27-05-2023, 08:24 PM
(This post was last modified: 27-05-2023, 08:32 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
চিরন্তন বরাবরই তার উপস্থিতি অপছন্দ করে। তাই তার ভাই বাড়িতে থাকলে এখানে এর আগে সে যতবার এসেছে, প্রত্যেকবারই একবেলার বেশি থাকার সুযোগ ঘটেনি তার। এমতাবস্থায় সদ্যস্নাতা শুধুমাত্র গামছা পরিহিতা তার ভাইয়ের স্ত্রীর উত্তেজক রূপের এক ঝলক দেখে শরীরের কামক্ষুধা হাজারগুন বেড়ে গেলেও অতিরিক্ত হ্যাংলামি করে তার ভাই চিরন্তনের অনুপস্থিতির সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলো না সে। তাই কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেই "ঠিক আছে, আমি বাইরে গিয়ে বসছি। তুমি নিশ্চিন্তে বাথরুম থেকে বেরিয়ে পূজা করে নাও.." এইটুকু বলে বেডরুম থেকে বেরিয়ে গেলো বিপুল বাবু।
বেডরুম থেকে বেরিয়েই ডাইনিং স্পেস। বিপুল বাবু ভেবেছিলো ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার নিয়ে এসে বেডরুমের দরজার আড়াআড়ি পজিশনে রেখে সেখানে বসবে। এর ফলে তার ভাইয়ের স্ত্রী বাথরুম থেকে বেরিয়ে শোওয়ার ঘরের দরজা বন্ধ করতে এলে পুনরায় তার সেই অর্ধনগ্ন রূপ দেখতে পাবে সে। কিন্তু ডাইনিং টেবিলের কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করার আওয়াজ কানে এলো তার। তৎক্ষণাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে বিপুল বাবু দেখলো বেডরুমের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। তারমানে সে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার পিছন পিছন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে তার ভাইয়ের স্ত্রী শোওয়ার ঘরের দরজাটা আটকে দিয়েছে। এটা বুঝতে পেরে, "দেখে যতটা বোকা মনে হয়, ততটা বোকা নয় মাগীটা। ঠিক হ্যায়, কুছ পরোয়া নেহি। খেলা তো এখন সবে শুরু হয়েছে। প্রথমে এই বাড়িতে থেকে যাওয়ার রাস্তাটা পরিষ্কার করতে হবে আমাকে।" এইরূপ স্বগতোক্তি করে ড্রয়িংরুমে বসে সকালে দেওয়া তার মায়ের অঙ্কগুলো নিয়ে তখনো কসরত করতে থাকা বাপ্পার কাছে গিয়ে বসলো বিপুল বাবু।
"কাল সকালে তো পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে তোকে মন্ত্রপূত ফুল দেবোই, কিন্তু তার আগে এখন তোকে এমন কয়েকটা অদ্ভুত কৌশল শিখিয়ে দেবো যাতে, কঠিন কঠিন অঙ্কগুলোও সহজে করে ফেলতে পারবি তুই। তার জন্য কিন্তু তোকে একটা কাজ করতে হবে। বল, করবি তো?" বাপ্পার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলো তার বিপুল জেঠু।
ভয়ঙ্কর এবং কদাকার শারীরিক রূপের জন্য তাকে যমের মতো ভয় পেলেও, কিছুক্ষণ আগে উপহার পাওয়া 'চাইনিজ চেকার বোর্ড গেম' , তৎসহ ভালো ভালো মিষ্টান্ন (এরই মধ্যে মিষ্টির বাক্স খুলে একটা মিষ্টি খেয়ে ফেলেছিলো বাপ্পা) এবং তার অঙ্কের প্রতি ভীতি দূর করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি .. এই সবকিছুর সম্মিলিত ফলস্বরূপ বিপুল জেঠুর প্রতি অগাধ আস্থা এবং একটা সফট কর্নার তৈরি হয়েছিলো বাপ্পার। তাই মাথা নাড়িয়ে তার জেঠুর কথায় সম্মতি জানালো সে। কিন্তু তার শিশুমন জানতেও পারলো না, এই সম্মতি প্রদানের সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেলো তার উপর সম্মোহন পদ্ধতি।
"মাথা থেকে সব চিন্তা, সব ভাবনা দূর করে দে এই মুহূর্তে। আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাক .. আমি যা যা প্রশ্ন করবো, সবকটার উত্তর তোকে দিতে হবে .. কেমন?" বাপ্পার চোখের ঠিক সামনে নিজের রক্তবর্ণ চোখদুটো নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে কথাগুলো বললো তান্ত্রিক বিপুল।
তার জেঠুর চোখের দিকে তাকিয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালো বাপ্পা।
- "বাপ্পাআআআ .. এই বাপ্পাআআআ .. শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা?"
- "হুঁ .."
- "এখন মাথার ভেতরটা অনেকটা হাল্কা লাগছে, তাই না?"
- "হুঁ .. শরীরটাও .."
- "এবার আমি যে কথাগুলো বলবো .. সেগুলো আমার সঙ্গে সঙ্গে তুইও বলবি, কেমন?"
- "আচ্ছা .."
"হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষার সিলেবাসের অন্তর্গত নব গণিত মুকুলের প্রশ্নমালার সবকটা অঙ্ক আমি আজ বিকেলের মধ্যে সঠিকভাবে কষে ফেলবো।"
তান্ত্রিক বিপুলের বলা প্রত্যেকটি কথাই প্রতিধ্বনিত হলো বাপ্পার কন্ঠে। তারপর আবার বলতে শুরু করলো তান্ত্রিকটা।
- "বাপ্পাআআআ .. শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা?"
- "হুঁ .."
- "তোর বাবা এখান থেকে যাওয়ার পর, তুই জানিস এইরকম যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে .. তার সবকটা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে খুলে বল আমাকে। তাড়াতাড়ি .. বেশি সময় কিন্তু হাতে নেই।"
সম্মোহিত বাপ্পা তাদের বাড়িতে সাপ ঢোকার গল্প থেকে শুরু করে, আগের দিন পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে ফিরে তার হার্জিন্দার আঙ্কেলের সঙ্গে আরও দুই অপরিচিত ব্যক্তিকে তাদের বাড়িতে দেখা ও তার মায়ের শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাদের চিকিৎসা করতে আসার কথা, এবং সবশেষে আগের দিন ফোনে তার বাবা এবং মায়ের মনোমালিন্যের কথা .. সমস্ত কিছু ব্যক্ত করলো তার বিপুল জেঠুর সামনে।
সবকিছু শোনার পর তান্ত্রিক বিপুলের মুখে একটা শয়তানের হাসি ফুটে উঠলো। তার কার্যসিদ্ধি হয়েছে এটা বুঝতে পেরে মধ্যমা আর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সশব্দ চুটকিতে বাপ্পার সম্মোহন ভাঙলো তার বিপুল জেঠু। ঠিক সেই মুহূর্তে, "বাপ্পা .. কোথায় তুমি? আর উনি, মানে তোমার জেঠু কি চলে গেছেন?" এইরূপ উক্তি করে বেডরুমের দরজা খুলে বেরোলো নন্দনা দেবী।
স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর মাথাটা কিরকম যেন ঝিমঝিম করছিলো তার। অথচ কিছুক্ষণ আগে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনাও মনে পড়লো না বাপ্পার। "যাই মা .." বলে দৌড়ে ডাইনিংরুমের দিকে ছুটে গেলো সে। বাপ্পা বেরিয়ে যেতেই ড্রয়িংরুমে যে সোফায় এতক্ষণ সে বসেছিলো, সেটার উপরে দুই পা ভাঁজ করে পদ্মাসনে ধ্যান করার ভঙ্গিমায় চোখ বন্ধ করে বসে রইলো তান্ত্রিক বিপুল।
"ও .. আপনি এখানে! আমি ভেবেছিলাম আপনি .." বৈঠকখানা ঘরে প্রবেশ করে এইটুকু বলেই থেমে গেলো নন্দনা দেবী।
তার ভাইয়ের স্ত্রীর গলার আওয়াজে যেন ধ্যানভঙ্গ হলো তার .. এরকম একটা ভান করে চোখ মেলে তাকালো বিপুল বাবু। খাটের উপর ছেড়ে রাখা তার ভাইয়ের স্ত্রীর জামা কাপড়গুলো আগেই দেখেছিলো সে .. সেখানে শাড়ি, সায়া আর অন্তর্বাসের সঙ্গে কালো রঙের স্লিভলেস ব্লাউজের উপস্থিতি চোখ এড়ায়নি তার। আসলে এর আগে যে কয়েকবার তার ভাই চিরন্তনের উপস্থিতিতে এই বাড়িতে বিপুল বাবু এসেছে, কোনোবারই রাত্রিবাস করার সুযোগ হয়নি তার পক্ষে, একবেলা থেকেছে বড়জোর। প্রত্যেকবারেই তার ভাইয়ের স্ত্রীকে শাড়ির সঙ্গে হাফস্লিভ ব্লাউজ কিংবা থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজ পড়তে দেখেছে সে। তাই বিপুল বাবু ভেবেছিলো, তার সতীসাধ্বী ভাইয়ের বউ হয়তো তার সামনে হাতকাটা ব্লাউজ পরে আসবে না। হয়তো অন্যান্য বারের মতোই হাফস্লিভ ব্লাউজ বা হয়তো থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজ পড়বে। কিন্তু তার সামনে যখন নন্দনা দেবী এসে দাঁড়ালো, তখন ভাইয়ের স্ত্রীর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না তার ভাসুর।
"তুমি কি ভেবেছিলে বৌমা .. আমি চলে গেছি? সম্পর্কে আমি তোমার ভাসুর হই বৌমা! আচ্ছা ঠিক আছে, সম্পর্কের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম .. এই দুপুরবেলা একজন অভুক্ত ', অতিথিকে চলে যেতে বলছো তুমি? ঠিক আছে তোমার যখন সেটাই ইচ্ছে আমি না হয় চলেই যাচ্ছি .." অভিমানের নাটক করে অনুযোগের সুরে তার ভাইয়ের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে এইরূপ উক্তি করে তার শাড়ি আবৃত শরীরটাকে গিলে খেতে লাগলো বিপুল বাবু।
বিছানার উপর রাখা ঘরে পড়ার সবুজ রঙের অর্ডিনারি সুতির ছাপা শাড়িটা এবং কালো রঙের স্লিভলেস ব্লাউজ পরিহিতা বাপ্পার মাতৃদেবীকে দেখে সেইমুহূর্তে বিপুল বাবুর একজন জলজ্যান্ত যৌনতার দেবী ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছিলো না। কথোপকথনের ফাঁকে ফাঁকে তার শ্যেনদৃষ্টি দিয়ে মেপে নিতে থাকলো তার ভাইয়ের স্ত্রীর শরীরের আনাচ-কানাচ। কালো স্লিভলেস ব্লাউজের ভেতরে সাদা রঙের ব্রেসিয়ারের উপস্থিতি, মাথার উপর বন বন করে সিলিংফ্যান ঘুরতে থাকার দরুন কয়েকবার দুই হাত হাত তুলে পাখার হাওয়ায় উড়ে যাওয়া মাথার চুল ঠিক করতে যাওয়ার মুহূর্তে খুব ছোট ছোট করে ছাঁটা অত্যন্ত পাতলা কোঁকড়ানো চুলে ভরা ঘেমো বগল এবং হাওয়ার দাপটে বারকয়েক উড়ে যাওয়া শাড়ির আঁচলের তলা দিয়ে ঈষৎ চর্বিযুক্ত পেট আর তার মাঝখানে অত্যন্ত গভীর এবং বেশ বড়সড়ো উত্তেজক নগ্ন নাভির দর্শন .. কোনো কিছুই চোখ এড়ালোনা তান্ত্রিকটার।
"এ মা .. ছিঃ ছিঃ, এসব আপনি কি বলছেন? আমি আপনাকে কখন চলে যেতে বললাম?" থতমত খেয়ে গিয়ে কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
"মুখে বলোনি, কিন্তু মনে মনে সেটাই চেয়েছিলে আমি জানি। বলো, ঠিক বলছি কিনা?" যতটা সম্ভব তার ভাইয়ের বউকে আটকে রেখে তার সান্নিধ্য লাভ করা যায়, সেই উদ্দেশ্যে এই ধরনের অবান্তর কথাগুলো বলতে লাগলো বিপুল বাবু।
"না না .. বিশ্বাস করুন, এটা আপনার ভুল ধারণা। বেডরুম থেকে বেরিয়ে আপনাকে দেখতে না পেয়ে আপনি চলে গেছেন কিনা, এটাই শুধু আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করছিলাম। কিন্তু আপনি দুপুরবেলা এসেছেন, না খাইয়ে আপনাকে আমি যেতে দেবো, এটা আপনি ভাবলেন কি করে? সামান্য কিছু রান্না হয়েছে, খেয়েদেয়ে বিশ্রাম করে তারপর যাবেন।" পুনরায় কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
'তোর হাতের রান্না দুপুরে খাবো না আমি, কিন্তু রাতে অবশ্যই খাবো এবং তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু খাবো। খাইয়ে-দাইয়ে আমাকে আমাকে বিদায় করতে চাইছিস মাগী? কিন্তু আজ রাতে যে আমি এখানে থাকবো! এমন জাল বুনেছি যে, সেই জাল কেটে বেরোনো তোর পক্ষে সম্ভব নয়।' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মুখমণ্ডলে হাসি ফুটে উঠলো তান্ত্রিক বিপুলের। সেটা দেখে নন্দনা দেবী জানতে চাইলো, "হাসছেন যে?"
"ও কিছু নয় .. তোমার পুজো হয়ে গেছে?" শাড়ি আর স্লিভলেস ব্লাউজের আড়ালে তার ভাইয়ের স্ত্রীর নগ্ন শরীরটাকে কল্পনা করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো বিপুল বাবু।
"হ্যাঁ .. আমি রোজ স্নানের পর ভক্তিভরে পূজো করি। বিয়ের পর থেকেই সংসারের মঙ্গলের কামনায় এটা করে আসছি।" সরল মনে উত্তর দিলো নন্দনা দেবী।
"সে তো করাই উচিৎ .. কিন্তু আমার তো মনে হয় এত ভক্তিভরে পুজো-টুজো করেও বিশেষ লাভ হচ্ছে না! আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি সামনে ঘোরতর বিপদ আসতে চলেছে তোমার।" খুব স্বাভাবিক অথচ ইঙ্গিতপূর্ণভাবে কথাগুলো বললো বিপুল বাবু।
"বিপদ? আমার? কি বলছেন এসব?" কিছুটা অবিশ্বাসের সুরে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা দেবী।
"আমার কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছো না, তাইতো? ভাবছো, আমি কি করে তোমার আগাম বিপদের কথা জানতে পারলাম! ভুলে যেওনা বৌমা, বহুবছর ধরে আমি তন্ত্রসাধনা করে আসছি। পিশাচসিদ্ধ বাবা লিঙ্গ মহারাজের প্রিয় শিষ্য আমি। তন্ত্রবলে আমি সব জানতে পারি। সময়টা একদম ভালো যাচ্ছে না তোমার এবং তোমার পরিবারের সদস্যদের জন্য। কে বলতে পারে আজ রাতেই হয়তো তোমাদের ক্যাম্পাসে দুষ্কৃতীরা হামলা করলো! সেই হামলার প্রতিক্রিয়া তোমাদের উপরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও আমি সর্প দংশনের ঘোরতর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি তোমার পরিবারের সদস্যদের উপর এবং সেটা আজ রাতেই।" গলায় কিছুটা গাম্ভীর্য এনে তার ভাইয়ের স্ত্রীর চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বললো তান্ত্রিকটা।
সকালেই সে কাজের মাসি মালতীর কাছ থেকে শুনেছে ফ্যাক্টরিতে নাকি ভীষণ বিক্ষোভ হচ্ছে শ্রমিকদের। বিক্ষোভের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে মালিকপক্ষকে ছুটে আসতে হয়েছে এখানে। সেই শ্রমিকরূপী দুর্বৃত্তরা যদি হামলা করে তাদের ক্যাম্পাসে! সর্বোপরি তাদের কোয়ার্টারে সাপের আগমন সে নিজের চোখে না দেখলেও, তার কথা কথা তো সে হার্জিন্দার আর মালতী দু'জনের কাছ থেকেই শুনেছে! তার মানে এই দুটোই সত্য ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনাগুলো তো উনার পক্ষে জানা সম্ভব নয়! তাহলে কি এই সবকিছুই উনার তন্ত্র সাধনার ফল? নাকি তার ছেলে বাপ্পার কাছ থেকে উনি এগুলো শুনে বলছেন! বিপুল বাবুর মুখে কথাগুলো শোনার পর, "খাবার বাড়ছি, খেতে আসুন .." এইটুকু বলে ওখানে আর দাড়ালো না নন্দনা দেবী।
দ্রুত ডাইনিংরুমে প্রবেশ করে টেবিলে প্লেটগুলো সাজাতে সাজাতে তার ভাসুরের কথাগুলোই কানে বাজছিলো নন্দনা দেবীর। 'বাপ্পা কোথায়? ওকে তো দেখছি না .. নিশ্চয়ই ভিডিও গেম খেলছে..' , এই কথা মনে হওয়াতেই পেছনের অর্থাৎ পশ্চিম দিকের বেডরুমটাতে ঢুকে সে দেখলো .. তার ছেলে খাটের উপর বসে এক মনে অঙ্ক কষে যাচ্ছে। যে ছেলেকে মেরে-ধরে পড়তে বসানো যায় না। সে নিজে থেকেই ঘরের এক কোণে বসে অঙ্ক কষে যাচ্ছে .. এটা ভেবেই প্রথমে ভীষণ রকম অবাক হয়ে গেলো নন্দনা দেবী। তারপর ছেলের কাছে গিয়ে তার থেকে অঙ্কের খাতাটা নিয়ে দেখলো একদিন আগেও যে অঙ্কগুলো করতে গিয়ে বাপ্পা বারবার হোঁচট খাচ্ছিলো, হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষার সিলেবাসের অন্তর্গত গণিত বইয়ের প্রশ্নমালার অন্তর্গত সেই অঙ্কগুলো একটার পর একটা নির্ভুলভাবে করা হয়েছে সেখানে। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে নন্দনালীন প্রশ্ন করলো, "এগুলো তুই করেছিস, বাবু?"
"হুঁ .." একটা প্রশ্ন করলে তার উত্তরে হাজারটা কথা বলা বাপ্পা শুধুমাত্র এইটুকুই বললো।
"আচ্ছা, তুই কি তোর জেঠুকে কিছু বলেছিস? মানে, আমাদের বাড়িতে সাপ ঢোকার ব্যাপারে?" তার মায়ের মুখে এই কথা শুনে, "না তো .. আমার সঙ্গে তো জেঠুর কোনো কথাই হয়নি .." এইটুকু বলে আবার অঙ্ক কষাতে মন দিলো বাপ্পা।
"ঠিক আছে খেতে আয় .. খেয়ে দেয়ে উঠে আবার পড়তে বসবি .." তার ছেলের উদ্দেশ্যে এইটুকু বলে চিন্তিত মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নন্দনা দেবী। তারপর খাবার ঘর পেরিয়ে বৈঠকখানা ঘরে প্রবেশ করে দেখলো নিজের প্রকাণ্ড ঝোলাটা কাঁধে নিয়ে সদর দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হচ্ছে বিপুল বাবু।
"এ কি, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?" অবাক হয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা দেবী।
"তুমি আমার কথা বিশ্বাস করোনি বৌমা, তুমি ভেবেছো আমি হয়তো ছলচাতুরি করে এইসব জেনেছি। আমার ভাই চিরন্তন তোমার মনে আমার সম্পর্কে যে বিষ ঢেলেছে এবং তার জন্য তুমি আমাকে যতটা খারাপ লোক মনে করো, আমি ততটাও খারাপ নয়। আসলে তোমার মনের কথাও আমি মন্ত্রবলে পড়তে পারি। যেখানে বিশ্বাস নেই, ভরসা নেই .. সেখানে আমি জলস্পর্শ করি না। আমি চললাম আমার এক ভক্তের বাড়ি, সেখানেই দুপুরের স্নানাহার করবো। যদি কখনো বিপদে পড়ো এবং সেই বিপদ থেকে একমাত্র আমিই তোমাকে বা তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারি, আমার প্রতি যদি এমন বিশ্বাস আর ভরসা জন্মায় .. তাহলে আমাকে ডেকো, আমি অবশ্যই আসবো। তোমার ছেলের অঙ্কের খাতার শেষ পৃষ্ঠায় আমার ফোন নম্বর লেখা আছে .." এইটুকু বলে সদর দরজা খুলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো তান্ত্রিক বিপুল। সেই দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো নন্দনা দেবী।
মা আর ছেলে মিলে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করলো। বাপ্পার ব্যবহার, তার শরীরের ভাষা .. আজ কিছুই যেন মিলছিলো না অন্যদিনের সঙ্গে। সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে করছিলো তার ছেলে, কিন্তু কোনো কথা জিজ্ঞাসা না করলে নিজে থেকে মুখে একটা কথাও বলছিলো না সে। দুপুরের আহারাদি সমাপ্ত করে আবার নিজের ঘরে গিয়ে পড়তে বসে গেলো বাপ্পা।
এদিকে বিপুল বাবুর বলা শেষ কথাগুলো কিছুতেই ভুলতে পারছিলো না নন্দনা দেবী। 'মানুষটা তো মিথ্যে কথা বলে নি .. তার স্বামীর জন্যই তো সে অপছন্দ করে ওই লোকটাকে। কিন্তু অল্পবয়সে কে বিপথে গিয়ে কি করেছে .. তার জন্য সে চিরকাল ক্ষমার অযোগ্য হয়ে থাকবে, এটা তো একদমই ঠিক নয়। ওই মানুষটা তো কোনোদিন তাদের কোনো ক্ষতি করেনি। বরং যখনই সে তাদের বাড়িতে মাত্র একবেলার জন্য এসেছে, দামী দামী উপহার নিয়ে এসেছে। আজও তো তার ছেলের জন্য একটা দামি উপহার নিয়ে এসেছে এবং তার সঙ্গে কত বড় একটা মিষ্টির প্যাকেট। তারপর একটু আগে তাদের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে যে কথাগুলো সে বললো, সেগুলোর সম্ভাবনাও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না! অথচ একটা কথাও তাকে বাপ্পা বলেনি, সে নিজের মুখে এ কথা স্বীকার করেছে। তারমানে, লোকটা ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী। আর সেই মানুষটাই কিনা অভুক্ত অবস্থায় দুপুরে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো ..' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো নন্দনা দেবীর।
একসময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, তারপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো .. তার ছেলে বাপ্পা এখনো পশ্চিমের বেডরুমটা থেকে বেরোয়নি। 'এখনো কি সে অঙ্ক করে যাচ্ছে!' এটা ভাবতে ভাবতে ওই ঘরে ঢুকে চমকে উঠলো নন্দনা দেবী।
বেডরুম থেকে বেরিয়েই ডাইনিং স্পেস। বিপুল বাবু ভেবেছিলো ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার নিয়ে এসে বেডরুমের দরজার আড়াআড়ি পজিশনে রেখে সেখানে বসবে। এর ফলে তার ভাইয়ের স্ত্রী বাথরুম থেকে বেরিয়ে শোওয়ার ঘরের দরজা বন্ধ করতে এলে পুনরায় তার সেই অর্ধনগ্ন রূপ দেখতে পাবে সে। কিন্তু ডাইনিং টেবিলের কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করার আওয়াজ কানে এলো তার। তৎক্ষণাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে বিপুল বাবু দেখলো বেডরুমের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। তারমানে সে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার পিছন পিছন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে তার ভাইয়ের স্ত্রী শোওয়ার ঘরের দরজাটা আটকে দিয়েছে। এটা বুঝতে পেরে, "দেখে যতটা বোকা মনে হয়, ততটা বোকা নয় মাগীটা। ঠিক হ্যায়, কুছ পরোয়া নেহি। খেলা তো এখন সবে শুরু হয়েছে। প্রথমে এই বাড়িতে থেকে যাওয়ার রাস্তাটা পরিষ্কার করতে হবে আমাকে।" এইরূপ স্বগতোক্তি করে ড্রয়িংরুমে বসে সকালে দেওয়া তার মায়ের অঙ্কগুলো নিয়ে তখনো কসরত করতে থাকা বাপ্পার কাছে গিয়ে বসলো বিপুল বাবু।
"কাল সকালে তো পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে তোকে মন্ত্রপূত ফুল দেবোই, কিন্তু তার আগে এখন তোকে এমন কয়েকটা অদ্ভুত কৌশল শিখিয়ে দেবো যাতে, কঠিন কঠিন অঙ্কগুলোও সহজে করে ফেলতে পারবি তুই। তার জন্য কিন্তু তোকে একটা কাজ করতে হবে। বল, করবি তো?" বাপ্পার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলো তার বিপুল জেঠু।
ভয়ঙ্কর এবং কদাকার শারীরিক রূপের জন্য তাকে যমের মতো ভয় পেলেও, কিছুক্ষণ আগে উপহার পাওয়া 'চাইনিজ চেকার বোর্ড গেম' , তৎসহ ভালো ভালো মিষ্টান্ন (এরই মধ্যে মিষ্টির বাক্স খুলে একটা মিষ্টি খেয়ে ফেলেছিলো বাপ্পা) এবং তার অঙ্কের প্রতি ভীতি দূর করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি .. এই সবকিছুর সম্মিলিত ফলস্বরূপ বিপুল জেঠুর প্রতি অগাধ আস্থা এবং একটা সফট কর্নার তৈরি হয়েছিলো বাপ্পার। তাই মাথা নাড়িয়ে তার জেঠুর কথায় সম্মতি জানালো সে। কিন্তু তার শিশুমন জানতেও পারলো না, এই সম্মতি প্রদানের সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেলো তার উপর সম্মোহন পদ্ধতি।
"মাথা থেকে সব চিন্তা, সব ভাবনা দূর করে দে এই মুহূর্তে। আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাক .. আমি যা যা প্রশ্ন করবো, সবকটার উত্তর তোকে দিতে হবে .. কেমন?" বাপ্পার চোখের ঠিক সামনে নিজের রক্তবর্ণ চোখদুটো নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে কথাগুলো বললো তান্ত্রিক বিপুল।
তার জেঠুর চোখের দিকে তাকিয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালো বাপ্পা।
- "বাপ্পাআআআ .. এই বাপ্পাআআআ .. শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা?"
- "হুঁ .."
- "এখন মাথার ভেতরটা অনেকটা হাল্কা লাগছে, তাই না?"
- "হুঁ .. শরীরটাও .."
- "এবার আমি যে কথাগুলো বলবো .. সেগুলো আমার সঙ্গে সঙ্গে তুইও বলবি, কেমন?"
- "আচ্ছা .."
"হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষার সিলেবাসের অন্তর্গত নব গণিত মুকুলের প্রশ্নমালার সবকটা অঙ্ক আমি আজ বিকেলের মধ্যে সঠিকভাবে কষে ফেলবো।"
তান্ত্রিক বিপুলের বলা প্রত্যেকটি কথাই প্রতিধ্বনিত হলো বাপ্পার কন্ঠে। তারপর আবার বলতে শুরু করলো তান্ত্রিকটা।
- "বাপ্পাআআআ .. শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা?"
- "হুঁ .."
- "তোর বাবা এখান থেকে যাওয়ার পর, তুই জানিস এইরকম যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে .. তার সবকটা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে খুলে বল আমাকে। তাড়াতাড়ি .. বেশি সময় কিন্তু হাতে নেই।"
সম্মোহিত বাপ্পা তাদের বাড়িতে সাপ ঢোকার গল্প থেকে শুরু করে, আগের দিন পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে ফিরে তার হার্জিন্দার আঙ্কেলের সঙ্গে আরও দুই অপরিচিত ব্যক্তিকে তাদের বাড়িতে দেখা ও তার মায়ের শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাদের চিকিৎসা করতে আসার কথা, এবং সবশেষে আগের দিন ফোনে তার বাবা এবং মায়ের মনোমালিন্যের কথা .. সমস্ত কিছু ব্যক্ত করলো তার বিপুল জেঠুর সামনে।
সবকিছু শোনার পর তান্ত্রিক বিপুলের মুখে একটা শয়তানের হাসি ফুটে উঠলো। তার কার্যসিদ্ধি হয়েছে এটা বুঝতে পেরে মধ্যমা আর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সশব্দ চুটকিতে বাপ্পার সম্মোহন ভাঙলো তার বিপুল জেঠু। ঠিক সেই মুহূর্তে, "বাপ্পা .. কোথায় তুমি? আর উনি, মানে তোমার জেঠু কি চলে গেছেন?" এইরূপ উক্তি করে বেডরুমের দরজা খুলে বেরোলো নন্দনা দেবী।
★★★★
স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর মাথাটা কিরকম যেন ঝিমঝিম করছিলো তার। অথচ কিছুক্ষণ আগে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনাও মনে পড়লো না বাপ্পার। "যাই মা .." বলে দৌড়ে ডাইনিংরুমের দিকে ছুটে গেলো সে। বাপ্পা বেরিয়ে যেতেই ড্রয়িংরুমে যে সোফায় এতক্ষণ সে বসেছিলো, সেটার উপরে দুই পা ভাঁজ করে পদ্মাসনে ধ্যান করার ভঙ্গিমায় চোখ বন্ধ করে বসে রইলো তান্ত্রিক বিপুল।
"ও .. আপনি এখানে! আমি ভেবেছিলাম আপনি .." বৈঠকখানা ঘরে প্রবেশ করে এইটুকু বলেই থেমে গেলো নন্দনা দেবী।
তার ভাইয়ের স্ত্রীর গলার আওয়াজে যেন ধ্যানভঙ্গ হলো তার .. এরকম একটা ভান করে চোখ মেলে তাকালো বিপুল বাবু। খাটের উপর ছেড়ে রাখা তার ভাইয়ের স্ত্রীর জামা কাপড়গুলো আগেই দেখেছিলো সে .. সেখানে শাড়ি, সায়া আর অন্তর্বাসের সঙ্গে কালো রঙের স্লিভলেস ব্লাউজের উপস্থিতি চোখ এড়ায়নি তার। আসলে এর আগে যে কয়েকবার তার ভাই চিরন্তনের উপস্থিতিতে এই বাড়িতে বিপুল বাবু এসেছে, কোনোবারই রাত্রিবাস করার সুযোগ হয়নি তার পক্ষে, একবেলা থেকেছে বড়জোর। প্রত্যেকবারেই তার ভাইয়ের স্ত্রীকে শাড়ির সঙ্গে হাফস্লিভ ব্লাউজ কিংবা থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজ পড়তে দেখেছে সে। তাই বিপুল বাবু ভেবেছিলো, তার সতীসাধ্বী ভাইয়ের বউ হয়তো তার সামনে হাতকাটা ব্লাউজ পরে আসবে না। হয়তো অন্যান্য বারের মতোই হাফস্লিভ ব্লাউজ বা হয়তো থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজ পড়বে। কিন্তু তার সামনে যখন নন্দনা দেবী এসে দাঁড়ালো, তখন ভাইয়ের স্ত্রীর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না তার ভাসুর।
"তুমি কি ভেবেছিলে বৌমা .. আমি চলে গেছি? সম্পর্কে আমি তোমার ভাসুর হই বৌমা! আচ্ছা ঠিক আছে, সম্পর্কের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম .. এই দুপুরবেলা একজন অভুক্ত ', অতিথিকে চলে যেতে বলছো তুমি? ঠিক আছে তোমার যখন সেটাই ইচ্ছে আমি না হয় চলেই যাচ্ছি .." অভিমানের নাটক করে অনুযোগের সুরে তার ভাইয়ের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে এইরূপ উক্তি করে তার শাড়ি আবৃত শরীরটাকে গিলে খেতে লাগলো বিপুল বাবু।
বিছানার উপর রাখা ঘরে পড়ার সবুজ রঙের অর্ডিনারি সুতির ছাপা শাড়িটা এবং কালো রঙের স্লিভলেস ব্লাউজ পরিহিতা বাপ্পার মাতৃদেবীকে দেখে সেইমুহূর্তে বিপুল বাবুর একজন জলজ্যান্ত যৌনতার দেবী ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছিলো না। কথোপকথনের ফাঁকে ফাঁকে তার শ্যেনদৃষ্টি দিয়ে মেপে নিতে থাকলো তার ভাইয়ের স্ত্রীর শরীরের আনাচ-কানাচ। কালো স্লিভলেস ব্লাউজের ভেতরে সাদা রঙের ব্রেসিয়ারের উপস্থিতি, মাথার উপর বন বন করে সিলিংফ্যান ঘুরতে থাকার দরুন কয়েকবার দুই হাত হাত তুলে পাখার হাওয়ায় উড়ে যাওয়া মাথার চুল ঠিক করতে যাওয়ার মুহূর্তে খুব ছোট ছোট করে ছাঁটা অত্যন্ত পাতলা কোঁকড়ানো চুলে ভরা ঘেমো বগল এবং হাওয়ার দাপটে বারকয়েক উড়ে যাওয়া শাড়ির আঁচলের তলা দিয়ে ঈষৎ চর্বিযুক্ত পেট আর তার মাঝখানে অত্যন্ত গভীর এবং বেশ বড়সড়ো উত্তেজক নগ্ন নাভির দর্শন .. কোনো কিছুই চোখ এড়ালোনা তান্ত্রিকটার।
"এ মা .. ছিঃ ছিঃ, এসব আপনি কি বলছেন? আমি আপনাকে কখন চলে যেতে বললাম?" থতমত খেয়ে গিয়ে কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
"মুখে বলোনি, কিন্তু মনে মনে সেটাই চেয়েছিলে আমি জানি। বলো, ঠিক বলছি কিনা?" যতটা সম্ভব তার ভাইয়ের বউকে আটকে রেখে তার সান্নিধ্য লাভ করা যায়, সেই উদ্দেশ্যে এই ধরনের অবান্তর কথাগুলো বলতে লাগলো বিপুল বাবু।
"না না .. বিশ্বাস করুন, এটা আপনার ভুল ধারণা। বেডরুম থেকে বেরিয়ে আপনাকে দেখতে না পেয়ে আপনি চলে গেছেন কিনা, এটাই শুধু আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করছিলাম। কিন্তু আপনি দুপুরবেলা এসেছেন, না খাইয়ে আপনাকে আমি যেতে দেবো, এটা আপনি ভাবলেন কি করে? সামান্য কিছু রান্না হয়েছে, খেয়েদেয়ে বিশ্রাম করে তারপর যাবেন।" পুনরায় কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
'তোর হাতের রান্না দুপুরে খাবো না আমি, কিন্তু রাতে অবশ্যই খাবো এবং তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু খাবো। খাইয়ে-দাইয়ে আমাকে আমাকে বিদায় করতে চাইছিস মাগী? কিন্তু আজ রাতে যে আমি এখানে থাকবো! এমন জাল বুনেছি যে, সেই জাল কেটে বেরোনো তোর পক্ষে সম্ভব নয়।' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মুখমণ্ডলে হাসি ফুটে উঠলো তান্ত্রিক বিপুলের। সেটা দেখে নন্দনা দেবী জানতে চাইলো, "হাসছেন যে?"
"ও কিছু নয় .. তোমার পুজো হয়ে গেছে?" শাড়ি আর স্লিভলেস ব্লাউজের আড়ালে তার ভাইয়ের স্ত্রীর নগ্ন শরীরটাকে কল্পনা করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো বিপুল বাবু।
"হ্যাঁ .. আমি রোজ স্নানের পর ভক্তিভরে পূজো করি। বিয়ের পর থেকেই সংসারের মঙ্গলের কামনায় এটা করে আসছি।" সরল মনে উত্তর দিলো নন্দনা দেবী।
"সে তো করাই উচিৎ .. কিন্তু আমার তো মনে হয় এত ভক্তিভরে পুজো-টুজো করেও বিশেষ লাভ হচ্ছে না! আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি সামনে ঘোরতর বিপদ আসতে চলেছে তোমার।" খুব স্বাভাবিক অথচ ইঙ্গিতপূর্ণভাবে কথাগুলো বললো বিপুল বাবু।
"বিপদ? আমার? কি বলছেন এসব?" কিছুটা অবিশ্বাসের সুরে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা দেবী।
"আমার কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছো না, তাইতো? ভাবছো, আমি কি করে তোমার আগাম বিপদের কথা জানতে পারলাম! ভুলে যেওনা বৌমা, বহুবছর ধরে আমি তন্ত্রসাধনা করে আসছি। পিশাচসিদ্ধ বাবা লিঙ্গ মহারাজের প্রিয় শিষ্য আমি। তন্ত্রবলে আমি সব জানতে পারি। সময়টা একদম ভালো যাচ্ছে না তোমার এবং তোমার পরিবারের সদস্যদের জন্য। কে বলতে পারে আজ রাতেই হয়তো তোমাদের ক্যাম্পাসে দুষ্কৃতীরা হামলা করলো! সেই হামলার প্রতিক্রিয়া তোমাদের উপরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও আমি সর্প দংশনের ঘোরতর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি তোমার পরিবারের সদস্যদের উপর এবং সেটা আজ রাতেই।" গলায় কিছুটা গাম্ভীর্য এনে তার ভাইয়ের স্ত্রীর চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বললো তান্ত্রিকটা।
সকালেই সে কাজের মাসি মালতীর কাছ থেকে শুনেছে ফ্যাক্টরিতে নাকি ভীষণ বিক্ষোভ হচ্ছে শ্রমিকদের। বিক্ষোভের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে মালিকপক্ষকে ছুটে আসতে হয়েছে এখানে। সেই শ্রমিকরূপী দুর্বৃত্তরা যদি হামলা করে তাদের ক্যাম্পাসে! সর্বোপরি তাদের কোয়ার্টারে সাপের আগমন সে নিজের চোখে না দেখলেও, তার কথা কথা তো সে হার্জিন্দার আর মালতী দু'জনের কাছ থেকেই শুনেছে! তার মানে এই দুটোই সত্য ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনাগুলো তো উনার পক্ষে জানা সম্ভব নয়! তাহলে কি এই সবকিছুই উনার তন্ত্র সাধনার ফল? নাকি তার ছেলে বাপ্পার কাছ থেকে উনি এগুলো শুনে বলছেন! বিপুল বাবুর মুখে কথাগুলো শোনার পর, "খাবার বাড়ছি, খেতে আসুন .." এইটুকু বলে ওখানে আর দাড়ালো না নন্দনা দেবী।
★★★★
দ্রুত ডাইনিংরুমে প্রবেশ করে টেবিলে প্লেটগুলো সাজাতে সাজাতে তার ভাসুরের কথাগুলোই কানে বাজছিলো নন্দনা দেবীর। 'বাপ্পা কোথায়? ওকে তো দেখছি না .. নিশ্চয়ই ভিডিও গেম খেলছে..' , এই কথা মনে হওয়াতেই পেছনের অর্থাৎ পশ্চিম দিকের বেডরুমটাতে ঢুকে সে দেখলো .. তার ছেলে খাটের উপর বসে এক মনে অঙ্ক কষে যাচ্ছে। যে ছেলেকে মেরে-ধরে পড়তে বসানো যায় না। সে নিজে থেকেই ঘরের এক কোণে বসে অঙ্ক কষে যাচ্ছে .. এটা ভেবেই প্রথমে ভীষণ রকম অবাক হয়ে গেলো নন্দনা দেবী। তারপর ছেলের কাছে গিয়ে তার থেকে অঙ্কের খাতাটা নিয়ে দেখলো একদিন আগেও যে অঙ্কগুলো করতে গিয়ে বাপ্পা বারবার হোঁচট খাচ্ছিলো, হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষার সিলেবাসের অন্তর্গত গণিত বইয়ের প্রশ্নমালার অন্তর্গত সেই অঙ্কগুলো একটার পর একটা নির্ভুলভাবে করা হয়েছে সেখানে। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে নন্দনালীন প্রশ্ন করলো, "এগুলো তুই করেছিস, বাবু?"
"হুঁ .." একটা প্রশ্ন করলে তার উত্তরে হাজারটা কথা বলা বাপ্পা শুধুমাত্র এইটুকুই বললো।
"আচ্ছা, তুই কি তোর জেঠুকে কিছু বলেছিস? মানে, আমাদের বাড়িতে সাপ ঢোকার ব্যাপারে?" তার মায়ের মুখে এই কথা শুনে, "না তো .. আমার সঙ্গে তো জেঠুর কোনো কথাই হয়নি .." এইটুকু বলে আবার অঙ্ক কষাতে মন দিলো বাপ্পা।
"ঠিক আছে খেতে আয় .. খেয়ে দেয়ে উঠে আবার পড়তে বসবি .." তার ছেলের উদ্দেশ্যে এইটুকু বলে চিন্তিত মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নন্দনা দেবী। তারপর খাবার ঘর পেরিয়ে বৈঠকখানা ঘরে প্রবেশ করে দেখলো নিজের প্রকাণ্ড ঝোলাটা কাঁধে নিয়ে সদর দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হচ্ছে বিপুল বাবু।
"এ কি, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?" অবাক হয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা দেবী।
"তুমি আমার কথা বিশ্বাস করোনি বৌমা, তুমি ভেবেছো আমি হয়তো ছলচাতুরি করে এইসব জেনেছি। আমার ভাই চিরন্তন তোমার মনে আমার সম্পর্কে যে বিষ ঢেলেছে এবং তার জন্য তুমি আমাকে যতটা খারাপ লোক মনে করো, আমি ততটাও খারাপ নয়। আসলে তোমার মনের কথাও আমি মন্ত্রবলে পড়তে পারি। যেখানে বিশ্বাস নেই, ভরসা নেই .. সেখানে আমি জলস্পর্শ করি না। আমি চললাম আমার এক ভক্তের বাড়ি, সেখানেই দুপুরের স্নানাহার করবো। যদি কখনো বিপদে পড়ো এবং সেই বিপদ থেকে একমাত্র আমিই তোমাকে বা তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারি, আমার প্রতি যদি এমন বিশ্বাস আর ভরসা জন্মায় .. তাহলে আমাকে ডেকো, আমি অবশ্যই আসবো। তোমার ছেলের অঙ্কের খাতার শেষ পৃষ্ঠায় আমার ফোন নম্বর লেখা আছে .." এইটুকু বলে সদর দরজা খুলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো তান্ত্রিক বিপুল। সেই দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো নন্দনা দেবী।
মা আর ছেলে মিলে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করলো। বাপ্পার ব্যবহার, তার শরীরের ভাষা .. আজ কিছুই যেন মিলছিলো না অন্যদিনের সঙ্গে। সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে করছিলো তার ছেলে, কিন্তু কোনো কথা জিজ্ঞাসা না করলে নিজে থেকে মুখে একটা কথাও বলছিলো না সে। দুপুরের আহারাদি সমাপ্ত করে আবার নিজের ঘরে গিয়ে পড়তে বসে গেলো বাপ্পা।
এদিকে বিপুল বাবুর বলা শেষ কথাগুলো কিছুতেই ভুলতে পারছিলো না নন্দনা দেবী। 'মানুষটা তো মিথ্যে কথা বলে নি .. তার স্বামীর জন্যই তো সে অপছন্দ করে ওই লোকটাকে। কিন্তু অল্পবয়সে কে বিপথে গিয়ে কি করেছে .. তার জন্য সে চিরকাল ক্ষমার অযোগ্য হয়ে থাকবে, এটা তো একদমই ঠিক নয়। ওই মানুষটা তো কোনোদিন তাদের কোনো ক্ষতি করেনি। বরং যখনই সে তাদের বাড়িতে মাত্র একবেলার জন্য এসেছে, দামী দামী উপহার নিয়ে এসেছে। আজও তো তার ছেলের জন্য একটা দামি উপহার নিয়ে এসেছে এবং তার সঙ্গে কত বড় একটা মিষ্টির প্যাকেট। তারপর একটু আগে তাদের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে যে কথাগুলো সে বললো, সেগুলোর সম্ভাবনাও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না! অথচ একটা কথাও তাকে বাপ্পা বলেনি, সে নিজের মুখে এ কথা স্বীকার করেছে। তারমানে, লোকটা ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী। আর সেই মানুষটাই কিনা অভুক্ত অবস্থায় দুপুরে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো ..' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো নন্দনা দেবীর।
একসময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো, তারপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো .. তার ছেলে বাপ্পা এখনো পশ্চিমের বেডরুমটা থেকে বেরোয়নি। 'এখনো কি সে অঙ্ক করে যাচ্ছে!' এটা ভাবতে ভাবতে ওই ঘরে ঢুকে চমকে উঠলো নন্দনা দেবী।
পরবর্তী সারপ্রাইজ পর্ব যেকোনো দিন আসতে পারে
সঙ্গে থাকুন এবং পড়তে থাকুন