20-05-2023, 08:14 PM
|| ৫ ||
আগেরদিন ভোররাতে ওইরকম একটা অদ্ভুত এবং অশ্লীল স্বপ্ন কেন সে দেখলো, সেটা কিছুতেই বোধগম্য হলো না চিরন্তন বাবুর স্ত্রীর। তার মাথায় তো এ ধরনের ভাবনা এর আগে কোনোদিন ভিড় করেনি! এমনকি তার অবচেতন মনেও কোনোদিন এই ধরনের অদ্ভুত পরিস্থিতির কথা আসেনি। অথচ দুঃস্বপ্নটা দেখার পর থেকে তার শরীরে একটা অদ্ভুত রকমের অস্বস্তি, বলা ভালো শিহরণ হচ্ছিলো। স্বপ্নে ম্যাট্রেসের উপর নিজেকে সম্পূর্ণ নগ্নদেহে আবিষ্কার করার পর থেকে তার মাথাটা তখনো ঝিমঝিম করছিলো। "ভোরের স্বপ্ন কিন্তু সত্যি হয় .." তার মা মলিনা দেবীর তাকে ছোটবেলায় বলা এই কথাটা হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়াতে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো তার। তবে কি এটা ভবিষ্যতে ঘটতে চলা কোনো ঘটনার পূর্বাভাস! আর কিছু ভাবতে পারলো না নন্দনা দেবী।
সাংসারিক জীবনের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতে খেতে দিন শুরু হলো নন্দনা দেবীর। পূর্বের সঙ্গে বর্তমানের এবং বর্তমানের সঙ্গে ভবিষ্যতের দৈনন্দিন গৃহকর্মের ভারসাম্য রক্ষা করতে করতেই সময় অতিবাহিত হতে থাকলো। কাজের মাসি মালতী সকালে কাজ করতে আসার পর তাকে গতকালের ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করে নন্দনা দেবী জানলো .. সত্যিই তাকে সাপে তাড়া করেছিলো। তার মানে তার স্বামীর সহকর্মী ওই পাঞ্জাবী লোকটা তাকে মিথ্যা কথা বলেনি .. এটা ভেবে কিছুটা স্বস্তি এলো তার মনে।
ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ন'টা অতিক্রম করে গিয়েছিলো। "দেরি হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি খেতে বসো, একটু পরেই গাড়ি চলে আসবে .." এই বলে বাপ্পাকে তাড়া দিয়ে খেতে বসালো তার মা। নন্দনা দেবীর মাথায় ছিলো হার্জিন্দার তার ডাক্তার বন্ধুকে নিয়ে বারোটার সময় আসবে বলেছে। সকালে উঠেই রান্না করে রেখেছে, এখন আর রান্নার ঝামেলা নেই। তাই সে ভেবে রেখেছিলো তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নিয়ে ওরা আসার আগেই রেডি হয়ে থাকবে। সেই অনুযায়ী একটি হালকা গোলাপী রঙের তাঁতের শাড়ি এবং চিকনের কাজ করা একটি কালো থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজ বের করে রেখেছিলো সে।
কিন্তু তার আগের থেকে করে রাখা সমস্ত পরিকল্পনাতে জল ঢেলে দিলো একটি ফোন। প্রতিদিনের মতোই নিজের অন্তর্বাসদুটি কেচে পশ্চিম দিকের জানালায় টাঙ্গানো দড়িতে মেলে দিয়ে এসে স্নানে ঢুকতে যাবে এমন সময় তার মোবাইলে ফোন এলো তার জ্যাঠতুতো দিদি বন্দনার। ঘড়িতে তখন পৌনে এগারোটা বাজতে যায়। বাপের বাড়ির তরফের আত্মীয়দের মধ্যে ওই একজনের সঙ্গেই তার যোগাযোগ ছিলো .. এ কথা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। নন্দনার থেকে তার জেঠুর মেয়ে প্রায় বছর ছয়েকের বড় ছিলো। এবছর একচল্লিশে পড়লেন বন্দনা দেবী। খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তার। বড় ছেলে সৈকত কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। সৈকতের জন্মের প্রায় ঊনিশ বছর পর, মাস সাতেক আগে আবার এক পুত্রসন্তানের মা হয়েছেন তিনি। এই সবকিছু নিয়ে খুব খুশি তার পরিবার। গত মাসেই তো সাগর মানে বন্দনা দেবীর ছোট সন্তানের অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলো নন্দনা আর তার স্বামী চিরন্তন।
হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করেছেন বন্দনা দেবী। পুচকুটা, মানে সাগর জ্বরে ভুগলো টানা ক'দিন। ওকে দেখতে চেয়েছিলো নন্দনা, সেই কারণেই ভিডিও কল করা। পরস্পরের সাংসারিক জীবনের কথা, ভিডিও কলে পুচকুটাকে আদর করা, হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদি চলতেই লাগলো। পৌনে এগারোটা থেকে ঘড়ির কাঁটা এগোতে এগোতে একসময় বারোটা বাজতে পাঁচে পৌঁছোলো। এর মাঝখানেই কাজ করে চলে গিয়েছে কাজের মাসি মালতী। কথার পৃষ্ঠে কথা, তার পৃষ্ঠে কথা .. এই সবে এতটাই মশগুল ছিলো সে, যে সময়ের দিকে খেয়াল করেনি। ফোনের কথোপকথনের তাল কাটলো কলিং বেলের আওয়াজে। 'কার আসার কথা ছিলো, সে বা তারাই এলো কিনা' এই সব কিছু ভুলে গিয়ে "এখন আবার কে এলো .." এইরূপ মন্তব্য করে ওই অবস্থাতেই ফোনটা হাতে নিয়ে বৈঠকখানার ঘরে গিয়ে দরজা খুলে দিলো নন্দনা দেবী।
★★★★
দরজার বাইরে তিন ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সম্বিত ফিরলো নন্দনা দেবীর। "দিদিভাই এখন আমি রাখছি, কেমন! পরে ফোন করবো।" এইটুকু বলে ফোনটা কেটে দিয়ে অপেক্ষারত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে শুকিয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো, "আ..আপনারা? এ..এখন?"
"ক'টা বাজে দেখো তো ঘড়িতে! বারোটার সময় আসবো বলেছিলাম, এখন বারোটা বাজতে দুই মিনিট বাকি। টাইম কা মামলে মে আমি ভীষণ পাংচুয়াল। আর 'আপনারা' মানে আবার কি কথা? আমার আর আমার ডাক্তার বন্ধু প্রমোদের তো আসবার কথাই ছিলো। এখানে আসার পথে আমাদের আরেক বন্ধু রবার্টের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো, তাই ওকে সঙ্গে করে নিয়ে এলাম। আন্দার ঘুসনে দোগে, নাকি বাইরেই অতিথিদের দাঁড় করিয়ে রেখে দেবে?" গম্ভীভাবে কথাগুলো বলে নন্দনা দেবীকে অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকলো হার্জিন্দার, তার পেছন পেছন নতুন দুই আগুন্তক।
এই কোম্পানির কমার্শিয়াল ম্যানেজার রবার্ট ডিসুজা আর ডাক্তার প্রমোদ গঞ্জালভেস .. এদের দুজনকেই আগে দেখেছে নন্দনা দেবী, তবে পরিচয় হয়নি কখনো। দুজনের বয়সই আনুমানিক পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি। গাঢ় নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট আর সাদা টি-শার্ট পরিহিত প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি লম্বা, গৌরবর্ণ এবং সুঠাম চেহারার অধিকারী রবার্টের মাথার সামনের দিকটায় চুল না থাকলেও পেছনের দিকে কয়েকগাছি চুল পানিটেল করে বাঁধা। থুতনি আর নিচের ঠোঁটের মাঝামাঝি একটা ত্রিভুজাকৃতি দাড়ি তার মুখমণ্ডলে স্মার্টনেস তো আনতে পারেইনি, উল্টে একটা কদাকার ভাব সৃষ্টি করেছে। এদিকে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট আর ফতুয়া পরিহিত কুমড়ো পটাশের মতো চেহারার শ্যামবর্ণ প্রমোদ, ওদের দুজনের থেকে আপাত খর্বকায়। ফোলা ফোলা দুটো গালের উপর অসংখ্য বসন্তের দাগ তার মুখটাকে অতিশয় বীভৎস করে তুলেছিলো। হার্জিন্দার আগের দিনের পোশাকেই এসেছে। শুধু কালোর বদলে তার পরনে একটি ঘিয়ে রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি দৃশ্যমান।
রবার্ট তার বাকি দুই পার্টনার হার্জিন্দার এবং প্রমোদের মতো যথাক্রমে পরোক্ষভাবে আত্মহত্যায় মদত দেওয়া এবং প্রত্যক্ষভাবে একটি খুনের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও, বাকি দুজনের মতোই কামুক, চরিত্রহীন এবং লম্পট ছিলো। এই থ্রি-মাস্কেটিয়ার্স একসঙ্গে এবং আলাদা আলাদা ভাবে বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন ক্লাসের, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের .. কত যে মহিলার সর্বনাশ করেছে, তা গুনে শেষ করা যাবে না। তবে এদের মধ্যে রবার্টের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলো .. সে ভদ্রঘরের সতীলক্ষী গৃহবধূদের অন্তঃসত্ত্বা করে দিয়ে নিজের মনের মধ্যে একটা বিকৃত যৌনসুখ অনুভব করতো।
ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে তিন কামুক দুর্বৃত্তের নজর গেলো নন্দনা দেবীর দিকে। তাদের তিনজনেরই মনে হলো, সামনে যে ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছে সে তাদের সহকর্মীর পত্নী নয়, সে কোনো সন্তানের জননী নয় .. হাঁটুর কিছুটা নিচ পর্যন্ত লম্বা পাতলা ফিনফিনে সুতির নাইটি পরিহিতা এ যেন এক যৌনতার কামদেবী দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। এই অবস্থায় কখনো চিরন্তন বাবুর স্ত্রীকে দেখতে পাবে এটা বোধহয় তারা নিজেরাই কল্পনা করতে পারেনি। নন্দনা দেবীর পরনে সাদার উপর লাল ববি প্রিন্টের অত্যন্ত পাতলা সুতির কাপড়ের, কাঁধের দুই পাশে সরু স্লিভযুক্ত, গলা, পিঠ এবং বগলের কাছটায় অনেকখানি কাটা হাঁটুর কিছুটা নিচ পর্যন্ত ঝুলের নাইটিটা দেখে কামুক দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে রইলো তিন দুর্বৃত্ত।
পাতলা স্লিভলেস নাইটির আবরণ ভেদ করে নন্দনা দেবীর অন্তর্বাসহীন, ঢেউ খেলানো শরীরের সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে তার গভীর স্তন বিভাজিকা। পেটের সাথে আঁটোসাঁটো নাইটিটা লেপ্টে গিয়ে অতিমাত্রায় প্রকট হয়ে উঠেছে বিশাল বড় নাভির গর্তটা। দন্ডায়মান স্তনবৃন্ত সমেত ব্রেসিয়ারবিহীন বড় বড় ফুটবলের মতো থলথলে মাংসল মাইজোড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের তালে তালে প্রবলভাবে ওঠানামা করছে। মনে হচ্ছে ওগুলো এখনই নাইটি ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে সবার সামনে বাপ্পার মাতৃদেবীকে চরম এমব্যারেসিং সিচুয়েশনের মধ্যে ফেলে দেবে। স্লিভলেস নাইটির কাঁধের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে দৃশ্যমান শাঁখা-পলা পড়া চিরন্তন বাবুর স্ত্রীর মসৃণ নগ্ন মাংসল বাহুদ্বয়।
গতকালের পরিস্থিতি আলাদা ছিলো। গতকাল তো তার বাড়িতে কারোর আসার কথা ছিলো না! অযাচিতভাবে বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার স্বামীর সহকর্মী বাড়িতে ঢুকে পড়ে তাকে বাথরুমে ওই অবস্থায় দেখেছিলো। এতে তো তার কোনো দোষ ছিলো না! তাই আজ সে মনে মনে ভেবেই রেখেছিলো তার স্বামীর সহকর্মী ডাক্তার নিয়ে আসবার আগে স্নান-টান সমস্ত সেরে নিয়ে তাঁতের শাড়ি আর থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজ পড়ে একজন রুচিশিলা ভদ্রবাড়ির গৃহবধূর মতো ওদের সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করবে, যাতে কালকের সমস্ত স্মৃতি হার্জিন্দারের মাথা থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু তার বদলে গতকালের থেকেও খোলামেলা, বলা ভালো ভলগার .. এইরকম একটা পোশাকে তার স্বামীর তিন সহকর্মীর সামনে (যাদের মধ্যে দু'জন একেবারেই অপরিচিত) অবতীর্ণ হওয়াতে লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো নন্দনা দেবীর।
এই পোশাকটি কোনো এক বিবাহবার্ষিকীতে তার স্বামী তাকে কিনে দিয়েছিলো। এটা পড়লে এমনিতেই এতটা লজ্জা লাগে বা কুন্ঠাবোধ হয় তার, যে নিজের স্বামীর সামনেই এক-আধবার ছাড়া আর কোনোদিন এই পোশাক পড়েনি সে। চিরন্তন বাবুও তাকে জোর করেনি। 'ইশশ কি কুক্ষণে যে আজকে এই পোশাকটা পড়তে গেলো সে!' এই ভেবে নিজের প্রতিই ভীষণ রাগ হচ্ছিলো নন্দনা দেবীর। এমত অবস্থায় কি করবে, কি বলবে .. কিচ্ছু বুঝে উঠতে না পেরে, পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গিয়ে কোনো উক্তি না করে পিছন ফিরে ড্রয়িংরুম পেরিয়ে ডাইনিংরুমে প্রবেশ করলো নন্দনা দেবী।
বিস্মিত, হতবাক তিন কামুক দুর্বৃত্ত তাকিয়ে দেখলো তাদের দিকে পিছন ফিরে নিজের ভারী নিতম্বে তরঙ্গ তুলে সামনের দিকে মুখ করে হেঁটে চলা নন্দনা দেবীর পশ্চাৎভাগের নাইটির কিছু অংশ তার ভারী পাছার মাংসল দুই দাবনার খাঁজে আটকে গিয়ে হাঁটার তালে তালে ঘষা খাচ্ছে অনবরত। গোলাপী রসালো ঠোঁটের কোয়াদুটো যেন অতিমাত্রায় রসসিক্ত হয়ে আহ্বান জানাচ্ছে নিজেদের দিকে। ঘামে লেপ্টে যাওয়া সিঁথির সিঁদুরের কিছুটা অংশ ফর্সা কপালের মাঝে মাখামাখি হয়ে রয়েছে। কাঁধের কিছুটা নিচ পর্যন্ত লম্বা মাথার অবিন্যস্ত কোঁকড়ানো চুল, আদুরে অথচ কামুকী মুখমণ্ডলে বোঁচা নাকের উপর রিমলেস চশমাতে নন্দনা দেবীকে যেন অসম্ভব সুন্দর এবং উত্তেজক লাগছিলো এই মুহূর্তে।
★★★★
"দাঁড়ান .." প্রমোদ গঞ্জালভেসের বাজখাঁই গলার এইরূপ উক্তিতে থমকে দাঁড়ালো নন্দনা দেবী।
"কোথায় যাচ্ছেন?" গলার স্বর ভারী রেখেই পুনরায় প্রশ্ন করলো প্রমোদ।
"জ..জানিনা.." কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে থতমত খেয়ে গিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে এইটুকুই বলতে পারলো নন্দনা দেবী।
"বাড়িতে তিনজন অতিথি এসেছে, তার মধ্যে একজন ডাক্তার .. যে নাকি আবার আপনার চিকিৎসা করতে এসেছে! তাদের সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজের বাড়িতেই কোথায় যাচ্ছেন সেটা আপনি জানেন না? আজব মেয়েছেলে তো আপনি!" এমনিতেই লজ্জায়, অপমানে কুঁকরে থাকা নন্দনা দেবীকে ভদ্রমহিলা বা নিদেনপক্ষে মহিলা না বলে 'মেয়েছেলে' বলে সম্বোধন করে অতিমাত্রায় হিউমিলিয়েশনে জর্জরিত করে উক্তি করলো প্রমোদ।
সত্যিই তো, এমত অবস্থায় সে কোথায় যাবে, কোথায় গিয়ে মুখ লুকাবে .. কিছুই তার জানা নেই। শুধুমাত্র হঠাৎ করে সৃষ্টি হওয়া এইরকম একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না পেরে, সেখান থেকে পালাতে চাইছিলো সে। তাই তার স্বামীর অফিসের ডাক্তারের কথার কোনো জবাব ছিলো না তার কাছে। মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো নন্দনা দেবী।
"ওই বাঞ্চোদটা, মানে হার্জিন্দার এতদিন ধরে বাংলায় থেকেও ঠিকঠাক বাংলাটা বলতে পারে না। তাই আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন গোয়ানীজ খ্রিস্টান হয়ে আমরা দু'জন এত ভালো বাংলা বলছি কি করে, তাই তো? আসলে এত বছর ধরে বাংলায় আছি, তাই হয়তো ভাষাটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাছাড়া একসময় আমার একজন বাঙালি রাখেল, আই মিন বান্ধবী ছিলো। ওর কাছ থেকেই প্রথম বাংলা শিখি আমি। তারপর থেকেই বাংলা ভাষার প্রতি প্রেম জন্মায় আমার, আর তার সাথে বাঙালি সুন্দরী নারীদের প্রতি। আপনাকে কিন্তু ফাটাফাটি দেখতে, তার সঙ্গে স্বাস্থ্যবতী হলেও আপনার ফিগারটাও ভীষণ আকর্ষণীয়। এখনো কিন্তু আমাদের পরিচয়টাই হয়নি। হাই, দিস ইজ রবার্ট .. রবার্ট ডিসুজা .. এই কোম্পানির কমার্শিয়াল ম্যানেজার আর আপনার হাজব্যান্ডের নিয়ারেস্ট বসও বটে।" ওইরকম দশাসই চেহারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অত্যন্ত ভারী এবং গুরুগম্ভীর গলায় কথাগুলো বলে তার অধঃস্তন কর্মচারীর স্ত্রীর দিকে করমর্দনের জন্য নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিলো রবার্ট।
এই পরিস্থিতিতে কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে বোকার মত হেসে প্রথমে কিছুটা ইতস্ততঃ করে, পরে নিজের হাতটাও সামান্য উপরে তুলে তার স্বামীর ঊর্ধ্বতন অফিসারের হাতের কাছাকাছি নিয়ে আসতেই, তার হাতটা খপাৎ করে চেপে ধরলো রবার্ট। এমত অবস্থায় নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই নন্দনা দেবী বুঝতে পারলো ওই দানবাকৃতি লোকটার বজ্রমুষ্টি থেকে রেহাই পাওয়া অত সহজ নয়, অসম্ভব শক্তি ওই লোকটার গায়ে।
"তুমকো তো মালুম থা, কি আজ ইস টাইম পে হামলোগ আয়েঙ্গে! তাও এই পোশাকে? ভেরি ইন্টারেস্টিং! তুমহে তো দেখকার মালুম হোতা হ্যায় কি, আভি তক নাহায়ে নেহি হো তুম। আচ্ছা, এক বাত বাতাও .. আজ ভি কেয়া নাহানে সে প্যাহলে আপনি আন্ডারগার্মেন্টস ধো দিয়ে তুম? তুমহে দেখকার তো লাগতা হ্যায় নাইটি কে আন্দার কাল কি তারহা আজ ভি নাঙ্গি হো তুম! সাহি কাহা না ম্যায়নে? হাঁ? বাতাও?" রবার্টের করমর্দনে বন্দিনী নন্দনা দেবীর আরো কাছে এসে দাঁড়িয়ে অসভ্যের মতো হাসতে হাসতে তার চোখে চোখে কথাগুলো বললো হার্জিন্দার।
ধূর্ত শয়তান অসভ্য পাঞ্জাবীটার কথাগুলো শুনে লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করলো বাপ্পার মাতৃদেবীর। তার ইচ্ছে করলো, এখান থেকে এক দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের মুখ লুকানোর। কিন্তু করমর্দনের অছিলায় রবার্ট তার হাত এখনো পর্যন্ত শক্ত করে চেপে ধরে রাখায় ওখানে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলো না সে।
"কি বলছে হার্জিন্দার? শুনতে পাওনি? উত্তর দাও। দেখো, তুমি আমাদের থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট হবে, তাই আর আপনি-আজ্ঞে করতে পারছি না। হার্জিন্দারের মতো আমরাও এবার থেকে তোমাকে 'তুমি' করেই বলবো।" নিজের বজ্রমুষ্টিতে তার অধঃস্তন কর্মচারীর স্ত্রীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখে গুরুগম্ভীর গলায় উক্তি করলো রবার্ট।
এতগুলো প্রশ্নবাণের সম্মুখীন হয়েও মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না নন্দনা দেবীর। শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। এই সম্মতি তাকে 'তুমি' বলার অনুমতি দেওয়ার জন্য, নাকি নাইটির নিচে সে সম্পূর্ণ নগ্ন .. এই কথার সম্মতি প্রদান, সেটা অবশ্য বোঝা গেলো না।
"এনাফ ব্লা ব্লা .. এখানে সাইড টক প্রচুর হচ্ছে। যে কাজের জন্য এসেছি, সেটা তো আগে করতে হবে। চলো দেখি .. তোমার বেডরুমে চলো।" নিজের বাজখাঁই আর কর্কশ গলায় কথাগুলো বলে বাপ্পার মায়ের আরেকটা হাত চেপে ধরলো প্রমোদ।
"ব..বেডরুমে ... ক..কেন?" চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা দেবী।
"বেডরুমে যাবে না তো কি, বাড়ির সামনের লনটাতে খোলা আকাশের নিচে তোমার ট্রিটমেন্ট করবো? চলো চলো তাড়াতাড়ি চলো, আমার সময়ের দাম আছে।" প্রমোদের এইরূপ উক্তিতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে ধীরপায়ে নিজে প্রথমে বেডরুমে প্রবেশ করে বাকি তিনজনকে ইশারায় ভেতরে আসতে বললো চিরন্তনের স্ত্রী। কথাবার্তা বা চিকিৎসা যাই হোক না কেন, সেটা তো বৈঠকখানা ঘরেও হতে পারতো .. এ কথা মাথাতেই এলো না তার বা হয়তো এতটাই বিভ্রান্ত এবং নার্ভাস হয়ে পড়েছিল সে, যে এই কথা বলার সাহসই যুগিয়ে উঠতে পারলো না।
★★★★
চিরন্তন আর নন্দনার মাস্টার বেডরুমের ছয় বাই সাতের সাহেবী আমলের পালঙ্কের উপর পরপর বসলো তিন দূর্বৃত্ত। প্রথমে রবার্ট, মাঝখানে প্রমোদ আর একপাশে হার্জিন্দার। তিন পরপুরুষের সামনে, ঠিক এক হাত দূরে ওইরকম একটা যৌন আবেদনময়ী চেহারায় অন্তর্বাসহীন অবস্থায় শুধুমাত্র সুতির পাতলা কাপড়ের স্লিভলেস একটি নাইটি পড়ে চোখে রিমলেস চশমা এঁটে দাঁড়িয়ে রইলো নন্দনা দেবী। তার পিছনে ড্রেসিং টেবিলের আপাদমস্তক বিশাল আয়না। ঘড়িতে তখন সোয়া বারোটা।
"বলো .. এবার তোমার সমস্যার কথা বলো .." নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে উঠলো ডক্টর প্রমোদ।
প্রথমে কিছুক্ষণ মৌন থেকে, তারপর ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলো নন্দনা দেবী, "না মানে, কালকে ওনাকে যেটা বলেছিলাম, সেটাই। আসলে অল্পবয়সে আমি তো নাচ শিখতাম! নাচ ছেড়ে দেওয়ার পর আমার শরীরের নিচের দিকের অংশ অনেকটাই ভারী হয়ে গিয়েছে। এমনিতে কিছু নয়, তবে এতে কাজকর্ম করতে একটু অসুবিধা হয়। আগের মতো আর দৌড়ঝাঁপ করতে পারি না। মাঝে মাঝে একটু হাঁপিয়ে উঠি .. এই আর কি। যদি ডুয়েট কন্ট্রোল করে বা কোনো এক্সট্রাসাইজ করে শরীরের মেদটা একটু ঝরানো যেতো!"
"তুমি চাইলে তোমার সঙ্গে আমরা 'ডুয়েট' গাইতেই পারি, সেটা বড় কথা নয়। তবে তুমি বোধহয় 'ডায়েট কন্ট্রোল' বলতে চাইছো। আর শরীরের কিছু পার্টের সাইজ তো তোমার এক্সট্রা বটেই, কিন্তু তুমি সম্ভবত এক্সারসাইজের কথা বলার চেষ্টা করছো। তাই না?" হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলো রবার্ট। ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালো নন্দনা দেবী।
"শরীরের নিচের দিকের অংশ মানে? ঠিক বুঝলাম না।" গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো প্রমোদ।
"নিচের দিকের অংশ মানে .. কি বলি .. মানে আমি আমার কোমরের নিচের অংশের কথা বলতে চাইছি।" কিছুটা ভেবে নিয়ে উত্তর দিলো নন্দনা দেবী।
"কোমরের নিচের অংশ? মানে তুমি তোমার পা দুটোর কথা বলছো? তোমার পা দুটো মোটা হয়ে গেছে, এটা বলতে চাইছো কি? দেখো, যা বলবে খুলে বলো। চিকিৎসার জন্য যখন আমাকে ডেকেছো, তখন তো তোমার সমস্যার কথা আমাকে খুলে বলতে হবে! তা না হলে ট্রিটমেন্টটা হবে কি করে?" ধূর্ত শয়তান প্রমোদ সবকিছু বুঝেও, না বোঝার ভান করে কথাগুলো বললো।
তার চিকিৎসা করতে আসা ডাক্তারের মুখে কথাগুলো শুনে লজ্জায় তো বটেই, তার সঙ্গে মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেলো চিরন্তন বাবুর স্ত্রী। ডাক্তার এবং উকিলের কাছে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে কিছু লুকাতে নেই, সব খুলে বলতে হয় .. এ কথা ছোটবেলায় তার মা তাকে বলেছিলো ঠিকই। কিন্তু একজন ভদ্র, নম্র, সতীসাধ্বী গৃহবধূ হওয়ার জন্য ডাক্তারের কাছে তো বটেই, তার সঙ্গে বাকি দুই পরপুরুষের সামনে নিজের শরীর বা শরীরের বিশেষ কোনো অংশ নিয়ে কথা বলতে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো নন্দনা দেবীর। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পর নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে মৃদুকন্ঠে নন্দনা বললো, "কোমরের চারপাশে অল্প একটু চর্বি জমেছে আর ব্যাক সাইডে, মানে পেছন দিকটা বেশ কিছুটা ভারী হয়ে গেছে আগের থেকে .."
"কোমরের চারপাশে চর্বি জমার ব্যাপারটা তো না দেখে বলতে পারবো না, তবে ব্যাক সাইড মানে? তোমার পোঁদ, আই মিন পাছার কথা বলতে চাইছো?" চিরন্তন বাবুর স্ত্রীকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে দৃঢ়কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো ডক্টর প্রমোদ।
"হুঁ .." লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যেতে যেতে মাথা নিচু করে উত্তর দিলো নন্দনা দেবী।
"আচ্ছা, এতক্ষণে বুঝলাম তোমার প্রবলেমের কথা। আমাদের চিরন্তনের বউয়ের পোঁদজোড়া আগের থেকে অনেক বেশি ফুলে গেছে, তাই আমাদেরকে ডেকেছে এই সমস্যার সমাধানের জন্য। তাই তো?" অশ্লীল ভঙ্গিতে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে হেসে জিজ্ঞাসা করলো প্রমোদ।
"না, মানে তা নয় .. আসলে আমি বোঝাতে চাইছিলাম .." কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো নন্দনা। তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ডক্টর প্রমোদ বলে উঠলো, "তুমি কি বোঝাতে চাইছো সেটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এবার আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোনো। তোমার ফিগারের প্রসঙ্গে পরে আসছি। তোমার ফিগার হাল্কা না ভারী, ঝড়ানো উচিৎ নাকি এরকমই রেখে দেওয়া উচিৎ .. সেই ব্যাপারে পরে কথা বলছি। প্রাথমিকভাবে আমার ডায়াগনোসিস হলো নাচ ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে তোমার ওয়েট গেইন-এর কোনো সম্পর্ক নেই। তোমার কথা অনুযায়ী, তুমি অল্পবয়সে নাচ শিখতে। তাহলে এত বছর পর নাচ ছেড়ে দেওয়ার সাইড এফেক্ট তোমার হেলথের উপর পড়বে না, হলে আগেই হতো ব্যাপারটা। আমার মনে হয় এটা হেরিডিটি থেকে এসেছে, মানে বংশগত ব্যাপার আর কি। ঠিক আছে আমি যখন এসেছি, তখন তো আর ট্রিটমেন্ট না করে যেতে পারি না! তাছাড়া আমাদেরই অফিসের একজন স্টাফের যখন তুমি ওয়াইফ, তখন তোমার তো স্পেশাল ট্রিটমেন্ট করতে হবে। এবার আমি যে যে প্রশ্নগুলো করবো তার একদম সঠিক উত্তর দেবে। পেশেন্ট সহযোগিতা না করলে আমি কিন্তু ভীষণ রেগে যাই।"
~ কিছুক্ষণের মধ্যেই পরের আপডেট আসছে ~