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বিপুল বললো, "আমি জানি তো তুমি আমাকে অবিশ্বাস করেছিলে, তবে তার জন্য আমি কিছু মনে করিনি। যাক সে কথা, সম্ভাবনার কথা কি বলছো? নিশ্চিত বিপদ আছে বলেই তো কথাগুলো বলেছিলাম। তা না হলে সর্প দংশনের কথা আমি বললাম কি করে, বলো তো? আমি তো আর তোমার বাড়িতে সাপ ঢোকার কথাটা জানতাম না। শুধু তাই নয়, আজ রাতে বিক্ষোভ দেখাতে কেউ আসবে না তোমাদের এই ক্যাম্পাসে। কিন্তু ডাকাত পড়বে বাড়িতে। এই ডাকাত অন্য কেউ নয়, তোমার স্বামীর ফ্যাক্টরি ওয়ার্কারদের মধ্যেই কেউ কেউ। ওরা তো জানে এখন ক্যাম্পাসের অর্ধেক কোয়ার্টার খালি। বাড়িতে শুধু তুমি আর তোমার ছেলে, এমতাবস্থায় রাতের বেলা যদি অপরিচিত এক বা একাধিক লোক বাড়িতে ঢুকে আসে, তাহলে তাদের সামলাতে পারবে তো?"
"মানে .. মানে আপনি সত্যি বলছেন এরকম কিছু ঘটতে চলেছে? ভয় তো আমার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। এই বিপদ ঠেকানোর কি কোনো উপায় নেই?" অত্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়ে কম্পিত কন্ঠে জানতে চাইলো নন্দনা দেবী।
"আমি যখন উপস্থিত রয়েছি, তখন উপায় তো অবশ্যই থাকবে বা এর কোনো প্রতিকার করার চেষ্টা আমি নিশ্চয়ই করবো .. সেই প্রসঙ্গে পড়ে আসছি। কিন্তু আমি ধ্যানযোগে আরেকটা কথাও জানতে পেরেছি। তোমার স্বামী মানে আমার ভাইয়ের সঙ্গে তো বর্তমানে তোমার সম্পর্ক একদমই ভালো নেই। কি, ঠিক বললাম তো?" তার ভাইয়ের স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো বিপুল।
কথাগুলো শুনে এতটাই অবাক হয়ে গেলো নন্দনা দেবী, যে কি রিয়্যাকশন দেবে সেটা বুঝতে না পেরে প্রথমে চোখ বড় বড় করে তার ভাসুরের দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ ফসকে বলে ফেললো, "আ..আপনি এই কথা কি করে .. ?" তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, "না মানে সেরকম কিছু নয় তো .."
"তুমি ভালো করেই জানো আমি তন্ত্রবলে সব জানতে পেরে যাই .. তাই আমার সামনে একদম মিথ্যা কথা বলার চেষ্টা করবে না। ঠিক আছে, সেরকম কিছু যদি না হয় .. তাহলে এখনই আমার সঙ্গে ফোন করো তো তোমার স্বামীকে! জানাও তোমার ছেলের শরীর খারাপের কথা।" ধমক দিয়ে উঠে কথাগুলো বললো তান্ত্রিক বিপুল।
হার্জিন্দার আর তার দুই বন্ধুর সামনে তাকে ওইভাবে বলার জন্য চিরন্তনের উপর অভিমান করে সে তো সত্যিই তার স্বামীর সঙ্গে গতকাল ফোনে কথা বলেনি, ফোনটা তার ছেলেকে দিয়ে দিয়েছিলো। এবং সে এটাও ভালো করে জানে, সেই জন্যই চিরন্তন আজ তাকে ফোন করেনি। তাই তার ভাসুরের মুখে কথাগুলো শুনে কোনো উত্তর দিতে না পেরে, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো নন্দনা দেবী।
ধীরে ধীরে তার কথার জালে বাপ্পার মাতৃদেবী ফেঁসে যাচ্ছে এটা বুঝতে পেরে নিজের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের ক্ষমতা প্রয়োগ করে পুনরায় বলতে শুরু করলো বিপুল বাবু, "স্বামীকে যখন ফোন করতে পারলে না তার মানে আমার কথাগুলো যে সত্যি, এটা প্রমাণ হয়ে গেলো। একটু আগে কি বলছিলে যেন, তোমার বাড়ির কাজের লোক আর আমার ভাইয়ের অফিসের এক সহকর্মী সাপ ঢুকতে দেখেছে এই কোয়ার্টারে। সেটা কবে?"
"পরশুদিন দুপুরবেলা .. কাজের মাসির কাছ থেকে অবশ্য পরেরদিন সাপের কথাটা শুনেছি আমি, মানে গতকাল।" মাথা নিচু করেই উত্তর দিলো নন্দনা দেবী।
- "আর তোমার স্বামীর অফিসের সহকর্মী? সে কখন দেখলো সাপ ঢুকতে? আর তোমাকেই বা জানালো কখন?"
- "ওইদিন .."
- "ওইদিন মানে? ঠিক করে বলো .."
- "মানে যেদিন সাপ ঢুকেছিলো .. পরশুদিন .."
- "কখন?"
- "বেলার দিকে .."
- "বেলার দিকে সে সাপ ঢুকতে দেখলো তোমার বাড়িতে। অথচ তুমি দেখলে না! তুমি তখন কোথায় ছিলে? কি করছিলে?"
ধূর্ত তান্ত্রিকটার অনবরত চলতে থাকা পুলিশি জেরার মুখে পড়ে নন্দনা দেবী মুখ ফসকে বলে ফেললো, "আমি তো বাথরুমে কাপড়জামা ধুচ্ছিলাম.." কথাটা বলেই চুপ করে গেলো সে।
মাগীটাকে পুরোপুরিভাবে জালে জড়ানোর সুযোগ আসন্ন এটা বুঝতে পেরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বিপুল বাবু জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি বাথরুমে কাপড়জামা ধুচ্ছিলে, বাইরের দরজা খোলা ছিলো। সদর দরজা দিয়ে সাপটা ঢুকে পড়েছিলো আর সেই খবরটা দিতেই এসেছিলো তোমার স্বামীর সহকর্মী, তাই তো?"
তার ভাসুরের কথায় সম্মতি জানিয়ে ঘাড় নাড়লো নন্দনা দেবী।
- "তুমি তো বললে .. তোমার বাড়িতে কাজের লোক রয়েছে, তাহলে সে কাপড়জামা ধোয়ে না?"
- "হ্যাঁ ওই তো সবকিছু করে, আমি শুধু বাসি জামাকাপড়, মানে যেটা তখন পড়ে থাকি, সেগুলো নিজেই ধুয়ে নিই স্নানের সময়।"
- "মানে, এই শাড়ি, ব্লাউজ, সায়া .. এইগুলো?"
- "না .. মানে এগুলো তো স্নান করে উঠে পড়ি। রাতের বেলায় তো .."
"জন্মের সময় কি তোমার মুখে কেউ ইয়ে গুঁজে দিয়েছিলো? অর্ধেক কথা পেটে আর অর্ধেক কথা মুখে কেন তোমার? যেটা বলবে পরিষ্কার করে বলো .." ফের ধমক দিয়ে উঠলো বিপুল বাবু।
তার ভাসুরের ধমকে কাজ হলো ওষুধের মতো। থতমত খেয়ে গিয়ে নন্দনা দেবী বলে উঠলো, "নাইটি আর আন্ডার গারল্যান্ড .."
"আন্ডার গারল্যান্ড? সেটা আবার কি? তুমি বোধহয় আন্ডার-গারমেন্টস বলতে চাইছো! মানে নাইটি আর ব্রা-প্যান্টির কথা বলছো, তাইতো? ওইগুলি তুমি স্নানের সময় নিজেই ধুয়ে নাও।" মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো বিপুল বাবু।
ভাসুরের মুখে নিজের অন্তর্বাসের কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেয়ে গিয়ে শুধুমাত্র "হুঁ .." এটুকুই বললো নন্দনা দেবী।
"সেদিনও তুমি ওইগুলোই ধুচ্ছিলে, আর সেই সময় আমার ভাইয়ের অফিসের সহকর্মী ঢুকে পরে বাড়িতে আর বাথরুমে গিয়ে তোমাকে সাপের কথা বলে। কি তাইতো? এই এক মিনিট এক মিনিট .. তুমি তোমার নাইটি আর তার সঙ্গে রাতে পড়া ব্রা-প্যান্টি ধুচ্ছিলে। তারমানে তুমি ল্যাংটো হয়েছিলে সম্পূর্ণ। বাড়ির সদর দরজা খুলেই এইসব করছিলে? ছিঃ ছিঃ আমি তো ভাবতেই পারছি না, তোমাকে ল্যাংটো অবস্থায় দেখেছে আমার ভাইয়ের কলিগ?" কারোর জন্য পরিবারের সম্মান চলে গেলে তাকে যেভাবে শাসন করা হয়, ঠিক সেই ভাবেই তার ভাইয়ের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললো বিপুল বাবু।
"না না তা নয়, আমি নাইটি পড়েছিলাম তো .." ভাসুরের শাসনে কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে উত্তর দিলো তার ভাইয়ের স্ত্রী।
"তাহলে কি ধুচ্ছিলে?" গলার স্বর গম্ভীর রেখেই জানতে চাইলো তান্ত্রিকটা।
"ওই .. আন্ডার, মানে ওই ভেতরে পড়ার ওই জিনিস দুটো। আসলে আমার কাজের মাসি মালতী কাজ সেরে যাওয়ার আগে আমাকে ডেকে দিয়ে গেলে আমি সদর দরজা আটকে স্নান করি। কিন্তু সেদিন সাপের ভয়ে মালতী আমাকে না ডেকেই পালিয়ে গেলো, আর হার্জিন্দার জি মানে আমার স্বামীর সহকর্মী এসে সেই খবরটা আমাকে দিলেন।" আমতা আমতা করে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি বিপুল বাবু তার ভাইপো বাপ্পার কাছ থেকে আগেই জেনে নিয়েছিলো আগের দিন পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পর তার মায়ের সঙ্গে সে তিনজন অপরিচিত আঙ্কেলকে দেখেছে, এবং জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছে তার মায়ের শরীর খারাপের জন্য ট্রিটমেন্ট করতে ওরা এখানে এসেছিলো। এই পুরো ব্যাপারটার সম্পর্কে আগেই অবগত হওয়ার জন্য সেই সূত্র ধরে পুলিশি জেরার মতো একটার পর একটা প্রশ্ন করে নন্দনার সঙ্গে দু'দিন ধরে ঘটে চলা সমস্ত ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জেনে নিলো ধূর্ত তান্ত্রিকটা। প্রথমদিন হার্জিন্দার এবং পরেরদিন সে আর তার দুই বন্ধুর সঙ্গে তার ভাইয়ের স্ত্রীর ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা শুনলো বিপুল। এমনকি যে কারণে তার স্বামীর উপর নন্দনা দেবীর অভিমান বা রাগ হয়েছে, সেটাও পরিষ্কার হলো তার সামনে।
"তারমানে, তোমার জ্বর নিয়ে নিজের স্বামীকে তুমি মিথ্যে কথা বলেছো। তোমার কিছুই হয়নি, তুমি অন্য কারণে বাড়িতে লোক ডেকেছিলে। হ্যাঁ সেটা তোমার ফিগার কন্ট্রোলের ট্রিটমেন্টের জন্য হতে পারে, কিন্তু জ্বরের কথাটা সত্যি নয়। তবে আমার ভাই কতগুলো বাইরের লোকের সামনে ফোনটা স্পিকারে থাকা সত্ত্বেও তোমার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে সেটা ক্ষমার অযোগ্য। আমি তো বলবো ও এটা ইচ্ছে করে করেছে। যে বউয়ের জন্য তুই সন্তানের বাবা হতে পেরেছিস .. সেই বউকেই এখন অপমান করে অবহেলা করে বলছিস 'তোমার শরীর নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই, আমার ছেলেই আমার কাছে সব..' ছিঃ ছিঃ আমি তো এটা ভাবতেও পারি না। অবশ্য তোমার সম্পর্কে এই ধরনের কিছু কথা ও আমাকে আগেও বলেছে.." সবকিছু জেনে সবকিছু শুনে এবার নিজের খেলা শুরু করলো ধূর্ত তান্ত্রিকটা।
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~