18-05-2023, 01:41 PM
পঞ্চসপ্ততি পর্ব
তপতি এসেই সোজা আইসিইউতে ঢুকে গেল। বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পর তপতি আইসিইউ থেকে বেরিয়ে মুখ কালো করে বলল - দিপু নিজেকে শক্ত করো বাঁচার আশা খুবি কম। দিপু - না আমি বিশ্বাস করিনা তোমার কথা তুমি মিথ্যে কথা বলছো আমার রাধা আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা।
দিপু কান্নায় ভেঙে পরল। সবাই ওকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল। একটু বাদে ডাক্তার সেন বেরিয়ে বললেন - ভাই এখানে এ রজার চিকিৎসা হয়না আর হলেও বাঁচানো সম্ভব নয়। অনেক বড় বড় শব্দে দিপুকে বোঝাতে চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু দিপুর কানে কিছুই ঢুকলো না শুধু এই টুকুই বলল - দেখোন কোথায় গেলে আমার রাধা আবার সুস্থ হয়ে উঠবে সেই ব্যবস্থা করুন।
মৃনাল আর কুনাল শুনেই হাসপাতালে চলে এসেছে। দিপুকে বলল - ওকে ভিয়েনাতে নিয়ে যেতে হবে আমি আমার এক বন্ধু ডাক্তারের সাথে কথা বলে এসেছি আমি যা শোনার শুনেই কথা বলে নিয়েছি। তোমার পাসপোর্ট রাধার পাসপোর্ট করতেও বলে দিয়েছি। দুদিনে পেয়ে যাবো। তারপর ভিসা হয়ে যাবে একদিনেই আমার সোর্স আছে। হাপাতালের কাগজ জমা দিতে হবে। তুমি তৈরী হয়ে নাও আর নিজেকে শক্ত করো তোমাকে এভাবে দেখতে আমরা কেউই অভস্ত নোই। মৃণালের কথা শেষ হতে দিপু দোকানে ফোন করে দোকানের কাকা কে জিজ্ঞেস করল - কাকা ব্যাংকে এখন কত টাকা আছে। ১০-১২ কোটি হবে। অস্ট্রিয়াতে কি টাকা চলে মৃনালকে জিজ্ঞেস করতে বলল - ওখানে এখন ইউরো চলছে আমাদের টাকাকে ইউরোতে কনভার্ট করতে হবে। সে সব আমি করে নেব দিপু আর টাকার জন্য ভেবোনা তোমার টাকা কম পড়লে আমরা দিয়া ভাই তো আছি নাকি একদম ভেঙে পড়বে না। ওখানে ডাক্তার রেইনার বলে খুবই ফেমাস ডাক্তার ওনাকে দিয়ে অপারেশন করাতে হবে। মৃনাল আরো বলল - আজকেই সব কাগজ আমি স্ক্যান করে মেইল করে দিচ্ছি যাতে খুব তাড়াতাড়ি ওনার এপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায়।
তপতি রাধাকে দিনরাত এক করে দেখাশোনা করছে আর দিপুকে আশ্বাস দিচ্ছে সব ঠিক হয়ে যাবে। রাধার দুই বোন ওদের স্বামীদের সাথে হাসপাতালের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। দিপুকে দেখে দুই বোন দৌড়ে এসে দিপুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে লাগল। সবাই ওদের ধরে সরিয়ে নিয়ে গেল।
দুদিনের ভিতর সব কিছু ঠিক হয়ে গেল শুধু ডাক্তারের অপন্টমেন্টের অপেক্ষা। মৃনাল ল্যাপটপ খুলে মেইল চেক করে বলল -মেইল এসেছে উনি আজ থেকে তিনদিনের মাথায় ওর অপারেশন করবেন। তাহলে আমাদের আজকে রাতের ফ্লাইটেই বেরোতে হবে। ঠিক হলো রাধার সাথে দিপু আর মৃনাল যাবে। মোট তিন জন কিন্তু তপতি যেতে চাইলো ও পাসপোর্ট ভিসা রেডি করে ফেলেছে। দিপু মৃনালকে বলল - আমাদের সাথে একজন মহিলা থাকা দরকার আর ও নিজেও তো একজন ডাক্তার ও থাকলে আমাদের সুবিধাও হবে । মৃনাল রাজি হয় ট্রাভেল এজেন্টকে ফোন করে আর একটা টিকিটের ব্যবস্থা করতে বলে দিল। দিপু তিনদিন হাসপাতাল থেকে নড়েনি খুবই সামান্য খাবার খেয়েছে। মৃনাল ওকে ধরে নিচে নিয়ে গেল বলল এখন কিছু খেতে হবে তোমাকে আমাদের জন্য নয় তোমার রাধার জন্য সে যদি সুস্থ হয়ে তোমাকে অসুস্থ দেখে তার কি ভালো লাগবে। দিপু বুঝল যে ওকে সুস্থ থাকতে হবে।
রাতের ফ্লাইটে রাধাকে নিয়ে যাত্রা শুরু হলো। রাধাকে একটা স্ট্রেচারে করে ওঠানো হয়েছে ওর কাছে একটা সিটে তপতি বসে ওকে ধরে আছে। যদিও স্ট্রেচার ফিক্স করে দেওয়া হয়েছে যাতে নড়াচড়া না করে।
কলকাতা থেকে ডাইরেক্ট ফ্লাইট নেই ওদের দিল্লি হয়ে ভিয়েনা যেতে হবে; প্রায় ১৫-১৬ ঘন্টা লাগবে। পরদিন সন্ধ্যে বেলা ভিয়েনা পৌঁছল। সেখান থেকে সোজা নির্দিষ্ট হাসপাতালে রাধাকে ভর্তি করা হলো। তপতি বলল - তোমরা কাছের কোনো হোটেলে গিয়ে একটু বিশ্রাম করে নাও আমি রাধার সাথে এখানেই থাকব। সবাই আপত্তি করতে ওর বলল - দেখো আমি একজন ডাক্তার আমি ইংরেজিতে কথা বলতে পারব রাধার জ্ঞান ফিরলে ওকে যদি ডাক্তার বা নার্স কিছু জিজ্ঞেস করে ও কিছুই বলতে পারবেনা তাই আমাকে থাকতেই হবে। দিপু মৃনালকে বলল - চলুন আমরা একটা হোটেল দেখি সেখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার এখানে ফিরে সাথে তপতির জন্য কিছু খাবার নিয়ে।
দুটো দিন কেটে গেছে আগামী কাল ভোরে রাধার অপারেশন। দিপু আর মৃনাল বাইরে অপেক্ষা করছে শুধু তপতি নিজে ডাক্তার বলে ওর কাছে থাকার পারমিশন পেয়েছে। সাড়ে তিন ঘন্টারও বেশি সময় লাগল অপারেশন শেষ হতে। ডাক্তার রেইনার বেরিয়ে এসে বললেন অপারেশন সাকসেফুল সি উইল বি অল রাইট উইদিন থ্রি ডেস। ডাক্তার বেরিয়ে যেতে মৃনাল সামনে একটা কাউন্টার আছে সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করল যে পেশেন্টকে দেখতে পারে কিনা। মহিলা বললেন - কাছে যাওয়া যাবেনা দূর থেকে দেখতে হবে। দিপু আর মৃনাল দূর থেকে রাধাকে দেখলো ওর পাশে তপতি বসে আছে। হাজার খানেক নল চারিদিক ঘিরে রেখেছে রাধাকে। দিপুর দেখে খুব কান্না পেল অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে বলল - চলুন মৃণালদা আমি আর দেখতে পারছিনা রাধাকে।
সত্যি সত্যি তিনদিনের মাথায় রাধার সব নল খুলে দিয়ে ওকে বসিয়ে দিল। তপতি ওকে খাইয়ে দিয়ে বেরিয়ে এসে দিপুকে বলল - রাধা কথা বলছে , প্রথমেই তুমি কেমন আছো জিজ্ঞেস করেছে আমাকে। আমি বলে দিয়েছি তুমি ভালো আছো আর বাইরে অপেক্ষা করছো।
এক সপ্তাহে রাধা ঠিক হয়ে গেল ওর মুখে হাসি ফিরে এলো দিপুকে দেখে বলল - খুব ভয় পেয়েগেছিলে না এই বুঝি তোমার রাধা তোমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। দিপু ওর মুখ চেপে ধরে বলল - একদম এসব কথা বলবে না আমার শুনতে ভালো লাগছে না। ডাক্তার ওকে ডিসচার্জ করে দিল। দুদিন হোটেলে থেকে তপতি মৃনাল খুব করে ঘুমিয়ে নিল। কিন্তু রাধা আর দিপুর চোখে কোনো ঘুম নেই এই কদিনের জমানো কথা বাল শুরু করেছে। রাধা এবার জিজ্ঞেস করল তোমার স্যারের মেয়ে কি তপতিদির কাছে থাকবে ? দিপু - হ্যা সেরকমই কথা আছে। এখন তো হাঁসি আমাদের বাড়িতেই আছে। রাধা - ঠিক আছে বাড়ি ফিরে ওর সাথে অনেক গল্প করব।