15-05-2023, 09:39 PM
## ৭৯ ##
উঁচু জাতের ভদকার সাথে ভালো কোয়ালিটির ইলিশ, এ এক ডেডলি কম্বিনেশন। এমনিতেই ডিপিদার রিসর্টের কুক মাখনদার রান্নার হাতের নাম আছে। আর এবার যেনো মাখনদা খাইয়েই মারবে ঠিক করেছে। খুশীর চোটে একশো টাকা বকশিশ দিয়ে ফেললেন অমল। দুপুরের গুরুভোজনের ফলে একচোট ভাতঘুম দিয়ে দিলেন। রিনকি স্নানে ঢোকার পর, পিনকির শরীর নিয়ে টুকটাক ছানাছানি হয়েছিলো। সেইসব কথা মনে করতে করতেই চোখদুটো একটু লেগে এসেছিলো। সোনাঝুরির মেলায় যাওয়ার জন্য ডাক দিলো পিনকি। রিনকি তখনও পোয়াতি মেয়েছেলের মতো পেটটা বার করে ভোঁসভোঁস করে ঘুমাচ্ছে। ওকে নিয়ে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না, পুরো মস্তিটাই ভোগে যাবে। একটা ফতুয়া গলিয়ে, পিনকিকে নিয়ে বেরোলেন অমল।
রিসর্টের বাইরে থেকে রিক্সায় উঠলেন অমল। পিনকির শরীরটা ছিপছিপে হলেও, পাছাটা অস্বাভাবিক রকমের বড়ো হওয়ায়, রিক্সার সিটে আঁটোসাঁটো হচ্ছে। তাতে ভালই লাগছে অমলের। একটা কচি কলাপাতা রঙের কুর্তি আর স্কিন কালারের লেগিংস পড়েছে পিনকি। কুর্তির বুকের ফাঁদটা অনেকটাই বড়ো, স্তনের উপরিভাগ সহজেই দৃশ্যমান। রিক্সায় ওঠার সময় পিনকি ঝুঁকতেই, ড্যাবড্যাব করে দেখছিলো জোয়ান রিক্সাওয়ালাটা। রাগতে গিয়েও হেঁসে ফেললেন অমল। সাধারনত ট্রাকের পেছনে লেখা একটা বহূলপ্রচারিত কথা মনে পড়ে গেলো তার, “দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মতো ফুলবি”।
রাঙ্গামাটির পথে পৌঁছতেই দেখা গেলো জনসমুদ্র। মনে হয় কোটি কোটি লোক চলে এসেছে শান্তিনিকেতনে। কাল আরো আসবে। পৌষমেলা আর বসন্তোৎসব, এই দুটো পার্বণে কলকাতার সব হুজুতে লোকের ঠিকানা বোধহয় একটাই, শান্তিনিকেতন। হাজারো রিক্সা, গাড়ী, বাইক দাড়িয়ে রয়েছে রাস্তায়, একচুলও নড়ছে না। অবশেষে রিক্সা ছেড়ে দিয়ে, হেঁটে যাওয়াই সাব্যাস্ত করলেন অমল। পিনকিও একপায়ে খাড়া। বাদিকে খোয়াইকে রেখে শালপিয়ালের বনের মাঝ দিয়ে বিখ্যাত এই রাঙ্গামাটির পথ। আধুনিকতা বর্জন করে এখনও অনেকটাই প্রাকৃতিক পরিবেশ ধরে রাখা গেছে। তবুও তার মধ্যেই মোবাইলে বেখাপ্পা “বলম পিচকারি” শোনা যাচ্ছে। একটি কিশোরী পলাশের মালা বিক্রী করছে। একটি কিনে পড়িয়ে দিতেই, তার সাথে গালে গাল ঠেকিয়ে সেলফি তুললো পিনকি, আর তারপরই ফেসবুকে পোস্ট। এই হয়েছে এক জ্বালা। বেড়াতে যাবে, সেলফি তুলে ফেসবুকে; মন্দিরে যাবে, সেলফি তুলে ফেসবুকে; এরপর বোধহয় হাগতে গেলেও সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু হবে।
মেলায় পৌঁছতেই অনেকটা সময় চলে গেলো। মেলা জমে ক্ষীর। শো পিস, গয়না, পিঠে পুলি থেকে বাউল গান, মেলার সব উপকরণ মজুত। ওপাশে বাউল গৌতম দাসের আখড়ায় কলকাতার আঁতেল বাবু-বিবিদের ফেভারিট গান, “হৃদমাঝারে” চলছে। নাচছেন একজন অত্যন্ত সুন্দরী মহিলা এবং একজন দাড়িওয়ালা পুরুষ। পুরুষটি নাচতেই পারছে না, মাঝে মাঝেই টাল খেয়ে যাচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে গলা অবধি খেয়ে রেখেছে। খচাখচ মোবাইল ক্যামেরায় ছবি উঠছে। মূলতঃ নৃত্যরত মহিলাটির ছবিই তুলছে যৌন অতৃপ্ত কিছু মানুষ। খুব টাইট বাঁধুনি মহিলার শরীরের। তার ভারী বুক ও পাছা এবং চিকন কোমরের স্মৃতি তুলে রাখছে ক্যামেরায়। পরে নিজেদের ক্ষয়াটে চেহারার স্ত্রীর সাথে রতিমিলনের সময় এই মহিলার কথা চিন্তা করে ফ্যান্টাসি বানাবে।
পিনকিকে নিয়ে মেলার মূলমাঠে চলে আসলেন অমল। কাঠের গয়না কিনলো পিনকি। চিতোই পিঠা কিনলেন অমল। বহুদিন খাওয়া হয় না। মনে পড়ে, ছোটবেলায় মা বানাতেন। সেই স্বাদ যেনো জিভে লেগে আছে। পিনকিদের জেনারেশন এর স্বাদই পায় নি। আজ পিঠা দিয়েই মাল খাবেন, ঠিক করলেন অমল। অন্ধকার নেমে আসছে। আর দেরী করা ঠিক হবে না। পিনকিকে নিয়ে ফেরা শুরু করলেন। একটু এগোতেই তাদের রিক্সাটা পাওয়া গেলো। মনে মনে রিক্সাওয়ালাটাকে ধন্যবাদ দিলেন অমল। এতোটা হাঁটা চাপ হয়ে যেতো।
রিসর্টে পৌঁছতে পৌঁছতে ঝুপঝুপ করে অন্ধকর নেমে গেলো। আলো জ্বলে উঠেছে। এক্ষুনি রুমে ফিরতে ইচ্ছেকরছে না। দিঘীর দিকটা অন্ধকার। পিনকিকে নিয়ে ওদিকটাতেই যাওয়া ভালো। ওকে একটা আমগাছের সঙ্গে সেঁটে দাড় করিয়ে, ওর শরীরের উপর হামলে পড়লেন অমল।
ভালবাসার ভিখারি