Thread Rating:
  • 167 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
চতুরশীতিতম অধ্যায়




এত কাছে বসে এতক্ষন ধরে আগে কোনো দিন কথা হয়নি।স্বপ্নের মত কেটে গেল সময়।এক পলক দেখার জন্য দ্বৈপায়ন ধামের কাছে ঘোরাঘুরি করেছে এক সময়।আজ যেন নতুন করে পাঞ্চালীকে চিনলো।লোকের বাড়ি রান্নার কাজ করে এটাই তোমার কাছে বড় হল?একবারও মনে হোল না সন্তানের সুখের জন্য এক মা তার আভিজাত্য গরিমা অবহেলায় সরিয়ে দিয়ে লোকের বাড়ি রান্নার কাজ করছেন?সুখর চোখ ঝাপসা হয়ে এল।বাবা বলতো ওর নজর অনেক গভীর পর্যন্ত যায়। জামার হাতায় চোখ মুছে কাপ প্লেট নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এল।
পাঞ্চালী জিজ্ঞেস করল,কাকু ওকে চিনতে পেরেছেন?
চেনা-চানা লাগচিল ঠিক মনে করতে পারছি না।স্টিয়ারিং-এ হাত রেখে গোবিন্দবাবু বললেন।
এক সময় গোপালনগরে ছিল।আমাকে পড়াতেন মাস্টার মশায় তার ছেলে--।
এবার মনে পড়েছে গোয়ারগোবিন্দ ছিল  ল্যংচা কার্ত্তিকও ওকে ভয় পেতো।
খিল খিল হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে পাঞ্চালী।লেখাপড়ায় ভালো মেধাবী যারা তারা একটু শান্ত নিরীহ প্রকৃতির হয়।এত ভাল এ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার অথচ সুখটা একেবারে উলটো--গুণ্ডা একটা। কলেজ জীবনের স্মৃতিতে ডুবে যায় পাঞ্চালী।
সার্কুলার রোড ধরে গাড়ী ছুটে চলেছে।রাস্তার দু-পাশে বাতি স্তম্ভে আলো জ্বলে উঠেছে।
উপরে উঠে সুখ রান্না ঘরে কাপ প্লেট রাখতে গেলে দীপশিখা জিজ্ঞেস করলেন,পলি চলে গেছে?
হু-উম।
ঈশানীকে দেখিয়ে বললেন,এর নাম ঈশানী।আজ থেকে আমার দেখা শোনা করবে।
সুখ আড়চোখে একবার দেখে চুপ করে রইল।ঈশানী নামটা চেনা-চেনা লাগে।অবন্তীর মায়ের নাম এইরকম কিছু মনে হল। বোঝার চেষ্টা করে মোমো কি বলতে চাইছে।কথাটা বলেই ফেলল,শোনো মোমো ভাবছি কলেজের চাকরিতে জয়েন করবো।
দীপশিখা মুখ টিপে হাসলেন।সুখ লাইব্রেরী ঘরে চলে গেল।একপাশে দাঁড়িয়ে ঈশানী বোঝার চেষ্টা করে ছেলেটা ম্যাডামের কে হতে পারে?বয়স বেশী না ম্যাদামকে নাম ধরে ডাকছে।নিজেকে ধমক দিল বড় মানুষের ব্যাপার নিয়ে তার মাথা ঘামাবার দরকার কি? 
গাড়ি ব্যারাকপুরে গিয়ে বারাসাতের দিকে বাক নিল।পাঞ্চালি শরীর এলিয়ে দিয়েছে মনটা বিচরণ করছে অন্য জগতে।আবার ওর সঙ্গে দেখা হবে ভাবেনি।বিস্মৃতির অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। একটা কথা মনে হতে ঠোটে হাসি ফোটে।মগডালে ফুটে থাকা ফুল ছিড়তে গেলে ডাল ভেঙ্গে বিপত্তি হতে পারে,দূর থেকে দেখে তৃপ্ত থাকাই ভালো।অবাক লাগে মনের ইচ্ছেকে এভাবে বুকে চেপে রাখে কিভাবে।আসল কথা হল অহঙ্কার পাছে প্রত্যাখ্যাত হতে হয় এই আশঙ্কা।বেশ কাটলো আজকের দিনটা মোমোর কাছে না এলে জানতেই পারতো না। 
এতকাল পরে পাঞ্চালির সঙ্গে দেখা হবে ভাবতেই পারেনি।আরো সুন্দর হয়েছে দেখতে।ওর ব্যবহারে বোঝার উপায় নেই ও একজন ডাক্তার।এই জন্য ওকে এত ভালো লাগে।বাবার মতো ওকী গোপালনগরে থেকে যাবে। পূব বাংলা থেকে এপারে এসে গোপালনগরকে ভালোবেসে ফেলেছিল।মামা যদি ঐরকম না করতো তাহলে গোপাল নগরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হতো না।দিলীপ সিধু দেবেন কাকু সবার কথাই মনে পড়ে।কখনো সময় হলে যাবে দেখে আসবে পাঞ্চালীর ডাক্তারখানা।পর মুহূর্তে ভুল বুঝতে পারে চিরকালই কি পাঞ্চালী গোপালনগরে থাকবে।বাইরে কোথাও বিয়ে হতেও তো পারে।
ঈশানী চুপচাপ বসে ভাবে।ডাক্তারবাবু কাজটা জুটোয়ে দিয়েছেন।আগে পাচবাড়ী ঠিকে কাজ করতো।একা মেয়েমানুষের নানা বিপদ।পুরুষের নজর দেখলে বুঝতে পারে।ডাক্তারবাবু বলেছিলেন কলেজে পড়ায় একা থাকে।ঘরে যে একজন সোমত্ত পুরুষও থাকে তা বলে নাই।তবে মানুষটারের দেখে খারাপ মনে হয় না।ভাল করে তার দিকে চেয়েও দেখছে না।ম্যাডাম বলছিলেন উনি এখান থেকে চলে যাবেন।তখন তাকেই ঘর পাহারা দিতে হবে।ঘর পাহারা দেওয়াই কি কাজ।এখনো কোনো কাজ করতে হয়নি রান্নাটাও ম্যাডাম নিজে করছেন। এখানে একটা সুবিধে শকুনের নজর সারাক্ষন খাবলাবার ভয় নেই।ছেলেটাকে  মানুষ করা নিয়ে চিন্তা ছিল।ছেলেকে ভাল কলেজে দিয়ে এখন শান্তি,ছেলে নরেন্দ্রপুরে পড়ে।ডাক্তারবাবু হেলপ করেছিল বলেই ওখানে ভর্তি করতে পেরেছিল। 
ঈশানী রান্না ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,কিছু করতে হবে ম্যাডাম?
যখন দরকার হবে বলবো।ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন দীপশিখা।
ম্যাডাম টিভিটা চালায়ে দেবেন একটু দেখতাম।
কথাটা খারাপ লাগে না।বেচারী বোর হয়ে যাচ্ছে।গলা তুলে বললেন,মনু টিভিটা চালিয়ে দেবে?
সুখ বেরিয়ে এসে দেখল ঈশানীকে টিভির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,কি দেখবেন?
সিরিয়াল চালায়ে দেন।
আপনি টিভি চালাতে পারেন না?
লাজুক হেসে ঈশানী বলল,পারি।এইটা তো চালাই নি।
সুখ টিভি চালিয়ে দিয়ে ঈশানীর হাতে রিমোট দিয়ে আবার লাইব্রেরীতে এসে বসল। 
দ্বৈপায়ন ধামের কাছে গাড়ী থামতে পাঞ্চালী নেমে কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল,কাকু এগুলো রাখুন।
গোবিন্দবাবু হাত বাড়িয়ে টাকা নিয়ে বললেন,দরকার হলে খবর দেবেন।
উপরে উঠে মামণির মুখোমুখী হতে জিজ্ঞেস করলেন,কিরে এত রাত করলি?
আবার কবে কলকাতা যাবো তাই মোমোর সঙ্গে দেখা করে এলাম।
কেমন আছে দীপা?
ঐ যেমন থাকার।বলছিল একদিন আসবে।
খুব একটা বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ওর কথা মনে পড়ল।কেমন মায়ালু চোখের দৃষ্টি, এই ধরণের ছেলেরা সাবমিসিভ টাইপ হয়।
খাওয়া দাওয়ার পর ঈশানী বাসনপত্র ধোয়াধুয়ী করতে করতে ভাবে,এখানে খাওয়া দাওয়া ভালই।আজ ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েছে।নিজেরা যা খায় তাকেও তাই দিয়েছে।কাজের লোক বলে অন্য চোখে দেখেনা।লাইব্রেরী ঘরে তার শোবার ব্যবস্থা হয়েছে।ম্যাডাম ছোটোবাবুকে নিয়ে রাতে শোবে।বেশ অদ্ভুত মনে হয়।দুজনের সম্পর্কটা অনুমান করে দিশেহারা বোধ করে।ম্যাডামের রান্নার হাত বেশ ভাল।এসে অবধি কোনো কাজ করতে হয়নি টিভি দেখে সময় কেটেছে।কাল ভোরে উঠে চা করে ডাকতে বলেছেন।কাল থেকে মনে হয় কাজ করতে হবে।
খাটে উঠে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন দীপশিখা।কাল আবার কলেজ আছে।মনু মনে হয় সিগারেট ফুকছে।আজ কলেজ থেকে ফিরে ওর সঙ্গে খুব একটা কথা হয়নি।ঈশানীকে দেখে অবাক হয়েছে।কিছু বলেনি অবশ্য। ঈশানী মনে হয় খারাপ হবে না।ভালই হয়েছে সব সময়ের একজন লোক থাকা দরকার।একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন এমনি হাটাহাটি করলে কোনো অসুবিধে হয়না কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না বেশীক্ষন,কোমর ধরে যায়। মনু এলে ওকে দিয়ে একটু টেপাবেন।গায়ের জামাটা খুলে পাশে রেখে শুয়ে পড়লেন। মাঝে মাঝে ভিতরের মাতৃসত্তা জেগে উঠলে ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়।তিনি না থাকলে মনুটার কিযে হবে।কে ওকে দেখবে ভেবে অস্থির বোধ করেন।
সুখ এসে খাটে উঠতে দীপশিখা বললেন,এই কোমরটা একটু টিপে দেবে?
সুখ দু-হাতে কোমর ম্যাসাজ করতে থাকে।দীপশিখা চোখ বুজে উপভোগ করেন।
তোমাকে একটা কথা বলবো?সুখ বলল।
দীপশিখা কিছু না বলে অপেক্ষা করেন কি বলে।
সারাক্ষন যদি রান্না ঘরেই থাকবে তাহলে কাজের লোক রাখার কি দরকার?সারাদিন বসে টিভি দেখেই কাটিয়ে দিল। 
দীপশিখার মজা লাগে বললেন,কাজের লোকদের সারাক্ষন খাটিয়ে মারতে হবে?
খাটিয়ে মারবে কেন খেটে মরবে।বয়সের কথাটা ভাববে না?সারাদিন কলেজ তারপর ফিরে এসে রান্নাঘর শরীরকে ত একটু বিশ্রাম দিতে হবে।
এইতো বিশ্রাম দিচ্ছি।আরেক্টু নীচে উরু জোড়াও টিপে দাও।
সুখ দু-হাতের মধ্যে উরু নিয়ে টিপতে থাকে।মোমোর পাছা দেখে পাঞ্চালীর কথা মনে পড়ল।ওরও পিসির মতো পাছার গড়ণ।বোধ হয় মিত্রবাড়ীর ধাচ।
কখন এসেছিল?
সুখ চমকে ওঠে মোমো কিছু আচ করেছে নাকি?বলল,কার কথা বলছো?
পলি কখন এসেছিল?
ওই তো তুমি আসার মিনিট পনেরো আগে।
কি কথা হচ্ছিল?
ওই পুরানো দিনের কথা।ডাক্তার মিত্রের কথা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল।বলল,একবার যেতে তো পারতে।বললাম আমি অনেক পরে জেনেছি।আমার বাবার মৃত্যুর সময় উনি যা করেছেন জানো কোনো দিন ভুলবো না।
এই সব আর কিছু না?
আর কি?ও খুব চালু শুধু আমার কথা শুনতে চায় নিজে কিছুই বলবে না।
দীপশিখা মুখ টিপে হাসেন।সুখ বলতে থাকে,তোমার ভাইঝি বলে বলছি না।জানো মোমো পাঞ্চালী আগের চেয়েও আরো সুন্দর হয়েছে।বিশেষ করে ওর সিম্লিসিটি ওকে আরও সুন্দর করেছে।কত বড়লোকের মেয়ে বাবা কত বড় ডাক্তার ছিলেন--।
নিজেও ডাক্তার।
হ্যা নিজেও ডাক্তার অথচ তার ব্যবহারে তার আচ মাত্র নেই।আমার সঙ্গে এত সহজভাবে কথা বলছিল কি বলবো--।
তাহলে কথা বলি?
মোমো তুমি ঐসব চিন্তা ছেড়ে দাও।
দীপশিখার ভালো লাগে তবু বললেন,পলিকে কি তোমার পছন্দ নয়?
ওকে আমার পছন্দ নয় বলার মত শক্তি ঈশ্বর আমাকে দেয়নি।আমি কেন কোনো ছেলে বলতে পারবে মনে করিনা।
তাহলে আপত্তি করছো কেন?
মোমো তোমার অপমান আমি সহ্য করতে পারব না।
এর মধ্যে মান অপমানের কথা আসছে কেন?
যদি তোমার মুখের উপর না বলে দেয় তোমার ভালো লাগবে?
মোমোকে ছেড়ে যাবার ভয় নয় যদি মুখের উপর না বলে দেয়।দীপশিখা পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন।
মোমো রাগ করলে?
তুমি শুয়ে পড়ো।
সুখ পাশে শুয়ে পড়ল।অন্ধকারে বুঝতে পারল না চোখের জলে মোমোর কপোল ভিজে যাচ্ছে।
    
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছিন্নমূল ঃ কামদেব - by kumdev - 15-05-2023, 09:52 PM



Users browsing this thread: 29 Guest(s)