13-05-2023, 08:25 PM
শ্বাস-প্রশ্বাসের তালে তালে পাতলা নাইটির আবরণে প্রবলভাবে ওঠানামা করতে থাকা দন্ডায়মান স্তনবৃন্ত সমেত ব্রেসিয়ারবিহীন বড় বড় বাতাবি লেবুর মতো নন্দনা দেবীর থলথলে মাংসল মাইজোড়া দেখে হার্জিন্দারের মনে হলো এখনই দুই হাতের থাবা দিয়ে মুছড়ে ধরে দুগ্ধভান্ড দুটিকে! কিন্তু বেশি তাড়াহুড়ো করলে সব প্ল্যান বিফলে যেতে পারে। তার থেকে এই মৎস্যকন্যাটিকে খেলিয়ে ডাঙ্গায় তুলতে পারলে ভবিষ্যতে খোরাকের অভাব হবে না। তাই নিজেকে সংবরণ করে গম্ভীরভাবে বললো, "কি হলো? থেমে গেলে কেন? আজ খুব গরম তো কি হয়েছে? তোমার এত কাজ করে দিচ্ছি, এত উপকার করে দিচ্ছি। ওইদিন তোমার ছেলেকে বাঁচালাম, আজকে তোমার নকরানীকে বাঁচালাম, তোমাকে পাহারা দিচ্ছি এখন, আর তুমি তো বাত হি করছো না আমার সঙ্গে। যারা খুলকে বোলো, মুঝে সমঝ মে নেহি আ রাহা হ্যায় .."
"আ..আমি এখন শুধু এ..এটাই পড়ে আছি .. ভে..ভেতরে কিছু নেই .." অসম্ভব লজ্জা পেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শুধু এটুকুই বলতে পারলো নন্দনা দেবী।
"আরে ক্যায়া বোল রাহি হো তুম, কুছ সমাঝ মে নেহি আ রাহা হ্যায় মুঝে। এটা পড়ে আছি .. ইসকা মতলব কেয়া হ্যায়? কি পড়ে আছো?" এবার বেশ উচ্চকণ্ঠে কথাগুলো বললো হার্জিন্দার।
- "নাইটিইইইহ ..."
- "আচ্ছা, নাইটি .. আউর উসকে আন্দার তো ব্রা ওর প্যান্টি প্যাহনে হো তুম? ফিরে ইয়ে দোনো কাঁহাসে আয়া?"
- "নেই .. মানে প..পড়িনি .."
"ফির সে নওটাঙ্কি শুরু হো গাই তুমহারি! সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারো না? নেই মানে কি? কি নেই?" এবার যেন ধমকে উঠলো হার্জিন্দার।
"ব্..ব্রেসিয়ার আর নিচের প্যান্ট .." থতমত খেয়ে গিয়ে বলে ফেললো নন্দনা দেবী।
"নিচের প্যান্ট? আরে বুর্বক আউরাত প্যান্ট কে সাঙ্গ এক 'ওয়াই' তো অ্যাড কর লো .. প্যান্টি বোলনে মে শরম আসছে কি? নিজের ব্রা আর প্যান্টি একটা অন্য লোকের হাতে থামিয়ে দিয়েছো আর এখন লজ্জা পাচ্ছো! ইসমে লজ্জা পাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। ঘর মে থোরি কোই স্যুট-বুট পড়ে থাকে? মুঝে দেখো .. ম্যায় তো বানিয়ান আউর শর্টস মে চলা আয়া।" উচ্চকণ্ঠে হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো অসভ্য পাঞ্জাবী লোকটা।
এইরকম অভদ্র এবং অশ্লীল মন্তব্যের কি উত্তর দেবে এটা বুঝে উঠতে না পেরে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো নন্দনা দেবী। তারপর ফিসফিস করে বললো, "আপনি না ভীষণ আজেবাজে কথা বলেন .."
"আজেবাজে কথা? ম্যায় তো গলত কুছ নেহি কাহা! আগার তুম পেহলে হি বাতা দেতি কি তুম নাইটিকে আন্দার বিলকুল নাঙ্গি হো, তো ইতনা সাওয়াল হি প্যায়দা নেহি হোতা .." আবারো অসভ্যের মতো হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো হার্জিন্দার।
"নাঙ্গি" এই শব্দটা শুনে মাথাটা ঝনঝন করে উঠলো নন্দনা দেবীর। লজ্জায় অতিমাত্রায় সঙ্কুচিত হয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল খুঁটতে থাকলো সে। ব্যাপারটা চোখ এড়ালো না ইতর পাঞ্জাবী লোকটার। "আচ্ছা এক বাত বাতাও মুঝে .. তুমি কি টাইট ফিটিংস পড়ো, নাকি লুজ ফিটিংস?" বাপ্পার মাতৃদেবীর হিউমিলিয়েশনের মাত্রা বাড়িয়ে উক্তি করলো হার্জিন্দার।
"মানে? ঠিক বুঝলাম না .." নিচের দিকে তাকিয়ে থেকেই জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা দেবী।
এই পৃথিবীতে দুই ধরনের নারী আছে। এক ধরনের নারী, যারা ভীষণ চালাক-চতুর, স্মার্ট এবং স্বাবলম্বী হয়। যাদেরকে ঘায়েল করতে গেলে অনেক ছলচাতুরি করে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলে ধীরে ধীরে বশে আনতে হয়। আর এক ধরনের নারী আছে, যারা অত্যন্ত সরল সাদাসিধে .. বর্তমান যুগে যাদের বোকা বলা হয়। তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে মাঝেমধ্যে ভুল করে বসে এবং বাইরের জগতের সঙ্গে সেই অর্থে কোনো যোগাযোগ না থাকার দরুন অত্যন্ত ভীতু এবং আনস্মার্ট প্রকৃতির হয়। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এদের দুর্বলতাকে প্রকট করে যদি সেখানে বারবার নির্দয়ভাবে আঘাত করা যায়, তাহলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বে হলেও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। নন্দনা দেবী ছিলেন এই দ্বিতীয় সম্প্রদায়ের নারী, সেটা খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছিলো হার্জিন্দার। তার সঙ্গে ধূর্ত পঞ্জাবীটা এটাও বুঝতে পেরেছিলো এই মহিলা সবকিছু সরল মনে বিশ্বাস করে এবং ভীষণভাবে সমাজ আর লোকলজ্জাকে ভয় পায়।
তাই তার সহকর্মীর স্ত্রীকে মানসিকভাবে গুছিয়ে নিয়ে বিন্দুমাত্র স্থিতিশীল হতে না দিয়ে পাঞ্জাবী লোকটা পুনরায় ধমক দিয়ে বলে উঠলো, "ক্যাসে সামঝোগি তুম? বুর্বক আউরাত যো হো! আন্ডার গার্মেন্টস কি সাইজ তো কাফি বড়া হ্যায় তুমহারি। থার্টি-এইট সাইজ কি প্যান্টি আউর থার্টি-সিক্স ডি কাপসাইজ কি ব্রা পহেনতি হো তুম! আমি জিজ্ঞেস করছিলাম, এগুলো কি তোমার টাইট ফিটিংস হয়, নাকি লুজ ফিটিংস?"
"ইশশ .. এইসব আবার কি প্রশ্ন? আমি ওইসব কিছু জানিনা। তবে হ্যাঁ, অল্পবয়সে আমি তো নাচ শিখতাম! নাচ ছেড়ে দেওয়ার পর আমার শরীরের নিচের দিকটা অনেকটাই ভারী হয়ে গিয়েছে। এমনিতে কিছু নয়, তবে এতে কাজকর্ম করতে একটু অসুবিধা হয়। আগের মতো আর দৌড়ঝাঁপ করতে পারি না। এই আর কি .. ভাবছি একজন ভালো ডাক্তার যদি দেখানো যায় .." মৃদুস্বরে নিচের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
ওই যে একটু আগে বললাম নন্দনা দেবী সেই সমস্ত নারীদের মধ্যে পড়ে, যারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে মাঝেমধ্যে ভুল করে বসে। উপরোক্ত উক্তির শেষ কথাগুলো বলে, সে তার জীবনে কত বড় বিপদ ডেকে নিয়ে এলো, তা সে নিজেও বুঝতে পারলা না। ধুর্ত শয়তান মুন্ডা পাঞ্জাবীটা এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে গলায় কিছুটা মধু ঢেলে তৎক্ষণাৎ বললো "অল্পবয়স আবার কি? অভি ভি তুম কলেজ গার্ল লাগতি হো। তুমহারি সামনে তো হিরোইন ভি ফেল হ্যায়। আর ওই যে তুমি বলছো না তোমার শরীরের নিচের দিকটা ভারী হয়ে গেছে, উসকে লিয়ে তুম ঠিক সে কাম কর নাহি পা রাহি হো! ইস প্রবলেম কা ভি সলিউশন হ্যায় মেরে পাস। মেরে দোস্ত প্রমোদ, মানে এই কোম্পানির ডাক্তার। ডোন্ট ওরি, ওকে নিয়ে আসবো আমি এই বাড়িতে, ও তোমার শরীরের প্রবলেম একদম ঠিক করে দেবে।"
"না না, ওসবের দরকার নেই। তাছাড়া উনি বাড়িতে এলে সেটা ভালো দেখায় না। আমার স্বামী ফিরলে আমি বরং পরে বাইরে অন্য কোনো ডাক্তারকে দেখিয়ে নেবো।" কিছুটা বিব্রত হয়ে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
একবার যখন সুযোগ এসেছে সেটার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার না করে তো হার্জিন্দার ছাড়বে না! তাই তার সহকর্মীর স্ত্রীকে প্রথমে গরমে তারপর নরম সুরে বললো, "এইজন্যেই তোমাকে বুর্বক আউরাত বলি আমি। কোম্পানির ডাক্তারের ফ্রিতে চেকআপ ছেড়ে তুমি বাইরে পয়সা দিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাবে? তাছাড়া মানুষ অসুস্থ হলে, কল দিলে ডাক্তার আসে না বাড়িতে? আসে তো! তুমি ভয় পাচ্ছ লোক জানাজানি যদি হয় আর পরে তারা যদি তোমার হাজবেন্ডকে বলে দেয়, তাই তো? আরে এই গরমে জাদা সে জাদা লোগ ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে চলে গেছে। আমাদের কম্পাউন্ডের এই দিকটা তো পুরো ফাঁকা। কৌন আ রাহা হ্যায় আউর কৌন যা রাহা হ্যায় .. কেউ কিচ্ছু দেখে না। আর রইলো বাকি তোমার হাজবেন্ডের কথা। তোমার ডাক্তার দেখানোর ব্যাপারে আমি যদি চিরন্তন বাবুর কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে নিই, তাহলে তোমার আপত্তি নেই তো? সামঝা করো ইয়ার .. আমি তোমাদের ওয়েল উইসার আছি। মেরে দোস্ত প্রমোদ বড়িয়া ডক্টর হ্যায় .. ওহ বিলকুল ঠিক কর দেঙ্গে তুমকো .. মেরা মতলব তুমহারি প্রবলেম কো .."
নন্দনা দেবীর প্রত্যেকটি কথার বা বলা ভালো অজুহাতের জবাব ছিলো হার্জিন্দারের কাছে। সর্বোপরি তার মনে হলো সে তো ডাক্তার দেখাতেই চেয়েছিলো। সে ভেবেছিল তার স্বামী ফিরে এলে একজন ভালো ডাক্তার দেখিয়ে নিজের ডায়েট চার্ট ঠিক করে নেবে। তাহলে কোম্পানির হোক বা বাইরের, ডাক্তার যদি সে দেখায় তাহলে ক্ষতি কি! তার উপর চিরন্তন যদি পারমিশন দিয়ে দেয়, তাহলে তো তার তরফ থেকে বাধা প্রদানের কোনো মানেই হয় না। "আপনার যা খুশি করুন, তবে আমার স্বামী পারমিশন না দিলে কিন্তু আমি ডাক্তার দেখাবো না। এবার আমাকে দিন তো ওগুলো। পশ্চিম দিকের শোওয়ার ঘরের জানলাটাতে প্রচুর রোদ্দুর আসে, ওখানে মেলে আসি।" কথাগুলো বলে তার স্বামীর সহকর্মীর হাত থেকে নিজের ব্রেসিয়ারটা একপ্রকার জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে আর লোকটার কাঁধের উপর থেকে নিজের ব্যবহৃত ধোয়া প্যান্টিটা উঠিয়ে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো বাথরুম থেকে।
হার্জিন্দার দেখলো তার কার্যসিদ্ধি হয়েছে, বরং এই মুহূর্তে বেশি লেবু চটককালে তেতো হয়ে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না করে নন্দনা দেবীর উদ্দেশ্যে বললো, "ছেলের কালকে পরীক্ষা আছে তো? কটা পর্যন্ত যেন পরীক্ষা হয়?"
"হুঁ .. কাল ইংরেজি পরীক্ষা। এগারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত। বাড়ি আসতে আসতে দুটো বেজে যায়। কেন?" পাশের ঘর থেকে উত্তর দিলো নন্দনা দেবী।
"কাল বারোটা নাগাদ আসবো আমার বন্ধু ডাক্তার প্রমোদ গঞ্জালভেসকে নিয়ে। খুব ভালো ডাক্তার ও, তবে একটু বদরাগী। ট্রিটমেন্টের সময় ওর সঙ্গে সহযোগিতা না করলে বহুত গুস্সা হো যাতা হ্যায় ওহ। কথাটা মাথায় রেখো আর রেডি হয়ে থেকো, তব তাক কে লিয়ে বাই।" এই বলে দুলকি চলে নন্দনা দেবীদের কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে গেলো হার্জিন্দার। নিজের কোয়ার্টারে ঢোকার আগে চাতালের পাশে ছোট ট্যাঙ্কটার আড়াল থেকে জামাকাপড়ের ক্যারি ব্যাগটা তুলে নিয়ে গেলো।
তার ছেলে যখন বাড়ি থাকবে না সেই সময়টাকে কেন ওরা বেছে নিলো ওদের আসার জন্য, ডাক্তার ভীষণ রাগী, চিকিৎসার সময় তার সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে .. এই সমস্ত কথা হার্জিন্দার কেন বললো, সেটা কিছুতেই বোধগম্য হলো না নন্দনা দেবীর। একবার লোকটাকে বিদায় করা গেছে, আজ আর একে ঢুকতে দিলে চলবে না .. এই ভেবে তার স্বামীর সহকর্মী বেরিয়ে যেতেই দৌড়ে এসে বাইরের দরজাটা আটকে দিয়ে স্নানে ঢুকে গেলো সে।
বাপ্পা কলেজ থেকে ফেরার পর তাকে জামা কাপড় ছাড়িয়ে ফ্রেশ করানো, তার খাওয়া দাওয়া, পরীক্ষা কেমন হলো জানতে চাওয়া .. এইসব নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল নন্দনা দেবী, যে সকালের ঘটনা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়াতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল তার। তার মনে পড়ে গেলো আলমারির তলায় সাপ ঢোকার কথা বলেছিল হার্জিন্দার সিং। কই, সে তো সাপ উদ্ধার না করেই চলে গেলো! সাপটা কি আদৌ বেরিয়ে গেছে, নাকি ঘরের কোথাও লুকিয়ে রয়েছে, যদি তার বা তার সন্তানের কোনো ক্ষতি করে .. এইসব ভেবে ভয় গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো তার।
কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না নন্দনা দেবী। এখন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে, প্রায় জনশূন্য ক্যাম্পাস আরো নিস্তব্ধ হয়ে এসেছে। এই সময় তার স্বামীর সহকর্মীটিকে ফোন করে সাপ উদ্ধার করতে বলাটাও তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হলো না। হায়দ্রাবাদ যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধ্যেবেলা তার স্ত্রীকে ফোন করে চিরন্তন বাবু। এই দিনও তার অন্যথা হলো না। নন্দনা দেবীর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। স্বামীর ফোন পেয়ে মুখে হাসি ফুটলো তার। সে ঠিক করলো প্রথমেই তার স্বামীকে তাদের বাড়িতে সাপের আগমনের কথা বলবে এবং সেটা থেকে কি করে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় সেই ব্যাপারেও পরামর্শ চাইবে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো বাড়িতে সাপ ঢোকার ব্যাপারটা বলতে গিয়ে কথা প্রসঙ্গে আজ সকালে বাথরুমে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিঞ্চিত আভাস যদি তার স্বামী পেয়ে যায়, তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে! পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে নন্দনা দেবী অতিমাত্রায় লাজুক এবং তার সঙ্গে লোকলজ্জার ভয় সর্বদা তাড়া করে বেড়ায় তাকে। তাই এই প্রসঙ্গে মৌন থাকাই শ্রেয় মনে করলো বাপ্পার মাতৃদেবী। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে চিরন্তনবাবুর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। প্রতিদিনের রোজনামচা এবং বাপ্পার পরীক্ষার খবর নেওয়ার পর চিরন্তনবাবু বললেন, "হার্জিন্দার ফোন করেছিলো, তোমার জ্বর হয়েছে শুনলাম। ও মালতীর কাছ থেকে খবর পেয়েছে বললো। কই তুমি তো আমাকে কিচ্ছু জানালে না! এখন তো আমি ওখানে নেই, তোমার শরীর খারাপ হলে বাপ্পার কি হবে? ওর পড়াশোনার কি হবে? ওর পরীক্ষার কি হবে? তোমাকে তো তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে, বলো! তাই আমি ওকে বলে দিয়েছি .. কাল যেন আমাদের কোম্পানির ডাক্তার এসে তোমাকে বাড়িতে দেখে যায়। ডাক্তার দেখিয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও, তুমি বিকল হয়ে গেলে সংসারটাও তো বিকল হয়ে যাবে, সোনা। চলো এখন রাখছি .. তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়বে, বেশি রাত করো না .."
ফোনটা কেটে গেলো। হ্যাঁ বা না কিছুই বলতে পারলো না নন্দনা দেবী। তার স্বামীর কথাগুলো শুনে সে বুঝলো ডাক্তারের আসার পেছনে আসল কারণের প্রকৃত সত্যতা চেপে গিয়ে হার্জিন্দার তার স্বামীকে তার জ্বর নিয়ে মিথ্যে কথা বানিয়ে বলেছে এবং জ্বরের খবর যে সে মালতীর কাছ থেকে শুনেছে এই মিথ্যেটাও বলেছে। তারমানে আজ সকালে এই বাড়িতে আসার কথা হার্জিন্দার তার স্বামীকে বলেনি। সে যদি এখন জ্বরের কথা অস্বীকার করে ডাক্তার আসার প্রকৃত কারণটা স্বামীকে বলতে যেতো, সেক্ষেত্রে তার স্বামী অনুমতি দিত কিনা সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। সবচেয়ে আগে তার প্রতি তার স্বামীর একটা অবিশ্বাস তৈরি হতো। এবং কথার পৃষ্ঠে কথা বলার ফাঁকে ঠিক বেরিয়ে আসতো আজ সকালে ওই পাঞ্জাবী লোকটা তার স্বামীর অবর্তমানে তাদের কোয়ার্টারে এসেছিলো। এমত অবস্থায়, অনেক চিন্তা করে মৌন থাকাই শ্রেয় মনে করে এই প্রথম তার স্বামীর কাছে কোনো জিনিস লুকিয়ে গেলো নন্দনা দেবী।
একে তো সর্প দেবতার ভয়, তার উপর শরীরটাও খুব একটা ভালো লাগছিলো না নন্দনা দেবীর। তাই, রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লো বাপ্পাকে নিয়ে।
ক্রমশ রাত গভীর হতে থাকে। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে থাকে নন্দনা। তারপর কোনো এক মুহূর্তে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে তার। শুরু হয় তার শিরোনামহীন স্বপ্ন দেখার পালা। আগামীর প্রত্যাশায় কত প্রতিশ্রুতি, যেখানে মাথার বালিশ শুধুই যেন নীরব শ্রোতা। তার দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব পরিস্থিতিকে দুঃস্বপ্ন বলে আরও কত হতাশার আস্ফালন করতে হবে। ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে তার সাহস আর নিজেকে সংবরণ করার জ্বালানি। কখনো অথৈ সাগরের জোয়ারে ভেলা ভাসানোর প্রয়াস। আবার কখনো ভাটার টানে আটকে যাওয়ার দীর্ঘশ্বাস। তারপর একসময় মরীচিকার হাতছানিতে নন্দনার স্বপ্নযাত্রা যেখানে থমকে দাঁড়ালো, সেই স্থানটিকে নরক বললেও ভুল বলা হয় না। অন্ধকারাচ্ছন্ন স্যাঁতসেঁতে একটি ঘর। ঘরের এক কোণে মাটিতে রাখা একটি বেশ বড় আকারের ম্যাট্রেস। শান বাঁধানো মেজে ফুঁড়ে বেড়িয়েছে অদ্ভুতদর্শন রম্ভাকৃতি কয়েকটি অঙ্গ .. যেগুলো দেখতে অনেকটা যেন উত্থিত প্রকাণ্ড পুরুষাঙ্গের মতো। কোনোটা অস্বাভাবিক মোটা, কোনোটা আপাত শীর্ণকায়। কোনোটা কুচকুচে কালো, অপরিষ্কার এবং লোমশ, আবার কোনোটা হয়তো নির্লোম অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার।
অন্ধকারে দৃষ্টি আরেকটু সয়ে যেতেই অবাক হয়ে চেয়ে রইলো নন্দনা। মাটিতে রাখা ম্যাট্রেসটির উপরে শুয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ এক নগ্ন নারীর দেহ। সেই নারীর মুখ স্পষ্ট দেখতে পেলো না সে। যার গোপনাঙ্গ দিয়ে টাটকা গরম বীর্য গড়িয়ে পড়ছে। বুঝতে বাকি রইলো না, বিকৃতকাম দুর্বৃত্তদের জাহান্নামে উপস্থিত হয়েছে সে। অন্ধকার ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে, চোখের দৃষ্টি পরিষ্কার হচ্ছে তার। নারী দেহের মুখমন্ডল এবার স্পষ্ট হলো নন্দনার সামনে। চমকে উঠল সে .. হুবহু তারই মতো দেখতে শায়িত উলঙ্গিনী নারীটিকে। এই দৃশ্য দেখেই এক অনাকাঙ্ক্ষিত আশঙ্কার অন্ধকারে ডুবে গেলো নন্দনা। সেই সঙ্গে তার কানে বাজতে থাকলো অবিরত এক কর্কশ ঘন্টার শব্দ। আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় তার সমস্ত ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠলো। ঘুম ভেঙে গেলো নন্দনার। নিজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিয়ে দেখলো খাটের পাশের টেবিলটিতে রাখা ঘড়িতে অ্যালার্ম বেজে চলেছে একনাগারে। তার পাশে শুয়ে অঘরে ঘুমোচ্ছে বাপ্পা।
টেবিল থেকে ঘড়িটা তুলে অ্যালার্মের সুইচটা বন্ধ করে চুপচাপ খাটের উপর বসে হাঁপাতে লাগলো নন্দনা। তার সারা গা ঘামে ভিজে জবজব করছে। এরকম স্বপ্ন এর আগে কোনোদিন দেখেনি নন্দনা বা দেখার কথা কল্পনাতেও আনেনি কখনও। ঘড়িতে তখন সকাল ছ'টা।
"আ..আমি এখন শুধু এ..এটাই পড়ে আছি .. ভে..ভেতরে কিছু নেই .." অসম্ভব লজ্জা পেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শুধু এটুকুই বলতে পারলো নন্দনা দেবী।
"আরে ক্যায়া বোল রাহি হো তুম, কুছ সমাঝ মে নেহি আ রাহা হ্যায় মুঝে। এটা পড়ে আছি .. ইসকা মতলব কেয়া হ্যায়? কি পড়ে আছো?" এবার বেশ উচ্চকণ্ঠে কথাগুলো বললো হার্জিন্দার।
- "নাইটিইইইহ ..."
- "আচ্ছা, নাইটি .. আউর উসকে আন্দার তো ব্রা ওর প্যান্টি প্যাহনে হো তুম? ফিরে ইয়ে দোনো কাঁহাসে আয়া?"
- "নেই .. মানে প..পড়িনি .."
"ফির সে নওটাঙ্কি শুরু হো গাই তুমহারি! সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারো না? নেই মানে কি? কি নেই?" এবার যেন ধমকে উঠলো হার্জিন্দার।
"ব্..ব্রেসিয়ার আর নিচের প্যান্ট .." থতমত খেয়ে গিয়ে বলে ফেললো নন্দনা দেবী।
"নিচের প্যান্ট? আরে বুর্বক আউরাত প্যান্ট কে সাঙ্গ এক 'ওয়াই' তো অ্যাড কর লো .. প্যান্টি বোলনে মে শরম আসছে কি? নিজের ব্রা আর প্যান্টি একটা অন্য লোকের হাতে থামিয়ে দিয়েছো আর এখন লজ্জা পাচ্ছো! ইসমে লজ্জা পাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। ঘর মে থোরি কোই স্যুট-বুট পড়ে থাকে? মুঝে দেখো .. ম্যায় তো বানিয়ান আউর শর্টস মে চলা আয়া।" উচ্চকণ্ঠে হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো অসভ্য পাঞ্জাবী লোকটা।
এইরকম অভদ্র এবং অশ্লীল মন্তব্যের কি উত্তর দেবে এটা বুঝে উঠতে না পেরে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো নন্দনা দেবী। তারপর ফিসফিস করে বললো, "আপনি না ভীষণ আজেবাজে কথা বলেন .."
"আজেবাজে কথা? ম্যায় তো গলত কুছ নেহি কাহা! আগার তুম পেহলে হি বাতা দেতি কি তুম নাইটিকে আন্দার বিলকুল নাঙ্গি হো, তো ইতনা সাওয়াল হি প্যায়দা নেহি হোতা .." আবারো অসভ্যের মতো হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো হার্জিন্দার।
"নাঙ্গি" এই শব্দটা শুনে মাথাটা ঝনঝন করে উঠলো নন্দনা দেবীর। লজ্জায় অতিমাত্রায় সঙ্কুচিত হয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল খুঁটতে থাকলো সে। ব্যাপারটা চোখ এড়ালো না ইতর পাঞ্জাবী লোকটার। "আচ্ছা এক বাত বাতাও মুঝে .. তুমি কি টাইট ফিটিংস পড়ো, নাকি লুজ ফিটিংস?" বাপ্পার মাতৃদেবীর হিউমিলিয়েশনের মাত্রা বাড়িয়ে উক্তি করলো হার্জিন্দার।
"মানে? ঠিক বুঝলাম না .." নিচের দিকে তাকিয়ে থেকেই জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা দেবী।
এই পৃথিবীতে দুই ধরনের নারী আছে। এক ধরনের নারী, যারা ভীষণ চালাক-চতুর, স্মার্ট এবং স্বাবলম্বী হয়। যাদেরকে ঘায়েল করতে গেলে অনেক ছলচাতুরি করে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলে ধীরে ধীরে বশে আনতে হয়। আর এক ধরনের নারী আছে, যারা অত্যন্ত সরল সাদাসিধে .. বর্তমান যুগে যাদের বোকা বলা হয়। তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে মাঝেমধ্যে ভুল করে বসে এবং বাইরের জগতের সঙ্গে সেই অর্থে কোনো যোগাযোগ না থাকার দরুন অত্যন্ত ভীতু এবং আনস্মার্ট প্রকৃতির হয়। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এদের দুর্বলতাকে প্রকট করে যদি সেখানে বারবার নির্দয়ভাবে আঘাত করা যায়, তাহলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বে হলেও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। নন্দনা দেবী ছিলেন এই দ্বিতীয় সম্প্রদায়ের নারী, সেটা খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছিলো হার্জিন্দার। তার সঙ্গে ধূর্ত পঞ্জাবীটা এটাও বুঝতে পেরেছিলো এই মহিলা সবকিছু সরল মনে বিশ্বাস করে এবং ভীষণভাবে সমাজ আর লোকলজ্জাকে ভয় পায়।
তাই তার সহকর্মীর স্ত্রীকে মানসিকভাবে গুছিয়ে নিয়ে বিন্দুমাত্র স্থিতিশীল হতে না দিয়ে পাঞ্জাবী লোকটা পুনরায় ধমক দিয়ে বলে উঠলো, "ক্যাসে সামঝোগি তুম? বুর্বক আউরাত যো হো! আন্ডার গার্মেন্টস কি সাইজ তো কাফি বড়া হ্যায় তুমহারি। থার্টি-এইট সাইজ কি প্যান্টি আউর থার্টি-সিক্স ডি কাপসাইজ কি ব্রা পহেনতি হো তুম! আমি জিজ্ঞেস করছিলাম, এগুলো কি তোমার টাইট ফিটিংস হয়, নাকি লুজ ফিটিংস?"
"ইশশ .. এইসব আবার কি প্রশ্ন? আমি ওইসব কিছু জানিনা। তবে হ্যাঁ, অল্পবয়সে আমি তো নাচ শিখতাম! নাচ ছেড়ে দেওয়ার পর আমার শরীরের নিচের দিকটা অনেকটাই ভারী হয়ে গিয়েছে। এমনিতে কিছু নয়, তবে এতে কাজকর্ম করতে একটু অসুবিধা হয়। আগের মতো আর দৌড়ঝাঁপ করতে পারি না। এই আর কি .. ভাবছি একজন ভালো ডাক্তার যদি দেখানো যায় .." মৃদুস্বরে নিচের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
ওই যে একটু আগে বললাম নন্দনা দেবী সেই সমস্ত নারীদের মধ্যে পড়ে, যারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে মাঝেমধ্যে ভুল করে বসে। উপরোক্ত উক্তির শেষ কথাগুলো বলে, সে তার জীবনে কত বড় বিপদ ডেকে নিয়ে এলো, তা সে নিজেও বুঝতে পারলা না। ধুর্ত শয়তান মুন্ডা পাঞ্জাবীটা এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে গলায় কিছুটা মধু ঢেলে তৎক্ষণাৎ বললো "অল্পবয়স আবার কি? অভি ভি তুম কলেজ গার্ল লাগতি হো। তুমহারি সামনে তো হিরোইন ভি ফেল হ্যায়। আর ওই যে তুমি বলছো না তোমার শরীরের নিচের দিকটা ভারী হয়ে গেছে, উসকে লিয়ে তুম ঠিক সে কাম কর নাহি পা রাহি হো! ইস প্রবলেম কা ভি সলিউশন হ্যায় মেরে পাস। মেরে দোস্ত প্রমোদ, মানে এই কোম্পানির ডাক্তার। ডোন্ট ওরি, ওকে নিয়ে আসবো আমি এই বাড়িতে, ও তোমার শরীরের প্রবলেম একদম ঠিক করে দেবে।"
"না না, ওসবের দরকার নেই। তাছাড়া উনি বাড়িতে এলে সেটা ভালো দেখায় না। আমার স্বামী ফিরলে আমি বরং পরে বাইরে অন্য কোনো ডাক্তারকে দেখিয়ে নেবো।" কিছুটা বিব্রত হয়ে কথাগুলো বললো নন্দনা দেবী।
একবার যখন সুযোগ এসেছে সেটার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার না করে তো হার্জিন্দার ছাড়বে না! তাই তার সহকর্মীর স্ত্রীকে প্রথমে গরমে তারপর নরম সুরে বললো, "এইজন্যেই তোমাকে বুর্বক আউরাত বলি আমি। কোম্পানির ডাক্তারের ফ্রিতে চেকআপ ছেড়ে তুমি বাইরে পয়সা দিয়ে ডাক্তার দেখাতে যাবে? তাছাড়া মানুষ অসুস্থ হলে, কল দিলে ডাক্তার আসে না বাড়িতে? আসে তো! তুমি ভয় পাচ্ছ লোক জানাজানি যদি হয় আর পরে তারা যদি তোমার হাজবেন্ডকে বলে দেয়, তাই তো? আরে এই গরমে জাদা সে জাদা লোগ ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে চলে গেছে। আমাদের কম্পাউন্ডের এই দিকটা তো পুরো ফাঁকা। কৌন আ রাহা হ্যায় আউর কৌন যা রাহা হ্যায় .. কেউ কিচ্ছু দেখে না। আর রইলো বাকি তোমার হাজবেন্ডের কথা। তোমার ডাক্তার দেখানোর ব্যাপারে আমি যদি চিরন্তন বাবুর কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে নিই, তাহলে তোমার আপত্তি নেই তো? সামঝা করো ইয়ার .. আমি তোমাদের ওয়েল উইসার আছি। মেরে দোস্ত প্রমোদ বড়িয়া ডক্টর হ্যায় .. ওহ বিলকুল ঠিক কর দেঙ্গে তুমকো .. মেরা মতলব তুমহারি প্রবলেম কো .."
নন্দনা দেবীর প্রত্যেকটি কথার বা বলা ভালো অজুহাতের জবাব ছিলো হার্জিন্দারের কাছে। সর্বোপরি তার মনে হলো সে তো ডাক্তার দেখাতেই চেয়েছিলো। সে ভেবেছিল তার স্বামী ফিরে এলে একজন ভালো ডাক্তার দেখিয়ে নিজের ডায়েট চার্ট ঠিক করে নেবে। তাহলে কোম্পানির হোক বা বাইরের, ডাক্তার যদি সে দেখায় তাহলে ক্ষতি কি! তার উপর চিরন্তন যদি পারমিশন দিয়ে দেয়, তাহলে তো তার তরফ থেকে বাধা প্রদানের কোনো মানেই হয় না। "আপনার যা খুশি করুন, তবে আমার স্বামী পারমিশন না দিলে কিন্তু আমি ডাক্তার দেখাবো না। এবার আমাকে দিন তো ওগুলো। পশ্চিম দিকের শোওয়ার ঘরের জানলাটাতে প্রচুর রোদ্দুর আসে, ওখানে মেলে আসি।" কথাগুলো বলে তার স্বামীর সহকর্মীর হাত থেকে নিজের ব্রেসিয়ারটা একপ্রকার জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে আর লোকটার কাঁধের উপর থেকে নিজের ব্যবহৃত ধোয়া প্যান্টিটা উঠিয়ে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো বাথরুম থেকে।
হার্জিন্দার দেখলো তার কার্যসিদ্ধি হয়েছে, বরং এই মুহূর্তে বেশি লেবু চটককালে তেতো হয়ে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না করে নন্দনা দেবীর উদ্দেশ্যে বললো, "ছেলের কালকে পরীক্ষা আছে তো? কটা পর্যন্ত যেন পরীক্ষা হয়?"
"হুঁ .. কাল ইংরেজি পরীক্ষা। এগারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত। বাড়ি আসতে আসতে দুটো বেজে যায়। কেন?" পাশের ঘর থেকে উত্তর দিলো নন্দনা দেবী।
"কাল বারোটা নাগাদ আসবো আমার বন্ধু ডাক্তার প্রমোদ গঞ্জালভেসকে নিয়ে। খুব ভালো ডাক্তার ও, তবে একটু বদরাগী। ট্রিটমেন্টের সময় ওর সঙ্গে সহযোগিতা না করলে বহুত গুস্সা হো যাতা হ্যায় ওহ। কথাটা মাথায় রেখো আর রেডি হয়ে থেকো, তব তাক কে লিয়ে বাই।" এই বলে দুলকি চলে নন্দনা দেবীদের কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে গেলো হার্জিন্দার। নিজের কোয়ার্টারে ঢোকার আগে চাতালের পাশে ছোট ট্যাঙ্কটার আড়াল থেকে জামাকাপড়ের ক্যারি ব্যাগটা তুলে নিয়ে গেলো।
তার ছেলে যখন বাড়ি থাকবে না সেই সময়টাকে কেন ওরা বেছে নিলো ওদের আসার জন্য, ডাক্তার ভীষণ রাগী, চিকিৎসার সময় তার সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে .. এই সমস্ত কথা হার্জিন্দার কেন বললো, সেটা কিছুতেই বোধগম্য হলো না নন্দনা দেবীর। একবার লোকটাকে বিদায় করা গেছে, আজ আর একে ঢুকতে দিলে চলবে না .. এই ভেবে তার স্বামীর সহকর্মী বেরিয়ে যেতেই দৌড়ে এসে বাইরের দরজাটা আটকে দিয়ে স্নানে ঢুকে গেলো সে।
★★★★
বাপ্পা কলেজ থেকে ফেরার পর তাকে জামা কাপড় ছাড়িয়ে ফ্রেশ করানো, তার খাওয়া দাওয়া, পরীক্ষা কেমন হলো জানতে চাওয়া .. এইসব নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল নন্দনা দেবী, যে সকালের ঘটনা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়াতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল তার। তার মনে পড়ে গেলো আলমারির তলায় সাপ ঢোকার কথা বলেছিল হার্জিন্দার সিং। কই, সে তো সাপ উদ্ধার না করেই চলে গেলো! সাপটা কি আদৌ বেরিয়ে গেছে, নাকি ঘরের কোথাও লুকিয়ে রয়েছে, যদি তার বা তার সন্তানের কোনো ক্ষতি করে .. এইসব ভেবে ভয় গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো তার।
কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না নন্দনা দেবী। এখন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে, প্রায় জনশূন্য ক্যাম্পাস আরো নিস্তব্ধ হয়ে এসেছে। এই সময় তার স্বামীর সহকর্মীটিকে ফোন করে সাপ উদ্ধার করতে বলাটাও তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হলো না। হায়দ্রাবাদ যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধ্যেবেলা তার স্ত্রীকে ফোন করে চিরন্তন বাবু। এই দিনও তার অন্যথা হলো না। নন্দনা দেবীর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। স্বামীর ফোন পেয়ে মুখে হাসি ফুটলো তার। সে ঠিক করলো প্রথমেই তার স্বামীকে তাদের বাড়িতে সাপের আগমনের কথা বলবে এবং সেটা থেকে কি করে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় সেই ব্যাপারেও পরামর্শ চাইবে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো বাড়িতে সাপ ঢোকার ব্যাপারটা বলতে গিয়ে কথা প্রসঙ্গে আজ সকালে বাথরুমে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিঞ্চিত আভাস যদি তার স্বামী পেয়ে যায়, তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে! পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে নন্দনা দেবী অতিমাত্রায় লাজুক এবং তার সঙ্গে লোকলজ্জার ভয় সর্বদা তাড়া করে বেড়ায় তাকে। তাই এই প্রসঙ্গে মৌন থাকাই শ্রেয় মনে করলো বাপ্পার মাতৃদেবী। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে চিরন্তনবাবুর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। প্রতিদিনের রোজনামচা এবং বাপ্পার পরীক্ষার খবর নেওয়ার পর চিরন্তনবাবু বললেন, "হার্জিন্দার ফোন করেছিলো, তোমার জ্বর হয়েছে শুনলাম। ও মালতীর কাছ থেকে খবর পেয়েছে বললো। কই তুমি তো আমাকে কিচ্ছু জানালে না! এখন তো আমি ওখানে নেই, তোমার শরীর খারাপ হলে বাপ্পার কি হবে? ওর পড়াশোনার কি হবে? ওর পরীক্ষার কি হবে? তোমাকে তো তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে, বলো! তাই আমি ওকে বলে দিয়েছি .. কাল যেন আমাদের কোম্পানির ডাক্তার এসে তোমাকে বাড়িতে দেখে যায়। ডাক্তার দেখিয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও, তুমি বিকল হয়ে গেলে সংসারটাও তো বিকল হয়ে যাবে, সোনা। চলো এখন রাখছি .. তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়বে, বেশি রাত করো না .."
ফোনটা কেটে গেলো। হ্যাঁ বা না কিছুই বলতে পারলো না নন্দনা দেবী। তার স্বামীর কথাগুলো শুনে সে বুঝলো ডাক্তারের আসার পেছনে আসল কারণের প্রকৃত সত্যতা চেপে গিয়ে হার্জিন্দার তার স্বামীকে তার জ্বর নিয়ে মিথ্যে কথা বানিয়ে বলেছে এবং জ্বরের খবর যে সে মালতীর কাছ থেকে শুনেছে এই মিথ্যেটাও বলেছে। তারমানে আজ সকালে এই বাড়িতে আসার কথা হার্জিন্দার তার স্বামীকে বলেনি। সে যদি এখন জ্বরের কথা অস্বীকার করে ডাক্তার আসার প্রকৃত কারণটা স্বামীকে বলতে যেতো, সেক্ষেত্রে তার স্বামী অনুমতি দিত কিনা সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। সবচেয়ে আগে তার প্রতি তার স্বামীর একটা অবিশ্বাস তৈরি হতো। এবং কথার পৃষ্ঠে কথা বলার ফাঁকে ঠিক বেরিয়ে আসতো আজ সকালে ওই পাঞ্জাবী লোকটা তার স্বামীর অবর্তমানে তাদের কোয়ার্টারে এসেছিলো। এমত অবস্থায়, অনেক চিন্তা করে মৌন থাকাই শ্রেয় মনে করে এই প্রথম তার স্বামীর কাছে কোনো জিনিস লুকিয়ে গেলো নন্দনা দেবী।
একে তো সর্প দেবতার ভয়, তার উপর শরীরটাও খুব একটা ভালো লাগছিলো না নন্দনা দেবীর। তাই, রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লো বাপ্পাকে নিয়ে।
ক্রমশ রাত গভীর হতে থাকে। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে থাকে নন্দনা। তারপর কোনো এক মুহূর্তে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে তার। শুরু হয় তার শিরোনামহীন স্বপ্ন দেখার পালা। আগামীর প্রত্যাশায় কত প্রতিশ্রুতি, যেখানে মাথার বালিশ শুধুই যেন নীরব শ্রোতা। তার দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব পরিস্থিতিকে দুঃস্বপ্ন বলে আরও কত হতাশার আস্ফালন করতে হবে। ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে তার সাহস আর নিজেকে সংবরণ করার জ্বালানি। কখনো অথৈ সাগরের জোয়ারে ভেলা ভাসানোর প্রয়াস। আবার কখনো ভাটার টানে আটকে যাওয়ার দীর্ঘশ্বাস। তারপর একসময় মরীচিকার হাতছানিতে নন্দনার স্বপ্নযাত্রা যেখানে থমকে দাঁড়ালো, সেই স্থানটিকে নরক বললেও ভুল বলা হয় না। অন্ধকারাচ্ছন্ন স্যাঁতসেঁতে একটি ঘর। ঘরের এক কোণে মাটিতে রাখা একটি বেশ বড় আকারের ম্যাট্রেস। শান বাঁধানো মেজে ফুঁড়ে বেড়িয়েছে অদ্ভুতদর্শন রম্ভাকৃতি কয়েকটি অঙ্গ .. যেগুলো দেখতে অনেকটা যেন উত্থিত প্রকাণ্ড পুরুষাঙ্গের মতো। কোনোটা অস্বাভাবিক মোটা, কোনোটা আপাত শীর্ণকায়। কোনোটা কুচকুচে কালো, অপরিষ্কার এবং লোমশ, আবার কোনোটা হয়তো নির্লোম অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার।
অন্ধকারে দৃষ্টি আরেকটু সয়ে যেতেই অবাক হয়ে চেয়ে রইলো নন্দনা। মাটিতে রাখা ম্যাট্রেসটির উপরে শুয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ এক নগ্ন নারীর দেহ। সেই নারীর মুখ স্পষ্ট দেখতে পেলো না সে। যার গোপনাঙ্গ দিয়ে টাটকা গরম বীর্য গড়িয়ে পড়ছে। বুঝতে বাকি রইলো না, বিকৃতকাম দুর্বৃত্তদের জাহান্নামে উপস্থিত হয়েছে সে। অন্ধকার ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে, চোখের দৃষ্টি পরিষ্কার হচ্ছে তার। নারী দেহের মুখমন্ডল এবার স্পষ্ট হলো নন্দনার সামনে। চমকে উঠল সে .. হুবহু তারই মতো দেখতে শায়িত উলঙ্গিনী নারীটিকে। এই দৃশ্য দেখেই এক অনাকাঙ্ক্ষিত আশঙ্কার অন্ধকারে ডুবে গেলো নন্দনা। সেই সঙ্গে তার কানে বাজতে থাকলো অবিরত এক কর্কশ ঘন্টার শব্দ। আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় তার সমস্ত ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠলো। ঘুম ভেঙে গেলো নন্দনার। নিজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিয়ে দেখলো খাটের পাশের টেবিলটিতে রাখা ঘড়িতে অ্যালার্ম বেজে চলেছে একনাগারে। তার পাশে শুয়ে অঘরে ঘুমোচ্ছে বাপ্পা।
টেবিল থেকে ঘড়িটা তুলে অ্যালার্মের সুইচটা বন্ধ করে চুপচাপ খাটের উপর বসে হাঁপাতে লাগলো নন্দনা। তার সারা গা ঘামে ভিজে জবজব করছে। এরকম স্বপ্ন এর আগে কোনোদিন দেখেনি নন্দনা বা দেখার কথা কল্পনাতেও আনেনি কখনও। ঘড়িতে তখন সকাল ছ'টা।
আগামী শনিবার পরবর্তী পর্ব আসবে
সঙ্গে থাকুন এবং পড়তে থাকুন