Thread Rating:
  • 4 Vote(s) - 2.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL নিকৃষ্ট জীবের কথোপকথন
#7
#3

দুঃখ,কষ্ট,শোক এই তিনটি জিনিসকে কখনো এক ভাবেন না।

কষ্টকে অনেকে আভিধানিক ভাষায় বেদনার সাথে তুলনা করেন এটা ভুল নয়। একদিক থেকে শারীরিক যন্ত্রনাকে বা বেদনা বলা যায়। কিন্তু বেদনা শুধু শারীরিক হয়ে থাকে। অনদিকে কষ্ট মানসিকও। ধরে নিন আপনি ছোট থেকে একটা পরিবেশে বড় হয়েছেন, কলেজ লাইফৈ এসে আপনাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে। আপনি আপনার কাছের মানুষগুলোকে যাদের সাথে এতদিন বড় হয়েছেন, যাদের ভালোবাসা সেহ্ন আপনাকে এক  স্বস্তি ও শান্তি দেয় তাদের হঠাৎ করে মিস করছেন। স্বাভাবিক ভাবে আপনি মেনে নিতে পারবেন? ঐ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতেও আপনার কমপক্ষে এক মাস লেগে যাবে। আর এই একমাস নিজের সাথে, নিজের যে যুদ্ধ আপনি করবেন, এটাই মানসিক কষ্ট

এবার আসি দুঃখ নিয়ে বলতে। বাংলাদেশের মতো দেশে দুঃখ কে দুই ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথমত আর্থিক দুঃখ। ঢাকা শহরে অনেক বস্তি আছে। যে কোনো একটা বস্তিতে চলে যান। দেখতে পাবেন অল্প বয়সী কিছু বাচ্চারা নোংরা মাটি গাড়ে মেখে খেলা করছে। আর তাদের মুখের ভাষা তো গায়ে লেগে থাকা নোংরার চেয়েও নোংরা। ওরা তো বাচ্চা। ওদের আর কি দুঃখ থাকতে পারে ?
আপনার চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনুন। ওরা যে গালিটা দিছে ঐ গালিটা কিন্তু ওরা এমনি এমনি দিছে না। লক্ষ্য করলে দেখবেন, ওরা গালি দিচ্ছে ওদের মাঝে থাকা সেই বাচ্চাকে যে বাকিদের থেকে আর্থিক ভাবে একটু বেশি সুবিধা পাচ্ছে। এবং ঐ সুবিধাটা সেই বাচ্চাটা ভাগ করতে চায় না। আর বাকিদের মাঝে এটাই আর্থিক দুঃখ।

দুঃখকে আরেক ভাবে তুলে ধরা যায়। মনে করুন আপনি এবং আপনার ভাই বা কোনো বন্ধু একত্রে একটা ব্যবসা বা কাজে নেমেছেন। এখন অতিরিক্ত লাভের আশায় আশায় বা কারো কাছে প্রশংসা পাওয়ার আশাতে আপনার বন্ধু বা ভাই আপনাকে ধোকা দিলো। এই ধরনের বিশ্বাসঘাতকতার কথা আপনি জানলে কিন্তু আপনার মানসিক কষ্ট শুধু কষ্টের সীমায় আবদ্ধ থাকে না। এটাই দুঃখ। এবং আর এখনকার অধিকাংশ মানুষের এই বন্ধুর সংখ্যা কম বা নিজেকে নিজের মধ্যে আবদ্ধ রাখার প্রধান কারণ এই দুঃখ। এখন তো ভাই, মানুষ নিজেকেও বিশ্বাস করতে পারে না।

কিছু কিছু ইচ্ছা অপূর্ণ থাকলে ক্ষতি হয় না। সেই মানুষ অপূর্ণতা পূর্ণ করার ইচ্ছাতেই হোক আর প্রবল জেদের বশেই হোক, সে নতুন কোনো ইচ্ছা পূরণের লক্ষে যাত্রা করে। কিন্তু এভাবে যদি কিছু কিছু করে সকল ইচ্ছাই অপূর্ণ থেকে যায়,তখন সেই মানুষটির বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। সে বেঁচে থেকেও মৃত। কথায় বলে, আশায় বাঁচে মানুষ। কিন্তু সেই আশায় যদি মুছে যায়? যদি নিরাশার আধার কালো মেঘে গোটা আকাশ ঢেকে যায়? তখন সেই মেঘ আর কাটে না। এসিড বৃষ্টির মত ঝরে পড়ে ভাঙ্গা স্বপ্ন আর ডিপ্রেশনের ওষুধের ধারালো ছুরি। কেউ বেঁচে থাকে। কেউ আত্মহত্যা করে। কিন্তু যারা বেঁচে থাকে, বলাই বাহুল্য তাদের দেহ মৃত্যুর আগেই আত্মার মৃত্যু হয়ে যায়। কেউ কেউ শুনবেন এসব আবার কেমন কথা?

নাম মনে নাই, তবে কোন এক মনিষী বলেছিল, একজন কাপুরুষের জন্ম একবারই হয় কিন্তু মৃত্যু হয় বহুবার। অন্যদিকে একজন যোদ্ধা একবারই জন্মায় আর একবারই মরে। আমি বলবো না তার কথা কোন দিক থেকে ভুল। আমি অতি নগন্য। তার ধারে কাছেও যেতে পারবো না। কিন্তু যে বা যারা জীবনের ছোটখাট ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে এসেছে, বা যাদের খুব আপনজন বা কাছের মানুষ ডিপ্রেশনে মারা গেছে তারা হয়তো বুঝবে। তারা বুঝবে, একজন যোদ্ধার কাছেও কতটা কষ্টকর এই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসা। কতটা ভয়ানক হয় তার জীবন। কিন্তু লোক তথাকথিত ঐ মুরুব্বিরা বলবেন, "মন তো আমাগেও খারাপ হইত। আমাগের সময় তো ঐসব ডিপ্রেশন বিপ্রেশন ছিল না।আমরা কি বেচে নেই? ইত্যাদি ইত্যাদি।" এইযে মুরুব্বী আপনাকে বলছি, আপনাদের সময় একজনের পাশে হাজার জন এসে দাঁড়াতো। পাশে দাঁড়ানোর অনেক লোক ছিল। আপনার হয়তো একটা গ্রামে আবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু তাও আপনারা সব সময় একে অপরের সাথে থাকতেন। হ্যাঁ মুরুব্বি, আমাদের ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে এখন একটা গ্রাম। সবাই সবার পাশে আছে। কিন্তু আদৌ কি আছে? একদৃষ্টিতে আমরা ঠিক যতটা কাছে, অপর দৃষ্টিতে আমরা ঠিক ততটাই দূরে। আরে ভাই আজকাল তো বাড়িতে দুবেলা কথা বলি। ভিডিও কলে বাবা মাকে সামনে রেখে কথা বলছি। কাছের মানুষ দূরের মানুষ সবাই একসাথে। কিন্তু আপনাদের সময় কার সেই মায়ের কাছে লেখা চিঠি। সেই আবেগঘন চিঠির ধারেকাছেও আমরা যেতে পারব না। এখন তো পাশে বসা বাপের সাথেও ছেলে মন খুলে কথা বলতে পারে না। মন খারাপ আর মনোরোগ এক না। এত কিছুর পরেও কি বলবেন, ডিপ্রেশন কাটানো খুব সহজ?

বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ চালু আছে। "অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর।" এখন শোক সম্পর্কে আমি ব্যক্তিগত ভাবে সাহিত্যে এবং সামাজিক ভাবে একটা কারনই খুজে পেয়েছি। আর সেটা হতে হলো বিচ্ছেদ। অতি আপন কোনো ব্যাক্তির বিচ্ছেদেই মানুষ শোকাহত হয়। এখানে অবশ্যই বিচ্ছেদ বলতে চিরবিচ্ছেদ বা মৃত্যুকে বোঝানো হচ্ছে।
রাজনীতিতে আমরা হরদম দেখতে পাই, ছোট-বড় পোস্টারে লেখা, 'অমুক নেতার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।' খোজ নিলে দেখা যাবে যে বা যারা পোস্টার ছাপিয়েছে, তারা রাস্তার পাশের কোনো দোকানে বসে হাসতে হাসতে বিরিয়ানি খাচ্ছে। এটা শোক নয়। পিতার কাধে পুত্রের লাশ, পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি জিনির বোঝা। আর বাবা- মাকে কতটা ভালোনাসি সেটা তাদের জীবনাবস্থায় না বোঝানো সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা। আমার মনে হয় পাঠকদের জন্য শোক কাকে বলে এটা আরবিস্তারিত লিখতে হবে।
এরপরও যদি কেউ মনে দুঃখ- কষ্ট এবং শোক একই জিনিস। তবে বলবো আপনার অভিধানটা আপগ্রেড করুন।
একজন বড় মিথ্যাবাদী, একজন বড় জাদুকরও
[+] 2 users Like Dead people's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিকৃষ্ট জীবের কথোপকথন - by Dead people - 16-05-2023, 11:14 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)