17-05-2023, 08:23 PM
পর্ব- পনেরো
ক্রমশ সাহসী হয়ে উঠা মন বাঁধ ভাঙে শরীরের। এই মনুষ্য বিজ্ঞান বড়ই জটিল বিজ্ঞান বটে। মন আর শরীরের অদ্ভুত সব ক্রিয়াকলাপের সমাধান বের করা চাট্টিখানি কথা নয়৷ শরীর যা চায় তা মন মানে না, আবার খনে খনে রঙ পাল্টানো মন কি চায় সেটার উত্তর খুঁজতে খুঁজতে বেচারা শরীর বড্ড ক্লান্ত। তবে এই বিপরীতধর্মী বিপরীত মুখী দুইয়েরও সংযোগ ঘটে, দুটোয় এক সুতোয় বাঁধা পড়ে একই সুরে কথা বলে। তবে সেটার জন্য যে বিশেষ মানুষের দরকার হয় প্রয়োজন পড়ে উত্তম মূহুর্তের প্রকৃতির খেয়াল, চিরচেনা সেই ডাক যেথায় মন শুনে শরীর কি চায় আর শরীর জানতে চায় মনের আবদার। আহা! কি বিচিত্র এই মানববিজ্ঞান...
সেই মূহুর্ত টাই বুঝি সেদিন খুঁজে নিয়েছিল দুটো মন কে দুটো শরীর কে৷ বারবার মন শরীর দুটোই আসছে কারণ মন ছাড়া শরীর কিংবা শরীর হীনা মন কোনটারই যব অস্তিত্ব সম্ভব নয় হতে পারে না এই জটিল গোলকের ভূ-পৃষ্ঠে। শরীরের উষ্ণতায় মনের বরফ গলছিলো আর বিগলিত মন সায় দিচ্ছিলো শারীরিক চাহিদা মোতাবেক। আমরা মানুষকে খুব সহজেই বিচার করে ফেলি, চোখের দেখায় খানিক আলাপচারিতায় আমাদের রায় জানিয়ে দেই। কিন্তু ব্যাপারটা কি আদৌও এতই সহজ? মানুষকে চেনা তার সম্পর্কে জানা কি এতখানি সরল প্রক্রিয়া? যদি হতোই তবে যুগ যুগ ধরে মনীষীরা কেনই বা পড়ে রয়েছে সেই মানুষকে নিয়ে মানুষের মন কে নিয়ে? তারা তো বলে মানুষের মন অভেদ্য এটা সম্পূর্ণ জেনে নেয়া দুঃসাধ্য কাজ।
নিখিল আর লক্ষ্মীর মাঝে ক্রমশ গড়ে উঠতে থাকা সম্পর্ক টা আদতে দেখতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে বিষয়টা ততোটাই জটিল। মন শরীরের দোলাচলে লক্ষ্মী হয়তো দুর্বল হয়ে পড়েছিল তবে ওর মন টা এখনো পুরোপুরি সমর্পণ করতে পারে নি শরীরের নামে। তাই তো সেদিনের সেই মূহুর্ত টাকে নিজেকে নিখিলের বাহুডোরে সপে দিতে গিয়েও পচুইয়ের একটা ডাকেই নিজেকে আবার গুটিয়ে নিয়েছিল নিজের শক্ত খোলসে। সেদিন আর বেশি কিছু আগায় নি লক্ষ্মী নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিল নিখিল বুক থেকে আর সেটার রেশ আজও দুদিন ধরে রয়ে গিয়েছে। ও যতটুকু পারে ততোটাই ভুলে যেতে চাইছে সবটা, এড়িয়ে যেতে চাইছে নিখিলকে। নাহ! নিখিলো এ কদিন আর কোন বাড়াবাড়ি কিছুই করেনি ও নিজেও ভাবছে কিছুটা সময় দেয়া দরকার লক্ষ্মীকে নিজেকে তৈরী করে নেবার জন্য। ওর বিশ্বাস ফলাফল ওর পক্ষেই আসবে, লক্ষ্মী ধরা দিবে ওর মন পিঞ্জিরায় আর তাই হয়তো নিজেকে সামলে রাখতে কষ্ট হলেও সেটাই করে যাচ্ছে। দেখা যাক ডাক আসে কিনা!
ওদিকে একবার উষ্ণতার স্পর্শ পাওয়া মন আর শরীর দুটোই খুব অবাধ্য হয়ে উঠেছে লক্ষ্মীর, যতই ভুলে যাবার চেষ্টা করেছে ততোবারই সেই মুহূর্ত গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। আর এমন মূহুর্তের স্মৃতিচারণ মানেই শরীর আনচান করে উঠা, ভাবনার জগতে সুখের সন্ধান করা। এই সুখ সেই সুখ নয় এটা পার্থিব অপার্থিব যুক্তিতর্কের উর্ধ্বে। লক্ষ্মীর ক্ষেত্রে সেসবের ব্যতিক্রম হবার সুযোগ কই, এই দেহের কলাটাই যে এমন। মন দেহটাকে উসকে দেয় আর বোকা দেহ তাতেই তড়পাতে থাকে। কামের ফাদে পা দেয়া মন আর দেহের যে রসায়ন তাতে সুবিধে করা সাধারণ মানুষের কি সম্ভব যেখানে বড় বড় ত্যাগী যোগী মুনিরাও হার মেনে বসে আছে। সেখানে লক্ষ্মী কিংবা নিখিলের কিবা সাধ্য!!
দু রাত ধরে লক্ষ্মীর চোখে ঘুম ছিল না আর থাকবেই বা কি করে? দিনটা যেমন করেই হোক কাজকর্মে কাটিয়ে দিতে পেরেছে তবে রাতের নীরবতা আর একাকিত্ব যেন ওকে একটু একটু করে গ্রাস করে নিতে চেয়েছে। সেটাকেও মোকাবিলা করার জন্য পচুইয়ের বাবার সাথে ফোনে কথা বলে মনের ঘাটতি মেটাবার চেষ্টা করতো কিন্তু সারাদিনের কঠিন কাজের পর ঐ লোকটাও রাতজাগতে পারতো না। মাঝে মাঝে মন চাইতো স্বামীর কাছে সব খুলে বলতে কিন্তু চাইলেই কি আর সব বলা যায়? আর এমন একটা ব্যাপারে তো আরও অসম্ভব করে তোলে। তাই এই যন্ত্রণা টা লক্ষ্মীর একাই সইতে হচ্ছিলো। বিছানায় নিজেকে খুব একা লাগতে শুরু করেছে ওর, রাতের অন্ধকারে যখন সবকিছু ঘুমে বিভোর ঠিক তখনি বুঝি ওর শরীর টা জেগে উঠতো। শরীর জুড়ে এক অন্যরকম উত্তেজনার খেলা শুরু হয়ে যেত, হাত পা গুলো কেমন তড়পাতে থাকে নিজেদের মাঝেই। আর সেই সন্ধ্যার কথা মনে করলে তো সারা দেহে আগুন জ্বলে উঠে, বিশেষ করে দেহের স্পর্শকাতর অঙ্গ গুলো আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠে।
শরীরের উষ্ণতায় ভারী হয়ে উঠা শ্বাসের শব্দ ঘরের ভাঙা ছাউনিতে প্রতিফলিত হয়ে কানে বাজতেই ভেতরের ফুসতে থাকা সত্তাটা আরও বেশি যেন ঝাঁজিয়ে উঠে। বাইরের শীতল আবহাওয়াতেই ঘরের ভেতর ঘেমে উঠতো লক্ষ্মীর শরীর। রস টানতে শুরু করতো শিরায় শিরায়। শরীরের এমন উত্তেজনায় খালি বিছানায় কোলবালিশটাই একমাত্র ভরসা, সেটাই কিছুর ঘাটতি পূরণ করতে দুপায়ের মাঝখানে জায়গা করে নিতো। শক্ত পাটাতনের বিছানার সাথে নিজেই নিজের দেহখানা চেপে মিশিয়ে রাখতো, অল্প ছোঁয়াতেও আগুন জ্বলে উঠতো স্পর্শকাতর নিম্নাঙ্গে। দুপায়ের মাঝখানের গুপ্তগুহার ভিতরের কুটকুট করতে থাকা পোকা গুলো জ্বালিয়ে মারতো ওকে। বেশ বুঝতে পারতো রসের জোয়ার এসেছে গুদের মুখে মিলনের উচ্ছাসে, কামনার আগুনে পুড়তে থাকা দেহখানা বিছানায় একা একা তড়পে গেছে আর একটা সময় শুধুই আফসোসের দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এসেছে।
গতরাতেও এমনি ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তবে সকাল হতেই নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী মনে হতো লক্ষ্মীর। মনে হতো সে তো ঠকাচ্ছে কিন্তু কে কাকে ঠকাচ্ছে সেটার উত্তর জানা নেই। তাই নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা আজও সেই প্রতিদিনের মতই। লাইনে দাঁড়িয়েছে জলের জন্য কিন্তু চোখ দুটো চারপাশে বুলাচ্ছে বারবার, ঐ একজনের খুঁজ করছে হয়তো। মনে মনে বলছে সে যেন সামনে না আসে তবে হয়তো মনে যে বালির বাঁধে আটকা আছে সেটা বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না।
আজকাল মাধুরী একটু আগেই রেডি হয়ে যায় কলেজের জন্য আর তারপর নজর রাখে সামনের বাড়িটার দিকে। বাইকের শব্দের জন্য কান পেতে থাকে। যখনি দেখে কৌশিক বাইক নিয়ে বেরুচ্ছে অমনি চটজলদি মাধুরী নিজের স্কুটির দিকে দৌড়াতে থাকে। সম্ভাব্য ভাবেই আজকাল ওর স্কুটির গতি বেড়েছে সেটাও কৌশিকের বাইকের পেছন পেছন যাবার জন্য। আজও স্কুটি ছুটছে ওর আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। মনে মনে একটা ইচ্ছা প্রবল ভাবে বেড়ে উঠছে কোন একদিন সেই মানুষটার বাইকে উঠবে। বাইকটা দুরন্ত গতিতে ছুটে চলবে আর মাধুরী পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে থাকবে মানুষটাকে। ধেয়ে আসা বাতাসে চুল উড়বে ও নিজের মাথাটা এলিয়ে দিবে মানুষটার কাঁধে।
ইশশ! কি সব ভাবনা ভাবছে সে, নিজেই নিজেকে বোকা বলে ভর্ৎসনা করতে থাকে। তবে কেন এমন ভাবনা কেন এমন খেয়াল মস্তিষ্ক কিংবা হেয়ালি মন জুড়ে সেটার কোন উত্তর কি আছে? কলেজের কাছে চলে এসেছে তাই নিজেকে একটু গুটিয়ে নেয় মাধুরী৷ ভেতরের উচ্ছ্বাস টা সবার কাছ থেকে আড়াল করতে চায়। যতই চেষ্টা করো না কেন সেটা কারো না কারোর চোখে ঠিক ধরা পড়ে যায়। আর মাধুরীর বেলায় সেটা যে হবারই ছিল এটাই তো ভবিতব্য৷
গেটের কাছেই টং দোকানটার একটা বেঞ্চিতে বসেছিল শুভ তখনি খেয়াল করলো মাধুরীর স্কুটিটা ভেতরে ঢুকছে। আজকাল মাধুরীকে কেমন অচেনা ঠেকে শুভর কাছে। গত কিছুদিন ধরে তো কথাই হয় না বলতে গেলে। যেটুকু হয় সেটাও শুভর নিজ থেকে ফোন দিলে বা সামনাসামনি দেখা হয়ে গেলে। যে মেয়েটা দিনে কম করে দশবার ফোনে কথা না বললে চলতো না ছোটখাটো সব বিষয়ে আলোচনা করতো আর সবচেয়ে বেশি ওদের ব্যক্তিগত মূহুর্ত গুলো একসঙ্গে কাটাতো সেই মেয়েটাই কেমন করে ওকে ভুলে যাচ্ছে। কিছু কি হয়েছে ওর সেটার উত্তর খুঁজে ফিরে মাধুরীর মাঝে কিন্তু হাবভাব দেখে তো সেটাও বুঝার উপায় নেই। তবে কি! শুভ বাকির খাতায় চলে গেল...
না না এমনটা হতে পারে না, এটা ভাবতেও ভয় করে শুভর। হয়তো দুজন দুজনকে ওভাবে কখনো হৃদয়ের কথা বলে নি। আর বলতে হয় বলা হয় নি কারণ মাধুরীর তরফ থেকেই বলা ছিল ওরা শুধু ভালো বন্ধু আর সেটাই থাকবে এর বাইরে যেন কিছু চিন্তা না করে বা এর চেয়ে বেশি না এগোয়। তাই হয়তো শুভ চাইলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে নি, তবে মনে মনে কিছু তো ভাবনা আপনা থেকেই সাজতে থাকে নিজেদের মত করে। তবে সেই ভবিষ্যতে সেটা কি আদৌও আলোর মুখ দেখবে কি না সেটা কারোর জানা নেই।
আলেয়াদের সকালের ক্লাস টা বাতিল হয়ে গিয়েছে তাই এখন অনেকটা সময় হাতে। কারণ পরের ক্লাস টা দুপুরে সিডিউলে, এর আগে একটা গ্রুপ ওর্য়াক আছে তবে সেটাতে না গেলেও কোন সমস্যা নেই। তাই আপাতত লাইব্রেরিতেই কয়েকটা নোট বানানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছে সে। ইদানীং স্যারের কাছ থেকে কিছু এডভাইস পেয়েছে, তাতেই ওর লক্ষ্য টাও খানিক বড় হয়েছে। মনের কোনে স্বপ্নের দানা বেঁধেছে বিসিএস দিয়ে প্রসাশন ক্যাডারে যোগ দেবার। আগেও এমন স্বপ্ন ছিল না তেমন টা নয় তবে সেটা ধীরে ধীরে অন্যান্য চাপের আড়ালে চলে গিয়েছিল সেটাই যেন কৌশিক স্যার আবার বের করে এনেছে। নিভু নিভু করা প্রদীপের সলতে টাকে জাগিয়ে তুলেছে। লোকটাকে বেশ লাগে আলেয়ার, চেহারা আর কন্ঠে যতটা গাম্ভীর্যের ছাপ ভেতর থেকে ততোটাই প্রাণ খোলা মিশুকে আর বড্ড হাসিখুশি। শুধু স্যার নাকি তার মা উনি তো আরও একধাপ এগিয়ে, এতো সাধারণ ছিমছাম দেখে বুঝাই যাবে না আসলে কত ধনী পরিবারের মানুষ তারা। স্যারের বাবা বিদেশে থাকে একদিন ভিডিও কলে কথা হয়েছিল, মিনিট কয়েকের আলাপচারিতায় এতোবার মা ডেকেছে একবার মনে হয়েছিল আলেয়া হয়তো উনারই মেয়ে। আজকাল স্যার ওর শক্তির জায়গা ভরসার জায়গা প্রতিটা কাজের অনুপ্রেরণা।
কি ভাবছো এতো মন দিয়ে? বইয়ের দিকে তো দৃষ্টি নেই তাই এটা বলো না যে বই পড়ছো।
হঠাৎ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে উঠা আওয়াজে চমকে উঠে আলেয়া। খানিক ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েই পাশ ফিরতেই দেখে ওর কাছেই কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুমন। খানিক সময় নিয়ে বলে উঠে,
কত কি ভাবতে হয়, সামনেই ফাইনাল এক্সাম সেটার চিন্তা এরপর কি করবো সেটার চিন্তা পরিবারের চিন্তা। সেসবই ভাবছিলাম আর কি।
পাশের চেয়ারটা টেনে তাতে বসে পড়ে সুমন,
তা এতো ভাবনার মাঝে আমাকে নিয়ে ভাবার সময় পাও তো নাকি??
পাবো না কেন! ভাবি তো তোমার কথাও ভাবি...
ক্লাস টাইমে লাইব্রেরিতে তেমন কারও আনাগোনা থাকে না, যে কজন আছে তারও বেশ দূরে বইয়ের পাতায় মুখ গুজে আছে। আশপাশটায় চোখ বুলিয়ে সুমন খানিক এগিয়ে যায় আলেয়ার দিকে,
ওদিনের ওটা আজ আরেক বার সামনাসামনি দিবে?
হঠাৎ করেই এমন প্রশ্নে খানিক থতমত খায় আলেয়া, কিসের কথা বলছে সেটা বুঝতে খানিক সময় নেয়। মুহূর্ত বাদে কি চাচ্ছে সেটা বুঝতেই লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে উঠে আলেয়ার,
অসভ্য একটা...
মুচকি হাসে সুমন
বারে অসভ্যতার কি হলো, আমি কি আমার প্রেমিকার কাছে একটা চুমু চাইতে পারি না।
না পারো না, আর আমি দিবো না। পাজি ছেলে যাও এখান থেকে। কেউ দেখে নিলে কি হবে বুঝতে পারছো!
ওহহ তাহলে কেউ দেখে নিবে তাই দিচ্ছো না, তবে কি কেউ না দেখলে দিবে?
সেটা কখন বললাম? কখনই দিবো না। যাও এখান থেকে, আমাকে নোট করতে হবে।
আচ্ছা এখন যাচ্ছি, তবে ওটা কিন্তু আমার চাই....
সুমন চলে যেতেই দুহাতে মুখ ঢাকে আলেয়া, আঙুলের ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করে কেউ কি ওর দিকে তাকিয়ে আছে কি না। না লাইব্রেরিতে এমনিতেই তেমন কেউ নেই তাই আপাতত রক্ষে। খানিক আগের কথা গুলো ভাবতেই আলেয়ার মুখ খানা লজ্জায় লাল হয়ে উঠে। সেদিনের কথা ভাবতে গিয়ে শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক অনুভূতির ছোঁয়া লাগে। চোখ বন্ধ হারিয়ে যায় সেদিনের ঘটনায়...
সুমনের ওমন একটা মেসেজ পেয়ে আলেয়ার মন আতকে উঠে দুঃশ্চিন্তায়। সুমন ওমন করে কখনো কিছু বলেও নি বা চায় নি তবে আজ কি চাইতে পারে? আর আলেয়া কিই বা দিতে পারে সেই ভাবনার কূল কিনারা করতে পারে না। মন চাইছিলো তখনো জিজ্ঞেস করবে যে কি চায় সুমন ওর কাছে কিন্তু এখন হাতের কাজটা আগে শেষ করা জরুরি তাই অশান্ত মনকে বগলদাবা করেই কাজে মন দেয় সে। কিন্তু মন তো আর কাজে বসে না সেটা তো কখন সুমনের সাথে কথা বলবে সেটার ক্ষণ গগণা শুরু করে দিয়েছে।
হাতের কাজটা কোন মতেই শেষ করে আলেয়া মোবাইলটা নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়৷ মেসেজের উত্তরে কি বলবে সেটা ভাবতে গিয়েই উত্তেজনায় হাঁপিয়ে উঠছে সে। হাতটা কাঁপছে তখন থেকে, কাঁপা কাঁপা হাতেই টাইপ করে
কি জিনিস?
সুমন বুঝি প্রতিত্তোরে আলেয়া কি বলবে সেটা আগে থেকেই জানতো তাইতো সাথে সাথেই আলেয়া মোবাইলে আবার মেসেজ আসে,
আগে দিবে কি না সে তো বলো।
এবার কিঞ্চিৎ ভয় ধরে আলেয়ার মনে, এমন কি চাইতে পারে সুমন তার কাছে?
জিনিসটা কি সেটা না বললে জানবো কেমন করে যে কি চাইছো তুমি আর সেটা আদৌও আমার কাছে আছে কিনা।
আছে আছে তাই তো চাইলাম, আগে বলো দিবে কিনা। যদি না দাও তবে আমার খুব মন খারাপ হবে।
আলেয়া পড়েছে ফ্যাসাদে, সুমনের ভাবগতি বুঝতে পারছে না। বান্ধবীদের কাছে শুনেছে প্রেমিক নাকি প্রেমিকার কাছে এমন অনেক কিছুই আবদার করে। তেমন কিছুই কি সুমন চাইছে ওর কাছে সেটা ভাবতেই গা শিউরে উঠে অচেনা রোমাঞ্চে,
দেবার হলে অবশ্যই দেব৷ এবার বলো তো...
একটা কিস দিবে...
এমন আবদারে আলেয়ার মন জুড়ে ঝড় উঠে, না এ ঝড় তছনছ করার নয় এ তো হৃদয়ে প্রেমের জোয়ার আনে। প্রেমিকার মনে উথাল-পাথাল ঢেউ বইতে শুরু করে। অজানা অনুভবের জোয়ারে ভাসতে থাকে হৃদয়,
মমম..মা..নে মানে!!
এতো মানে মানে কি করছো, একটা চুমো চেয়েছি তোমার কাছে। দিবে তো...
ছি ছি তুমি এতো অসভ্য হলে কবে থেকে।
আরেহ! এতে অসভ্যতার কি হলো? আমি কি তোমার কাছে একটা চুমো চাইতে পারি না? দাও প্লিজ একটাই তো চাইলাম।
না না একদম না। আমি পারবো না।
তুমি কিন্তু কথা দিয়েছিলে...
কই? আমি তো দেবই সেটা বলিনি
ওহহ এখন কথা ঘুরাচ্ছো, আচ্ছা থাক দিতে হবে না।
মন খারাপ করলে? আমি তো এসব আগে কখনো.... আর মোবাইলে আবার কেমন করে দিবো?
আমি কল করছি তোমাকে, শুধু চুমুর আওয়াজ টা শুনতে পেলেই হবে।
তুমি পাগল হলে নাকি? কেউ শুনে নিলে কি ভাববে বলো তো। আমার ভয় করছে।
আরে কেউ শুনবে না জাস্ট একটা চুমো খাবে তাও আবার মোবাইলে। তাতেও এতো ভয় কিসের?
জানি না আমার ভয় করে..
কিচ্ছু হবে না, আমি ফোন করছি তোমাকে।
ধ্যাত....
আলেয়া বর্তমানে ফিরে আসে, সেদিনের ঘটনা প্রবাহের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটে উঠেছে। চোখে মুখে মায়াবী এক আলোকছটায় উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। সেদিন মোবাইলেই প্রথম কাউকে কিস করতে গিয়েই আলেয়ার যে হাল হয়েছিল আর সেটা যদি বাস্তবে করতে হয় তখন কি হবে? সেটা ভাবতেই গা শিউরে উঠে ওর।
নাহ এখন এসব নিয়ে অলস সময় কাটালে চলবে না, নোট গুলো তৈরী করে আবার স্যার কে দেখাতে হবে। এমনিতে যতই হাসি মুখে মিষ্টি করে কথা বলুক না কেন ঠিকমত কাজ কমপ্লিট না করলে যে ধমক দিবে কৌশিক স্যার তাতেই পিলে চমকে উঠে। মনে হয় এই বুঝি আত্মা খানা দেহ ছেড়ে পালাবে। বই খুলে আলেয়া নোট লেখায় মনোনিবেশ করে।
টিফিন টাইমে শুভ হাজির হয় মাধুরীদের ক্লাসের সামনে। কিন্তু মাধুরী কে ওখানে পায় না, একে ওকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে ও হয়তো ক্যান্টিনে আছে। অদ্ভুত লাগে শুভর কাছে, আজকাল ও একা একাই টিফিন সেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু আগে তো এমন হতো না। শুভ কে থাকতেই হতো ওর সাথে টিফিন টাইমে এমনকি সার্ভিস ডেস্ক থেকে খাবার গুলো সামনে এনে দিতে হতো। ভাঙা মন নিয়েই শুভ এগিয়ে যায় ক্যান্টিনের দিকে।
ক্যান্টিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বুলায় ভেতরটায়, মাধুরী কোথায় বসেছে সেটাই খুঁজছে। হঠাৎ চোখে পড়ে একটা কোনায় কেউ মাথা নিচু করে বসে আছে। শুভর কাছে কেন জানি মনে হলো ওটাই মাধুরী, ওর কি কোন কারণে মন খারাপ নাকি। না হলে ওমন করে বসে আছে কেন, তাই আর দেরি না করে পা বাড়ায় সেদিকেই। খানিক এগোতেই বুঝতে পারে মাধুরী মন খারাপ করে মাথা নিচু করে বসে নেই। ও কিছু একটা পড়ছে মন দিয়ে আর আরেক হাতে খাবার খাচ্ছে। অবাক হয় শুভ, এখন বুঝি ওর শুধুই অবাক হবার পালা। টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় শুভ, মাধুরী পড়াতে এতোটাই মগ্ন হয়ে আছে যে শুভর উপস্থিতিটাও টের পায় না সে।
কেমন আছো?
পরিচিত কন্ঠ কানে বাজতেই মাথা তুলে তাকায় মাধুরী,
এইতো যেমন দেখছো। তুমি কেমন আছো?
ঈষৎ শব্দে দীর্ঘশ্বাস
(ক্ষীনস্বরে) যেমন রেখেছো.... ভালোই হয়তো। তা আজ একেবারে ক্যান্টিনে বই নিয়ে বসে পড়লে যে।
স্যার কিছু পড়া দিয়েছে সেগুলো কমপ্লিট করতেই হবে।
আজকাল তো তুমি এমনিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছো, আলাদা কোচিং টিউশনি নিচ্ছো নাকি?
না না টিউশনি না, আমাদের বাসার সামনেই কলেজের এক স্যার বাসা নিয়েছে তার কাছেই টুকটাক...
হুম বুঝেছি আচ্ছা পড়ো তাহলে, ফ্রি হলে না হয় একটা কল করো।
মাধুরী বুঝতে পারে শুভ কি বুঝাতে চাইছে কিন্তু মাধুরী এখন সেদিকে যেতে চাইছে না। ওর মন এখন অন্যকিছুতে বাঁধা পড়েছে। শুভ কে যে ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাচ্ছে তেমনটা নয়, তবে ঐ মানুষটাকে নিয়ে এতোটাই মজে গিয়েছে যে অন্য কিছুতে ফুসরত পাচ্ছে কই?
কোথায় যাবে? বসো এখানে একসাথে টিফিন করি। তুমিও তো মনে হয় টিফিন করবে নাকি? আর আমারও কাজ প্রায় শেষ তারপর না হয় টুকটাক গল্পও করলাম।
শুভর ব্যথিত হৃদয় মাধুরীর কাছে মৃদু সহানুভূতি পেতেই সুখের আবহে ভেসে উঠে। আমরা মানুষরা বরাবরই অন্যের সহচার্য পেতে ভালোবাসি, আমরা চাই কেউ একজন এমন থাকুক যে আমার কথা ভাববে আমাকে বুঝবে। সবকিছুর মাঝে আমাকে পাশে রাখে পাশে থাকবে। শুভর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে, মাধুরী ওকে বসতে বলেছে গল্প করার জন্য অফার করেছে তাতেই খুশিতে মন ভরে উঠেছে। গদগদ মন নিয়ে বিপরীতের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে আর অপলক দৃষ্টির মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে মাধুরীর দিকে।