30-05-2023, 11:14 AM
(2)বাড়িটার মতোই যেন এ গৃহের প্রতিটা প্রানী ধুকে ধুকে টিকে আছে বাড়িখানার ভিটে মাটিতে। মানুষ বলতে ছয়টি প্রানী.গৃহের কতৃী গৃহবধূ বেজন্তি.ছেলে বিট্টু.স্বামী ভুবন চৌধরি.মেয়ে বীনা.বৃদ্ধা শাশুড়ি ভানুমতিদেবী. বৃদ্ধ শ্বশুর দয়ালচন্দঁ চৌধরি। বিহার রাজ্যর নেপাল বডার ঘেসা. পেনুইগ্রামের পাহাড়ি মেয়ে বেজন্তি। মা বাবার একমাত্র মেয়ে ছোটো থেকেই সে ভীষন সুন্দরী। পাকা গমের মতো শরীরের রং মাথায় ঢেউ খেলানো কুকরানো চুল। ঠোটদুটো বিনা লিবিস্টিকেও গারো গোলাপি। উপরের ঠোটের উপর নাকের নিচে ছোট্ট একটা তিল। গালদুটো পাকা সোনালি আমের মতো হালকা টুকটুকে। হাসলে দু গালে দেখা দেয় ডিমপল। ষোলো বছর বয়েসেই বিয়ে দিয়ে দেয় বেজন্তিকে তার বাবা মা। এক বিহারি পাট ব্যাবসাহির সাথে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় বেজন্তির কোল আলো করে আসে ছেলে বিজ্জু। সন্তান স্বামী নিয়ে হাসিতে খুশিতে সুখের সংসার ছিল। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন ছিল না বুঝি বেজন্তির ভাগ্য.বিয়ের বারো বছরের মাথায় হঠাৎ স্বামী হার্ট অ্যাটাকে মারা গেল। স্বামীর মৃত্যুরপর দশ বছরের ছেলে বিজ্জুকে নিয়ে চলে আসে বাপেরবাড়ি। একমাত্র ছেলেকে মানুষ করা তার লক্ষ্য ছেলেকে নিয়েই চলতে থাকে বেজন্তির জীবন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বেজন্তিকে আবার বিয়ে দেওয়ার জন্য.ওর মা বাবা পরিবার উঠে পরে লাগে। প্রথমদিকে রাজি ছিলনা তার কথা বেশ তো আছি ছেলেকে নিয়ে.শুধু শুধু একটা বাড়তি ঝামেলায় জড়ানো। একটা সময় মা বাবার জোরের কাছে হেরে শেষে মত দেয়। ওদের গ্রামের এক বাঙালি পরিবারের মাধ্যমে একটা সম্বন্ধ আসে.বাংলার উত্তরবঙ্গ থেকে।পাত্রের স্ত্রী এগারো বছরের একটা মেয়ে রেখে গত হয়েছে" তাই মেয়ের জন্য নতুন মা আনতে বিয়ে করতে চায়। বাঙ্গালি পরিবার পাত্রের ছোটোমোটো পাইকারি ব্যাবসা। চাষের অনেক জমি জায়গা মোটামুটি মন্দ নয়। কিন্তু বাধ সাধলো এক জায়গায়.পাত্রের মা জানালো আমরা আমাদের মা মরা নাতনির জন্য.শুধু মা নিয়ে যাব.পাত্রীর বাচ্ছা ছেলেটাকে মামার বাড়িতেই রাখতে হবে. নয়তো অন্য কোথাও কারো কাছে মানুষ করতে দিতে হবে। পরের বাচ্ছাকে তো আর মেনে নেওয়া যায়না? এ কথা শোনার পর বেজন্তির মাথায় যেন আগুন ধরে গেল.বজ্জাৎ পাষণ্ড বেহায়া মহিলা বলে কি। সে ওদের নাতনি কে বুকে টেনে আপন করে নিবে.নিজের মেয়ে মেনে নিয়ে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবে। অথচ তার সন্তারকে তার কাছথেকে দুরে সরিয়ে দেবে.মা থাকতে তার ছেলেকে অনাত করে দিবে। হবু স্বামীর মা মরা মেয়ে মা হারিয়ে আবার মা পাবে। আর তার ছেলে মা থাকতেও মা হারাবে। তার ছেলেরও তো বাবা নেই.তবে সে কেন বাবার ভালোবাসা পাবেনা। ওরা তো যানে সে বিধবা এক সন্তানের মা। মা যেখানে থাকবে সন্তানতো সেখানেই থাকবে.মায়ের সাথে মায়ের কাছে। পৃথিবিতে অনেক স্বার্থপর লোভী বেইমান মা আছে" যারা নিজের সুখের জন্য গর্ভজাত সন্তানের" শৈশব ভবিষ্যৎ নস্ট করে দেয় সামান্য শরীরের খিদের তারণায়" নিজের সন্তানের সুষ্ঠ হাসিখুশির জীবনটা তছনছ করে দিতে পিছপা হয় না। ও সেই মায়েদের তালিকায় না। পৃথিবীর সমস্ত লালায়ত সুখ তার সন্তানের ভালোরও জন্য পায়ে মুরিয়ে দিতে পারে। তারপর শীতল অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল পাত্রের পরিবার কে। বেজন্তি তার বাবা মায়ের উপর অনেক কুপিত হয় কথা বলা বন্ধ করে দেয়! তারপর একদিন কাওকে কিছু না বলে ছেলেকে বগলদাবা করে নিয়ে বাপেরবাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় অজানা উদশ্য। অনেক খোজাখুজি করে সন্ধান পেয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসে বাপেরবাড়ির সংসারে। তারপর কয়েক মাস পর একদিন সেই পাত্র যার নাম ভুবন চৌধরি আর তার পরিবার এসে জানায়.তারা এই মেয়েকেই নিবে তার সন্তানকেও মেনে নিবে। বেজন্তি এই পরিবারে বিয়ে করতে মন সায় দিচ্ছিলনা.বাবা মায়ের জোরাজুরি শেষে তার ছেলে বিজ্জু এসে যখন বললো.মা তুমি বিয়েটা করে নাও দেখো আমরা খুব সুখি হব.একসাথে থাকবো সবাই সারাজীবন। কিন্তু কিন্তু করেও শেষে ছেলের কথায় সায় দেয় বিয়েতে মত দেয়। বিয়ের পরে বেজন্তি ছেলেকে নিয়ে বাংলার ছোট্ট গ্রাম সীমানগরের শশুরবাড়ির ভিঠেতে উঠে। বিয়ের একবছরের মাথায় বেজন্তি আবার মা হয়. একটা ফুটফুটে পুএ সন্তানের জন্ম দেয় তার নাম রাখে বিট্টু। একদিন বাপেরবাড়ি গিয়েছিল ছোটো ছেলেটাকে নিয়ে! বড়ো ছেলে বিজ্জুর টিউশন পড়াশুনো মিস না যায় তার জন্য তাকে রেখে যায় শশুর শাশুরির কাছে। হায় সেদিন আর জানতো.ছেলের মুখটা শেষবারের মতো দেখে যাচ্ছে। একদিন পর বাপেরবাড়িতে বেজন্তির কাছে খবর আসে" তার ছেলে বিজ্জু সৎ বাবা ঠাকুরদা ঠাকুমাকে যাইচ্ছেতাই বলেছে.আর বাড়বার বলতে শোনাগেছে সে আর এই বাড়িতে থাকবে না চলে যাবে যেখানে মন চায়। তারপর না খেয়ে রাতে নিজের ঘরে শুতে চলে যায়,,সকালে তার ঘরে তাকে পাওয়া যায়না। বেজন্তির যেন পুরো পৃথিবীর টা ভেঙ্গে পরে.দিকবেদিক হারিয়ে ফিরে আসে বাড়িতে.কান্নায় ফেটে পরে বেজন্তি.ছেলে হারানোর বিরহে! নানা জায়গায় খোজাখুজি থানা পুলিশ করে সন্ধান পাওয়া যায়নি। বেজন্তি বিশ্বাস করেনি তার ছেলে ওদের এসব বলেছে.ছেলেতো এ বিয়েতে মত ছিল. আর এখানেও তার কোন অসুবিধা হচ্ছিল না তাহলে। ওল্টে ওরাই হয়তো ছেলেকে এমন কিছু বলেছে যে তার ছেলে অভিমানে বাড়ি থেকে,,,তারপর থেকে ধিরে ধিরে বেজন্তি যেন কেমন হয়েগেছে.শশুর শাশুড়ি তার চোঁখের বিষ.স্বামীর সাথে হৃদয়ের দুত্বত তৈরি হয়েছে অনেক.সম্পকটা টিকে আছে নিভু নিভু প্রদীপের শিখার আলোর মতো। দেখতে দেখতে ছয়টা বছর পেরিয়ে গেছে.ছয়বছর থেকে ছেলেটা তার আচল ছাড়া.কোয়ায় আছে কেমন আছে জানে না বেজন্তি। মাঝে মাঝে ঘরের দাওয়ায় বসে.পাচঁ বছরের ছোট্ট ছেলে বিট্টুকে বুকে চেপে.বড়ো ছেলে বিজ্জুর বিচ্ছেদে.চোঁখের জল ফেলে মা জননী বেজন্তি ডুকরে ডুকরে।। (চলবে)