10-05-2023, 04:07 PM
ষষ্টি পর্ব
ওনারা খেয়ে উঠে চলে গেলেন ধীরে ধীরে ভিড় পাতলা হতে লাগল। তন্দ্রা দিপু , তপতি রাধা , শিখা এদের সবাইকে নিয়ে খেতে বসল। বাড়ির সকলের খাওয়া হয়ে যেতে বাবলু এসে জিজ্ঞেস করল দাদা রান্না কেমন হয়েছে ? দিপু - সবাই খুব প্রশংসা করেছে রান্নার। দিপু ওকে জিজ্ঞেস করল - এই রান্না কে কে করেছে রে ? মিতা এসে হাজির ও খেতে দিচ্ছে দিপুকে বলল - শোনো আমি বলছি ও (বাবলু)আমি শিখাদিদি তন্দ্রা বৌদিদি আর লতা দিদি। দিপু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল - তোরা এতো ভালোভালো রান্না করতে পারিস কি আগে তো কোনোদিন আমাকে খাওয়াস নি ? মিতা - এসব রান্না করতে গেলে বাজার করতে হয় আমাদের বাড়িতে কে বাজার করবে বলো আমরাই কাছের ছ্ট্টো যে বাজার আছে সেখান থেকে নিয়ে আসি। এসব তো এখানে পাওয়াই যায়না। আর ও আন্তে পারে কিন্তু ও তো সর্বক্ষণ শুধু দাদা দাদা করে পাগল ও বাজার যাবে কখন। দিপু - মানে কার কথা বলছিস রে তুই? মিতা - কেন তোমার ড্রাইভার ? দিপু - এই ওকে ড্রাইভার বলবিনা ও আমার ভাই তো ভাই দাদা দাদা করবেনা তো কে করবে পাড়ার লোকে। মিতা - আমার ভুল হয়ে গেছে দাদা আর কোনোদিন বলবোনা। দিপু - ঠিক আছে যা প্রথম বার বলে মাফ করেদিলাম। আর শোন্ বাবলু - এরপর থেকে সকালে উঠে আগে বাজারে যাবি তারপর আমার সাথে দোকানে। জানি খাটনিটা তোর একটু বেশি হবে। কি করবি বল একটু ভালোমন্দ খেতে গেলে তো পরিশ্রম তো করতেই হবে। তুই না পারলে বল আমি নিজেই সকালে উঠে বাজারে যাবো। বাবলু শুনে হেসে ফেলল দেখে দিপু জিজ্ঞেস করল হাসলো কেনোরে ? বাবলু - সেইতো আমাকেই নিয়ে যেতে হবে তোমাকে বাজারে তার থেকে আমি একাই যাবো।
দিপুর ছেলে আজ এক বছরে পরল। জন্মদিনের বিরাট অনুষ্ঠান দুই বাড়ির লোক অনেক আত্মীয় স্বজন বন্ধ বান্ধব প্রতিবেশীতে বাড়ি গমগম করছে। দিপুর দোকান আজ বন্ধ সমস্ত কর্মচারীকে নিমন্ত্রণ করেছে দিপু আর প্রত্যেককে দশহাজার টাকা করে ছেলের জন্মদিনের জন্য দিয়েছে।
সবাই খুব খুশি। এদিকে দিপু শুধু পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিষয়ে করে মহিলাদের থেকে। দীপ্তি, মিতা ওদের এড়িয়ে চলছে। কেননা দিপু আজকে কোনো নারী সম্ভোগ করবেনা। মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে এসেছে তাই আজকে ও সুধ্য দেহে ও মনে থাকতে চায়। তাই নারী শরীরের ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলছে।
মিঃ বোস আর মিঃ সেন এলেন ডিউটির পোশাকেই কেননা আজকে কোনো ভাবেই ওঁরা কেউই ছুটি নিতে পারেনি। এদিকে সান্তা ওই বাড়িতেই রয়েছে দিপু ওকেও মা বানিয়ে দিয়েছে আর মাস দুয়েকের মধ্যে প্রসব হবে সান্তার সন্তান। তপতি এসে কাজে লেগে পরেছে যেন এটা ওর নিজের ছেলের জন্মদিন। রাধা ওকে জিজ্ঞেস করল - দিদি তোমাকে কাজ করতে হবে না সবাই তো আছে কাজের জন্য। তপতি - দেখো আমি আমার ছেলের জন্য করছি দিপুর ছেলে তো আমারও ছেলে তাইনা। রাধা আর কিছুই বলতে পারলোনা। মেয়েটা একটা বাচ্ছা পাবার জন্য কেমন উতলা হয়ে উঠেছে। রাধা জানে তপতি প্রেগনেন্ট যদিও ম্যাশ ছয়েক দেরি আছে। তন্দ্রা ওকে ডেকে বলল - কি গো তোমার পেটে যে আছে তার তো ক্ষতি হবে। তপতি - আমি নিজেই ডাক্তার আমি জানি আমার কি করা উচিত আর কি উচিত নয়। দীপ্তিকে ওদের দোকানেই একটা ছেলে বিয়ে করতে চেয়েছে, ওর নাম অভয় যেটুকু ওর সাথে মিশেছে তাতে ওর মনে হয়েছে যে ছেলেটা খুব ভালো। কম কথা বলে খুব বিশ্বাসী। দীপ্তি ওর দাদা মানে দিপুকে বলে উঠতে পারেনি। তাই দিপুকে দেখে ডাকল - দাদা তোমার সাথে কথা আছে আর সেটা বেশ জরুরি। দিপু কাছে জিজ্ঞেস করল - কি এমন কথা যে আজকেই তোকে বলতে হবে ? দীপ্তি - দেখো তুমি রাগ করোনা আগে আমার কথাটা শোনো তারপর বলো.দিপু বলল - ঠিক আছে বল আমাকে কি বলবি। দিপু সব শুনে বলল - অভয়কে ডেকে নিয়ে আমার ঘরে আয়। দীপ্তি অভয়কে খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেল খাবার জায়গাতে। ওকে ডেকে দিপুর সামনে হাজির করাল। অভয় দিপুকে দেখে ঘাবড়ে গেল। ভাবতে লাগল দীপ্তি ওর মালিককে বলে দিয়েছে এবার আমার চাকরি গেল। তাই বলেই ফেলল - না স্যার আমি ওকে ছেড়ে দেব আমার ভুল হয়ে গেছে। দিপু বেশ মজা পেল বলল - ভুল করলে শাস্তি পেতেই হয় তোমারও শাস্তি পেতে হবে। অভয় - স্যার আমাকে শাস্তি দিন কিন্তু চাকরি থেকে বের করে দেবেন না। দিপু জিজ্ঞেস করল - দীপ্তিকে তুমি ভালোবাসা ? অভয় - শুধু মাথা নাড়াল দেখে দিপু বলল - যা বলার মুখে বল ঘাড় নাড়লে কিছুই বোঝা যায়না। অভয় - ভালোবাসতাম এখন থেকে আর বাসবোনা। দিপু - মানে কি ভালোবাসা কি খোলামকুচি আগে বাসতে এখন থেকে আর বাসবেনা। অভয় - না মানে আমি জানতাম না যে ও আপনার বোন , না জেনে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। দিপু দেখল ছেলেটা এবারে না কেঁদে ফেলে। তবু একটা ধমক দিয়ে বলল - কি জাতা বলছ। আমার বোন জানলে ভালোবাসতে না। অভয় কোনো জবাব খুঁজে না পেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। দিপু ওকে জিজ্ঞেস করলো তোমার বাবা মা আছেন ? অভয় - হ্যা। কি করেন তোমার বাবা ? অভয় - মৃনাল স্যারের দোকানে কাজ করেন। আজকে কি তোমার বাবা এসেছেন এখানে। অভয় - না ওনাদের দুটো দোকান তো খোলা তাই রাতে আসবেন সবাই। ঠিক আছে তোমার বাবা রাতে এলে আমার সাথে দেখা করিয়ে দিও ওনার সাথে কথা বলতে হবে। এখন তুমি যাও গিয়ে খেয়ে নাও। অভয় চলে যেতে দীপ্তি জিজ্ঞেস করল - তোমার কি ওকে পছন্দ নয় দাদা? দিপু - ওর কান ধরে বলল - তোর পছন্দের ওপর আমার ভরসা ছেড়ে পাগলী। আমি একটু অভিনয় করছিলাম এটাও বুঝতে পারলিনা এই বুঝি আমাকে চিনেছিস। দীপ্তি দিপুকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল কিন্তু দিপু ওকে বাধা দিয়ে বলল আজকে আমি কোনো নারী শরীর ছোঁবনা তুই দূরেই থাক। দীপ্তি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে দূর থেকেই বলল - তুমি অভিনয়টাও বেশ ভালোই পারো দেখছি।
দিপু ডাক পড়ল নিচে নিচে নেমে গেল দিপু। রাধা বলল - তোমাকে ডাকছিলাম যে দুজন পুলিশ অফিসার এসেছেন এদের কথা তো আমাকে বলোনি কখনো। দিপু - বলিনি বুঝি তাহলে ভুলে গেছিলম্ বলে সব বলল। শুনে রাধা বলল - মানে এনাদের সাহায্যই তুমি পেয়েছিলে। ঠিক আছে চলো ওনারা খেতে বসেছেন ওনাদের কাছে তোমার যাওয়া উচিত। শোনোনা তোমার ওই পুলিশ বন্ধুরা কিন্তু আমাদের ছেলেকে ( তুতুন )গলার চেন দিয়েছে। ওকে খুব মানিয়েছে গো। দিপু রাধার সাথে কথা বলতে বলতে খাবার জায়গাতে এসে হাত জোর করে দিপু বলল - মিঃ সেন , মিঃ বোস কোনো লজ্জ্যা করবেন না। দুজনেই বলে উঠলেন - লজ্জ্যা করতে আর পারছি কোথায় না চাইতেই তো এতো খাবার দিয়ে গেছে। তবে সব রান্নাই বেশ সুন্দর হয়েছে। কোন ক্যাটারার করেছে ? দিপু - স্যার কোনো কেটারার নয় আমার বাড়ির লোকেরাই রান্না করেছে। শুধু মিষ্টি আইসক্রিম বাইরে থেকে আনানো।